#উত্তল_তরঙ্গ
#পর্বঃ৪৮
#লেখিকাঃদিশা_মনি
আহির নেহার থেকে কিছুটা দূরে সরে আসে। নেহার চোখে জ্বলতে থাকা আগুন যেন আহিরকে বুঝিয়ে দিচ্ছে সে তাকে আর কোন সুযোগ দিতে রাজি নয়। এপর্যায়ে আহিরের মনের অহং যেন আবার জেগে উঠল। আহিরও নেহাকে তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
“আমি তো তোমার ভালোর জন্যই একটা সমঝোতায় পৌঁছাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি যদি নিজের ভালো না বোঝো…তাহলে আমার কিছু করার নেই।”
নেহার দুচোখ যেন জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি। সে বলে,
“আমার ভালো এবার আমিই বুঝে নেব৷ আমাদের দেখা এরপর আদালত চত্ত্বরেই হবে। সেখানে গিয়েই পরিস্কার হবে, ন্যায়ের হয় নাকি ক্ষমতার।”
আহির বলে,
“জয় সবসময় ক্ষমতারই হয়, যেটা আমার আছে। তুমি বরং নিজের পরাজয়ের গ্লানিতে ডুবে যেতে প্রস্তুত হও।”
নেহা আর উত্তরে কিছু বলে না। তবে তার দুই চোখ যা বলার বলে দেয়। তার দুচোখের ভাষাই বলে দিচ্ছে, সে সহজে মাটি ছাড়বে না।
★★
নেহা আজ এসেছে তার বড় আব্বু আজমাইন চৌধুরীর সাথে দেখা করতে হাসপাতালে। লোকটা এখনো সম্পূর্ণ সুস্থ নয়। সেদিন নেহার সাথে কথা বলার পর থেকে লোকটা আবারো অচেতন হয়ে পড়েছে। এখনো অব্দি তার জ্ঞান ফেরেনি। নেহা বাহির থেকে তাকে দেখে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
“আজ তুমি সুস্থ থাকলে আমার লড়াইটা আরো সহজ হতো বড় আব্বু।”
এমন সময় আচমকা নেহার পিঠে কেউ স্পর্শ করে। নেহা চোখের জল মুছে পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখতে পায় আরাভকে। আরাভ নেহার দিকে টিস্যু পেপার বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“নিজের চোখের কোণে জমা এই নোনা জল মুছে নে। আব্বু না থাকলেও আমি তোর পাশে আছি। জয় তোরই হবে।”
নেহা যেন আরাভকে তার অভিভাবক ও ভরসাস্থল হিসেবে পায়। তার মনে এখন খানিকটা স্বস্তি ফেরে। আরাভ বলে,
“তুই নিজের মেয়ের কাস্টডি নেয়ার জন্য কেইস করেছিস তো নেহা? আজ তো বোধহয় তারই হেয়ারিং। তুই আমাকে কিছু বলিস না কেন? মানছি তুই অনেক সাহসী৷ একাই সব পারিস। কিন্তু আমি এতটাও অর্থব নই যে তোর কোন কাজে লাগব না।”
নেহা বলে,
“এমনটা নয় আরাভ ভাই,,,আসলে আমি নিজেই ব্যাপারটা নিশ্চিত ছিলাম না। এই কেসটা লড়তে গিয়ে না জানি অতীতের কত চরম সত্য সামনে আসবে। আমি বুঝতে পারছি না কিভাবে সবকিছু প্রমাণ করবো।”
“আমি তোকে একটাই পরামর্শ দেব যে, তুই ভয় পাস না।”
নেহা মাথা নাড়ায়। অতঃপর বলে,
“নিয়া কোথায় আছে?”
“নিয়া আম্মুর কাছে আছে। আম্মু ওকে সামলাচ্ছে।”
নেহা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। আরাভ বলে,
“এখন কি তুই কোর্টে যাবি?”
