#উষসী_হাসবে_বলে (৪০)
লিখা- Sidratul Muntaz
উষসী ভেবেছিল এই পরিস্থিতিতে তার গলা দিয়ে একটুও খাবার নামবে না। কিন্তু ক্যান্টিনে ঢুকেই সে স্মল সাইজের একটা পিজ্জা খেয়ে ফেলে অনায়াসে৷ তারপর একটা স্যান্ডউইচ নিয়ে নেয়। সেটা খেতে খেতে ইয়ামিনের হাত ধরে বের হয়। এখন তারা সিক্সথ ফ্লোরে যাচ্ছে। যেখানে উষ্ণতা আছে।
মন ভালো থাকলে সবকিছুই রঙিন মনে হয়। উষসীর মন এই মুহূর্তে খুব উৎফুল্ল। উষ্ণতার সাথে ইয়ামিনের দেখা হয়েছিল। ইয়ামিনের ধারণা, উষ্ণতা তাদের ব্যাপারটা মেনে নেবে। কারণ তাকে দেখে একবারও মনে হয়নি যে সে এখনও মনে অতীত গেঁথে রেখেছে। বরং বহু বছর ধরে পরিচিত মানুষের মতোই কথা বলেছে ইয়ামিনের সাথে। এই কথা শুনে উষসীর আনন্দে নাচতে মন চাইছে। কারণ তৃষাণ যদি রোবট হয় তাহলে উষ্ণতা তার কন্ট্রোলার! উষ্ণতা মেনে নিলে আর কোনো সমস্যা থাকার কথাই না।
অবশেষে সব বাঁধা-বিপদ কাটিয়ে তারা সত্যিই বুঝি এক হতে পারবে! এর চেয়ে উল্লাসের বিষয় আর কি হতে পারে? উষসীর শরীরে এখন কেমন একটা জোশ চলে এসেছে। সে প্রতিটি কথায় হাসছে। মুখভর্তি স্যান্ডউইচ নিয়েও হাসছে! ইয়ামিন সাবধানে বলল,”আস্তে খাও। খেয়ে পরে হাসো। নয়তো হেসে পরে খাও৷ একসাথে দু’টো করলে তো বিষম খাবে।”
উষসী উল্লাস নিয়ে বলল,” বিষম খেলেও সমস্যা নেই৷ এখন আমি বিবাহিত।”
ইয়ামিন হতভম্ব চিত্তে বলল,” বিষম খাওয়ার সাথে বিবাহিত হওয়ার কি সম্পর্ক?”
উষসী আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলল,” প্রিয় আপু ঠিক বলেছিল। বিয়ে করলেই সব প্রবলেম সোলভ হয়ে যাবে। দেখলে তো… সব কেমন ইজিলি সোলভ হয়ে যাচ্ছে? আমি শিউর, উষ্ণতা আপু যদি বলে তাহলে তৃষাণ ভাইয়াও আমাদের বিয়েটা মেনে নিবে। আর কোনো বাঁধা থাকবে না, দেখবেন! আমরা সবসময় একসাথে থাকবো। হাহাহা! ইয়েস!”
