#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_৩৫
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
নূর বাসায় এসেই শুনলো এক খুশির খবর।
সকালে শুভ্রতা ভাবি কাজ করতে গিয়ে রান্না ঘরে মাথা ঘুরে পড়ে গেছেন। ধরাধরি করে রুমে এনে মাথায় পানি দিয়ে একটু স্বাভাবিক করে ডক্টর কে কল দিলো বড় আম্মু। বাসায় কোনো পুরুষ না থাকায় বড় আম্মু নিজেই ডক্টরের কাছে নিয়ে গেলেন শুভ্রতা ভাবি কে। ওখানে গিয়ে রুদ্র ভাইয়া নিজের পরিচিত ভালো ডাক্তার দেখালো ভাবি কে।
কয়দিন ধরে নাকি মাঝে মাঝে বমি-টমি হয়,মাথা ঘুরে, কোনো কিছুর গন্ধ শুনলেই পেট আওরায়।
ডাক্তার কতগুলো টেস্ট দিলো।
টেস্ট গুলো করে। ডক্টরের চেম্বারে গেলো রুদ্র ভাইয়া।
অনেকক্ষন পর রিপোর্ট হাতে একজন নার্স এসে দিয়ে গেলো।
ডাক্তারঃ রুদ্র পেশেন্টের স্বামী কোথায়??
রুদ্রঃ ভাইয়া অফিসে আছে।
ডাক্তারঃ আর কে এসেছে সাথে??
রুদ্রঃ আম্মু এসেছে। কেনো কি দরকার শফিক ভাই বলতে পারেন আমাকে।
ডাক্তারঃ আগে মিষ্টি মুখ করাও তারপর না হয় বলছি..
রুদ্রের যা বুঝার বুঝে নিলো। খুশিতে ডাক্তার কে জড়িয়ে ধরে বললো। আমার আম্মু, আব্বু, ভাইয়ার জন্য এর থেকে বড় সারপ্রাইজ কি হতে পারে। ধন্যবাদ শফিক ভাই।
ডাক্তারঃ আমাকে ধন্যবাদ না দিয়ে যা কে দেওয়ার তাকে দাও। আর আমার কিন্তু মিষ্টি চাই।
ডাক্তারের কথা শুনে রুদ্র হুঁ হুঁ করে হেঁসে উঠলো।
রুদ্রঃ আজ আমি ভাইয়ার পক্ষ থেকে সবাইকে মিষ্টি খাওয়াবো।
ডাক্তারঃ না রুদ্র আমরা এই মিষ্টি খাবো না।
রুদ্রঃ কেনো??
ডাক্তারঃ আমরা খুব জলদি আঙ্কেল ডাক শুনতে চাই। ওই দিন শুধু মিষ্টি নয়, ওই দিন পেট ভরে তোমার বাসায় গিয়ে ছোট ভাইয়ের বউয়ের হাতে রান্না খেয়ে আসবো।
রুদ্র ডাক্তারের কথা শুনে মনে মনে বললো,’ সেই দিন আর মনে হয় বেঁচে থাকতে দেখবেন না ভাই…
রুদ্র ডাক্তারের ক্যাবিন থেকে বের হতেই শায়েলা বেগম চিন্তিত হয়ে ছেলের সামনে গিয়ে বললেন,’ ডাক্তার কি বললো রে রুদ্র?? বউ মা ঠিক আছে তো?? বড় ধরনের কিছু হয়নি তো??
রুদ্রঃ আস্তে আম্মু এত টেনশনের কিছু নেই। শুনো এখন আমি যেটা বলবো একদম মন দিয়ে শুনবে। লাফালাফি করবে না।
শায়েলা বেগম মনে আবার ভয় ঢুকে গেলো। উনি শুভ্রতাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসেন।
শায়েলা বেগমঃ কি হয়েছে রে রুদ্র আমাদের শুভ্রতার??
