একগুচ্ছ শুকতারা পর্ব-০৩

0
174

একগুচ্ছ শুকতারা
শারমিন ইরান

৩.
খাটের মাঝখানে নির্জীব প্রাণীর ন্যায় বসে আছে বিভা। তার স্বামীর নাম সম্ভবত ‘মাহাব’ হবে৷
বিভা হাপ নিঃশ্বাস ছাড়ল৷ মায়ের মৃত্যুর পর আবার আজ প্রথম নিজেকে অসহায় লাগছে বিভার৷ বিদায় বেলাতেও সে কাঁদেনি। শ্রুতির মাথায় হাত বুলিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে নিজেও তার শ্বশুরবাড়ির আনা গাড়িতে বসেছিল৷ বিদায় বেলাতে হামিমকে কতো খুঁজল, কিন্তু রাগ করে ছেলেটা কোথায় বসে ছিল কে জানে! সবার তাড়াহুড়োয় দেখাও হলো না৷ তবে দাদীজান তো আছে৷ সে নিশ্চয়ই খেয়াল রাখবে…
খাটের ফুলের দিকে তাকাল বিভা৷ আহামরি তেমন কোনোভাবে সাজানো হয়নি৷ বিছানায় শুধু ফুল রাখা৷ এতোটুকুই!

পানি পড়ার শব্দ আসছে৷ হয়তো গোসল করছে লোকটা৷ লোকটার সাথে সেভাবে কথা হয়নি। তাছাড়া কথা বলার উপায় কই? তার বাবাই তো রাখেনি, পাছে বিভা উল্টাপাল্টা বলে বিয়ে না ভেঙে দেয়৷ বিভার যে বিয়েতে মত ছিল না- তাও না; আর পাঁচটা মেয়ের মতোই সেও স্বপ্ন দেখতো তার বিয়ে হবে, সংসার হবে৷ কিন্তু সবকিছু সামলে নেওয়ার আগেই তাদের বাবা তাদের দুইবোনকে বিয়ে দিয়ে দিল৷ বিভা চেয়েও কিছু করতে পারল না৷ কারণ এর প্রভাব পড়বে হামিম এর উপর৷
বিভা স্বভাবে ভীষণ শান্ত মেয়ে৷ শ্রুতির মতো “তিড়িংবিড়িং” শ্রেনীর মেয়ে নয়৷

কিছু একটার শব্দ হতেই শব্দের উৎস খুঁজতে সেদিকটায় তাকাল বিভা৷ তার শ্বাশুড়িমা দাঁড়িয়ে আছে৷ বিভা খাট থেকে নেমে দাঁড়াল৷ বিভার শ্বাশুড়ি হাসিনা বেগম এগিয়ে এলেন৷ ব্যাকুল কন্ঠে বলল, ‘বউ, মাহাথির আব্বা আইসে? কথা হইসে তোমার লগে?’
বিভা শান্ত দৃষ্টি মেলে চেয়ে রইল৷ তার কিছুই বোধগম্য হলো না৷ মাহাথির কে? তবে কী তার স্বামীর নাম মাহাথির?
বিভা মিনমিনে কন্ঠে বলল, ‘মাহাথির…. আসলে উনি ওয়াশরুমে গেছেন ফ্রেশ হতে৷’

‘আচ্ছা! এমনিতে কোনো সমস্যা নাই তো?’
‘না না ঠিক আছি৷’
‘আচ্ছা তাইলে থাকো৷ কেমন?’

বিভা চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল৷ হাসিনা বেগম প্রশান্তির শ্বাস ফেলে চলে গেলেন৷
বিভা ঘুরে বাথরুমের দিকে তাকাল৷ মানুষটা এখনো বের হলো না। কেমন যেন মনের মাঝে অন্যরকম খারাপ একটা অনুভূতি হচ্ছে। এছাড়াও শ্বাশুড়ির কন্ঠে কেমন অনিশ্চয়তার টান৷ চিন্তা হতে লাগলো বিভার৷ নতুন করে খারাপ কিছু হবে না তো? তার অবচেতন মনে কোথাও এই আশা ছিল যে শ্রুতি, হামিম বাদেও হয়তো সে নতুন আপনজন পেতে চলেছে৷ সেই আশা কী পূরণ হবে?

