উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন পর্ব-১৪+১৫

0
5

#উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন
#পর্ব১৪
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

বিকেলের রোদের লালচে আভা মিলিয়ে যাচ্ছে অস্তাচলে। নদীর তীরে পরিবেশটা মনমুগ্ধ কর। চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির ওপার সৌন্দর্যে। বন্ধুরা মিলে অনেক দিন কোথাও ঘোরাঘুরি হয় না। পড়তে পড়তে নিজেদের কেমন রোবট রোবট ফিল হচ্ছিলো। তাই সবাই মিলে প্ল্যান করে এই গোধূলি লগ্নে প্রকৃতি বিলাস করতে চলে এলাম। সবাই যার যার মতো করে হাটছে। আমি আর ইভা একসাথে হাটছি আর গল্প করছি। এমন সময় কেউ খপ করে হাতটা ধরে নিল। তাকিয়ে দেখলাম মেডিকেলের সিনিয়র ভাই। ছেলেটা কয়েক দিন ধরে বড্ড জ্বালাচ্ছে। যেখানে যাই হেংলার মতো তাকিয়ে থাকে।
“কি বেপার ললনা কোথায় যাওয়া হচ্ছে? মেডিকেলে তো তোমার পাত্তাই পাওয়া যায় না”

“হাত ছাড়ুন”

“একটু আলাপচারিতা হোক তারপর নাহয় হাত ছেড়ে দিবো”

মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে থা*প্পরে বেটার গাল লাল করে দেই। আশেপাশে মানুষের সমাহার তাই নিজেকে সামলে নিলাম। তার ওপর সিনিয়র বলে কথা পড়ে যদি মেডিকেলে ঝামেলা করে । পুনরায় ভদ্র ভাবে বললাম,
“হাতটা ছাড়ুন। নাহয় ভালো হবে না বলে দিলাম”

“কি খারাপ করবে দেখি?”

পাশ থেকে ইভা বলল,
“মানুষ জড়ো করে কেলানি খাওয়াবো বেশি করলে। ওর হাত ছাড়ুন”

তবে তার হাত ছাড়ার লক্ষণ নেই। হাত মুচড়ামুচড়ি করছি কিন্তু ছাড়াতে পারছি না। মাথায় একটা বুদ্ধি এলো পা দিয়ে তার পায়ে পারা দিতে যাবো তার আগে কেউ একজন ছেলেটার বুক বরাবর লাত্থি দিলো। ছেলেটা ছিটকে যেয়ে কিছুটা দূরে পড়লো। আমি আর ইভা ভয় পেয়ে গেলাম। লাত্থি দেওয়া মানুষটাকে দেখতে পিছনে ফিরতেই ঝটকা লাগলো। এতক্ষন রেগে থাকলেও এই মুহূর্তে ভয় লাগছে। আদ্র ভাই দাঁড়িয়ে আছে। রাগে তার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। আদ্র ভাই ছেলেটাকে উঠিয়ে ইচ্ছে মতো মারছে আর বলছে,
“তোর সাহস কিভাবে হলো ওর হাত ধরার? তোর এই হাত আমি হাতের জায়গায় রাখবো না ভেঙ্গে গুঁড়ো গুঁড়ো করে ফেলবো”

আদ্র ভাই ছেলেটার হাত মুচড়ে ধরলেন। হাস্যজ্জল আদ্র ভাইকে এই মুহূর্তে ভয়ানক লাগছে। ছেলেটা চিৎকার দিয়ে উঠলো। আশেপাশে এতক্ষনে মানুষ জড়ো হয়ে গিয়েছে। আমার সকল ফ্রেন্ডরা এসে জিজ্ঞেস করছে,
“কি হয়েছে রে? আর এই ছেলেটাই বা কে?”

