উন্মুক্ত লাইব্রেরী পর্ব-০৪

0
75

#উন্মুক্ত_লাইব্রেরী
লেখা – আয্যাহ সূচনা

৪.

কাক ডাকা শহরের ভোরে নিভে গেছে রাত্রির আঁধার।আলো প্রস্ফুটিত আকাশ আর নতুন দিনের সূচনা।প্রকৃতি জেগে ওঠলো স্নিগ্ধতায়। ইট পাথরের শহরে অনেক প্রাণও ইতিমধ্যে জেগে উঠেছে।বেরোতে হবে তাগিদে।শান্ত সকালে কাকের কোলাহল রাস্তার দ্বারে গাছালিতে।ঘুম ঘুম নেত্র সমাজের মানব কর্ণকে মনে করায় দিনের নবীনতা।সোনালি রোদে ঝিকমিক চাঞ্চল্যতা।পাখ পাখালীর দুরন্তপনা উৎসাহের যোগান।মৃদু বৃষ্টির শিশির ভেজা পথের ধার।সাঁঝ সকালে ফুলেদের স্নান।শহর যেন জাগে নব জীবনে।

ঘন্টা খানেক পর পুরুষালি কন্ঠ ভাসলো বেঞ্চির অপর প্রান্ত হতে,

“থাক কাইন্দেন না।কাইন্দা কি করবেন কন?হুদাই চোখের পানির অপচয়।পানি শূন্যতায় আবার মইরাও যাইতে পারেন।তখন আমি চাইয়াও বাঁচাইতে পারমুনা।”

সান্ত্বনা দেওয়ার ধরন দেখে কান্নার মাঝেও হাসি পাচ্ছে।বর্ণ যথাসাধ্য চেষ্টা করছে নিজেকে সংযত রাখার।ক্ষণে ক্ষণে মেজাজ বিগড়ে থাপ্পড় দিয়ে কান্না থামাতে ইচ্ছে করে।কিন্তু অন্বেষার কান্নারত মুখ দেখে তার উল্টো হাসি পাচ্ছে বিনা কারণে।কেমন নির্দয়!এই স্বভাব থেকে ছাড়া পাওয়ার কোনো উপায় এখনও খুঁজে পায়নি।

অন্বেষা এক দৃষ্টিতে চেয়ে প্রশ্ন করলো,

“সান্ত্বনা দিলেন?”

বর্ণ মাথা চুলকে বলতে লাগলো,

“ওই চেষ্টা করলাম আরকি।ভাল্লাগে নাই?”

অন্বেষা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।বলতে চেয়েও বললো তার সান্ত্বনা দেওয়ার ধরন খুবই জঘন্য।সময় আনমনে অতিবাহিত হচ্ছে।নিশ্চুপ দুজনেই। পা অনবরত নাড়িয়ে যাচ্ছে বর্ণ।ঠিক ষোলো মিনিট পর বর্ণ প্রশ্ন করলো,

“আর কতক্ষণ কান্দার ইচ্ছা আছে?”

অন্বেষা সিক্ত চোখে চাইলো। বর্ণ তাড়াহুড়ো করে বললো,

“না মানে বাড়ি গিয়া ঘুমাইতাম আরকি”

সহজে বোঝা যায় না তার মন।হঠাৎ করে দেয় সাহায্যের দান।কখনো আবার গভীর হেঁয়ালি।ভাবতে বাধ্য হচ্ছে অন্বেষা।এই ছেলেটির সাথে দেখা কি কাকতালীয় মাত্র?তার চোখে অজানা এক ভাষা।ক্ষুদ্র নয়নে কি যেনো আছে।কখনো হাত বাড়িয়ে দেয় আবার কখনও তাচ্ছিল্য করে।তার হাসিতে লুকানো এক গোপন কাহিনী।কখনো সে মেঘ, কখনো ঝলমলে জ্যোতি।অল্প ক্ষণে কত কি ভেবে নিলো অন্বেষা?মাথা দোলায় অন্বেষা দুদিকে।কিসব ভাবছে সে?এই অসভ্য ইতর ছেলেকে নিয়ে কাব্য রচনা করে বসলো?

