এই অবেলায় তুমি পর্ব-৪১ এবং শেষ পর্ব

0
634

#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_৪১(শেষ পার্ট)
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

দে দে ইরিন ক্যামেরাটা আমার হাতে দে….

সবাই চমকে পিছন ফিরে তাকালো।

দোতলায় নূর আর ইরিন ক্যামেরা নিয়ে কেচ খেলছে।

ইরিনঃ ধরতে পারলে নিয়ে নে।
নূরঃ ভালো হচ্ছে না কিন্তু ইরিন।

আদিবার মামা ভয়ে কুঁকড়ে উঠলো। এই মেয়ে দুটোর হাতে ক্যামেরা কেনো??ওরা কি সব রেকর্ড বা ভিডিও করেছে?? ভাবতেই বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝরছে।

নূর ইরিন পিছে দৌড়ে উনাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,’ আরে মাহিন ভাইয়া আপনি।’

ইরিন নূরকে বললো,’ মাহিন ভাইয়া!! তুই চিনিস এই লোক কে??’

নূর উপর নিচ মাথা দুলালো।

ইরিনঃকিভাবে?

নূরঃ বাসায় গিয়ে বলবো।

মামাঃ এই মেয়ে তোমরা কে? এখানে কি করো?? আর আমার ছেলেকে চিনো কিভাবে??

নূরঃ আসতে আঙ্কেল না হলে পেসার বেড়ে যাবে। তাহলে আপনার সম্পত্তির কি হবে..?

মামা ধমে গেলেন। আসলেই উনার পেসায় অল্পতেই বেড়ে যায়।

নূর সেই দিকে তাকিয়ে একটা কুটিল হাসি দিয়ে এগিয়ে গেলো আদিবার দিকে। আদিবার চোখে বিস্ময় নূর আর ইরিন এখানে কিভাবে??

নূর এগিয়ে গিয়ে রাগে কিরকির করে বললো,’ মাহিন ভাই এই জা*নো*য়ার টা আপনার বাবা ছি! ভাবতেই ঘৃনা হচ্ছে।

মাহিন নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

মামাঃ এই মেয়ে মুখ সামলে কথা বল! আমি কে জানিস? আমার রাজত্বে এসে আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলছো। তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি। আদিবার দিকে তাকিয়ে রেগে বললো তোকে বলেছিলাম না একা আসতে আর কেউ যেনো না জানে। এবার সব গুলা মরবি আমার হাতে বলে ঘর কাঁপিয়ে হাতসে শুরু করলো।

নূর এদিক ওদিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আপনার রাজত্ব দেখি আপনার মতো..?’

হাসি থামিয়ে নূরের দিকে তাকালো। এই মেয়ে উনাকে শুষ্ক ভাবে অপমান করলো! খুবই চালু মেয়েটা।

মাহিন এতক্ষন চুপচাপ তাকিয়ে ছিলো আদিবার দিকে। আসতে করে হাতে বাঁধা রশিটা খুলতে গেলে ওর কু*লাঙ্গা*র বাপ পিস্তল তাক করে ইরিনের মাথায়।

আদিবা ওর মামার সামনে কেঁদে বলে উঠলো, ‘ বিশ্বাস করো মামা আমি কাউকে কিছু বলিনি। ওরা জানলো কিভাবে আমি জানি না৷ প্লিজ ইরিনের কিছু করো না। দরকার হলে আমাকে মেরে ফেলো।

মাহিন শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে আদিবার দিকে। মেয়েটাকে যত দেখে ততই মুগ্ধ হয়।

