#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_৩১
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
” হায় হ্যান্ডসাম”
নীল প্রথম ভাবলো হয়তো ভুল শুনেছে তাই নিজের মতো আবার হাঁটা শুরু করলো।
মেয়েটা দৌড়ে নীলের সামনে এসে দাঁড়ালো।
নীল ভ্রু কুঁচকে মেয়েটার দিকে তাকালো।
মেয়েটা এবার নীলকে ঘুরে ঘুরে দেখা শুরু করলো। এক পর্যায়ে বলে উঠলো,’ মুটামুটি আকর্ষনীয়। যে কোনো মেরে আকর্ষণ হতে বেশি সময় লাগবে না।পুরাই চকলেট বয়।’
নীল হা করে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়ে তো দেখতে খুবই সুন্দরী কিন্তু এই পিচ্চি মেয়ে ওর সাথে ফ্লার্ট করছে..?
নীল কে চুপ থাকতে দেখে মেয়েটা ওর আরো কাছে এসে বাঁকা হেঁসে ব’লে উঠলো,’ নাম কি..?
নীলঃ কেনো..!?
~আগে বলো তারপর না হয় বলছি..
নীলঃ নীল চৌধুরী।
~কিইইইই!! লাল নীল..তারপর মুখে হাত দিয়ে বললো, আমি তো রং নয় তোমার নাম জিজ্ঞেস করেছি..
নীল বুঝলো মেয়েটা ইচ্ছে করেই এমন করছে।
নীলঃ তোমার নাম..?
~ফাইজা..
নীলঃ আগে পিছে কিছু নেই..?
ফাইজাঃ আছে কিন্তু আমি বলতে ইচ্ছুক নই।
নীলঃ আমার ও জানার কোনো ইন্টারেস্ট নেই।
ফাইজাঃ বা বাহ্ Attitude দেখে আমি তো ফিদা।
নীল মুচকি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে।
ফাইজাঃ ওফ্ফ তোমার হাসি…
নীলঃ কয়দিন হয়েছে চিনো..?
ফাইজাঃ বলতে ইচ্ছুক নই..
নীলঃ আচ্ছা আগে বলো। আমার কাছে আশার আসল কাহিনি কি..?
ফাইজাঃ তুমি সম্পর্কে আমার বেয়াই আসতে পারি না..?
নীল কিছু বললো না চুপ করে হাঁটা শুরু করলো।
ফাইজাঃ হেই… Attitude দেখিয়ে চলে যাচ্ছো! নাম্বার টা তো দিয়ে যাও..
নীল পিছনে না ফিরেই একটা শয়তানি হাসি দিয়ে নাম্বার দিয়ে মাহির রুমের দিকে চলে গেলো।
সবাই নিচে নূর মাহির রুমের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।
হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে পিছনে ফিরে তাকালো।
ধূর্সরবর্নের শার্ট পড়া রুদ্রকে দেকেই থমকে গেলো। নূর আড়ঁচোখে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে ফেললো।
রুদ্রের মনে হচ্ছে ওর সামনে এক কালো পরি দাঁড়িয়ে আছে। কালো শাড়ি, এক হাতে চুড়ি অন্য হাতে ঘড়ি, হালকা সাজে যেনো অপ্সরী লাগছে। রুদ্রের নিঃশ্বাসের প্রখরতা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। বুকের সেই ধুকধুকানি অন্য কথা জানিয়ে দিচ্ছে। রুদ্র আসতে আসতে নূরের দিকে এগিয়ে গেলো। নূর চুপচাপ অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। রুদ্র গিয়ে ওর পাশে দাঁড়ালো।
নূর রুদ্রের দিকে না তাকিয়েই বললো,’কখন এসেছেন..?