উষসী আবার ইয়ামিনকে ‘আপনি’ করে বলছে! ঠিকাছে বলুক যাক খুশি! খুশিতে ইয়ামিনের কাঁধে নাক ঘঁষল সে। তখনি লিফট খুলে গেল। সামনে কয়েকজন আগন্তুক দাঁড়ানো। উষসী দ্রুত নিজেকে সামলালো। খানিকটা লজ্জাও পেল। ইয়ামিন তার ছেলেমানুষি দেখে হাসল। তারপর হাত ধরে তাকে নিয়ে বের হয়ে এলো। তবে সে একটু চিন্তিত। এই মুহূর্তে তার মনে হচ্ছে, ঝোঁকের মাথায় বিয়েটা করা একদম উচিৎ হয়নি।
আসলে সে প্রথমে ভেবেছিল উষসীর পরিবার তাদের সম্পর্ক কোনোদিন মানবে না। কিন্তু সেও উষসীকে ছা’ড়তে পারবে না। তাই তাকে হারানোর ভ’য়টা জয় করার জন্যই মূলত বিয়ের মতো একটা বড় স্টেপ নিতে হয়েছে। সে উষসীকে পাওয়ার জন্য আরও অনেক বড় বড় রিস্ক নিতে পারে। সেটা লাইফ রিস্কও হতে পারে। কারণ এখন তার লাইফের মূল অর্থই উষসী৷ উষসী না থাকলে তার জীবন হবে অর্থহীন। বিরহ আর কষ্টে সিক্ত, উত্তপ্ত। সে নতুন করে মোটেও কষ্ট পেতে চায় না। উষসীকে নিয়ে সুখে বাঁচতে চায় বলেই কোনোভাবেই হারিয়ে ফেলতে চায় না তাকে। এই জন্যই এভাবে বিয়েটা করেছিল। যাতে অন্তত হা’রাতে না হয়। আর কেউ না থাকলেও আইন তাদের পাশে থাকবে। তারা প্রাপ্তবয়স্ক!
তবে এখন মনে হচ্ছে, উষসীর পরিবার হয়তো তাদের সম্পর্কটা মেনে নিবে। দেরিতে হলেও মানবে৷ তখন যদি তারা জানতে পারে, উষসী তাদের না জানিয়েই লুকিয়ে বিয়ে করেছিল তখন কি কষ্ট পাবে না? উষসী তার পরিবারকে অসম্ভব ভালোবাসে। তাদের কষ্ট দিয়ে উষসী নিজেও ভালো থাকবে না। মুষড়ে পড়বে। আর উষসী যদি মুষড়ে পড়ে, যদি না হাসে ওই মন দোলানো হাসি তাহলে ইয়ামিনের মনের শান্তিও নষ্ট হয়ে যাবে। উফ, কি মুশকিল! বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়াটা আসলেই ভুল হয়েছে। একটু ধৈর্য্য ধারণ করা উচিৎ ছিল তাদের। সবকিছু তো ঠিক হয়েই যাচ্ছিল!
উষসী এককোণে বসে স্যান্ডউইচ খাওয়া শেষ করেছে। টিস্যুতে হাত মুছে ডাস্টবিন খুঁজতে নিয়ে দেখল ইয়ামিন তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। গভীর ভাবনায় বুদ হয়ে কি যেন চিন্তা করছে সে। উষসী তার মুখের কাছে তুরি বাজিয়ে বলল,” হ্যালো, শুনছেন?”
ইয়ামিন আশেপাশে একটু তাকাল। তারপর উষসীর কাছে এসে কেমন গভীর গলায় বলল,” হুম শুনছি.. বলো।”
উষসী একটু সরে গিয়ে বলল,” এতোটাও কাছে আসতে হবে না। দূর থেকেও আপনি আমার কথা শুনতে পাবেন।”
ইয়ামিন গাঢ় দৃষ্টিতে তাকে দেখতে দেখতে বলল,” দূর থেকে কথা শোনা গেলেও অনুভব করা যায় না!”
উষসী অপ্রস্তুত হলো। চোখ পিটপিট করে বলল,” মানে?”
ইয়ামিন একটু ঝুঁকে এলো। তার মতলব বুঝতে পেরে আশেপাশে তাকাল উষসী। এদিকে কেউ নেই। কিন্তু সিসিটিবি তো আছে। সেদিকে আঙুল ইশারা করে কিছু বলার আগেই ইয়ামিন তার আঙুল ধরে ফেলল। তারপর আলতো করে নামিয়ে দিল আঙুলটা। আর তার নিচের ঠোঁটে খুব আলতো ভেজা স্পর্শ করল।
উষসী দ্রুত ইয়ামিনকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে বলল,” কেউ চলে আসবে। উফ! আমার ভ’য় লাগছে। যদি তৃষাণ ভাইয়াই চলে আসে?”
