#উত্তল_তরঙ্গ
#পর্বঃ৪০
#লেখিকাঃদিশা_মনি
নেহা হতবাক চোখে তাকিয়ে থাকে আহিরের দিকে৷ সে জানে না, এখন কি করবে, কি বলবে। নিয়া একবার নেহা ও একবার আহিরের দিকে তাকাচ্ছে৷ এরইমধ্যে হঠাৎ করে আরাভ চলে আসায় নেহা নিয়াকে বলে,
“যাও, তোমার মামার কাছে যাও।”
নেহা ভদ্র মেয়ের মতো চুপচাপ আরাভের দিকে এগিয়ে যায়। আরাভ নেহাকে এভাবে একজন অচেনা পুরুষের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অবাক হয়। সে জিজ্ঞেস করে,
“এই লোকটা কে নেহা? তুই কি ওনাকে চিনিস?”
নেহা বলে,
“উনি আমার পরিচিত। তুমি একটা নিয়াকে নিয়ে যাও। ও তখন ডিসকোণ আইসক্রিম খেতে চাইছিল না? ওকে কিনে দাও। আমি ওনার সাথে কিছু কথা বলে আসছি।”
আরাভ ব্যাপারটা নিয়ে বেশি মাথা না ঘামিয়ে নিয়াকে নিয়ে রওনা দেয়। তারা যেতেই নেহা আহিরের দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে বলে,
“আমার বা আমার মেয়ের দিকে আপনি যদি নিজের পাপী হাত বাড়ানোর চেষ্টা করেন তাহলে এই হাত আর হাতের জায়গায় থাকবে না।”
“আমাকে ভয় দেখাচ্ছ তুমি? কিসের ভিত্তিতে? কি ক্ষমতা আছে তোমার?”
“একজন নারী, একজন মায়ের ক্ষমতা কত বেশি সেটা আপনি হয়তো জানেন না। তাই আজ থেকে ৫ বছর আগে,,,,যাইহোক, যথেষ্ট ক্ষতি করেছেন আমার। নিজের জীবন দিয়েও সেই ক্ষতিপূরণ করতে পারবেন না। তাই আর ক্ষতি করতে আসবেন না। জাহান্নামেও যায়গা পাবেন না তাহলে।”
বলেই নেহা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে নেয়। আহিরও নিজের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। এমন সময় হঠাৎ করে বিকট শব্দে কেপে ওঠে পুরো এলাকা। নেহা কিছু বুঝে ওঠার আগে দেখতে পায় চারিদিকে ভয়াবহ ধোয়ার কুণ্ডলি। পার্কের আশেপাশে থাকা সমস্ত লোক ছোটাছুটি করতে শুরু করে। নেহা হতবাক চোখে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। তার মাথায় হঠাৎ করে এই চিন্তা আসে যে আরাভ তো একটু আগেই নিয়াকে নিয়ে আইসক্রিম কিনতে গেল। ওরা ঠিক আছে তো?