রুদ্রঃ আম্মু আমাদের পরিবারের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে। নতুন অতিথি আসছে। আমি চাচ্চু হতে যাচ্ছি।
শায়েলা বেগম খুবই বুদ্ধিমতী মহিলা রুদ্রের প্রথম কথাতেই তিনি বুঝে ফেলেছেন। খুশিতে বউয়ের কেবিনের দিকে দৌড়ে গেলেন।
শাশুড়ী কে এভাবে আসতে দেখে শুভ্রতা ঘাবড়ে গেলো।
শায়েলা বেগম খুশিতে কথা বলতে ভুলে গেছেন। কি বলবে না বলবে কথা সব পেচিয়ে যাচ্ছে। চৌধুরী বাড়ির প্রথম সন্তান আসতে যাচ্ছে এত খুলে রাখবে কোথায়।
রুদ্র জিসান কে কল দিয়ে বললো তারাতাড়ি বাসায় চলে আসতে।
শুভ্রতা খুশিতে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে। এটা যে অধিক পরিমাণে খুশির ঠেলায় কান্না আসছে।বিয়ের তিন বছর পর অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে।
ইতি মধ্যে বাড়ির সবাই জেনে গেছে এই খুশির খবর।
কিন্তু এখনো জিসান যানে না।
জিসান বাসায় এসে দেখে সবার চোখে মুখে খুশির জলক। কাউকে কিছু না বলে মায়ের সামনে গিয়ে বললো,’ আম্মু সবাই জানুক বা না জানুক তুমি তো জানো অফিসে আমার থাকাটা কতটা জরুরি। এত বার কল দিয়ে পাগল বানিয়ে বাসায় আনার কি প্রয়োজন।
জিসান বাসায় এসেছে শুনে শুভ্রতার লজ্জা, লজ্জা লাগছে তাও রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়িতে এসে দাঁড়িয়ে ছিলো। স্বামীর মুখে এমন বিরক্তি প্রকাশ পেয়ে আবার রুমে চলে গেলো। এই লোক কাজ ছাড়া চোখে কিছুই দেখে না। এই লোকের বিয়ে কাজের সাথে হওয়া দরকার ছিলো মানুষের সাথে না!!
শায়েলা বেগমঃ এক থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো। এত কাজ! কাজ করতে কে বলেছে?? আজ থেকে তোর কাজে যাওয়া বন্ধ। আমাকে কাজ দেখাস তুই। শুধু কাজ নিয়ে পড়ে থাকলেই চলে না বউ বাচ্চার দিকেও নজর দিতে হয়।
জিসান অবাক হয়ে বললো,’ বাচ্চা কোথায় পেলে আম্মা। দিন দিন তোমার দেখি সৃতি শক্তি কমে যাচ্ছে।
শায়েলা বেগমঃ সারাদিন রাত বাহিরে থাকলে এমনটাই মনে হবে। ঘরের খবর রাখিস তুই? আমাদের কথা বাধ দিলাম নিজের বউটার খবর তো রাখবি।
জিসানঃ কি হয়েছে আম্মা সেটা বলো??
শায়েলা বেগম কিছু বলতে গিয়েও বললো না।
শায়েলা বেগমঃ ঘরে যা।
জিসান ওর আম্মুর এমন পাগলামি তে খুবই বিরক্ত হলো। এটা কোনো কথা কাজ থেকে এনে বলবে ঘরে যা।
শায়েলা বেগম ইচ্ছে করেই বললেন না। মায়ের মুখে শুনার থেকে নিজের বউয়ের মুখে শুনার আনন্দই অন্যরকম।
নূর মিষ্টি খেতে খেতে নিজের রুমের দিকে গেলো।
ফ্রেশ হয়ে এসে মাহি কে কল দিলো। এত বড় খুশির খবর অথচ তার বোনটা এখনো জানে না।
জিসান রুমে গিয়ে দেখলো শুভ্রতা ব্যালকনিতে। কিছু না বলে ফ্রেশ হয়ে এসে খাটে বসলো।
শুভ্রতা রুমে আসতেই ওকে কফি আনতে বললো।
শুভ্রতা চুপচাপ নিচে নামতেই শায়েলা বেগম যা বুঝার বুঝে গেলো। এই বেআক্কেল ছেলে উনার গর্ভে কিভাবে হলো??
শুভ্রতা কফি নিয়ে জিসানকে দিলো।
জিসানঃ আচ্ছা বাড়িতে কি আজকে কোনো কিছু হয়েছে??
