এই মন তোমাকে দিলাম পর্ব-২৮+২৯

0
414

#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্ব-২৮
#আরাদ্ধা_সাদাত_খান
রূপন্তী চোখ খুলতে চাইলো কিন্তু পারলো না।চোখ, মাথা সব কেমন ভারি হয়ে আছে। তবুও অনেক কষ্টে খুললো।সম্মুখে ঝাপ্সা চোখে কয়েকটা মুখ দেখতে পেলো।
পিঠটা নরম কিছুতে ঠেকছে। খুব সম্ভবত বিছানা। কিন্তু তারা না মহেশখালী থেকে ফেরত আসছিলো?সে স্নিগ্ধার কাছে ফোন দিয়ে ট্রলারের অপর পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলো।ঘাটের থেকে বেশি দূরত্বে ছিলো না তারা। হুট করে মাথাটা ঘুরে উঠলো।আশেপাশে কিছু ধরার না পেয়ে পানিতে পড়লো। তারপর?তারপর কী হয়েছিলো?।আর কিছু মনে করতে পারলো না।চোখ বন্ধ করে পুরো দিনের ঘটনা মনে করতে লাগলো।

সকালে রাফির সাথে কথা শেষ হওয়ার পর রূপন্তী আগে বাড়িতে ফোন দিয়েছিলো।সবার খোঁজ খবর নিয়ে ফোনটা রাখতেই থানা থেকে ফোন এসেছিলো।যেই অফিসারের রাফিকে এরেস্ট করতে যাওয়ার কথা ছিলো,সে এক্সিডেন্ট করে আপাতত আইসিউতে।এই খবরের কথাই রাফি বলছিলো ।কারন এটা রাফিরই কাজ।
তখন থেকেই সে বিষন্ন হয়ে পড়লো।ঠিক করলো ঢাকায় গিয়ে ভালো কোনো উকিল ধরবে।
সকালে এক কাপ চা ছাড়া কিছু খেলো না।সায়ন অন্য টেবিলে বসার কারনে খেয়ালও করলো না।দুপুর সবাই মিলে মহেশখালী গেলো।সেখানেও মেয়েদের গ্রুপ আর ছেলেদের গ্রুপ আলাদা দুটো দোকানে খেতে বসলো।রূপন্তী তখনও তেমন কিছু খেলো।দু লোকমা ভাত খেয়েছে।স্বাভাবিক ভাবেই প্রেশার লো হয়ে গিয়েছে।
ট্রলারে উঠার পর হাসি আড্ডা চলতে লাগলো।রূপন্তী সেখানে শুধুমাত্র শ্রোতা। স্নিগ্ধা ওর ফোন নিলো ছবি তোলার জন্য।ঘাটের কাছাকাছি আসার পর সে উঠে ট্রলারের কোনায় গিয়ে দাড়ালো।তারপরেই মাথা ঘুরে পড়ে গেলো।
চোখ বন্ধ করে এসব ভাবনার মাঝেই কপালে কারো ছোয়া পেলো।সাফওয়ানের হাত।রূপন্তী চোখ মেলতেই জিজ্ঞেস করলো,
– ঠিক আছিস?
রূপন্তী উঠে বসতে চাইলো। কিন্তু শরীর কেমন ভার হয়ে আছে। সাফওয়ান পিঠের নিচে বালিশ দিলো। মাহা ধরে বসাতে সাহায্য করলো।
এবার চারপাশ ভালো করে দেখলো।এটা তাদের হোটেলের রুম।সবাই আছে খালি আরাদ্ধা,স্নিগ্ধা, সায়ন আর আরহান বাদে।ওদের কথা জিজ্ঞেস করতেই জায়ান উত্তর দিলো,
– আরাদ্ধা,স্নিগ্ধা আর সায়ন হাসপাতাল গেছে। আরহান ভাই একটু উনার রুমে গেছে।
রূপন্তী ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
– হাসপাতাল কেনো গেছে?