হামিমের একটা খোঁজ নেওয়া দরকার। বিভা তড়িঘড়ি করে নিজের ফোন খুঁজতে লাগল।

.
আকাশের চাঁদটা সুন্দর৷ অনেক বেশী সুন্দর৷ সুন্দর তো হবেই৷ চাঁদটা যে শ্রুতির মা৷ তাইতো এত্তো সুন্দর! এই কথা তো তাহিরা নিজে বলেছে৷ শ্রুতিকে একবার তার এক বান্ধবী বলেছিল,

‘শ্রুতি,তোমার গায়ের রঙ কালো৷ কিন্তু আমাকে দেখ৷ আমি কত্তো ফর্সা!’

তা নিয়ে শ্রুতির সে কী কান্না! না বিভা থামাতে পারে, না আমিন সাহেব থামাতে পারে আর না তাহিরা থামাতে পারে৷ অবশেষে তাহিরা শ্রুতিকে কোলে নিয়ে ছাদে উঠে গেল৷ ছাদে গিয়ে শ্রুতির মুখ উঁচু করে বলল, ‘শ্রুতি, আকাশের কোন জিনিসটা সবচেয়ে সুন্দর আমাকে বলতো ?’

শ্রুতি চোখ পিটপিট করে বলল, ‘তারা সবচে’ সুন্দর।’

‘হুম। আর ওই তারাটাই হলো শ্রুতি৷’

‘আমি কী করে তারা হবো? তারা তো ফর্সা।’

‘উহুম! আমার শ্রুতি-ই হচ্ছে আকাশের সবচে’ সুন্দর তারা। আমার মেয়ের মতো সুন্দর মেয়ে এই দুনিয়াতে নাই। যারা মানুষ হিসেবে একটু কালো হয় তাদের মনটা হয় অনেক ফর্সা আর সুন্দর। ঠিক যেমনটা আকাশের তারা৷ আসলে মানুষের মন গুলাকেই আল্লাহ আকাশে সাজিয়ে রেখেছে আর নাম দিয়েছে তারা৷ সুন্দর না ব্যাপারটা?’

‘তোমার মনও সুন্দর৷ আপার মনও সুন্দর৷ তাহলে তোমরা কই?’

‘ওই তো তোর আশেপাশের তারাগুলার মধ্যেই বিভা আছে ৷ আর আমি হলাম ওই চাঁদটা। মা তো বড়। তাই চাঁদটাও তারাদের চেয়ে বড়।’

সেদিন শ্রুতি খুব হেসেছিল৷ খিলখিল করা হাসিতে বিমুগ্ধ হয়েছিল প্রকৃতি৷ এরপর থেকে প্রতিদিনই আকাশে তারা দেখত শ্রুতি৷ সবচেয়ে সুন্দত তারা টাকে বিভা বানাত৷ আর তার পাশের তারাটা সে নিজে হতো৷ হামিম আসার পর তাদের তারারাজ্যে হামিমেরও আগমন ঘটল আর আমিন সাহেবের নির্গমন।

‘তারাগুলো অনেক বেশি সুন্দর৷ আর আকাশের তারাদের থেকেও আমার সামনের তারাটা তুলনামূলক একটু বেশি সুন্দর৷’
নিজের পাশে কারোর উপস্থিতি টের পেতেই
আড়চোখে দেখল শ্রুতি৷ তার ধারণাকে সত্যি করে দিয়ে তার পাশে পার্থিবই দাঁড়িয়ে আছে৷ বিরক্তিতে মুখ দিয়ে আওয়াজ বের করে জানালা থেকে খাটের সামনে এসে দাঁড়াল শ্রুতি৷ পার্থিব শ্রুতির পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
‘আপনার সাথে ফ্লার্ট করলাম, কেমন হলো?’

শ্রুতি উত্তর দিল, ‘আপনার কী মনে হয়না আপনি একটু বেশি বেশি করছেন? কেন করছেন এমন?’