মামাঃ হাহাহা তোর কি মনে হয় আমি দুধের বাচ্চা তুই বলবি আমি বিশ্বাস করে নিবো।তুই না বললে ওরা জানলো কিভাবে?? আর তোকে মারলে তো আমার সব শেষ। তোকে মারা জাবে না। এক এক করে এই দুইজনের মাথা উড়িয়ে দিবো। তারাতারি সাইন কর তাহলে ছেড়ে দিবো।
আদিবা আবারো কলম হাতে নিতেই নূর বলে উঠলো,’ ভাবি কলটা জায়গায় রাখো। আর আমরা কিভাবে জানলাম? ওকে বলছি। বলেই মোবাইল বের করে দেখালো আদিবার মোবাইলের সাথে নূরের মোবাইল কানেক্টেড করা।
ভাবি কে আমি কয়দিন ধরে সারাক্ষণ কিছু নিয়ে চিন্তিত দেখছি। আর একদিন উনার রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় শুনতে পাই কার সাথে যেনো মোবারক বলছে, ” প্লিজ উনার কিছু করবেন না। আমি আসবো, আপনারা যেখানে বলেন আমি সেখানেই যাবো। উনার কোনো ক্ষতি করবেন না আমি কাউকে কিছু বলবো না। ” ফোন রেখে ভাবি কান্নায় ভেঙে পরে। আমি বুঝতে পারি ভাবি কে কেউ ব্লেকমেইল করছে। তাই সুযোগ বুঝে ভাবির মোবাইলের সাথে আমার মোবাইল কানেক্টেড করে দেই।’

মামাঃ তারপর হিরোইন সেজে চলে আসলে আমার আস্তানায় কিন্তু এটা তো কোনো ফিল্ম নয় যে হিরো এসে তোমাদের বাচিয়ে নিবে। এখন তোমাদের বাঁচাবে কে??
নূর বাঁকা হেঁসে তাকিয়ে আছে দরজার দিকে।
দরজার মধ্যে কেউ বললো,’ ওদের বাঁচাতে কেউ আসবে না। তবে আপনাকে শশুর বাড়ি নিয়ে যেতে আমি চলে এসেছি মামা শশুর।
কন্ঠটা শুনেই মামার শরীর দিয়ে গরম ধুঁয়া বের হয়ে গেলো। খুব ভালো ভাবে ফেঁসেছেন উনি। অন্য দিকে ভয়ে দৌড় দিতে নিলে মাহিন নিজের বাবার কলার চেপে ধরে। এমন বাবা থাকার চেয়ে মরে যাওয়া খুব ভালো। এরা বেঁচে থাকা মানে সমাজ নষ্ট হওয়া।

সব সমস্যা সমাধান করে মামাকে ধরে নিয়ে যায় আবির। মাহিন সবার সাথে কিছু কথা বলে নিজের মতো চলে জায়। ওর কেউ নেই আর না কেউ ছিলো। বুঝ হওয়ার পর থেকে এটাই মনে করে সে।

এই ঘটনার পর অনেকদিন কেটে যায়। মামার সারাজীবনের কারাদণ্ড হয়।
আদিবা আগের মতো হতে চেয়েও হতে পারে না। নিজের মা বাবার খুনির সাথে এত বছর থেকেছে একি বাড়িতে। সেটা ভাবলেই নিজের প্রতি নিজের রাগ হয়। তবে আবির চেষ্টা করে আদিবাকে আগের মতো সহজ করে তুলতে।