নেহা মাথা নাড়ায়।
“আচ্ছা, চল।”
★★
কোর্টে এসে উপস্থিত হয়েছে আরাভ, নেহা, আহির, নাতাশা এবং মুমিনুল পাটোয়ারী। নাতাশা একদম আহিরের সাথে চিপকে আছে৷ আহিরকে যতো কুমন্ত্রণা দেয়ার সে দিচ্ছে। এখানকার উকিলও তার ঠিক করা। সে আহিরকে ভরসা দিয়ে বলছে,
“তুই কোন চিন্তা করিস না আহির, আমি যেই উকিল ঠিক করেছি সে আজ অব্দি কোন কেইস হারে নি। আজকেও তোরই জয় হবে।”
আহির স্বস্তির শ্বাস ফেলে। তবে তার মনের কোণে কোথাও একটা শংকা থেকেই যায়। নেহাকে সে যতোটা উদগ্রীব দেখেছে, সে কি এতো জলদি নিজের স্থান ছেড়ে দেবে? আহির বুঝতে পারছে নেহাও নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে আহিরার কাস্টডি পাওয়ার জন্য।
কিছু সময় পরই আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমেই আহিরদের উকিলকে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়। আহিরের ঠিক করা উকিল মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ দাঁড়িয়ে বলা শুরু করেন,
“এই কেইসটা আমার দেখা আজ অব্দি অন্যতম হাস্যকর কেইস। আহিরা পাটোয়ারী হলেন আমার ক্লায়েন্ট আহির পাটোয়ারীর বায়োলজিকাল ডটার। আর হঠাৎ কোথা থেকে এই মহিলা এসে আহিরাকে নিজের মেয়ে দাবি করছে। এসব যেন মামার বাড়ির আবদার। ”
এমন সময় নেহার ঠিক করা উকিল আমিনা খাতুন দাঁড়িয়ে বলেন,
“অবজেকশন, ইউর ওনার, উনি কিভাবে কিছু না জেনে এভাবে কথা বলছে? আমার ক্লায়েন্টের কাছে ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট আছে আর সেখানে স্পষ্ট যে, আহিরার মা আমার ক্লায়েন্ট নেহা চৌধুরীই।”
আব্দুল্লাহ বলে ওঠেন,
“যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে এতদিন কোথায় ছিলেন ঐ সো কলড মাদার? আজ হঠাৎ এতগুলো দিন পর ওনার বাচ্চা প্রেম জেগে উঠল? অথচ এই পাঁচ বছরে একবারো ওনার নিজের বাচ্চার কথা মনে পড়েনি?”
“মনে পড়ে নি কারণ আপনার ক্লায়েন্ট মিস্টার আহির পাটোয়ারী এতদিন ধরে আমার ক্লায়েন্টকে তার বাচ্চার ব্যাপারে কিছু জানতেই দেয়নি৷ আমার ক্লায়েন্ট ভেবেছিল তার বাচ্চা মৃত বা হারিয়ে গেছে কিন্তু..”