‘আপনার স্বামী তাই৷’পার্থিবের সরল উত্তর।

কথাটা কানে পৌঁছাতেই ভেতরে ভেতরে কেঁপে উঠল শ্রুতি৷ ঠিকই তো। এই মানুষটাই তার স্বামী৷ কিন্তু তবুও! পার্থিব তো জানে না শ্রুতির সম্পর্কে।

‘আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে৷ তবে একদম ন্যাচরাল ভাবেই আপনি বেশি সুন্দর, স্নিগ্ধ। এখন মেকাপ টা কেমন যেন গলে গলে পড়ছে৷’

কথাটায় শ্রুতির অস্বস্তি হলো৷ কোনো ছেলের সাথে তেমন মেশার সুযোগ হয়ে ওঠেনি৷ হঠাৎ এইভাবে কোনো পুরুষের প্রশংসায় অস্বস্তি হওয়াটাই হয়তো যুক্তিগত। পার্থিবের দিকে নিজের পিঠ তাক করে উল্টো ঘুরে বলল, ‘আপনাকে আমার মেকাপ পর্যবেক্ষণ করতে আমি বলিনি৷’

‘তা হয়তো বলেন নি৷ কিন্তু স্বামী হিসেবে আমার একটা দায়িত্ব আছে না?’

‘আপনি প্রথম দেখাতেই একটা মেয়ের সাথে এভাবে কীভাবে কথা বলতে পারেন?’ আশ্চর্যের সাথে রাগ মিশিয়ে প্রশ্ন করল শ্রুতি।

‘প্রথমতো আপনি আমার বউ৷ আর দ্বিতীয়ত এটা আমাদের প্রথম দেখা নয়৷ এর আগেও আমাদের দেখা এবং কথা দুটোই হয়েছে। যদিও সেটা প্রথমবার ছিল না৷ শুনে কষ্ট লাগল যে আমাকে ভুলে গেছেন৷ শেষ পর্যন্ত কি-না ‘ভুলো মনের’ বউ পেলাম।’ কষ্টের অভিনয় করল পার্থিব।

শ্রুতি সঙ্গে সঙ্গে পার্থিবের দিকে তাকাল৷ এই প্রথম তাদের দুই জোড়া চক্ষু এক অপরের দিকে স্থির হলো৷ শ্রুতি নিঃশব্দে ভাবতে লাগল তার সাথে পার্থিবের কোথায় দেখা হয়েছে? তবে তার কেন মনে নেই? সত্যি কী দেখা হয়েছে নাকি ছেলেটা মিথ্যে মিথ্যে বলছে? ভেবেই ভ্রুদ্বয় কুঁচকে গেল শ্রুতির৷

‘বেশি চিন্তা করবেন না৷ স্বাস্থ্যের জন্য একদম ভালো নয়৷ আর আমি চাইনা আমার বউ প্রথম রাতেই চিন্তা করতে গিয়ে অসুখ বাধিয়ে ফেলুক৷ আর তাছাড়া আমার যখন আপনার সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল, তখন আপনি আমায় দেখেননি৷ কেবল আমিই দেখেছিলাম৷ তাই আপনি চাইলেও আমায় মনে করতে পারবেন না৷’

মানুষটা বড্ড অদ্ভুত। এই পর্যন্ত শ্রুতি একটা ভালো করে কথাও বলেনি৷ অথচ সে? একটার পর একটা কথা বলেই চলেছে৷ আর প্রতিটা কথায় “আমার বউ” বলে সম্বোধন করছে৷ পার্থিব কী সত্যি শ্রুতিকে পছন্দ করেছে নাকি নাটক করছে এইসব? নাটকই তো৷ কাউকে পছন্দ করা এতো সহজ নাকি? ছেলেদের কাজ-ই তো এই নাটক করা৷ বউ এর সামনে নাটক করা আর বউ না থাকলেই অন্য মেয়ের কাছে সুখের খোঁজ করা৷ এইসব এর জলজ্যান্ত উদাহরণ তার পিতা আমিন সিকদার৷

নিজের বাবার প্রতি ঘৃণায় চোখে পানি চলে এলো শ্রুতির৷ শ্রুতি উল্টোদিকে ঘুরে আছে বিধায় তার মুখ দেখা যাচ্ছে না৷ পার্থিব এগিয়ে এলো৷ মিষ্টি হাসিসমেত বলল,