মাহা বলল,
– তুমি যেভাবে চিন্তায় ফালাইলা সবাইরে।এই!সায়ন তোকে এত ভালোবাসে?তোরা না আগে শত্রু ছিলি?
– কেন?
– আর বলিস না। তুই পানিতে পড়ার পর তো আমরা বেকুব হয়ে গিয়েছিলাম।সাথে সাথে মাঝি আর তার সহযোগী লাফ দিলো।পানি বেশি গভীর ছিলো না।ভেজা তোকে যখন তুলল, সায়ন পারে না তোকে বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলে। অস্থির হয়ে গিয়েছিলো পুরা।চোখে পানি পর্যন্ত চলে এসেছিলো।এরপর যত দ্রুত সম্ভব তোকে নিয়ে এখানে আসলাম।ওরা বেরিয়ে গেলো হাসপাতালের উদ্দ্যেশ্যে। আমরা তোকে চেঞ্জ করিয়ে দিলাম।
বলা শেষ করতে না করতেই সায়নরা ঢুকলো।সায়নকে দেখে রূপন্তীর নিজেরও কান্না পেয়ে গেলো। এরকম উদ্ভ্রান্তের মতো হয়ে আছে কেন?
সায়ন এসেই রূপন্তীকে এক পলক দেখে জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।স্নিগ্ধা আর আরাদ্ধা ওর সাথে একটু কথা বলল।এক ফাঁকে আরাদ্ধা ওর প্রেশার মাপলো।তারপর ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
– তোর জামাই আমাদের মেয়ে কয়েকজনকে ইতিমধ্যে গালি দিয়ে ধুয়ে ফেলেছে। তোকেও দিবে।
– কেন?
– সেটা পরে টের পাবি।
আরহান আসলো। পিছে একজন রুম সার্ভিসের লোক।উনার হাতে খাবার।সায়নও ফ্রেশ হয়ে এসে বসলো।সবাই আর পাঁচ মিনিটের মতো থেকে চলে গেলো।
রুমে আপাতত শুধু দুজন মানব-মানবীর অবস্থান। রূপন্তী এক দৃষ্টিতে নীরবে নিশব্দে তার প্রেমিক পুরুষটাকে দেখছে।এই ছেলেটা তার জন্য এত পাগল কবে হলো? সেই বা এই ছেলের প্রেমে এমন হাবুডুবু কেন খাচ্ছে।
সায়ন ঔষধগুলো বের করলো।ফোনে কিছু একটা চেক করলো।তারপর ঔষধ আর খাবারের প্লেটটা নিয়ে রূপন্তীর একদম কাছে এসে বসলো।রূপন্তী তখন খেয়াল করলো যে সায়নের চোখগুলো ঈষৎ লাল হয়ে আছে।নাকের ডগাও লাল।আয়হায়!এই ছেলেকি সত্যিই কেঁদেছে। তার জন্য কেঁদেছে।
পেটে অন্যরকম এক অনুভূতির প্রজাপতিগুলো ডানা মেলে উড়তে লাগলো।সারা শরীর শিরশির করে উঠলো।সাথে আবার অপরাধবোধও হলো।সবাই এত হাসি -খুশি মনে ঘুরতে এসেছে।অথচ সে সব বাউন্ডুল করে দিলো।
সায়ন নীরবে ওকে খাওয়াতে লাগলো।একবারও চোখ তুলে তাকালো না।খাওয়ানোর মাঝেই কেউ আবার বেল চাপলো।সায়ন উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।স্নিগ্ধা আর মাহা এসেছে আবার।
দুজন ভেতরে এসে বসলো।সায়ন হাত ধুয়ে রূপন্তীর মুখ মুছিয়ে দিলো।তারপর ঔষধ খাইয়ে দিলো।
খাওয়া দাওয়ার পালা শেষ হতে রূপন্তী এবার স্নিগ্ধাদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– কয়টা বাজে?
