#উন্মুক্ত_লাইব্রেরী
লেখা – আয্যাহ সূচনা
১৯.
“তুই নিজে খাইতে পাস না।আবার এহন গলায় ঝুলাইছোস অন্য বেডিরে।কি খাওয়াবি বউরে?”
আফজাল মিয়ার কক্ষে বসে আছে বর্ণ। এসেছিলো আলোচনা করতে।উল্টো তিনি বউ খাওয়ানোর বানী জুড়ে বসেছেন।ভ্রুকুটি করে কিছুক্ষণ তাকালো বর্ণ। এত কথা ভালো লাগছে না।কাজের কথা না বলে আজাইরা আলাপ জুড়েছে।
“আমার মগজ একটু একটু ভুনা কইরা খাওয়ামু।লগে কিডনির ভাজি আর কলিজার ঝোল ওয়ালা তরকারি”
বিকৃত মুখভঙ্গিতে আফজাল মিয়া খ্যাঁক খ্যাঁক করে বলে উঠলেন,
“খবিশ কোনহানকার জানি!”
বেহুদা অর্থহীন কথায় নিজের সময় অপচয় বলে মনে হলো বর্ণের।অবশেষে বর্ণ গম্ভীর ভঙ্গিতে মূল প্রসঙ্গে এলো।বললো,
“চাচা এত কথা মজা লাগেনা।উপরের ঘরটা কি পরিষ্কার করায় দিবেন?”
আফজাল মিয়া প্রত্যুত্তর করলো,
“নিজেরা যদি কইরা নিতে পারোছ তাইলে কর।উপরের ঘরের ভাড়া বেশি কইলাম।”
বর্ণ আফজাল মিয়ার এরূপ কথায় ক্রুদ্ধ হয়ে বলে উঠে,
“উপরের ঘর বছরের পর বছর এমনেই পইড়া আছে।হঠাৎ কইরা এটার দাম কেমনে বাড়লো?আমি যেই ভাড়া দেই ওইটাই দিমু।….লন লাগলে নিজেরাই পরিষ্কার কইরা লইলাম।”
“এহ!আমার ঘরের দাম আছে হুমুন্দির নাতি!”
বর্ণ ঠোঁট শক্ত করে বলে উঠলো,
“এক পাও কব্বরে গিয়া আছে তাও শরীর ভর্তি টসটসা লোভ।দুইদিন পর মইরা যাইবেন।আমি কিন্তু দাবি ছাড়ুম না। মরার পরও দাবি রাখুম আপনি আমারে ঠকায় খুপড়ি ঘরের ভাড়া বেশি রাখছেন।”
আফজাল মিয়ার স্ত্রী ভীতু স্বভাবের।এতক্ষণ দুজনের কথা চুপচাপ শুনছিলেন।হুট করে আতঙ্কিত হয়ে উঠেন।মুখে সেই ছাপ স্পষ্ট।স্বামীর পিঠে হাত রেখে বললেন,
“এই তুমি ওর কথাই মাইনা লও।”
বর্ণ বাঁকা হাসে।বলে উঠে,
“চাচী?আপনিতো বুদ্ধিমতি।কেমনে বিয়া করলেন এই খাইস্টা ব্যাটারে?আপনার দরকার আছিলো আমার মত তাগড়া একটা পোলা। কিসব বুইড়ার চক্করে পইড়া আছেন। লন বিয়া করি”
আফজাল মিয়ার স্ত্রী ঠিকই ধরতে পারছেন বর্ণের ঠাট্টা।লাজুক ভঙ্গিতে মুখ লুকিয়ে বলে উঠেন,
“যা ছেড়া!”
অন্যদিকে মুখোমুখি অপমানে রেগে গেলেন আফজাল মিয়া।বর্ণকে চড় দেখিয়ে বললেন,
“নিজের বউ লইয়া থাক! আমারডার দিকে নজর দেস কেন?”
বর্ণ কাপড় ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। হাসতে হাসতে বললো,
“রাইত এর আন্ধারে আপনার বউ ভাগায় লইয়া যামু।ভালোয় ভালোয় উপরের ঘরের চাবিটা দিয়েন।আমি কইলাম এক কথার মানুষ চাচা।”
বর্ণের পিছু পিছু গেট অব্দি এসেছে আফজাল মিয়ার স্ত্রী।বর্ণ খেয়াল করেও পিছু তাকালো না।এক পর্যায়ে বাড়ির সদর দরজা পর্যন্ত আসলে বর্ণ ব্রেক কষে নিজের চলনে।দুষ্টু মুখে প্রশ্ন করলো,
“আরেহ চাচী কইলাম না নিশি রাইতে আপনারে ভাগায় নিমু।এত তাড়াহুড়া কেন? তাগড়া জোয়ান বর্ণরে দেইখা ফিদা হইয়া গেলেন নিহি?”
আফজাল মিয়ার স্ত্রী কপট রাগ দেখিয়ে কান মলা দিলেন বর্ণের।বর্ণ হাসছে।হেসে হেসে অভিনয় করছে ব্যথা পাওয়ার।মিথ্যে আর্তনাদের সুর।কান ছাড়লেন না তিনি তবুও।বললেন,
“আমার লগে মশকরা করছ!”
“করলাম একটু আপনে আমার ডার্লিং লাগেন না?”