রুদ্রঃ এই তো একটু আগে আসলাম। নিচে সবার সাথে দেখা করে জানলাম তুমি এখানে।
নূর চোখ তুলে রুদের দিকে তাকালো।
সাথে সাথে রুদ্রের বুকের ধুকধুকানি আরো ক্রমশ বেড়েই চলেছে। রুদ্র আসতে আসতে নূরের মুখের উপর ঝুঁকে যাচ্ছে।
রুদ্রের উষ্ণ নিঃশ্বাস গুলো গভীর ভাবে নূরের মুখের উপর পরছিলো।
হঠাৎ দরজার কেউ বলে উঠলো, ‘ ভাই বন্ধুর বেডরুমকে আজকের জন্য নিজের পারসোনাল রুম বানাই ফেলছো নাকি..?
আচমকা অপ্রত্যাশিত কারো আওয়াজ শুনে বিদ্যুৎ ঝটকায় রুদ্রকে ছেড়ে দূরে সরে গেলো নূর। লজ্জায় মাথা গুড়িয়ে অন্য দিকে ফিরে গেলো।
রুদ্র এক হাত দিয়ে কপাল স্লাইড করে পিছন ফিরে দেখলো নীল ছত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসি দিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।
রুদ্রঃ তুই এখানে কেনো..? আর কারো রুমে ঢুকার আগে যে পারমিশন নিয়ে ঢুকতে হয় সেটাও জানিস না!বেয়াদব!
নীলঃ আমি কি জানতাম নাকি তোমারা যেখানে সেখানে মিশনে নেমে যাও।
রুদ্রঃ অল্প বয়সে বেশি পেকে গেছিস… আমি তো শুধু নূরের চোখে কি যেনো পড়ে ছিলো তাই দেখতে ছিলাম।
নীল দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো,’ চোখে কিছু পড়ে ছিলো নাকি অন্য কোথাও.. ‘
নূর রেগে বলে উঠলো,’ নীলের বাচ্চা দাঁড়া খালি তুই!
নীল দাঁত বের করে হেসে বললো,’ দাঁড়িয়েই তো আছি।তবে আমি এতটাও নির্লজ্জ নই নূর যে ছোটো বোনের রোমাঞ্চ দেখবো। এই দেখ চোখ বন্ধ করে আছি তোরা তোদের রোমাঞ্চ চালিয়ে যা।
লজ্জা পেলেও এখন লজ্জা কে পাধান্য দিলে চলবে না। না হলে এই ঠোঁট কাটা ছেলের মুখ বন্ধ হবে না নূর বলে উঠলো, ‘ আচ্ছা তাই নাকি তুই দাঁড়া আমি তোকে রোমাঞ্চ দেখাইতেছি।’
নূরকে জুতা খোলতে দেখে নীল ভয়ে দিলো দৌড় নীলের পিছু পিছু নূর ও গেলো।
রুদ্র দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে,’ শালার বিয়ের আগেও প্রেম করতে পারিনি আর রোমাঞ্চ সেটা ভাবা বিলাসিতা ছাড়া কিছুই না। কিন্তু এখন বিয়ে করেও একটু বউয়ের সাথে প্রেম ভালোবাসা রোমাঞ্চ কিছুই করতে পারছি না। এই প্রকৃতি, আকাশ -বাতাস আশেপাশের মানুষ সব তার শত্রু হয়ে যাচ্ছে দিন দিন।
———
বাসায় আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
আনিতা বেগম মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন। উনার মনে হচ্ছে যেনো কত বছর পর মেয়েকে দেখেছেন।
বাসাটা আবার জীবিত হয়ে উঠলো। হাসি খুশিতে গদোগদো হয়ে উঠলো পরিবারের প্রত্যেক টা সদস্য। রুহিও নিচে নেমে এসেছে। সবার সাথে হাসি খুশিতে মেতে আছে। কিন্তু দেখা নেই আদির।
সবাই সবার রুমে গেলো ফ্রেশ হতে।
আনিতা বেগম নতুন জামাইয়ের জন্য বিভিন্ন আইটেমের রান্না করতে ব্যস্ত।দুই মেয়ের জামাইর পছন্দ মতো সব রান্না করছেন। হঠাৎ মনে হলো শুধু দুই জামাইর পছন্দ মতো না। আদি,আবির,রুদ্র, ফায়াজ সবার পছন্দের রান্না করবেন উনি আজকে।
মাহি তোমার পা’য়ের পায়েল টা তো খুব সুন্দর। জিজু দিয়েছে নাকি..!?