হুট করে রাগ হলো অন্বেষার।সে কাঁদছে আর এই ছেলেটা কিনা নিজের ঘুম নিয়ে চিন্তিত।বললো,

“আপনাকে কেউ বলেছে বসে আমার কান্না দেখতে?চলে যান”

বর্ণ উদাসীন গলায় আরমোড়া হয়ে বলতে লাগলো,

“ঐযে সিনেমায় দেখায় না? নায়ক নায়িকারে একলা ফালায় যায় না।….কি জানি কয়? হুম!দায়িত্ববোধ।ভাবলাম এই সাঁঝ সকালে বাংলা সিনেমার নায়ক হওয়ার ভঙ ধরি।”

অন্বেষার মাথার উপর দিয়ে গেলো।বিধায় প্রশ্ন করলো,

“কে নায়ক?আর আমি আপনার নায়িকা নাকি?”

“ইস! সুরত দেখছেন নিজের?আপনি হইবেন রিনা খান।ভিলেন ভিলেন”

অন্বেষা নিজের মুখে হাত বুলায়।আসলেই কি সে রিনা খান এর মত দেখতে?তার চেহারা কি খলনায়িকার মত?তব্দা খেয়ে রইলো এরূপ মন্তব্যে।মানুষের এক কথায় বিশ্বাস করে নেওয়ার স্বভাব।

“বাদ দেন আপনারে ডিপজল এর চরিত্রে হেব্বি মানাইবো।”

অন্বেষা চোখ তুলে যায়।জানতে চায়,

“অপমান করছেন?”

“এতো বড় দামড়ি ছেড়ি কোনটা সম্মান আর কোনটা অপমান বুঝেন না?”

অন্বেষা নাক মুখ কুচকে জবাব দেয়, “যান এখান থেকে।”

“আপনি আমারে জান ডাকেন কেন?”

অন্বেষা কানে হাত রেখে দুদিকে মাথা দোলায়।অসভ্য ছেলের কথাবার্তা শুনে মাথা আর কান দুটোই গরম হয়ে যাচ্ছে।বর্ণ হাসতে হাসতে আবার বললো,

“জ্বিনে আছড় করলো নাকি?”

“চুপ!যা…ভাগেন এখান থেকে বলছি”

“আপনে ভি চলেন।একলগে ভাইগ্গা যাই।”

অন্বেষা বিকৃত মুখ ভঙ্গিতে বললো, “ছিঃ!”

দুই মুখী তর্কের শেষ হয় শান্তি চুক্তির মাধ্যমে।ততক্ষণে মায়া নগরী রৌদ্রোজ্জ্বল। অন্বেষা আর বর্ণ উভয়েই ফিরে গেছে যারযার নীড়ে।

_______

শিস বাজাতে বাজাতে পকেটে হাত গুঁজে হাঁটছে বর্ণ।মনে মনে ভাবতে লাগলো আজ ঘুম কম হবে।সকাল সকাল রাস্তা ঝাড়ু দিচ্ছে পরিচ্ছন্নকর্মীরা।একটু পরই জমজমাট হবে পুরান ঢাকার অলিগলি।হামি দিলো কয়েকবার।চিন্তাহীন দুরন্ত পথিক সে।যেভাবে চালাচ্ছে জীবন সেভাবেই চলছে।চোখ দুটো লাল।সারারাত জেগে কাজ করার ফলে আজকাল তাকে নেশাখোর ভাবতে শুরু করেছে লোকে।

নির্দ্বিধায় হাঁটতে হাঁটতে দুয়েক কদম পেছনে নেয় বর্ণ।উল্টো পথে হেঁটে দাঁড়ায় চালের দোকানের সামনে। মোকলেস সাহেব বসে আছেন দোকানের ক্যাশে।হাতের দশ আঙুলের মধ্যে আটটি আঙুলেই রত্ন পাথরের আংটি।গলায় মোটা স্বর্ণের চেইনটি বারবার টানছেন হাত দিয়ে।সাদা ধবধবে পাঞ্জাবি পরিহিত পুরুষটির দিকে তেরছা চোখে চাইলো বর্ণ।বিত্তবান লোক এই এলাকার।আর বর্ণের টাকার সাথে বিশেষ ধরনের এলার্জি।শত্রুতা তার এবং তার ছেলের সঙ্গে।বর্ণ হাত রেখে ঝুঁকে আরামে দাঁড়ায়।উচ্চ গলায় বলে,

“আসসালামু আলাইকুম। কিমুন আছেন? ভালা নি?দিনকাল কিমুন চলে?”

