এই সাঁঝবাতি পর্ব-১১+১২

0
15

#এই_সাঁঝবাতি? পর্ব: ১১

কাছে কোথাও চুড়ির টুংটাং আওয়াজ। মনে হয়, কাপড় ঝাড়ল বাতাসে। টেবিলের উপর খাতার পাতা উড়ছে ফড়ফড় করে। ঘর জুড়ে ভেসে বেড়াচ্ছে মিষ্টি ঘ্রাণ৷
সানান ভাই লম্বা শ্বাস টেনে আরও বেশি করে অনুভব করতে চাইল সেই মেয়েলি সুবাস। ভারি চোখ দুটো মেলে একবার দেখল একটা সবুজ ওড়না। বৃষ্টিস্নাত বৃক্ষের পরিপক্ক পাতার ন্যায় গাঢ়, গভীর৷

সানান ভাই একপাশে কাত হয়ে ভালোভাবে দেখার চেষ্টা করল। বনের সজীবতায় ছেয়ে গেছে তার ঘর। অথচ সানান ভাইয়ের মনে আছে, এই ঘরে একটা গাছের পাতাও নেই। গতমাসে আফসানা বেশ শখ করে একটা মানিপ্লান্টের চারা রেখে গিয়েছিলেন। অযত্নে, অবহেলায় প্রথম সপ্তাহেই প্রাণ ত্যাগ করেছে গাছটি৷

সানান ভাই ঘুমিয়েছিল ভোর পাঁচটায়৷ এখনও নিশ্চয়ই খুব একটা বেলা হয়নি৷ ঘুমটা সবে গাঢ় হতে যাচ্ছিল, এরমধ্যে কে এসে হাজির হলো?

ঘুমকাতুরে মস্তিষ্ক এত খাটুনি করতে চাইছে না৷ কিন্তু মনটা বারবার ছুটে যাচ্ছে বনের গহীনে৷ যেখানে আছে প্রশান্তি, যেখানে আছে সজীবতা। পাতার মুড়মুড় শব্দ, পাখির টুংটাং সুর, বাতাসে মিষ্টি সুবাস৷

সানান ভাই হাত বাড়িয়ে বালিশের আশেপাশে নিজের মোবাইল খুঁজল। না পেয়ে ঘুমের ঘোরের কিছু একটা বিড়বিড় করল বোধহয়।

একটা মিষ্টি সুর বড় আদুরে ভঙ্গিমায় কাছে এসে জানাল,

– আপনার মোবাইল।

সানান ভাই অনেক কষ্টে কয়েক সেকেন্ডের জন্য চোখ মেলল৷ চোখের সামনে তার মোবাইল ছাড়া কিছু দেখা যাচ্ছে না৷ হাত বাড়িয়ে মোবাইলটি নিতেই স্ক্রীনের আলো জ্বলে উঠল৷ চোখে ধাক্কা লাগা মাত্র চোখ বুজে নিল।
তখনি হাতে ঠেকল নরম তুলতুলে একটা হাত৷ ক্ষণিক সময় ছিল তার স্থায়িত্ব। ঠিকঠাক অনুভব করার আগেই হাতটা ছুটে গেল৷ ঠিক কত বছর পর সানান ভাই ছুঁতে পেল তাকে? পাঁচ বছর? ছয় বছর? উহু। ঠিকঠাক মনে পড়ছে না৷

সানান ভাই আবারও আধো চোখ মেলে তাকাল। গোলগাল, স্নিগ্ধ একটা মুখ খানিক দূরে৷ সকালের নবীন আলোয় মুখখানা তার আরও পবিত্র, আরও শান্ত দেখাচ্ছে৷ পলকহীন চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল সানান ভাই৷ তারপর অশান্ত মনটা যখন শান্ত হলো, তখন আবার তলিয়ে গেল ঘুমের দেশ।

সায়রা গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এসে ছোট আঙ্গুলগুলো দিয়ে চেপে ধরল সাঁঝের কামিজের নিচের অংশ৷ জামায় টান পাওয়ায় সাঁঝ সেদিকে তাকিয়ে আলতো হাসল৷ ঝুঁকে সায়রার হাত থেকে সানান ভাইয়ের হুডিটা নিয়ে চুমু দিল ফুলকো গাল দুটোয়। নিচু কণ্ঠে ফিসফিসিয়ে বলল,

– সুন্দর হয়েছে৷ এই তো আমাদের সায়ু কাজ শিখে যাচ্ছে৷

প্রশংসা শুনে লজ্জায় লালচে হয়ে উঠল সায়রার ফর্সা গাল দুটো। গুটি গুটি পায়ে সায়রা ছুটল নতুন উদ্যোমে৷ আরও একটা হুডি ভাঁজ করবে সে৷ আজকে সায়রা বায়না ধরেছে সাঁঝের সাথে সেও দাদাভাইয়ের ঘর গোছাবে৷
আফসানা বাধা দেয়নি৷ সায়রাকে সাঁঝের কাছে রেখে চলে গেছে রান্নাঘরে৷

