একজোড়া আগুন পাখি পর্ব-০১

0
2

সূচনা_পর্ব
#একজোড়া_আগুন_পাখি
®অরনীতা তুশ্মি (#তুশকন্যা)

প্রতিবারের মতো আজও এই একজোড়া আ*গুন পাখিদের জন্য অতিষ্ঠ পুরো মহল্লাবাসী। সবার মাঝে সর্বদাই একই প্রশ্ন,এতোদিন পরেও এই আগুন পাখির জোড়াটা কিভাবে টিকে রইছে। এতো অ*শান্তি, এতো ঝামেলা পরও দিন শেষে এরা একে অপরের জন্য মারা*ত্মক পাগল। তাহলে কিছুদিন পর পর এই মহল্লায় এসে এমন মহাপ্রল*য়ের তান্ড*ব চালানোর কোনো মানে হয়!

দুইতলার এই শক্তপোক্ত ইট সিমেন্টে গাঁথা বাড়িটাও মাঝে মাঝে কেঁপে উঠে এদের তা*ন্ডব সইতে না পেরে। তাহলে দিন রাত এই সাধারণ মহল্লাবাসী গুলো কিভাবে এসব সহ্য করবে! এই বাড়ির সামনে দিয়েও আজকাল লোকজন চলাচল করতেও ভয় পায়। কখন যেন এক প্রতি*পক্ষ অন্য জনকে নিশানা করে রাগে কিছু ছুঁ*ড়ে দেয় আর সেটা ভুলবশত জানালা দিয়ে বেড়িয়ে সোজা তাদের মাথায় এসে লেগে যায়। শেষ! এক নিমিষেই বিনাদোষে জীবন ভ*স্ম।

কিছুদিন পর পর তাদের এই বাড়িতে উদয় হওয়া আর এসব চিল্লা*চিল্লি, মারা*মারি, জিনিসপত্র ছোড়া*ছুড়ি কিংবা দিনশেষে আবারও দুজনের এক হওয়া ;এই সব কিছুর সাথে এতোদিনে মহল্লার কাকপক্ষী গুলোও পরিচিত হয়ে গিয়েছে। তবে কারোরই কিছু বলার সাধ্য নেই, এরা যেমন রাগ*চটা ভয়ং*কর তেমন এদের বড়োলোকি ক্ষমতাও কম নয়।বাধ্য হয়েই আজ মানুষ থেকে শুধু করে মহল্লার পাগলাটে কুকুর কিংবা কাকপক্ষী সকলকেই বিষয়টি মেনে চুপ থাকতে হয়। বিনাদোষে জান দেওয়ার শখ তো কারোরই নেয়।

তবে এই জুটিকে সবাই একটা নামও দিয়েছে। তা হলো একজোড়া আ*গুন পাখি। যাদের মাঝে সর্বদাই বিপরীত পক্ষকে রাগে কিংবা ক্ষোভে ধ্বংস করার আগু*ন জ্বলতে থাকে। কিন্তু নানা ঝড়,তু*ফান, ভুমি*কম্প, টর্নে*ডো, খ*রা কিংবা জল*চ্ছাস শেষে দুজনকে আবারও সেই বিপরীত পক্ষের কাছেই ফিরতে হয়। কারণ দিনশেষে তো তারা একে অপরকে ছাড়া অচল!

আবার অনেকে এদের রুপকথার সেই ফিনিক্স পাখি বলেও ডাকে। যারা প্রতিনিয়ত নিজেদের আগুনে পুড়ি*য়ে আবারও নতুন ভাবে জন্ম নেয় শুধু একে অপরকে আবারও নতুন এক ভয়ং*কর আ*গুনের শিখা*য় ভ*স্ম করবে এই প্রতিজ্ঞায়।

কিন্তু ভুলেও তাদের এই নামগুলো কখনো কেউ এই আ*গুন পাখিদের সামনে উচ্চারণ করে না।

এই গল্পের শুধুটা হয়েছিলো অনেক আগেই। তবে এদের শেষ পরিনতি কি হবে,তা আজও কেউ ভাবতে পারেনি। সবার মতে এই জুটি কখনো টিকবে না অথচ দিনের পর দিন নানা ঝড়ের পরও এই জুটি এক হয়ে যায়। এদের পরিণতি কেমন হবে তা যেমন সৃষ্টিকর্তা ব্যতীত আর কারো জানা নেই তেমন এদের শেষ পরিনতি সেদিনই হবে যেদিন সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং নিজে চাইবেন।

________________________

এতো সরগোল কিংবা চিল্লা*চিল্লির কোনোটাই ভালো লাগছে না আনায়ার। জীবনে কখনো সে এই ধরনের পরিবেশের সম্মুখীন হয়নি। বিষয়টি তার কাছে কিছুটা অদ্ভুতও লাগছে।

খোলা আকাশের নিচে সামনে পেছনে পুরো এরিয়াটাই লাল আর কালো রংএর লাইটের আলোয় ছেয়ে গিয়েছে। সাথে বিশাল বড় বড় ব্যানার, বোর্ড সবজায়গা কালো আর লাল রংএর ডিজাইনে শুধু একটাই নাম”ভি.কে.”। পুরো জায়গাটাই কেমন যেন কালচে র*ক্ত লাল বর্ণের হয়ে গিয়েছে। আনায়ার কাছে জাগয়াটা গানের কনসার্ট কম হ*রার মুভির থিয়েটর মনে হচ্ছে।

বিশাল বড় স্টেজের নিচে একপাশে দাঁড়িয়ে আছে উজ্জ্বল শ্যামলা কিংবা ফর্সা ত্বকের আদলে ঠাকা আনায়া। গায়ে তার হালকা হদুল রং এর কুর্তি সাথে একটা ওড়না গলার দুপাশ দিয়ে সামনে ঝুলিয়ে রেখেছে। পেছনের এতো মানুষের ভীরে এই ঠান্ডা রাতেও বেচারীর গরম ধরে গিয়েছে তাই খোলা চুল গুলো প্রায় অনেকক্ষণ আগে খোঁপা করে ফেলেছে।