শুভ্রতা রাগে চোখ মুখ লাল করে একটা কাগজ জিসানের হাতে ধরিয়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
জিসান শুভ্রতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আজ সবাই ওকে এভাবে রাগ দেখাচ্ছে কেনো। কাগজের বাজ খুলে দেখলো হসপিটালের রিপোর্ট।
জিসান থম মেরে বসে আছে। মানুষ বলে অধিক দুঃখে নাকি মানুষ পাথর হয়ে যায়। আর এদিকে জিসান অধিক সুখে, আনন্দে পাথর হয়ে বসে আছে।
***************
নূর রেলিং এ পা ঝুলিয়ে বসে আছে৷ আকাশের দিকে তাকিয়ে সারাদিনের কথা ভাবছে। আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ মনে হলো একটা বাচ্চার মুখ বেসে উঠছে চাঁদয়ের সামনে। এমনিতেই নূরের বাচ্চা খুব পছন্দ।
ওর মনে হলো এমন একটা ফুটফুটে শিশু ওর ও চাই। শুভ্রতা ভাবির কোল জুড়ে ফুটফুটে বাচ্চা আসবে।ওর একটা মেয়ে বাবু থাকলে অনেক আদর করতো, ভালো বাসতো,যত্ন করে আগলে রাখতো।
পিছন থেকে রুদ্র বললো,’ রেলিং এর উপর কেনো?? নিচে নামো।
নূর শুনলো রুদ্রের কথা। নেমে গেলো।
নূর কিছু সময়ের জন্য ভুলে গেলো কালকে রাতের সেই অপ্রত্যাশিত কাহিনি।
নূরঃ কয়টা বাজে??
রুদ্রঃ ১২:৫০
নূরঃ আজ এত দেরি কেনো??
রুদ্রঃ আজ দুইটা অপারেশন ছিলো রাতে তাই। তুমি রাত বেরাতে ছাঁদে কি করো??
নূরঃ বাসায় তো আপু নেই তাই ছাঁদে সময় কাটাতে চলে আসলাম।
রুদ্রঃপড়াশোনা কি ছেড়ে দিয়েছো??
নূর কিছু বললো না। কথা বললেই কথা বাড়ে।
রুদ্র আবার বললো,’ কি হলো চুপ কেনো??
নূরঃ শুভ্রতা ভাবি প্রেগন্যান্ট!..
রুদ্রঃ তাতে সমস্যা কি..বিয়ে যেহেতু হয়েছে প্রেগন্যান্ট হওয়াটা স্বাভাবিক না..
নূরঃ হুহ্! আমারও বাচ্চা খুব ভালো লাগে।
রুদ্রঃ তাই??
নূরঃ হুম।
রুদ্রঃ কাল রাতে কোথায় ছিলে??
কাল রাতের কথা মনে হতেই লজ্জা ঘিরে ধরলো নূরকে। ছি কিভাবে এমন কাজ করতে পারলো সে।
নূর কিছু না বলে চলে যেতে নিলে রুদ্র হাত আঁকড়ে ধরে নূরের।
রুদ্রঃ আর কিছু সময় থাকো।
নূর এবারও শুনলো রুদ্রের কথা।
রুদ্র আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,’ নূর!!’
নূর রুদ্রের শান্ত কন্ঠে ডাক শুনে রুদ্রের দিকে তাকালো।
রুদ্রঃ তুমি চাইলে আমাদের ও একটা মিষ্টি বাবু তোমার কোলে আসতে পারে। অতীত ভুলে যাও। অতীত মনে রাখতে নেই।যে দিন অতীত ভুলে আমার কাছে আসবে শীতের রাতের চাদরের মতো করে জড়িয়ে নিবো যত্ন করে। আমি অপেক্ষায় থাকবো তুমি আমার কাছে নিজ ইচ্ছায় আসার।
অতীতের কথা বলতেই নূরের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো। তারমানে রুদ্র সব জানে!..