আলতো করে চাপড় দিলেন বর্ণের গালে।বলতে লাগলেন,
“মশকরা কর!হাসিখুশি থাক।কিন্তু লগে এই ভাদাইম্মাগো মত রাস্তায় রাস্তায় না ঘুইরা দায়িত্ব ল।তুই কিন্তু এহন একলা না। বউ আছে তোর।”
বর্ণ মুখ কুচকে বলে উঠে,
“আপনারে আমি ভালো ভাবছিলাম।আপনি জ্ঞান দিতে শুরু করলেন কিলেগা? বিয়া করুম না কিন্তু”
“চুপ থাক! বউটারে যত্ন করিস। জনির লগে লাগালাগি কমায় দে।তোর আর ওর দুশমনি আবার বউয়ের উপরে না পড়ে।”
বর্ণ চুপ হয়ে গেলো। জনি!ওর থেকে বাঁচানোর জন্যেইতো এতকিছু।চক্ষু নুয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো বর্ণ।বললো,
“ওর লগে আমার অনেক হিসাব নিকাশ আছে চাচী। এসপাড় ওসপাড় না হওয়া পর্যন্ত যে কলিজার আগুন নিভবো না।আর রইলো ওই ছেমড়ি! বিয়া যেহেতু করছি একটা ফুলের টোকাও দিতে পারবো না।”
“যদি দেয়?দিয়া ফালায়?ওরাতো মানুষ ভালা না”
রহস্যময় হাসলো বর্ণ। জবাব দিলো, “ওর বুকে ইটা ভাঙ্গুম।কলিজা বাইর কইরা এই পুরান ঢাকার গলির কুত্তারে খাওয়ামু”
_______
বর্ণ অন্বেষাকে সচরাচর ফোন করেনা।প্রথম দিয়েছিলো সেদিন যেদিন তার মাথায় বিয়ে করার ভূত চেয়েছিলো।আজ দ্বিতীয়বার।অফিস থেকে বাড়ি ফিরছিলো অন্বেষা।হুট করে বর্ণের জরুরি তলব কিছুটা শঙ্কায় ঠেলে দেয় অন্বেষাকে।চিন্তায় বিভোর হয়ে হাঁটতে লাগলো অন্বেষা।গন্তব্য টিএসসি।বর্ণ জানিয়েছে সেখানেই অপেক্ষা করছে সে।কঠোর আদেশ জারি করেছে দ্রুত আসে যেনো।ঘরে চাল শেষ। কিনে পায়ে হেঁটে রওনা হলো অন্বেষা।
উচুঁ স্থানে পা ঝুলিয়ে বসে আছে বর্ণ। দূর হতে দেখলো ধূসর রঙের পোশাক পরিহিত এক মেয়েকে হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে আসতে।চিনতে কি ভুল হয়?সে যে সারাজীবনের জন্য গলায় ঝুলে যাওয়া মালা।
অন্বেষা অস্থির ভঙ্গিতে নিঃশ্বাস নিতে নিতে প্রশ্ন করে,
“কি হয়েছে?”
ঘেমে নেয়ে একাকার উজ্জ্বল শ্যামলা মুখশ্রী। নিয়ন আলোয় চিকচিক করছে ঘাম। বর্ণ দেখলো। হাতের ইশারায় বসতে বলে। অন্বেষা বসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় বর্ণের দিকে।
“আমার মেসের নলে তিনদিন যাবত পানি নাই।”
আজব একটি কথা শুনে হতভম্ব অন্বেষা। মেসে পানি নেই এটা জানানোর জন্য ডেকেছে? প্রত্যুত্তরে জানতে চায়,
“তো?”
“আমিও তিনদিন যাবত গোসল করিনা।আমার কাছে আইবা?তোমার মনেতো পিরিতের রং। আহো তোমারে জড়ায় ধরি!”
জড়িয়ে ধরার ভনিতা করে কিছুটা এগিয়ে আসতে চাইলে অন্বেষা পিছনে সরে যায়।বিকৃত ভঙ্গিতে বলে,
“নোংরা কোথাকার!এসব বলতে ডেকেছো?”
ইচ্ছে হলো গালটা চেপে ধরতে।তবে তেমন কিছুই করেনি বর্ণ। দাঁত কিড়মিড় করে বলে উঠে,
“ইটিশ পিটিশ পিরিতের রং গায়ে মাখার আগে মনে আছিলো না আমি গান্ধা?”
লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে ধীরস্থির করলো অন্বেষা।বাড়ি গিয়ে বর্ণ রেঁধে দিবে না তাকে। তার কাজ তার নিজেরই করতে হবে।এখানে অহেতুক সময় নষ্ট করার কোনো মানে নেই।
“তুমি বলবে কেনো ডেকেছো?নাহয় আমি গেলাম।বাড়ি গিয়ে রান্না করতে হবে।”
বলে জায়গা থেকে উঠে দাঁড়ালো অন্বেষা।কাঁধে ব্যাগ চাপে।ফালতু প্যাঁচাল শুনতে আসেনি।আজ মেজাজ প্রচুর খারাপ।
“আরেহ বহো না ছেড়ি…আহো বাসর প্ল্যান করি”
অন্বেষার চক্ষু ছানাবড়া।বলে কি এই ছেলে!বাসর প্ল্যান করবে মানে? অন্বেষাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বর্ণ তার হাত টেনে পাশে বসায়।
“আরেহ তোমার আর আমার বাসর প্ল্যান করমু।একটা ঝাকানাকা প্ল্যান আছে আমার কাছে।”
হতবুদ্ধির মত চেয়ে এখনও অন্বেষা।এই ছেলেটার প্রেমেই পড়তে হলো?বর্ণ তোয়াক্কা না করে বললো,
“রং বেরঙের লাইট,তারপর ফুল আনমু কয়েক কালারের।ফুল জানি একা বোরিং ফিল না করে তাই কয়টা পাতা বাহার গাছও দরকার।ফুল লতা পাতা আর লাইটের বাসর।আমার বিয়ার চেয়ে বাসর নিয়া বেশি টেনশন।”
বিরক্তি আর বেহায়াপনার চরম সীমানায় পৌঁছেছে আলাপন। অন্বেষা বর্ণের মতো করেই বললো,
“হ্যাঁ তারপর দুজন চোখে মুখে কালী মেখে ঝিঙ্গা লালা হু হু করবো”
অন্বেষার বাহু চাপড়ে বর্ণ বললো, “মাক্ষন একটা আইডিয়া দিছো ছেমড়ি”
তর্ক করেও খানিক সংকোচে পড়ে গেলো অন্বেষা।মুখ ফুটে বাসরের কথা বলছে লজ্জাহীন ছেলেটা।নারীর কাছে প্রথমবার শুনতে বিষয়টি ভীষণ লজ্জাজনক বটে।হাওয়ায় ভেসে বিয়ে করে ফেলার পর বিয়ে পরবর্তী সময় নিয়ে কি ভাবার সময় ছিলো?
বর্ণ ক্ষুদ্র চোখে লালাভ বর্ণ ছোঁয়া মুখপানে চেয়ে প্রশ্ন করে,
“লাল নীল বাত্তি জ্বলে কেন মুখে? আহো তোমারে সিগন্যালে খাড়া করায় দিয়া আহি।”
অন্বেষা মাথা নত করেই শক্ত স্বরে বলে উঠে,
“কি বলতে ডেকেছো স্পষ্ট করে বলো।”
“যদি না কই কি করবা? মারবা?স্বামীর উপরে হাত তুলবা? ছিঃ ছিঃ!এগুলি পাপ জানো না।”
স্বামী শব্দটি ঝংকার দিয়ে কানে বাজলো।বর্ণের কাছে শব্দগুলো ভীষণ স্বাভাবিক।তার কাছে ততটাই অস্থিরতার কারণ।নতুন অনুভুতিগুলো যেনো শব্দহীন।ভালো লাগা নাকি খারাপ লাগা কিছুই বোধগম্য হলো না। বিভ্রাট সৃষ্টি করলো এই দুয়ে।কাঁধে থাকা ব্যাগ শক্ত করে চেপে রইলো।বর্ণ ইচ্ছেকৃত অধিক সময় ব্যয় করে বলে,
“কালকে সকালে তোমার যত বালের ক্লাস, বালের অফিস, বালের রান্দা আছে সব বাদ। বাড়িওয়ালারে কইবা বাড়ি ছাড়বা। এমনেতেও ব্যটার লগে আমার একটু পার্সোনাল দুশমনি হইয়া গেছে।আর আমারও চাকরি গুল।আমি আপাতত নয় হাজার টাকার মালিক কিন্তু বেকার।মনে থাকবো যা যা কইছি?”
অন্বেষা দৃষ্টি তুলে শুধায়, “এসব কেনো করবো?”
“সংসার করার শখ না? শখ মিটামু।কালকের পর থিকা বর্ণের লগে জুইড়া প্রতিদিন পুড়বা। ঝলসায় যাইবা।কয়লা হইবা।তারপর তোমারে নিয়া গিয়া আমি কয়লার মিলে বেইচা দিমু।”
_______
অন্বেষা বাড়ির দিকে রওনা হয়েছে।তার কয়েক কদম পিছু পিছু বর্ণ।হাঁটছে এবং দেখছে শক্ত হাতে ভারী চালের ব্যাগ তুলে রাখা দূর্জয়ী রমণীকে।একবার মায়া হলেও মন থেকে মায়া ঝেড়ে ফেলে দেয় আকস্মিক।এত মায়ায় যে বরাবরের মতই তার পোষাবে না।কিছুতেই অনুভূতিহীনতার সাথে আপোষ নয়।মায়ার স্থান গ্রহণ করলো প্রশ্ন।কি করে এই মেয়েটা এত দুঃসাহসী?এত বল কোথা থেকে আসে তার এই দেহে?মনের বল দেহবল রূপে জ্বলিত হয় বুঝি?
হুট করে গলির মুখে অন্বেষার পদচারণ থামে।তার কদম অনুসরণ করে চলা বর্ণেরও।কিছুটা অবাক অন্বেষা।বর্ণের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠে।পেছন থেকে সামনে এগিয়ে এলো।দূরত্ব দিয়ে একহাত আর কনুই এর সাহায্যে শক্ত স্থানে ভর করে দাঁড়ালো।
অন্বেষার পথ আটকে দাঁড়ানো জনির ঠোঁটে হাসি।নরম গলায় অন্বেষাকে প্রশ্ন করে,
“আপনি কি এই মহল্লায় নতুন নিহি?”