মাহা উত্তর দিলো,
– নয়টা।
রূপন্তী এবার সোজা হয়ে বসলো।এখন একটু ভালো লাগছে। ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,
– কালকে দুপুরের পর ফ্লাইট না?
– হুম।
– সবাই রেডি হ যা।
স্নিগ্ধা অবাক সুরে বলল,
– কেন?
– আমার কারনে তোরা ঘুরতে পারি না।চল লাবনী যাই। শপিং করবো।
ওরা কিছু বলবে তার আগেই সায়ন মাহার দিকে তাকিয়ে বলল,
– মাহা,ওকে বল থাপ্পড় না খেতে চাইলে যেন চুপচাপ শুয়ে।
রূপন্তী বিছানা থেকে নেমে লাফাতে লাফাতে বলল,
– থাপ্পড় খাওয়া লাগবে না।আই এম ফিট এন্ড ফাইন।এই যা বাকিদেরকে বল।আমি চেঞ্জ করে আসি।

আট জনের দল আবার বের হলো।এবার আর কেউ হাটলো না।দুটো টমটম নিয়ে চলে গেলো লাবনী বিচে। টুকটাক কেনাকাটা করলো।
পুরোটা সময় সায়ন চোখে চোখে রেখেছে তার বউকে। হাঁটার সময় হাত ধরে রেখেছে।সুযোগ বুঝে আরাদ্ধা রূপন্তীর কানে বলে গেলো,”আমার ভাইয়ের বদল দেখে আমি হতবাক!”
ডিনার শেষ করে সকলে রুমে ফিরলো এগারোটার দিকে। ফ্রেশ হয়ে,নামাজ পড়ে শুতে শুতে বেজে গেলো সাড়ে এগারোটা। সায়ন আজ উল্টো পাশ ফিরে শুয়েছে। মাঝখানে একটা বালিশ দিয়ে রেখেছে। রূপন্তীর হাসি পেলো।কেমন বাচ্চাদের মতো অভিমান করেছে!
সে মাঝখান থেকে বালিশটা সরালো।গিয়ে গিয়ে সায়নের পিঠ গুতাতে গুতাতে আহ্লাদী কণ্ঠে বলল,
– সায়ন!রাগে করেছিস?
সায়ন নিরুত্তর।
– সরি!আর এমন করবো না।প্লিজ তুই রাগ করিস না।
এখনো কোন হেলদোল নেই।
রূপন্তী এবার করুন কণ্ঠে বলল,
– জড়িয়ে ধরবি না? আমি জানি নাহলে তোর ঘুম হবে না।
এরপর একটু চুপ থেকে ক্ষীণ কণ্ঠে বলল,
-আমারও হবে না।
মুহুর্তের মাঝে সায়ন ওর উপর উঠে নিজের ভর ছেড়ে দিলো।রুমের হালকা আলোয় গাঢ় নজরে তাকালো সম্মুখে থাকা মেয়েটার মুখে। এমন গভীর চাহনিতে রূপন্তীর সারা শরীর শিরশির করে উঠলো।
সায়ন রূপন্তীর কপাল থেকে চুল সরাতে সরাতে বলল,
– শোধ নিচ্ছিস?
– কীসের?
– তোর ভালোবাসার দাম দেইনি বলে।
– আমি কি তোকে ভালোবাসি নাকি?
– বাসিস না?
– না।
– আচ্ছা।
বলেই রূপন্তীর কপালে কপাল ঠেকালো। ফিসফিস করে বলল,
– আমি বাসি।
পরপর রূপন্তীর গলায় মুখ গুজে অস্পষ্ট স্বরে বলল,
– আমার কলিজায় রূপান্তরিত হলি কিভাবে?।তোকে তো আমি সহ্যই করতে পারতাম না।অথচ তোর থেকে দূরত্ব এখন সহ্য হয় না।আজ তোর কিছু হয়ে গেলে আমি মরে যেতাম রূপু।
রূপন্তী ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
– সরি!আর হবে না।
সায়ন মাথা উচালো।ইতিমধ্যে সে ঘোরে ডুবে গেছে। রূপন্তীর মুখের খুব কাছে মুখ নিয়ে বলল,
– আদর দাও!