একজন বলে উঠলো,
“যেই হোক দেখতে কিন্তু একদম হিরোর মতো”

আমি আছি টেনশনে আর এই মুহূর্তেও এদের ছেলে নিয়ে না ভাবলেই নয়। ছেলেটার অবস্থায় শোচনীয়। আর কিছুক্ষন মারলেই ছেলেটার খারাপ কিছু হয় যেতে পারে। আদ্র ভাইকে আটকাতে হবে। কিন্তু তার কাছে যেতেই যে ভয় করছে। তাও কোনো রকম সাহস সঞ্চয় করে আদ্র ভাইয়ের কাছে গিয়ে তার হাত ধরে থামিয়ে দিয়ে বললাম,
“আদ্র ভাই ছেড়ে দাও নাহয় ছেলেটার হাত ভেঙ্গে যাবে”

“যেই হাত তোকে ছোয়ার সাহস দেখাবে সেই হাত আমি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেব”

অনেক কষ্টে আদ্র ভাইকে টেনে সেখানে থেকে নিয়ে এলাম। একটু দূরেই আদ্র ভাইয়ের গাড়ি পার্ক করা। তাকে গাড়ির কাছে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে পানি এনে দিলাম। আদ্র ভাই ঢকঢক করে সব পানি খেয়ে নিল। বিরবির করে বলে উঠলো,
“ওই হা*রামির সাহস হয় কিভাবে আমার রৌদ্রময়ীর হাত ধরার?”

আদ্র ভাই বড় বড় শ্বাস ফেলে নিজেকে সামলে নিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“গাড়িতে উঠ”

ইভা সুরসুর করে গাড়িতে উঠে বসলো। আমি দাঁড়িয়ে আছে তার পাশে। ধমকে বলে উঠলো,
“গাড়িতে উঠতে বলছি কথা কানে যায় না?”

আদ্র ভাইয়ের ধমকে কেঁপে উঠলাম। রাগ যেন তার নাকের ডগায় উঠে এসেছে। এখন আর রাগানো ঠিক হবে না। চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসলাম। গাড়িতে পিন পতন নীরবতা। বাড়ির সামনে গাড়ি থামালে ইভা আগে ভাগে নেমে গেল। বাঘের গুহায় রেখে গেল আমাকে। নেমে বাড়িতে ঢুকবো এমন সময় আদ্র ভাইয়ের কণ্ঠ,
“এরপর ঘুরতে যেতে ইচ্ছে হলে আমাকে বা শুভ ভাইকে যেন বলা হয়। একা একা বাড়ি থেকে বের হলে পা ভেঙ্গে ঘরে বসিয়ে রাখবো”

আমার কি হলো জানি না বোকার মতো প্রশ্ন করে বসলাম,
“পা ভাঙলে পা ভাঙা মেয়েতো কেউ বিয়ে করবে না। তখন আমার কি হবে?”

বলে ঠোঁট উল্টে ফেললাম। আদ্র ভাই রাগের মাঝেও ফিক করে হেসে দিলেন।
“তোর এতো কিছু নিয়ে না ভাবলেও চলবে। কেউ একজন আছে যে তোকে যেকোনো পরিস্থিতি বিয়ে করতে এক পায়ে রাজি”

“কে সে?”

“তোর এতো কিছু জানতে হবে না।তুই বাড়িতে যা”

বাড়িতে ঢুকতেই আম্মুর প্রশ্ন,
“তোরা এলি আদ্র কোথায়? ছেলেটা এসে তোদের না পেয়ে আমার থেকে জেনে তোদের আনতে গেল এখন তোরাই ওকে রেখে চলে এলি?”

“তোমাদের ছেলে কি খোকা বাবু যে তাকে কোলে করে নিয়ে আসতে হবে? আসছে পিছনে”

ধুপধাপ পা ফেলে ওপরে চলে এলাম। আদ্র ভাই পাড়লো আমাকে এভাবে ধমক দিতে? তার একটুও খারাপ লাগলো না? সব সময় বলে রোদ তোর মুখে হাসি মানায়, দুঃখ নয়। আজ সে নিজেই ধমক দিলো। কথাই বলবো না তার সাথে। এক সেট কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।
———-

