এই কেমন ভালোবাসা পর্ব-১৬

0
700

#এই_কেমন_ভালোবাসা🌺🌿
#নূর_নাফিসা_খুশি
#পার্ট_১৬

সকালে,

খুশি কলেজে যাওয়ার জন্য নিচে মাহিরের জন্য ওয়েট করছে। তখনি মাহির আসে নিচে।সাথে রুকশাও আছে। রুকশাকে দেখেই খুশির মেজাজ খারাপ হয়ে যায় কারন রুকশার পরনে হাটু পর্যন্ত ড্রেস আর মাহিরের হাত ধরে আছে। রুকশা দেখতে বেশ সুন্দরী। গায়ের রং ধপধপে সাদা।বিদেশি মেয়ে সাদা তো হবেই।খুশি নিজের হাত সামনে এনে এদিক সেদিক করে দেখে আর মনে মনে বলে,

“আমিও তো সাদা কিন্তু এই রুকশার থেকে একটু কম।এই মেয়েকে দেখে তো মনে হচ্ছে গায়ে রক্তই নেই তাই এতো সাদা, হুহ। আমার বাবা রক্ত আছে বলেই হালকা হলুদ সাদা আমি। কিন্তু এই মেয়ে এতো সুন্দর হয়েও মেক আপ কেন করেছে।এতো সেজে তো একদম পেত্নির মতো লাগে।”(মনে মনে)

এমন হাজারো কথা মনে মনে ভাবছিল খুশি।তখনি মাহির খুশির মুখের সামনে তুরি বাজিয়ে বলে,

” হেই জেগে জেগে কি স্বপ্ন দেখিস?কলেজে যাবি না নাকি?

“কি?ওহ হ্যাঁ যাবো তো।”(চমকে উঠে বলে খুশি)

” হুম চল।”

বলেই হাঁটা দেয় মাহির।তখন খুশি বলে উঠে।

“ওই ওয়েট।রুকশা আপু আমাদের সঙ্গে কোথায় যাচ্ছে?”

” আমি তোমাদের কলেজ ঘুরে দেখবো তাই যাচ্ছি।”(রুকশা)

“আপু তোমার কি টাকার খুব অভাব?”(খুশি রুকশার পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে বললো)

“হোয়াট ননসেন্স!টাকার অভাব মানে কি?”(রুকশা রেগে বলে)

“না মানে তোমার ড্রেস টা একটু বেশিই ছোট হয়ে গেলো না কলেজে যাওয়ার জন্য?”

এবার মাহিরও রুকশাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো। এতক্ষন ভালো করে খেয়াল করেনি।মাহির বলে,

” রুকশা এটা প্যারিস না,কলকাতা।ড্রেস চেঞ্জ করে আয়।নয়তো যাওয়ার দরকার নেই।”

মাহির,খুশির কথায় রুকশা অপমান বোধ করে। আর খুশির ওপর খুব রাগ উঠে। কিন্তু তবুও মুখে হাসি নিয়ে বলে রুকশা,

“ওহ সরি মাহির।আমি বুঝতে পারি নি।আমি এখনি চেঞ্জ করে আসছি ওয়েট। ”

বলেই রুকশা চলে যায় তাকে যে রুম দেওয়া হয়েছে সেখানে। খুশি বলে,

” ভাইয়া তুমি তোমার বউ কে নিয়ে এসো। আমি গেলাম, আমার ক্লাস আছে।যত্তসব ন্যাকা।”

বলেই রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো খুশি। মাহির কে কিছু বলার সুযোগই দিল না। মাহির খুশির যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে রইলো।রাগ লাগে মাহিরের খুশি তার একটা কথাও শুনে না দেখে।

কলেজে।

কলেজে এসে খুশি পুরো কলেজ খুঁজেও অথৈকে পেল না।খুশি বুঝছে না অথৈ এর কি হলো। রামপুর থাকাকালীন হাজার বার ফোন করেছে, অনেক মেসেজ দিয়েছে।কিন্তু অথৈ ফোন ধরেনি আর না কোন মেসেজের রিপ্লাই দিয়েছে।আজ কলেজেও দেখছে না। খুশি পুরো কলেজ খুঁজেও যখন পেল না তখন চুপ করে বসে পরে একটা গাছের নিচে।ভাবতে থাকে অথৈ এর কি হলো যে এমন করছে। খুশি কি কোন ভুল করলো যার জন্য রেগে আছে?কিন্তু কি ভুল!কিছুতেই বুঝতে পারছে না খুশি।