ভয়ে নেহার বুক কেপে উঠল। সে আর এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে সামনের দিকে দৌড় দিলো। একটু সামনে যেতেই দেখতে পেল কয়েকটা ছোট বাচ্চা ধোয়ায় শ্বাস নিতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। কিছু সময়ের মাঝে কয়েকজন ছুটে এলো এদিকে। নেহা তাদের সাহায্যে বাচ্চাগুলোকে টেনে তুলল। নেহা জিজ্ঞেস করল,
“ভাই, এখানে কি হয়েছে কিছু জানেন? হঠাৎ করে একটা বিস্ফোরণের শব্দ শুনলাম তারপর এই ধোঁয়া…কিছু বুঝতে পারছি না।”
একটা লোক বলে,
“পাশেই একটি কেমিক্যাল কোম্পানিতে বিশাল ব্লাস্ট হয়েছে৷ সেখান থেকেই বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে পুরো এলাকায়।”
কথাটা শুনেই নেহার অন্তরাত্মা কেপে ওঠে। সে বলে,
“আমার মেয়ে আর কাজিন ঐদিকে আইসক্রিম কিনতে গেছিল। ওদের কোন খোঁজ পাচ্ছি না।”
“কি বলেন? ওদিকটা তো ধোঁয়ায় পুরো ছেয়ে গেছে৷ পুরো রাস্তায় আমি অনেক মানুষকে পড়ে থাকতে দেখেছি।”
কথাটা শুনে নেহা আর অপেক্ষা না করে ঐদিকে যেতে নেয়। এমন সময় কয়েকজন বলে,
“ঐদিকে যাবেন না বিপদ হতে পারে।”
নেহা কারো কথা না শুনে সেদিকে যেতে থাকে।
★★
আরাভ কোনরকমে নিয়াকে নিয়ে দূরে একটি নিরাপদ স্থানে আসে। এখানে ধোঁয়া নেই তেমন। নিয়া কান্নারত স্বরে বলে,
“আম্মু কোথায় মামা? আমাকে আম্মুর কাছে নিয়ে চলো।”
আরাভ বুঝতে পারে না সে এখন নিয়াকে কিভাবে বোঝাবে। নিয়াকে আইসক্রিম কিনে দিয়ে আসার সময়ই এই ভয়াবহ বিস্ফোরণটি ঘটে। আরাভ নিয়াকে নিয়ে দ্রুত নিরাপদ স্থানে চলে আসে। কারণ সে ছোট বাচ্চা। এই বিষাক্ত ধোয়ায় তার ক্ষতি হবার সম্ভাবনা বেশি। পাশেই কিছু লোক ছুটে এসেছিল উদ্ধার কাজে। আরাভ নিয়াকে তাদেরই একজনের হাতে তুলে দিয়ে বলে,
“মেয়েটাকে একটু দেখে রাখবেন প্লিজ..ওর মাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমাকে ওর মাকে খুঁজতে হবে।”
অতঃপর সে নিয়াকে বলে,
“তুমি এখানেই থাকো নিয়ামনি। আমি তোমার আম্মুকে নিয়ে আসছি।”
বলেই আরাভ দৌঁড় দেয়। নিয়া সেখানেই থাকে। আরাভ দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে পার্কের এড়িয়াতে চলে আসে। কিন্তু নেহা তখন সেখানে ছিল না। আরাভ নেহার নাম ধরে ডাকতে থাকে। কিন্তু কোন সাড়া পায় না।
অন্যদিকে নেহা চলে আসে দোকানপাঠগুলোর কাছে৷ কারণ এখানেই আরাভ আইসক্রিম কিনতে এসেছিল। ভিড়ের মধ্যে তার ফোনটাও কোথায় জানি পড়ে গেছে। তাই যোগাযোগেরও কোন উপায় নেই। সেই স্থানে ধোঁয়া বেশি থাকায় নেহার শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। তবুও সে অনেক কষ্টে খুঁজে বেড়াতে থাকে আরাভ ও নিয়াকে। রাস্তায় সে অনেক মানুষকে পড়ে থাকতে দেখে। কয়েকজনকে তুলে সে নিরাপদ স্থানেও পৌঁছে দেয়। ততক্ষণে অনেক উদ্ধারকারী টিমও পৌঁছে গেছিল৷ তারা নেহাকে বলে,
“দ্রুত এই স্থান ত্যাগ করুন নাহলে আপনারও সমস্যা হবে।”
“আমার মেয়ে আর কাজিন এখানে এসেছিল….ওদের খোঁজ না পেয়ে আমি যেতে পারব না।”
কিন্তু এরপর তাদের জোরাজুরিতে নেহাকে পিছু হটতে হয়। সে বাধ্য হয়ে আবার পার্কের কাছাকাছি চলে আসে। হঠাৎ করেই নেহার কানে আসে কেউ ক্ষীণ স্বরে তার নাম ধরে ডাকছে,
“নেহা…হেল্প..”