রাতে প্রায় বারোটার কাছাকাছি। টেবিলে বসে পড়ছি। পড়তে পড়তে মাথা ধরে গেছে। তাও পড়া শেষ হচ্ছে না। আগে যদি জানতাম মেডিকেলে এতো পড়া তাহলে ভুলেও মেডিকেলের নাম নিতাম না। কিন্তু কি করার স্বপ্ন যখন দেখেছি পূরণ তো করতেই হবে। আরো বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগলো পড়া শেষ হতে। একাধারে বসে থাকতে থাকতে কোমর ধরে গিয়েছে। একটু হাটাহাটি করা দরকার। সাথে খোলা হাওয়া হলে আরো ভালো হয়। বিছানায় রাখা ওড়না গাঁয়ে সুন্দর মতো জড়িয়ে ছাদের উদ্যেশে হাঁটা দিলাম। দোলনায় বসে দোল খাচ্ছি আর দূর আকাশে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। চাঁদটাও আমার মতো একা। রাতে সবাই ভুতের ভয়ে ছাদে না এলেও আমার রাতের বেলা ছাদে দাঁড়িয়ে পুরো শহর দেখতে খুবই ভালো লাগে। চারপাশ সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ থাকে সাথে ঠান্ডা হাওয়া। মন নিমিষেই ভালো হয়ে যায়। এক মনে আকাশ পানে তাকিয়ে আছি এমন সময় কারো পায়ের আওয়াজ আসছে। পিছনে ফিরে দেখলাম কারো অবয় দেখা যাচ্ছে। কেউ এগিয়ে আসছে সামনে। সামনাসামনি আসতেই দেখলাম মানুষটা আর কেউ নয় আদ্র ভাই। তাকে দেখে বিকেলের কথা মনে পড়ে গেল। সে যেন আদ্র ভাইয়ের এক ভয়ংকর রূপ। তাকে দেখে মনে হচ্ছিলো তার ওই রক্তিম চোখ দ্বারা আমায় ভস্ম করে দিবে। তার ধ*মকের কথা মনে পড়তেই গাল ফুলিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। আদ্র ভাই আমার বরাবর একটু দূরে রেলিংয়ের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে পাত্তা না দিয়ে আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
“এতো রাতে না ঘুমিয়ে কি করছিস?”

আদ্র ভাইয়ের কথার উত্তর দিলাম না। শুনেও না শোনার ভান ধরে একই ভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আদ্র ভাই আবার বললেন,
“কি হলো কথার উত্তর দিচ্ছিস না কেন?”

“তোমার সাথে আমার কথা নেই?”

“কেন? আমি আবার কি করলাম?”

“তুমি আমায় ধমক দিয়েছো”

“শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে”

কিছু বললাম না। এটা তো সত্যিই যে আদ্র ভাই মানুষটা আমাকে সত্যিই অনেক আদর করে। যখন যা আবদার করি মুখে বলতে দেরি তার হাজির করতে দেরি নেই।
“আচ্ছা যা সরি। আর কখনো ধমক দিবো না। এখন খুশি?”

মাথায় দুস্টু বুদ্ধি চেপে বসলো। আদ্র ভাইকে একটু জ্বালানো যাক,
“কানে ধরে বলো তাহলে সরি একসেপ্ট করবো”

আদ্র ভাই করুণ চোখে তাকিয়ে বলল,
“কানে ধরতেই হবে?”

“হ্যাঁ”

“ঠিক আছে। আমি কানে ধরল তুই যদি খুশি হোস তাহলে তাই করি”

আদ্র ভাই কানে ধরতে যাবে তার আগেই তাকে থামিয়ে দিলাম।
“হয়েছে কানে ধরতে হবে না। সরি একসেপ্ট করে নিয়েছি”

দুজনের মাঝে নীরবতা। দুজনেই তাকিয়ে আছি দূর আকাশের পানে। হটাৎ আদ্র ভাই বলে উঠলো,
“লং ড্রাইভ এ যাবি?”

“এখন?”

“হ্যাঁ। রাতের শহর ঘুরে আসবো দুজন মিলে”

“দেরি কিসের চলো”

দুজনে বেরিয়ে পড়লাম। আদ্র ভাই গাড়ি ড্রাইভ করছে আর আমি পাশের সিটে বসে আছি। রাতের নিস্তব্ধ শহর। নেই কোনো যানজট, কোলাহল। অনেকক্ষন পর দুই একটা গাড়ি দেখা যাচ্ছে। রাতের শহর যেন সত্যিই অন্য রকম। আদ্র ভাই গাড়ি এনে থামালো একটা নদীর পাশে। নদীর পাশে মস্ত বড় মাঠ। এই জায়গাটা শহর থেকে অনেকটা দূরে। গাড়ি থেকে নামতেই মনটা প্রশান্তিতে ভরে গেল। শহরের কোলাহল ছেড়ে এই নিস্তব্ধতা যেন বড্ড সুন্দর লাগছে। নদীর পানিতে চাঁদের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। ধপ করে ঘাসের ওপর বসে পড়লাম।আমি বরাবরই প্রকৃতি বিলাস করতে পছন্দ করি। প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়ায় যেন এক অনন্য সুখ আছে। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে যান্ত্রিক এই জীবন ছেড়ে ছুড়ে দূর পাহাড়ে চলে যাই। কিন্তু সেটা তো সম্ভব না। আদ্র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
“আদ্র ভাই দেখো চাঁদ টা কতো মোহনীয় লাগছে না? দেখে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে”