ঠোঁটের কোনে হাসি ঝুলিয়ে নূর বলে উঠলো, ‘ আমি সব ভুলে গেছি। ওটা অতীত নয় ওটা ছিলো এক কালবৈশাখী ঝড় হঠাৎ আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে গেলো আবার হঠাৎ আমাকে ছেড়ে অন্য কারো জীবনে জড়িয়ে গেছে।’
সামনের বাসার ছাঁদের আলোই নূরের মুখটা স্পষ্ট হয়ে আছে।
রুদ্র নূরের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,’তুমি জানো এই চোখের চিকচিক করা জল আর ঠোঁটের কোনে হাসি তোমাকে মারাত্মক মায়াবিনী লাগে। আমার দেখা সৃষ্ট সুন্দরী।’
নূর মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে তার সামনে মানুষটির দিকে, তার বরের দিকে। হা সামনের মানুষটি শুধু তার অন্য কারো কোনো অধিকার নেই। শুধু ওর অধিকার এই মানুষটির উপর।
*********
মাহি রুমে আসতেই ফায়াজ সামনে রাস্তা আগলে দাঁড়ালো।
মাহি নিচের দিকে তাকিয়ে বললো,’ সরে দাঁড়ান। ‘
ফায়াজঃ কাল থেকে আমাকে ইগনোর কেনো করছো??
মাহিঃ আজব তো!! আমি কেনো আপনাকে ইগনোর করবো??
ফায়াজঃ তাহলে কি করছো?? সামনে পড়লে এরিয়ে যাচ্ছো। ঠিক মতো কথা বলছো না। তোমার এই নিরবতা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে মাহি সেটা কি তুমি বুঝো..?
মাহি কিছু বলছে না। আসলে সে এমন কেনো করছে?? কাল রাতে ফায়াজ কোনো মেয়ের সাথে কথা বলেছে মনে হওয়ার পর থেকে সব কিছু এত বিরক্ত লাগছে কেনো?? এটা কেই মনে হয় স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক বলে। নারী সব কিছু সয্য করবে কিন্তু স্বামী কোনো নারীর আশেপাশে গেলেও সয্য করতে পারবে না।
ফায়াজঃ কি হলো বলো?? মাহি সব কিছু ভুলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায় না? জানি তুমি আমাকে মন থেকে বা ইচ্ছে করে বিয়ে করনি। কিন্তু এখন আমরা এমন একটা বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেছি চাইলেও বের হতে পারবো না। সব কিছু মেনে নেওয়ার চেষ্টা করো।
মাহি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফায়াজের দিকে খুব ইচ্ছে হলো বলতে,’ আপনি আগলে নিন না আমাকে। এত এত এত ভালোবাসা দিন যেনো আমি সব ভুলে যাই। সারাক্ষণ যেনো আপনার নামটাই মাথায় ঘুরে। এখন আমার আপনার ভালোবাসা খুব বেশি প্রয়োজন।ভালোবাসবেন আমায়? একটু ভালোবেসে আগলে নিন না। একটু জায়গা দিন না আপনার বুকে। কিন্তু না মনের কথা মনেই রয়ে গেলো মুখে আর বলা হলো না।
ফায়াজ মাহির মুখের উপর থেকে যত্ন করে চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে দিলো। ফিসফিস করে বললো, ‘ অন্য কাউকে ভুলতে নয়। যে দিন এই আমি টাকে মন থেকে ভালোবাসবে ওই দিন আগলে নিবো যত্ন করে নিজের বাহুডোরে। মাহি ভালো অনেক কেই লাগতে পারে কিন্তু ভালো একজন কেই বাসা যায়। আমি চাই সেই একজন টা আমি হতে।
*******
আবির মেয়েদের মতো গাল ফুলিয়ে বসে আছে।
আদিবাঃ কি হয়েছে আপনার??
আবিরঃ জিসান ভাই বাবা হয়ে যাচ্ছে।
আদিবাঃ তো?
আবিরঃ আমি এখনো হতে পারলাম না।
আদিবা বেআক্কেল এর মতো তাকিয়ে আছে। বিয়ে হয়েছে ১৫দিন হলো। আর এই লোক বাবা হওয়ার স্বপ্ন দেখছে পরক্ষনে লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে উঠলো। যেখানে আজও ওদের মধ্যে কিছুই হয়নি সেখানে বাবা হওয়ার কথা আসে কোথায় থেকে।
আবিরঃ লজ্জা পেলে হবে না। আমিও বাবা হতে চাই??
আদিবা এক পা এক পা করে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো শাশুড়ীর রুমে।
আদিবার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবির হেসে উঠলো। আদিবার মুখের রিয়াকশন দেখে খুব মজা পেয়েছে। বেচারি লজ্জায় একদম টমেটোর মতো টকটকে লাল হয়ে গেছে।
*******
রুহি মোবাইল হাতে রেগে চিৎকার করে বলে উঠলো,’ নিজেকে কি ভাবো তুমি?? কোথায় আছো??