আনায়া একবার বিরক্তি নিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখলো শতশত মানুষ অধিক আগ্রহ নিয়ে একজনের জন্য অধিক অপেক্ষায় রয়েছে আর “ভি.কে.” শব্দ উচ্চারণ করে চিল্লা*পাল্লা করছে। তবে এতো খুশি আনন্দ কিংবা লাফালাফির আর কোলা*হলের পরেও তাদের সেই কাঙ্খিত মানুষটিই এখনো আসেনি।

আনায়া এবার সামনের স্টেজের দিকে তাকিয়ে দেখলো, নাহ! এখোনো আসেনি। সেই কখন থেকে সে সহ বাকি সবাই তার জন্য অপেক্ষা করছে আর সে আসারই প্রয়োজন মনে করছে না। আনায়া ভারী বিরক্ত হলো সাথে কিছুটা বিরক্ত হলো তার পাশে থাকা মানবটির প্রতিও।

আনায়া এবার ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো রাত বারোটা সতেরো বাজে। আনায়া আশ্চর্য হলো, সে এখানে রাত এগারোটায় এসেছে আর এখন কিনা রাত বারোটা পেরিয়েছে। এ যেনো তার কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকলো। তার এখানে কাজ শেষ হবে কখন আর সে বাড়ি ফিরবে কখন সেই চিন্তাতেই তার কপাল বেয়ে ঘাম ছুটতে লাগলো।

এরই মাঝে পাশ থেকে আনায়াকে লক্ষ করার পর নীল রংএর চেক শার্ট আর কালো প্যান্ট পড়া শ্যামলা বর্ণের মানবটি বললো,

—“কি হলো আনায়া! বাড়ি যাবে! ”

আনায়া সেই লোকটির দিকে তাকিয়ে বললো,

—“ইমন ভাই! রাত তো অনেক হয়েছে, বাড়িতে তো ফিরতেই হয়! কিন্তু আপনি আমাকে যে কাজে নিয়ে এসেছেন তাই তো বলছেন না! আবার এই কন্সার্টে আমার কি কাজ সেটাও বললেন না। আমাকে কি কোনো কনসার্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ করতে হবে না কি, কিছুই তো বুঝতে পারছি না! আর এই মানুষ গুলো তখন থেকে ভি.কে., ভি.কে. করে যে চিল্লাচ্ছে তা সেটা কি এই ভি.কে. শুনতে পারে না নাকি। না আবার তিনি জানেনই না আজকে তার কনসার্ট আছে! ”

একে তো একেবারে এতো কথা তার উপর শেষের কথা গুলো অবাকের সুরে বলায় ইমন হেসে ফেললো। আর বলতে লাগলো,

—“এইটুকু তেই এতো অধৈর্য হলে চলবে!, তাহলে কাজ করবে কিভাবে৷ ”

আনায়া ইনোসেন্ট মুখ করে ভাবুক মুখটা একপাশে বাঁকা করতেই বামপাশের গালে আপনা আপনি একটা গর্তের সৃষ্টি হলো। আনায়া হাসি কান্না কিংবা মাঝে মাঝে তার কথার মাঝেও তার এই বামপাশের টোলেটার দেখা মেলে। তবে ডানপাশের একটা ছোট টোল পরে যেটা বাম পাশের টোলটার মতো এতোটা বড়সড় নয়।

আনায়ার এমন চেহারা নিয়ে ইমনের দিকে তাকাতেই ইমন আবারও মুচকি হেসে ফেললো। মেয়েটাকে সে ছোট বোনের মতোই ভাবে। কিন্তু সে খুব অবাক হয় যখন এইটুকু মেয়েকে সে জীবনযু*দ্ধের লড়াই করতে দেখে। কি ছিলো না তাদের, সবইও তো ছিলো। শুধু আনায়ার বাবার বাজে অভ্যাস আর স্বভাবের কারনেই আনায়া আর ছোট বোনটার আজ এই অবস্থা। মাঝে মাঝে তার আনায়ার বাবার উপর রাগ উঠলেও আনায়ার মাঝে কখনোই তার বাবার বিরুদ্ধে একটুকু রা*গ কিংবা ক্ষো*ভের দেখা পায়নি ইমন। যে বাবার জন্য তাদের আজ পথে বসার মতো অবস্থা সেই বাবার জন্য দিনরাত খেটে যাচ্ছে এই মেয়েটা।আশা শুধু একটাই, তাদের বাবা যেন সুস্থ হয়ে যায়।

বয়স আর কতই হবে উনিশ-বিশ কিংবা একুশই! দুবছরও হয়নি কলেজ শেষ করে ভার্সিটিতে উঠেছে। আর কিছুদিন আগেই তো ভার্সিটির সেকেন্ড ইয়ারে উঠলো। অবশ্য তার জীবন যুদ্ধ*টা তো সেই অনেক আগেই শুধু হয়ে গিয়েছে। সেই ক্লাস নাইন- টেনে থাকতেই।

ইমন একমনে এসব ভাবতে ভাবতেই পাশ থেকে আনায়া বললো,

—“ও ভাইয়া! কিছুই তো বললেন না। ”

আনায়ার কথা ধ্যান ফিরতেই ইমন মুচকি হেসে বললো,

—“আচ্ছা তাহলে বলছি! তার আগে এটা বলো তুমি কি সত্যিই “V.K.” কে চেনো না?”

আনায়া ইনোসেন্ট মুখ নিয়ে বললো,
—“না ভাইয়া!”