সায়রার অদক্ষ হাতে ভাঁজ করা হুডিটা টেনেটুনে আবারও ভাঁজ বসালো সাঁঝ। পা টিপেটিপে হাঁটতে হচ্ছে তাকে৷ এই বুঝি সানান ভাইয়ের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটল। বড় মা সাবধান করে গিয়েছেন, নিঃশব্দে কাজ করা হয় যেন। ভোরের দিকে ঘুমিয়েছে উনার আদরের ছেলে।

সাঁঝ ভেবেছিল, এত সকালে তাকে দেখে বড় মা বিরক্ত হবেন। কিন্তু তেমন কিছু ঘটেনি৷ সহজ আচরণ করেছেন তিনি৷ বড় মায়ের হুটহাট এই ভালো-মন্দ আচরণের ব্যাপারটা সাঁঝ ধরতে পারে না৷ এটাকেই বোধহয় মুড সুয়িং বলে।

দরজা খুলে সাঁঝকে দেখে অবাক হয়েছিলেন আফসানা৷ সন্দিহান দৃষ্টির সামনে দাঁড়িয়ে সাঁঝ বড্ড অপ্রস্তুত হয়ে বলেছিল,

– সানান ভাই আসতে বলেছিল।

– কেন?

– ঘর গুছাতে৷ খুব নোংরা হয়েছে নাকি।

গতকাল ছুটা বুয়াকে দিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ঘর গুছিয়ে নিয়েছিলেন আফসানা। নিজে কোমড়ের ব্যথায় ভুগছেন বিধায় সংসারের কাজকর্ম তেমন একটা করতে পারেন না। ছুটা বুয়া এসে করে দিয়ে যায়। একদিনে ঘর নোংরা করে ফেলা অসম্ভব কিছু নয় উনার গুনধর ছেলের কাছে।

সাঁঝকে ভেতরে আসার জায়গা ছেড়ে দিয়ে আফসানা গিয়েছিলেন সায়রাকে ঘুম থেকে উঠাতে৷ কিন্তু দুষ্টু মেয়েটা সাঁঝকে দেখে লাই পেয়ে বসেছে৷

“সাজুবেলা, সাজুবেলা” করতে করতে ছুটেছে সাঁঝের কোলে। বিরক্ত হয়ে দুটোকে একসাথে ছেড়ে দিয়ে আফসানা গেছেন নিজের কাজে।

সায়রাকে ব্রাশ করিয়ে, হাত মুখ ধুইয়ে, কাপড় পাল্টে দিয়ে তবেই সানান ভাইয়ের ঘরে এসেছে সাঁঝ।

ঘর গোছানো যখন শেষ হলো তখন সকাল নয়টা বাজে। সানানের বাবা নাস্তা শেষ করে বেরিয়ে গেছেন। আফসানা টেবিল গুছিয়ে রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে গম্ভীরমুখে আদেশ দিলেন,

– নাস্তা করে যা।

এই মানুষটার মুখের উপর না বলার সাহস কারো নেই। আশ্চর্য এক দাম্ভিকতায় মুড়িয়ে রাখেন নিজেকে। এমনিতে দেখতে সুন্দর হলে কী হবে, মুখটা এমন কঠিন করে রাখে যে সবাই উনাকে ভয় পায়। এমনকি সাঁঝের দাদী সওদা বেগমও আফসানার থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করেন।

সাঁঝ বিনাবাক্যে টেবিলে গিয়ে বসল। সায়রা বসেছে সাঁঝ ও আফসানার মাঝখানের চেয়ারে।

দুজনে নিজে খাওয়ার পাশাপাশি সায়রাকে খাইয়ে দিচ্ছে৷ স্পেশাল ট্রিটমেন্ট পেয়ে সায়রার আনন্দের শেষ নেই৷ চেয়ারে বসে দু পা দুলিয়ে চলেছে অনবরত।

আজকে সানান ভাই ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠেছে। তুলনামূলক তাড়াতাড়ি আরকি। ঘড়ির কাটা এগারোটার ঘর পেরিয়ে তখনো বারোটা ছুঁতে পারেনি৷
সানান ভাই ঘুম থেকে উঠে দেখল, ঘরের চিত্র পাল্টে গেছে। চারপাশ রোদের মতো হাসছে৷ এমন ঝকঝকে তকতকে ঘরের মেঝেতে পা দিতেও বুক ছ্যাঁত করে উঠে। এই বুঝি নোংরা হয়ে গেল।

