একগুচ্ছ শুকতারা
শারমিন ইরান
১৪.
সম্প্রতি কিছুদিন ধরে পার্থিব তার কাজের তালিকায় নতুন একটি কাজ যোগ করেছে। আর তা হলো — হামিমের সাথে সময় কাটানো।
এইতো বর্তমানে হামিম ফল খাচ্ছে নিজ হাতে। আর পার্থিব হামিমকে গম্ভীরচোখে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। মাথাটা হালকা বড়, তবে অতোটাও নয়, ভালোভাবে খেয়াল করে একটু বেশি দৃষ্টিকটু লাগে। পা হালকা চিকন, এতোদিনে যা বুঝেছে উঠে দাঁড়াতে পারেনা ছেলেটা। আচ্ছা পা টা কি সারাজীবন এমনই থাকবে? না-কি ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা আছে? জানা হয়নি, শ্রুতির থেকে জানতে হবে।
‘হামিম, তোমার প্রিয় খাবার কী?’ প্রশ্নটা জিগ্যেস করেই ফেলল পার্থিব। আজকে সে এই বাচ্চার সাথে ভাব জমিয়ে তবেই ছাড়বে। প্রশ্নের পর কিছু সময় পেরুল। বলা বাহুল্য প্রশ্নের উত্তর দেওয়া তো দূর, হামিম পার্থিবের দিকে তাকাল না পর্যন্ত।
পার্থিব হাল ছাড়ল না। কথা সে বলেই ছাড়বে। এইবার হাত বাড়িয়ে হামিমের মাথায় হাত রাখল পার্থিব। এইবার বোধহয় সফলতার এক ধাপ পার হলো সে। হামিম ভ্রু কুঁচকে তাকাল। পার্থিব মিষ্টি হেসে বলল, ‘তোমার প্রিয় খাবার কী, হামিম? ভাইয়াকে বলো, আমি তাহলে তোমার জন্য তোমার প্রিয় খাবার নিয়ে আসব। পাক্কা প্রমিজ।’
হামিম ভ্রু কুঁচকে নিজের কাজে মন দিল। পার্থিব হাপ নিঃশ্বাস ছাড়ল। সে ভুলে গেল কী করে এইটা শ্রুতির ভাই। শ্রুতিকে যেভাবে বোবা ভূতে ধরে থাকে সবসময়, নিশ্চিত হামিমকেও সেই ভূতেই ধরে থাকে। তবে ভূত আজকে সে ছুটিয়েই ছাড়বে।
পার্থিব নিজের জেদ বজায় রেখে আবারো হামিমের সাথে কথা বলার জন্য হামিমের কাঁধে হাত রাখল। সেকেন্ড বোধহয় পার হলো না, ওমনি হামিম দুই হাত দিয়ে কোকের গ্লাস ধরে পার্থিবের মুখে ছুড়ে মারল।
আকস্মিক ঘটনায় পার্থিব হতভম্ব, কান্ডজ্ঞানহীন হয়ে পড়ল। এইটা কী হলো? সারা শরীর কেমন আঠালো হয়ে গেল নিমিষেই। ওমনি পেছনে থেকে হাসির শব্দ পেয়ে পার্থিব পেছনে ফিরল। শ্রুতি দরজায় দাঁড়িয়ে হাসছে। শরীর মৃদু মৃদু কাঁপছে। বোঝাই যাচ্ছে চেয়েও হাসি থামাতে পারছেনা মেয়েটা। কেমন মুখে হাত দিয়ে খুট খুট করে হাসছে। পার্থিব ভ্রু কুঁচকে হেসে দিল। এই কুঁচকানো ভ্রু জোড়া যেন শ্রুতির প্রতি আশকারা ছিল। এতো বড় কান্ডের মালিককে দেখার জন্য তার দিকে ফিরতেই দেখল এদিকে তার কোনো খেয়াল নেই, সে মনের আনন্দে ডালিম খাচ্ছে একটা একটা করে।
.
