উমা পর্ব-৫৩

0
434

#উমা [কপি করা নিষেধ]
#৫৩তম_পর্ব

সুমনের দুজন জুনিয়ার খরিদ্দার সেজে আসবে। সেই ফাঁকে সুমন এবং রাজশ্বী তাদের সব কথাগুলো রেকর্ড এবং ছবি তুলে নিবে। ছক পাতা হয়ে গিয়েছে। এখন শুধু মূল চরিত্রের আগমণ বাকি। ক্যামেরা হাতে অপেক্ষা করছে রাজশ্বী। হঠাৎ চার পাঁচ জন লোক ঘরে ঢুকলো। জানালার শিক দিয়ে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তাদের মাঝে একজনকে দেখে রাজশ্বীর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। ধীর স্বরে বেড়িয়ে এলো,
” দীপঙ্কর দা, এদের মূলে”

সুমন ফিসফিসিয়ে বলে,
“তুমি চেনো এদের কাউকে?”
“হ্যা, চিনি। মাঝের আসমানী রঙ্গের পাঞ্জাবী পড়া লোকটির নাম দীপঙ্কর রায়। আমার জামাইবাবুর কাকাতো ভাই। কিন্তু দীপঙ্কর দাদা এখানে কেনো?”
“কেনো আবার, এই শয়তানগুলোর নেতা। সে এখানে না থাকলে হবে?”

সুমনের কথা শুনে ক্ষোভে ঘৃণায় মুখ খিঁচিয়ে আসলো রাজশ্বীর। ভাবতেও তার খারাপ লাগছে, এই লোক কি না রুদ্রের ভাই। এতোটা লোভীও মানুষ হয়! সে হাতে থাকা ক্যামেরাটি দিয়ে বেশ কিছু ছবি তুলে নিলো। তারপর ঘাপটি মেরে বসে রইলো তাদের কথা শোনার জন্য। একেবারে জানালার কাছে বিধায় তাদের কথাগুলো স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। দীপঙ্করের সাথের লোকগুলোর মাঝে একজন খরিদ্দরকে বললো,
“আপনারাই জমি কিনতে চান?”
“আজ্ঞে, আমরাই কিনবো।”
“কতটুকু কিনবেন?”
“বিঘা দশেক”
“এতো জমি কি একাই কিনবেন?”
“জ্বী না, আমরা মোট দশ বন্ধু। আমরা দশজন মিলেই এই জমি কিনতে চাই। একটা বড় মিল করবো এখানে। তা কত করে বিঘা?”

দীপঙ্কর আয়েশ করে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললো,
“বুঝলেন ভাই, জমি তো জমি না। এখন সব সোনা এক একটা। এই জমি কিছুদিনের মধ্যে আগুনের দামে হবে। এখন মন্দা চলে ঠিক কিন্তু এই পাশে যখন বিদ্যুৎকেন্দ্র করবে, জেলখানা হবে তখন জমির দাম বেড়ে যাবে। তখন কাঠা এই দামে পান কি না সন্দেহ! বেশি না সাত লক্ষ টাকা করে বিঘা।”
“একটু বেশি হলো না? এই জায়গাগুলো ডোবা! এখন জায়গার সরকারী দর তো এতো না ভাই। শতক হবে আট দশ হাজার টাকা করে। এখানে সাতলাখ অনেক বেশি। আমরা তো দশ বিঘার মতো খরিদ করবো। একটু কমিয়ে দিন।”
“দেখুন আমরা মাছের বাজারে তো নই এখন। জমি জমায় কি এভাবে দর কষাকষি চলে? যা দাম সেটাই ফিক্স। আমাদের খদ্দরের অভাব নেই। এটা ভবিষ্যতে আবাসিক হবে। বড় মার্কেট তুলতে পারবেন মশাই। ভেবে দেখুন।”

খরিদদারেরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বললো,
“আচ্ছা কাগজ ঠিক আছে তো? পেপারে লেখালিখি চলছে। এ জমি নাকি বেয়াইনি দখলে। কিনবো কি করে?”
“এসব আইন ফাইন পকেটে রাখি বুঝলেন? কোনো হালার পুতের সাহস নেই আমার সামনে জবান খোলার৷ দখল বুঝিয়ে দিবো, কাগজ বুঝিয়ে দিবো আর কি চাই?”
“কেস হলে?”
“আদালতে যাবে কেউ আপনার মনে হয়। ও সব কেস তো ঝুলতেই থাকে ঝুলতেই থাকে। এসব হলো সব কিছু টাকার খেলা। আর ওদের টাকা দিয়ে আমরা কিনেছি। সই, টিপ, আঙুলের ছাপ সব আছে। এই যে, দেখুন খতিয়ান।”