পরিপাটি ঘরটার একমাত্র অপরিপাটি অংশ সানান ভাইয়ের বিছানা। বিছানার চাদর এলোমেলো। একপাশের অংশ ঝুলে পড়েছে মেঝেতে। বিছানার মাঝখানে একটা বালিশ। অন্যটা চলে গেছে পায়ের দিকে।

বিছানার চাদরটা টেনেটুনে ঠিকঠাক করার চেষ্টা করল সানান ভাই৷ প্রায় দশ মিনিটের কারসাজিতে তবুও একটু সভ্য দেখালো সানান ভাইয়ের বিছানা৷ নিজের কাজে সন্তুষ্ট সানান ভাই ফ্রেশ হয়ে যখন বাইরে আসল, আফসানা তখন দুপুরের রান্না বসিয়েছেন। ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে ছবি আঁকছে সায়রা।

– আম্মা, নাস্তা দেও।

চেয়ারে বসে হাঁক পাড়ল সানান ভাই। নাস্তার প্লেট এনে সামনে রেখে আফসানা তার বিরক্তমাখা সুরে বললেন,

– এটাকে নাস্তা ডেকে খাবারটার অপমান করিস না। এবেলা কেউ নাস্তা খায় না।

সানান ভাই জবাব দিলেন না। সকালবেলা এমনিতেই আফসানার মাথা গরম থাকে। কিছু বললেই ঝারি খেতে হবে৷ এর থেকে নাস্তা খাওয়া ভালো। এটা বেশ সুস্বাদু।

– আমার ঘর গোছালো কে?

– সাঁঝ এসে গুছিয়ে দিয়ে গেছে।

– ও চলে গেছে?

– হুম।

– নাস্তা করে গেছে?

– করছে৷

– সাতটায় আসতে বলছিলাম। টাইম মতো আসছিল?

– দাসী পুষে রাখছিস না তুই? ঘর নোংরা করবি আর দুদিন পর পর আমরা তোর ঘর গুছিয়ে দিব। আবার টাইম টেবিল বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। রাজ দরবার খুলে বসেছে একেকজন। ঘর এতো নোংরা হয় কীভাবে? কি করিস তুই ঘরে?

– কী আবার করি! হাঁটাচলা করলে ঘর নোংরা হবে না? সারাদিন জানালা খোলা থাকে। কত ধুলাবালি আসে!

– দিনের অর্ধেকবেলা তো পড়ে পড়ে ঘুমাইস৷ জানালা থাকে বন্ধ। বল যে সারারাত জানালা খোলা থাকে৷

– ওই হইল। একই কথা।

– এরপর থেকে ঘর নোংরা করলে নিজে পরিষ্কার করবি। না পারলে বিয়ে করে বউ নিয়া আয়। সে এসে দিনভর ঘর পরিষ্কার করে দিবে৷

সানান ভাই চুপচাপ রুটি ছিড়ে মুখে পুরতে লাগল। সায়রা এতক্ষণ দাদাভাইয়ের অপেক্ষা করছিল। মায়ের বকাবকি শেষ হতেই আর্ট খাতা রেখে উঠে এসে সানান ভাইয়ের সামনে এসে দাঁড়াল। দু হাতে জামার নিচের অংশ ধরে গোল গোল ঘুরে বলল,

– আমি সেজেছি। কেমন লাগছে?

সানান ভাই চেয়ার ছেড়ে উঠে দু হাতে তুলে নিল সায়রাকে৷ উপরে তুলে জোরে ঘুরালো কয়েকবার।

– রুপকথার রাজকন্যা মতো দেখাচ্ছে।

কোলে বসিয়ে ডিমের কুসুম ভেঙে সায়রার মুখে তুলে দিয়ে নিজেও নাস্তা খেতে লাগল। সায়রা তার দাদাভাইয়ের গলা জড়িয়ে ধরে বসে চোখ বড় বড় করে গল্প শোনাচ্ছে।

– আমি চুলও বেঁধেছি।

– তাই তো দেখছি। পাখির বাসা আজকে পরিপাটি করে গোছানো। কে বেঁধে দিল?

– সাজুবেলা বেঁধে দিয়েছে।

– ওর কাজই এটা। নিজেও সং সেজে ঘুরে বেড়াবে। আশেপাশের সবাইকেও সাজাবে।

– এই ক্লিপ দুটো দেখো। সাজুবেলা আমার জন্য নিয়ে এসেছে। সুন্দর না?