ইমন অবাক সুরে বললো,

—“কি বলো! পুরো দেশ V.K. এর জন্য পাগল, আর মেয়েদের কথা না হয় বাদই দিলাম, ছেলেরাই তো ভি.কে. এর কনসার্টে আসার জন্য কি পাগ*লামোটাই না করে। আর তুমি বলছো ভি.কে. কেই চেনো না। আচ্ছা তুমি কি গান পছন্দ করো না নাকি, আর সোশ্যাল মিডিয়াতেও কি ভিকে কে কখনো দেখোনি? ”

আনায়া মনে মনে একটু বিরক্ত হলো। সে জিজ্ঞেস করছে একটা আর এই ইমন ভাই বলছে আরেকটা। আরে সে তো বললোই এই ভি. কে. কে সে চেনে না। আর তাকে চিনেই বা তার কাজ কি। সবাইকে যে চিনে রাখতে হবে এমনটা তো না।কিন্তু ইমানকে এসব কিছু না বলেই তার হাতে থাকা বাটন ফোনটা দেখিয়ে বললো,

—“ভাইয়া আপনি তো জানেনই আমার বর্তমান অবস্থা কি। গানটা খুব আমার প্রিয় বিষয় থাকলেও এখন আর দুই একটা গান ছাড়া তেমন কিছু শোনার সময়টাও ব্যস্ততার জন্য হয়ে ওঠে না।
আর আগের যে স্মার্ট ফোনটা ছিলো সেটা তো বাবার চিকিৎসার জন্য কলেজে ওঠার কিছুদিন পরেই বিক্রি করে দিয়েছিলাম। তারপর আবার আমার সোশ্যাল মিডিয়ার খোঁজ খবর নেওয়াটা তো একপ্রকার বিলাসিতা।

আর এমনিতেই এসব রক স্টার ফক স্টারদের বিট ওয়ালা লাফালাফি গান আমার পছন্দ না। শুনলেই আত্মা কেঁপে উঠে। আমার জন্য এই বাটন ফোনে ডাউনলোড করা দু একটা পছন্দের গান শুনতে পারলেই শান্তি। ”

আনায়ার শেষের কথাটুকু শুনে ইমন আবারও হেসে ফেললো।তবে আবারও কৌতুহল নিয়ে আনায়াকে জিজ্ঞেস করলো,

—“এক মিনিট, তোমার জন্য তো রেহান বিদেশে যাওয়ার আগে একটা ফোন দিয়েছিলো। মানে ওই ফোনটা তো আমি আর রেহান দুজনে মিলে কিনেছিলাম। ও তোমাকে ফোনটা দেখনি! ”

—“ভাইয়া! আপনি হয়তো জানেন আমি কোন ধরনের মেয়ে। রেহান আমার আর আমার পরিবারের জন্য যথেষ্ট করেছে কিন্তু বিয়ের আগেই কিংবা পরে যখনই হোক না কেনো আমি অতিরিক্ত প্রয়োজন ছাড়া কোনোকিছু ওর কাছ থেকে নিতে চাই না। আমার ইচ্ছে সবসময় আমি নিজে থেকে কিছু করবো, অন্যের উপর নির্ভরশীল হওয়াটা মোটেও আমার পারসোনালিটি সাথে যায় না। তাই………! ”

—-“তাই ফোনটা আর নেও নি তাই তো!”

আনায়া নিচু কণ্ঠে বললো,”হুম!”

কিন্তু পরক্ষণেই আবার বললো,

—“এসব ছাড়ুন! আপনি এটা বলুন আমাকে এখানে কিসের জন্য নিয়ে এসেছেন আর এই ভি.কে. না কি, এই বেটায় এখনো আসে না কেনো! ”

—“ভি.কে. স্যার ইচ্ছে করেই আসছেন না। উনি স্টেজের পেছনেই তার রুমে বসে আছেন। ”

আনায়া অবাক হয়ে ইমনকে দেখে বললো,

—” ইচ্ছে করেই আসছে না, মানে কি! এতো গুলো মানুষকে তাহলে এভাবে অপেক্ষা করাচ্ছে কেনো! এসব করে উনি কি মজা পাচ্ছেন ! এদের আওয়াজ কি উনার কানে যাচ্ছে না! ”

ইমন হেসে বললো,

—“শুনবে কিভাবে, তার কানে হয়তো এখন হেডফোন লাগানো। যখন তার ইচ্ছে হবে ঠিক তখনই আসবে। এদের চিল্লা*চিল্লি কিংবা ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই তার কাছে,যতটুকু আমার মনে হয়েছে। ”

আনায়া কিছুটা অবাক হয়ে বললো,

—“তাহলে এগুলো আবার কেমন সেলিব্রিটি, নিজের ভক্তদের প্রতিই যদি কোনো ভালোবাসা না থাকে।
আর সত্যি বলতে আমি এই ভি.কে. এর নাম ভার্সিতে আমার ফ্রেন্ডদের কাছ থেকে আগেই অনেকবার শুনেছিলাম। বিশেষ করে ইরার কাছে, ও তো নাকি ভিকের ফ্যান। কিন্তু ওদের একে নিয়ে এতো মাতামাতি দেখে আমার এর সম্পর্কে জানার ইন্টারেস্ট প্রথম দিনেই উড়ে গিয়েছে আর এখন আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে এই ভি.কে. আমার জীবনে দেখা খা*রাপ মানুষ গুলোর তালিকায় পরবে। ”

শেষের কথা গুলো আনায়া বিরক্তি নিয়ে বললো আর যা দেখে ইমন আবারও মুচকি হাসলো কিন্তু আনায়ার এই ইমন ভাইয়ের সব কথায় মুচকি মুচকি হাসাটাই বিরক্ত লাগছে। হঠাৎই আনায়া কিছু একটা ভেবে আবারও বললো,

—“আচ্ছা, এক মিনিট। আমি এই ” ভি.কে.” কে “ভি.কে ” বলছি। বাকি সবাইও তো তাই বলছে তাহলে আপনি কেনো ওনাকে স্যার, স্যার করছেন কেনো। আর উনি যে উনার স্টেজের পেছনে তার রুমে বসে হেডফোনে গান শুনছেন, তা আপনি কি করে জানলেন!”