রাতে ইরিন বসে আছে নূরদের বাসার ছাঁদে।
নূর ছাঁদে উঠে ইরিন কে দেখে জিজ্ঞেস করলো, ‘ কিরে তুই হঠাৎ আমাদের বাসায় এই রাতে..?
ইরিনঃ হুম।
নূরঃ কি হুম। নিচে চল।
ইরিনঃ তোর সাথে কিছু কথা ছিলো।
নূরঃ হুম বলিস.. এখন আগে খেয়ে নে।
ইরিনঃ না আগে কথাটা বলে নেই।
নূর ইরিনের পাশে বসে বললো,’ হুম বল??..
ইরিনঃ আমার আর নীলের বিয়েটা তুই ইচ্ছে করে দিয়েছিস। আর ওই ছেলের সাথে তুই বিয়েটা ভেঙে ছিলি তাই না.??
নূরঃ এতদিন পরে এই কথা উঠছে কেনো??
ইরিনঃ একদিন তো উঠারি ছিলো তাই না?
নূরঃ আমার মনে হয় এটা আরো আগে উঠার দরকার ছিলো। কিন্তু এখন এতদিন পর কেনো??
ইরিনঃ নূর এত পেচ ভালো লাগছে না। সত্যি কথাটা আমার কাছে অন্তত বল..
নূরঃ আচ্ছা আগে বল এটা এতদিন পর জিজ্ঞেস করলি কেনো??
ইরিনঃ আজ ওই ছেলের সাথে আমার শপিং মলে দেখা হয়েছে। নতুন বউ নিয়ে এসেছিলো। আমাকে দেখে হাসি মুখে বললো,’ আরে আপনি স্বামী নিয়ে এসেছেন বুঝি?।
নূরঃ তুই কি বললি??
ইরিনঃ আমার তো ওই ছেলেকে দেখেই রাগ উঠে গেলো। তাই কিছু না বলে চলে এসেছি।
নূরঃ ওহহ।
ইরিনঃ নূর আমার মনে অনেক প্রশ্ন। আমি করার আগেই তুই বলে দে না?..
নূরঃ আচ্ছা শুন, তোর বিয়ের আগের দিন সকালে আমি তোর কাছ থেকে ছেলের নাম্বার নিয়ে ছিলাম মনে আছে তোর?..
ইরিনঃ হুম।
নূরঃ আমি কল দিয়ে ভাইয়াটার সাথে আমাদের কলেজের পাশের হোটেলে দেখা করি। উনাকে বলি তুই আর নীল রিলেশনশিপ এ আছিস৷ পরিবারের চাপে বিয়ে করতে চাস.. আরো অনেক কিছু কিন্তু ছেলেটা তাও বললো,’ বিয়ের আগে মানুষ কত কিছুই করে সমস্যা নেই বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে। তাই আর কোনো কোল না পায়ে বললাম তুই নীলের বাচ্চার মা হতে যাচ্ছিস।

ইরিনঃ কিইই!!

নূরঃ আসতে চিৎকার দে। কি করবো আর কিছু খোঁজে পাচ্ছি লাম না। যাই হোক এবারের ডোসটা কাজে দিলো ছেলে আমাকে বললো সে সব ঠিক করে নিবে। আমি যেনো নীলকে নিয়ে ঠিক টাইমে উপস্থিত থাকি।ভাইয়াটাকে ধন্যবাদ দিয়ে আমি বাসায় চলে আসলাম।
প্লেন মুতাবেক বাসায় এসে আম্মু, ফুপিমণি সবাইকে রাজি করালাম। আসলে নীলের তো এখনো পড়াশোনা শেষ হয়নি তাই প্রথম রাজি না হতে চাইলেও পরে ছেলের দিকে তাকিয়ে ফুপিমণি মেনে নিলো। বাকিটা তো তুই নিজেই জানিস।
ইরিনঃ তার মানে সব তোর কারসাজি।
নূরঃ এখনো সময় আছে মনের কথা নীলকে বলে দে।
ইরিনঃ হুম।
নূরঃ হুম কি?? আজকেই বলবি তো??
ইরিনঃ হুম।
নূরঃ চল নিচে মনে হয় সবাই অপেক্ষা করছে। খাবারের জন্য।
ইরিন এক গাল হেসে উঠে দাঁড়ালো। নূর উঠতে নিয়ে মোবাইলে টুং করে মেসেজ আসলো।
নূরঃ তুই যা আমি আসছি।
ইরিনঃ আচ্ছা বলে ছাঁদ থেকে নেমে গেলো।

নূর মেসেজটা দেখলো,

” ভালোবাসা কি আমার জানা নেই।তাই রাতের ঘুম কেঁড়ে নেওয়াকে আমি ভালোবাসা বলি, তাকে দেখার তৃষ্ণা কে আমি ভালোবাসা বলি,তাকে দেখে বুক অসম্ভব রকমে কেঁপে উঠাকে আমি ভালোবাসা বলি, সে ঠোঁট নাড়িয়ে কথা বললে মুগ্ধ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকাকে ভালোবাসা বলি, সে অন্য কারো সেটা যেনেও বার বার তাকে পাওয়ার আকাঙ্খা কে আমি ভালোবাসা বলি। আমি জানি তুমি ভালো আছো, খুব ভালো আছো। আর চাইও তুমি ভালো থাকো।তুমি প্রথম নারী যার প্রতি এই পাথর মনে ফুল ফুটে ছিলো। তুমি প্রথম নারী যে আমার চোখে চোখ রেখে আমাকে ভয় দেখিয়ে ছিলো। আমি হয়তো সময়ের সাথে তোমাকে ভুলে যাবো। কারন মানুষ সারাজীবন একজনের স্মৃতি নিয়ে কাটিয়ে দিতে পারে না। জানিনা আমার জীবনে আবার নতুন কোনো বসন্ত আসবে কি-না তবে যদি আসে তাহলে সেই বসন্ত কে নিয়ে সেই প্রথম বার আবার তোমার সামনে দাঁড়াবো এর আগে আমাকে হাজার খোজলেও পাবে না। আমার বন্ধুটাকে ভালো রেখো।”