– অনেক সুন্দর।

সানানের প্লেটে আরেকটা রুটি দিয়ে আফসানা কড়া চোখে তাকালেন সায়রার দিকে। ধমক দিয়ে বললেন,

– কতোবার বলেছি, আপু ডাকবে। নাম ধরে ডাকছ কেনো?

সায়রা ভয় পেয়ে দাদাভাইয়ের বুকের সাথে আরেকটু মিশে গিয়ে ঘাড়ে মুখ লুকাল।
সানান মাকে বাঁধা দিয়ে বলল,

– ওর যা ডাকতে ভালো লাগে ডাকুক না।

– কেন বড় মানুষের নাম ধরে ডাকবে? বড্ড বেয়াদব হচ্ছে।

– ওসব পুরনো আমলের ধ্যানধারণা। ভালোবেসে, আদর করে একটা কিছু ডাকলেই হলো।

সায়রার মাথায় হাত বুলিয়ে আস্কারা দিয়ে সানান ভাই বলল,

– আমাদের প্রিন্সেস কী সুন্দর সাজুবেলা বলে ডাকে! ইউনিক একটা নাম। ওই সাজুনে বুড়ির ভাগ্য ভালো যে এমন ইউনিক নাম পেয়েছে৷

ছেলের আহ্লাদে বিরক্ত হয়ে আফসানা চোখ রাঙিয়ে রান্নাঘরের পথ ধরলেন। সানান সন্দিহান গলায় বলল,

– আমাকে আপনি করে ডাকতে তুমি-ই বলেছ, তাই না? ওই সাজুনে বুড়ি আগে আমাকে তুমি করে বলত। এখন আপনি আজ্ঞে করে৷ আপনি ডাক শুনলে নিজেকে আশিকালে বাসি বুড়ো মনে হয়৷ ছিহ!

চলবে…
#অক্ষরময়ী

#এই_সাঁঝবাতি? পর্ব: ১২

– হ্যালো? কে বলছেন?

– জুবু? আমি সাঁঝ।

– এটা কার নাম্বার?

– তাশফীন ভাইয়ার।

– উনার ফোন থেকে কল দিতে গেলি কেন?

– বাবার ফোনে টাকা নেই।

– মেসেঞ্জারে মেসেজ দিতি। হঠাৎ কল দিতে গেলি কেন?

– জরুরি দরকার আছে, তাই৷

– কী এমন দরকার শুনি।

– কালকে সকালে আমাদের বাড়ি আসবি। আমরা বসুন্ধরা যাব।

– ও বাবা! বসুন্ধরা কেনো?

– আড়ং-য়ে। শাড়ি কিনতে।

– ফুটপাত থেকে কাপড় কেনার টাকা নাই। আমরা যাব বসুন্ধরা! এই ভাই, এত বড়লোক হয়ে গেলি কবে? টেরই পেলাম না।

– তাশফীন ভাইয়া বাজেট দিয়েছে।

– কী উপলক্ষে?

– প্রথম স্যালারি পেয়েছে। গোয়েন্দার মতো প্রশ্ন করা শেষ হলে বল, কালকে কখন আসবি? একটু তাড়াতাড়ি আসিস, হ্যাঁ?

– সে আমি পৌঁছে যাব। কিন্তু তোর মা তোকে একা যেতে দিবে?

– অবশ্যই দিবে। তাশফীন ভাইয়া সাথে থাকলে কিছু বলবে না।

– উনিও যাবে আমাদের সাথে?

– হ্যাঁ। না হলে বসুন্ধরা চিনব কি করে? তুই চিনিস?

– আজ পর্যন্ত বসুন্ধরার সামনের রাস্তা দিয়েও হাঁটি নাই৷ ওসব পশ এলাকা আমার জন্য না। আমার দৌড় ওই নিউমার্কেট পর্যন্ত-ই।

– কালকে শুধু রাস্তা দিয়ে হাঁটবি না, বসুন্ধরা থেকে শাড়িও কিনবি।

– হয়েছে। এতো লাফাতে হবে না। এখন ফোন রাখ৷ অযথা ফোনের টাকা খরচ করতে হবে না৷ কালকে দেখা হচ্ছে।

– তাড়াতাড়ি আসিস কিন্তু।

জুবিয়া কল কেটে মোবাইলটা রাখা মাত্র দরজা থেকে উঁকি দিল তিথি। এতোক্ষণ আড়ালে দাঁড়িয়ে জুবিয়ার কথোপকথন শুনছিল সে৷ ধরা পড়ে যাওয়ায় শরীর দুলিয়ে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে বলল,

– সারাক্ষণ ঘরে বসে না থেকে রান্নাঘরে একটু উঁকি দিলেও পারো। এই শরীর নিয়ে খেটে মরতে হচ্ছে আমাকে। অন্যদের কপাল দেখো। মাসের পর মাস বেডরেস্টে থেকে বাচ্চা পয়দা করে৷ আর আমাকে চার মাসের পেট নিয়ে খেটে মরতে হচ্ছে৷

জুবিয়া দ্রুত বিছানা থেকে নেমে শুকনো মুখে বলল,

– রান্নাবান্না সবই শেষ। আপনি আবার রান্নাঘরে কেন গেলেন?