মাহি চমকে পা’য়ে হাত দিলো। পায়েল আসলো কোথায় থেকে.!?
আদিবাঃ কি রে চুপ করে আছিস কেনো? ফায়াজ জিজু দিয়েছে তাই না..?? তুই এমন মাহি ফায়াজ জিজু তোকে গিফট দিলো একবার দেখালি ও না। এতটা পর হয়ে গেলাম এক দিনেই। আমি কিন্তু কোনো কিছু লুকাই না,গুমরে মুখ করে বললো।
মাহিঃ তুই কবি বলছিলি..?
আদিবা মিনমিন সুরে বললো, ‘ তোর কিপটে ভাই তো আমাকে কিছুই দেয়নি কি বলবো…
মাহিঃ কেনো ভালোবাসা দেয়নি..?
আদিবা হঠাৎ এমন কথা শুনে লজ্জায় এদিক ওদিক তাকানো শুরু করলো।
মাহি আবার বললো,’ তুই তো সব থেকে বেস্ট উপহারটি পেয়েছিস আদিবা..
শুভ্রতাঃ কেনো গো ননদী ফায়াজ বুঝি ভালোবাসা উপহারটা দেয়নি তোমাকে..?? দুষ্টু হেসে বললো নাকি কম হয়ে গেছে..
মাহি মনে মনে বললো,’ সবার যে সব কিছু কপালে থাকে না। আমি যে রুদ্র ভাইয়ার জায়গাটা কাউকে দিতে পারবো না। কখনো না!
আদিবাঃ আমি এমন একটা পায়েল আজকে দুপুরে নূরের পা’য়ে ও দেখেছি..
মাহি চমকে তাকালো আদিবার দিকে,
মাহির পাশে এসে নীল দাঁড়িয়ে বললো,’ ডাল মে কুচ কালা হে!
পিছন থেকে নূর বলে উঠলো, ‘ডাল কালা নাকি সাদা সেটা তুই চিন্তা না করে নিজের ভবিষ্যতে যে কালা হয়ে আসছে সেইচিন্তা কর।
নীল বিরক্ত হয়ে বললো,’ যে কোনো কথায় বাঁ হাত না ঢুকালে তোর পেটের ভাত আযম হয় না!
নূরঃ তুই যেখানে সেখানে কথা বলতে আছিস কেনো..?
নীলঃতাতে তোর কি..?
নূরঃ বেশি পকপক না করে চুপ থাক।
মাহিঃ তোরা কেনো এত টুকু একটা কথা নিয়ে ঝগড়া শুরু করেছিস। চুপচাপ দাড়িয়ে থাক।
নীলঃ আমি তো ভালো কথাই বলছি। তোর বোন তো এক নাম্বার বেয়াদ্দপ মহিলা।
নূর কটমট দৃষ্টিতে নীলের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ তুই একটা ফালতু ছেলে।’
নীলঃ হ্যা ফালতু হতে পারি তোর মতো তো আর না। যেখানে সেখানে হাঁস মুরগীর মতো…
আর কিছু বলার আগেই নূর জুতা খোলে হাতে নিয়ে বললো,’ নীলের বাচ্চা দাঁড়া খালি তুই।
নীল তো জুতা দেখেই দৌড় দিলো একটু দূরে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ তোমরা করতে পারো আর আমরা দেখে বললেই দোষ। দাঁড়াতে বলছোস ভালা কথা জুতা হাতে লস কা. বেয়াদ্দপ মহিলা..!?
