উষ্ণ আঁচে ভালোবাসা পর্ব-১৯+২০

0
2

#উষ্ণ_আঁচে_ভালোবাসা (১৯)
রূপন্তি রাহমান (ছদ্মনাম)

থতমত খেয়ে গেলো পিয়া। লজ্জায় এদিক ওদিক তাকাতে লাগল। হাতে থাকা মোবাইল কানে ঠেকিয়ে মিছে মিছে বলে, ‘হ্যা আম্মু আমি হাসপাতালে এসেছি।’

পিয়ার চলে যেতেই তাহমিনা হক ঢুকলেন কেবিনে। পিয়া আবারও কেবিনের সামনে দাঁড়ায়। পিয়াকে লজ্জায় ফেলতে তানভীর বলে উঠলো,

‘মা কি বলেছে শুনেছো?’

মিছে রাগ দেখায় পিয়া, ‘থামবেন আপনি?’

তানভীর থামে না বরং দু’কদম এগিয়ে আসে। পিয়া কানে ফিসফিসিয়ে বলে, ‘আমার আদরে ভাগ বসানোর শাস্তি যে আপনাকে পেতে হবে রাজমহিষী। আর এর শাস্তির মেয়াদকাল দশমাস।’

কথা ইঙ্গিত বুঝতে বেগ পেতে হয় না পিয়ার। দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাখে। চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে রইলো লজ্জায়। তাহমিনা হকের শব্দ পেয়ে দূরে সরে দাঁড়ালো তানভীর। কেবিন থেকে বেরিয়ে লম্বা নিঃশ্বাস ফেলেন তিনি।

‘ভেবেছিলাম খাবার হয়তো নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এখনো হালকা গরম আছে। তোমার শ্বশুর ঘুম থেকে উঠার আগেই খেয়ে আসি চলো।’

ক্যান্টিনের দিকে পা বাড়াতেই বাঁধা দেয় পিয়া। তাহমিনা হক পুনরায় বলেন, ‘কি হলো? থামলে কেন মা? তোমার শ্বশুর কিন্তু যেকোনো সময় উঠে যাবে।’

পিয়া ফিচেল হাসল।

‘সেজন্যই তো মা। আগে একবার বাবাকে একটু দেখে আসি। ঘুম থেকে উঠলে তো আর কাছে যেতে পারবো না।’

তাহমিনা হক পিয়ার কাছে এগিয়ে এলেন। পিয়া মাথায় হাত রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।

‘তুমি শুধু শুধু পাগলামি করছো। এহতেশামের সামনে গেলে কি এমন হবে? তুমি নিষেধ করায় তোমার বাবা মাও দূর থেকে দেখে চলে যায়।’

পিয়া কাঁপা কাঁপা স্বরে উত্তর দেয়,

‘পাগলামি করছি না মা। আপনি শুনেননি সেদিন ডাক্তার কি বলল। আমাকে দেখে যদি উত্তেজিত হয়ে পড়েন তখন? বাবা আগে সুস্থ হউক তারপর না হয় উনার সামনে যাবো।’

তাহমিনা হক তপ্ত শ্বাস ফেলেন,

‘যা ভালো মনে করো।’

তাহমিনা হক ক্যান্টিনের দিকে গেলেন। পিয়া ঢুকল কেবিনে।

গভীর নিদ্রায় নিমজ্জিত আছেন জামাল এহতেশাম। কেউ যে তার পাশে বসে পরম মমতা নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন সেই হুঁশ নেই। টেরও পাচ্ছেন না তিনি। হয়তো কোনোদিন জানতেও পারবেন না।

কাটাছেঁড়া মুখ দেখে চোখ ভিজে আসে পিয়ার। সেদিনের র*ক্তের কথা মনে পড়লে তো নিঃশ্বাস আটকে আসে।

‘তাড়াতাড়ি সুস্থ উঠুন বাবা। আপনি অসুস্থ হওয়াতে তো পুরো পরিবার টা অসুস্থ হয়ে গেছে। আপনি সুস্থ হন এরপর আপনি যা চাইবেন তাই হবে। আপনার সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ একটা কদমও ফেলবে না। আমি কথা দিচ্ছি আপনাকে।’

জামাল এহতেশাম নড়েচড়ে উঠতেই চুপ হয়ে যায় পিয়া। তিনি ঘুম ঘুম ঝাপসা চোখে পিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন অপলক। তারপর আস্তে আস্তে আবারও তলিয়ে গেলেন গভীর নিদ্রায়।

জামাল এহতেশামকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভয়ে চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে রাখে পিয়া। যদি চিৎকার করে উঠে সেজন্য। আবারও ঘুমিয়ে যেতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল সে। তারপর তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে আসে কেবিন থেকে।

তানভীর কে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয় পিয়া।

‘সেকি আপনি মায়ের সাথে ক্যান্টিনে যাননি?’

এপাশ ওপাশ মাথা নাড়ে তানভীর।

‘মা হয়তো অপেক্ষা করছে চলুন।’

সামনে পা না ফেলে তানভীর এগিয়ে আসে পিয়ার দিকে। আলতো করে চুমু দেয় চুলের ভাঁজে।

পিয়া ছিটকে দূরে সরে গেল।

‘ইয়া আল্লাহ! কি করছেন আপনি? এখানে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলে?’

‘তো? তানভীর এসব তোয়াক্কা করে না। কারণ সে তার বউকে চুমু দিয়েছে।’

‘নির্লজ্জ একটা।’

পিয়ার হাতটা ধরে কদম ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে চলে তানভীর।

গুটি গুটি পায়ে গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যুগল। একজনের পথচলায় সীমাহীন আনন্দ। সঠিক মানুষটাকে জীবনসঙ্গী করায় খুশিতে চকচক করছে চোখ। অন্যজনের পথচলায় আতঙ্ক। হারিয়ে ফেলার ভয়। এই বন্ধন সারাজীবনের নাকি এখানেই থেমে যাবে দুজনের পথচলা?

___________________

এককাপ কফি বানানোর জন্য রান্নাঘরে এসেছে পিয়া। চুল থেকে টুপ টুপ করে পানি ঝরছে তার। তখনই খাবার গরম করার জন্য রান্নাঘরে আসেন রেহেনা বেগম।

‘সেকি তুই রাতের বেলা গোসল করেছো পিয়া? ঠান্ডা লেগে যাবে তো।’

আচানক কথা শুনে ভয় পেয়ে যায় পিয়া। তড়িঘড়ি করে বুকে থুথু দেয় সে।

‘ভয় পেয়েছো?’ বলেই একটু ছুঁয়ে দেন তিনি।

পিয়া মলিন হেসে মাথা নাড়ায়। দুধের পাতিল চুলোয় বসিয়ে বলে,

‘আসলে আন্টি হাসপাতাল থেকে এসেছি সাড়ে নয়টায়। সারাদিনের দৌড়াদৌড়িতে গা কুট কুট করছিল। গোসল না করলে থাকতে পারতাম না।’

‘মাথা মুছে নাও মেয়ে। নয়তো ঠান্ডা লেগে যাবে।’

রেহেনা বেগম মাছের ঝোলটা চুলোয় বসিয়ে প্রশ্ন করলেন,

‘তোমার শ্বশুর এখন কেমন আছেন?’