কিছুক্ষন পর খেয়াল করে খুশি,অথৈ আসছে।কিন্তু অথৈ এর মুখের এই কেমন হাল।কি হয়েছে ওর!খুশির বুক ধক করে উঠে অজানা কারনে। আগে অথৈ কলেজে আসলে লাফাতে লাফাতে আসতো সব সময়। দুস্টু হাসি মুখে লেগে থাকত,কিন্তু আজ! খুশি উঠে দৌঁড়ে অথৈ এর কাছে যায়।আচমকা কাউকে কাছে আসতে দেখে অথৈ চমকে উঠে।তারপর খুশিকে দেখে স্বস্তি পায় অথৈ। খুশি ব্রু কুচকে তাকিয়ে আছে অথৈ এর দিকে। খুশি আসাতে অথৈ যেমন ভয় পেয়েছিল মনে হচ্ছিলো ও অন্য কাউকে মনে করেছে। খুশি বলে,

“কি হয়েছে তোর?”

” কি হবে?”(শান্ত জবাব)

“চোখ মুখের এই কি অবস্থা তোর!কি হয়েছে বল?”

” কিছু না।রামপুরে কেমন ঘুরলি?”

“কথা কাটানোর চেষ্টা করবি না অথৈ।”

খুশির কথায় কোন জবাব দিল না অথৈ। তখনই একটা ছেলে এসে অথৈ কে বলে,

” তোমাকে রোদ স্যার ডাকে।”(বলেই চলে যায় ছেলেটা)

রোদ স্যার ডাকে এই কথা শুনে অথৈ এর মুখ টা আরও শুকিয়ে যায়।খুশি সেটা ভালো করেই খেয়াল করলো।

“আমি আসছি।”

বলেই অথৈ খুশিকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। খুশির সন্দেহ হয়। তাই খুশিও অথৈ এর পিছু পিছু লুকিয়ে গেলো। অথৈ সোজা রোদের রুমে চলে যায়।খুশি রোদের রুমের দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকে কি বলে শুনার জন্য।

অথৈ রোদের কাছে এসে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।রোদ উঠে এসে অথৈকে জরিয়ে ধরে এতে অথৈ অনেক বিরক্ত হয়,কিন্তু কিছু বলে না।রোদ বলে,

” চলে আসো না আমার বাড়িতে।আর কতো দিন বাপের বাড়িতে থাকবে।তোমার যে একটা জামাই আছে তা কি ভুলে যাচ্ছো?”

“মানি না আমি আপনাকে স্বামী বলে।”(রাগ নিয়ে বলে অথৈ)

” মানো আর না মানো। বিয়ে তো হয়ে গেছে,এখন আর কি করবে?”

“জোর করে বিয়ে।আমার কোন মত ছিলো না। আপনি জোর করে,ভয় দেখিয়ে বিয়ে করেছেন আমাকে।”(অথৈ এবার কান্না করে দেয়)

” ভালোবাসি আমি তোমাকে আর তখন তোমাকে অন্য কারো সঙ্গে দেখে আমার রাগ কন্ট্রল করতে পারিনি।আর তোমার কথা গুলোও আমার ভাললাগেনি।”

“জোর করে ভালোবাসা পাওয়া যায় না।”

” আমার বিশ্বাস তুমিও একদিন আমাকে ভালোবাসবে। আমার থেকেও অনেক বেশি।”

“কখনো হবে না সেটা।”

“দেখাই যাবে।”

রোদ অথৈ এর আরও কাছে গিয়ে অথৈর পরে থাকা চশমাটা খুলে নেয়।তারপর চোখে কিস করে অথৈ এর চোখের পানি মুছে দেয়। তখনি খুশি না বলেই রুমে ঢুকে পরে।এমন হঠাৎ করে খুশির আগমনে রোদ অথৈকে ছেড়ে দেয়।অথৈও চোখের পানি মুছে নেয় জলদি। রোদ বলে,

“এটা কোন ধরনের ভদ্রতা মিস খুশি?টিচারের রুমে আসতে হলে পারমিশন লাগে সেটা কি ভুলে গেছো?”

