এই কেমন ভালোবাসা পর্ব-১৯

0
657

#এই_কেমন_ভালোবাসা🌺🌿
#নূর_নাফিসা_খুশি
#পার্ট_১৯

“ভাইয়া তোমার মনে হচ্ছে না মাহির একটু বেশি বেশি করছে? তুমি কেন এসব মেনে নিচ্ছো ভাইয়া? তুমি কি ভুলে গেছ ১২ বছর আগে খুশির আম্মু কতো অপমান করেছিল মাহিরকে।এমন কি মাহিরকে তার দেশ ছেড়ে, তোমাদের ছেড়ে বিদেশে থাকতে হয়েছে। তুমি কি করে খুশি কে তোমার বাড়িতে থাকতে দিয়েছো বুঝতে পারছি না।”

আরও অনেক কথা বলে মাহিরের আব্বুর কান ভাঙাচ্ছে মাহিরের ফুফি রেহানা বেগম।বোনের কথায় মাহিরের আব্বু সত্যতা খুঁজে পেয়ে তিনিও রেগে যায়। রেহানা তার ভাই এর দিকে তাকিয়ে ভাইয়ের রিয়েকশন বুঝার চেষ্টা করছে।যখন দেখল তার ভাই রেগে গেছে রেহানার মুখে বিজয়ের হাসি ফুটে উঠে। মনে মনে বলে,

” যাক আমার ঔষুধে কাজ করেছে তাহলে।ভাইয়ের মনে খুশি কে নিয়ে এতো বিষিয়ে দিতে হবে যেনো ভাই নিজেই খুশিকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। ওই খুশি একমাত্র আমার পথের কাঁটা।ওকে না সরালে আমার কাজ হবে না। আমার মেয়ের মাহিরের সঙ্গে বিয়ে যে করেই হোক দিতে হবে।বিয়ে না হলে এই সম্পত্তি পাব না।বাবা কি করে পারলো তার সব সম্পত্তি ভাইয়ের নামে করে দিতে?আমার কি এতে কোন অধিকার ছিলো না?ভাইয়ের মতো আমারও সমান অধিকার আছে এই বাড়ি,গাড়ি,টাকার উপর।আমাকে এসব থেকে বঞ্চিত করবে আর আমি সব মেনে নিবো?কখনই না। যদিও মেনে নিতাম কিন্তু প্যারিসে যে রুকশার আব্বু বিজনেসে লস খেয়েছে। আমাদের অনেক টাকার দরকার নয়তো রাস্তায় নামতে হবে আমাদেরকে। সেটা কখনই হবে না।আমি মাহিরের সঙ্গে রুকশার বিয়ে দিয়ে সব হাতিয়ে নিব।” (মনে মনে বলে রেহানা বেগম)

“আমি খুশিকে এখানে আর এক মুহুর্তও থাকতে দিব না।আমি কিছু ভুলিনি,১২ বছর আগের কথা।ওই মেয়ের জন্য আমার এক মাত্র ছেলে আমাদের থেকে দূড়ে ছিলো। রেহানা!” (রাগ নিয়ে বললো মাহিরের আব্বু)

” জি ভাইয়া।”

“রুকশার সঙ্গে আমার মাহিরের বিয়ে দিবি?”

ভাই এর এমন কথায় চমকে তাকায় রেহানা আর মনে মনে বলে,

” আরে বাহ,এ তো মেঘ না চাইতেই জল। আমাকে আর কষ্ট করে ভাইয়াকে বলা লাগলো না।”(মনে মনে)

“এটা তো অনেক ভালো কথা ভাইয়া।কিন্তু মাহির কি রাজি হবে?

” আমার কথাই শেষ কথা আর মাহিরকে আমার কথায় রাজি হতেই হবে।’

খুশি,মাহিরের আড়ালে এসব করছে ফুফি ও মাহিরের আব্বু। দেখতে দেখতে আরও বেশ কয়েক দিন কেটে যায়।এর মধ্যে খুশি মাহিরের প্রতি আরও দুর্বল হয়ে পরে। মাহির খুশিকে ছাড়া কোথাও যায় না, খায় না। রোজ ছাদে গল্প করে তারা।এখনো মুখ ফুটে বলা হয়নি ভালোবাসি।কিন্তু তাদের দেখে যে কেউ বলতে পারবে এরা অনেক সুখি একটা কাপল। খুশির প্রতি মাহিরের এতো কেয়ার, ভালোবাসা দেখে মাহিরের আব্বু,ফুফি,রুকশা খুব রেগে আছে।তাই ভাবে যা করার জলদি করতে হবে তাদের।

মাহির রুমে শুয়ে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছিলো তখন রুমে খুশি আসে মাহিরের পাশে বসে। মাহির ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই বললো,

“কি চাই?”