“রৌদ্রময়ী মোহের কাছে চাঁদ কিছুই নয়”

আদ্র ভাইয়ের কথা শুনতে না পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
“কিছু বললে?”

“নাতো”

আদ্র ভাইয়ের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দৃষ্টি স্থাপন করলাম চাঁদের দিকে। চাঁদের মোহনীয় আলোয় আলোকিত হয়ে আছে চারপাশ। চারপাশে চোখ ঘুরিয়ে তাকাতেই চোখ পড়লো আদ্র ভাইয়ের ওপর। তিনি এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে ধ্যানে বসেছেন। ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
“এভাবেই তাকিয়ে আছো কেন?”

“দেখছি?”

“কি দেখছো?”

“উস্কেখুস্ক এলোমেলো চুলে একদম পে*ত্নীর মতো লাছে তোকে। যে কেউ দেখলে হার্ট অ্যাটাক করতে পারে। আমার হার্ট স্ট্রং বলে এখনো বেঁচে আছি”

“আদ্র ভাই”

চি*ল্লিয়ে উঠলাম। আমায় পে*ত্নী বললো উনি? রাগে নাকের পাটা ফুলে উঠলো। আদ্র ভাই নাক টিপ দিয়ে বলে উঠলো,
“রাগলে তোকে একদম পাকা টমেটোর মতো লাগে। ইচ্ছে করে গাল গুলো টেনে দেই”

আদ্র ভাই গাল টেনে দিয়ে দৌড়। আমিও ছুটলাম তার পিছু পিছু। আদ্র ভাই এতো জোরে দৌড়াচ্ছে তার নাগাল পাচ্ছি না। অনেকক্ষন দৌড়াদৌড়ি করে হাপিয়ে গেছি। আর দৌঁড়াতে পারছি না। ধপ করে ঘাসের ওপর বসে পড়লাম। আমাকে বসতে দেখে আদ্র ভাইও এসে পাশে বসে পড়লো। উনি বসতেই তার গাল টেনে দিয়ে বলে উঠলাম,
“হিসাব বরাবর”

আদ্র ভাই হেসে দিল। চাঁদের আলোয় তার হাসিটা যেন বড্ড সুন্দর লাগছে। এতো দিন খেয়ালই করিনি মানুষটা হাসলে তাকে এতটা সুন্দর লাগে। চোখ ফিরিয়ে নিলাম তার থেকে। আরো কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে দুজনে বাড়ি ফিরে এলাম।

#চলবে?

#উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন
#পর্ব১৫
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

উৎসব মুখর পরিবেশ। আদ্র ভাইদের বাড়িতে পুরো পল্টন এসেছে হাজির হয়েছি। আজকে ফুফা ফুপ্পির ত্রিশ তম বিবাহ বার্ষিকী। তাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে ছোটো খাটো আয়োজন চলছে। আম্মুরা সবার রান্না ঘরে ফুপ্পিকে রান্নায় হেল্প করছে। আব্বু, বড় আব্বু, ফুফা তিনজন মিলে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করছে। আমরা সব কাজিনরা মিলে গল্প আড্ডায় মগ্ন। সবার মাঝে শুভ ভাই অনুপস্থিত। মেডিকেলে এমার্জেন্সি থাকায় সে আসতে পারে নি। দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই চলে গেলেও আমাকে আর ইভাকে ফুপ্পি জোর করে রেখে দিলো।
ইভা আর আরু মিলে গল্প করছে। আমার সেদিকে মন নেই। হটাৎ ইচ্ছে হলো ছাদে যাবো। যেই ভাবা সেই কাজ। ছাদে যাওয়ার আগে আদ্র ভাইয়ের রুম পড়লো। আদ্র ভাই আছে নাকি দেখতে উঁকি দিলাম। সারারুমে কোথাও তার অস্তিত্ব নেই। ব্যালকনিতে থাকলেও থাকতে পারে সেই উদ্দেশ্যে ব্যালকনি তে উঁকি দিলাম। মাহশয় কোথাও নেই। আদ্র ভাইয়ের রুমের চারপাশে চোখ বুলাচ্ছি। আদ্র ভাইয়ের রুমটা যেন সাদায় মোড়ানো। দেয়ালের রং থেকে শুরু করে বিছানার চাদর পর্যন্ত সাদা রঙের। আকস্নাৎ চোখ গিয়ে আটকালো একটা ডায়রিতে। ডায়েরি টা দেখে এগিয়ে গেলাম। ডায়েরির ওপরে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা,
“আমার রৌদ্রময়ী”