চলবে…
#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_৩২
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
ফাইজা রেগে বোম হয়ে বসে আছে। এক বার মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেক বার শক্ত করে হাত মুষ্টি বদ্ধ করছে।
[ফাইজা বান্ধবীদের সাথে বাজি ধরে ছিলো নীলের কাছ থেকে নাম্বার আনবে। অবশ্য তখন সে নীল কে চিনতো না। তাই নীলের কাছ থেকে নানা বাহানায় নাম্বার চেয়ে ছিলো। নাম্বার পাওয়ার পর বান্ধবীদের কাছ থেকে অনেক টাকা হাতিয়েছে।
ফায়াজ আশার সময় ফাইজাকে ওদের সাথে আসতে বললে। ফাইজা বলে ছিলো ও অন্য সময় আসবে এখন সে ওদের সাথে আসবে না। ফায়াজ শুনে তো অবাক। যে মেয়ে সবার আগে যাওয়ার জন্য রেডি থাকার কথা সে মেয়ে বলছে যাবে না। ও কি সত্যি শুনছে?
রাতে সব কাজিন গ্রুপ বসে নাম্বার এ কল দিলো।
প্রথম কল রিং হতে হতে কেটে গেলো।
সব গুলো সন্দেহের দৃষ্টিতে ফাইজার দিকে তাকালো।
ফাইজা জোর করে মুখে হাসি টেনে বললো,’ আরে ইয়ার এমন এক দুইটা কল মিস যাবেই। এভাবে তাকানোর কিছু নেই। ওই লাল নীল আমার শিকার, এক বার না ধরলে দশ বার দিবো। আর ও কি ছেছড়া ছেলে নাকি যে একবার কল দিলেই ধরে ফেলবে।
একজন বলে উঠলো,’ তা ঠিক বলেছিস ওফ্ফ ছেলেটার Attitude দেখে আমি ফিদা।’
আরেক জন বললো,’ এই ছেলেকে দেখেই তোর এই অবস্থা আর যদি ধূসররঙের শার্ট পড়া ছেলেকে দেখতি তাহলে যে তোদের কি অবস্থা হতো।’
ফাইজা ভ্রু কুঁচকে বললো,’ এই মালটা আবার কে?’
~তা তো জানিনা। তুই তখন নীলের সাথে ফ্লার্ট করতে ব্যস্ত তখন নিচে ফায়াজ ভাইয়ার সাথে দেখলেম। হয়তো ভাবির ভাই হবে। ‘
ফাইজাঃ ভাবির তো কেনো ভাই নেই..’
আরেক জন রেগে বলে উঠলো, ‘ ওই এখন কি এই বেডার কথা শুনতে শুনতে রাত পার করে দিবি। যা কে দেখি নাই তার কথা বাদ। আরেক বার আসলে এই ছেলের সাথে দেখা যাবে। এবার তোর লাল নীলের কাছে কল দে।
ফাইজাঃ ওফ্ফ নিরু আমার নীল মানে..? আমি শুধু বাজিতে জিতার জন্য কল দিচ্ছি। বেশি বুঝতে আসবি না।
ফাইজার কথা শুনে সবাই মিটমিট হাসছে।
ফাইজা রেগে তাকিয়ে বললো,’ শয়তানের দল এভাবে হাসলে আমি একদম কল দিবো না।’
নিরুঃ ফাইজা!! তুই কি নীলের নাম শুনে লজ্জা পাচ্ছিস..?
~আমার ও তাই মনি হচ্ছে রে নিরু।
ফাইজাঃ তোরা থাক!!
ফাইজা রেগে চলে যেতে নিলে সবাই গিয়ে সরি বলে ফিরিয়ে আনে।
আবার কল দিলো। এবার রিং হওয়ার পর পর ই কল রিসিভ হলো।
~ হ্যালোউউউ!!
এত ভাড়ি মোটা কন্ঠ শুনে সবাই তাজ্জব বনে গেলো।
ফাইজা তারাতারি মোবাইল চোখের সামনে ধরে দেখলো। ভুল নাম্বারে কি ও ডায়াল করলো..? নাহ্ এটাই তো নীলের দেওয়া নাম্বার।
আবার ওপাশ থেকে বলে উঠলো,’ হ্যালোউউ কেডা আপনে কথা কননা কা..?
