এই ভালো এই খারাপ পর্ব-০৭

0
86

#এই_ভালো_এই_খারাপ
#পর্ব_৭
#প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

বাড়ি ফেরার পর তিথি রাতের খাবারটা খেয়েদেয়ে আয়েজার ঘরে এসে শুয়ে পড়লো। আয়জা এসে বলল,

” ভাবি তোমার কোমরে মলম মালিশ করতে হবে। ভাইয়া বললো, এক্ষুণি যেতে। ”

তিথি বললো, ” তোমার ভাইকে বলো ওর সাথে আমার কোনো কথা নেই। ”

আয়জা বলল, ” এমন করো না প্লিজ। এখন এসে চেঁচামেচি জুড়ে দেবে। ”

তিথি শুয়েই থাকলো। আয়জা বলল, ” দেখো তোমাকে ডাকছে। ”

তিথি বলল, ” চুপ করে থাকো। ”

আয়জা বারবার দরজার দিকে তাকালো। আজলান দরজাটা ধপাস করে ঠেলে ঘরে ঢুকে বলল,

” আশ্চর্য! তিনটে ট্যাবলেট খেতে হবে, আর মলম লাগাতে হবে। তুমি এখানে এসে শুয়ে পড়েছ? ”

তিথি বলল, ” ট্যাবলেট গুলো একেকটা হাতির সাইজের। গিলতে পারবো না। তুমি খাও। ”

আজলান বিছানায় বসে আয়জাকে বলল, ” পানি দে। ”

আয়জা গ্লাস ভরে পানি দিল। আজলান ঔষধের বক্স থেকে ঔষধ বের করতে করতে বলল,

” তোমার বাবা মায়ের উচিত ছিল তোমাকে পঁচিশ বছর বয়সে বিয়ে দেয়া। ”

তিথি বলল, ” তুমি পঁচিশ বছর বয়সী মেয়ে তো বিয়ে করতে না। ”

আজলান চুপচাপ ঔষধ বাড়িয়ে দিল দু টুকরো করে। ঔষধগুলো খেয়ে ধপাস করে পড়ে রইলো তিথি। আজলান বলল,

” কামিজ সরাও। মলম লাগাতে হবে। ”

তিথি আয়জার দিকে তাকালো। আয়জা লজ্জা পেয়ে বেরিয়ে যেতেই তিথি কামিজ সরালো। বলল,

” তোমার হাত বহুত শক্ত কিন্তু অফিসার। ”

আজলান বক্রহেসে বলল, ” এই হাতেই মানুষ পিটিয়ে সোজা করি বুঝলে? ”

তিথি বলল, ” তুমি একটা পাষাণ। উফ একটু ধীরে মালিশ করো। কেমন শক্ত হাত বাপু। ”

আজলান বলল, ” কোমর ব্যাথাটা সেড়ে গেলে এক্সারসাইজ করতে হবে। দিস এক্সারসাইজ আর ভেরি ইমপোর্টেন্ট ফর প্র্যাগনেন্ট ওম্যান হবে।। ”

তিথি বলল, ” ওরে বাপরে ওই হাত পা ছুঁড়ে যে ব্যায়ামগুলো করে সেগুলো! আমার বাচ্চা যদি গুন্ডা হয়? ”

” শাটআপ। কামিজটা সরাও ভালো করে। ”

তিথি কামিজ অনেকটা তুলে দিল। বলল,

” শোনো না ব্যায়ামগুলো করলে যদি আমার হাতেও তোমার মতো এরকম খোয়া খোয়া মাংস হয়? ”

আজলান বলল, ” এগুলোকে সিক্সপ্যাক বলে ষ্টুপিড। ”

তিথি হেসে উঠে মুখ বিকৃত করে,

” খোয়া খোয়া মাংসগুলোকে নাকি সিক্সপ্যাক বলে! দেখলেই ঘৃণা লাগে। ইচ্ছে করে কামড়ে গোস্তগুলো ছিঁড়ে ফেলি। আবার সেগুলো নিয়ে নাকি দম্ভও দেখায়। যেসব মেয়েমানুষ এই খোয়া খোয়া গোস্তগুলো দেখে কাত চিৎ হয়ে পড়ে যায় সেগুলোর মাথায় নির্ঘাত সমস্যা আছে। ”

আজলান মাথা নেড়ে বলল, ” হ্যা সবাই পাগল শুধু তুমিই ভালো। ”

তিথি বলল, ” যে মুখে বললে ওই মুখে একটা চুমু খেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু খাব না। আমার পেট ভরা। দুই প্লেট ফুচকা, এক বাসন ভাত আর তোমার বাচ্চা মিলে আমি টুইটুম্বুর। ”

মলম মালিশ করা শেষে আজলান বললো,

” চলো এবার। ”

তিথি বলল, ” আমি এখানে থাকবো। ”

আজলান বলল, ” তোমাকে মেঝেতে শুঁতে হবে। ফোমের বিছানায় শোয়া যাবে না। ”

তিথি বলল, ” তাও এখানে শুবো। ”

আজলান তাকে কোলে তুলে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,

” আমি ওখানে বিছানা অব্দি ঠিক করে ফেলেছি। সবসময় মাথা নষ্ট করার তালে থাকো। ”