পিয়া তপ্ত শ্বাস ছাড়ল। ম্লান কন্ঠে উত্তর করলো,

‘আগের থেকে একটু ভালো আন্টি।’

নিজের কাজে মনোযোগ দিলেন তিনি। আপনমনে বলতে লাগলেন,

‘যেদিন শুনলাম তোমার শ্বশুর এক্সিডেন্ট করেছে বেশ অবাক হয়েছিলাম। তুমি তো অবিবাহিত শ্বশুর আসবে কোথা থেকে। পরে তোমার বিয়ে হয়েছে শুনে বিশ্বাসই হচ্ছিল না। কিভাবে এমন একটা সত্যি চেপে ছিলে মেয়ে?’

দুধ উতলে উঠে। চুলোর আঁচ কমিয়ে দেয় সে।

‘তখন বললে বিশ্বাস করতেন না আন্টি। ব্যাপারটা এতোটাই আচমকা ছিল আমারই বিশ্বাস হচ্ছিল না।’

মাছের ঝোলটা গরম হতেই তিনি ডাল বসালেন। পিয়া দুধের পাতিল নিয়ে চলে আসবে তখনই রেহেনা বেগম বলেন,

‘তোমার বর দিয়ে গেল বুঝি?’

উপর নিচে মাথা দুলায় পিয়া। তিনি ফের বললেন,

‘ নিচ থেকে চলে যায়। একদিন বাসায় আসতে বলো তাকে।’

পিয়া উত্তর দেয় না। কেবল মুচকি হেসে প্রস্থান করে। রেহেনা বেগম আরো কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করে না। প্রশ্নগুলো চেপে রাখেন মনে। বিড়বিড় করে আওড়ালেন,

‘সবার নসিব কি আর আমার মতো খারাপ হবে। সবাই তো পড়াশোনার মূল্য দিতে জানে না।’

_______________

পিয়া নিজের জন্য এককাপ কফি বানাল। পিছু ফিরে তাকাতেই দেখতে পেল তানিয়া কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে।

‘কিরে মাত্রই না তুহিন ভাইয়ার সাথে কথা বলেছিলি। এখন আবার কি হলো?’

কোনো উত্তর এলো না। পিয়া কফির কাপে চুমুক দেয়।

‘তোর জন্য কফি বানাবো?’

এবারও কোনো উত্তর এলো না। পিয়া পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,

‘কিরে কথা বলছিস না কেন?’

তানিয়া নাক টানে। ভাঙা গলায় জবাব দেয়, ‘খাবো না।’

কপালে ভাঁজ পড়ল পিয়া। কফির কাপ রেখে দ্রুত পায়ে তানিয়ার কাছে এলো।

‘কাঁদছিস তুই?’

তানিয়া কেবল ফোঁপাতে থাকে। পিয়া কাঁথা সরাতেই দেখতে পেল তানিয়া কেঁদেকুটে একাকার। তড়িঘড়ি করে চোখে পানি মুছে দিলো।

‘এভাবে কাঁদছিস কেন?’

তানিয়া ঝাপটে ধরে পিয়াকে। পিয়াও আগলে নিলো সযত্নে।

‘তুহিনটা দুইদিন পর পর এমন কেন করে আমার সাথে?’

হাতের বাঁধন আলগা হয়ে যায় পিয়ার। তানিয়া পুনরায় বলল,

‘ও আমাকে আবার চাপ দিচ্ছে টাকার জন্য। আমি এতো টাকা কোথায় পাবো?’

তানিয়া ছেড়ে দিয়ে আবারও কফির কাপে চুমুক দেয় পিয়া।

‘যেখানে ভালোবাসা সেখানে টাকা আসে না তানিয়া। বুঝতে পারছিস না যে এখন তোর কাছে টাকা চাইতে পারে সে ভবিষ্যতে তোর সাথে কি করবে?’

তানিয়া নিঃশব্দে কাঁদতে থাকে।

‘আমি কি করবো পিয়া? ভালোবাসি আমি। ছেড়ে থাকতে পারবো না। সেজন্যই তো যখন ও মাফ চায় শক্ত খোলসে নিজেকে আবৃত করে রাখতে পারি না।’

ব্যঙ্গ করে হাসে পিয়া।

‘তুই বার বার খাদে কিনারায় গিয়ে দাঁড়াস। তারপর আমাকে বলিস বোন আমাকে বাঁচা। যেই আমি হাত বাড়াই তখনই বলিস খাদের নিচটাও অনেক সুন্দর। দেখ সিদ্ধান্ত তোর। তুই খাদের কিনারা থেকে সরে আসবি নাকি খাদে লাফিয়ে পড়বি সম্পূর্ণ তুই জানিস।’

________________________

শুক্রবার!

আজকের দিনটা একটু অন্যরকম তাহমিনা হকের কাছে। জামাল এহতেশামের মুখ আর মাথার ব্যান্ডেজ খোলা হবে আজ। আজকে অল্প অল্প কথা বলতে পারবেন তিনি। প্রয়োজনে ঝগড়া করুক তারপরও সুস্থ হয়ে উঠুক মানুষটা এই কামনাই করেন তাহমিনা হক।

সকাল নয়টা!

ঘুম থেকে উঠেছেন জামাল এহতেশাম। ঘুম জড়ানো চোখে তাহমিনা হককে এমন খুশি খুশি দেখে বেশ অবাক হলেন তিনি।

‘তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও এহতেশাম। আজ তোমার ব্যান্ডেজ খোলা হবে।’

এতক্ষণে তাহমিনা হকের খুশির কারণ বুঝতে পারেন তিনি।

তাহমিনা হক একটা পাতলা কাপড় ভিজিয়ে জামাল এহতেশামের চোখ পরিষ্কার করে দিলেন। আলতো হাতে গলা আর গালের অন্যপাশ মুছে দিলেন।

সকাল সকাল হাসপাতালে এসে উপস্থিত হয় আফরিন আর তারেক। সাথে ছোট ছোট হাত নাড়তে থাকা মিষ্টি। সকালের নাস্তা এসেছে তারা।

মিষ্টি এসেই লাফিয়ে পড়ে তাহমিনা হকের বুকে। মিশে রইলো নিবিড়ভাবে।

‘নানুভাই?’

তাহমিনা হকের কোমল স্বরে মাথা তুলে তাকায় মিষ্টি। টুপ করে গালে চুমু দিয়ে কিটকিটিয়ে হাসলো সে। জামাল এহতেশামের দিকে নজর যেতেই চোখ বড় বড় করে বলে,

‘না ননন না বেতা?’