রাজশ্বীর গা জ্বলছে। ইচ্ছে করছে লোকগুলোর গলা টিপে ধরতে৷ কতটা অমানুষ হলে এতোটা চড়াও হয়ে নিজের অপকীর্তির বড়াই করতে পারে! সব কথা শেষ হবার পর সুমন আস্তে করে সুতোয় বাঁধা কলমটি বের করে নেয়। তারা সেখান থেকে সরতেই যাবে, তখনই সুমনের চটি শুকনো পাতায় শব্দ করে উঠে। বাইরে সিগারেট খাওয়া, দীপঙ্করের ছেলেপেলের নজর পড়ে ঝোপের দিকে। বাজখাই স্বরে বলে উঠে,
“কে রে? কে ওখানে?”

তাদের কন্ঠ শুনেই সুমন এবং রাজশ্বীর ভেতরটা কামড় দিয়ে উঠে। রাজশ্বী সুমনকে বলে,
“সুমন দা পালাতে হবে। দৌড় দিতে পারবেন তো? চলুন দৌড় দেই। ধরা পড়লে মেরে ফেলবে কিন্তু”

দীপঙ্করের লোকেরা টর্চের আলো ফেলতেই আলো সুমনের ভয়ার্ত মুখে গিয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে একজন বলে উঠে,
“দাঁড়া ওখানে, এই কে কোথায় আছিস। ধর ধর, লুকিয়ে কথা শুনছিলো বোধ হয়”

মূহুর্তেই শান্ত নিবিড় পরিবেশটি গমগমে হয়ে গেলো। সবার শোরগোল বাড়তে লাগলো। ছেলেপেলের শোরগোলে দীপঙ্কর বাহিরে আসে। তাদের জিজ্ঞেস করে,
“কি রে চিৎকার করছিস কেনো?”
“দাদা, দুজন ক্যামেরা হাতে লুকিয়ে জানালার পাশে ছিলো। হয়তো ছবি তুলছিলো। কি করবো দাদা?”
“অকর্মন্য, গবেট কোথাকার। তোদের টাকা দিয়ে কি গন্ডমূর্খের মতো দাঁড়িয়ে থাকার পয়সা দেই। যা না দেখ কোথায় গেছে। এগুলোকে ধরতে না পারলে আমাদের সব ফাঁস হয়ে যাবে। যা”

রাজশ্বী এবং সুমন প্রাণ বাঁচাতে ছুটতে থাকে। ক্যামেরার রিলটা এবং কলম টি অতি সাবধানে নিজের কাছে রাখে। তাদের জুনিয়রদের কাছেও রেকর্ডিং কলম আছে সেকারণে প্রমাণের অভাব হবে না। শুধু তারা ধরা না পড়লেই হয়। এদিকে দীপঙ্করের লোকজন পেছনে ছুটতে থাকে। হাতে তাদের ছড়ি, দা। না জানি কত অস্ত্র। উদ্দেশ্য রাজশ্বী এবং সুমনকে এই গ্রাম থেকে বের না হতে দেওয়া। ছুটছুটতে পায়ে ব্যাথা করে উঠে রাজশ্বীর। আকা বাকা পথ যেনো শেষ হবার নাম নেই। অবশেষে একটি পানের বরজের কাছে চলে আসে তারা। উপায়ন্তর না পেয়ে রাজশ্বী এবং সুমন সেই পানের বরজের ভেতরে লুকিয়ে পড়ে তারা। আমাবস্যার রাত, চাঁদও যেনো ঘাপটি মেরে রয়েছে তাদের বাঁচাতে। টর্চ দিয়ে তন্ন তন্ন করে খুজতে থাকে তারা। সুমন আয়াতুল কুরসী পড়তে থাকে। তার হৃদস্পন্দন ক্রমেই বেড়ে চলেছে। মৃত্যির ভয়ে তার হাটু কাঁপাচ্ছে। এদিক রাজশ্বীর পা টা যেনো হিম ধরে গিয়েছে। অবশ হয়ে আসছে। পানের বরজের ভেতরে হাটু গেড়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকাটা খুব সহজ কার্য নয়। তার কপালে ঘাম জমছে, ফাগুনের শীতল রাতেও ঘামছে সে। গলাটা শুকিয়ে আসছে ছুটার কারনে। এক এক জায়গায় তন্ন তন্ন করে খুজতে খুজতে এক পর্যায়ে একটি ছেলের চোখে পানের বরজে যায়। সে সিদ্ধান্ত নেয় পানের বরজে একবার দেখবে, সে টর্চ হাতে ঢুকে পড়ে বরজে………

চলবে