” তোমার ফোন টা একটু দিবা?”

“কেন, তোর ফোন কি হয়েছে?”

” আছে দাও না।”

মাহির আর কথা না বাড়িয়ে ফোন দিয়ে দিল। খুশি নিয়ে দেখে পাসওয়ার্ড লাগানো।

“পাসওয়ার্ড কি?”

“হ্যাপি।”

খুশি চট করে ফোনের লক খুলে ফেইসবুকে ঢুকে। কিছুক্ষন আগের মাহিরের পোস্ট।সেখানের কমেন্ট বক্সে যায়। সেখানে অনেক মেয়ে কমেন্ট করেছে।wow, ami pagol hoye jabo, i love u mahir।আরো অনেক। খুশি মেয়েগুলো কে এক এক করে ব্লক করে। তারপর মাহিরের আইডি লক করে আর সঙ্গে রিলেশনশিপের স্ট্যাটাস লাগিয়ে দেয়। খুশি নিজের রুমে শুয়ে মাহিরের আইডিতে ঘুরাঘুরি করছিলো তখন মেয়েদের এমন কমেন্ট দেখে মাথা গরম হয়ে যায় তার।তাই মাহিরের রুমে এসে তার ফোন নিয়ে এমন করছে খুশি। খুশি এবার চ্যাট লিস্ট চেক করতে যায়।সেখানে গিয়ে কিছু ছেলে ফ্রেন্ড ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে চ্যাট দেখলো না।মাহিরকে অনেক মেয়ে মেসেজ দিয়ে রেখেছে,মাহির সিন ও করে নি।খুশি মনে মনে বলে,

“ওহ আমার কলিজাটা কত্তো ভালো।মন চায় উম্মাহ দিয়ে দেই।”(মনে মনে)

মাহির খেয়াল করলো বেশ অনেকক্ষন ধরে খুশি তার ফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে। তাই উঠে খুশিকে বললো।

” কি করছিস বল তো আমার ফোন নিয়ে? দেখি কি করছিস।”

বলেই ফোন টা নিয়ে নিল মাহির।দেখে ফেইসবুক অন করা।মাহির তার আইডি গিয়ে রিলেশনশিপের স্ট্যাটাস আর এতো মেয়েকে ব্লক দেখে খুশির দিকে তাকায়। খুশি আমতা আমতা করে বলে,

“ইয়ে মানে এমনিই।আইডিটা মানাচ্ছে তাই করে দিলাম।”

” তাই! মানাচ্ছে নাকি তোমার মেয়েদের কমেন্ট দেখে জেলাস ফিল হচ্ছে হুহ।”(মাহির খুশির কাছে গিয়ে বলে)

“মেয়েগুলো কেন এমন কমেন্ট করবে?আমার কেন জানি রাগ লাগে।”

” তাই নাকি?”

ভালোবাসি কথা টা কি মুখ ফুটে বলাটা খুব জরুরি? কাজ ব্যবহারে বুঝে নেওয়া যায় না? কিন্তু এখানে মাহির মনে করে খুশির মুখ থেকে ভালোবাসি কথা টা শুনা খুব বেশিই জরুরি। মাহির জানে খুশি তাকে ভালোবাসে আর খুশি ও জানে। খুশি চাইছে মাহির তাকে বলুক ভালোবাসি আর মাহির পারছে না বলতে খুশির আম্মুর জন্য। এদের এই লুকচুরি ভালোবাসায় যে কতো বিপদ আসছে তারা বুঝতেও পারছে না।

“মাহির দা তুমি আমাকে ভালোবাসো?”