ভড়কে উঠেন মোকলেস সাহেব।বুকে থুথু ছিটিয়ে নেন।ঘুরে তাকাতেই দেখলেন উগ্র ছেলেটিকে। বখাটে এই ছেলের সাথে কোনো প্রকার কথা বলতে ইচ্ছুক নন তিনি।নিজের সম্মানে আঘাতপ্রাপ্ত হবেন।এলাকার কিছু মানুষের কাছে বর্ণ ভীষণ প্রিয়।আবার কিছু মানুষের কাছে নিকৃষ্ট।মিনমিনে গলায় সালামের জবাব নিয়ে বলেন,

“চলে ভালাই”

“না চললে কইবেন কিন্তু আমারে।ঢাইলা দিমু”

মোকলেস সাহেব আশ্চর্য হয়ে জানতে চান,

“মতলব?”

“তেল ঢালুম তেল।আপনার আর আপনার পোলার গাড়ির ইঞ্জিনে।দেখবেন দিনকাল খালি চলবো না দৌঁড় পারবো।”

মোকলেস সাহেব রাগী দৃষ্টিতে তাকায়।তার কথাগুলো পছন্দ হচ্ছে না বর্ণ বুঝতে পারলো।তাতে তার বিশেষ কিছু আসে যায় না।তোয়াক্কা না করেই আরো একটু ঝুঁকে ফিসফিস করে বললো,

“আপনার পোলা কিন্তু এলাকায় বহুত তাফাল্লিং করে।একবার যদি ধরি হাড্ডি পাশলি চটকায় দিমু”

“থ্রেট দিতাছোস বর্ণ!”

মোকলেস সাহেবের ক্ষিপ্ত কণ্ঠে আনন্দ বোধ করে বর্ণ।হেসে আরো রাগ বাড়ালো তার।বললো,

“হ”

“তোরে এলাকা ছাড়া করতে আমার এক মিনিট সময় লাগবো না।”

“দেইখ্যা লমু আমিও।নিজের ব্যাটারে ভালোমত বুঝায়েন ওর কাছে টাকার জোর থাকলে বর্ণের শরীরের জোর আছে।এমন এমন জায়গায় মারুম কোটি টাকা খরচ কইরা ভি রোগ সারাইবার পারবো না।”

বলে আবার শিস বাজাতে বাজাতে হাঁটতে শুরু করে।মুখ উপরের দিকে তুলতেই তারে মোড়ানো শহর চিরে দেখতে পেলো ঝলমলে এক আকাশ।ডাক পড়ে কানে।হোটেল থেকে জুনায়েদ চাচা ডাকছেন।ডেকে ডেকে ক্লান্ত সে।কিছুটা অন্যমনস্ক ছিলো বর্ণ। পিঠে চাপড় পড়তেই হুশ ফিরলো।ধরে বেঁধে নিয়ে গেলো তাকে।খুব অধিকার খাটিয়ে বলেছে,

“আজকা আমার হোটেলে নাস্তা করবি। আয়”

“মাগনা খাওয়াইবেন নি?” বর্ণ জুনায়েদ চাচার আবদারের বিপরীতে প্রশ্ন করে।

“আরেহ ব্যাটা তোর লগে আমার কি লেনদেনের সম্পর্ক? আয় আজকা ঘিয়ে ভাজা পরোটা খাওয়ামু।”

“কুত্তার পেটে বলে ঘি হজম হয়না?”

“এই শালা!এগুলি কইতে নাই। আয়তো”

আধ পাকা পুরোনো খাবারের হোটেল।জুনায়েদ চাচা বেশ যত্ন করেই ডেকে এনে খাওয়াচ্ছেন বর্ণকে।এই ছেলেটিকে চেনেন যখন সে হাফ প্যান্ট পড়ে এদিক ওদিক দৌঁড়ে বেড়াতো।মায়া হয় তার এই বিবর্ণ মুখপানে চেয়ে। অপ্রয়োজনীয় বস্তুর মতো বড় হয়েছে এই প্রাঙ্গণে।বড্ড অবহেলায়।তবে নেই বিন্দু পরিমাণ খেদ।জুনায়েদ চাচা বুঝানোর ভঙ্গিতে বললেন,

“বর্ণরে এমনে আর কতদিন চলবো? পড়ালেখাটা ছাইড়া দিলি। কাম করস কিন্তু যে টাকা পাস ওই টাকায় পেট চললেও জীবন চলবো?”

