#একজোড়া_আগুন_পাখি
®অরনীতা তুশ্মি (#তুশকন্যা)
পর্ব→৫
Cheri, cheri lady
Goin’ through a motion
Love is where you find it
Listen to your heart………
কানের কাছে অস্ফুট স্বরে গানের শব্দের ভান্ডার গুলো ভেসে আসছে। আনায়া ঠিক ভাবে চোখ খুলতে পারছে না। সবকিছু কেমন যেন ঝাপসা ঝাপসা লাগছে। মাথায় প্রচন্ড ব্যাথায় কুঁকড়ে গিয়েছে মেয়েটা। তবে সে খুব ভালো করেই অনুভব করেছে যে সে কোনো তরল পদার্থের মাঝে ডুবে রইছে। সাথে বিশ্রী গন্ধের সমাহারও বারবার নাকে এসে প্রবেশ করছে। আয়নায় ভ্রু জোড়া বারবার কুঁচকে যাচ্ছে।
Cheri,… cheri… lady
Like there’s no tomorrow
Take my heart…., don’t lose it
Listen to your heart…….
আবারও খালি গলায় অসাধারণ কন্ঠে গাওয়া গানের শব্দ গুলো এসে আনায়ার কর্ণে প্রবেশ করলো। আনায়া খুব করে চেষ্টা করলো চোখ খোলার। কিন্তু পুরোপুরি সফল হলো না। ঝাপসা চোখে শুধু কালচে লাল আলোর সমাহারই দেখতে পেলো। আনায়ার মাথাটা কিছুটা উপরের দিকে থাকায় সিলিং ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলো না।
আনায়া এবার আধশোয়া থেকে উঠবার চেষ্ঠা করছে। তবে কিছুতেই পারছে না। বারবার শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। সাথে বুক পর্যন্ত তরল পদার্থের মাঝে ডুবে থাকায় তা যেন আনায়াকে আরো নিচের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
কিন্তু আনায়া তো হাল ছাড়ার পাত্রী না। তার বর্তমান অসচ্ছল মস্তিষ্ক বারবার তাকে জানান দিচ্ছে যে সে কোনো বড় পাত্রের মাঝে ডুবে আছে। কিন্তু কিসের মাঝে আছে তা আর তার মস্তিষ্ক ধরতে পারছে না। আনায়া আশেপাশে হাতিয়ে দেখতেই পিচ্ছিল প্রাচীরের সাথে তার হাতের স্পর্শ লাগলো। আনায়া নিজের দু’হাত দিয়ে প্রাচীরে চূড়ায় হাত দিয়ে নিজের সবটুকু শক্তি প্রয়োগ করে বসার চেষ্টা করলো। আর সে সফলও হলো।
এতক্ষণে তার ঝাপসা চোখদুটো কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুধু করেছে। আনায়া প্রথমে বোঝার চেষ্টা করলো সে কোথায় আছে। যে তরল পদার্থের মাঝে সে ডুবে রয়েছে সেটা আসলে কি, তার মস্তিষ্ক ধরতে পারছে না। আর সেই বিশ্রী গন্ধটাও এই পদার্থ থেকেই আসছে।
আনায়া এসব বাদ দিয়ে সে কোথায় আছে বোঝার চেষ্টা করতেই আবারও সেই একই কন্ঠ স্বরে কেউ গাইতে লাগলো,
I get up, I get down
All my world turns around
Who is right? Who was wrong?
I don’t know
আনায়া চট করে সামনে তাকাতেই আঁতকে উঠলো। তার সামনে থেকে অনেকটা দূরত্ব বজায় রেখে কেনীথ দুই হাতের কনুই, দুই হাঁটুতে রেখে কিছুটা নিচের দিকে ঝুকে একটা টুলের উপর বসে রইছে। পরনে শুধু একটা কালো রংএর টাউজার। আর প্রশস্ত বুকে কোনো কাপড়ের অংশেরও ছিঁটে ফোটা নেই। এতক্ষণ রুমটাকে বেশিই অন্ধকার মনে হলেও এখন ধীরে ধীরে তা স্পষ্ট হতে শুধু করেছপ।
আনায়া আবারও খেয়াল করে দেখলো কেনীথে মুখে প্রসস্থ বাঁকা হাসি। বড় বড় চুল গুলো সব এলোমেলো পাখির বাসা হয়ে গিয়েছে। মাথা কিছুটা নিচের দিকে থাকায় বাম পাশের চোখগুলো চুলের প্রভাবে অনেকটা ঢেকে গিয়েছে। অথচ সে খুশি মনে গান গাইছে।
I’ve got pain in my heart
Got a love in my soul
Easy come, but I think
Easy go
তবে এবার যা দেখলো তাতে সে পুরোই বিস্মিত। কেনীথের দুই হাতে দুটো চাপাতি। যেগুলো দিয়ে সে বারবার ঘর্ষ*ণ করে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে প্রতিনিয়ত একই কাজ করায় তা থেকে তৈরি হচ্ছে মৃদু শব্দ। আনায়া আরেকটু খেয়াল করতেই দেখলো চাপাতি গুলোর সাথে কিছু একটা লেগে আছে। সেগুলো তরল পদার্থের ন্যায় ফোঁটায় ফোঁটায় নিচে পড়ছে।সময়ের ব্যবধানে ফোঁটাগুলার গতি খুবই ক্ষীণ।
আনায়া আবারও কেনীথের দিকে তাকিয়ে দেখলো এই তরল পদার্থ শুধু চাপাতি দুটোর সাথে নয় বরং কেনীথের ফর্সা প্রশস্ত বুক আর হাতেও লেগে আছে।
আনায়ার মস্তিষ্ক হঠাৎই এবার তাকে জানান দিলো এই তরল পদার্থ গুলো হয়তো র*ক্ত। আনায়ার সম্পূর্ণ শরীর এবার বিস্ময়ে নড়েচড়ে উঠলো। হুট করেই নিজের দিকে তাকাতেই বুঝতে পারলো সে আসলে কিসের মাঝে ডুবে রইছে। আর সে যেটাকে পাত্র ভাবছে সেটা একটি বাথ টাব। আর তার মস্তিষ্ক তাকে পুরোপুরি বিষয়টি জানান দিতেই সে কেনীথের দিকে তাকিয়ে জোরে চিৎকার করো উঠলো। অথচ কেনীথের মাঝে কোনো হেলদোল নেই। সে একই ভাবে ধীর গতিতে গান গেয়ে যাচ্ছে।
I need you so
All the times I…..