ইমন মুচকি হাসলো,

—“আমার জবটা যেন কি আনায়া! ”

আয়ানা হুট করেই কিছু একটা ভেবে বললো,
—“আপনি বলেছিলেন আপনি পি.এ আ…..দ্যাটস্ মিন,…. এক সেকেন্ড এই ভি.কে. এর পি.এ. ই আপনি!”

ইমন মুচকি হেসে বললো,

—“জ্বী মেডাম! ”

কিন্তু আনায়ার মনে প্রশ্ন জাগলো অন্য কিছু,

—“তাহলে আপনি এখানে কি করছেন, আপনার তো এখন ওনার সাথেই থাকার কথা তাই না! আমার জন্য আবার আপনি এখানে আসেন নি তো! আসলে এখোনি চলে যান নাহলে আপনার চাকরি নিয়ে টানাটানি…..!

আনায়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই ইমন বললো,

—“আরে থামো! থামো! হুট করেই তোমার কথার ঝুড়ি চালু হওয়ার অভ্যাসটা আর গেলো না। তুমি যা বলছো তেমন কিছুই না! ভি.কে. স্যার আমাকে তার আশেপাশে যেতে না করেছে বলতে পারো তার আশেপাশে যেন অন্য কেউ না যায় সেটাও দেখতে বলেছে। আর আজ যদি তার ইচ্ছে হয় তবেই তিনি স্টেজে আসবেন নয়তো না, আবার তার ইচ্ছে হলেই আমাকে থাকবে, না হলে না। ”

—“অদ্ভুত লোক!”
আনায়া কথটা বলে আবারও তার মুখ কিছুটা ঘুরাতেই গালে আবারও সেই টোলের দেখা মিললো। পরক্ষণেই আবার স্বাভাবিক হয়ে ইমনকে জিজ্ঞেস করলো,

—” আচ্ছা ভাইয়া এই ভি.কে. এর ফুল ফর্ম কি! এটা তো নামের শর্ট ফর্ম মনে হচ্ছে, তাই না!”

—“ঠিকই ধরেছো, ‘ভি. কে.’ কে চাইলে তুমি অনেক নামেই ডাকতে পারো যেনটা সবাই বলে। তবে ভি.কে এর ফুল ফর্ম হলো “ভ্যাম্পায়ার কেনীথ”। এছাড়া অনেকই কেথীন ভাই কিংবা ভি.কে বলেই ডাকে। এখন তোমার যেটা ইচ্ছে তুমি বলতে পারো। ”

এদিকে আনায়া যে প্রচন্ড অবাক হলো, এগুলো আবার কেমন নাম!

—-“ভাইয়া আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন! ”

ইমন হেসে বললো,

“জানতাম তুমি এটাই বলবে, কিন্তু আমি মজা করছি না!”

—“কেনীথ না হয় বাদ দিলাম কিন্তু কোনো বাবা মা তার সন্তানের নাম ভ্যাম্পায়ার কিভাবে রাখে। নাকি উনি নিজেই এটা স্টাইলের জন্য রেখেছেন। রাখলেও এটা আবার কোনো নাম হলো, ছিহ! ”

—“আরে তুমি ভুল বুঝছো, এই নাম উনি কিংবা তার বাবা মা কেউই রাখেনি। আমি উনার পি.এ. হয়েছি বেশি দিন তো হয়নি তবে ওনার নাম নিয়ে আমারও আগে থেকেই আগ্রহ ছিলো তবে তার আসল নাম কোথাও পাইনি। তার নামের শর্ট ফর্ম আগে থেকেই ভি.কে. ছিলো তবে শুধু তার ডাক নামটা ছিলো সেটা হলো কেনীথ। কিন্তু এই ভি এর অর্থ কেউ জানে না।
আর এই ভি কে ভ্যাম্পায়ার বানিয়েছে তো তার ফ্যান ফলোয়ার কিংবা সাধারণ জনগণে। ”

—“মানে কি! এতো বড় রকস্টার আর তার পরিচয় তো দূরের কথা পুরো নামটাই কেউ জানে না।আর জনগনের কি আর খেয়ে দেয়ে কোনো কাজ নেই! মানুষের নাম ভ্যাম্পায়ার রাখে কিভাবে, উনি কি কোনো র*ক্তচোষা বাদুড় নাকি! ”

—“আনায়া! মানুষ তো আর এসব নাম এমনি এমনি দেয়নি, এর পেছনেও যথেষ্ট কারণ আছে। বাদুর কিংবা ভ্যাম্পায়ার যেমন রক্ত পছন্দ করে তেমনি ভি.কে. ও র*ক্ত পছন্দ করেন। ”

আনায়া মুখ চোখ মুখ কুঁচকে অবাক হয়ে বললো,

-“মানে…!”