রৌদ্রময়ী নামটা দেখে ভ্রু কুঁচকে এলো। এই নাম এর আগেও আমি আদ্র ভাইয়ের মুখে শুনেছি। কিন্তু কে এই রৌদ্রময়ী? আদ্র ভাইয়ের ভালোবাসা? আদ্র ভাই কি তবে কাউকে ভালোবাসে? মনের মাঝে উত্তেজনা কাজ করছে। ডায়েরি টা খুলবো তখন মাথায় এলো কারো ব্যক্তিগত জিনিসে হাত দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু আমার যে জানতে ইচ্ছে করছে। এখন দেখে নেই পড়ে নাহয় আদ্র ভাইকে সরি বলে দিবো। ডায়েরির প্রথম পাতায় খুলতে নজরে এলো,

“আমার রৌদ্রময়ীর আরেক নাম শুভ্রপরী”
“যার শুভ্রতায় নেই কোনো খুঁত, নেই করো কলঙ্ক, নেই কোনো অহংকার আর না আছে কাউকে আঘাত দেওয়ার ক্ষমতা আছে শুধু সীমাহীন মায়া। যে মায়া এতটাই ভয়ংকর আসক্ত হওয়ার পর তার নেশা পৃথিবীর সকল নেশাকে হার মানিয়ে দিয়েছে আমার কাছে”

পরের পৃষ্ঠায় লিখা,
“পৃথিবীর সবচেয়ে কষ্টের কাজ হল একজন মানুষের প্রতি ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও তাকে নিজের মনে লুকিয়ে রেখে সারাজীবন একা একা কাটিয়ে দেওয়া। তবে কোটি কোটি মানুষের ভিড়ের মাঝে পেয়েছি তোমায় খুজে, এই অনুভূতি বোঝানোর নয় হৃদয় দিয়ে নিয়ো বুঝে। তবে যদি বা নাই বুঝো তবুও ক্ষতি নেই ভালোবেসে যাবো একতরফা”

“বুকের মধ্যে লুকানো হাজারো অনুভূতি আর তিলে তিলে গড়ে তোলা ভালোবাসাই জানে কতটা ভালোবাসি আমি আমার শুভ্র পরীকে। তার মুগ্ধ করা হাসি আর মায়াবী চেহারা দেখলে হাজারো কষ্ট নিমিষেই শেষ হয়ে যায়”

“সে হয়তো কখনোই জানবে না যে তার মায়া মাখা মুখশ্রী সর্বক্ষণ আমার চোখের সামনে ভাসে। সে হয়তো কখনো জানবে না যে তাকে একটিবার দেখার জন্য আমার মন কতটা ছটফট করে।
আমার একতরফা ভালোবাসা তার কাছে কখনো প্রকাশ করতে পারিনি। ভালোবাসা প্রকাশ করতে না পারার মতো ব্যর্থতা অন্য কিছুতে নেই”

“চাইলেই তাকে পেতে হবে এমন না
কিছু চাওয়া হোক দূর থেকে
কিছু চাওয়া হোক শরীর না ছুঁয়ে
কিছু চাওয়া হোক পরিশুদ্ধতায়
ভালোবাসা দূর থেকে সুন্দর।
তোমারে পাওনের লাইগা যে পরিমাণ কান্না করছি আমি সেইটা কখনো আমি নিজের জন্যও করি নাই।
তোমাকে হারানোর ভয়ে বুকে যে যন্ত্রনা অনুভব করেছি সে যন্ত্রনা আমার মৃত্যু যন্ত্রণা কেউ হার মানায়”