অন্বেষা কিছুটা বিব্রত হয়ে জবাব দেয়, “জ্বি”
জনি বুঝবার ভঙ্গিতে মাথা দোলালো।বললো,
“আচ্ছা।হাসিব চাচার বাড়ীতে থাকেন?”
অন্বেষা আবারো সাবলীল স্বরে জবাব দেয়, “জ্বি”
“আপনার আব্বা আম্মায়ও লগে থাকে?”
“জ্বি না একাই থাকি…”
বলে সামান্য ঘাড় ঘুরায় অন্বেষা। ল্যাম্প পোস্টের নিচে সং সেজে দাঁড়িয়ে বর্ণ। অগ্নিচক্ষু স্পষ্ট দৃশ্যমান।কাছাকাছি হওয়ায় দেখতে পেলো অন্বেষা।চোখ দিয়ে গিলে ফেলার পাঁয়তারা করছে।আগুন চোখের ইশারায় কিছু একটা বলতে চাইছে।এক পর্যায়ে আঙ্গুল তুলে ইশারা করলো। অন্বেষা বুঝতে পারলো না কিছুই।
তখনই জনি আবার প্রশ্ন করে, “ওহ!”
হুট করে অন্বেষার ফোন বেজে উঠে।বর্ণ অন্যদিকে ঘুরে কল করেছে তাকে।ফোন রিসিভ করলো। বাজখাঁই গলায় বর্ণ বলে উঠলো,
“ইশারা বুঝো না।এই হিজড়ারে সামনে থিকা সরায় বাড়ি যাও।ওর লগে বেশি আলাপ পারলে তোমার কলিজা চাবায় খাইয়া ফালামু!”
এমন হুমকিতে খানিক থতমত খেয়ে যায়।হুম বলে ফোন কেটে দিলো।স্বল্প ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো বর্ণ এখনও সেখানে দাঁড়িয়ে। অন্বেষা বললো,
“বাবা মার সাথে না তবে স্বামীর সাথে থাকি।”
জনি যেনো আকাশ থেকে পড়লো।প্রশ্ন করলো আশ্চর্য ভঙ্গিতে,
“স্বামী মানে?”
“স্বামী মানে হাসবেন্ড”
“ঐটাতো বুঝলাম…হাসবেন্ড? মানে কি? তুমি বিবাহি….”
“হাসবেন্ড মানে আপনাদের ভাষায় জামাই।”
“আরেহ বুঝবার পারছি…তোমারে দেইখ্যা লাগেনা তুমি বিবাহিত।”
“না লাগলে কি করার বলুন? সত্যিতো এটাই”
জনি উদাস স্বরে বলে উঠে, “হুম”
“আসি তাহলে?আমার গুন্ডা টাইপ স্বামী যেকোনো সময় রেগে ফায়ার হয়ে যেতে পারেন।”
জনি মাথা দুলিয়ে বললো, “হ হ যাও”
অন্বেষা গলির মধ্যে যেতে যেতে পিছু তাকায়। একবার বর্ণের দিকে চেয়ে জনির পানে দৃষ্টিপাত করলো।বললো,
“অপরিচিত মানুষকে আপনি বলে ডাকবেন।ঠিক আছে?তাছাড়াও আমি আপনার বড় বোনের মতো।”
চলবে……
#উন্মুক্ত_লাইব্রেরী
লেখা – আয্যাহ সূচনা
২০.
সূর্য জ্যোতি ভূমন্ডলে পড়েছে কিছু সময় পূর্বে। পাখিরা সুর বাজিয়ে এদিক ওদিক জানান দিচ্ছে নতুন দিবা শুরু হয়েছে।দিন এবং রাত পেরিয়ে কতোটা সময়ই না রয়ে যাওয়া হলো এই ধরিত্রীতে।মনে হয় যেনো এক লম্বা সময়;যেনো কত বর্ষ।দিবস বাস্তবানুগ আর রজনী বিকল্পনার।
ধুন্দলা আয়নায় মুখ দেখছে অন্বেষা।সতেজ হতে মুখে কয়েক ঝাপটা দিলো জলের।হাত দিয়ে ঘাড় অব্দি ভিজিয়ে জিরিয়ে নিলো কিছুক্ষন।এরপর বেরিয়ে এসেছে।সব গোছগাছ রাতেই শেষ।জানানো হয়েছে সুদীপ্তাকেও।সেও একজন বুদ্ধিমতী নারীর মতো সবটা স্বাভাবিকভাবে নিয়েছেন। সুদীপ্তাও জেগে উঠেছেন তাড়াতাড়ি।বিদায় দিবেন অল্পদিনের সঙ্গীকে।
হাসিমুখে এসে বললেন,
“শুভ সকাল। যাচ্ছো তাহলে?”
অন্বেষা এগিয়ে আসে। সুদীপ্তার দুহাত আগলে নিয়ে বললো,
“হ্যাঁ দিদি যাচ্ছি।কিন্তু অতটা দূরেও না।আসবো মাঝেমধ্যে।”
“অনেক অনেক আশীর্বাদ রইলো তোমার জন্য বোন।স্বামীর সংসার মন দিয়ে করবে।পুরুষ মানুষ!একটা আলাদাই জ্বালা।”
অন্বেষা লাজুক হাসে।বলে,
“আমারটা আরো বড় জ্বালা!”