বর্ণ রুটি মুখে পুড়ে অস্পষ্ট গলায় বলতে লাগলো,

“এহন কি রুটির লগে তোমার জ্ঞানও গিলতে হইবো নি?”

“জ্ঞান দিতাছি না ব্যাটা!”

“জ্ঞানই দিতাছো চাচা।মায়ের চেয়ে মাসীর দরদ বেশি।আমার পেটও চলে আর জিন্দেগিও।”

“তোর লাইগা যে আমার মায়া হয়”

“আমার মায়ায় পড়লে বিশাল লস চাচ্চা।”

“সামনে কি করবি?”

“যা এহন করতাছি…খামু,দামু ঘুরমু,ফিরমু ঘুমানের সময় ঘুমায় যামু।”

“বিয়া শাদি?”

“মাইয়া মানুষের ক্যাচাল দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ক্যাচাল।আমি এসবে নাইক্কা”

দুইদিন যাবত শরীরে পানি পড়ে না বর্ণের।আজ দরকার হলে বুড়িগঙ্গায় গিয়ে ডুব দিবে তারপরও গোসল করা প্রয়োজন।এমন এক বাড়িতে থাকে যেখানে দুদিন পরপর পানির নল নষ্ট হয় নয়তো পানির সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যায়।মালিকের কাছে বলতে গেলে সে খোটা দেয় ভাড়া নিয়ে।আলাদা রকমের কোনো ঝামেলায় পড়তে চায় না বর্ণ।ঘরে ঢুকেই দেখলো তার সাথে থাকা বাকি তিনজন ছেলে নেই।তিনজন নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেদের সাথে এখানটায় থাকে বর্ণ।তাদের কাজের প্রতি অন্য আসক্তি আর বিরক্তি।অনেক টাকা কামিয়ে বড়লোক হওয়ার চেতনায় ভরপুর।রাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আলিশান বাড়ির সপ্ন দেখে।অথচ বাড়ির ইট কেনার মতো টাকাও উপার্জন করেনা।এতবছর খাটুনি করে কোনো লভ্যাংশ দেখতে পায়নি।তারপরও স্বপ্নে কোনো ত্রুটি নেই।বর্ণ একাকী বলে উঠে,

“গেছে শালারা কামলা দিতে! শ্যাহ!ফকিরনীর ছাউ সোনার পালঙ্কে ঘুমাইবার চায়”

দুপুর গড়িয়ে বিকেলের প্রারম্ভ। ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে বর্ণ।এক ঝড়ের সন্ধ্যায় বুড়িগঙ্গার বুকে খোলা নৌকার ছাদে সমগ্র দেহ ভার ছেড়ে চোখ রাঙাচ্ছে বিদ্যুতের খেলা দেখানো আকাশকে।ভয় নেই অন্তরে।নেই কেনো কম্পন অঙ্গে।বুক পেতে ডাকছে ‘আয় পারলে ধ্বংস কর’।ঘুমের মাঝেও এই বাক্যটি বিড়বিড় করে। বাউন্ডুলে এই জীবনে ঘুরছে শুধু এদিক ওদিক।উদ্দেশ্য আর লক্ষ্যহীন।ভবঘুরে আত্মা। প্রাণ বাস করে এই অর্ধ ভগ্ন অলি গলিতে।শেষ যাত্রা এখান থেকেই বেরোবে।এক ঝাপটা এলো পলশা বৃষ্টির। নৌকাটি ঢেউয়ের সাথে নড়েচড়ে।ডুবে যাবে বোধহয়?না ডুবলো না।উল্টো ডুবে যাওয়ার ভয় দেখিয়ে ফিরিয়ে দিলো।বর্ণ ঘুমের মাঝে হাসলো।পূর্ণ ঘুমে বিড়বিড় করে

‘বুড়িগঙ্গার গর্ভে জন্ম আমার।এই গর্ভে ডুবে মরার ভয় দেহাস?বলে দিস ভয়কে বর্ণ সাঁতার জানে’