খুশি কিছু না বলে অথৈকে রোদের কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে বলে।

” আপনি একজন শিক্ষক হয়ে একটা স্টুডেন্ট এর সঙ্গে এমন কি করে করতে পারেন স্যার?”

“কি করেছি?”

” কি করেছেন সেটা আমি দেখেছি বলতে বাধ্য না।”(খুশি রোদ,অথৈ এর মাঝে কি কথা হয়েছে সেটা ভালোভাবে শুনেনি)

রোদ এগিয়ে এসে খুশির হাত থেকে অথৈকে ছারিয়ে একদম নিজের কাছে এনে জরিয়ে রাখে। এতে খুশি আরও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।আর এতেও অবাক হয় যে অথৈ কিছু বলছে না,চুপচাপ আছে দেখে। রোদ বলে,

“এখনো তাই করছি।নেও কি করবা করো।”

” স্যার আমি কিন্তু প্রিন্সিপ্যাল স্যারকে সব বলে দিব।”

“কি বলবে?আচ্ছা আমি শিখিয় দিচ্ছি কি বলবা, স্যার তার বউকে নিয়ে রোমান্স করছিল আর আমি সেটা আড়াল থেকে দেখেছি। যাও বলো।”

বউ কথাটা শুনে খুশি সাত আসমান থেকে টুপুস করে নিচে পরে চোখ বড় করে তাকিয়ে বলে,

” বউ মানে?”

“হ্যাঁ বউ।আমর বিবাহিত স্ত্রী অথৈ।”

খুশির চোখ এবার বের হয়ে হাতেই চলে আসবে এমন অবস্থা। খুশি অথৈ কে বলে,

” এই কুত্তি তুই চুপ আছিস কেন?তুই বল এটা সত্যি না। স্যার মিত্থা বলছে। ”

“উনি সত্যি বলছে খুশি।”

অথৈ এর কথা শুনে মুখ হা হয়ে যায় খুশির।আজ এতোদিন পর কলেজে এসে এমন কিছু শুনবে,দেখবে ভাবতেও পারেনি। রোদ এবার খুশির কাছে এসে হাত দিয়ে খুশির মুখ বন্ধ করে দিয়ে বলে,

“ওহহো শালিকা মশা ঢুকবে তো মুখে।মুখ টা বন্ধ করে রাখো।”

“কাহিনি কি খুলে বলুন তো স্যার।”(খুশি)

সেদিন যখন রোদ অথৈকে একটা ছেলের সঙ্গে দেখে রেস্টুরেন্টে তখন রেগে অথৈকে নিয়ে রোদ একটা লেকের পারে আসে। অথৈ কিছু বুঝতে না পেরে বলে,

” স্যার আপনি আমাকে এখানে কেন নিয়ে এলেন? আমি বাড়ি যাবো। ”

“ওই ছেলেটা কে ছিলো অথৈ?”(রেগে)

“সেটা আপনাকে বলবো কেন?”

“বলতে হবে তোমাকে,কে ছেলেটা?”

” আপনি স্যার,আমাদের পড়াবেন, পড়া না পারলে শাস্তি দিবেন।তা না করে আপনি আমার পার্সোনাল লাইফ নিয়ে টানাটানি কেন করতে আসবেন?”

“শাট আপ অথৈ!আমাকে রাগাবে না একদম। ভালো হবে না তোমার জন্য সেটা।”

“যান তো আপনি।আর আমাকেও যেতে দিন।”

বলেই অথৈ চলে যেতে নিচ্ছিলো তখনি রেগে রোদ অথৈ এর হাত ধরে সামনে নিয়ে এসে বলে,

“ভালোবাসি আমি তোমাকে।আজ থেকে নয়।৩ বছর থেকে ভালোবাসি। কলেজে আমি শুধু তোমার জন্য এসেছি।”

” মজা কইরেন না স্যার।যেতে দিন।”

“না যেতে দিব না।আগে বলো ওই ছেলেটা কে ছিলো।”

” কেন বলবো? আপনি কে?আমার বাবা,ভাই নাকি জামাই!কোন অধিকারে এসছেন আমাকে জোর করতে!”(রেগে বলে অথৈ)