“তোমার চোখের চাহনি মারাত্মক। আমার মন খারাপ তোমাকে স্পর্শ করতে পারে না। আমার চোখের জল তোমাকে বিচলিত করতে পারে না,
আমার নিরবতা তোমাকে অস্থিরতা দিতে পারেনা ,
আমার খারাপ লাগা তোমাকে সংবেদনশীল করে তুলতে পারে না,
আমার অনুপস্থিতি তোমাকে শূন্যস্থান দিতে পারেনা
আমি তোমার কেউ না,
আমার জন্য তোমার মনে অনুভূতি সৃষ্টি হয়নি,
কিন্তু আমার সব অনুভূতি ভালোবাসা তোমাকে ঘিরে, আমার পুরো সত্তা জুড়ে তোমার বিচরণ।
আমার রুদ্রময়ী”

“তোমায় কতটা ভালোবাসি তা হয়তো বলে বোঝাতে পারবো না। কিন্তু একটা কথা জোর দিয়ে বলতে পারি আমি একদিন হয়তো নিজেকে ভুলে যেতে পারি কিন্তু তোমাকে কখনোই ভুলবো না।আমার একতরফা ভালোবাসায় বাধা পড়ে থেকে যাবে তুমি সারা জীবন আমার মনের কোণে”

“তোমার উপস্থিতি আমার অন্তরকে শান্ত করে দেয় যা আর কারো উপস্থিতিতে সম্ভব নয়। তুমি কাছে না থাকলেও আমি দূর থেকেই তোমায় দেখে পরানে শান্তি পাই। তুমি ক্ষনিকের জন্য চোখের আড়াল হলেও মনটা কেমন যেন করে উঠে।আমার এই একতরফা ভালো বাসার শেষ যে কোথায় আমি নিজেও তা জানি না, তবে আমি তোমায় ভালোবেসে যাবো চিরকাল”

—–

“এক আকাশ সমান ভালোবাসা নিয়েও কেউ কেউ ছেড়ে যায় আবার এক বিন্দু ভালোবাসা পেলে সে থেকে যায় সারাজীবন। যে থাকার সে যেকোন অযুহাতেই থাকবে, থাকতে চাইবে আর যে চলে যাওয়ার সে যেকোন বাহানায় দোষ ধরবে অপমান করবে তারপরে হয়তো নিজে বলে কিংবা না বলেই চলে যাবে।
প্রেম কখনোই ফুরায় না
কিছু প্রেম বাতাসে মিশে যায়,
কিছু প্রেম সমুদ্রের জলে ভেসে যায়,
কিছু প্রেম মানব মনে লেগে থাকে,
কিন্তু প্রেম নিঃশেষ হয় না কখনো।
একদিন ওই দূর আকাশের মেঘ হব
ঝুম বৃষ্টি হয়ে ছুয়ে দেবো তোমায়।

তুমি বরং পরের জন্মে সুখ হয়ে এসো,
আমি দুঃখ হয়ে তোমায় পাহাড়া দেবো অবিরত।
অন্ধকারে মিশে যাওয়া কিছু দুঃখ, মানুষের চোখ এড়িয়ে যায়,
হৃদয় গভীরে জমা থাকে যে কথা, তা কি কখনো প্রকাশিত হয়?”
—–

“সবুজের সমারোহ,
সবই আছে চারিদিক।
শুধু তুমি নেই,
তোমার অস্তিত্বহীনতায় সবদিক।

ভালোবাসা সুন্দর, যদি সেটা ভালোবাসা হয়।
লোক দেখানো কিংবা স্বার্থ আদায়ের উদ্দেশ্যে যদি ভালোবাসি বলা হয়,তাহলে সেটা নিকৃষ্ট, ঘৃণ্য।

একবার কাউকে মনে ধরে গেলে,
এর পরে আর কাউকেই ভালো লাগে না।
সৌন্দর্য আসলে আপেক্ষিক। কুৎসিত মানুষও কারো চোখে সুন্দর। আবার, সবথেকে সুন্দরীও হয়তো কারো কারো চোখে ভালো লাগা হয়ে ওঠে না।

নীলাভ আলোয় রক্তরাঙা ফুলের দলে,
আমি তোমার ছবি আঁকি।
জানা কি আর ছিলো তবে,
পরিশেষে হবে সবই ফাঁকি?