নেহা পেছন ফিরে তাকায়। রাস্তার পাশেই গাড়িতে বসে ছিল আহির। মনে হয় হঠাৎ ভীষণ পরিমাণ ধোঁয়া গাড়ির ভেতর চলে যাওয়ায় আহির অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
তবে আহিরের এই অবস্থা দেখে নেহার মনে একটুও খারাপ লাগা কাজ করে না। তার মনে পড়ে যায়, ৫ বছর আগে এই লোকটার জন্য তাকে কতটা নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছিল। আজ হয়তো লোকটা সেসবরেই শাস্তি পাচ্ছে।
নেহা আহিরের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে যায় না সে। মনে মনে বলে,
“ওনার মতো একজন রে*পিস্ট এটাই ডিজার্ভ করে। আইন ওনাকে কি শাস্তি দেবে জানি না৷ তবে যদি প্রকৃতি ওনাকে এই শাস্তিটা দেন তাহলে ঠিক আছে। ভোগ করুক উনি ওনার শাস্তি।”
নেহা এবার পার্কের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় আরাভ ঢলতে ঢলতে তার দিকেই এগিয়ে আসছে। নেহা উদ্বিগ্ন হয়ে আরাভের দিকে এগিয়ে যায়। নেহার কাছাকাছি এসেই আরাভ ঢলে পড়ে। নেহা আরাভের পাশে বসে বলে,
“আরাভ ভাই..তুমি ঠিক আছ তো? আর নিয়া কোথায়?”
আরাভ অনেক কষ্টে বলে,
“ওকে আমি নিরাপদ স্থানে রেখে এসেছি…”
এরপর আরাভের নিঃশ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হচ্ছিল দীর্ঘ সময় বিষাক্ত ধোঁয়ার সংস্পর্শে থাকায়। নেহার অবস্থাও ধীরে ধীরে খারাপ হচ্ছিল। নেহা আর এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে আরাভকে ধরে এই স্থান ত্যাগ করতে নেয়। আহির ঝাপসা চোখে সবকিছুই দেখে। তার দম্ভে যেন আঘাত লাগে এই দৃশ্যে। আহির বুঝতে পারে, নেহার মনে তার প্রতি ঘৃণা কতটা বেশি। যে এই পরিস্থিতিতেও সে আহিরকে একটু দয়া দেখাল না। ততক্ষণে আহিরের পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছিল। সে আহিরার মুখশ্রী মনে করে। আগে মৃত্যুকে ভয় পেত না আহির। তবে আজ কেন জানি তার মরতে ভীষণ ভয় হচ্ছে। বারবার মনে হচ্ছে তার কিছু হয়ে গেলে তার আহিরার কি হবে? এই মুহুর্তে আহিরের মনে হলো সে যদি নেহাকে আহিরার আসল সত্যটা জানায় তাহলে হয়তো নেহা আহিরাকে অবশ্যই সামলাবে। কারণ নিয়াও তো আহিরের মেয়ে, তাকে যদি নেহা সামলায় তাহলে আহিরাকেও সামলাবে। তাছাড়া, আগেও তো একবার আহিরকে তাদের আরেক সন্তানের কথা জিজ্ঞেস করেছিল নেহা। তাই আহির নিজের সর্বশক্তি দিয়ে আবছা স্বরে বলে,
“নেহা..আহিরা..তোমা..মে..”
আহিরের অবস্থা এতই খারাপ হয়ে গেছিল যে সে শব্দটাও ঠিকভাবে উচ্চারণ করতে পারছিল না। তার আওয়াজও অনেক ধীরে বের হচ্ছিল। যা নেহার কান অব্দি পৌঁছায় না। ততক্ষণে নেহা অনেক দূরে চলে যায়। এদিকে আহির ধীরে ধীরে ঢলে পড়তে থাকে। জ্ঞান হারানোর আগে সে দেখতে পায় নাতাশা এসে দাঁড়িয়েছে তার সামনে। তার গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে নাতাশা। এরপর আহিরের চোখে নেমে আসে অন্ধকার।
চলবে ইনশাআল্লাহ✨
#উত্তল_তরঙ্গ
#পর্বঃ৪১
#লেখিকাঃদিশা_মনি
নেহা আরাভকে সাথে নিয়ে নিরাপদ স্থানে এলো। বিষাক্ত ধোঁয়ার প্রভাবে তাদের দুজনের অবস্থাই কাহিল। নেহাকে আসতে দেখেই নিয়া ছুটে এসে বললো,
“আম্মু, তুমি কোথায় ছিলে? আমি কত ভয় পেয়ে গেছিলাম, জানো?”