মানুষ কখনো নিজের অবস্থানে খুশি থাকেনা। এই যে এই দেশের কতো কতো যুবক একটা চাকরির পেছনে ছুটছে, একটা চাকরির জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলছে, কেউ কেউ নিজের পরিবারের উপর বোঝা হচ্ছে, কেউবা হারাচ্ছে নিজের প্রিয়মানুষ। তাদের কাছে ‘চাকরি’ শব্দটা যেন সোনার হরিণ। অথচ এই চাকরি যারা করে তারা ভাবে, চাকরি করার চেয়ে ব্যবসা ভালো। ব্যবসা জিনিস হয়তোবা অনেক সোজা। চাইলে করলাম, না চাইলে করলাম না। কোনো বস থাকেনা, বসের ঝারি খেতে হয়না। যা মন চায়, করা যায়। গেলে গেলাম, না গেলে নাই। এইভাবেই পৃথিবীর প্রতিটা মানুষ নিজেদের অবস্থান নিয়ে অসন্তুষ্ট। কারণ তারা জানেনা যে, নিজের জায়গা থেকে অন্যদের জায়গা সহজই মনে হয়। আসলে সহজ নয়। পৃথিবী কঠিন। বড্ড কঠিন।
চাকরিকে গালাগালি করতে করতে অফিসে ঢুকল মাহাথির। নিজের জায়গায় বসতে গিয়ে মুখ দিয়ে আপনা আপনি আর্তনাদ বেরিয়ে এলো। হাতের দিকে তাকিয়ে দেখল ভালোই কেটেছে। আসার সময় ছোটখাটো একটা এক্সিডেন্ট হয়। সেখান থেকেই হাত কেটেছে, পা-ও হয়তো ছিলে গেছে। নিজের উপর ভীষণ বিরক্ত হলো মাহাথির। বিরক্ত হয়েও লাভ নেই, লাঞ্চ টাইমে ব্যান্ডেজ করে নিতে হবে ভেবেই কাজে মন দিল।
১ টা ২০ বাজে। ১ টা ৫০ পর্যন্ত ব্রেক টাইম। মাহাথির হালকা কিছু খাবার খাচ্ছিল। পেছন থেকে শুনতে পেল,
‘হ্যালোওওও মিস্টার মাহাব।’
খাবার চিবুতে থাকা অবস্থায়ই ভ্রু কুঁচকে ফেলল। পেছনে ঘুরল না। পেছনের জ্ঞাত ব্যক্তিটি সামনে এসে মাহাথিরের পাশে বসল।
‘হোয়াটসঅ্যাপ ব্রো, বিয়ে করে তো দেখি তোমার রুপ বেড়ে গেছে।’
‘তুই এখানে কেন? ছুটি শেষ? শেষ হলে আবার ছুটির এপ্লাই কর, ভাবিকে নিয়ে ঘুরতে যা। তুই না থাকলে একটু শান্তিতে থাকি।’
আনাস হেসে ফেলল। কারণ এই মূহুর্তে মাহাথির একটা মিথ্যা কথা বলেছে। আনাস যে মাহাথিরের কাছে কতো গুরুত্বপূর্ণ তা আনাস জানে। যদিও সম্পর্কের মেয়াদ অতো বেশি নয়, তবুও সম্পর্কের গভীরতা অনেক। সময় দিয়ে কখনো গভীরতা মাপা যায়না। তবে ৫ বছর-ও কম নয়। এই অফিসের সূত্র ধরেই তো দুজনের পরিচয়। মাহাথিরের বিয়েতেও আনাস ছিল। তবে তার পরেরদিনই জরুরি ছুটিতে বউকে নিয়ে গ্রামে যেতে হয় তার। গতকাল এসেই আজ অফিসে।
আনাস দাঁত কেলিয়ে হেসে ফেলল, ‘বন্ধু, এখন আমার না, তোমার ছুটি নেওয়ার সময় এসে গেছে। তুমি ছুটি নাও, বউকে সময় দাও।’
‘ফালতু কথা বলবি না আনাস। খাওয়ার মুড টাই নষ্ট করে দিলি।’ কথাটা বলে গম্ভীরমুখে প্যাকেটের রুটি চিবুতে থাকল মাহাথির। আনাস এর কথাটা মোটেও ভালো লাগল না। হাত রাখল মাহাথিরের কাঁধে, ‘ইজ অল ওকে?’