ইয়ামিন উষসীর কাঁচুমাচু মুখটির দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ হেসে ফেলল। তারপর মুগ্ধ কণ্ঠে বলল,” এতো কিউট কেন তুমি?”
উষসী মাথা নিচু করে লাজুক গলায় বলল,” নাহলে তো আপনি এতো ভালোবাসতেন না।”
” তোমার কি মনে হয়, আমি তোমাকে তোমার সৌন্দর্য্যের জন্য ভালোবাসি?”
” তাহলে কেন ভালোবাসেন?”
” জানি না। তুমি হাসলে আমার হার্ট ট্রিম্বলিং করে। আমি হয়তো তোমাকে এই হার্টের দায়েই ভালোবাসি। তুমি না হাসলে এই হৃদকম্পন স্তব্ধ হয়ে যাবে সুহাসিনী!”
উষসী মনে মনে পাখির মতো উড়তে লাগল। কিন্তু উপরে মুখ ভেংচি কেটে বলল,” ইশ, ডায়লগ!”
” স্যার, স্যার.. একমিনিট স্যার! কোথাও যাবেন না প্লিজ।”
একটি লোক ইয়ামিনের দিকে চেয়ে এই কথা বলে দৌড়ে কোথায় যেন চলে গেল। উষসী অবাক হয়ে বলল,” কি ব্যাপার?”
ইয়ামিন পকেট থেকে মাস্ক বের করে দ্রুত মুখে পরল। এখানে নিরিবিলি দেখে একটু মাস্কটা খুলে রেখেছিল৷ তাও নিস্তার পাওয়া যায়নি। শিট! সে দ্রুত উষসীর হাত ধরে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,” চলো, চলো এখান থেকে দ্রুত পালাতে হবে।”
” মানে? কেন? আমরা কেন পালাবো আমরা কি চোর?”
ইয়ামিন উষসীকে নিয়ে পারলে প্রায় দৌড় লাগায়। কিন্তু উষসীর পা মচকে গেল। সে থমকে গেল ওখানেই। ইয়ামিন উষসীকে কোলে তুলে নিল। কিন্তু তারা লিফটে ওঠার আগেই লোকটি প্রায় ছুটে এলো৷ তার পেছনে একদল দমকা বাহিনী। তাদের মধ্যে একজনের হাতে বিরাট ক্যামেরা। যা দেখে ভ’য়ে উষসীর মুখে স্বয়ংক্রিয় চিৎকার চলে এলো। মুহূর্তেই নীরব পরিবেশে ভীড়-ভাট্টা এতো বেড়ে গেল যে ধাক্কাধাক্কির কারণে তাদের দু’জনেরই নাজেহাল দশা। তবে ইয়ামিন সর্বাত্মক চেষ্টা করে উষসীকে দুইহাতে আগলে রেখেছে৷ যেন কোনো পুরুষের স্পর্শ একফোঁটাও তার গায়ে না লাগে! উষসী ব্যাপারটা অনুভব করতে পারছিল। তবে এতো মানুষের মাঝে, চিৎকার চেঁচামেচিতে তার প্রায় দমবন্ধ হওয়ার দশা! উফ, সেলিব্রিটিদের জীবন মোটেও সহজ নয়।
ইয়ামিন আর উষসী পাশাপাশি বসে আছে দু’টো চেয়ারে। তাদের ঘিরে লম্বা লাইন৷ হাসপাতালের গ্রাউন্ড ফ্লোরের লবিতে মানুষের ভীড় জমে গেছে। একে-অন্যের মাথা খেয়ে নিচ্ছে৷ তাও ইয়ামিন ইব্রাহীমকে একনজর দেখা চাই। সাংবাদিক অভয় কুমার দাস প্রশ্ন করলেন,” স্যার, আপনাদের রিলেশনের জার্ণিটা সম্পর্কে কিছু বলুন প্লিজ। কয় বছর হলো? আর বিয়ে করছেন কবে?”