তাহমিনা হক মাথা ঝাঁকালেন।

‘হুম নানাভাই ব্যথা পেয়েছেন। নানাভাইকে একটু আদর করে দাও।’

কোল থেকে নেমে গেল সে। নতুন হাঁটতে শিখা পা জোড়ায় ভর করে হেলতে দুলতে বেড ধরে দাঁড়াল। সাদা গজে অর্ধাবৃত মুখটার দিকে পিট পিট করে তাকিয়ে রইলো মিনিট কয়েক। টুকুস করে চুমু খেলো আঘাত পাওয়া হাতে।

‘না নননননা আদুওওওর বেতা বালো।’

আধো আধো বুলিতে বলা কথাগুলো মানে বুঝতে পারেন জামাল এহতেশাম। উনার মনে হলো হাতে যে ক্ষীণ যন্ত্রণা আর অস্বস্তি ছিল তা মুহুর্তে হাওয়া হয়ে গিয়েছে। মাথা উপর থাকা সফেদ ছাঁদের দিকে থম মে/রে তাকিয়ে থাকেন তিনি। নিজের দূর্বলতাকে আড়াল করার জন্য। বিবেকের কাঠগড়ায় তিনি কেবল আসামি হিসেবেই হাজির হচ্ছেন। এমন মিষ্টি মুহুর্তগুলো থেকে এতোদিন দূরে থাকার আজ আফসোস একটু বেশিই হচ্ছে।

_____________________

প্রায় সন্ধ্যা! দিনের আলো নিভু নিভু করছে। দুপুরে খাওয়া শেষ করে জামাল এহতেশাম ঘুমিয়েছেন। এখনো উঠেননি। তবে যেকোনো সময় জেগে যাবেন।

কেবিনের বাইরে এটা ওটা গল্প করছেন তাহমিনা হক আর পিয়া। মাগরিবের আজান কানে আসতেই গোমটা টানে পিয়া। তখনই বেজে ওঠে মোবাইল। রিসিভ করতেই শুনতে পেল তানভীরের গলা।

‘তুমি হাসপাতালে তো?’

‘হুম দুপুরে এসেছি।’

‘আচ্ছা থাকো আমি আসতেছি।’

পিয়া কান থেকে মোবাইল নামিয়ে সময় দেখল। কপালে ভাঁজ পড়ল তার।

‘আপনার অফিস তো আরো পরে ছুটি হওয়ার কথা।’

‘ফ্যাক্টরিতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে সোজা হাসপাতালে আসছি। অফিস যেতে যেতে ছুটি হয়ে যাবে।’

তাহমিনা হক কেবিনে ঢুকে দেখলেন জামাল এহতেশাম ঘুম থেকে উঠেছেন। তিনি ফিরে এসে তড়িত গতিতে বলেন,

‘এই পিয়া তোমার উঠে গেছে। তুমি একা থাকতে পারবে তানভীর আসার আগপর্যন্ত?’

পিয়া তাহমিনা হককে আশস্ত করে।

‘আপনার ছেলে এখনই চলে আসবে মা। রাস্তায় আছে।’

‘যাক বাবা বাঁচলাম। নয়তো একা একা বোর হতে তুমি।’

বলেই তিনি ভেতরে ঢুকে গেলেন। পিয়া কতক্ষণ ফেসবুক স্ক্রল করলো। তারপর কল করলো তার মায়ের নম্বরে। শিরিন আহমেদ সাথে সাথে রিসিভ করলেন।

‘কি করছো মা?’

শিরিন আহমেদ আলতো হাসলেন,

‘নামাজ শেষ করলাম। এখন নাস্তা বানাতে যাবো।’

পিয়া উৎফুল্ল হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘আজ কি বানাচ্ছো?’

‘তেমন কিছু না মুড়িমাখা করবো। আজ অন্যকিছু বানাতে ইচ্ছে করছে না। আচ্ছা বাদ দে এসব কথা। হাসপাতালে আছিস তো?’

‘হুম।’

‘কেমন আছেন তিনি?’

‘আগের থেকে ভালো মা। আজ ব্যান্ডেজ খোলে দিল।’

‘ভালো হলেই ভালো মা।’

তিনি কিছুক্ষন চুপ রইলেন। তারপর করুন স্বরে ডাকলেন,

‘পিয়া?’

মায়ের এমন ডাকে ভেতরটা নাড়া দিয়ে ওঠে পিয়া।

‘হুম।’

‘তুই এখনো তোর শ্বশুরের সামনে যাসনি। তাই না?’

‘যাই তো। তিনি যখন ঘুমিয়ে থাকেন।’

‘ এই যাওয়ায় কি লাভ?’

‘কী লাভ তা জানি বা মা। তবে উনার সামনে না গেলেও আমি যদি এখানে বসেও থাকি আমার শান্তি লাগে। বাসায় বসে থাকলে কেমন একটা আতঙ্ক কাজ করে।’

শিরিন আহমেদ আবারও চুপ হয়ে গেলেন। সেকেন্ড যাওয়ার পর আবারও ডাকলেন করুন স্বরে,

‘পিয়া?’

পিয়া উত্তর করলো, ‘হুম।’

‘তোর জীবনটা আমরা নষ্ট করে দিলাম তাই না রে? আমাদের আরো সময় নিয়ে ভাবার দরকার ছিল।’

পিয়া দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।

‘যা কপালে থাকে তা কোনো সিদ্ধান্তই দূর করতে পারে না মা। আর উনারা কেউ তো খারাপ না। আর না কেউ আমাকে অত্যাচার করে। হয়তো তিনি মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না। কিন্তু মানুষ ভালো। তাও আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উনি আরো একটু স্টেবল হউক। উনার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো। এরপর উনি যা সিদ্ধান্ত নিবে তাই হবে। আমি কারো মানসিক চাপের কারণ হতে চাই না। আর না চাই কারো মৃত্যুর কারন হতে। উনি যদি না চায় আমি এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসবো।’

বলেই কল কে’টে দিলো সে। পিছন ফিরেই দেখতে পেল গোলাম মোস্তফা আর টিনা দাঁড়িয়ে। আঁতকে উঠল সে। সেদিনের কথা মনে পড়তেই আরো সিটিয়ে গেল। যদি এখন দুজন আবারও সীন ক্রিয়েট করে? ব্যাপারটা ভাবতেই তার চোখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে আরো আতংক। হাসপাতালে সীন ক্রিয়েট হউক সে চায় না। একটুও না।

#চলবে

#উষ্ণ_আঁচে_ভালোবাসা (২০)
রূপন্তি রাহমান (ছদ্মনাম)

পিয়া মনপ্রাণে চাইল তাহমিনা হক একটা বার আসুক। এসে তাকে আগলে নিক। কারো রোষের মুখে পড়তে চায় না সে। অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু যেন না ঘটে তাই ধবধবে সাদা মেঝের দিকে তাকিয়ে হাত কচলাতে শুরু করে।

‘কি পরিমান বেহ,,,

টিনা কথা শেষ করতে পারলো না এর আগেই কর্ণগোচর হয় তানভীরে ডাক।

‘পিয়া।’

না চাইতেও সমস্ত ক্ষোভ গিলে নেয় টিনা। সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায় দাঁত কিড়মিড় করতে লাগল। পিয়ার দিকে এমনভাবে তাকাল যেন চোখ দিয়ে ভস্ম করে দিবে।

তানভীরের গলা শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে পিয়া। ফ্যাকাশে মুখে ফুটে ওঠে এক চিলতে হাসি।

তানভীর আসে। পিয়াকে আড়াল করে দাঁড়ায়।

‘কিছু বলবে টিনা?’