‘নাথিং ইজ ওকে। টাইম শেষ। নিজের টেবিলে যা।’
আনাস ঘড়িতে তাকাল। আসলেই সময় শেষ। এখনি ম্যানেজার এসে খ্যাঁটখ্যাঁট করবে। কিন্থ আনাস তাকে খ্যাঁটখ্যাঁটের সুযোগ দিতে নারাজ। তাই চুপচাপ উঠে নিজের জায়গায় বসল। সাথে বুঝল মাহাথিরের মেজাজ ঠিক নেই। অবশ্য, বেয়াদবটার মেজাজ ঠিক থাকে কখন।
.
রাত ৯ টায় অফিস ছুটি হলো। মাহাথির নিজের বাইকে বসতেই আনাস তারাতাড়ি করে একপ্রকার লাফ দিয়ে উঠে পড়ল। মাহাথির জানে ওকে বলেও লাভ নেই কিছু তাই বাইক স্টার্ট করল।
মেইন রোডে উঠতেই আনাস বলল,
‘দোস্ত মনটা ভালো নেই, ওই সামনের রেস্টুরেন্টে যাবি? একটু কফি খাব।’
বাসায় ফেরার তাড়া মাহাথিরের কোনো কালেই ছিল না। না আগে, আর না এখন। তাই সে বন্ধুর কথামতো থামল।
দুজনের সামনে গরম দুই কাপ কফি। আনাস নিজের কাপ বুঝে নিল। মাহাথির কফিতে চুমু দেওয়া মাত্রই আনাস নিজের সন্দেহ মোতাবেক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল, ‘ভাবি মেয়ে হিসেবে কেমন রে?’
মাহাথির তাকাতেই আনাস নিজের ভুল শুধরে বলল, ‘আই মিন বউ হিসেবে কেমন?’
প্রশ্নের উত্তরের আশায় চেয়ে রইল আনাস। মাহাথির কি উত্তর দিবেনা? আনাসের ইচ্ছে করল মাহাথিরকে একটা থাপ্পড় মারতে। প্রশ্ন করেছে উত্তর কেন দিচ্ছে না?
মিনিট পাঁচেক পর মাহাথির গম্ভীর স্বরে বলল, ‘জঘন্য!’
আনাস কপাল কুঁচকে একবার মাহাথিরের দিকে তাকাল, একবার কফির কাপে তাকাল। নিরলসভাবে বলল, ‘কফি তো ঠিকই আছে।’
‘বিভা স্ত্রী হিসেবে জঘন্য।’
আনাস তাকিয়ে রইল। তাহলে খালাআম্মা যে বলল বিভা মেয়েটা অসম্ভব ভালো, ভদ্র। এতোকিছুর পরেও কীভাবে পারল যার তার সাথে মাহাথিরের বিয়ে দিতে। একটু তো বিবেচনা করে দিত। আরেকটু নাহয় খোঁজখবর নিত মেয়ের। এতো তাড়া কীসের ছিল? আনাসের মুখভঙ্গি এইবার বেশ সিরিয়াস। সে প্রশ্ন করল, ‘মাহাথির, বিভা মেয়েটার কী চরিত্রজনিত সমস্যা আছে? নাকি অভদ্র? মানে তোকে সম্মান করেনা এমন কিছু?’
‘ও নিজেই একটা সমস্যা। ফা লতু একটা মেয়ে।’
আনাস ব্যাপারটা ধরতে পারছেনা। বিভার মাঝে সমস্যা নাকি মাহাথির বিয়ে করতে চায়নি, তবুও বিয়ে করেছে তাই এমন করছে। আনাস বেশি ঘাঁটাল না, কারণ জানে মাহাথির তাকে সব বলবে যখন ওর ইচ্ছে হবে। আগে যখন বলেছে, এখনো বলবে। এখন জিগ্যেস করে শুধুশুধু রাগানোর মানে হয়না।
আনাস প্রাণবন্তভাবে হাসল, ‘অকে ওকে কুল ভাই। আমরা ফা লতু মেয়ের ব্যাপারে কথা না বলি। চল ডিনার করি। আজকে আমার পক্ষ হতে ট্রিট।’
বলেই কিছু খাবার অর্ডার করে দিল। অর্ডার মোতাবেক খাবার আসতে বেশ কিছু সময় নিল। খাবার আসতেই নির্লিপ্তভাবে দুই বন্ধ খাওয়া শুরু করল। অথচ তাদের মধ্যকার এক বন্ধুর জন্য যে কোনো এক ফা লতু মেয়ে অপেক্ষা করছে তা সে জানতেও পারল না। অবশ্য জানার চেষ্টা করেছে কী যে জানবে?