তিথি শক্ত করে তার গলা জড়িয়ে রাখলো। বলল,

” তুমি রাতে আবার দুষ্টুমি টুষ্টুমি করবে না তো ডেপুটি আফিষাড়? ”

” হোয়াট ইজ আফিষাড়? ”

তিথি হাসতে হাসতে বলল,

” কিসসু না। তুমি আমার সাথে মেঝেতে না শুলে আমি কিন্তু আয়জার রুমে চলে যাবো বস। ”

আজলান বলল, ” ওকে। ”

তিথি বলল, ” ব্যাপার কি বলোতো? তুমি আজকাল পল্টি খাচ্ছ? তোমার বাচ্চার জন্য? ”

” হাহ। ”

” গুডবয়। ”

আজলান ঘরে ঢুকে তাকে মাদুর আর কাঁথার বিছানার উপর বসিয়ে দিল। তিথি তাকে সহ ধরে শুয়ে পড়ে বলল,

” আজকে তোমাকেও আমার সাথে শুতে হবে বুদ্ধু। নইলে বুঝবে কি করে এভাবে ঘুমাতে কত মজা। যাইহোক একটা চুমু খেয়ে ফেলোতো। মুড সুয়িং হচ্ছে বুঝলে। ”

আজলান একটু ঝুঁকে তার মুখ শুঁকে বলল,

” অসম্ভব। ঔষধের ঘ্রাণ। ”

তিথি হেসে উঠে বলল, ” কাল তো ব্রাশ করিনি তবুও খেয়েছ আজও খেয়ে ফেলো। তুমি আদর করলে তোমার বাচ্চা পেটের ভিতর এক্কেবারে খুশিতে লাফিয়ে উঠে। ”

তক্ষুণি আয়জা দরজার কাছে দাঁড়িয়েছে ঔষধের বক্সটা নিয়ে। দুজন দুজনকে ছাড়ার আগেই আয়জা যেপথে এসেছে সেপথে পালিয়েছে। আজলান বলল,

” দরজা খোলা আছে সেদিকে তোমার হুঁশ নেই? ”

তিথি গড়াগড়ি খেয়ে বলল,

” আদরের পিনিক উঠলে সেসব মনে থাকে না বস। ”

আজলান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

” হোয়াট ইজ পিনিক? ”

তিথি বলল,

” অর্থনীতিবিদদের ভাষায় একে চাহিদা বলে। আর তুমি যদি তৎক্ষনাৎ একটা আদর দাও সেটা হবে ভোগ। আমি যে হুটহাট আদর চাইতে পারি সেটা হচ্ছে ভোগ প্রবণতা। ”

আজলান দরজা বন্ধ করতে গেল।

তিথি বলল, ” আচ্ছা শ্বাশুমা বললো। তুমি নাকি বিয়েশাদী করতে চাওনি? সেটা কেন? ”

” আমার অনেক রেস্ট্রিকশন আছে। সবাই আমার সাথে মানিয়ে নিতে পারবে না। যার স্পষ্ট উদাহরণ তুমি। ”

তিথি বলল, ” জোর করেছে সবাই মিলে। তাই করেছ? ”

” হ্যা আবার না। ”

তিথি আরেকটু গড়াগড়ি খেয়ে বলল,

” করলে ভালো কথা কিন্তু আমার মতো কালোনিকে কেন?”

” সেটা তোমার শ্বশুরআব্বা জানে। গো এন্ড আস্ক হিম।”

তিথি বললো, ” তিনি বলেছেন তুমি আমার ছবিটা বেছে নিয়েছিলে। ”

বলেই জোরে হেসে উঠলো। আজলান রেগে গিয়ে বলল,

” এটাতো হাসির কি আছে? আমি কি জানতাম তুমি অসভ্য? ”

তিথি চোখদুটো ট্যারা করে তাকিয়ে বলল,

” আমি শাঁকচুন্নি সেটা বুঝোনি না? আহারে উহুরে। হতাশ খুবই হতাশ। ”

আজলান লাইট নিভিয়ে পাশে এসে শুয়ে পড়লো ওপাশ ফিরে। তিথি তার গায়ের উপর পা তুলে দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,

” এক্সারসাইজ করছি। ”

আজলান তার পা সরিয়ে দিয়ে বলল,

” সোজা ঘর থেকে বের করে দেব মেহবুব। ”

তিথি এবার নিজেকেই উঠিয়ে দিল তার গায়ের উপর। বলল,

” এটাকে কোন এক্সারসাইজ বলে আফিষাড়?”

আজলান হঠাৎ দমফাটা হাসিতে ফেটে পড়লো।
তিথি হাসতে হাসতে কেঁদে উঠলো। জোরে কাঁদলো। কাঁদতে কাঁদতে আজলানের বুকের কাছে শার্টে নাকের পানি মুছে দেয়ায় যেখানে দশটা চুমুর পাওয়ার কথা সেখানে পেল শুধু দুটো। বাকি আটটা না পাওয়ার দুঃখে তিথি কেঁদে গেল। বহুদিন সে এভাবে কাঁদেনি।

চলমান….