আব্দুল্লাহ আবারো বলে ওঠেন,
“এ কেমন মা? যে দীর্ঘ পাঁচ বছরেও জানলো না তার বাচ্চা বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে। মায়েরা কি এমন হয়? এ তো মায়ের নামে কলঙ্ক।”
কথাগুলো নেহার অন্তর ছেদ করে যাচ্ছিল। আরাভ হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। আহিরেরও উকিলের এরকম কথা শুনে অস্বস্তি হচ্ছিল। নাতাশা খুশি হয়ে বলে,
“দেখলি তো আহির, আমার ঠিক করা উকিল কতোটা কাজের। আজ আর ঐ নেহার কোন জারিজুরি কাজ করবে না।”
এমন সময় আমিনা খাতুন ক্ষুব্ধ স্বরে বলেন,
“ইউর ওনার, আমার প্রতিপক্ষ উকিল বোধহয় কোর্টের রুলস ভুলে গেছেন। এভাবে উনি আমার ক্লায়েন্টকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে পারবেন না।”
জর্জসাহেব এবার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহকে কিছুটা কড়া কথা শোনান। যাতে মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর মুখ চুপসে যায়। আমিনা খাতুন বলে ওঠেন,
“আমি আমার ক্লায়েন্ট নেহা চৌধুরীকে কাঠগড়ায় ডাকতে চাই। উনি নিজের মুখেই ওনার সাথে ঘটা সকল ঘটনা বলুক।”
আমিনা খাতুনের কথাটা শুনেই নেহা চমকে ওঠে। এতক্ষণ তার মনে যেটুকু সাহস অবশিষ্ট ছিল তাও যেন আর রইল না এখন৷ কিভাবে নিজের সাথে ঘটে যাওয়া এই ভয়াবহ ঘটনাগুলো সবার সামনে বলবে সে? নেহা বুঝতে পারছিল না। আরাভ নেহার কাধে হাত রেখে সান্ত্বনা দিয়ে বলে,
“যা, নেহা,,,তুই পারবি।”
নেহা কাঠগোড়ায় গিয়ে ওঠে। কোরান শুয়ে শপথ করার পরই আমিনা খাতুন নেহাকে বলেন,
“আপনার সাথে ঘটা সবকিছু মহামান্য আদালতকে খুলে বলুন।”
নেহা কাপছিল। তার চোখের সামনে ধীরে ধীরে সেই ভয়াবহ মুহুর্তগুলো ভেসে উঠতে থাকে। আহিরের তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া, দীর্ঘ ৯ মাস বন্দি রেখে ভয়াবহতম মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার সব মনে পড়তে থাকে। নেহা সবার সামনে কিভাবে বলবে তাকে ধ*ণ করেছিল এই নিকৃষ্ট মানব। তার গলা যেন আটকে যায়। এরইমধ্যে আব্দুল্লাহ বলে ওঠেন,
“আপনার ক্লায়েন্ট বোধহয় নিজের বানানো গল্পগুলো ঠিকমতো সাজাতে পারছে না। যা বলার আমি বলছি, উনি প্রথমে মিস্টার আহিরের সাথে প্রতারণা করে ওনার সাথে মিথ্যা ভালোবাসার অভিনয় করে ওনাকে প্রেমের জালে ফেলেন। তারপর ওনার সাথে স্বেচ্ছায় বিছানায় নিয়ে বাচ্চার জন্ম দিয়ে সেই বাচ্চাকে ফেলে দিয়ে..”
নেহা চিৎকার করে বলে ওঠে,
“নাহ, এসব সত্য না। এসব মিথ্যা..”
নেহার প্যানিক এট্যাক হতে নেয়। সে আর কিছু না বলে কোর্ট চত্ত্বরেই জ্ঞান হারায়। আরাভ ছুটে চলে এসে নেহাকে কোলে তুলে নেয়। আহিরও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। নাতাশা বলে,
“এর নতুন নাটক শুরু।”
কোর্ট সেদিনের জন্য মুলতবি রাখা হয়। আরাভ তড়িঘড়ি করে নেহাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে থাকে। এদিকে আহিরও হাসপাতালে যেতে নয়। তখন নাতাশা তাকে আটকাতে চায় কিন্তু আহির কোন কথাই শোনে না।
নাতাশা বিরক্ত হয়ে বাইরে আসে। বাইরে আসতেই এক বোরখা পড়া নারী তার সম্মুখীন হয়ে পথ আটকে দাঁড়ায়। নাতাশা বিরক্ত হয়ে বলে,
“কে আপনি? আমার পথ থেকে সরে দাড়ান।”
রিনা বলে,
“আমায় চিনতে পারলেন না নাতাশা আপু?”
“তুমি?”
নাতাশার গলা কাপতে থাকে। রিনা বলে ওঠে,
“আমাকে আরো ১০ লাখ টাকা দিন..আমি কিন্তু সব জেনে গেছি আপনার ব্যাপারে..যদি আপনি চান সব গোপন থাকুক তাহলে.?”
‘নাহলে কি করবি তুই?’