নেহা অনেক কষ্টে সামান্য হাসে। আরাভ ততক্ষণে ঢলে পড়ে। নেহার নিঃশ্বাসও ক্ষীণ হয়ে আসে। তাদেরকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। নেহা নিজের জ্ঞান হারানোর আগেও নিয়ার হাত ধরে বলে,
“নিজের খেয়াল রেখো, একজন ভালো মানুষ হও। এছাড়া আমার আর কোন চাওয়া নেই।”
নিয়া নিজের মাকে এই অবস্থায় দেখে চুপ থাকতে পারে না। ছোট মেয়েরার চোখে জল চলে আসে। মাকে হারানোর ভয় চেপে বসে বুকের মাঝে। পাশে থাকা কয়েকজন মানু্ষ তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে,
“চিন্তা করো না, তোমার মা ঠিক হয়ে যাবে।”
কিন্তু ছোট নিয়ার কানে সেসব কথা যায় না। সে শুধু নিজের মায়ের অসহায়, নিস্তেজ চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকে।
★★
নাতাশা আহিরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। হাসপাতালে এনেই আহিরকে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো ছিল। আহিরের তখনো চেতনা ফেরে নি৷ তবুও তার অবচেতন মন তখনো জাগ্রত ছিল। অবচেতন মনেও আহির নেহাকে বলার চেষ্টা করছিল, আহিরা তার মেয়ে। সে যেন আহিরার দায়িত্ব নেয়। নিজের জীবনের ক্রান্তিলগ্নে এসে তাকে সেই নেহার কাছেই সাহায্য চাইতে হলো যাকে সে একসময় অসহায় অবস্থায় ফেলে দিয়েছিল। নেহা কেন সাহায্য করবে তাকে? আজ থেকে ৫ বছর আগে যখন আহির নেহা ও তার মেয়েকে রাস্তায় ফেলে দিয়েছিল তখন কি একবারো তাদের কথা ভেবেছিল? সেদিন তো নেহা ও তার মেয়ের বড় কোন ক্ষতি হয়ে যেতে পারব। আহির সেসব কিছু ভাবে নি। শুধু নিজের প্রতিশোধের কথাই ভেবেছে। তাই নেহার কাছ থেকে বিন্দুমাত্র সহানুভূতি সে ডিজার্ভ করে না।
আহিরের চিকিৎসা চলল কয়েক ঘন্টা। এরপর তার জ্ঞান ফিরলো। নাতাশা আহিরের কাছে এসে বলল,
“তুই ঠিক আছিস, আহির? জানিস, আমার তোর জন্য কতটা চিন্তা হচ্ছিল। ভাগ্য ভালো আমি তোর ফোনের লোকেশন ট্রাক করে ছুটে গেছিলাম ওখানে। আমার পৌঁছাতে আর একটু দেরি হলে হয়তো আজ তোকে আমি বাঁচাতে পারতাম না।”
আহির চোখ খুলে চারিপাশে তাকায়। নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কৃত করে সে চমকায়। হয়তো ভেবেছিল চোখ খোলার পর নিজেকে জাহান্নামে দেখতে পাবে, জীবনে তো কম পাপ করে নি। আহির নাতাশাকে বলে,
“আহিরা…আহিরা কই…”