আজব মেসেজে নাম নেই কেনো? আর বন্ধু,বসন্ত, ভালোবাসা এই লোক কে??

বিশাল এক আলিশান প্রাসাদের মধ্যে বসে আছে শুভ চোখ মোবাইলে পাঠানো প্রিয় একজন নারীর কাছে ছোটো মেসেজ।

মনে মনে কয়েকবার প্রতিজ্ঞা করে নিলো আর তাকাবে না এই নারীর দিকে। আর ভালোবাসি বলবে না এই শেষ। নিজের প্রান প্রিয় বন্ধুর বউয়ের দিকে সে তাকাবে না। কখনো সামনেও জাবে না।
দু ঠোঁটের মাঝ খান থেকে সিগারেট বের করে উপরের দিকে ধুঁয়া উড়িয়ে দিলো।

ডোপ দিলো সেই দিন রাতের ঘটনার মধ্যে _____

রুদ্র নূরের মোবাইল নিয়ে বেড়িয়ে গিয়ে এই নাম্বারে মেসেজ পাঠায় দেখা করার জন্য।
শুভ খুব অবাক হয় এত রাতে নূর ওর সাথে দেখা করতে চায় মানে? তারা তারি বললো ঠিকানা বলো..?
আবারো মেসেজ যায়। খুশিতে শুভ রেডি হয়ে আগে আগে গিয়ে দাঁড়ায় কিন্তু ওর মনে হয় ও আশার আগেই কেউ এখানে আছে। নূর এত তারাতারি কিভাবে আসলো? না-কি এখানে এসে ওকে মেসেজ দিয়েছে? সামনে একটা অবয়ন দেখে এগিয়ে যায়। ল্যাম্পুস্টের আলোয় মুখটা দেখে কিছু সময় থমকে যায়। তারপর খুশিতে একজন আরেক জনকে জড়িয়ে ধরে। ওরা ভুলেয় যায় এখানে কেনো এসে ছিলো। আড্ডা দেওয়া শুরু হঠাৎ রুদ্র বললো,’ তুই এখানে??
শুভঃ একজনের সাথে দেখা করতে এসেছি। তুই কেনো এত রাতে?
রুদ্রঃ আমিও একজনের সাথে দেখা করতে এসেছি।
শুভঃ কাউকে তো দেখছি না।
রুদ্রঃ কল দেই বলে কল দিলো। সাথে সাথে শুভর ফোন বেজে উঠলো। শুভর ভয়ে ঘাম ছুটে গেলো। এতদিন পর বন্ধুর সাথে দেখা আর এখন কোনো কিছুই স্বাভাবিক লাগছে না। ফোন কানে দিতেই রুদ্র অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
রুদ্রঃ তুই!!??
শুভঃ তুই!!?

তারপর কিছু সময় নিরবতায় ছেয়ে গেলো।
নিরবতা ভেঙে রুদ্র বলে উঠলো,’ প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত শুনতে চাই??’
শুভ ঠোঁট কামড়ে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সব বললো।
রুদ্রঃ সব বুঝলাম কিন্তু আমি এখন ওর স্বামী। আর তোর বুঝা উচিত ওর বিয়ে হয়ে গেছে।

“স্বামী ” শুনে চমকে উঠলো। কি করতে যাচ্ছিলো সে?? কাল নূরের স্বামীকে মারার জন্য গুন্ডা পাঠাতো সে।