আদিঃ আজ থেকে ২মাস পর ডিভোর্স পেপার পেয়ে যাবে। বলেই খট করে কল রেখে দিলো।
রুহি বার বার কল দেওয়া শুরু করলো কিন্তু সিম বন্ধ।
নিচে হাঁটু গেড়ে বসে কান্নায় ভেঙে পড়লো। জীবন এত নিষ্ঠুর কেনো?? এমন কঠিন খেলা ওর সাথে কেনো খেলছে?? কোথায় পাবে এত এত প্রশ্নের উত্তর??
চলবে….
#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_৩৬
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
সময় আর স্রোত কারো জন্য থেমে থাকে না।
আজ একমাস হলো আদি না কারো কাছে ফোন দিয়েছে আর না বাড়িতে এসেছে।
রুহিকে দেখলে এখন কেউ ভালো করে চিনবে না। কেমন যেনো নিশ্চুপ হয়ে গেছে। দরকার না পরলে বাড়তি একটা কথাও বলে না চোখের নিচে কালো কালি পরে গেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে বাসার কাজে হাত লাগায় যতটুকু পারে করার চেষ্টা করে। আবার কলেজ যাওয়া শুরু করেছে। পড়াশোনা ছাড়া সামনে ওর ভবিষ্যত অন্ধকার সে দেখতে পাচ্ছে। শুধু নূরের সাথে সম্পর্ক এখনো ঠিক হয়নি। সে এখনো নূরকে একটু ও সয্য করতে পারে না। তবে সেটা বুঝতে দেয় না কাউকে নিজের মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখে নিজের রাগ,আর নূরের প্রতি এক আকাশ সমান ঘৃণা। আজ ওর জীবনের এই পরিনতির জন্য সে নূর কে দায়ী করছে।
নীল বাসায় এসেই ওর মেঝো মামীর সাথে দেখা করে। উপরে নূরের রুমের দিকে গেলো বাইকের চাবি ঘোরাতে ঘোরাতে সিঁড়ি দিয়ে উঠে নূরের রুমের সামনে গিয়ে দরজায় টুকা দিলো।
নূর দরজার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললো,’ বা বাহ্ অনেক ভদ্র হয়ে গেছিস দেখছি। বড় ভাইয়ের বউ মানে ভাবির দরজায় যে নক করে ঢুকতে হয় এত দিনে এসে শিখলি। যাক তোর পড়াশোনা এত দিনে সার্থক হলো।
নীল রুমে ঢুকেই মুখ ভেংচি কেটে বললো,’দেখ তোকে আমি জীবনও ভাবি বলতে পারবো না৷ আর রইলো ভাবি বলে নক করা একদমি না। আমি তো নক করেছি ছোটো বোনের রোমাঞ্চ তো আর বড় ভাই হয়ে সব সময় দেখতে পারি না। তোরা যেই ভাবে যেখানে সেখানে রোমাঞ্চ শুরু করছোস তোদের না হয় লজ্জা নেই কিন্তু আমার তো লজ্জা প্রচুর তাই নক করে ঢুকলাম।
নূরঃ নীলের বাচ্চা আমার সামনে থেকে সর। আর আমাকে সম্মান দিয়ে কথা বলবি। আপনি করে বলবি, ভাবি বলে ডাকবি…লজ্জাবতী গাছ হতে আসছে ইসস দরলেই যেনো লজ্জায় মিয়িয়ে যাচ্ছে।
নীলঃ ইসস্ রে তোরে দেখলে পুরাই শাঁকচুন্নিদের মতো লাগে। আর যাই বলিস ভাবি এত সুন্দর ডাকটা তোর সাথে যায় না। আর আমি এখনো বিয়ে করি নাই বাচ্চা পাইলি কই??