নাতাশার মেজাজটা গরম হয়ে যায়। সে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আহিরকে উদ্ধার করল অথচ আহির জ্ঞান ফিরে আহিরার খোঁজ করছে। যে কিনা তার ব্যাপারে একটুও ভাবে না। নাতাশা তবুও বললো,
“ও বাসায় আছে। আমি আঙ্কেলকে তোর ব্যাপারে এখনো কিছু জানাই নি। জানালে শুধুশুধু চিন্তা করবে। ডাক্তার বলেছে, তুই জলদি সুস্থ হয়ে যাবি। আশা করি, ২ দিন পর নির্ধারিত তারিখেই আমাদের এনগেজমেন্ট সম্পন্ন হবে।”
আহির কিছুই বললো না। তার কেন জানি নেহার কথা মনে পড়লো। নেহা তাকে এই চরম বিপদের মুহুর্তে একা ফেলে গেছিল। একজন মানুষকে কতোটা ঘৃণা করছে এত অসহায় অবস্থায় তাকে একা ফেলা যায় সেটাই ভাবতে থাকে আহির। যদিও তার কাছে এটায় কিছু যায় আসার কথা না। কিন্তু আজ কেন জানি, সে বিষয়টা হজম করতে পারছে না। সে নেহার সন্তানদের বাবা। তাদের মাঝে একটা বন্ধন তো আছেই, ১০ মাস এক ছাদের নিচে ছিল তারা। এসব কিছুর কি কোন মূল্য নেই নেহার কাছে। সেটাই ভাবতে লাগলো আহির। তার মাথা আরো গরম হয়ে গেল যখন মনে পড়লো নেহা তাকে সাহায্য না করলেও ঐ আরাভকে সাহায্য করেছিল। নিজের কাধে করে তাকে নিয়ে যাচ্ছিল। আচমকা আহিরের মুখবিবর শক্ত হয়। আরাভের প্রতি তার এমনিতেই যথেষ্ট রাগ ছিল। এখন সেই রাগ যেন চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছিল।
নাতাশা আহিরের রাগী চেহারা দেখে বলে,
“কি হলো আহির? কি ভাবছিস?”
আহির বলে,
“ঠিক বলেছিস তুই। এনগেজমেন্ট আর বিয়েটা জলদি সেরে ফেলতে হবে।”
অতঃপর সে নিজের মনকে বুঝ দিয়ে বলে,
“ঐ নেহা জাহান্নামে যাক,,,আমার কি? আমাকে নিয়ে ও যাই ভাবুক,,আই ডোন্ট কেয়ার। আমার কাছে ওর কোন গুরুত্ব নেই..কোন না।”
আসলেই কি নেই? প্রশ্নটা মনে আসতে আহির নিজেকে ধমকায়। আজকের ঘটনার পর সে কিছুতেই আগের মতো স্বাভাবিক গা-ছাড়া ভাব দেখাতে পারছিল না। বারংবার নেহার অবজ্ঞার কথা ভেসে আসছিল তার মনে। আহির এটা মানতেই পারছিল না যে, নেহা তাকে অবহেলা করে ঐ আরাভকে সাহায্য করেছে। এই অনুভূতি সামনে তার জীবনে যে এক বড় প্রভাব ফেলবে তা সহজেই অনুমেয়।
★★
আরাভের জ্ঞান ফিরতেই সে নিজেকে আবিষ্কার করল হাসপাতালে। সে দ্রুত উঠে বসে বলল,
“নেহা..!”
একজন ডাক্তার এগিয়ে এসে বললেন,
“কাম ডাউন..আপনার চিকিৎসা চলছে। শুয়ে পড়ুন।”
আরাভ বলে,
“ডক্টর,,আমার নেহা কোথায়?”
“নেহা কে? আপনার ওয়াইফ?”