তারপর আরো অনেক কথা বলে সারা রাত দুই বন্ধু সেই ব্রিজের উপর কাটিয়ে দিলো।

শুভ আর নূরের মুখোমুখি হয়নি। এখন সে অস্ট্রেলিয়া আছে। সে আর কখনো নূরের মুখোমুখি হতে চায় না। প্রথম ভালোলাগা ভালোবাসা ভুলে যাওয়া অতটাও সুজা নয়।

নূর দাঁড়িয়ে আছে ব্যালকনিতে বাসার সবাই ঘুম। রুদ্র এখনো হসপিটাল থেকে বাড়ি ফিরেনি। দরজা খোলার শব্দে বুঝলো রুদ্র রুমে এসেছে। কিন্তু ওর রুমে যেতে ইচ্ছে হলো না দাঁড়িয়ে আছে এখানেই।
রুদ্র ফ্রেশ হয়ে নূরকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
রুদ্রঃ বাসায় আসলাম কই একটু খাতিরযত্ন করবে তা না এখানে দাঁড়িয়ে আছো।
নূরঃ চাঁদ দেখি।
রুদ্রঃ তুমি নিজেই তো একটা চাঁদ আর চাঁদ দেখার কি আছে। নিজেকে দেখো তাহলেই তো হয়।
নূরঃ আমাকে দেখার জন্য তো আমার বর আছে। তাই আমি ওই চাঁদের থেকে আলো কিভাবে চোরি করবো সেই চিন্তা করছি।
রুদ্রঃ তোমার আর আলো চোরি করতে হবে না। আমার ঘর তোমার রূপের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে সাথে আমিও। এখন আমি তোমাকে চোরি করবো।
নূরঃ আমাকে চোরি করার কি আছে?
রুদ্র কিছু না বলে বউকে কোলে তুলে নিলো।

—-

আদিবা গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে আবিরের বুকে। আবির মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে বিড়াল ছানার মতো চুপটি করে তার বুকে মুখ গুঁজে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন রমণীর দিকে।

****

এলোমেলো শাড়ি, বই মাথার কাছে। শাড়ি পেট থেকে সরে গেছে। ফর্সা মুখ। খুব আকর্ষণীয় লাগছে মাহি কে। ফায়াজ রুমে ঢুকে মাহির এমন ঘুম দেখে একটু অবাক হলো। মাহি তো কখনো এভাবে ঘুমায় না। আজ পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেলো।
ফায়াজ গিয়ে মাহির মাথার কাছ থেকে বইটা নেওয়ার সময় ওর দৃষ্টি আটকে গেলো মাহির ঘারের ছোটো তিলটার দিকে। নিজেকে সামলে ফায়াজ বই নিয়ে রেখে দিলো টেবিলে।
মাহির পাশে এসে শাড়িটা ঠিক করে দেওয়ার সময় গলা শুকিয়ে কাঠ। ফায়াজ ফিসফিস করে মাহির কানে বললো,’ ভালোবাসি প্রিয়তমা খুব বেশি ভালোবাসি কোনো দিন কি আপন করে নিবে না..? অপেক্ষা যে বড্ড কষ্ট কর।
ফায়াজ সরে যেতে নিলে মাহি কলার আঁকড়ে ধরে চোখ খোলে তাকায়।
ফায়াজ অপ্রস্তুত হয়ে পরে। সে কি বেশি শব্দ করে কথা বলে ফেলেছে??
মাহি ফায়াজের বুকে মাথা গুঁজে বললো,’ আমিও ভালোবাসা মাস্টারমশাই। ‘
ফায়াজ মনে হয় আকাশের চাঁদ টা হাতে পেয়েছে এত খুশি হয়েছে। না-কি বেশি খুশিতে ভুল শুনলো। আবার বললো,’ কি বললে..??’
মাহি মাথা গুঁজেই বললো,’ ভালোবাসি….আপনার এই অবেলায় নয় আরো আগে আশার দরকার ছিলো আমার জীবনে মাস্টারমশাই। ‘