‘শ্রুতি, আমার মনে হচ্ছে কোনো কারণে আপনি রেগে আছেন৷ রেগে থাকুন৷ সমস্যা নেই৷ রাগটা স্বাস্থ্যের জন্যে ভালো৷ কিন্তু রেগে থাকলেও চলুন দু’জন একসাথে মিলে নামাজ পরে নেই৷ এতে যদি আপনার মাথার শয়তান মাটিতে নামে…৷’

শ্রুতি পার্থিব এর দিকে চাইল। রাগ করতেও এখন আলসেমি লাগছে৷ বুঝাই যায় মানুষটা নিজে খুবই ঠান্ডা মাথার৷

শ্রুতি বিরক্ত হয়ে বলল, ‘নামাজ পড়বেন তো পড়ুন৷ আমাকে বলার কী আছে?’
বলেই বাথরুমে চলে গেল৷ কিছুক্ষণ পরই বেরিয়ে নামাজে দাঁড়াল৷ পার্থিবের অবাক হওয়া উচিত কি-না পার্থিব বুঝল না৷ নামাজ যেহেতু পড়লোই, শুরুতে ওমন করার মানে কী ছিল?

দুইজন একসাথে নামাজ পরে নিল৷ নামাজে শ্রুতির একমাত্র দোয়া তার আপা আর ভাই যেন ভালো থাকে৷ খুশি থাকে৷ অপরদিকে পার্থিব এর দোয়া তাদের বিবাহিত জীবন যেন বরকতময় হয়৷

রাত অনেক হয়েছে৷ ঘুমানো উচিত৷ বিছানায় ফুলের ছড়াছড়ি। শ্রুতি জানিয়েছে সে এতো ফুলের মাঝে কিছুতেই ঘুমাতে পারবে না৷ পার্থিব তাই তা পরিষ্কার করতে নেমে গেছে৷ শ্রুতি নিজেই করতে নিলে পার্থিব বলল,
‘দেখুন, এখন আপনি আমার বউ এইটা ঠিক৷ এই ঘর আমাদের এইটাও ঠিক৷ কিন্তু আপনি মন থেকে কিছুই মানেন নি৷ সেই হিসেবে আপনি এখনো মেহমান-বউ৷ যেদিন মন থেকে সব মানবেন সেদিন আপনি হবেন আপন বউ৷ আর সেদিন আমি আপনাকে কোনো কিছুতেই বাঁধা দিব না৷ সেইপর্যন্ত আপনি আমার কাছে মেহমান৷ তাই মেহমান সাহেবা, আপনার সেবায় আমাকে নিয়োজিত হতে দিন৷’

পরিষ্কার শেষে পার্থিব উজ্জ্বল মুখে এগিয়ে এলো৷ বলল,
‘আপনি এবার শুতে পারেন৷ বিছানা একদম ক্লিয়ার৷ আসুন, শুয়ে পরুন৷ আমি পায়ে মলম লাগিয়ে আসছি৷’

কথাটা বলেই পার্থিব কোনো কারণে বারান্দায় যাচ্ছিল৷ শ্রুতি পিছন থেকে বলল ‘শুনুন!’
পার্থিব পিছনে ফিরতেই শ্রুতি সামনের দিকে ফিরে গেল৷ অর্থাৎ আবার পার্থিব এর দিকে পিঠ তাক করে দাঁড়াল৷ পার্থিব তাকিয়ে রইল৷ শ্রুতি নিজের অস্বস্তি, ইগো সব দূরে ঠেলে বলল, ‘আমি… আসলে…সরি।’
পার্থিবের ভ্রু কুঁচকে গেল৷ বলল, ‘কেন?’

শ্রুতি চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ‘তখন আমি ইচ্ছে করে আপনার পায়ে জগটা ফেলে দিয়েছিলাম৷ আপনার প্রতি অনেক রাগ হয়েছিল তাই৷ এখনো রাগ আছে৷ তবে আমি ভুল করেছি। তাই আমার মনে হলো সরি বলা দরকার৷’
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামল শ্রুতি৷
পার্থিব ক্ষমা করে দেওয়াটা অপ্রকাশিত রেখে কিছুটা মজার ছলে বলল,
‘ছোটমানুষদের ভুল ক্ষমা করে দেওয়া উচিত।’
শ্রুতি ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল৷