খুশির প্রশ্নে মাহির খুশির দিকে তাকিয়ে খুশিকে কিছু বলতে যাবে তখনি রুমে রুকশা আসে। রুকশা কে দেখে খুশি মাহির দুইজনেই তাকায় আর একটু সরে বসে। রুকশা খুশি কে বলে,

” নিজের রুমে যাও। আমার মাহিরের সঙ্গে কথা আছে।”

“কি কথা যা আমার সামনে বলা যাবে না?আমি যাবো না,তুমি বলো।”(খুশি)

” মাহির কিছু বলো ওকে।”(রুকশা বিরক্ত হয়ে বলে)

“খুশি যা।”

” রিকশা বেডি আসার আর সময় পেল না।%(মনে মনে বলে খুশি)

খুশি যাবো না বলতে যাবে তখনি মাহিরের চোখের দিকে চোখ যায়। মাহির রেগে তাকিয়ে আছে তাই খুশি আর কিছু বললো না।বেরিয়ে গেলো রুম থেকে আর মনে মনে একশো সাতটা গালি দিল রিকশা আপা কে।

” কি বলবে বলো আমার কাজ আছে।আর হুট হাট আমার রুমে কোন মেয়ে আমি এলাও করি না মনে রেখো।”(মাহির)

“খুশি এতোক্ষন ছিলো সেটা কিছু না?”

“ওর আর তোমার মধ্যে অনেক পার্থক্য। কি বলবে বলো?”

রুকশা আর কথা না বাড়িয়ে যেটা করতে এসেছে সেটায় মন দেয়,

“আমাকে নিয়ে একটু বাইরে যেতে হবে তোমার। আমার কিছু কেনার আছে।”

” তোমার নিজেরও তো গাড়ি আছে। তুমি একা চলা ফেরাও করতে পারো।আমাকে কেন লাগবে?”

“আমি এখানে নতুন।তেমন কিছু চিনি না।আর মামা বলেছে তোমাকে নিয়ে যেতে।”

মাহির বাধ্য হয়ে রাজি হয় যেতে। তার কোন ইচ্ছা নাই খুশিকে একা রেখে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার।”

বিকেলে রেডি হয়ে মাহির আগে খুশির রুমে যায়। গিয়ে বলে,

” খুশি তোর কিছু লাগবে?”

“কেন তুমি কি কোথাও যাচ্ছ?”

” হ্যাঁ বাইরে যাচ্ছি একটু।”

“চকলেট আর আইসক্রিম নিয়ে আসবে তাহলে।”

” এখনো সেই ছোটই আছিস?ওকে তাই নিয়ে আসবো বাট তুই একা বাড়ি থেকে বের হবি না।কিছু দরকার হলে আমাকে ফোন করবি।”

খুশি মাথা নেড়ে সমত্তি দিল। মাহির বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। খুশি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল মাহিরকে দেখার জন্য। তখন দেখল রুকশাও যাচ্ছে। দেখেই খুশির মন খারাপ হয়ে যায়।

“রুকশা কে নিয়ে যাচ্ছে বললে কি হতো? আমাকে লুকিয়ে যেতে হলো?”(বিরবির করে)

মাহির,রুকশা বেরিয়ে যেতেই খুশির রুমে প্রবেশ করে রুকশার আম্মু রেহানা। হঠাৎ খুশি তার রুমে মাহিরের ফুফি কে দেখে বেশ অবাক হয় কিন্তু রেহানাকে বুঝতে না দিয়ে মুখে সৌজন্যতার হাসি নিয়ে বলে,

“ফুফি আপনি? বসুন।”

” বসতে আসিনি আমি। তো তোমার আম্মু এখানে তোমাকে পড়াশোনা করতে পাঠিয়েছে?”

“জ্বি।”

” কিন্তু তুমি অন্য কিছুই করছো দেখছি তো। পড়াশোনার মাঝে কি এটাও শিখিয়ে দিয়েছে কি করে ছেলেদের হাতে নিয়ে আসতে হয়?”

“মানে?”(রেগে বলে খুশি)

” মানে খুব সোজা।আসার পর থেকেই দেখছি মাহিরের পিছু ছাড়ছোই না। আঠার মতো লেগে থাকছো সব সময়।বাবা মা কি এই শিক্ষা দিয়ে পাঠিয়েছে?”