“শুনো দুপুরের খাবার আমি দিয়ে আসবো তোমাদের জন্যে।”
অন্বেষা দুদিকে মাথা দোলায়।না বলতে চাইলেই সুদীপ্তার মেয়ে এসে তাকে জাপটে ধরে। অন্বেষা একগাল হেসে তাকে কোলে তুলে চুমু খেলো।মেয়েটি বললো,
“মাসী তুমি চলে যাবে?আমাদের সাথে থাকো?”
মেয়েটির মায়াভরা কণ্ঠে অন্তর ব্যথিত হলো অন্বেষা।কি নিদারুণ স্নেহ তার কণ্ঠে। কতদিনই হয়েছে এখানে আর? একমাসও পূর্ণ হয়নি।অদৃশ্য ভালোবাসার সম্পর্কে জুড়ে গেছে তারা। অন্বেষা বুঝানোর ভঙ্গিতে বললো,
“বেশি দূরে যাচ্ছি নাতো মা।তুমি যখন ইচ্ছে চলে আসবে ঠিক আছে?”
আদুরে গলায় প্রশ্ন আসে,
“আর রাতে?রাতে গল্প শুনাবে না?”
মুখ মিয়ে আসে অন্বেষার।বাচ্চা মেয়েকে কি বুঝাবে?নিষ্পাপ মন।কষ্ট না পেয়ে বসে।সুদীপ্তা সামলে নিলো মেয়েকে।ইতিমধ্যে দুবার ফোন বেজেছে।বর্ণ গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। অন্বেষা ব্যাগপত্র নিয়ে বেরিয়ে গেলো।কিছু মালপত্র বাকি সেগুলো এসে যেয়ে নিয়ে যাবে। হাঁটতে হাঁটতে বর্ণের সামনে গিয়ে হাজির।স্বাভাবিক চোখে চেয়ে বর্ণ বললো,
“চলো”
দুয়েক কদম হেঁটে অন্বেষা পিছন হতে বলে উঠলো,
“কেমন নিষ্ঠুর মানুষ তুমি?এত ভারী ব্যাগ বইতে পারছি না।দেখছো অথচ সাহায্য করছো না।”
বর্ণ পিছু ঘুরে চায়।মানবতা দেখিয়ে সাহায্য করতে হতো?সেটাতো মাথায় ছিলো না।কথা না বাড়িয়ে এগিয়ে এসে দুটো ব্যাগ নিজের হাতে এক প্রকার কেড়ে নেয়।বলে তাচ্ছিল্যের সুরে,
“তোমারে যে বইতে হইবো সারাজীবন?ওই ওজনের কাছে তোমার ব্যাগের ওজন কিছুই না।”
কি যেনো কি হলো? অন্বেষা ঠোঁট টিপে হেসে উঠে।তার চাপা হাসির অর্থ বোধগম্যতার বাহিরে বর্ণের।ব্যক্তিত্বের পরোয়া না করার গুণ ধরে রেখেই হাঁটতে শুরু করে এক নতুন যাত্রায়।বুকে প্রবল অস্থিরতা।অজানা উদ্দেশ্যহীন এক সফরে বেরিয়েছে।কি জানি কি হবে? পুরান ঢাকার তারে মোড়ানো পথ ঘাটের মতই মস্তিষ্ক চৌদ্দ প্যাঁচ।ছুটবে কি করলে?বর্ণ চোখ বুঁজে কপাল টানটান করে।মিনিট পাঁচেক পরই হাজির তাদের নতুন সংসার এর সম্মুখে।আদৌ সংসার?
পুরোনো আমলের বাড়ির দোতলায় উঠে টাস্কি খেয়ে দাড়িয়ে রইলো অন্বেষা। একি অবস্থা ঘরের! মালপত্র বোঝাই করে রাখা সর্বখানে। আদৌ এটি বসবাসযোগ্য। অন্বেষা বর্ণের দিকে চেয়ে রাগান্বিত স্বরে বললো,
“কি এসব?”
“তোমার সংসার…”
কেমন মিশ্র প্রতিক্রিয়া?বাবা মায়ের পর কত শখ ছিলো একটা সংসার এর। ভালোবাসায় মোড়ানো। চেয়েছিলো জীবনসঙ্গীর যত্ন।অতীতের সমস্ত অসুখ ভুলিয়ে সারিয়ে তুলবে যে।অন্যরকম শিহরণ জাগলো বর্ণের কথায়।তবে লুকিয়ে বেড়াচ্ছে গাঢ় হতে থাকা অনুভূতি।
“যাও কামে লাগো।এগুলি সব পরিষ্কার করবা।আমি একটু ঘুইরা আহি।”
বলার সাথেসাথে হাঁটা ধরে বর্ণ। অন্বেষা চিতা বাঘের মতো করে খাবলে ধরলো বর্ণের শার্ট। বিমূঢ় মুখে ফিরে তাকালো বর্ণ।বললো,
“অভদ্রতামি করবা না।”
বাঘিনী রূপে চোখ বড় বড় করে তাকায় অন্বেষা। তর্জনী আঙ্গুল তুলে বললো,
“আমি একা কেনো কাজ করবো?তুমিও করবে।এত ভারী জিনিস আমি তুলতে পারবো?”