দূরে যেতেই হবে, নিশ্চিত।
মধ্যপথে অযথাই আমাদের কিছুদিনের একসাথে কিছু স্মৃতি জমানোর খেলা”
—–

“তোমাকে ভেবে লেখা চিঠিগুলো,
নদীর তলদেশে জমা হয়।
মাছ আর জলজ জীব ছিড়ে ছিড়ে খায় সেসব কথা জমানো চিঠি।

এমন বিষণ্ণ লাগে কেনো?
এই মেঘ! এই বৃষ্টি!
এই পঁচে যাওয়া শহর!
ভেজা রাস্তা, মেঘলা আকাশ!
মৃদু আলো! সব মায়ার বহর!
এইতো চেয়েছিলাম আজীবন!
তবু কেনো বিষণ্ণ এই লগণ?”
—–

“কোন এক উপন্যাসে পড়েছিলাম: মানুষের জীবনে তাদের প্রিয় মানুষের কাছ থেকেই সবচেয়ে বড় আঘাত টা আসে। আর এই কষ্টটা সারাজীবন হৃদয়ে দাগ কেটে যায়, যা যেকোনো মানুষকে জীবিত থেকেও জীবন্ত লাশের মত মৃত বানিয়ে রাখে। আমি আজ এই কথাগুলোর সত্যিকারের বাস্তবতা অনুভব করছি।
লুকোচুরিই তো প্রেমের আসল মজা । যেদিন থেকে প্রেম স্বীকৃতি পেয়ে যায় সেদিন থেকেই প্রেমের মজা চলে যায়।
যদি তুমি একশ হতে বেঁচে থাকো, আমি একদিন একশ বিয়োগ হয়ে বাঁচতে চাই তাই তোমাকে ছাড়া আমাকে কখনো বাঁচতে হবে না।
যারা অতিরিক্ত ভালোবাসা পায় তারা ভালোবাসা ধরে রাখতে পারে না। তারা সব সময় ভালোবাসাকে অবহেলা করে। জীবনের একটা সময় গিয়ে ভালোবাসা পাওয়ার জন্য চিৎকার করে কাঁদে কিন্তু ভালোবাসা তখন আর ধরা দেয় না। কারণ সময় ঠিকই প্রতিশোধ নেয়।

The best line is,
কিছু ভালোবাসার লুকিয়ে রাখতে হয়,
কিছু জিনিস সারা জীবন অপ্রকাশ্য রাখতে হয়,
কিছু পরিস্থিতিতে ভালোবাসা কষ্ট হলেও বিসর্জন দিতে হয়,তবে ভালোবাসা মনের গহীনে রয়ে যায়”
—–
আমি যে কোনো পরিস্থিতিতে ভালবাসি
তোমার জন্য অপেক্ষা করতে রাজি
মনে রাখবে তোমায় কেউ ছেড়ে দিলেও
আমি তোমার পিছু কখনো ছাড়বো না।

ভালবাসলেই যে পেতে হবে এমন তো কথা নেই কিছু ভালোবাসা না হয় ভিতরে বন্দী হয়ে থাকুক আর আমার রোদ্রময়ী মুক্ত আকাশে ডানা মেলে উড়ুক”
—-

“আমার রৌদ্রময়ী ঠিক চাঁদের মতোই,
ছুঁতে ইচ্ছে হলেও ছোঁয়া যায় না!
শুধু দূর থেকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকা যায়
আর সীমাহীন ভালোবাসা যায
স্পর্শে নয় অনুভবেও ভালবাসা যায়
হোকনা দূরত্ব তাতে কি আসে যায় !
নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি
এর থেকে বড় কিছু কি হয়?

জমে থাকুক অনুভূতি অযত্নের আড়ালে চাপা পড়ুক দীর্ঘশ্বাস, মুচকি হাসির বেড়াজালে!

Time Changes but
Same Feelings Never
সময় বদলায় কিন্তু কিছু অনুভূতি বদলায় না!