ফাইজাঃ সবার দিকে তাকিয়ে দেখে সব গুলা গোল গোল চোখ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।চোখের ইশারায় বললো। কথা চালিয়ে যেতে।
ফাইজা মোবাইল কানে ধরে শুষ্ক একটা ঢুক গিলে বললো,’ কেমন আছেন লাল নীল..?
~কেডায় লাল নীল..? আমি রং বেচি না।
ফাইজাঃ লাল নীল আপনি এভাবে কথা বলছেন কেনো..?
~তোমার নাম কি তা..?
ফাইজা ভাবলো হয়তো নীল ঘুমের ঘুরে এমন বক বক করছে।কিন্তু কন্ঠ তো এমন না। এটা বুড়ো লুকের কন্ঠের মতো। আবার ভাবলো হয়তো নীল ওদের মতো মজা করে এমন কন্ঠ করে কথা বলছে।
ফাইজাঃ আরে আপনি আমাকে চিনতে পারেন নি.. আমি ফাইজা।
~ওহহ আগে বলবেন তো। কেমন আছেন..?
ফাইজা সবার দিকে তাকিয়ে ঘা জ্বালানি একটা হাসি দিয়ে আবার কথা বলা শুরু করলো।
ফাইজাঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো লাল নীল। কিন্তু আপনার কন্ঠ এমন লাগছে কেনো.? ঠিক আছেন তো আপনি..?
~জ্বি আমি ভালা আছি।
ফাইজার মনে হচ্ছে কিছু তো গোলমাল হচ্ছে৷ কিন্তু কি..?
ফাইজাঃ আপনি তো আজকে Attitude দেখিয়ে কিছু না বলেই চলে গেলেন। এক বার তো বলতে পারতেন মানবতার খাতিরে আপনাদের সাথে যাওয়ার কথা।
খট করে ফোনটা কেটে দিলো ওপাশের মানুষটা। ফাইজার মনে হলো ওকে অপমান করলো নীল। মুখের উপর কিছু না বলে ফোন কেটে দিলো। হাত মুষ্টি বদ্ধ করে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।
এদিকে ওই বেটা ফোন কেটেই নীলের কাছে ফোন দিলো।
~হ্যালোউউউ ভাই।
নীলঃ হুম বলো রিফাত ভাই।
রিফাত ভাইঃভাই মাইয়া কল দিছলো। কি কয় আমি তো কিছুই বুঝি না।
নীলঃ আহা রিফাত ভাই কিছু না বুঝলে চুপ করে থাকবা। সারা জীবন তো একা থেকেই কাটিয়ে দিলা। নিজের দিকে এক বার তাকিয়েছো! জীবনে বাঁচতে গেলে একটা সঙ্গি লাগে। আমি তোমাকে সেই জীবন সঙ্গিনী খোঁজে দিলাম বুঝছো। কল দিলে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবা। মাঝে মাঝে কল দিয়ে ভালোবাসার কথা বলবা।
রিফাত ভাইঃ কি যে কননা লাল নীল ভাই।এহন কি আর জীবন সঙ্গিনীর সাথে প্রেমের কথা বলার সময় আছে। বয়স তো কম হইলো না ৫৫এর উপরে হইয়া গেলো। চা বেচতে বেচতে দিন চলে যায় এই সব করার সময় কই।
নীলঃ একদম লাল নীল বলবা না ভাই তাহলে কিন্তু ওই মাইয়া আর তোমারে কল দিবো না।
রিফাত ভাইঃ ভাই মাইয়াডার কথা গুলা খুব ভাল্লাগছে।
নীলঃ তাহলে এই খুশিতে কাল কের চা ফ্রী তে দিবা।
রিফাত ভাইঃ তোমার লাইগা সব সময় ফ্রী ভাই। আর ওই মাইয়ারে আমার কইরা দিলে তোমারে ফ্রী তে বিরিয়ানি খাওয়ামু ভাই।
নীল হাসতে হাসতে কল কেটে দিলো।
আহারে বেচারি ফাইজা সামনে যে কপালে আর কি কি আছে আল্লাহ ভালো জানে। আর কারো না নীলের চক্করে পরছে বুঝতে তো হবে যার-তার কাছে নাম্বার চাওয়ার লাভ কি….