কিছুক্ষণ পরই শ্রুতি লক্ষ্য করল তোষক জাতীয় কিছু আলমারির নিচের পার্ট থেকে বের করছে পার্থিব৷ শ্রুতির ভ্রু কুঁচকে গেল আপনা আপনি৷ শ্রুতি কিছু বলার পূর্বেই পার্থিব বলল,
‘আজ সারাদিন অনেক ধকল গেল৷ ঘুমিয়ে পরুন জলদি৷’

‘আপনাকে কেউ এখানে নাটক করতে বলেনি, পার্থিব৷ আপনি যদি ওইখানে ঘুমানোর চিন্তা করে থাকেন, তাহলে চুপচাপ খাটে এসে শুয়ে পড়ুন৷ আজাইরা ঢং আমি পছন্দ করিনা৷ আজ ঢং করছেন, কিছুদিন পর ঝাপিয়ে পড়বেন৷’ শ্রুতির রুক্ষ কন্ঠে শান্ত দৃষ্টিতে চাইল পার্থিব৷ কেউ একজন বলেছিল, কোনো মানুষ যদি কাউকে নাম ধরে সম্বোধন করে এতে করে ভালোলাগা কাজ করে মানুষটার প্রতি। পার্থিবের ভালো লেগেছে শ্রুতির মুখে নিজের নাম শুনে; সাথে বাকি কথা শুনে হাসিও পেল। পুরুষদের নিয়ে যতো নেগেটিভ ধারণা আছে সব নিজের মনে পুষে রেখেছে।
উত্তর দিল, ‘সমস্যা নেই৷ আমি খাটে ঝাপিয়ে পড়লে আপনি নাহয় এই তোষকে ঝাপিয়ে পড়বেন৷ আর এই উঁচু তোষকটা এখানেই থাকে, খাটের পাশে। আমার খাটের চেয়ে এই তোষকটা ভীষণ প্রিয়৷ এখানে শুয়ে আমি আরাম করে বই পড়ি৷ তবে আজ তো আমার বাসর রাত৷ রুমের সৌন্দর্য রক্ষার্থে আমার মা এইটাকে আলমারিতে ঢুকিয়ে রেখেছিল৷ তাই এতো চিন্তা ছেড়ে শুয়ে পড়ুন৷’

শ্রুতিকে একইভাবে বসে থাকতে দেখে কিছু বলতে উদ্যত হবে এরই পূর্বে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ মনে পড়ে গেছে এমন ভাবে উঠে দাঁড়াল৷ আলমারি থেকে একটা খাম এগিয়ে দিল৷ শ্রুতি সেদিকে তাকিয়ে রইলে পার্থিব বলল,
‘আমার বউকে ছোঁয়ার সকল শর্ত পূরণ করলাম।’

শ্রুতির মুখটা কিছুটা ভড়কে গেলে পার্থিব হেসে দিল৷ তার বউ দেখি সত্যিই অনেক বোকা৷ পার্থিব এগিয়ে শ্রুতির কপালে চুল দুই হাত দিয়ে সরিয়ে মাথায় হাত রাখল৷ মূহুর্তের মধ্যেই শরীরে যেন ঝঙ্কার তুলে দিল শ্রুতির৷ চোখের কোণে জমা হলো কিছু বিন্দু বিন্দু ভাসা পানি৷ পার্থিবের মাথায় হাত রাখাতে হঠাৎ মনে হলো যে এরচেয়ে ভরসার আর কিছু হতে পারে না৷

পার্থিব গিয়ে শুয়ে পড়ল সরু তোষকে৷ কপালে হাত দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করল৷ শ্রুতি অন্যদিকে ঘুরে রইল৷ এইসব কী স্বপ্ন নাকি বাস্তব? কিছুক্ষণ পরে পার্থিবের গলা ভেসে এলো।
‘শ্রুতি?’
‘বলুন৷’
‘আপনি বলেছিলেন বিয়ে মানে অর্থের বিনিময়ে যৌন তা৷’
‘ভুল কিছু বলিনি৷ ঠিকই বলেছি৷’

এবার পার্থিবের গলা পাওয়া গেল না৷ কিছুক্ষণ পর পার্থিব বলল,‘আমার কাছে বিয়ে মানে আত্মার বিনিময়ে আত্মা৷ আমাদের হবে আত্মার সম্পর্ক৷ আপনি দেখে নিয়েন৷’
____________

চলবে~