রূপন্তীরও কী হলো কি জানি!একে একে গালে,কপালে,চোখে, নাকে নিজের ওষ্ঠের স্পর্শ বসালো গভীরভাবে।
সায়ন তৃপ্ত হলো না।নিজের ঠোঁটের দিকে ইশারা করে বলল,
– এখানে দিবা না।
লজ্জায় নাক গাল লাল হয়ে এলো।সায়নকে ধাক্কা মারতেই মাথা গিয়ে ঠেকলো বালিশে। অতপর সায়নের বুকে মুখ গুজে বলল,
– আরেকটু সময় দে। ঘুম পাচ্ছে।ঘুম পড়িয়ে দে।
সায়ন নিশব্দে হাসলো।অতঃপর মেয়েটাকে ভালোমতো বুকে জড়িয়ে মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।
#চলবে।

#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্ব-২৯
#আরাদ্ধা_সাদাত_খান
তিনদিন হলো সায়নরা কক্সবাজার থেকে ফেরত এসেছে। এই তিন দিন টানা ডিউটি করে আজ আবার সাভারে যাচ্ছে তারা।
রূপন্তী আপাতত একটু হাসি-খুশি আছে। কারণ হলো রাফি এহমাদের কেসটা এবার ফাইল হয়েছে।ডিএনএ টেস্ট করানোর পর ম্যাচ করাতে তাকে ও তার দুজন লোককে এরেস্ট করা হয়েছে। রূপন্তী নতুন যেই লয়ারকে ধরেছে সে খুবই দক্ষ। প্রথম শুনানি সামনের সপ্তাহ। তার আগেই সাভার ঘুরে আসা যাবে।
ওরা সন্ধ্যায় ডিউটি শেষ করে রওয়ানা হয়েছে। শুক্র-শনি থেকে আবার রবিবার সকালে চলে আসবে।রূপন্তী খুবই খুশি কারন সীমন্তী এখন এই বাড়িতে।অর্থাৎ রুহি এখন এখানে।সারাদিন সে বাচ্চাটাকে নিয়েই কাটিয়ে ফেলতে পারবে। রায়ান ভাইয়াও কাল আসবে।জম্পেশ আড্ডা বসানো যাবে।

রাত নয়টার দিকে বাড়ি পৌছালো ওরা।সবাই ই বাড়িতে এখন। সবার সাথে দেখা হলো।কিন্তু সীমন্তীর রুমে ঢুকে দেখা গেলো রুহি কাঁদতে কাঁদতে চোখ-মুখ লাল বানিয়ে ফেলেছে। বাচ্চাটার শরীর অনেক খারাপ। এজন্য এত কাঁদছে। এতক্ষন তারিফ সাহেব, জ্য়া চেষ্টা করেছে কান্না থামানোর। পারেনি। এবার রূপন্তী কোলে নিলো।অনেক্ষন ওর সাথে কথা বলল,পুরো বাড়ি ঘুরলো। বাচ্চাটার কান্না থামলেও সমানে ফোঁপাচ্ছে। শেষে সায়ন এসে কোলে নিয়ে বাড়ির বাহিরে চলে গেলো। রূপন্তী ততৎক্ষনাৎ কাগজ কলম নিয়ে বসলো ঔষধ লিখতে।সীমন্তীর সাথে কথা বলে বুঝলো রুহির সিজনাল ফ্লু হয়েছে। সেই অনু্যায়ী সে ঔষধ লিখে দিলো।তারিফ সাহেব সেটা ড্রাইভারের কাছে দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন।
সায়ন যখন ফেরত আসলো রুহি তখন মামার কাঁধে মাথা এলিয়ে ঘুমাচ্ছে।আস্তে করে ওকে শুইয়ে ডাইনিং এ চলে আসলো।সেখানে ইতিমধ্যেই সবাই খেতে বসেছে। সেও বসে খেলো।