নীল শয়তানী হাসি দিয়ে “হরিণ ” নামটার উপর চাপ দিয়ে কল দিলো। আজ দুই দিন হরিণের সাথে ঝগড়া হয় না। এখন একটু কথা না বললে শান্তিতে ঘুম হবে না।
———
রুদ্র স্থির নয়নে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে।
নূর নড়ে চড়ে উঠলো। রুদ্র তাও চোখ সরালো না। সে এখন তার মনের রাজ্যের রাণীকে দেখতে ব্যস্ত। দিনে তো দেখার সময় পায় না৷ পেলেও তাকানোর সাহস হয় না। আগে বন্ধুদের কাছ থেকে শুনতো বিয়ের পর বাঘ ও বউয়ের সামনে বিড়াল হয়ে যায়। তাহলে কি সেও এমনটাই হয়ে যাচ্ছে..? হুরহুর করে সময় পেরিয়ে যাচ্ছে রুদ্র তাকিয়ে আছে গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে। রুদ্র ঝুঁকে থাকার কারনে তপ্ত নিশ্বাস এসে ক্ষনে ক্ষনে নূরের সারা মুখের আঙ্গিনায় আঁচড়ে পরছে। অনেক সময় পেরিয়ে গেলে নূরকে এক হাতে আগলে ধরে ঘুমিয়ে গেলো।জানা নেই ঘুম হবে কি-না তবে নিজের বউটাকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে রাখার মাঝে-ও আজ শান্তি লাগছে৷ এই মেয়েটা কি কখনো ওকে বুঝবে না। ওর চোখের ভাষা বুঝবে না। ও যে খুব চাপা স্বভাবের ছেলে মনের কথা মুখে বলতে পারে না।
———
সুনশান রাত,বাইরে চাঁদের আলোয় আলো কি তো হয়ে আছে চারপাশ। রাত ২টার ও বেশি হবে কেউ জেগে নেই এই চাঁদনী পূর্নিমার রাতে। আগে এই চাঁদনী রাত দেখলে কত স্বপ্ন বুন তো ছাঁদে বসে বসে। স্বপ্ন তো স্বপ্নই হয় তাই না! আকাশটা তে থলার মতো একটা চাঁদ উঠে আছে। চারপাশ কি সুন্দর আলোয় আলোকিত করে আছে। এত এত আলোর মধ্যে ওর নিজেকে কেনো এত অন্ধকার মনে হচ্ছে। ওর মনে আলো নেই কেনো..?
বারান্দায় দিয়ে পাশের বাসার ছাঁদটা দেখা যায়।
আসার পর শুনলো রাবেয়া আন্টির ছেলে বউ নিয়ে বাসায় উঠেছে। ছাঁদের দিকে চোখ যেতেই চোখ আটকে গেলো এক কিশোর কিশোরীর দিকে। চাঁদের আলোয় তাদের মুখটা ভেসে উঠেছে। জোছনা রাতে ছাঁদে দাঁড়িয়ে ভালোবাসা,ভালোবাসায় রঙ্গিন হয়ে উঠছে এক কিশোরীর মন আর তার ভালোবাসায় কাপড়ের মতো জড়িয়ে আছে এক প্রেম তৃষ্ণারত কিশোর। আহ্ ভালোবাসা আজ ওর জীবন টাও এমন জোছনা রাখতে মতো আলোকিত হতে পারতো, ওই কিশোর কিশোরীর মতো একি চাদরে মোড়ানো যেতো কিন্তু ওর ভাগ্যে যে অন্য কিছু লেখা। নিয়তি ওর সাথে খুব নিষ্ঠুরতম খেলা খেলেছে। আজ তার ভালোবাসার মানুষটি নিজের বোনের স্বামী।
” অন্যের ভালোবাসা দেখলে কি ভালোবাসার তৃষ্ণা কমে না-কি বাড়ে..?”