—“কেনীথ স্যারের যখন প্রচন্ড রাগ উঠে অবশ্য এমনিতে তিনি সবসময় রেগেই থাকেন। কিন্তু যখন কেউ তাকে ইচ্ছে করে রাগিয়ে দেয় তখন তিনি যতক্ষণ না পর্যন্ত নিজের হাতে মেরে মেরে ব্যাক্তিটাকে একদম র*ক্তাক্ত করে না দিচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি কখনোই শান্ত হয়না। এমন কি সবাই মিলে আটকাতে গেলেই অবস্থা আরো বেহাল পর্যায়ে চলে যায়। মূল কথা তিনি র’ক্ত দেখে হয়তো শান্তি পান।”

আনায়া বিস্মিত হয়ে ইমনকে দেখতে লাগলো আর বললো,

—“কি বলেন এই সব, ইনি পিশাচ টিশাচ নাকি।

যাকে ধরে মারে সে পুলিশকে পরে জানায় না! জানালে তো ওনার জেল হওয়ার কথা। ”

ইমন এবার হেসে ফেললো আনায়া কথায়।

—” আজকালকার দুনিয়াদারী সম্পর্কে তোমার ধারণা তো দেখছি একটু বেশিই কম আছে। বইন উনি ভি.কে., সাধারণ কেউ না! তুমি ভাবছো এগুলো হয়তো তার গোপন বিষয় যেগুলো মাঝেমধ্যে মিডিয়ায় বের হয়ে আসে আর সবাই জেনে যায়।কিন্তু বিষয়টি এমন না! তিনি যতবারই এরকম করে কাউকে নি’শংসভাবে মে*রেছেন সেগুলো সব লোকসমক্ষে। এইরকমই কোনো কনসার্টে, আমি তো যাস্ট দোয়া করছি আজকে আর কোনো ঝামেলা না বাধুক। নাহলে মারধর তো করে ভি.কে. কিন্তু এদিকে যত পুলিশের কাগজ পাতি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে হয় আমায়।”

ইমনের সব কথা শুনে আনায়ার মাঝে সত্যি সত্যিই বিস্ময়ের জোয়ার বয়ে গেলো। তার মাথাতেও ঠুকছে না যে এমন একটা মানুষ এই শহরে দিনের পর দিনে নিজে কর্ম, অপ*কর্মের যেটাই বলি না কেনো ;চালিয়ে যাচ্ছে অথচ কেউ কোনো পদক্ষেপই নেয়নি!

আনায়া আবারও ইমনকে জিজ্ঞেস করলো,

—“আচ্ছা ভাইয়া উনার কি মাথায় সমস্যা আছে, আমার তো তাই মনে হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ ধরে ওনাকে শায়ে*স্তা করতে না পারুক কিন্তু কেউ ধরে মান*সিক চিকিৎসা করালেই তো পারে। আমি নিশ্চিত উনি একটা পাগল। ”

ইমন হেসে বললো,

—“হতে পারে! কেনীথ ভাইকে আজ পর্যন্তও আমি ঠিক ভাবে বুঝতে পারিনি। ”

—“আচ্ছা উনি কি খ্রিস্টান কিংবা অন্য ধর্মের, আসলে নাম গুলো কেমন যেন একটু!”

—“এই বিষয়ে ঠিক আমিও বলতে পারবো না।তবে নামগুলোর সাথে কিন্তু তার পারসোনালিটির সম্পূর্ন মিল রয়েছে। যেমন কেনীথ অর্থ হলো নিপুণ ভাবে তৈরি, সুদর্শন, আগু*নের শি*খা। এই সবগুলো বৈশিষ্ট্যই কিন্তু তার মাঝে রয়েছে। তুমি জানো, আমি যদি মেয়ে হতাম তাহলে নিশ্চিত স্যারের উপর ক্রাশ ট্রাশ খেয়ে ফেলতাম।”

ইমনের কথায় আনায়া হেসে ফেললো,

—“কিন্তু আমি কখনোই পড়বো না। যদিও তাকে আমি এখনো ঠিক ভাবে দেখিনি কিন্তু আমার কাছে সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ রেহানই। ”

ইমন গলা ঝেড়ে কেশে বলল,

“রেহান কিন্তু আমার বন্ধু…….! ”

আনায়া মুচকি হেসে বললো,
—“আপনি রেহানের বন্ধু কম আমার বড় ভাই বেশি। কিন্তু এসব কথা তো বহুত হলো আসল কথাই তো বললেন না। আমাকে এই জায়গায় নিয়ে আসার কারণটা কি, রেহান বললো দেখেই তো আমি কোনো প্রশ্ন না করে এখানে চলে এসেছি। এক মিনিট ভাইয়া, আপনি আবার আমাকে এই ভি.কে. এর আন্ডারে কোনো জবের অফার করতে নিয়ে আসেননি তো! তেমনটা হলে কিন্তু আমি সাফ জানিয়ে দিচ্ছি, আমি এই রকম র*ক্তচোষা বাদুরের আন্ডারের কোন কাজ কিন্তু করতে পারবো না। ”

আনায়া কথাবার্তা শুনে ইমন হেসে বললো,

—“কিছু করার নেই, তুমি যা ভাবছো তেমন কিছুই। সেলারী যথেষ্ট ভালো, তুমি জবটা করলে আমার মনে হয়না আগামীতে তোমার পরিবার নিয়ে এখনকার মতো কষ্ট করে চলতে হবে! আজ তোমার বাবার দোষের জন্য……..!

ইমন কথা শেষ হওয়ার আগেই আনায়া অমায়িক হেসে বললো,

“ভাইয়া! বাবা অতীতে যেটাই করুক না কেনো। সে আমাদের বাবা! প্লিজ আমার সামনে তাকে নিয়ে কিছু বলবেন না। ”

—“আচ্ছা সরি, আমি এমনিতেও তেমন কিছু বলতে চাচ্ছিলাম না। আর তোমাকে আরো একটা বিষয় জানানোর ছিলো। আমি ভি.কে. স্যারের পি.এ. এর চাকরিটা ছেড়ে দেবো। ”

আনায়া অবাক হয়ে বললো,

—“কেনো! উনি কি আপনাকে……… ”

—“আরে তুমি যা ভাবছো তা না! আমার সরকারি চাকরি হয়ে গিয়েছে, আজকাল এসব জবের চেয়ে গভার্মেন্ট জবটাকেই মানুষ বেশি গুরুত্ব দেয়। এমনিতে ভি.কে. স্যারের পারসোনাল এসিস্ট্যান্ট হওয়াটা সত্যিই ভাগ্যের ব্যপার। ওনার মতো মানুষ পৃথিবীতে কমই আছে। ”

—“কি বলেন, এমন সাইকোরাও এতো ভালো মানুষ হয় নাকি!”