_____
চলবে~
শব্দসংখ্যা – ১১০৫
#একগুচ্ছ_শুকতারা
#শারমিন_ইরান
একগুচ্ছ শুকতারা
শারমিন ইরান
১৫.
বারান্দায় দাঁড়িয়ে তারা দেখছে পার্থিব। মুখে লেগে আছে অমায়িক এক হাসি। তারা দেখার মাঝেও এতো আনন্দ আছে? এতো আনন্দ কেন লাগে? শ্রুতি পছন্দ করে বলে? ধীরে ধীরে কী তবে শ্রুতির পছন্দ সে নিজের মাঝে নিয়ে নিচ্ছে? পার্থিবের আকাশ-পাতাল ভাবার মাঝেই ঘরে ঢুকল শ্রুতি। পার্থিব শব্দ পেয়ে তাকাল। শ্রুতিকে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলে কেমন হয়? রাগ করবে? থাপ্পড় দিবে? নাহ….এমন কিছুই হয়তো করবে না। তবে ছেলেদের প্রতি বিদ্বেষ হয়তো আরোও তীব্র হবে কারণ তার বউ তিল কে তাল বানানোতে ওস্তাদ।
‘শ্রুতি, এখানে আসুন।’
শ্রুতি এগিয়ে এলো, ‘কী সমস্যা?’
পার্থিব হাত ধরে শ্রুতিকে টেনে নিয়ে এলো। এরপর দুই বাহুতে হাত রেখে ওকে মোড়ায় বসিয়ে দিল। গ্রিলের ওপর থেকে কিছু ১ টা নিয়ে শ্রুতির হাতে পরিয়ে দিল। শ্রুতি দেখল। বিরক্ত ফুটিয়ে প্রশ্ন করল, ‘এইসবের মানে কী পার্থিব? এইভাবে বার বার চুড়ি পড়ানোর মানে কী? কী পান এইসব করে? কিছুদিন আগেও নতুন চুড়ি পড়ালেন।’
সরল গলার উত্তর, ‘আমার ভালো লাগে শ্রুতি। শ্রুতিকে সাজাতে পার্থিবের ভালো লাগে। দেখুন কী সুন্দর লাগছে…’’
‘মোটেও সুন্দর লাগছে না। কালো হাতে একদমই মানাচ্ছে না উলটো খুবই বাজে দেখাচ্ছে। তাই এইভাবে মিথ্যা বলা থামান পার্থিব। আপনার মিথ্যা কথায় আমি গলছিনা।’ শক্ত কণ্ঠে বলে দিল শ্রুতি।
পার্থিব এইবার ভীষণ বিরক্ত হলো। কঠিন চোখে তাকিয়ে রইল শ্রুতির দিকে। ভরাট কণ্ঠে প্রশ্ন করল, ‘আপনার আপাও তারমানে অসুন্দর, কুৎসিত? আমার মা, সেও তো তথাকথিত ফর্সা নয়। এরমানে সেও অসুন্দর। তাহলে তাকে বাবা এতো ভালোবাসে কেন?’
‘এখানে তারা আসবে কেন?’
‘কারণ আমি নিয়ে এলাম তাই এলো। আমার প্রশ্নের উত্তর দিন। আপনার আপাও অসুন্দর?’
‘মোটেও না। ও অনেক সুন্দর। আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর মেয়ে আমার আপা। আপনি তাকে নিয়ে ১ টাও বাজে কথা বলবেন না পার্থিব।’
শ্রুতির চোখে পানি। রাগে জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে। পার্থিব এবার নিভে গেল। মেয়েটার চোখে পানি দেখতে ভালো লাগেনা। খারাপ লাগে, মায়া হয়। ইচ্ছে করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে, জড়িয়ে ধরতে। যেহেতু ইচ্ছেগুলো পূরণ করা সম্ভব নয়, এরচেয়ে ভালো কান্না থামিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
পার্থিব শ্রুতির হাত ধরল। শান্তচোখে চেয়ে বলল, ‘আচ্ছা মেনে নিলাম আপনার আপা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী নারী। কিন্তু সে তো কালো। তাও আপনি তাকে এতো ভালোবাসেন কেন শ্রুতি? তাকেই কেন আপনার কাছে সবচেয়ে সুন্দর লাগে? আমার মা। তাকে কেন এতো ভালোবাসি আমি? আমার বাবাই বা তাকে কেন এতো ভালোবাসে?’