প্রহর শেষে আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস,
তোমার চোখে দেখেছিলাম আামার সর্বনাশ”
—–

“আমি চাই ক্যান্সারের মতন মারাত্মক একটি রোগ আমাকে স্পর্শ করুক! তারপর মারা যাবো বলে: সেই আশায় হলেও মানুষ আমাকে একটু ভালোবাসুক!
ভালো তো আমি তোমাকেই বাসবো
পাওয়া না পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার..!
গল্পটা তখনই ভালো ছিলো
যখন তুমি ছিলে অপরিচিত আর আমি
ছিলাম আমার আমিতে সীমাবদ্ধ༅༎•
নিভে যাও,
অন্ধকারে মিলিয়ে যাও,
ঠিক যেখান থেকে তোমার উৎপত্তি,
সেখানে হারিয়ে যাও…”
—–

“পৃথিবীতে সবচেয়ে জঘন্যতম অনুভূতি হচ্ছে প্ৰিয় মানুষটার চোখে অন্য কারো জন্য ভালোবাসা দেখা। সেই যন্ত্রনায় যেন মৃত্যু হয় বারে বার। হৃদয় ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয় বহুবার”

তুমি ভাগ্যবান, আমি অভাগা
তুমি যারে পাইছো আমি তারে হারাইছি
সে আমার তীব্র শখের নারী ছিল
তুমি তার শখের পুরুষ
তোমাকে খুশি করতে গিয়ে
আমাকে ধ্বংস করে দিয়েছে…!

আপনি ও একদিন অন্য কারো হয়ে যাবেন, আর আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবো আর বলবো। কি কপাল তার যে আপনাকে না চাইতে পেয়ে গেলো ,আর আমি এতো চেয়েও পেলাম নাহ।
এটা আমার জীবনের সব চেয়ে বড় একটা আক্ষেপ হয়ে থেকে যাবে চিরকাল ।

তুমি বসন্তের ফুলের চেয়েও সুন্দরী,
ইসস আমি যদি কবি হতাম!
তাহলে তোমার সুন্দর সৌন্দর্যকে উৎসর্গ করে
শত শত কবিতা লিখতাম”
—–

“অতঃপর……
সে কোনো কালেও জানতে পারবে না!
তাকে কতটা আকুলতা নিয়ে!
মোনাজাতে চাওয়া হয়েছিল
যতবার ভাবি তাকে ভুলে যাবো
ততোবারই তাকে নতুন করে ভালোবেসে ফেলেছি
নেশার মতো ছিল তার চেহারাটা
প্রতিদিন না দেখলে মন ভরতো না
আজ বহুদিন হয়ে গেল তাকে দেখিনি!

আপনি পৃথিবীর কাছে সবচেয়ে অসুন্দর হলেও আপনি আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুদর্শনী নারী। কিন্তু প্রকৃতির কি অদ্ভুদ নিয়ম আমি চাই আপনাকে আপনি চান অন্য কাউকে”
—–

“অপ্রকাশিত এক অনুভুতি তুমি!
দিন শেষে তোমার শুন্যতা আমায় গোপনে কষ্ট দেয়
যারা একতরফা ভালোবেসেছে
তারা জানে শূন্যতা আর ভালোবাসা কি?
প্রকাশ করার জন্য পুরা একটা জন্ম কম পড়ে যাবে যে আমি তোমায় কতটা ভালোবেসেছিলাম”

“ভালোবাসি রৌদ্রময়ী”
—–

ডায়েরিটা বন্ধ করে বুকের সাথে চেপে ধরলাম। একটা মানুষ এতো আকুলতা নিয়েও ভালোবাসতে পারে তা জানা ছিলো না। হাসি খুশি মানুষটার মনে যে এতো ব্যাথা জমে ছিলো কখনো অনুভব হয়নি। কিন্তু কে সেই ভাগ্যবতী যাকে আদ্র ভাই এতটা ভালোবাসে। নাম খোঁজার জন্য ডায়েরিটা বুক থেকে আলগা করতেই কিছু একটা নিচে পড়লো। হাতে নিয়ে দেখি নুপুর। নুপুরটা কেমন চেনা চেনা লাগছে। অনেক ক্ষণ ভাবার পর মনে পড়লো এটা তো আমার নুপুর। এই নুপুর জোড়া দাদুমনি দিয়েছিলো আমায়। একদিন হটাৎ করে কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিলো এরপর আর খুজে পাইনি। কিন্ত এটা আদ্র ভাইয়ের কাছে কিভাবে এলো? যেখান থেকে এটা পরছে সেই পৃষ্ঠা খুলতেই নজর এলো আমার ছোটবেলার ছবি। নিচে গোটা গোটা অক্ষরে লিখা,
“আমার রৌদ্রময়ী”

#চলবে?