নূরঃ তোর থেকে সুন্দর আছি…
নীলঃ হিহিহি তাই তো। আয়নার মধ্যে দেখ।
নূর সত্যি সত্যি আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা শুরু করলো।
নূরের অবস্থা দেখে নীল হাসতে হাসতে পেটে হাত দিয়ে গিয়ে খাটের মধ্যে বসলো।
নূরঃ ব*দ*মা*শ ছেলে।
নীলঃ আচ্ছা সব বাদ এখানে আয় তোর জন্য গিফট নিয়ে এসেছি।
নূর ভ্রু কুঁচকে তাকালো। যে ছেলের কাছ থেকে এক কানাকড়ি ও নেওয়া যায় না। সে না-কি ওর জন্য গিফট এনেছে ভাবা যায়।
নীলঃ কি হলো আয়।
নূর সামনে গিয়ে খুশিতে আগের ঝগড়াঝাটি ভুলে হাত বাড়িয়ে দিলো।
নীল ওর হাতে মধ্যে টিকটিকি ছেড়ে দিলো।
নূরের চিৎকারে বাসার সবাই ওর দরজার সামনে।
নূর হাত জারছে আর এখান থেকে লাফ দিয়ে ওখানে যাচ্ছে আর চিৎকার করে বলছে এটা সরানোর জন্য।
নূরের অবস্থা দেখে নীল হাসতে হাসতে খাটে ঘরাঘরি খাচ্ছে।
টিকটিকি দেখে ভয়ে আদিবা সামনে এগুচ্ছে না। তবে নীলকে বলছে এটা ওর কাছ থেকে সরানোর জন্য। বাসার বাকি সবাই রাবেয়া আন্টির বাসায় গেছে। রুহি নিজেও টিকটিকি আরশোলা দেখলে ভয় পায়।
নীল উঠে এসে ওর সামনে থেকে টিকটিকি হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো।
নীলঃ আরে থাম এটা রবার্টের টিকটিকি।
তবুও নূর ভয়ে বললো,’ নীল ভাই আমার, দেবর আমার এটা বাহিরে ফেলেদে প্লিজ।
নীল নূরের দিকে তাকিয়ে বাহিরে ছুড়ে ফেললো টিকটিকি। আর দরজায় যেহেতু আদিবা আর রুহি ছিলো৷
টিকটিকি গিয়ে পরলো রুহির চুলের উপর। বেচারি ভয়ে একদফা নাগিন ডান্স দেওয়া শেষ।
নিজের বোনের এমন ডান্স দেখে নীল তো হাসতে হাসতে আজ ওর অবস্থা খারাপ।
রুহির কাহিনি দেখে নূর আর আদিবা ও হেসে দিলো।
রুহি সবার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিচে চলে গেলো৷ সবাই একটু অবাক হলো রুহির আচরণে। রুহি তো এতক্ষনে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলার কথা সে-ই মেয়ে কি না। কিছু না বলে এভাবে চলে গেলো।
আদিবা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
নূর রাগী লুকে ওর দিকে তাকালো।
নীলঃ ওফ্ফ এভাবে তাকাইস না নূর একদম ডাইনী পিশাচিনীদের মতো লাগে। আমার মতো একটা ভদ্র ছেলেকে ভয় দেখাতে তোর খারাপ লাগছে না।
নূরঃ তোকে এখন ঘার মটকাতে পারলে আমি শান্তি পেতাম। কেনো আসছোস সেটা বল??
নীলঃ ওহ এখন তো এখানে আসতে হলে আপনার অনুমতি নিয়ে আসতে হবে মেডাম। বাড়ির ছোট বউয়ের কথায় তো চলতে হবে।
নূরঃ ডং বন্ধ করে সত্যি করে বল উদ্দেশ্য কি??
নীলঃ ছি! নূর ভাই বোনের কাছে আসবে আবার উদ্দেশ্য কি! বুকে হাত দিয়ে বললো কষ্ট পেলাম..
নূর বিরবির করে বললো, ‘ নাটক বাজ একটা। জীবনেও কোনো উদ্দেশ্য ছাড়া আমার কাছে আসবে না। আজ আসছে ভাই গিরি দেখাতে।
নীলঃ বিরবির না করে শুনিয়ে শুনিয়ে বললেই তো হয়।
নূরঃ দেখা শেষ। বোনকে দেখতে আসছিস দেখা শেষ। এবার বের হ..
নীলঃ তুই আমাকে অফমান্স করলি??
নূরঃ এটা অপমান হবে। আচ্ছা ভালো করছিস আসছোস। তোর বাইক আনছিস??
নীলঃ হুম কেনো??
নূরঃ চাবিটা দেখি তো কেমন??