“আহির ভাইকে বলে দেব যে আপনি কিভাবে ড্রাগ খাইয়ে মৃদুল ভাইকে মেরেছিলেন।”
“হ্যাঁ মেরেছি তো? কি প্রমাণ আছে তোর কাছে? যা গিয়ে বল।”
এমন সময় আহির চিৎকার করে বলে ওঠে,
‘নাতাশা! মৃদুলের মৃত্যুর জন্য তুই দায়ী!’
চলবে ইনশাআল্লাহ✨
#উত্তল_তরঙ্গ
#পর্বঃ৪৯
#লেখিকাঃদিশা_মনি
আহির হতবাক চোখে তাকিয়ে আছে নাতাশা ও রিনার দিকে৷ রিনা বুঝতে পারছে না এই মুহুর্তে তার কি করা প্রয়োজন। নাতাশাও শুকনো ঢোক গিলতে থাকে। আহির ক্ষিপ্তবেগে এগিয়ে এসে নাতাশার দুই বাহু শক্ত করে ধরে বলে,
“তুই…তুই মেরেছিস আমার বন্ধু মৃদুলকে..এতদিন ধরে এই সত্যটা আমার থেকে লুকিয়ে গেছিস তুই..”
রিনা সুযোগ বুঝে দৌড়ে পালায়। নাতাশার পালানোর পথ নেই। সে অনুনয়ের স্বরে বলে,
“আমার কথাটা একবার শোন, আহির। তোর শুনতে ভুল হয়েছে।”
“আমি কিছু ভুল শুনিনি। রিনা আর তোর সব কথোপকথন শুনেছি আমি। মৃদুলের মৃত্যুর পরও পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী বলা হয়েছিল, অতিরিক্ত ড্রাগ নেয়ায় ওর মৃত্যু হয়েছিল। তার মানে ওকে সেই ড্রাগের যোগান দুই দিয়েছিস! এভাবে আরো কত জনের জীবন নষ্ট করেছিস তুই। আর আমি কিনা নেহাকে দোষী ভেবে শুধু শুধু ওকে..”
আহির পুরো ভেঙে পড়ে। এতদিন ধরে তার মনে যে অপরাধবোধের পাহাড় জমছিল আজ যেন তা সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে যায়। তার কানে বাজতে থাকে নেহার করুণ আর্তনাদগুলো। যখন নেহা বলছিল, আমি কোন অন্যায় করিনি, কোন অপরাধে আমাকে এমন কঠিন শাস্তি দিচ্ছেন আপনি? আহির পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে যায়। নাতাশা নিজেকে নিরপরাধ দাবি করে নানান কথা বলতে থাকে কিন্তু সেসব কোন কথাই আহিরের কানে যায়না। আহির আচমকা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। নাতাশার চুলের মুঠি ধরে সে বলে,
“চুপ কর তুই..তোর জন্য শুধুমাত্র তোর মিথ্যা প্ররোচনায় আমি নেহার মতো একটা নিরপরাধ মেয়েকে দিনের পর দিন এত কষ্ট দিয়েছি। নিজের এক সন্তানের সাথেও অন্যায় করেছি। নিজের আরেক মেয়েকে তার মায়ের থেকে দূরে করে দিয়েছি..আমার সব পাপের কারণ তুই..আমাকে পাপী বানানোর জন্য তুই দায়ী। আর আজ এসব কিছুর ফল তোকে ভোগ করতে হবে। তোর হাত ধরেই আমার সব পাপের সূচনা আর আজ তোকে শেষ করেই আমি নিজের সব পাপের ইতি টানব।”
নাতাশা বলে ওঠে,
“আহির..ছাড়..লাগছে আমায়।”
আহির নাতাশাকে জোরপূর্বক টেনে নিজের গাড়িতে তোলে। অতঃপর গাড়ি স্টার্ট করে। কিছুক্ষণ পর আহির নিজের সেই গোপন ডেরায় নিজে যায় নাতাশাকে। যেখানে সে একসময় নাতাশাকে বন্দি করে রেখেছিল৷ অতঃপর নাতাশার চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে তাকে ভেতরে নিয়ে যায়। নাতাশা বলে,
“এসব কি করছিস তুই আহির?”