টিনা উত্তর না দিলেও গোলাম মোস্তফা মুখ খুলেন,

‘তোমার বাবার সাথে দেখা করতে এসেছিলাম।’

তানভীরের ভ্রু কুঁচকে যায়।

‘তো ভেতরে গিয়ে দেখা করুন। বাবাকে তো আর পিয়া লুকিয়ে রাখেনি।’

ত্যাড়া কথায় রাগ হলেও তা হজম করে নেন গোলাম মোস্তফা।

‘না এমনি জিজ্ঞেস করতাম দেখা করতে পারবো কিনা।’

‘মা কি ভেতরে?’

ঘাড় ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করে তানভীর। পিয়া মাথা নাড়ায়।

তানভীর আবারও জিজ্ঞেস করে,

‘বাবা জেগে?’

পিয়া সায় জানাতেই তানভীর গোলাম মোস্তফাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ভেতরে যেতে পারেন।’

গোলাম মোস্তফা তীক্ষ্ণ চোখে দুজনকেই পা থেকে মাথা অব্দি পরখ করলেন। মেয়ের হাতটা শক্ত করে ধরে ঢুকলেন কেবিনে।

‘ধন্যবাদ আমার ঢাল হয়ে দাঁড়ানোর জন্য।’

তানভীর ঘুরে তাকাতেই চমৎকার হাসল পিয়া।

‘ওরা তোমায় কিছু বলেছে?’ তানভীরের জিজ্ঞাসায় মৃদু তেজ আর চাহনিতে তীক্ষ্ণতা।

পিয়ার স্বর নরম হয়ে এলো।

‘সুযোগ পায়নি। মোক্ষম সময়ে উপস্থিত হয়েছেন।’

‘আমি অনুমতি দিলাম আমার অনুপস্থিতিতে এরা কেউ কিছু বললে সোজা জবাব দিবে। পরে যা হবে আমি বুঝে নিবো।’

পিয়া তপ্ত শ্বাস ফেলে।

‘সে না হয় পরেও জবাব দেওয়া যাবে। হাসপাতালে ঝামেলা হউক আমি চাই না।’

___________________

‘আমি ঘুমিয়ে গেলে কেবিনের বাইরে কি করো তুমি? কে আছে ওখানে?’

চকিত চোখে তাকান তাহমিনা হক। জোর করে হাসার চেষ্টা করলেন তিনি।

‘কোথায় যাবো? এখানেই থাকি।’

‘মিথ্যে বলছো।’ কথাটা বলতে গিয়ে গালে কিঞ্চিৎ ব্যথা অনুভব করেন জামাল এহতেশাম। তবে তাহমিনা হককে বুঝতে দিলেন না।

তাহমিনা হক সেকেন্ড কয়েক ভাবলেন। পিয়া প্রতিদিন আসে। এসে দেখে যায়। কথাগুলো বলবেন। যা হয় হবে। পরক্ষণে মত বদলান তিনি। পিয়ার নাম নিলেই যদি তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন তখন? সত্যি সত্যি যদি পিয়ার অনুমান ঠিক হয়ে যায়?

দরজা খোলার শব্দ শুনে ভাবনাচ্ছেদ হয় তাহমিনা হকের। নার্স ভেবে কিছু বলতে যাবে তার আগেই পাশে এসে দাঁড়ান গোলাম মোস্তফা। তাহমিনা হক আঁতকে উঠলেন। চোখেমুখে দেখা গেলো একরাশ ভয় আর চিন্তা। পিয়ার চিন্তা। টিনাকে দেখার পর উৎকন্ঠা যেন বেড়ে গেল কয়েকগুন। অস্থির চোখে একবার দরজার দিকে তাকাচ্ছেন তো আরেকবার টিনা আর গোলাম মোস্তফার দিকে। হাসফাস করতে করতে আসন ছেড়ে দাঁড়ালেন। গোলাম মোস্তফা বসলেন সেখানে।

‘এখন কেমন আছেন এহতেশাম সাহেব?’

জামাল এহতেশাম আস্তে করে বলেন,

‘ভালো।’

টিনার চোখে চোখ পড়তে সেও একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে। তিনি এবারেও বললেন, ‘ভালো।’

গোলাম মোস্তফা আগ বাড়িয়ে বললেন,

‘আর বলবেন না এহতেশাম সাহেব মেয়ে আমার যখনই শুনেছে আপনার কাছে আসবো তখনই জেদ ধরে বসে আছে সেও আসবে। আপনাকে একটা নজর দেখবে।’

জামাল এহতেশাম মৃদু হাসলেন।

‘আমি চট্টগ্রামের ডিলটার ব্যাপারে কথা বলতে আসছিলাম।’

তাহমিনা হক অগোচরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। এই সুযোগটার অপেক্ষায় যেন ছিলেন তিনি।

‘আপনাদের ব্যবসায়ীক কথাবার্তায় আমি না থাকাই মনে হয় ভালো।’

বলেই দ্রুতই তিনি বেড়িয়ে গেলেন কেবিন থেকে। তাহমিনা হকের এমন উৎকন্ঠা, অস্থিরতা কোনোকিছুই নজর এড়ায় না জামাল এহতেশামের। কিন্তু দুজনকে দেখা মাত্রই তাহমিনা হকের এমন আতঙ্কিত হওয়ার সমীকরণ তিনি মিলাতে পারেন না। দুইয়ে দুইয়ে চার মিলাতে যাবেন তখনই কর্ণগোচর হয় গোলাম মোস্তফা কথা।

‘আমরা চট্টগ্রামের ডিলটা পাইনি এহতেশাম সাহেব।’

জামাল এহতেশাম চমকে উঠেন। চকিত চোখে তাকান তিনি গোলাম মোস্তফার দিকে। বিগ বাজেটের এই ডিলটার জন্য ছয়টা মাস ধরে ছুটোছুটি করছেন। কোম্পানির এই ক্রান্তিলগ্নে এই ডিলটা ছিল সোনার ডিমপাড়া হাঁসের মতো। সবকিছু গুছিয়ে আনার পর শেষমুহুর্তে সব ভেস্তে যাবে বিশ্বাসই হচ্ছে না উনার। গোলাম মোস্তফা পুনরায় বলেন,

‘আমাদের প্রডাক্ট তাদের পছন্দ হয়নি। তারা আরো হাই কোয়ালিটি সম্পন্ন প্রডাক্ট চাচ্ছেন।’

জামাল এহতেশাম কিছুই বললেন না। গোলাম মোস্তফার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলেন কেবল।

___________________

হন্তদন্ত হয়ে কেবিন বেরিয়ে এলেন তাহমিনা হক। তানভীর কে দেখে অস্থিরতা কিঞ্চিৎ কমলেও ভয় কমলো না একবিন্দুও।

‘পিয়া ওরা কেউ কিছু তোমায় বলেছে?’