– তোমার ভাইয়া খেতে এসেছে। ঠান্ডা খাবার দিব মানুষটাকে?

– হাতের কাজগুলো শেষ করে গোসল করতে এসেছিলাম, ভাবি। ভাইয়া কখন এলো খেয়াল করিনি। আমাকে ডাক দিলেই পারতেন। তরকারিটা গরম করে দিতাম।

– সে তুমি ফোনে ব্যস্ত থাকলে আমার ডাক শুনবে কি করে? যাও বাইরে তোমার ভাইয়া ডাকছে৷

জাকারিয়া খাওয়া শুরু করেছে। মুখটা থমথমে৷ জুবিয়া গিয়ে পাশে দাঁড়াতেই জাকারিয়া বলল,

– তোর ভাবির শরীরটা ভালো নেই। বারবার বমি করতেছে। এই কয়েকটাদিন ঘরের কাজগুলা করলেও তো পারিস। স্কুল কলেজ নাই। সারাদিন ঘরে বসে করিসটা কি?

জুবিয়া বলতে পারল না, সেই ভোরবেলা উঠে সে নাস্তা বানায়, ঘরদোর গুছায়, কাপড় কাচে, দুপুরের রান্না করে, আবার ভাবির খেয়ালও রাখে। সংসার না করেও আস্ত একটা সংসার সামলাতে হয় তাকে।

যে দেখেও দেখা না, তার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর ইচ্ছে হলো না জুবিয়ার। নীরবে ভাইয়ের প্লেটে ভাত তুলে দিয়ে অনুভূতিহীন মূর্তির মতো পাশে দাঁড়িয়ে রইল।

°

নির্ধারিত সময়ে রেডি হয়ে এসেছে তাশফীন। ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে শরবতের গ্লাসে চুমুক দিয়ে আরেকবার ঘড়ির দিকে তাকাল। সাড়ে দশটায় বেরিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এখন বাজে এগারোটা।
কলিংবেল বাজছে। তাশফীন দরজা খুলে দিয়ে দেখল সাঁঝের বান্ধবী জুবিয়া দাঁড়িয়ে আছে। তাশফীনকে আচানক দেখে মেয়েটা ঘাবড়ে গিয়েছে বোধহয়। তাশফীন হালকা হেসে পরিবেশ শান্ত রাখার চেষ্টা করল।

– তুমি আধাঘন্টা লেইট।

জুবিয়া ভেতরে ঢুকে নাকে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম ওড়নার কোণা দিয়ে মুছে চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলল,

– সাঁঝ কখনো সময় অনুযায়ী রেডি হতে পারে না। সর্বনিম্ন এক ঘন্টা সময় অতিরিক্ত লাগবেই৷

– এই সমাচার আমার জানা ছিল না। ঠিক সাড়ে দশটায় এসে হাজির হয়েছি। আধাঘন্টা ধরে বসে আছি। তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে আরও আধা ঘন্টা বসে থাকতে হবে।

– নিঃসন্দেহে।

দুজনে গা দুলিয়ে হেসে উঠল৷ হাসির শব্দে রান্নাঘর থেকে উঁকি দিল স্বর্ণলতা৷ জুবিয়াকে দেখে আবার রান্নার কাজে ফিরে যেতে যেতে বলল,

– টেবিলের উপর শরবত রাখা আছে জুবিয়া৷ তুমি এক গ্লাস নেও। সাঁঝের জন্যও নিয়ে যাও।

এ বাড়িতে জুবিয়া নিজের বাড়ির মতোন ঘোরাফেরা করে৷ বাবা-মা ছাড়া এতিম মেয়েটা সাঁঝের থেকেও বেশি আদর পায় এখানে। সে যেন স্বর্ণলতার আরেকটা মেয়ে।

দুটো গ্লাসে শরবত ঢেলে তাশফীনের দিকে তাকাতেই সে বলল,

– যাও, যাও। মহারাণী নিজের ঘরে৷

বিছানার উপর একগাদা কাপড় ছড়িয়ে স্তুপ করে রাখা। আলমারি থেকে একটা করে কাপড় ছুড়ে মারছে সাঁঝ। টেবিলের উপর শরবতের গ্লাস দুটো রেখে বিছানার এককোনার কয়েকটা কাপড় সরিয়ে আরাম করে বসল জুবিয়া৷ মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে ভনভন করে। ঘামে ভেজা শরীরে একটুকু বাতাস যেন বরফের শীতলতা ছড়িয়ে দিল।

হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে শরবতের গ্লাস হাতে তুলে নিয়ে জুবিয়া বলল,

– আমি মোহাম্মদপুর থেকে চলে এলাম আর তুই এখনো রেডি হতে পারলি না।

সাঁঝ কাঁদোকাঁদো চেহারা নিয়ে ফিরে তাকাল। ঠোঁট দুটো উলটে বলল,

– এই জামার সাথে ম্যাচিং পার্সটা কোথায় রেখেছি খুঁজে পাচ্ছি না, জুবু।

– তোর এখনো মেকআপ করা বাকি? ইয়া আল্লাহ! কখন করবি? মেকআপ করতে আরও একঘন্টা লাগাবি৷

– এক ঘন্টা লাগাবো না। বিশ মিনিটে হয়ে যাবে।

– সত্যি?

– আচ্ছা বেশ, আধা ঘন্টা। কিন্তু আগে ব্যাগটা খুঁজে পেতে হবে।

– তুই সর। আমি দেখছি। তুই আটা ময়দার বস্তা নিয়ে বস।

– তুই-ও এভাবে বলছিস?

– মজা করলাম, পুতুলসোনা। যাও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে উদ্ধার করো আমাদের।

– পার্সটা খুঁজে না পেলে এই ড্রেসটা আবার চেঞ্জ করতে হবে৷

– সেকি! কেনো?

– টোট ব্যাগের সাথে এই ড্রেসটা মানাবে না।

– তোর যত কাহিনী। আমাকে দেখ। সামনে যেটা পেয়েছি সেটা তুলে নিয়ে পরে ফেলেছি৷ ওসব ম্যাচিং ফ্যাচিং আমাকে দিয়ে হয় না।

– তুই যা পরিস তাতেই সুন্দর দেখায়।

– হুম। কালো ভূত দেখায়।

– মোটেও না।

– থাক আর চাপাবাজী করতে হবে না। আমি জানি, আমি কালো।

– কালো না। শ্যামলা। আর শ্যামা মেয়েরা মায়াবতী হয়। এটা জানিস না?

– শুনে ধণ্য হলাম৷ তাড়াতাড়ি রেডি হ। তাশফীন ভাইয়া বাইরে বসে অপেক্ষা করছেন।

জুবিয়ার হাতের জাদুর ছোঁয়ায় সাঁঝের পার্সটা উদ্ধার হয়েছে বলে সাঁঝকে আবার জামা পরিবর্তন করতে হয়নি। তবে মেকআপ শেষ করে জুলিয়ারি ম্যাচিং করে পরা এবং চুল বাঁধার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে মোটে চল্লিশ মিনিট লেগেছে। জুবিয়াকে ধরেবেঁধে কাজল, আইলাইনার ও লিপস্টিক লাগিয়ে দিয়েছে সাঁঝ। নিজের সংগ্রহের সবচেয়ে দামি লিপস্টিকটাও ভাগাভাগি করে নিয়েছে প্রিয় বান্ধবীর সাথে।

ওরা যখন বাড়ি বের হলো তখন প্রায় বারোটা বাজে। তাশফীন ঘড়ির দিকে চেয়ে বলল,

– তিনটায় আমাকে হাসপাতালে ইন করতে হবে। এর আগে তোমাদের যা কেনাকাটা করার করে ফেলতে পারবে না?

চঞ্চল প্রজাপতি দুটো তাশফীনের কথা হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে নিজেদের মধ্যে কলকল করতে ব্যস্ত। সাঁঝ যেন আকাশে রঙিন ডানা মেলে উড়ছে৷ জুবিয়ার বাহু জড়িয়ে ধরে উত্তাল ঝর্ণার মতো উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল,

– আজকে আমার স্বপ্ন পূরণের দিন, জুবু। আমার প্রিয় জামদানী আসবে আমার ঘরে। কী যে আনন্দ হচ্ছে!

– জামদানীর নিশ্চয়ই অনেক দাম? এত দামী গিফট নিবি?

– কম দামেরও আছে। ওগুলো একটা নিব। ভাইয়াকে বলেছি সুতির মধ্যে ব্লকপ্রিন্টের একটা শাড়ি কিনে দিতে। কিন্তু আমার জামদানীর শখের কথা শুনে ভাইয়া বলেছে, জামদানী কিনে দিবে। আমি একদম জোর করিনি। কসম।

– আচ্ছা বেশ। দিতে যখন চেয়েছে, নিবি। কোন রঙের জামদানী কিনবি ঠিক করেছিস?