আহির বলে,
“মনে পড়ছে এই যায়গাটার কথা? আজ থেকে ৬ বছর আগে তোর প্ররোচনায় আমি ঠিক এখানে নিয়ে এসে নেহার উপর ৯ মাস চরম অত্যাচার করেছি। যার কোন ক্ষমা হয় না৷ তোর জন্য আমি ওর কাছে আজীবনের জন্য অপরাধী হয়ে গেছি ”
আহিরের গলার স্বর ভেঙে পড়ল। নাতাশা বলল,
“আমার কথাটা শোন একবার..”
আহির রেগেমেগে পাশ থেকে একটি লোহার রড তুলে নিয়ে নাতাশার হাতে জোরে আঘাত করে। নাতাশা জোরে চেচিয়ে ওঠে। আহির নিজের ফোন বের করে বলে,
“যদি ভালো চাস তাহলে এখনই নিজের সব অপরাধ স্বীকার করে নে। আমি তোকে আর সুযোগ দেব না। সব আজ আমার কাছে পরিস্কার।”
নাতাশা ক্রন্দনরত স্বরে বলে,
“হ্যাঁ, আমিই..আমিই মৃদুলের মৃত্যুর জন্য দায়ী। আমিই ওকে ড্রাগ দিয়েছিলাম৷ আর অতিরিক্ত ড্রাগের নেশায় ও নিজেকে শেষ করে দিয়েছিল।”
“আর কি কি করেছিলিস সব বল।”
“আমি তোকে নেহার বিরুদ্ধে উসকে দিয়েছিলাম৷ তোকে বুদ্ধি দিয়েছিলাম নেহাকে এখানে নিয়ে এসে বন্দি করে রেখে ওর উপর অত্যাচার করার। এভাবে মৃদুল আর তোর মায়ের প্রতি হওয়া অন্যায়ের প্রতিশোধ নিতে বলেছিলাম আমি তোকে।”
আহির নিজের রাগ সামলাতে না পেরে রডটা দিয়ে নাতাশার গায়ে আবারো আঘাত করে। নাতাশা আবারো চেচিয়ে ওঠে। আহিরের রাগ কমে না। তার বারবার মনে হয়, এই মেয়েটা তাকে পাপের সাগরে নিয়ে গেছে। তাই তাকে ক্ষমা করা উচিৎ নয়। নাতাশা বলতে থাকে,
“আমি যাই করি না কেন..দিনশেষে এটাই সত্য..এই দুনিয়ায় যদি কেউ তোকে সত্যিকারে ভালোবেসে থাকে সেটা শুধুই আমি আহির। তোর মায়ের পর আমিই সেই নারী যে তোকে মন থেকে ভালোবেসেছে..ঐ নেহা ও তো তোকে ঘৃণা করে..আর যেই মেয়েকে তুই এত আদরে মানুষ করলি সেই আহিরাও তোকে ঘৃণা করে..”