খাওয়ার মধ্যেই তারিফ সাহেব কথাটা তুললেন,
– তোমাদের নামে ইদানীং একটু উউল্টাপাল্টা কথা শোনা যাচ্ছে।তোমাদের বিয়ের কথা তো এখনও কেউ জানে। তাই আমি চাই তোমাদের কানে কথা আসার আগে রিসেপশনটা করে ফেলি।আমি চাই না আমার ছেলে আর ছেলের বউ কোনো কটু কথা শুনুক।
দুইজনের চোখাচোখি হলো।রূপন্তী চোখ নামিয়ে নিলো।সায়নও কিছুক্ষনে ভেবে ‘জানাচ্ছি’ বলল।
রাতে রুমে ফেরার পর রূপন্তী মাত্র হাত মুখ ধুয়ে এসে গায়ে লোশন মাখছে।সায়ন ঠিক সেই মুহূর্তে এসে ওকে পেছন থেকে জাপ্টে ধরলো।আয়না দয়ে স্নিগ্ধ মুখখানা দেখে ঘোরে চলে গেলো।গভীর স্বরে বলল,
– আব্বুকে বলে দেই ব্যাবস্থা করতে?
রূপন্তী কিছুই বলল না।সায়ন ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো।নিজের নিকট এনে গালে-কপালে চুমু খেয়ে ঠোঁটের দিকে আগাতেই রূপন্তী বাধা দিলো।হাত দিয়ে থামিয়ে বলে উঠলো,
– আগে আমাকে অফিশিয়াল ভাবে নিজের কাছে আন। তারপর এসব লিমিটগুলো উইদড্র করা হবে।
তারপর সায়নের গলা জড়িয়ে নাকে নাক ঘষতে ঘষতে গভীর কণ্ঠে ফিসফিস করে বলল,
– তারপর যেভাবে চাবি সেভাবেই পাবি।
সায়নের ইশারাটা বুঝতে দেরি হলো না।তবুও রূপন্তীর কোমরে হাতে বুলাতে বুলাতে বলল,
– এখন সমস্যা কী?উই আর হাজবেন্ড-ওয়াইফ।
রূপন্তী আস্তে করে সায়নের কাধে মাথা গুজলো।এরপর আহ্লাদী কণ্ঠে বলল,
– সেটা তো মানুষ জানে না।পরে আমাকে ইউজ করে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলেও কোনো মানুষ এই অসহায় মেয়েটার কথা জানবে না।
-লল ভাই,ছাড়লে আমি না তুই ছাড়বি।
আর কোনো কথা হলো।দুজনই একে অপরকে জড়িয়ে শ ম্রে দাঁড়িয়ে থাকলো।একসময় সায়ব রূপন্তীকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিলো।তারপর লাইট বন্ধ করে এসে নিজেও শুয়ে মেয়েটাকে টেনে এনে নিজের মাঝে আবদ্ধ করলো।সারা মুখে আবারো কয়েকটা চুমু খেয়ে বলে উঠলো,
– ভাবা যায় যেই আমি তোর সাথে সারাদিন ঝগড়া করতাম, মারামারি করতাম সেই আমি এখন আর তোর সাথে আহ্লাদ ছাড়া কথা বলতে পারি না,কাছে এলে চুমু না খেয়ে
থাকতে পারি না।
রূপন্তী হাসলো।নিজেদের আলিঙ্গন আরো নিবিড় করে নিচু গলায় বলল,
– খোদার ইচ্ছে ছিলো।নাহলে বিয়ের মতো এত পবিত্র একটা সম্পর্কতে আমরা জড়াতাম না।
সায়ন এবার রূপন্তীর থুতনিতে ঠোঁট রেখে বলল,
– আর কতদিন অপেক্ষা করাবি রূপু। আই নিড ইউ ইন এভ্রিওয়েজ!