মাহি এত রাতে ফায়াজের কন্ঠ শুনে চমকে পিছন ফিরে তাকালো।
এক হাত প্যান্টের পকেটে রেখে মুখে বরাবরের মতো মুচকি হাসি ঝুলিয়ে জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফায়াজ।
মাহিঃ আপনি এখনো ঘুমান নি..?
ফায়াজঃ নিজের বউ যখন অন্য কারো ভালোবাসা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখায় ব্যস্ত তখন নিজে শান্তিতে ঘুমাই কিভাবে..?
মাহি ভড়কে গেলো এই লোক কি দেখেছে আমি ওদের, ছি!ছি!ছি! কি লজ্জা, কি লজ্জা।
ফায়াজ মাহির মুখের উপর ঝুঁকে বলে উঠলো, ‘ শুধু কি অন্যের ভালোবাসা দেখবে না-কি নিজেও ট্রাই করবে..? আমি কিন্তু খুব ভদ্র ছেলে এখন ও কোনো নারী ছোঁয়া পাইনি।
মাহি এদিক ওদিকে তাকিয়ে কথা ঘোরানোর জন্য বলে উঠলো,’ আজ চাঁদ টা খুব সুন্দর না..?
ফায়াজঃ আমি বাহিরের চাঁদের খবর তো বলতে পারি না। তবে আমার সামনের চাঁদ টাকে খুব সুন্দর লাগছে।
মাহি ফায়াজের চোখের চাহনিতে থমকে গেলো। এই চাহনিতে অন্য কিছু বলছে। মাহি ফায়াজের চোখ থেকে চোখ সরিয়ে রুমে চলে গেলো।
মাহির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ফায়াজ এক দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। এক দিন না এক দিন সব ঠিক হবে৷ আজ যেই চোখে কাউকে না পাওয়ার কষ্ট । এক দিন সেই চোখে আমাকে কাছে পাওয়ার বেকুলতা থাকবে।আর সেই দিনটা বেশি দুরে নয় খুব জলদি আসবে।
সামনের ছাঁদে তাকিয়ে মুচকি হাসলো এমন একটা পূর্নিমার রাত ওই কিশোর কিশোরীর মতো খুব জলদি ওদের জীবনেও আসুক।
———
সকালে রুদ্র হসপিটাল যাওয়ার জন্য রেডি হলো। নূর কলেজ যাওয়ার জন্য।
রুদ্র রুম থেকে বের হয়ে নিচে গেলো।
নূর রেডি হয়ে ইরিনের সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে রুম থেকে বের হওয়ার জন্য বেগ হাতে নিলো। ইরিন নূরকে তারাতাড়ি কলেজ আসতে বলতেছে। কাল সে তার ফোন দেওয়া সেই আগুন্তকঃ কে ধরে ফেলেছে।
নূর বের হতে নিয়ে দরজার সাথে কপালে ব্যথা পেয়ে কপালে হাত দিয়ে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভীষণ ব্যথা পেয়েছে।
রুদ্রঃ এত সময় লাগে বের হতে। আর এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো..?
নূরঃ শখে দাঁড়িয়ে আছি।
রুদ্রঃ কপালে কি হয়েছে? হাত কেনো? দেখি…
রুদ্র নূরের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে কপালে হাত দিলো..
“ভাই রুম থাকতে যেখানে সেখানে তোমাদের রোমান্স না করলে হয় না। কখনো বন্ধুর বেডরুমে কখনো দরজার সামনে বলি আমরা তো সিঙ্গেল মানুষ আছি এটা ভেবে ও তো চলতে পারো। এই গুলো দেখলে আমাদের ও একটা বউ যে নাই সেই কষ্টের কথা মনে পড়ে যায়। ”
নূরের আর বুঝতে বাকি নেই এই বদমাশ ছেলেটা কে হতে পারে !?
নূর রেগে রুদ্র কে সরিয়ে নীলের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো।
নীলঃ একদম জুতা খুলবি না! নিজেরা করতে পারস আর আমি বললেই জুতা খুলছ..….
চলবে..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।