আহির এটা শুনে আরো ক্ষেপে গিয়ে নাতাশাকে আরো জোরে জোরে আঘাত করতে করতে বলে,
“শুধুমাত্র তোর জন্য আমাকে ওরা ভালোবাসে না। তুই আমাকে কুমন্ত্রণা না দিলে আজ আমি একটা স্বাভাবিক জীবন পেতাম। শুধুমাত্র তোর জন্য আমাকে পাপের রাস্তায় আসতে হয়েছে।”
এভাবে আহির নিজের ক্ষোভ মেটাতে থাকে নাতাশাকে মারতে মারতে। নাতাশা অনেক অনুনয় করে আহিরকে থামার। কিন্তু আহির থামে না। নাতাশার পুরো শরীর রক্তাক্ত হতে থাকে। নাতাশার শ্বাস ক্ষীণ হয়ে আছে। টানা ৩০ মিনিট আহির এভাবেই নাতাশাকে মারতে থাকে। নাতাশা ধরে আসা স্বরে বলে,
“তুই আমায় যতোই আঘাত করিস না কেন..মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি এটাই বলে যাব..আমি যা করেছি তাতে আমার কোন আফসোস নেই। দিনশেষে আমি তোকে ভালোবাসি..আর শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তোকেই ভালোবেসে যাব।”
আহির এটা শুনে রেগে নাতাশার মাথায় জোরে একটা আঘাত করে। সাথে সাথেই নাতাশার দু চোখ বন্ধ হয়ে যায়। তার মাথার মগজ বেরিয়ে আসে। নাতাশার শ্বাস চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। আহির যখন বুঝতে পারে নাতাশা আর নেই তখন সে নাতাশার মৃতদেহের পাশে বসে পড়ে। ক্রন্দনরত স্বরে বলে,
“কেন নাতাশা কেন? তুই তোর আমার বন্ধু ছিলি। তাহলে কেন আমায় এভাবে পাপের দুনিয়ায় নিয়ে এলি? আর চলেও গেলি আমায় খু**নি বানিয়ে…তুই একটু ভালো হতে পারতি না? তাহলে আমিও একটা স্বাভাবিক জীবন পেতাম। কিন্তু এখন..এখন যে আমার পুরো জীবনটা শেষ হয়ে গেল। এত নিকৃষ্ট পাপ আমি করেছি যা নিজের জীবন দিয়েও শোধরাতে পারব না..নাহ অনেক অপরাধ করেছি আমি। এবার নিজের সব অপরাধের শাস্তিও আমায় ভোগ করতে হবে। কিন্তু তার আগে, আমি সবকিছু ঠিক করে দেব। নেহার জীবনটা আমার জন্য এলোমেলো হয়ে গেছে। এখন ওর জীবনটা আমাকে আবার স্বাভাবিক করতে হবে। জানিনা কতোটা পারব তবে আমায় চেষ্টা করতে হবে। আমি আহিরাকে ওর আসল মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেব। আদালতে নিজের সব অন্যায়ও স্বীকার করব। তারপর আদালত আমায় মৃত্যুদণ্ড দিলেও আমার আর আফসোস থাকবে না।”
★★
নেহার জ্ঞান ফিরেছে কিছু সময় আগে৷ চোখ খুলতেই সে আরাভকে নিজের সামনে দেখে। বর্তমানে সে একটি হাসপাতালে। নেহা উঠে বসে আরাভের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“এটা কি কোথায় আরাভ ভাই? আমি..আমার নামে আদালতে কেন মিথ্যা বলা হচ্ছে? আমার সাথে হওয়া অন্যায়গুলো আমি কিভাবে প্রমাণ করব? কিভাবেই বা নিজের মেয়ের অধিকার অর্জন করব আমি?”
বলেই কাঁদতে থাকে নেহা। আরাভ বলে,
“তুই শান্ত হ নেহা। আমি উকিলের সাথে কথা বলেছি। সব ঠিক হয়ে যাবে।”
বিপাসা চৌধুরীর হাত ধরে নিয়াও ততক্ষণে সেখানে চলে এসেছিল। সে এসেই নিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“আম্মু..কি হয়েছে তোমার? দেখো, তোমার মেয়ে এসেছি।”
নেহা নিয়াকে জড়িয়ে ধরে। আহিরার কথাও মনে পড়ে তার। আহিরাও তো তারই মেয়ে। অথচ তার থেকে কতো দূরে।
ঠিক এমন সময় আহির চলে আসে। তার কোলে আহিরা। আহিরের শরীরে রক্ত। সে এসেই বলে,
“নেহা..”
নেহা দরজার দিকে তাকিয়ে অবাক চোখে দেখে। আহির আহিরাকে কোল থেকে নামাতেই আহিরা ছুটে এসে নেহাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“আমার মাম্মা..”
“আমার মেয়ে!”
সবাই অবাক। আহির বলে,
“পরিবারটাকে পূর্ণতা দিতে চলে এলাম। ধরে নাও এটা আমার প্রায়শ্চিত্ত।”
চলবে ইনশাআল্লাহ✨