– আগে সিয়র হ মোহ নাকি ভালোবাসা। বাকিটা পরে দেখা যাবে।এখন ঘুমা।
.
পরের ঘটনাগুলো চোখের পলকে ঘটলো যার জন্য বাকিরা তো প্রস্তুত ছিলোই না, রূপন্তী নিজেও অপ্রস্তুত ছিলো।পরের দিন রায়ান আহত অবস্থায় ফের‍ত এলো।কয়েকজন মিলে মেরেছে। পরপরই রূপন্তী রাফির মেসেজে পেলো।জেলে বসেও সে এই কাজ করছে।ওইদিন সবাই একবার আলোচনা করলো কে এমন কাজ করতে পারে। সবাই প্রথমে তারিফ সাহবের বিপক্ষ দলের কাজ ভাবলেও তারিফ সাহেব স্পষ্ট মানা করে দিলেন। যদি তার বিপক্ষ দল করে থাকতো তাহলে সে জানতো। এত আলোচনার মাঝে রূপন্তী চুপ ছিলো।ভালোমতো দেখলে তার মুখের ফ্যাকাসে ভাবটা চোখে পড়তো।
পরেরদিন দুপুর সায়ন বাহিরে গিয়েছিলো।রুহিকে রূপন্তীর কাছে রেখে সীমন্তী রায়ানকে নিয়ে গিয়েছে চেকাপ করাতে।সব ঠিকঠাক ছিলো।রূপন্তী যদিও অন্যমনস্ক ছিলো কিন্তু রুহির খেয়াল ঠিকঠাক রাখছিলো।একটা ফোন আসাতে বারান্দায় গিয়েছিলো। ঠিক তখনই দূর্ঘটনাটা ঘটলো।ছোট্ট বাচ্চাটা সবে মাত্র দাঁড়াতে শিখেছে।সেভাবে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেই ঠাস করে বিছানা থেকে ফ্লোরে পড়লো।সাথে সাথে বিকট স্বরে কান্না করে উঠলো।রূপন্তী হুলুস্থুল করে রুমে আসলো।সীমন্তীরাও তখন মাত্র ফের‍ত এসেছে। তারাও দৌড়ে এলো।রূপন্তীও ততক্ষনে রুহিকে কোলে তুলে নিয়ে থামানোর চেষ্টা করছে। রুহির কান্না শুনে সে নিজেও কেঁদে দিলো।সীমন্তী এসেই মেয়েকে কোলে নিয়ে নিলো।রূপন্তী কাঁদতে কাঁদতেই বলে উঠল,
-আমি বুঝিনি আপু।সরি। আমি সত্যিই এমন টা কল্পনা করতে পারিনি।
তারিফ সাহেব তখন এগিয়ে এসে বললেন,
– আচ্ছা এসব কথা পরে হবে।আগে দেখো মেয়েটা কোথায় ব্যাথা পেয়েছে।
রূপন্তী ওরকোনো মতে ওকে আবার বিছানায় বসালো।কান্নার কারনে ও কিছুই করতে পারছে না।শেষে না পারতে বলে উঠলো,
– আপু একটু কষ্ট করে হাসপাতালে নিয়ে যান।হাতে ব্যাথা পেয়েছে।
ঠিক সেই সময় সায়ন আসলো।সব শুনে আগে রুহিকে চেক করলো।এরপর কোলে নিয়ে বের হয়ে গেলো।বাকিরাও চলে গেলো।
রূপন্তী কাঁদতে কাঁদতে বিছানায় বসে পড়লো।কি হচ্ছে এসব?!গতকাল রায়ানও জন্যে এমন বিপদে পড়েছে। আজ রুহিও ওর অবহেলায় ব্যাথা পেলো।এই মুহুর্তে নিজেকে একটা অলক্ষী মনে হচ্ছে।
.