– উমমম.. এমনিতে আমার লাল রঙের জামদানী খুব পছন্দ। কিন্তু ওটা স্পেশাল। জামাইয়ের কাছ থেকে কিনে নিব। সেজন্য ভাবছি এখন অন্য কোনো রঙের একটা নিই। পার্পেল কেমন হবে?

– ভালোই। তবে ওখানে গিয়ে দেখতে হবে কোন কালারের কেমন কালেকশন আছে। তারপর ডিসাইড করা যাবে।

– তা ঠিক। জুবু?

– হুম?

– আমার একটা শখ আছে জানিস? স্বপ্ন বলতে পারিস।

– কি? স্বপ্নটা শাড়ি নিয়ে নিশ্চয়ই।

– অবশ্যই। তুই আমাকে এত বুঝিস! এজন্যই তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড। তোর মতো আমাকে কেউ বুঝে না। মা-ও না।

– স্বপ্নটা কি শুনি?

– শাড়ি রাখার জন্য আমার একটা আলাদা আলমারি থাকবে। সেখানে একটা তাকে থাকবে সব রঙের জামদানী শাড়ি। রেড, মেরুন, পিংক, হোয়াইট, অফ হোয়াইট, পার্পেল, ল্যাভেন্ডার, ব্লু, স্কাইব্লু, গ্রিন থেকে শুরু করে মিন্ট – সব ধরনের কালেকশন থাকবে আমার।

বিস্ময়ে জুবিয়ার মুখ হা হয়ে গেল। চোখ দুটো মার্বেল সাইজের হয়ে গেছে। মাথায় হাত দিয়ে বলল,

– পাগল তুই? কোটিপতি জামাই দেখতে হবে তোর জন্য।

– কয়েকটা শাড়ি কিনে দিতে না পারলে তাকে বিয়ে করব কেনো?

– কত টাকা লাগবে জানিস?

– দামীগুলো-ই কিনে দিতে হবে এমন না। আমিও একটু সেক্রিফাইস করবো। কম দামের মধ্যে নিব। তবুও আমার সব কালারের জামদানী চাই।

– স্বপ্ন একটু কম দেখো পুতুলসোনা। ভেঙে গেলে কষ্টটাও কম পাবে। এখনও কালেকশনে একটা জামদানী নেই, আর সে স্বপ্ন দেখতেছে জামদানীর সব কালার চাই।

– আজকে বিসমিল্লাহ বলে কেনা শুরু করব। আল্লাহ বরকত দিবেন।

– আমিন।

°

ওপাড়ার খয়রুল পল্লবের দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে সবে সিগারেটে আগুন জ্বালিয়ে একটা টান দিয়েছে, তখনি সিএনজিটা এসে রাস্তার পাশে দাঁড়ালো। পারফিউমের মিষ্টি গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়তেই খয়রুলের মনোযোগ আরও গাঢ় হল। সরু চোখে তাকিয়ে দেখল সামনের মেয়ে দুটোকে। আকাশে জ্বলজ্বল করতে থাকা দুটো সূর্য যেন। ওদের মধ্যে গোলগাল মুখটা নজরে পড়তেই চোখ ফিরিয়ে নিল খয়রুল। শুকনো কেশে পল্লবকে বলল,

– এটা সানান ভাইয়ের চাচাতো বোনটা না?

পল্লব বসার আসন থেকে গলা বাড়িয়ে ভালোভাবে চেয়ে দেখল। মুখে নামল অন্ধকার। বিরস মুখে বলল,

– হ্যাঁ। সাঁঝ আপাই তো।

– সাঁঝে সাথের ছেলেটারে চিনস?

– আপাগো বাড়িত গেছিল কয়েকবার। আত্মীয় বোধহয়।

– যায় কই?

– কী জানি!

– জিগামু?

– যাইয়ো না। সানান ভাই শুনলে তোমার খবর করে ছাড়বে না।

খায়রুল নিজের ইচ্ছেকে দমন করল। চোখের সামনে বেরিয়ে যেত দেখ সিএনজিটিকে। আয়েশ করে সিগারেটটা শেষ করে মোবাইল বের করে কল দিল সানান ভাইয়ের নাম্বারে।

– ভাই, খয়রুল বলতেছি। চিনছেন?

– জরুরি কিছু বলার থাকলে তাড়াতাড়ি বল। কাজ করতেছি।

– আপনার বোনরে দেখলাম, কই জানি যাইতেছে।

খয়রুলের কথা শুনে মাথায় হাত রাখল পল্লব। মাথামোটা স্বভাবের কারণে আরেকদফা পিটুনি খাবে এই ছেলেটা। উল্টাপাল্টা কাজ করে সানান ভাইয়ের মেজাজ খারাপ করে দেওয়ার বাজে অভ্যাস আছে খয়রুলের৷
সানান ভাই ভ্রু কুঁচকে বলল,

– সায়রা? ও একা বাড়ি থেকে বের হয়েছে?