‘সুযোগ পায়নি মা।’

তাহমিনা হক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। বুক তখনও তার ধড়ফড় ধড়ফড় করছিল।

‘আমি ভয় পাচ্ছিলাম তোমায় আবার একলা পেয়ে কিছু বলল কিনা।’

‘আমি আছি তো মা।’ পাশ থেকে বলে ওঠে তানভীর।

নিজেদের মধ্যে টুকটাক কথা বলছিল তিনজন । মিনিট পনেরো বাদেই কেবিন থেকে বের হয়ে এলো গোলাম মোস্তফা আর টিনা। দু’জন দেখামাত্রই চুপ হয়ে যায় সবাই।

সেকেন্ড কয়েক দাঁড়িয়ে সবাইকে দেখে নেন গোলাম মোস্তফা। খর চাহনি ভদ্রলোকের। আবারও মেয়ের হাতটা ধরেন তিনি। করিডোর ধরে পা বাড়ালেন বাইরে বের উদ্দেশ্যে। মাঝপথে গিয়ে থেমে যায় টিনা। ঘাড় ঘুরিয়ে রোষ্ট চোখে তাকাল পিয়ার দিকে। হাসতে থাকা পিয়া যেন তার প্রতিশোধ স্পৃহা বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ। ফনা তোলা সাপের মতো ফুঁসতে লাগল। তানভীরের চোখে চোখ পড়তেই ঘাড় ফিরিয়ে নিলো মুহূর্তেই।

‘তুমি এদেরকে এভাবেই ছেড়ে দিবে?’

ক্রূর হাসেন গোলাম মোস্তফা।

‘ছেড়ে দিয়েছি বুঝি?’

‘মেয়েটাকে আমার সহ্য হয় না বাপি। একটুও না।’

‘জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ মাই চাইল্ড। রাস্তায় এনে নামাবো সবাইকে। মেয়েটার সাথে যা করবো না কল্পনাও করতে পারবে না। তবে,,,

তবে বলেই থামেন গোলাম মোস্তফা। টিনা চেয়ে থাকে।

‘তবে?’

‘আরো অনেক কাজ বাকি মা। এতোদিন অপমান যে হজম করলাম তার বদলা নিতে হবে না?’

___________________

শীত পেরিয়ে বসন্ত এসেছে সেই কবেই। গাছের পাতা ঝরে গজিয়েছে নতুন পাতা। সেগুলোও এখন পরিপক্ব। নতুন পাতার স্নিগ্ধ বাতাসে বসন্তের আগমনী বার্তা ছড়িয়ে পড়লেও সেই রঙে নিজেকে রাঙাতে পারেনি কেবল তানভীর রা। শীতের শেষ থেকে বসন্তের শুরু টা কে’টেছে কেবল দুশ্চিন্তায়।

জামাল এহতেশাম হাসপাতাল থেকে বাড়িতে এসেছে অনেকদিন। তিনি প্রায় সুস্থ হলেও স্ক্রেচে ভর দিয়ে চলতে হয়। বেশি হাঁটা চলা করাও বারণ।

রান্নার সুঘ্রাণে ম-ম করছে এহতেশাম বাড়ি। চলছে এলাহি আয়োজন। টেবিলে জায়গা করে নিচ্ছে একের পর এক মুখরোচক আইটেম। কিন্তু কার জন্য চলছে এতো আয়োজন কিছুই বলছেন না জামাল এহতেশাম। যতবারই জিজ্ঞেস করা হয়েছে ততবারই তিনি উত্তর দিয়েছেন স্পেশাল মেহমান আসবে।

স্ক্রেচে ভর দিয়ে ধীর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে রান্নাঘরের কাছে এসে দাঁড়ালেন জামাল এহতেশাম।

‘কতদূর হলো মিনা?’

তাহমিনা হক আঁচল দিয়ে কপালের জমায়েত ঘাম মুছে নিলেন।

‘এইতো চিংড়ির মালাইকারি আর পায়েসটা হয়ে গেলেই রান্না শেষ। আর খাওয়ার আধঘন্টা আগে বিফ কাবাব গুলো ভাঁজবো।’

‘আমার মেহমান কিন্তু এলো বলে।’

‘আসুক সমস্যা নেই।’

বলেই আবারে পায়েসে মনোযোগ দেন তাহমিনা হক। নয়তো দুধ উতলে পায়েসের দফারফা হয়ে যাবে। মালাইকারির লবণ চেখে দেখছে আফরিন।

‘মিষ্টি কোথায় আফরিন?’

আফরিন চুলো বন্ধ করল। কড়াইটা চুলো থেকে নামিয়ে জবাব দিল,

‘আফরিন ভাইয়ার কাছে।’

‘তারেক কি আসবে না?’

‘বলল তো আজ নাকি আর্জেন্ট কাজ আছে। কোথায় নাকি আসামি ধরতে যাবে।’

কথা বাড়ালেন না জামাল এহতেশাম। সরে এলেন রান্নাঘরের সামনে থেকে।

_______________

‘আসবো?’

তানভীরের কাঁধে উঠতে পেরে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছিল মিষ্টি। জামাল এহতেশামের আওয়াজ পেয়ে তানভীর জবাব দেয়,

‘এসো বাবা।’

তিনি রুমে ঢুকলেন। ভনিতা না করে বলেন,

‘মিষ্টিকে দাও আমার কাছে। আর তুমি গিয়ে গোসল করে পরিপাটি হয়ে নাও।’

জামাল এহতেশাম কে দেখে কাঁধ থেকে নামার জন্য উতলা হয়ে গেলো মিষ্টি। ছটফটানি দেখে কাঁধ থেকে মিষ্টি কে নামায় তানভীর।

‘আমি গোসল করে নিয়েছি বাবা।’

গোসলের প্রসঙ্গ এখানেই ভাটা পড়ে। জামাল এহতেশাম পুনরায় বলে,

‘যাইহোক মিষ্টির সাথে আমার কাজ আছে ওকে আমার কাছে দাও।’

কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল তানভীরের।

‘ ওর সাথে আবার তোমার কি কাজ থাকতে পারে?’

কিঞ্চিৎ রেগে গেলেন জামাল এহতেশাম।

‘সেই কৈফিয়ত নিশ্চয়ই আমি তোমাকে দিতে বাধ্য নই।’

তানভীর চুপ হয়ে যায়। মিষ্টি কে হাতের ইশারায় ডাকতেই এলোমেলো পায়ে হেঁটে গিয়ে ধরল জামাল এহতেশামের আঙুল। তিনি শব্দহীন চমৎকার হাসলেন। তানভীর কে উদ্দেশ্য করে ফের বললেন

‘আজকের দিনটা কিন্তু তুমি আমায় দিয়েছো। বাড়ি থেকে কিন্তু এক পাও বাইরে দিতে পারবে না।’

_______________

বসুন্ধরা থেকে আনা জামা টা বেশ যত্ন করে মিষ্টি কে পড়িয়ে দিলেন জামাল এহতেশাম। নতুন জামা দেখে উৎফুল্ল মিষ্টি। চোখ বড় বড় করে আধো আধো বুলিতে জিজ্ঞেস করে,

‘থুন্দর দামা?’