সায়নরা আধ ঘন্টার মাঝে ফিরলো।হাতে মোচ খেয়েছে,সেখানে ব্যান্ডেজ বাধা।রূপন্তীর চোখ মুখ ইতিমধ্যে ফুলে গেছে।সীমন্তী রুহিকে নিয়ে রূপন্তীর কাছেই এলো।রুহি ওকে দেখে হাত বাড়ালো। রূপন্তী ওকে কোলে নিয়ে বুকে জড়িয়ে রাখলো অনেক্ষন।সীমন্তী তখন এগিয়ে এসে ওর কাঁধে হাত রেখে বলল,
– আমি জানতে চাই না ও কিভাবে ব্যাথা পেয়েছে। এক্সিডেন্ট হতেই পারে।নিজেকে দোষী ভেবো না।
রূপন্তী কিছু বলল না আর।রুহিকে কোলে নিয়ে বসে থাকলো।

এরপর বিকেল বেলা চা বানাতে গিয়ে সে নিজের হাত পুড়ে ফেললো।তানিয়া দ্রুত গিয়ে সবাইকে ডেকে আনলো।সায়ন এসেই অস্থির হয়ে পড়লো।রূপন্তীকে নিয়ে দ্রুত সিংকের সামনে এসে ওর হাতে পানি দিতে লাগলো।রূপন্তী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের সমস্ত ভার ছেড়ে দিলো সায়নে উপর।সায়নও প্রেয়সীকে সুন্দর মতো আগলে নিলো।তানিয়া বরফে এনে দেওয়ার পর কিছুক্ষন বরফ লাগালো।তারপর তানিয়াকে বলল,
– বাহিরে দেখ তো কেউ আছে নাকি।
তানিয়া দেখে এসে বলল কেউ নেই। সবাই রুমে।
সায়ন আর দেরি করলো না।রূপন্তীকে কোলে তুলে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো।রুমে এসে বিছানায় নামাতে চাইলেও রূপন্তী নামলো না।
– আমাকে বুকে জড়িয়ে কিছুক্ষন বস্র থাক।
সায়ন মৃদু হেসে বলল,
– আগে অয়েনমেন্টটা লাগিয়ে দেই।তারপর নিচ্ছি।
অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে এবার সায়ন কোলে নিয়ে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসলো।রূপন্তী ওর গালের গাল মিলিয়ে মিশে রইলো।
সায়ন ওকে আরো ভালোভাবে নিজের সাথে মিশিয়ে মুখটা তুলে ধরলো।ভালোমতো পর্যবেক্ষন করলো আদুরে মুখখানা।এরপর নিজের রুক্ষ ঠোঁট ডুবালো কান্নায় লাল হওয়া নরম কপোলে। সেখানে ঠোঁট রেখেই বলে উঠলো,
– তোকে কান্না করলে আরো আদুরে লাগে।এখন থেকে খালি কাঁদাবো আর আদর করবো।
রূপন্তী সেসব কথা কানে নিলো।সায়নের কাঁধে মাথা এলিয়ে বলল,
– আপু কি রাগ করেছে?
-কেন?
– আমি সত্যি ধরে উঠতে পারিনি বাচ্চাটা এভাবে পড়ে যাবে।
– আরেহ! আপু কিছু মনে করেনি।হাল্কা ব্যাথা পেয়েছে।এত চিন্তা করিস না।
.
সবাই সব হিসাব মিলাতে না পারলেও এক জোড়া তীক্ষ্ণ চোখ প্রতিটা ঘটনা পর্যবেক্ষন করলো।নিজের তীক্ষ্ণ বুদ্ধি দিয়ে বুঝতে দেরি হলো না কি ঘটতে পারে!

সন্ধ্যায় সায়ন বাবাকে জানিয়ে দিলো রিসিপশনের ব্যাবস্থা করতে।আলোচনা করে ঠিক করা হলো ফেব্রুয়ারির আঠাশ তারিখ। এবার সবাই বসলো শপিং নিয়ে। এই আলাপ কতক্ষন ধরে চলবে তার কোনো ইয়ত্তা নেই।
#চলবে।