– নাহ, নাহ ভাই৷ সায়রা তো ঠিকঠাক হাঁটতেই শিখে নাই৷

– আমার জানামতে আমার বাপের একটাই মেয়ে। অন্য কোথাও বিয়েশাদি করে মেয়ে পয়দা করলে, সেই ব্যাপারে আমার আগ্রহ নাই।

– ভাই, মশকরা করতেছেন?

– তোর সাথে আমার মশকরার সম্পর্ক? অফিস টাইমে কল দিয়ে খেজুরে আলাপ শুরু করছিস, আহাম্মক।

– না মানে, সাঁঝ আপার কথা কই।

বিজ্ঞাপন এজেন্সির মিটিংটা শেষমেষ এটেন্ড করতে হচ্ছে সানান ভাইকে। সকালবেলা না ঘুমিয়ে অফিসে উপস্থিত হওয়ার কারণে মেজাজ এমনিতেই খিটখিটে হয়ে আছে। খয়রুলের ফোনকলটা আগুনে ঘি ঢালার কাজ করছে এই মুহূর্তে। সানান ভাই এক মুহূর্ত চুপটি করে রইল। গাঢ় নিঃশ্বাসের শব্দে ভারী হয়ে উঠল বাতাস। খয়রুল বোধহয় বুঝল পরিস্থিতির গুরুগম্ভীরতা। বরফ ন্যায় শীতল কণ্ঠে সানান ভাই শুধালো,

– তোর সাঁঝ আপা আমার বোন হলো কবে থেকে খয়রুল?

– না মানে…

– সে কি আমার বাপের মেয়ে?

– না মানে আপনার চাচাতো বোন আরকি।

– বোনের আগে অবশ্যই চাচাতো শব্দটা উল্লেখ করা দরকার ছিল। পরেরবার যেন এমন ভুল না হয়।

– স্যরি ভাই।

– কোথায় দেখছিস ওকে?

– মোড়ের দোকানের সামনে সিএনজিতে করে কই যেন গেল।

– একা?

– নাহ। সাথে আরেকটা মাইয়া ছিল।

– ওহ।

– ভাই?

– হুম।

– সাথে একটা পোলাও আছিল।

সানান ভাই আরও কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। সাঁঝের সাথে ছেলে! তাও আবার বাড়ির সামনের রাস্তায়। কে হতে পারে?

– পল্লব কইল পোলাডা প্রায় নাকি সাঁঝ আপাগো বাড়িতে যাওয়া আসা করে৷

– লম্বা, ফর্সা করে?

– হ ভাই। দেখতে ভদ্র ধাচের।

– একই সিএনজিতেই উঠছে?

_ হুম।

– তিনজনে সিএনজির ভেতরে বসছে।?

– হ। পেছনের সীটেই উঠতে দেখলাম।

সানান ভাই বিড়বিড় করে আপনমনে বলল,

“কেন? ড্রাইভারের পাশে জায়গা ছিল না? দুজনে একসাথে চিপকায় বসতে হবে!”

– ভাই, পোলাডারে আটকায় দিমু?

– ওর নাম তাশফীন। সাঁঝের খালার ছেলে৷ বেশ কয়েকদিন হলো আমাদের ফ্ল্যাটে ভাড়া উঠেছে। তুই বোধহয় আজকাল ঠিকঠাকভাবে নিজের কাজ করতেছিস না।

– না মানে ভাই… কয়েকদিন জ্বরে পইড়া ছিলাম ঘরে। এদিকটায় খেয়াল রাখা হয় নাই৷ তবে সমস্যা নাই ভাই। আমি না থাকলেও দলের বাকি পোলাপাইন ছিল এই দিকে।

– কই গেছে ওরা?

– খোঁজ নিয়া জানাইতাছি ভাই।

– কল দেওয়ার দরকার নাই। মিটিংয়ে ঢুকব। মেসেজ পাঠায় দিস।

– ঠিক আছে ভাই।

সানান ভাই মিটিংয়ে বসে মেসেজ পেল, সাঁঝ বসুন্ধরা শপিংমলে গিয়েছে।

সানান ভাই সাথেসাথে ফিরতি মেসেজ পাঠাল,

“ওদেএ আশেপাশে থাক। কই কই যায়, আপডেট জানাইস। আর খেয়াল রাখিস, তোর সাঁঝ আপা যেন ঠিকঠাক বাড়ি পৌঁছায়।”

চলবে..
#অক্ষরময়ী