আরাভ থমকে যায়। নত স্বরে বলে,
“আমার কাজিন…ওর একটা মেয়েও আছে। আমার সাথেই ছিল।”
“ওহ, আপনি ঐ বাচ্চাটার মা কথা বলছেন? উনি পাশের কেবিনেই আছেন। বাচ্চাটা খুব কাঁদছিল। কারো নাম্বারও দিতে পারছিল না। আমাদের এক নার্স ওনাকে সামলাচ্ছে।”
আরাভ বেড থেকে উঠে দাঁড়ায়। ডাক্তার কিছু বলতে গেলে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
“আমি একদম ঠিক আছি ডক্টর। আমাকে আমার কাজিন ও তার মেয়ের কাছে যেতে হবে। ওদের সামলানোর জন্য আমি ছাড়া আর কেউ নেই।”
ডাক্তার আর আরাভকে থামাতে পারেন না। আরাভ বাইরে এসেই দেখতে পায় একজন নার্স ক্রন্দনরত নিয়াকে সামলাচ্ছে। আরাভকে দেখেই নিয়া ছুটে এসে বলে,
“মামা..ওরা আমাকে আম্মুর সাথে দেখা করতে দিচ্ছে না। আমার আম্মুর জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে। তুমি প্লিজ ওদেরকে বলো, আমাকে যেন আম্মুর সাথে দেখা করতে দেয়।”
আরাভ নিয়াকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে,
“চিন্তা করো না, আমি যেভাবে সুস্থ হয়ে ফিরলাম, তোমার আম্মুও ঠিক সেভাবেই ফিরবে।”
এমন সময় একজন ডাক্তার আসেন। আরাভ তাকে দেখে এগিয়ে গিয়ে বলে,
“আমার কাজিন নেহা কেমন আছে?”
“ওনার অবস্থা বেশি ভালো না,,,ফুসফুসের অনেক বড় একটা অংশ বিষাক্ত ধোঁয়া দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
“এটা কিভাবে হতে পারে ডক্টর? ওকে তো দেখে স্বাভাবিক মনে হয়েছিল। এমনকি আমিই অসুস্থ হয়ে পড়ায় ও আমায় নিয়ে এসেছিল নিজের কাধে ভড় করে।”
“শুরুর দিকে ওনাকে স্বাভাবিক মনে হলেও ধোঁয়া ওনার ভেতরে যথেষ্ট প্রবেশ করে ওনার শ্বাসনালীকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। উনি অনেক বেশি সময় ধোঁয়ার মাঝে থাকায় এটা হয়েছে। এরকম রোগীর ক্ষেত্রে বাঁচার সম্ভাবনা কম। তবুও আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।”
আরাভ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এরমধ্যে ডাক্তার বলেন,
“উনি আপনার আর ওনার মেয়ের সাথে কথা বলতে চাইছেন। আপনারা আসুন।”
আরাভ নিয়াকে কোলে নিয়ে চলে যায় নেহার সাথে কথা বলতে। তাদের দেখেই নেহা নিজের মুখ থেকে অক্সিজেন মাস্কটা খোলে। নিয়া কাঁদছিল। নেহা আধো আধো স্বরে বলে,
“কেঁদো না..নিয়ামনি…তোমাকে এখন স্ট্রং হতে হবে।”
এরপর সে আরাভের দিকে তাকিয়ে আকুতির সাথে বলে,
“আমার কিছু হয়ে গেলে আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো আরাভ ভাই। তুমি ছাড়া যে ভরসা করার মতো আর কাউকে পাচ্ছি না।”
আরাভ বলে,
“কিচ্ছু হবে না তোর..তুই একদম ঠিক হয়ে যাবি।”
নেহার শ্বাসের গতি বাড়ে। ডাক্তার বলেন,
“আপনারা এখনই কেবিন থেকে বের হন। ওনার অবস্থার অবনতি হচ্ছে, আল্লাহকে ডাকুন। আল্লাহ ছাড়া ওনাকে বাঁচানোর ক্ষমতা এখন আর আমাদের কারো নেই।”
নেহার এই অবস্থা দেখে নিয়া ফুপিয়ে কাঁদছিল। আরাভ কোনরকমে নিয়াকে নিয়ে বাইরে আসে।
চলবে ইনশাআল্লাহ✨