বর্ণ সামান্য মাথা ঝুঁকিয়ে বললো,
“কেন?তুমি না বলে মহীয়সী শক্তিশালী নারী?যাও দেহাও নারী শক্তি।আমিও একটু দেখলাম নইলে”
“এতো কথা বলবে না।বিয়ে করেছো নিজে পাগল হয়ে।এখন আমাকে ভোগাতে চাইছো।আমি সেটা হতে দিবো না।”
বর্ণের মুখের রং বদল দেখা গেলো।দুষ্টুমি মাখা মুখে গাম্ভীর্য ছেয়ে গেছে।কয়েক কদম এগিয়ে অন্বেষার দিকে দাঁড়ালো।উচ্চতার দূরত্ব মিটিয়ে মাথা নুয়ে আসে অন্বেষার মুখ বরাবর।খানিক ভড়কে উঠে অন্বেষা। নির্ভয়ে চেয়ে থাকা চোখগুলো এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে ঘনিষ্ঠতায়। বর্ণের মুখ কঠোর।নিষ্পলক অক্ষি।থমথমে স্বরে প্রশ্ন আসে,
“আমি তোমার লেইগা পাগল?”
প্রশ্নের সাথে উষ্ণ নিঃশ্বাসের ঝাপটা পড়লো মুখে।রুহ কেঁপে উঠে। প্রশ্নটি স্বাভাবিক সাথে অনুভূতিগুলোও।সমাচ্ছন্ন অবস্থায় দৃষ্টি স্থাপন হয় জমিনে।
“কি জিগাই?”
আবার প্রশ্ন বাজের মত পড়লো নীরব বারান্দায়। অন্বেষা আবারো অগোছালোভাবে চোখের পলক ফেলে বলে উঠে,
“উহু”
“তাইলে কইলা কেন?”
“ভ….ভুলে বলে ফেলেছি”
নিঃশ্বাসের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়।সাথে কন্ঠস্বরের গভীরত্বও। গাঢ় গলায় বলে,
“তুমি জানো তুমি একটা ভীতু ছেড়ি?”
চমকে তাকালো অন্বেষা।অবুঝ ভঙ্গিতে জানতে চায়,
“মানে?”
বর্ণ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হাসতে থাকে।মাথা দুলিয়ে হেসে বলে,
“তুমি খালি উপর দিয়া ফরফর করো।যেই আমি গলার টোন পাল্টাইলাম তোমার আত্মার পানি শুকায় গেছে।ভালো ভালো!আমারে ভয় পাইবা।”
বিষম খেয়ে চেয়ে রইলো অন্বেষা।সে কি বর্ণের কন্ঠস্বরের জন্য চুপসে গিয়েছিলো?ক্ষণিক সময়ের জন্য মুখ বরাবর এসে হৃদপিণ্ডের গতিবেগ পাল্টে ফেলেছে সেটাই হচ্ছে আসল রহস্য।
অন্বেষার অন্তরাত্মা বলে উঠে,
“বিবর্ণ অনুভবের কি বুঝে?সেতো অনুভূতিহীন এক জড়বস্তু”
এই বিষয়ে একাত্মতা প্রকাশ করে অন্বেষা নিজেও।
__________
পরিশ্রম করতে অভ্যস্ত অন্বেষা।তবে আজ যা করলো হাড়ভাঙা খাটুনি।আফজাল মিয়ার স্ত্রী এসেছেন সাহায্য করতে।বয়সের কারণে সেও তেমন কিছুই করতে পারেনি।তবে সাব্বির তার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে সাহায্য করার।ঘরের অবস্থা নাজেহাল।কয়েকজন মিলে পরিষ্কার করতে করতে বিকেল গড়ালো।সুদীপ্তা আর তার মেয়ে দুপুরের খাবার নিয়ে হাজির।অনেক আগেই এসেছে সেও।এত এত কাজ দেখে খাওয়ার সময় হয়ে উঠেনি।
বর্ণের মুখে হাতে সারা শরীরে ময়লা লেগে আছে।বারান্দার দিক পরিষ্কার করতে করতে অন্বেষার ওড়না টেনে ধরে।রুহ কেঁপে উঠলো অন্বেষার।বর্ণ অবলীলায় ওড়না দিয়ে হাত মুখ মুছে যাচ্ছে। অন্বেষা নির্বাক হতবিহ্বল হয়ে চেয়ে।তাকে এভাবে চেয়ে থাকতে দেখে বর্ণ বিরক্তি সহিত কপাল কুঁচকে বলে,
“কি!”
অন্বেষা দ্রুত মাথা দুলিয়ে না সূচক উত্তর দিয়ে সরে যায়।নাহয় একদিন এই ছেলে হার্ট এ্যাটাক করাবে তাকে।বর্ণ ঘরে এসে আফজাল মিয়ার স্ত্রীকে বললো,
“আপনার বুইড়া খাইস্টা জামাইরে কইবেন পানির লাইন ঠিক করাইতে।গোসল করমু না?”
পেছনেই আফজাল মিয়া উপস্থিত হলেন।বলে উঠলেন,
“ভাড়া দিবি ঠিকমতো তাইলে সব পাবি।”
বর্ণ বলে উঠে,
“হুর লোভী খাইস্টা বেডা!”