‘ভালোবাসতে সৌন্দর্যের প্রয়োজন হয়না পার্থিব।’ শান্তকণ্ঠে অতি মূল্যবান একটা কথা বলে, নিরবে তর্কের ইতি ঘটিয়ে চলে গেল শ্রুতি।
কথাটা শুনে পার্থিবের ঠোঁটে প্রকাশ পেল হাসির সরু রেখা। এই মেয়েকে নিয়ে কই যাবে পার্থিব? যেই কথা পার্থিব এতোদিন ওকে বুঝানোর চেষ্টা করেছে, সেই কথাই সে অন্যদের বেলায় খাটাচ্ছে। শুধু তার বেলাতেই নেই। কপালই খারাপ।
.
মাহাথির অফিসে চলে গেছে অনেকক্ষণ হয়। পুরো ফ্ল্যাট ঘুরে ঘুরে দেখছে বিভা। অতো শৌখিন জিনিসপত্র নেই, সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘর যেমন হয় তেমন। এখানে বিভার অসুবিধা হওয়ার কথা, অথচ বিভার একটুও অসুবিধা হয়না। উলটো আলাদা প্রশান্তি আসে। মনে হয় নিজের বাড়ি। যেমনই হোক, কিন্তু নিজের। ওই বাড়ি থেকে প্রায়ই আমিন শিকদার বেরিয়ে যেতে বলত। কিন্তু কোনো কারণে বের করত না। হয়তো ভালোমানুষ সেজে থাকার জন্য। বিভা চেয়েও বের হয়ে আসতে পারত না। কী করবে বের হয়ে, কোথায় যাবে ৩ ভাই-বোন মিলে? যদিওবা বিভা ছোটখাটো ১ টি অনলাইন ব্যবসা করে, তবুও সেখান থেকে কত টাকাই বা আসবে? তার উপর হামিমকে ডাক্তার দেখানো।
তবে এই সাড়ে ৮ বছরে ওদের পেছনে যত টাকা খরচ করা হয়েছে সেই টাকার একটা বড় অংশ হলো তাহিরার রেখে যাওয়া টাকা। তাহিরা ৩ ভাই-বোনের নামে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা ব্যাংকে রেখেছিলেন ভবিষ্যতের আশায়। কিন্তু সেই ভবিষ্যত তাহিরা নিজেই ধূলিসাৎ করে গেছিলেন আমিন সাহেবের নামে রেখে। যখন বুঝতে পারল, তখন খুব বেশি দেড়ি হয়ে গেলো।
বিভা ভাবল ওই বাসার সব কিছু নিজের থেকেও ছিল পরের। কারণ শাহিনা।
আর এই বাসায় সবকিছু পরের হয়েও নিজের। কারণ মাহাথির।
বিভা তার ছোট্ট সংসার টা তো আগলে নিল, শুধু মানুষটাকেই আগলে নিতে পারল না।
.
রুমে ঢুকে অবাক হয়ে গেল বিভা। মাহাথির অফিসে যাওয়ার পর এতোক্ষণপর রুমে ঢুকল সে। একি অবস্থা রুমের! জামা-কাপড় ছড়ানো ছিটানো। সব দেখি তার জামা। আলমারি থেকে এইভাবে ফেলল কে? সে তো সুন্দর ভাবেই রেখেছিল গুছিয়ে।
বিভা জামাগুলো তুলে আবার ভাঁজ করতে শুরু করল। এরপর সুন্দর করে মাহাথিরের জামা-কাপড়ের পাশে রেখে দিল। বিভা আন্দাজও করতে পারল না, সে যতো যত্নের সাথে কাপড় গুলো রাখল, ঠিক ততোটাই নিষ্ঠার সাথে কেউ আলমারি থেকে ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলেছে তার কাপড়।
_____
চলবে~
#একগুচ্ছ_শুকতারা
#শারমিন_ইরান
শব্দসংখ্যা – ৭৪০