মিষ্টির কথায় হেসে লুটোপুটি খান জামাল এহতেশাম।

হাতে পড়িয়ে দিলেন একজোড়া সোনার চুড়ি আর পায়ে রূপার নূপুর। পা নাড়াতেই ঝুম ঝুম শব্দে মুখরিত হয় কক্ষ। বেশ মজা পায় মিষ্টি। আবারও পা নাড়ায় সে।

‘এতা তি নান? ‘

‘নূপুর নানা ভাই।’

‘নূ’ এতটুকু বলার পর আর উচ্চারণ করতে পারে না মিষ্টি। জামাল এহতেশাম হেসে শাহাদাৎ আঙুল এগিয়ে দিলেন। মিষ্টি ধরল সেই আঙুল।

‘তোমার বাপ মা যে নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছে। আমাকে একটুও জানায়নি৷ তুমিও তাই করবে নানা ভাই। নানা ভাই যাকে পছন্দ করে দিবো ঠিক তার সাথে প্রেম করবে তুমি। ঠিক আছে?’

কোনোকিছু না বুঝলেও জামাল এহতেশাম কে মাথা নাড়াতে দেখে মিষ্টি নিজেও মাথা নাড়ে।

‘গুড গার্ল।’

_________________

সবকটা তরকারি থেকে একটু একটু করে তরকারি বক্সে উঠিয়ে রাখছেন তাহমিনা হক।

‘এসব কার জন্য মা?’ প্রশ্ন করে আফরিন।

‘পিয়ার জন্য। তানভীর কে পাঠাবো এগুলো দিয়ে। ক্লাস শেষ করে কি খায় না খায় কে জানে।’ বলেই হাঁক ছেড়ে ডাকেন তানভীর কে।

সাথে সাথেই ডাইনিং এ এসে উপস্থিত হয় তানভীর।

‘কিছু বলবে মা?’

‘পিয়াটাকে একটু কল করে দেখ না কোথায়। বাসায় থাকলে এগুলো নিয়ে যা।’

‘কিন্তু বাবা যে আমাকে কোথাও যেতে নিষেধ করল।’

ভ্রু কুঁচকান তিনি।

‘তোর বাবার সাথে আমি বুঝে নিবো।’

‘ঠিক আছে’ বলে তানভীর রুমে গেল। মোবাইল চার্জে বসানো। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখল দশটা নাগাদ একটা মেসেজ দিয়ে রেখেছে পিয়া।

‘আপনি আমাকে আর কল দিবেন না। না মানে না।আজকে আমি আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক না।’

তানভীর চিন্তায় পড়ে যায়। রাতে তো ঝগড়া হয়নি। বা মনোমালিন্যও হয়নি। তবে? তানভীর তবুও কল দিলো। সুইচ অফ শোনাচ্ছে। আবারও পিয়ার নাম্বারে ডায়াল করে আসে ডাইনিং রুমে।

‘পিয়ার নাম্বার বন্ধ মা। আজ কোনো পরীক্ষা আছে নাকি কে জানে। আবার মেসেজ দিয়ে রেখেছে যেন কল না দেই।’

সবগুলো বক্স একসাথে করেন তাহমিনা হক।

‘তাহলে এগুলো আমি ফ্রিজে রাখছি। পিয়া ফোন করলে বলিস। আমি কথা বলবো ওর সাথে।’

তখনই কানে আসে নূপুরের রুমঝুম শব্দ। সবাই তাকাল। এলোমেলো পায়ে হেঁটে এদিকে আসছে মিষ্টি।

চক্ষু চড়াক গাছ সকলের। যেন অষ্টম আশ্চর্য কিছু দেখছে। মিষ্টি জামাল এহতেশামের আঙুল ছেড়ে হুটোপুটি করে এসে ধপ করে বসে পড়ে তাহমিনা হকের পায়ের কাছে। দুই পা নাড়ায়। ঝুম ঝুম শব্দ হয়। আর খিলখিলিয়ে হাসে সে।

আফরিন কোলে তোলে নেয় মিষ্টিকে। মিষ্টি দুই হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চুড়ি জোড়া দেখায় আফরিন কে।

‘এসব ওকে কেন দিয়েছো বাবা?’

জামাল এহতেশাম বিরক্ত হলেন। ভ্রু কুঁচকে গেল উনার।

‘মেয়ের মা বলে তোমাকে জিজ্ঞেস করে দেওয়ার দরকার ছিল বুঝি?’

থতমত খেয়ে গেলো আফরিন। এতোকিছু ভেবে তো সে কথাটা বলেনি।

__________________

মনে চাপা ক্ষোভ আর অভিমান নিয়ে মেহমান আপ্যায়নে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন তাহমিনা হক। অন্যমনস্ক হয়ে শরবতের গ্লাসে চামচ নাড়ছেন তিনি। অতর্কিত কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠেন। আফরিন কে দেখে আবারও মনোযোগ দিয়ে শরবত নাড়তে থাকেন।

‘তোমার কি মন খারাপ মা?’

মলিন হাসেন তাহমিনা হক। হেসেই মাথা নাড়লেন।

‘মন খারাপ হলেই তুমি এমন চুপ থাকো। তোমার চোখে সবকিছু স্পষ্ট মা।’

তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।

‘ওই লোকটা আর উনার মেয়েকে দাওয়াত দিয়েছে বললে কি আমি আপ্যায়নে কোনো ত্রুটি রাখতাম? নাকি রান্নাবান্নাই করতাম না? এতোটা অবিশ্বাস করে তোর বাবা আমাকে?’

ট্রে হাতে তাহমিনা হক চলে গেলেন ড্রয়িং রুমে। আফরিনের কাছে রেখে গেলেন কতগুলো প্রশ্ন। যার উত্তর আফরিনের কাছে নেই।

টি-টেবিলের ওপর তাহমিনা হক নাস্তার ট্রে রাখলেন। লেবুর শরবত কয়েক পদের হালকা নাস্তা। গোলাম মোস্তফা শরবতের গ্লাসটা হাতে নিলেন।

‘জার্নি করে এসেছি এখন এটারই প্রয়োজন ছিলো।’

বলে মুহুর্তেই খালি করে ফেলেন শরবতের গ্লাসটা।

‘এগুলো নিয়ে যান ভাবি। রান্নার সুঘ্রাণে আমার পেট খিদায় চইচই করছে। নাস্তা করলে আর খেতে পারবো না।’

তাহমিনা হক ফিচেল হাসেন। আরেকটা গ্লাস এগিয়ে দেন টিনার দিকে। এতোক্ষণ খেয়াল না করলেও এখন খেয়াল করে দেখলেন মেয়েটা লাল রঙের একটা জামদানি শাড়ি পরেছে। শাড়িটা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সে। তবুও লাজুক চোখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। এই চাহনি কাকে খুঁজছে তাহমিনা হক ভালো করেই জানেন। তবুও কিছু বললেন না।

‘শরবত খেয়ে নাও ভালো লাগবে।’

টিনা চমকে উঠে। গ্লাসটা তাড়াতাড়ি হাতে নিলো।

‘আমায় কেমন লাগছে আন্টি?’