এই একটা কথা, একটা শব্দ থেকেই শুরু হলো ওদের এক নতুন জীবন।

******

নীল নিজের রুমে ঢুকে দেখলো লাইট বন্ধ। লাইট জ্বালানোর সাথে সাথে এক আকাশ সমান অবাক হলো। রুম খুব সুন্দর করে সাজানো আর সব থেকে সুন্দর জিনিসটা ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মাথা নিচু করা লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে আছে।
নীল মাথা থেকে নিচ পর্যন্ত এক বার তাকালো।
রাণী গোলাপি পাতলা জর্জেট শাড়ি।সাথে বাহারী ধরনের হাত ভর্তি চুড়ি, চুল ছাড়া, কানে তাজা গোলাপ গোঁজা। এত স্নিগ্ধ লাগছে ইরিনের মুখটা।যেনো এখোনি ফোঁটা এক গোলাপ ওর সামনে দাঁড়িয়ে।
নীল এক পা দু পা করে এগিয়ে গেলো ইরিনের কাছে। ইরিন ভয়ে,লজ্জায় শাড়ির আঁচল খামচে ধরলো।
নীল গিয়ে ইরিনের সামনে দাঁড়ালো।
নীলঃ আজ হটাৎ এত আয়োজন।
ইরিন কিভাবে বলবে নূর শিখিয়ে দিয়েছে সব।
নীলঃ কে মাথায় এই ভূত ঢুকিয়েছে??
ইরিন তাও কিছু বলছে না।
নীলঃ এটা নিশ্চয়ই নূরের কাজ!
ইরিন এবার বললো,’ নূর তো ভুল কিছু করেনি…’
নীলঃ আচ্ছা….
ইরিনঃ হুম।
কিছু সময় চুপ থেকে ইরিন আবার বললো,’ নূর ঠিকি বলেছে…স্বামীকে ঘরে আটকে না রাখলে অন্য নারীতে আসক্ত হয়ে পরবে। ওর কথা-ই তো সত্যি হলো বলে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না শুরু করে দিলো।
নীল অবাক হয়ে গেলো ইরিনের কথায় আর কাজে। এই মেয়ে এভাবে কান্না করছে কেনো আর কি সত্যি হয়েছে?
নীলঃ এই কান্না বন্ধ করো। আর কি সত্যি হয়েছে??
ইরিন ফুপিয়ে ফুপিয়ে বললো,’ আমি এত এত কষ্ট করে সাজলাম, ঘর সাজালাম আপনি একবার ও আমার প্রশংসা করেন নি তার মানে কি ধারায়..?
নীলঃ কি ধারায়.?
ইরিনঃ আপনি অন্য নারীতে আসক্ত হয়ে গেছেন।
নীল মনে মনে বললো,’ ওই বেয়াদব নূরের বাচ্চাকে খালি সামনে পাই। ওর জামাইর হসপিটালেই ওরে ভর্তি করামু৷ আমার বোকা শুকা বউ টার মাথায় এই সব ঢুকায় গেলো।’

নীল ইরিনের দিকে তাকিয়ে বললো,’ তুমি আমার দেখা সব থেকে সুন্দর নারী। আমি তোমাকে আর কিভাবে প্রশংসা করবো।
ইরিন লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। নীল ওকে সুন্দর বলেছে এর থেকে সুন্দর কথা আর কি হতে পারে। নূর সব সময় একটু বেশিই বলে।

নীলঃ একটা কথা বললে রাখবে..?
ইরিনঃ কি..?
নীলঃ আজ রাত আমার সাথে সারা শহর হাতে হাত রেখে ঘুরে বেড়াবে প্লিজ..?

ইরিন খুশিতে গদোগদো হয়ে নীলের হাত জড়িয়ে ধরে বললো চলেন।

নূর রুদ্রের বুকে মাথা রেখে বললো,’ আপনি এই অবেলায় না এসে আরো আগে আশার দরকার ছিলো আমার জীবনে। তাহলে আমার জীবনটা আরো সুখের হতো।
রুদ্রঃ কষ্টের পর সুখ আসে নূর। হয়তো আমি এই অবেলায় আসাতে তোমাকে পেয়েছি।

নূর কিছু বললো না।
রুদ্র আবার বললো,’ নূর’
নূরঃ হুম।
রুদ্রঃভালোবাসি,ভালোবাসি,ভালোবাসি। সারাজীবন বাসবো মৃত্যুর পরও তোমাকেই ভালোবাসবো।

সমাপ্ত

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।