ব্যস এই কথাটুকুই ছিলো রোদের মাথা গরম করার জন্য যথেষ্ট। আর কিছু না বলে অথৈকে টানতে টানতে নিয়ে যায় কাজী অফিসে। ফোন করে রোদের উকিল আর কিছু ফ্রেন্ডদের ডাকে। ৩০ মিনিট পর এসেও যায় তারা।অথৈ কিছুই বুঝতে পারছে না কি করছে রোদ।বার বার জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু কোন জবাব পায়নি অথৈ। সব ঠিকঠাক করে রোদ অথৈ কে ভিতরে নিয়ে যেয়ে বলে।

“সাইন করো।”

অথৈ পেপার টা নিয়ে পড়ে দেখে তো অবাক।রাগী চোখে রোদের দিকে তাকিয়ে বলে,

” এসবের মানে কি স্যার? আমি আপনাকে বিয়ে করবো না।”

“বিয়ে না করলে তোমার সঙ্গে এমন কিছু হবে যা তুমি মেনে নিতে পারবে না। ”

” ভয় দেখাবেন না আমাকে। ভয় পাইনা আমি।”

এসব দেখে কাজী সাহেব বলে উঠে,

“মেয়েটা তো বিয়েতে রাজি না।আর রাজি না থাকলে এই বিয়ে হবে না।”

কাজির কথা শুনে রোদ তার একটা ফ্রেন্ডকে কি ইশারা করলো।ছেলেটা এসে কাজীর সামনে দুই বান্ডিল টাকা রেখে দেয়। টাকা পেয়ে কাজী আর কিছু বলে না। অথৈ এর সামনে একটা গান রাখে রোদ।গান দেখে অথৈ ভয় পেয়ে যায়।মনে মনে বলে অথৈ,

“ফ্রী ফায়ার গেইমে এমন গান দিয়ে কতো কিল করেছি।কিন্তু আজ কেন ভয় লাগছে দেখে এটা! রিয়াল তাই নাকি!”(মনে মনে)

“সাইন করো।”(রোদ ধমক দিয়ে)

অথৈ ভয়ে সাইন করে দেয়।রোদ করে। অথৈ,রোদের বিয়ে সম্পূর্ণ হয়।বাইরে এসে রোদ গানটা ফেলে দিয়ে বলে,

” ওটা খেলনা গান ছিলো রিয়্যাল না।”(শয়তানি হেসে)

অথৈ এতে আরোও রেগে যায়। রাগে বলে,

“কাজটা আপনি মোটেও ঠিক করেননি স্যার। আমি আপনাকে কখনো ক্ষমা করবো না।আর রেস্টুরেন্টে ছেলেটা আমার ভাই ছিলো,আবির।আমার নিজের আপন বড় ভাই ছিলো।”

বলেই কান্না করতে করতে চলে যায় অথৈ। রোদ অপরাধী চোখে তাকিয়ে থাকে কিন্তু পরক্ষনে ভাবে বিয়ে তো হয়ে গেছে আর কি করার আমাকে তোমার মেনে নিতেই হবে।এই ভেবে চলে যায় রোদ ও।

বর্তমানে,

খুশি চেয়ারে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। এদের কাহিনি শুনে খুশির মাথা ঘুরাচ্ছিল তাই বসে পরেছে। আর অথৈ কান্না করছে, রোদ চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। টেবিলে রাখা পানি নিয়ে খুশি ঢকঢক করে খেয়ে বলে,

“বিয়ে যখন হয়ে গেছে তখন আর কি করার। মেনে নে মান্নু।”(অথৈকে খুশি মান্নু বলে ডাকে)।

খুশির কথায় অথৈ রেগে বলে,

“মরে গেলেও আমি মানবো না এই ব্যাটারে।আমার জীবন ঝালাফালা করে দিবে।”(কান্না করে)

” শালিকা তুমি যাও।এটারে আমি বুঝাচ্ছি।”(রোদ)

“না তুই যাবি না।আমাকেও নিয়ে যা গেলে।”(অথৈ)

” সরি মান্নু জিজুর কথা ফেলি কেমনে বলতো।”

খুশি চলে যেতে নেয় আর যাওয়ার আগে রোদকে ফিসফিস করে বলে।

“জিজু আমাকে ম্যাথে পাস করিয়ে দিয়েন,

বলেই খুশি দৌড়।

চলবে?