উষসী কোনো কথা বলতে পারছে না৷ এতোগুলো মানুষের সামনে সে ভীষণ নর্ভাস হয়ে বসে আছে। ইয়ামিনই সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। সে গম্ভীর গলায় বলল,” এখনও সেসব নিয়ে কিছু চিন্তা করিনি আমরা। যখন ভাববো, তখন নিশ্চয়ই জানবেন।”
আরেকজন প্রশ্ন করল,” কিন্তু আপনি তো ম্যাডামের ভার্সিটিতে গিয়ে তাকে জনসম্মুখে প্রপোজ করেছিলেন৷ তার হাতে রিং পরিয়েছিলেন। যা আমরা এখনও ম্যামের হাতে দেখতে পাচ্ছি। ম্যাম, আপনি কি একটু হাতটা উপরে ক্যামেরার সামনে তুলবেন?”
উষসী ভ’য়ে ভ’য়ে ইয়ামিনের দিকে তাকাল। ঢোক গিলল। সে কখনও এমন পরিস্থিতিতে পড়েনি তাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে। ইয়ামিন প্রসঙ্গ এড়ানোর জন্য বলল,” আর কোনো প্রশ্ন আছে?”
পেছন থেকে একজন বলল,” স্যার, স্যার… আপনাকে নিয়ে যে বর্তমানে বড় একটা রিউমার ছড়িয়ে গেছে মেডিকেল স্টুডেন্ট ফাবিয়াহ আফরোজের সাথে সেটা নিয়ে আপনার কি কিছু বলার আছে? আর ম্যাডামই বা বিষয়টা কিভাবে দেখছেন?”
ইয়ামিন এবার ভীষণ অস্বস্তি অনুভব করল। সে উষসীর হাত ধরে উঠতে উঠতে বলল,” এনিওয়ে.. আমাদের তাড়া আছে।”
মুহূর্তেই জনতারা ঝাঁপিয়ে পড়ল। চেঁচিয়ে উঠল,” স্যার, স্যার… যাবেন না স্যার। আপনাদের নেক্সট প্ল্যান কি?একটা প্রশ্ন স্যার!”
এতো শোর-গোলের মধ্যে সাধারণ মানুষ অতিষ্ট। লবির বাইরে দুই বান্ধবী একে-অন্যের হাত ধরে যাচ্ছিল। সামনে এতো এতো মানুষ আর ক্যামেরা দেখে একজন আৎকে উঠে বলল,” এতো ভীড় কিসের ওখানে? কারো এক্সিডেন্ট হয়েছে নাকি?”
পাশের মেয়েটি ঠোঁট উল্টে বলল,” কি জানি? আমিও তো বুঝতে পারছি না।”
পেছন থেকে একটা ছেলে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলল,” সিংগার ইয়ামিন ইব্রাহীম এসেছেন। তাই এই অবস্থা! সাথে আছে উনার গার্লফ্রেন্ড লামিয়া ইমরোজ উষসী। ”
প্রথম মেয়েটি চিৎকার করে উঠল,” কি? সত্যি বলছেন আপনি?”
দ্বিতীয় মেয়েটি বলল,” ইয়ামিন ইব্রাহীম যেন কে?”
” আরে, তুই চিনিস না? সিংগার ইয়ামিন ইব্রাহীম! ওইতো আমাদের সিলেটে একবার কনসার্ট হয়েছিল যে।”
” ও মাই গড! উনি যে বাংলাদেশে আছে আমি ভুলেই গেছিলাম৷ কিন্তু হঠাৎ এই হাসপাতালে কেন এসেছেন? এখানে কনসার্ট করবেন নাকি?”