আনায়ার কথা শুনে ইমন মনে মনে বললো,

—“আমি কখন বললাম উনি ভালো মানুষ, উনি যে কি সেটা উপরওয়ালা আর উনি নিজেই জানে। বইন তুই তো ওরে দেখিসই নাই, ওই কি জিনিস তুই কেমনে জানবি। আল্লাহ আল্লাহ করে আমি এখন তোকে ম্যানেজ করে নিজে বাঁচতে পারলেই হলো।”

এদিকে আনায়া ভারী বিরক্ত হলো। এমনিতেই রাতের বেলা পাগলা ছাগলদের কারখানায় নিয়ে এসেছে তার উপর আবার কিছুক্ষণ পর পর এই ইমন ভাই কোথায় হারিয়ে যায় কে জানে। আবার যেটাই জিজ্ঞেস কি তাতেই হাসতে থাকে।

—“ও ইমন ভাই, এখন এটা তো বলেন আমাকে কিসের জব দেওয়া হবে। প্লিজ ভাইয়া, যেটাই দেওয়া হোক না কেনো আমাকে এই পা*গলা বাদুড়ের আশেপাশে থাকতে হবে এমন কোনো কাজ দিবেনা না প্লিজ!”

ইমন হেসে বললো,

—“আরে আগেই তুমি কেনীথ স্যারকে কি কি বলে যাচ্ছো। তুমি তো ঠিক করে তাকে দেখোই……..

ইমনের কথা শেষ হওয়ার আগেই হঠাৎ পেছন থেকে আসা শত শত মানুষের চিল্লা*নোর আওয়াজে ইমন চমকে উঠলো। এদিকে আনায়া এতো আওয়াজ সহ্য করতে না পেরে দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরলো।

কিছুক্ষণ পর আওয়াজটা একটু কমতেই আনায়া হাত নামিয়ে ইমনের দিকে তাকালে ইমন তাকে সামনের স্টেজের দিকে ইশারা করে বললো,

“ভি.কে. চলে এসেছে! ”

আনায়া স্টেজের দিকে তাকিয়ে দেখলো ব্লাক আর রেডের কম্বিনেশনের একটা জ্যাকেট পড়া সুষম দেহ গঠনের এক বড়োসড়ো মানুষ এক হাতে একটা লাল-কালো রং এর গিটার হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
জ্যাকেটের ভেতর কালো রক্ত লাল রং এর টিশার্ট আর নিচে কালো রংএর ডেনিম প্যান্ট। পায়ে পড়া লাল কালোর কম্বিনেশনের স্নিকার্স।
আনায়ার মাঝে আরো একটা প্রশ্ন জাগলো, এই লোকটা সবকিছুই এমন লাল কালো পড়ে একদম র*ক্তের ফুল প্যাকেজ সেজে এসেছে কেনো! পরক্ষণেই মনে হলো, এনাকে তো সবাই ভ্যাম্পায়ার কেনীথ এমনি এমনি বলে না। এটা তো মানুষ না, র*ক্ত চোষা বাদুড়।

তবে মনে মনে আবল তাবল যেটাই বলুক না কেনো। এই লোকটাকে তার মারাত্মক ফর্সা বলে মনে হলো। তবে পুরো লুকিংটা তার কাছে কোনো সিনেমার হিরো না বরং হলিউডের বিখ্যাত হ্যান্ডসাম কোনো ভি*লেন মনে হচ্ছে।

আনায়া আবারও খেয়াল করলো,মাথার হালকা কার্লি ডার্ক কফি ব্রাউন কালারের চুলগুলো ঘাড় পর্যন্ত এসে ছুঁয়েছে।
কিন্তু আনায়ার মনে সন্দেহ জাগলো এই চুলে আদোও আজ চিরুনি করেছে কিনা কে জানে। তার তো দেখে এমন কিছু মনে হচ্ছে না! ছেলে মানুষ হয়েও এতো সুন্দর চুল অথচ এমন এলোমেলো পাখির বাসা বানিয়ে রেখেছে!

হাতে কালো রংএর ব্রেসলেট আবার এই রাতের বেলায় কালো চশমা! আবার এতোগুলো মানুষের ওনার জন্য চিল্লাচিল্লি করে স্বাগতম জানাচ্ছে অথচ তার মধ্যে কেনো হোলদোলই নেই। আচ্ছা একে রকস্টার বানিয়ছে টা কে! এখন নিশ্চয় হিন্দি, ইংরেজি, বাংলার জগাখিচুরি বানিয়ে চেঁ*চানো শুরু করবে আর তার সাথে সাথে এই ফ্যান নামক গাধাগুলোও লাফাবে। ইমন ভাই যে আজ তাকে কেনো নিয়ে এসেছিলো কে জানে!

কিন্তু একটু পরেই এসে আনায়ার একটা ধারনায় পুরো ছাই পরে গেলো। যখন তার ধারনা মতে এই র*ক্তচোষা বাদুড়টা গিটারে সুর তুলে গান গাইতে লাগলো।

ভ্রমর কইও গিয়া……………
শ্রীকৃষ্ণ বিচ্ছেদের অনলে………….
অঙ্গ যায় জলিয়ারে ভ্রমর কইও গিয়া
ভ্রমর কইও গিয়া………
শ্রীকৃষ্ণ বিচ্ছেদের অনলে…
অঙ্গ যায় জলিয়ারে ভ্রমর কইও গিয়া………..