নীলঃ চাবি দেখার কি আছে?
নূরঃ আরে আমার চাবিটার মতো কিনা দেখি..
নীল চাবি সামনে ধরতেই নূর চাবিটা হাতে নিয়ে বললো,’ তুই আমার রুম পাহাড়া দে। আমি আসছি..
নীলঃ আগে আমার চাবি দে..
নূরঃ দেখ আমার এখন তোর বাইকটা লাগবে।
নীলঃ দেখ নূর একদম পাগলামো করবি না৷ তোর ভয়ে আমি বাইক আনি না এই বাসায়। চাবি দে?
নূরঃ আমার এখন দরকার তো..
নীলঃ কি করবি??
নূরঃ ইরিনের বাসায় যাবো।
ইরিনের কথা শুনে নীল চুপ হয়ে গেলো৷ ওতো ইরিনের খবর নেওয়ার জন্যই এখানে এসেছে কিন্তু আসল কথাটাই ভুলে গেলো। এই বেয়াদব মেয়ের কাছে আসলে ভালো মানুষ ও পাগল হয়ে পাবনায় যেতে হবে। আজ একমাস ইরিনের দেখা নেই। মাঝ রাতে কল দিলেও মোবাইল বন্ধ দেখাচ্ছে।
নীলঃ এখন হরিণের বাসায় কেনো??
নূরঃ সেটা যেনে তোর কাজ কি??
নীলঃ তুই কি সোজাসুজি জবাব দিতে পারোস না।
নূরঃ দেখ আমার এখন যাওয়াটা জরুরি।
নীলঃ আমাকে বলা জায় না? আর ওই হরিণ কে এই কয়দিন দেখলাম না যে? কই থাকে? ফোন দিলেও ধরছে না!
নূর গোলগোল আঁখিদুটি নীলের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ তাহলে তুই সেই বেয়াদব ব*দ*মাস আগুন্তকঃ??….
নীল আমতাআমতা করে বললো,’ কিসের আগুন্তকঃ? আর কেনো যাইবি সেটা বল? হরিণের কি কিছু হয়েছে??
নূরঃ আচ্ছা এখন না হয় বাদ দিলাম ওদের বাসা থেকে এসে সব বের করতেছি! আর হয়েছে তো অনেক কিছুই..
নীলঃ দেখ নূর বোন আমার কি হইছে বল??
নূরঃ তাহলে তুই আমার সাথে চল। যেতে যেতে বলছি রাত হয়ে গেছে একা যাওয়া ঠিক হবে না তাই।
নীলঃ ঠিক আছে কিন্তু যদি ওর আম্মু কিছু মনে করে এত রাতে একটা ছেলে আরেকটা মেয়েকে দেখে।
নূরঃ আন্টি আমাকে চিনে। আর ভয় নেই তোকে তো বাসায় নিবো না।
নীল অবাক হয়ে বললো,’ তাহলে আমি কোথায় থাকবো??..
নূরঃ রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাইক পাহাড়া দিবি।
নীলঃ বাইক পাহাড়া দেওয়ার কি আছে? আর আমিও তোর সাথে বাসায় যাবো। তুই না নিলে আমি নিজেই এখন এখান থেকে একদম হরিণের বাসায় যেতাম।
নূরঃ কী!!!?