আফজাল মিয়া রেগে উঠেন। থরথর কাপতে কাপতে স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বললেন,
“রোকেয়া এই হুমুন্দির নাতিরে কিন্তু আমি জমিনে গাইড়া লামু। ওরে মুখ সামলায় কথা কইতে কও!”
বর্ণ জবাব দেয়,
“আপনার বউ কি কইবো?হেয় এহন আমার ডার্লিং।আপনার দিন শেষ!”
ঘরে আগের যুগের একটি পালঙ্ক আছে।সাথে আলনা।অবস্থা মোটামুটি।বর্ণ সাব্বিরের কাছ থেকে স্ক্রু ড্রাইভার নিয়ে অনবস্থিত খাটের নাট বল্টু শক্ত করে দিলো।আবারো আফজাল মিয়া এগিয়ে আসেন।বিশেষ আগ্রহী গলায় বলে উঠলেন,
“আগের জামানার খাট। বেঁচলে ভালো টাকা পাওয়ন যাইবো।”
তড়াক করে ঘাড় তুলে টাকায় বর্ণ। রুষ্ট হয়ে বললো,
“খাচরামি কইরেন না চাচা।গজব পড়বো!এই খাট আর আলনা আজকে থিকা আমার।”
আফজাল মিয়া কি ছেড়ে দেওয়ার লোক।আরো এগিয়ে তর্ক করতে চাইলেন।তার স্ত্রী এসে তাকে হাত টেনে নিয়ে যায়।বলে যায় ঘর ঝাড়ু দিয়ে যেনো নিচে এসে গোসল সেরে নেয় তারা দুজনই।বর্ণ অন্বেষার দিকে চাইলো।ক্লান্ত মুখখানা।মলিন হয়ে আছে। ময়লায় নাস্তানাবুদ।চেয়ে রইলো কিছুক্ষন। অন্বেষা এই দৃষ্টির অর্থ বুঝেনি।নিজের কাজে ফের মনোযোগী হয়ে বর্ণ বলে উঠে,
“চাচীর ঘর থিকা গোসল কইরা আহো যাও।”
অন্বেষা বিপরীতে প্রশ্ন করে, “তুমি?”
বর্ণ আড়চোখে তাকিয়ে বলে, “যাও”
বর্ণ রাগ?নাকি খুশি?না চরম বিরক্ত।কিছুইতো বুঝা যায় না মুখ দেখলে।রং বদল করা গিরগিটি যেনো।এই ভালো এই খারাপ। অন্বেষা ব্যাগ থেকে কাপড় বের করে নিয়েছে।আশপাশ ভালোভাবে লক্ষ্য করে নিচে নেমে গেলো।বড় খালি জায়গায় আফজাল মিয়া চেয়ার পেতে শরীরে টেল মালিশ করছেন।বারান্দার পাশে রোকেয়া চাচীর দেখা মিললো।তিনি এগিয়ে এসে বললেন,
“গোসল করবা বউ? আহো আহো”
নিত্য নতুন ডাকে লজ্জা গ্রাস করে নেয়।তাদের সম্পর্ক সুবিন্যস্ত হয়নি।একে অপরের সঙ্গে বোঝাপড়া হয়নি। স্বীকারোক্তি দেওয়া হয়নি বর্ণ অন্বেষা আলাদা ব্যক্তিত্ব হওয়া স্বত্বেও এখন তারা স্বামী স্ত্রী।অন্তরে নতুন অনুভবের প্রস্ফুরণ আনন পৃষ্ট লাজে রাঙ্গালো।
______
রাত আটটা বেজে ত্রিশ মিনিট।গোসল,খাওয়া দাওয়া সব কাজ শেষে গা ছেড়ে বিছানায় পড়ে আছে বর্ণ।হলুদ রঙের বাল্ব জ্বলছে ঘরে মিটিমিটি।সাথে একটি টেবিল ফ্যান।বিছানায় নিজের দখলদারিত্ব স্থাপন করে চোখ বুজে ঘন নিঃশ্বাস ফেলছে। অন্বেষা খাটের শক্ত অংশ ধরে দাঁড়িয়ে।শুকনো ঢোক গিলছে বারবার।দেখছে আধ মরার মত পড়ে থাকা পুরুষকে।মায়া দয়া বলতে কিছু আছে তার? খাটাখাটনি কি সে একাই করেছে?অন্য মন বলে উঠলো ভালোই হয়েছে।কোনো পুরুষের সাথে প্রথমবারের মতো এক ঘরে থাকার অসস্তি শান্তি দিবে না।
চোখ বুজেই বর্ণ বলে, “চায়া আছো কেন?”
চমকে উঠে অন্বেষা।পূর্ণ ধ্যানে চোখ বুঁজে রাখা লোকটা কি করে জানলো অন্বেষা চেয়ে আছে?কথা ঘুরিয়ে অন্বেষা জবাব দেয়,
“রাতের খাবার?”
বর্ণ চোখ খুলে একলাফে উঠে বসে।শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বললো,
“কি কি লাগবো?”
“গ্যাস সিলিন্ডার।”
তেরছা চোখে তাকিয়ে বর্ণ প্রশ্ন করলো,
“গ্যাস সিলিন্ডার খাইবা?”