পেছনের ছেলেটি হেসে বলল,” না। এই হাসপাতালে উনার পেশেন্ট ভর্তি। গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে দেখতে এসেছিলেন। আর মিডিয়ার সামনে পড়ে গেছেন।”
প্রথম মেয়েটা এক্সাইটেড হয়ে বলল,” উফ, চল, আমরা দেখা করে আসি। আর উনার গার্লফ্রেন্ডকেও বাস্তবে দেখার খুব ইচ্ছা ছিল আমার। শুধু ছবিতেই কি এতো সুন্দর নাকি বাস্তবেও? চল দেখে আসি প্লিজ।”
” হ্যাঁ, হ্যাঁ চল যাই।”
মেয়ে দু’টো ভীড় ঠেলে খুব কষ্টে উঁকিঝুঁকি মা’রার চেষ্টা করছে। কিন্তু শ’খানেক মানুষ পার করে কিছুতেই সামনে যেতে পারছে না। একজন রসিকতা করে বলল,” এই প্রথম প্রাইভেট হসপিটালে এতো মানুষ দেখলাম।”
আরেকজন বলল,” হুম। মনে হচ্ছে সরকারি হাসপাতালে বিনা পয়সায় টিকাদান করা হচ্ছে।”
” তাও ভালো। এই হাসপাতালের যা খরচ… কেউ এমনিও ঢোকার সাহস করে না। আজ অন্তত কোনো একটা উপলক্ষ্যে পাবলিক এই হাসপাতালে পা রেখেছে!”
” ঠিক বলেছিস, হাহাহা!”
ইয়ামিন সবাইকে সরিয়ে দিতে দিতে বলল,” আমি আমার পারসোনাল লাইফ নিয়ে আর কোনো ডিস্কাশন করতে চাই না। প্লিজ স্টে এ্যাওয়ে।”
একজন সাংবাদিক ঠিক উষসীর মুখের সামনে মাইক ধরে বলল,” ম্যাডাম প্লিজ, আপনি আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিন। ছবিগুলো ভাইরাল হওয়ার পর থেকে সবাই স্যারকে চরিত্রহীন বলছে। স্যারের ফ্যানডোমের জন্য অনেক বড় একটা ধা’ক্কা এটা। এসব দেখে আপনার কি কষ্ট হচ্ছে না?”
ইয়ামিন উষসীকে সকলের মাঝখান থেকে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে। কিন্তু উষসী যাচ্ছে না। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। পাথরের মতো শক্ত তার মুখ। ইয়ামিন অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল, ডাকল,” উষসী?”
উষসী থমথমে গলায় বলল,” আমি সবকিছু ক্লিয়ার করতে চাই।”
” না উষু। প্লিজ, বাদ দাও।”
” সবাই আপনাকে চরিত্রহীন ভাববে আর আমি সেটা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে পারব না।”
” আমার কিছু যায়-আসে না কারো কথায়। পুরো পৃথিবীর সামনে নিজেকে শুদ্ধ বানানোর প্রয়োজন নেই আমার। শুধু তুমি আমাকে বিশ্বাস করলে সেটাই ইনাফ আমার জন্য। কারণ এখন তুমিই আমার ব্যক্তিগত পৃথিবী।”
ইয়ামিন মৃদু হাসল৷ তারপর তাকে টেনে বলল,” চলো এবার।”
উষসী দুইপাশে মাথা নাড়ল,” উহুম৷ আমার কাছে আপনার সম্মান অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমি চাই সবার কাছে সেটা অক্ষুণ্ণ থাকুক। যা আপনি করেননি তার শাস্তিও আপনি পাবেন না।”
উষসী ইয়ামিনের হাত ধরে তাকে পুনরায় ক্যামেরার সামনে নিয়ে এলো। তাদের ফিরে আসতে দেখে জনতার উৎসাহ দশগুণ বাড়ল। সবাই চিৎকার করতে লাগল।