এতুটুকু শুনতেই আনায়া চমকে উঠলো। আনায়া একবার আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো এই ভি.কে এর গানের তালে সবার মাঝেই উচ্ছ্বাসের জোয়ার।

এটা তো সেই গানই যেটা সে প্রতিদিন একবার হলেও শুনে থাকে। বলতে গেলে এটা ওর প্রিয় গান। ছোট বাটন ফোন চালিয়ে সে যেই গানটা প্রতিদিন শুনে সেটা বের করে একবার কানে চেপে ধরলো। কিছুক্ষণ তার ফোনের গানটা শোনার পর এবার স্টেজে গাইতে থাকা ব্যাক্তির গানটা শুনলো।

তার কাছে বিষয়টি বিস্ময়কর লাগলো। একদম সেম গানের সুর, সেম গানের টোন, গিটারের সুরের আওয়াজটাও এদকম সেম। তার মানে তার প্রিয় গানটা এই লোকটাই গেয়েছে।

হুট করেই আনায়ার চোখমুখে প্রফুল্লতায় ভরে উঠলো। হাসি মুখ নিয়ে মনে মনে কয়েকবার নিজের ছোট বোন ইরাকে কয়েকবার ধন্যবাদ ও দিয়ে দিলো। তার বোনই মূলত এই ভি.কে. এর গানের বিশাল বড় ফ্যান। কিছুদিন পরপরই তার বাটন ফোনটাতে বন্ধু কিংবা দোকানে টাকা দিয়ে এই ভি.কে. এর গান ডাউনলোড করে নিয়ে আসে।

তেমনই একদিন ওকেও কয়েকটা গান ডাউনলোড করে দিলে এই গানটা ওর সবচেয়ে বেশি প্রিয় হয়ে যায়।

ইরা যদি জানে ও ভি.কে. এর কনসার্টে এসেছে তাহলে তো মেয়েটা আফসোসেই মরে যাবে। বার বার বলবে আমি কেনো তাকে নিয়ে এলাম না।

ভ্রমর রে…
কইও কইও কইওরে ভ্রমর কৃষ্ণ রে বুঝাইয়া
কইও কইও কইওরে ভ্রমর কৃষ্ণ রে বুঝাইয়া
মুই রাধা মইরা যাইমু .কৃষ্ণ হারা হইয়া রে.
ভ্রমর কইও গিয়া…
ভ্রমর কইও গিয়া..
শ্রীকৃষ্ণ বিচ্ছেদের অনলে…
অঙ্গ যায় জলিয়ারে ভ্রমর কইও গিয়া………….

আনায়ার মুখের উচ্ছাস দেখে ইমন খেয়াল করে বললো,

—“কি হয়েছে! একটু আগেই তো V.K. কে গালাগালি করছিলে এখন আবার ওর গান শুনে দেখে মনে হচ্ছে প্রচুর চিল মুডে আছো তুমি! তুমি আবার ভিকের গান শুনে ফ্যান হলে নাকি ওর চেহারা দেখে ক্রাশ খেলে। গান শুনে ফ্যান হলে প্রবলেম নেই কিন্তু ক্রাশ ট্রাশ খেয়ে গেলে কিন্তু রেহান আমাকে উ*ষ্ঠা দিয়ে আফ্রিকা পাঠিয়ে দেবে। বলবে “সা’লা আমি দুদিনের জন্য দেশের বাহিরে চলে এসেছি আর তোকে আমার হবু বউয়ের দেখাশোনা আর চাকরি জোগার করে দিতে বলেছি সেই তুই কিনা কাজের কাজ না করে এই ভিকের উপর ক্রাশ খাইয়ে দিলি। ”

ইমনের কথা শুনে আনায়া হেসে ফেললো,
—“ক্রাশ ট্রাশ যেটাই খাই না কেনো বিয়ে কিন্তু আপনার বন্ধুকেই করবো, কথাটা বলে দিয়েন তাকে! ”

আনায়ার কথা শুনে ইমনও হাসলো।

ভ্রমর রে…
আগে যদি জানতাম রে ভ্রমর যাইবারে ছাড়িয়া..
আগে যদি জানতাম রে ভ্রমর যাইবারে ছাড়িয়া..
মাথার কেশো দুইভাগ করে রাখিতাম বান্ধিয়ারে
ভ্রমর কইও গিয়া…
ভ্রমর কইও গিয়া
শ্রীকৃষ্ণ বিচ্ছেদের অনলে…
অঙ্গ যায় জলিয়ারে ভ্রমর কইও গিয়া

গানের মাঝেই আনায়া আবারও ইমনকে জিজ্ঞেস করলো,

—“আচ্ছা উনি কি ছ্যা*কা ট্যাকা খেয়েছে নাকি! ”

—“হঠাৎ এমন কেনো মনে হলো! ”

—“কেমন যেন তার গানের মধ্যে একটা ভীষণ বিরহের সুর ভেসে আসছে। মনে হচ্ছে গানটা একদম মনের গভীর থেকেই গাইছে! ”

—“বাপরে, গানের মধ্যে এতো কিছু নোটিশ করে ফেলেছো। কিন্তু আমি এতোকিছু বুঝি না তবে এটা ঠিক যে কেনীথ স্যারের গান সত্যিই অসাধারণ। আর সে বেশির ভাগ সময় এসব বাংলা গান গুলোকেই তার অসাধারণ গলা আর সুরে জাগিয়ে তোলে তার ভক্তদের মাঝে। তার পি.এ. হওয়ার সুবিধার্থে যে ফ্রিতে গান শোনার সুযোগ পেয়েছি এতেই আমি ধন্য। জবটা ছেড়ে দেওয়ার পর বিষয়টি প্রচন্ড মিস করবো।

আনায়া অমায়িক হাসলো তারপর হঠাৎ তার ঘড়ির দিকে তাকাতেই পুরো চমকে উঠলো। রাত দেড়টা বাজে। মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। তাড়াতাড়ি করে বললো,

—“ভাইয়া দেড়টা বাজে! ”

—“চলে যাবে! একা একা তো যেতে পারবে না আমাকেও সাথে যেতে হবে। আচ্ছা এই গানটা শেষ হোক তারপর আমি স্যারের কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে তোমাকে বাড়িতে দিয়ে আসবো।”

—“আপনাকে তো আবার এখানে আসতে হবে, তাই না! তাহলে এতো তাড়াহুড়ো করতে হবে না, আমি বরং কনসার্ট শেষ হওয়া পর্যন্তই অপেক্ষা করি। এতোক্ষণে ইরা হয়তো বাবাকে ঔষধ খাইয়ে ঘুম পারিয়ে দিয়েছে।”

—” এটাই ভালো হবে,এই কারণেই তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি! ”

—“মানে!”