স্বপ্নের ব্যাঘাত ঘটে আঘাতে।যেনো বাজ পড়লো মাথায় নয় শরীরে।কেঁপে উঠে বর্ণ। ধড়ফড়িয়ে উঠে ঘুম থেকে।চোখ খুলতেই দেখতে পেলো জনিকে।হাতে হকি স্টিক।বর্ণের ডান বাহুতে এই হকি স্টিক দিয়েই আঘাত করেছে সে। বর্ণ এর কপালের রগ ফুটে উঠলো।গর্জনের সুরে গালি দিয়ে উঠে দাঁড়াতেই কপালে আরো একদফা আঘাত পড়ে।গরগর করে রক্ত গড়ায় সঙ্গেসঙ্গে।বর্ণ প্রতিক্রিয়া শূন্য রইলো কিছুক্ষন।কপালের রক্ত চোখের পাপড়ি হয়ে চুয়ে চুয়ে পড়ছে।রাগের বশে শরীরে শক্তি সংবরণ হয়।সঙ্গে সঙ্গে গলা চেপে ধরলো জনির। অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে বললো,

“তেজ বাড়ছে!তেজ ছুটাইবার জানি আমি”

জনি দমে যায়নি। অত্যধিক শক্তি প্রয়োগ করে গলা চেপে রাখা হলেও হাত চলছে।হাত দিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো আধো আধো কণ্ঠে,

“আমার আব্বাজানরে থ্রেট দেস!তোর কইলজার পাটা এতো বড় হইয়া গেছে!আমারে মারবি!তুই শুরু করবার আগে আমি করলাম। আয়!”

বর্ণের শক্ত হাতের রগ ফুটে উঠেছে একহাতে জনির গলা চেপে।আকস্মিক হেসে উঠলো।নত মাথা দুলিয়ে হাসছে।বললো,

“তোরে মারুম? আয় মারি!”

এক হাতে জনির চুল ধরে অন্যহাতে হকি স্টিক তুললো বর্ণ।কোনরূপ মায়া দয়া না করে টেনে নিয়ে বেরিয়ে গেলো বাড়ির বাইরে।এলাকার প্রত্যেকে চেয়ে আছে তাদের দিকে।কেউ কেউ ছাড়ানোর চেষ্টা করতে এলেও বর্ণের বিধ্বংসী রূপে কদম পেছায়।তারা জানে এই দ্বন্দ্ব শেষ হবার নয়।তবে আজ জল গড়িয়েছে অনেক দূর। জনিকে টেনে মোকলেস সাহেবের দোকানের সামনে এনে ফেললো।হাতের উল্টোপিঠে কপালের রক্ত মুছে চিৎকার করে বললো,

“আপনার চক্ষের সামনে আপনার পোলারে মারুম।চোখ মেইলা দেহেন”

মোকলেস সাহেবের আত্মা শুকিয়ে গেলো।পাগলের মত এগিয়ে গেলেন।বারংবার না করেছে এই ছেলেটার সাথে না লাগতে।কি এমন গরম তার কে জানে? জাহির করতে গিয়ে উল্টো নিজের বিপদ। জনিকে জমিনে ফেলে হাতে পায়ে আঘাত করলো বর্ণ। বীভৎস হিংস্রতা ফুটে উঠেছে মুখোশ্রীতে।রক্তপিপাসু নরপশু ভর করেছে যেনো।লোকজন জড়ো হয়েছে ইতিমধ্যে।মাঝেমধ্যে এই রূপ দেখা মেলে ছন্নছাড়া এই নিষ্প্রাণ প্রাণের মাঝে।জানে সমগ্র মহল্লাবাসী।হাত জোর করছেন মোকলেস সাহেব।নিজের মনের রাগ ঝেড়ে তবেই শান্ত হলো বর্ণ।হাতের হকি স্টিক ফেলে চারিদিকে তামাশা দেখা মানুষের দিকে চেয়ে বললো,

“বর্ণের অন্তরে কোনো রহম নাই,কোনো দরদ নাই,কোনো জাতপাত নাই।বর্ণের কোনো সুখ নাই, দুঃখ নাই। বর্ণচোরা জাহিল বর্ণ।যে যেমন রং দেহাইবো ওরে ঠিক ওই রংই দেহায় দিবো!”

চলবে…..