না চাইতেও ঠোঁট জোড়া মৃদু প্রসারিত করেন তিনি।

‘ভালো।’

_________________

জামাল এহতেশাম গোলাম মোস্তফার সাথে টুকটাক কথা বলছেন আর অস্থির চোখে বার বার মোবাইল দেখছেন।

দুপুর তখন দুইটা। তানভীর রুম থেকে বেরিয়ে আসে। সৌজন্যতা রক্ষার্থে গোলাম মোস্তফার সাথে কুশল বিনিময় শেষ করে বসলো সোফায়। জামাল এহতেশাম বলেন,

‘তানভীর মোস্তফা সাহেবের সাথে কথা বল। আমি একটু আসছি।’

বলেই স্ক্রেচে ভর করে চলে গেলেন ভেতরে। দরজা হালকা ভেজিয়ে কাকে যেন বার বার কল করছেন।কিন্তু বার বার ব্যর্থ হচ্ছেন। ব্যর্থ হয়ে বসে পড়লেন খাটে।

টেবিলে সাজানো শেষ। খাওয়ার জন্য ডাকছেন তাহমিনা হক।

‘আপনারা খাওয়ার জন্য আসুন।’

ড্রয়িং রুমে চোখ ঘুরিয়ে দেখলেন কোথাও জামাল এহতেশাম নেই। পুনরায় তানভীর কে উদ্দেশ্য জিজ্ঞেস করে,

‘তোর বাবা কোথায়?’

‘ভেতরে।’

‘তুই উনাদের নিয়ে টেবিলে বস আমি তোর বাবাকে ডেকে আনছি।’

তানভীর মাথা ঝাঁকায়।

গোলাম মোস্তফা একটু সামনে যেতেই টিনা ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে,

‘আমায় কেমন লাগছে তানভীর?’

তানভীর জবাব দেয় না। সোজা এগিয়ে গেলো ডাইনিং এর দিকে। টিনার সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে তার নেই। উত্তর না পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ে টিনা। মনে মনে আওড়ায়,

‘কতদিন মুখ ফিরিয়ে রাখবে তানভীর? হয়তো আজই তোমার বাবা আমাদের বিয়ে নিয়ে কিছু বলবে। আর আজই যদি বলে দেয় তবে ওই মেয়েকে কিভাবে তোমার জীবন থেকে সরাতে হয় আমার জানা আছে।’

_______________

‘আমার কিছুই ভালো লাগছে না। তুমি ব্যাপারটা তাড়াতাড়ি দেখো। আরে বাবা হ্যা হ্যা। এই নিয়ে একশোবার কল করেছি। কোনো হদিস নেই।’

দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে সব শুনেন তাহমিনা হক। চিন্তায় ডুবে গেলেন তিনি।

দরজার দিকে নজর যেতেই তাড়াতাড়ি করে কল কে’টে দিলেন জামাল এহতেশাম।

‘কে, কে ওখানে?’

তাহমিনা হক সম্মুখে আসেন। তিনি ভনিতা করলেন না। কঠিন গলায় জিজ্ঞেস করলেন,

‘কার সাথে কথা বলছিলে তুমি?’

জামাল এহতেশাম কাচুমাচু স্বরে জবাব দেন,

‘কা,,কারো সাথে না। টেবিল সাজিয়েছো?’

কপাল কুঁচকে আসে তাহমিনা হকের।

‘কিছু লুকাচ্ছো?’

‘আমি কিছুই লুকাচ্ছি না।’

কথা বাড়ান না তাহমিনা হক। আস্তে করে বলেন,

‘তোমার স্পেশাল মেহমানরা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে খাবে চলো।’

জামাল এহতেশাম এলেন। এসে বসলেন টেবিলে। টিনা বেছে বেছে তানভীরের পাশেই বসল। তানভীর উঠে যেতে চাইলে চোখের ইশারায় বাধ সাধেন তাহমিনা হক। তানভীর উঠল না। কঠিন হয়ে বসে রইলো।

‘মিষ্টি কোথায় আফরিন?’

‘একটু খেয়ে ঘুমিয়েছে।’

তিনি ‘ওহ্’ বলে মুরগির রেজালা গোলাম মোস্তফার পাতে তুলে দিলেন।

আয়েশ করে খাচ্ছেন তিনি।

‘ভাবির হাতের রান্না ফার্স্ট ক্লাস। এবার থেকে মাঝেমধ্যে আসবো খাওয়ার জন্য।’

চিংড়ি আর মাংসের বাটি এগিয়ে দেন তাহমিনা হক।

‘সমস্যা নেই। চলে আসবেন।’

‘আপনিও বসুন ভাবি। আফরিন তুমিও বসো। একসাথে খাই। কতদিন হলো এভাবে হৈ-হুল্লোড় করে খাওয়া হয় না। টিনার মা মা-রা যাওয়ার পর তো,,,,,,,,

গোলাম মোস্তফার স্বর কিছুটা নরম হয়ে এলো।

‘বাপি।’

টিনা ডাকতেই তিনি তড়িঘড়ি করে বলেন,

‘এইতো খাচ্ছি।’

এইদিকে কি হচ্ছে না হচ্ছে মন নেই জামাল এহতেশামের অন্য মনস্ক হয়ে ভাত নেড়ে যাচ্ছেন।

‘তুমি খাচ্ছো না কেন?’

তাহমিনা হকের কথায় চমকালেন জামাল এহতেশাম।

‘হ্যা, খাচ্ছি তো।’ বলেই এক লোকমা ভাত মুখে নেন তিনি।

তাহমিনা হক একে একে সবার পাতে সর্ষে ইলিশ দিলেন।

‘আমি কাঁটা বেছে খেতে পারি না। তানভীর তুমি কি ইলিশের কাঁটাগুলো বেছে দিবে?’ ন্যাকামো করে বলে টিনা

মনে মনে ভীষণ চটে যায় তানভীর। মুখে প্রকাশ করলো না। চাপা স্বরে বলল,

‘আমিও পারি না কাঁটা বাছতে। তাই কাঁটাসহ মাছটাই চিবিয়ে খেয়ে ফেলি।’

‘আন্টি তাহলে মাছটা নিয়ে যান।’

তাহমিনা হক বলেন, ‘আমি বেছে দেই?’

টিনা তড়িঘড়ি করে বলে, ‘না না লাগবে না আন্টি। বিফ কাবাব দিন। ওটা বেশি মজা হয়েছে।’

তাহমিনা হক আর কিছু বললেন না। কাবাবের প্লেটটা এগিয়ে দিলেন।

খাওয়া শেষ না করে উঠে দাঁড়ান জামাল এহতেশাম। তাহমিনা হকের সন্দেহ হয়। তিনি সন্দিহান গলায় প্রশ্ন করেন,

‘উঠে যাচ্ছ যে?’

‘খাবো না আর।’

‘কেন কি হয়েছে?’

‘কিছু না।’ বলে হাত ধুয়ে উঠে পড়েন।

জামাল এহতেশামের চালচলন বেশ সন্দেহজনক মনে হলো তাহমিনা হকের কাছে। উনার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে কিছু একটা ভাবতে লাগলেন তিনি।

‘ভাবি আমাদের তো খাওয়া শেষ হয়ে যাচ্ছে। আপনারাও বসুন না।’

গোলাম মোস্তফার কথায় ভাবনাচ্ছেদ হয় তাহমিনা হকের।

‘আমরা পরে খাবো ভাই।’

_______________

খাওয়া দাওয়া পর্ব শেষ হয়েছে মিনিট দশেক হয়। তাহমিনা হক দই নিয়ে এলেন। ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন জামাল এহতেশামও। চোখেমুখে পানির ছিটা। বড্ড ক্লান্ত দেখাচ্ছে ভদ্রলোক কে।

‘তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?’