উষসী ইয়ামিনের হাত ধরে পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল,” আমি এই মানুষটাকে ভালোবাসি। তাকে নিজের চেয়েও বেশি বিশ্বাস করি। পৃথিবীর সবাই একজোট হয়েও যদি তাকে চরিত্রহীন প্রমাণ করে আসামীর কাঠগোঁড়ায় দাঁড় করায়, তাও আমি তাকে অবিশ্বাস করব না। কয়েকটা ফেইক ছবির জন্য আমি ব্রেকাপ করে ফেলব এতোটাও দূর্বল সম্পর্ক আমাদের কখনোই ছিল না। তাই ভুল করেও কেউ এটা ভাববেন না যে কোনো নোংরা মনের মানুষ নোংরা খেলা খেললেই আমাদের আলাদা করতে পারবে। বরং আমরা সবসময় একে-অন্যের পাশে থাকব, এভাবেই। তাতে পৃথিবী যা খুশি ভাবুক। আমাদের কিছুই যায়-আসে না।”
ইয়ামিন হাঁ করে উষসীর দিকে তাকিয়ে আছে। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে উচ্চগলায় এই কয়েকটা কথা বলাও কম সাহসের ব্যাপার না। অজান্তেই ইয়ামিনের ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠল। মানুষ তো জয়ধ্বনি দিয়েই যাচ্ছে। করতালির তীক্ষ্ণ শব্দ চারদিকে। কিন্তু ইয়ামিনের চারপাশটা যেন শব্দহীন, শান্ত। উষসী ইয়ামিনের দিকে চেয়ে হাঁফ ছেড়ে বলল, ” এখন শান্তি লাগছে আমার।”
ইয়ামিন মিষ্টি হেসে বলল,” আমারও।”
সাংবাদিকের ভাষায়,” ওয়াও, ওয়াও, ওয়াও, বিচ্ছেদের এই যুগে এমন দৃঢ় বন্ধনই তো আমরা দেখতে চাইছিলাম। এমন বিশুদ্ধ সত্যিকারের ভালোবাসা ক’জনের কপালে জোটে? স্যার… একটা রিকয়েস্ট করব৷ আপনি ম্যাডামকে সেদিন যেভাবে প্রপোজ করেছিলেন আজ আমাদের সবার সামনে সেভাবে আরেকবার বলুন, প্লিজ।”
সবাই তীব্র আওয়াজে চেঁচিয়ে উঠল,” হ্যাঁ, হ্যাঁ, আরেকবার বলুন স্যার প্লিজ।”
ইয়ামিন সাথে সাথেই হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়ল। মানুষ বিকট শব্দে চেঁচিয়ে উঠল তখন। উষসী বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে। মুখে হাত ঠেঁকাল সে। চোখ টলমল হয়ে আসল৷ ইয়ামিন হাত বাড়িয়ে ঠিক সেদিনের মতোই আবেগী আর প্রসন্ন চিত্তে বলল,” সুর আর রঙের চেয়েও এখন আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রায়োরিটি হলো আমার উষসী আর তার হাসি। সে হাসবে বলে আমি এমন হাজারও পাগলামি সারাজীবন করে যেতে পারি। তার খুশির জন্য আমি এক পৃথিবী সুখ তার মুঠোয় এনে দিতে পারি। উষসী, আমি তোমাকে ভালোবাসি। চলো বিয়ে করি এবার! অনেক তো হলো, এবার সারাজীবনের জন্য তোমার হাত ধরতে চাই আমি। সেই অধিকার কি আমাকে দিবে?”
সবাই করতালি বাজাচ্ছে। উষসীর চোখ থেকে ঝরঝরে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। সে ইয়ামিনের হাত ধরে মাথা নাড়ল কেবল। প্রথমবার প্রপোজের মতোই আনন্দ হচ্ছে তার। ইয়ামিন তাকে এক জীবনে যতবার ভালোবাসার কথা বলবে ততবারই কি সে এইভাবে বোকার মতো কেঁদে ভাসাবে নাকি? ধূর, কিছুতেই কান্না সামলে রাখা যায় না!
ইয়ামিন উঠে দাঁড়াল এবার৷ উষসীর কাঁধে হাত রাখল। সবাই একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে ছবি তুলতে লাগল তাদের। উষসীর চোখ ছলছল করছে আর ইয়ামিনের মুখ আনন্দে ঝলমল করছে! দু’জনেই গভীর ভালোবাসার সুখে পরিতৃপ্ত, পরিপূর্ণ!
চলবে