খুশি এবার রেগে জোর গলায় কিছু বলতে যাবে তখনি রুমে আসে মাহিরের আব্বু। মাহিরের আব্বুকে দেখে চুপ হয়ে যায় খুশি। খুশি কিছু বলেনি তবুও ফুফি মাহিরের আব্বু কে বলে,

“দেখেছো ভাই কি রকম বেয়াদব মেয়ে।আমাকে আঙুল দেখিয়ে কথা শুনায়।”

” মিত্থা কেন বলছেন ফুফি?আমি তো কিছুই বলিনি।”(খুশির চোখে পানি)

“চুপ করো খুশি। আমি খুব ভালো করেই জানি তুমি কেমন।সেই ছোট বেলা থেকেই জেদি মেয়ে।”(মাহিরের আব্বু রেগে বলে)

মাহিরের আব্বুর এমন কথা শুনে খুশি আকাশ থেকে পরে।চোখ থেকে ঝরঝর করে পানি পরতে লাগে। মাহিরের আব্বু আবার বলে,

” আমি চাই না তুমি এই বাড়িতে থাকো। কিছুদিন পরে মাহির আর রুকশার বিয়ে ঠিক করেছি আমরা। আমি চাইছি তুমি এখন থেকে হোস্টেল থেকে পড়াশোনা করো। আমি সব ব্যবস্থা করে দিয়েছি।তুমি আজই চলে যাবে এই বাড়ি ছেড়ে আর এখনই।”

মাহিরের আব্বুর কথায় যেন অবাক হতেই আছে খুশি। তাকে এতো অপমান করবে ভাবতেও পারে নি খুশি আর কি বললো মাহিরের সঙ্গে রুকশার বিয়ে? এটাও দেখতে হবে খুশিকে? তাহলে কি খুশির ভালোবাসি কথাটা আর বলা হবে না?মাহির কি আর তার হবে না।

“ভাইয়া কি বলেছে শুনেছ তো?এখনই সব গুছিয়ে নাও।তোমাকে হোস্টেলে দিয়ে আসবে।”(ফুফি)

” ভাইয়া আসুক তারপরে চলে যাবো।” (কান্না করে বলে খুশি)

“কি মেয়ে রে তুমি?এতো অপমান করার পরও মাহিরের নাম নাও? তুমি এখনি মাহিরের আসার আগেই বের হবে বাড়ি থেকে।”(ফুফি)

খুশি আর অপমান সহ্য করতে না পেরে সব কিছু গুছাতে লাগে। তখন আবার মাহিরের আব্বু বলে,

” মাহিরা কে বলবে তোমার এখানে ভালো লাগছে না তুমি হোস্টেলে থাকতে চাও। বাকি টা আমি সামলে নিব।”

কিছুক্ষন পরে রেডি হয়ে ব্যাগ নিয়ে নিচে আসে খুশি। খুশির হাতে লাগেজ দেখে মাহিরা খুশির কাছে এসে বলে,

“হাতে লাগেজ কেন? কই যাচ্ছিস তুই?”

” খালামনি আমি হোস্টেলে থাকবো কিছুদিন।আমার এখানে ভালো লাগছে না। ”

“এটা কেমন কথা খুশি? তুই আমার বাড়ি ছেড়ে হোস্টেলে থাকবি?কখনো না। আর মাহির জানলে তোকে,আমাকে মেরেই ফেলবে রেগে।আর আমি মুনতাহাকে কি জবাব দিব?”

” আমি ভাইয়া আর আম্মুকে সামলে নিব খালামনি। তুমি নিজের খেয়াল রেখো।”

“জেদ করে না মামনি আমার কথা শুন।”

“আহ মাহিরা ওর এখানে ভালো লাগছে ওকে যেতে দাও না। কিছুদিন পর আবার আসবে তখন।” (মাহিরের আব্বু)

খুশি আর কথা শুনে না বেড়িয়ে যায় বাড়ি থেকে। ড্রাইভারকে বলে দিয়েছিল খুশিকে দিয়ে আসবে কিন্তু খুশি যায়নি। একাই বেড়িয়ে পরে হোস্টেলের উদ্দেশ্যে।

চলবে?