“না না!গ্যাস সিলিন্ডার থাকলে রান্না করতে পারবো। চুলোতো আছেই আমার।”
বর্ণ উঠে জুতো পায়ে দিতে দিতে বলল,
“দুইমাসের ভাড়া দেওয়া আছে। রাইতে চাচী ভাত দিয়া যাইবো।”
“তুমি কোথায় যাও?”
“আইতাছি।নিচে নামবা না।সিঁড়িঘরে দাঁড়ায় ডাক দিবা চাচীরে কিছু লাগলে।”
বলে বর্ণ হাঁটা দিলো।দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা অন্বেষা বারান্দায় এসে দাঁড়ায়।বর্ণ পূনরায় ফিরে এসে বলে,
“নিচে নামবা না কইলাম পাকনামি কইরা”
_________
বর্ণ ফিরেছে প্রায় একঘন্টা পর।কাঁধে ভারী গ্যাস সিলিন্ডার। অন্বেষা দ্রুত এগিয়ে গেলো।সাহায্য করার খাতিরে হাত এগোয়। অন্বেষাকে এড়িয়ে ঘরের এক কোণে গ্যাস সিলিন্ডার রেখে বললো,
“খুব সাহায্য করতে আইছো!তোমার চেয়ে দশগুণ ওজন বেশি এটার।”
অন্বেষার মুখ মিয়ে আসে।ঠোঁট কামড়ে চাইলো বর্ণের দিকে।ঘেমে একাকার।একগ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বললো,
“চাচী খাবার দিয়ে গেছেন।সাথে খাবার পানি।”
বলে সামনে থেকে সরে যেতে চাইলে বর্ণ হাত টেনে ধরলো।ঠিক তখনকার মত অন্বেষাকে চমকে দিয়ে ওড়না টেনে মুখ আর ঘাড় মুছে বললো,
“টাকা পয়সা নাই আমার হাতে।”
“এই কারণে মন মেজাজ খারাপ নাকি আমায় বিয়ে করে এত ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে সেই কারণে?”
“তুমি নিজেই একটা ঝামেলা।”
“তাহলে বিয়ে করেছো কেনো?বিয়ে করে অবহেলাই বা করছো কেনো?”
“মনে চাইলো এর লেইগা বিয়া করলাম….”
“মন চাইলে ছেড়েও দিবে?”
নিঃশব্দ;বিমূঢ় দৃষ্টিতে তাকালো অন্বেষার দিকে।নীরবে গভীর নিরীক্ষণ।মুখ ভর্তি টগবগে অভিমান।বর্ণের চোখে সবটাই স্পষ্ট।তার চাওয়াগুলোও।
“সিরিয়াস কিছু বললেই শুধু চেয়ে থাকো”
“ভাত দাও”
মধ্য রাতে টেবিল ফ্যান ঘুরছে দুদিকে।তেমন প্রয়োজন নেই বাতাসের।গরমের তাপ মৃদু।শীতকাল আসবে বলে।হলুদ লাইটটি জ্বলছে।আর সেখানে স্থির একজোড়া ভাবুক চোখ।কপালে হাতের পিঠ ঠেকিয়ে বিছানার ডান দিকে সোজাসুজিভাবে শুয়ে।
অন্যদিকে সারাদিনের ধকল কাটিয়ে বিভোর তন্দ্রায় অন্বেষা।খাওয়া শেষে কখন শুয়ে পড়েছে খেয়াল নেই।দেয়ালের দিকে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে আছে।বর্ণ ফিরে চায় তার দিকে।সোজা দেহ সম্পূর্ণ ঘুরিয়ে নেয় তার দিকে।মাথার নিচে হাত রেখে সিদ্ধান্ত নিলো নারী মুখ পর্যবেক্ষণ করার।হালকা গোলাপি আভা ছড়ানো অধরজোড়ায় দৃষ্টি যায় সর্বপ্রথম।ঠোঁটের এককোনে গাঢ় কালো তিল আছে।বর্ণের উত্তপ্ত চাহনি আকস্মিক শীতল হলো।ঠান্ডা অনুভব করলো কায়া জুড়ে। জরিয়ে তো গেছে। এবার?প্রশ্ন করে চিত্ত।ক্ষুদ্র তাঁরার ন্যায় জ্বলিত নেত্র পলকহীন।ভিন্নরকমভাবে আকর্ষিত হলো দাগহীন মসৃণ ত্বকে। কালো রঙের ভ্রু,চোখের পাপড়ি যেনো আরো ফুটে উঠেছে।সরু নাক।ঘুমের ঘোরে কম্পিত করতে থাকা চোখজোড়া। তন্দ্রা গভীর।বর্ণের নিদ্রা কেড়ে নিয়ে কি আরামেই না ঘুমোচ্ছে! বর্ণ ভারী নিঃশ্বাস ফেলে। আপনাআপনি বৃদ্ধাঙ্গুল এগিয়ে গেলো নাকের ডগায়।সামান্য স্পর্শ করে ফের হাত সরিয়ে চোখ বুঁজে ফেললো।বিড়বিড় করে বললো,
“বিধ্বংসী মহিলা!”
চলবে…..
[ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।আজ খুব ব্যস্ত ছিলাম]