—“মানে তোমাকে ভি.কে. এর সাথে দেখা করাবো এই জন্য তোমাকে এখানে নিয়ে আসা। তোমার জবটা মূলত ভি.কে. স্যারের সাথেই জড়িত। কিন্তু তোমার ভি.কে. এর প্রতি অনিহা দেখে মনে হচ্ছে তুমি আদোও এই জব করবে কিনা কে জানে! তাই বিষয়টি নিয়ে আজ ভাবনা চিন্তা করো তারপর না হয় কাল ডিসিশন জানিও। আর সেলারির কথা তো বললামই, তোমার জন্য যথেষ্ট ভালো হবে; মান্থলি পুরো 60K+……

আনায়া প্রচন্ড অবাক হলো। যেখানে সে সারা মাস টিউশনি করিয়ে দশ হাজার টাকা পায়। সেখানে একটা চাকরিতেই এতো টাকা। সে বিস্মিত হয়ে বললো,

—-“মানে…..! ষাট হাজার টাকা মাসিক সেলারি! এমন কি কাজ করতে হবে যার জন্য এতো টাকা সেলারি দেওয়া হবে!”

—“আমি যা করি তাই! ”

আনায়ার কপাল কুঁচকিয়ে ইমনের দিকে তাকাতেই,

” তোমাকে V.K. এর P.A. এর জবটা করতে হবে। ”

আনায়া আরেক দফায় বিস্মিত হলো। অনেকটা জোর আওয়াজেই বলে উঠলো,

—“কিহ……!”
_______________________

দোতলার এক বাড়ির নিচ তলায় নিজের রুমে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তারেক শিকদার। ছোট মেয়ে ইনায়া শিকদার ইরা সেই কোন বেলায় খাবার ঔষধ খাইয়ে তাকে ঘুম পারিয়ে নিজের রুমে গিয়ে ঘুমাচ্ছে। অবশ্য এখন ঘুমানোরই সময়, এখন যে মধ্যে রাত।

বড় মেয়ে আনায়ার অপেক্ষায় দুজনে বসে থাকলেও রাত বাড়তেই দুজনেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
কিন্তু হঠাৎই দরজা খোলার আওয়াজে তারেকের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। বুঝে গেলো তার মেয়ে চলে এসেছে। শোয়া অবস্থাতেই জোরে জোরে বলতে লাগলো,

—“আনায়া! মা…তুই এসেছিস! ”

কিন্তু তার ডাকের সুরে কোনো উত্তর পেলো না তারেক। সে আবারও বললে,

—“মা আনায়া! তুই কথা বলছিস না কেনো। তুই এসেছিস,এসে থাকতে জবাব দে! ”

এবার কারো কথা শুনতে পেয়ে তারেক মুচকি হাসলো। কেউ একজন বললো,

–“হ্যাঁ বাবা! আমি চলে এসেছি। ”

কিন্তু সেই হাসি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। তারেক দেখলো তার বড় মেয়ে আনায়া এক সোজা অবস্থায় বড় এক ছু*রি ধরে তার দিকে এগিয়ে আসছে। তারেক শোয়া থেকে উঠতে চেয়েও আর উঠতে পারলো না। তার শরীর মেয়ের এই অদ্ভুত রুপ দেখে আতংকে অবশ হয়ে বিছানাতে পরে রইলো।

কিছুক্ষণের মাঝেই সে দেখলো আনায়া একদম তার কাছে চলে এসেছে। সে কিছুটা ভয়ার্ত গলায় বললো,

—“কি হয়েছে মা! তোর হাতে এতো ধারালো ছু*রি কেনো! ”

তারেকের কথায় আনায়া বাঁকা হাসলো। এরপর পেছনে থাকা অন্য হাতটা সমানে আনতেই তারেক আরেক দফায় আঁতকে উঠলো। আনায়া এক হাতে ধারালো ছুরি আর অন্য হাতে ধারালো চা*পাতি দিয়ে দুটো কিছুক্ষণ পর পর এক সাথে করতে করতে বললো,

—“সরি বাবা! আমাকে ক্ষমা করে দিও, আমার এ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না।তোমার শেষটা যে আমার জন্যই হতে হবে বাবা। তুমি না তোমার মেয়েদের ভালোবাসো তাহলে তোমার বড় মেয়েটার জন্য তোমার এই ছোট্ট জীবনটাকে উৎ*সর্গ করলে কি খুব বেশি ক*ষ্ট পাবে তুমি বাবা!

একদিকে ছু*রি আর চা*পাতির ঘ*র্ষণে বারবার তৈরি হচ্ছে এক অ*সহ্যকর শব্দ। তার উপর মেয়ের এমন ভয়ং*কর রুপের আ*তংকদায়ক হাসি আর তার বলা কথা গুলো। তারেক আতংকে কয়েকবার চি*ৎকার দিতে গিয়ে দেখলো তার মুখ থেকে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না। সে ভয়ে শুধু ছট*ফট করতে লাগলো। আর অন্যদিকে তার এই অবস্থা দেখে আনায়া বি*শ্রী ভাবে হাসতে লাগলো।

~চলবে….