নীলঃ হা করে না থেকে চল।
নূর নীলের সাথে বের হওয়াই কেউ কিছু বললো না।
নীলঃ নূর আস্তে চালা না। এত জোরে এক্সিডেন্ট করবি তো।
নূরঃ চুপ করে আমাকে ধরে বসে থাক। আজ বিয়ের মিষ্টি খেতে যাচ্ছি।
নীল কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না থমকে গেলো বিয়ের মিষ্টি মানে? কার বিয়ে হরিণের?? নীলের মনে হলো শ্বাস আটকে আসছে, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। বুকের ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছে। এই কয়দিন পাগল পাগল লেগেছে নিজেকে নিজের। নীল আর কিছু বললো না শুধু সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো।
*********
মাহি শাশুড়ীর রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে আসলো। আজ সারা দিন অনেক জায়গায় ঘুরতে গেছে। আজ ফায়াজের কলেজ বন্ধ ছিলো তাই সারা বিকেল দুই জন রিক্সায় করে অনেক জায়গায় ঘুরে এসেছে। বিয়ের পর আজ প্রথম নয় ধরতে গেলে প্রতি রাতেই ওরা বের হয়। পাশাপাশি হাঁটা হয় শুধু হাতে হাত রাখা হয় না। মাহির রাতে নির্জন রাস্তায় হাঁটতে ভালোবাসে। ফায়াজ এটা শুনার পর থেকেই প্রতি রাতে মাহিকে নিয়ে নির্জন শহরটা ঘুরে বেড়ায়। চোখে চোখ রাখা হয় না, হাতে হাত রাখা হয় না। কিন্তু এক জন আরেক জনের নীরবে ভালোলাগা ভালোবাসা অনুভব করতে পারে।
রুমে এসে দেখে ফায়াজ কথা বলছে। মাহি কে দেখে বললো,’ আচ্ছা রুদ্র রাখি এখন পরে আবার কথা হবে ইনশাআল্লাহ।’
ফায়াজঃ পড়াশোনার কথা কি ভাবলে??
মাহিঃ আর কি ভাবার আছে??
ফায়াজঃ আর করবে না??
মাহিঃ না..
ফায়াজঃ কেনো??
মাহিঃ এমনি..
ফায়াজঃ পড়াশোনা ছাড়া যাবে না। কাল থেকে আবার ভার্সিটিতে যাওয়া শুরু করবে।
মাহি কিছু না বলে বালিশ ঠিক করে শুয়ে পরলো।
ফায়াজঃ এত তারাতারি ঘুমিয়ে যাবে??
মাহি রাগী লুকে ফায়াজের দিকে তাকালো।
ফায়াজঃ এভাবে এই লুকে আমার দিকে তাকিও না। তোমাকে এই রাগী লুক এ হ্যাব্বি কিউট লাগে। তুমি যখন মন খারাপ করে বা রাগ করে তাকাও তখন তোমাকে কতটা মায়াবী লাগে আমি বলে বুঝাতে পারবো না। কখন না জানি কনট্রোল হারিয়ে ফেলি। কখনো মনে হয় ভুল করে কিছু করে ফেলি পরে না হয় সরি বলে ক্ষমা চেয়ে নিবো। কিন্তু পরক্ষনে মনে হয় আমি তোমার মনে আগে আমার নামটা লিখে নিতে চাই৷ অন্য কারো জায়গাটা আমি চাই না নিজে আলাদা জায়গা করে নিতে চাই। যেখানে শুধু আমার রাজত্ব থাকতে অন্য কারো ছিটেফোঁটা ও না।
মাহি আবারও ফায়াজের প্রতিটি কথায় ভালোবাসা খুঁজে পেলো মুগ্ধ হলো। চোখের চাহনির মায়ার মধ্যে আটকে গেলো। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ফায়াজের দিকে।
মাহি শুয়া থেকে উঠে ফায়াজকে ফিসফিস করে বললো,’ আমি কি আপনাকে গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরতে পারি…?
ফায়াজের মনে হলো সে যেনো কানে ভুল শুনলো।
মুখে কিছু না বলে নিজেই মাহিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
রুদ্র বাসায় আজ তারাতাড়ি চলে আসলো।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হলো নূরকে খোজার উদ্দেশ্যে।কিন্তু ড্রয়িং রুম, রান্না ঘর, মায়ের রুমে কোথাও নূরকে না পেয়ে। মিম কে ডাকলো।
মিম বললো আপু নীল ভাইয়ার সাথে কোথায় যেনো গেছে।
রুদ্র রুমে বসে আছে আর টেনশন করছে নূর এত রাতে কোথায় গেলো??
রুদ্রের ভাবনার মাঝেই রুমে ফোন বেজে উঠলো।
নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর ফোন ওর হাতে তাহলে রুমে আর কার ফোন৷
টেবিলে বইয়ের উপর নূরের ফোন দেখে বুঝলো ফোন ছাড়াই চলে গেছে।
ফোন ধরবে কি ধরবে না ভাবতে ভাবতে রিসিভ করে কানে ধরলো।
নিজে কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে কেউ কিছু বলে উঠলো।
সাথে সাথে রুদ্র হাত মুষ্টি বদ্ধ করে চোখ বন্ধ করে নিলো।
চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।