মাথা নাড়ান তিনি।

‘তেমন কিছু না।’

‘না খেয়ে উঠে গেলে যে।’

‘পেটে মোচড় দিয়েছিল।’

‘একটু মাংস আর ভাত দিবো? খাবে?’

‘খিদে নেই।’

‘আমাদের কিছুক্ষণের মধ্যে উঠতে হবে এহতেশাম সাহেব। আমার একটু দরকারী কাজ আছে।’

জামাল এহতেশাম জবাব দেন, ‘দই টা খেয়ে আগে রেস্ট নিবেন। সন্ধ্যার নাস্তা সেরে তারপর না হয় যাবেন।’

‘তা বললে না। আর্জেন্ট ভীষন।’

টিনা আবদারের স্বরে বলে,

‘আঙ্কেল আমার সারপ্রাইজ?’

জামাল এহতেশাম মুখে দুঃখী দুঃখী ভাব করে বলেন,

‘ স্পেশাল গিফট এখনো এসে পৌঁছায়নি।’

‘আর কতক্ষণ লাগবে? আমার তর সইছে না।’

‘সবুরে মেওয়া ফলে।’

‘এক্সপেন্সিভ কিছু আঙ্কেল?’

চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করে টিনা। জামাল এহতেশাম দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে বলেন,

‘মহামূল্যবান।’

বলেই হাসিতে ফেটে পড়েন টিনা, জামাল এহতেশাম আর গোলাম মোস্তফা।

সরু চোখে কেবল তাকিয়ে রইলেন তাহমিনা হক। আফরিন মায়ের আঁচল ধরে। ফিসফিস করে বলে,

‘বাবা কি করতে চাইছে মা?’

তিনি বিড়বিড় করেন, ‘জানি না। কিচ্ছু জানি না আমি।’

________________

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়। মাগরিবের আজান দিয়েছে অনেক্ক্ষণ। বেলার নামার সাথে সাথে চলে যান গোলাম মোস্তফা। তবে সারপ্রাইজ আর দেওয়া হয়নি টিনাকে। কারন গিফট এসে এখনো পৌঁছায়নি। কি গিফট দিবে বার বার জিজ্ঞেস করেছে তাহমিনা হক। কিন্তু একটা শব্দও বলেননি তিনি। শুধু এইটুকুই বলেছেন,

‘আমায় একা থাকতে দাও মিনা। সময় হলে সব জানতে পারবে।’ ভদ্রলোকের চোখেমুখে ছিল ছটফটানি।

তিনি চাপা অভিমান নিয়ে ড্রয়িং রুমে এসে বসে পড়লেন। আফরিনও মিষ্টি কে নিয়ে বসে আছে। ভয়ে মায়ের সাথে সে কথাও বলছে না।

নিজের রুমে এ-ই কোণা থেকে ওই কোণায় অস্থির হয়ে পায়চারি করছে তানভীর। আর বার বার পিয়াকে কল করছে। বিকেল থেকে না হলেও শতাধিক কল সে পিয়ার নাম্বারে করেছে। বার বার একটা কথাই বলছে নট রিচেবেল। হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে তানভীরের। কপালে জমে বিন্দু বিন্দু ঘাম। বিপদের আশঙ্কা হয়। অস্থির হয়ে উঠল সে। তখনকার ওই মেসেজ এরপর মোবাইল বন্ধ। মেয়েটা কি রাগ করে আছে? কতশত ভাবনা তার মাথায় আসে। কিন্তু মন শান্ত হয় না। পরীক্ষা থাকলেও বিকেল নাগাদ চলে আসার কথা। এসে একটা কল দেওয়ার কথা। তানভীর প্রস্তুতি নেয় ভার্সিটির দিকে যাবে। এরপর পিয়া যেখানে থাকে সেখানে যাবে। একটা টি-শার্ট গায়ে জড়িয়ে নিলো সে। রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িং রুমে আসতেই পিয়ার নাম্বার থেকে কল এলো। ঠোঁটে হাসি ফোটে তার।তখনই হন্তদন্ত হয়ে সদরদরজা দিয়ে প্রবেশ করে তারেক। অস্থির গলায় প্রশ্ন করে,

‘মা, বাবা কোথায়?’

তাহমিনা হক জবাব দিলেন না। জবাব না পেয়ে আফরিন কে জিজ্ঞেস করে,

‘আফরিন বাবা কোথায়?’

আফরিন রুমের দিকে আঙুলের ইশারা করে। তারেক গেলো রুমে। আর ঠাস করে দরজা বন্ধ করলো।

বিকট শব্দে কেঁপে উঠল সবাই।

‘তারেক আর বাবার মাঝে গলায় গলায় ভাব কবে থেকে?’ প্রশ্নটা করেই কল রিসিভ করে তানভীর।

আবারও খটকা লাগে তাহমিনা হকের। বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে উনার। জামাল এহতেশামের ভাবমূর্তি সুবিধার ঠেকছে না। তিনি অনুমান করলেন বিপদ আসতে চলেছে। বড় এক বিপদ।

‘সারাদিন মোবাইল অফ কেন ছিল ম্যাম? আমাকে টেনশন দিতে ভালো লাগে?’

ওপাশ থেকে অদ্ভুত একটা আওয়াজ এলো।

‘পিয়া?’

একটা মোটা স্বর বলে,

‘পিয়া আমাদের কবজায়।’

তানভীর কান থেকে মোবাইল নামায়। ভালো করে দেখল পিয়ার নাম্বার কিনা। সেভ নাম্বার তো ভুল হওয়ার কথা না।’

‘হ্যাকার? লাভ নেই। আমি এসব বিশ্বাস করি না। আজকাল মোবাইল হ্যাক করে ভয় দেখানো হয়।’

লোকটা হাসল। বিকট শব্দ করে। তারপর নিস্তব্ধতা। এরপরই কানে এসে বিঁধে কোনোকিছু কে আঘাত করার শব্দ। একটা মেয়েলী গলা মাগো করে আর্তনাদ করে ওঠে। কন্ঠটা চিনতে ভুল হয় না তানভীরের।

‘পিয়া? এই পিয়া? কে আঘাত করেছে তোমাকে?’

তানভীর কে উত্তেজিত হতে দেখে ছুটে আসেন তাহমিনা হক আর আফরিন। তিনি ব্যতিব্যস্ত গলায় জিজ্ঞেস করেন,

‘পিয়ার কি হয়েছে?’

সেদিকে খেয়াল নেই তানভীরের। সে কেবল পিয়া পিয়া করেই যাচ্ছে।

ওপাশ থেকে আবার শোনা গেল পুরুষের কন্ঠ,

‘৪৮ ঘন্টা সময়। এই ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ত্রিশ লক্ষ টাকা না দিলে পিয়া চলে যাবে ওপারে।’

#চলবে