আনায়া আর এরচেয়ে বেশি কিছু শুনতে পেলো না। এর আগেই চলে অচেতনতার আবেশে। নিস্তেজ শরীরের গলা পর্যন্ত ডুবে গেলো বিশ্রী গন্ধযুক্ত তরল পদার্থের মাঝে।
_______________
—“আনায়া!”
—“আনায়া!”
—“আপু!”
—“আনায়া মা!
—“আনায়া! তুমি শুনতে পারছো! ”
পরপর এতো গুলো ভিন্ন কন্ঠ স্বরে আনায়ার অবচেতন মস্তিষ্ক সজাগ হলো। হুট করেই চোখ খুলতেই দেখতে পেলো তার আশেপাশে অনেকগুলো পরিচিত মুখ। আনায়া শোয়া থেকে বসতে চাইলে পাশ থেকে ইনায়া এসে আনায়াকে শুতে বললো। তবুও আনায়া মানলো না। সে সরাসরি না বসে আধশোয়া হয়ে খাটে হেলান দিলো।
আনায়া আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো সে তার নিজের ঘরের বিছানাতেই শুয়ে রইছে। আনায়া একবার নিজেকে দেখছে তো একবার আশেপাশের সবকিছুকে। আনায়া এমন অস্থির হচ্ছে দেখে পাশ থেকে ইমন এসে এক গ্লাস পানি দিতেই আনায়া গটগট করে সম্পূর্ণ পানি খেয়ে ফেললো। ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও কিছু দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়েছে।
এরই মাঝে ইমন আনায়ার উদ্দেশ্যে বললো,
—“তুমি ঠিক আছো! চোখ বুজে ছটফট করছিল; কোনো বাজে সপ্ন দেখেছো!”
আনায়া ভ্রু কুঁচকালো। আনায়ার একপাশে ইনায়া,আর হুইল চেয়ারে বসা তার বাবা চিন্তিত চাহনিতে তার দিকে তাকিয়ে রইছে। অন্যপাশে ইমন দাঁড়ানো। আনায়া ইমনের কথা শুনে ভাবলো এতক্ষণ ধরে তার সাথে যা যা হচ্ছিলো সেগুলো কি তার ভ্রম ছিলো। এটা কি করে হয়, কখনো তো এমন সপ্ন তো সে দেখে না!
আনায়া গত রাতের কথা মনে করলো। তার সাথে কেনীথ ছিলো। তাদের গাড়িটার তো এক্সিডেন্ট হয়েছিলো। তাহলে এখানে কখন এলো। ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,
—“ইমন ভাই, আমি এখানে কি করে এলাম! ”
—“তুমি তো সেন্সলেস ছিলে তাই কিছু হয়তো মনে নেই। রাতে স্যার ফোন করে বললো তার গাড়িটা নাকি চৌরাস্তায় এক্সিডেন হয়েছে। তার সাথে তুমিও আছো আর তোমার মাথাতেও আঘাত লেগেছে। আমি তো খবর পেয়েই সেখানে চলে গিয়েছি। গিয়ে দেখি তুমি পুরো সেন্সলেস হয়ে গাড়িতে পড়ে রইছো। এমনিতেই বৃষ্টি তার উপর এমন ঘটনা। কপাল ভালো ফার্স্ট এইড বক্স গাড়িতে ছিলো,সেজন্য স্যার তোমার মাথায় ব্যান্ডেজ করে দিতে পেরেছে। না হলে সিচুয়েশন আরো বাজে হতে পারতো। ”
ইমনের কথা শুনে আনায়া কিছু বলল না। মাথা নিচু করে কি যেন ভাবতে লাগলো। এরই মাঝে হঠাৎ রেহানের কথা মাথায় আসতেই আনায়া আঁতকে উঠলো। অস্থির চিত্তে বলতে লাগলো,
—“ভাইয়া!…. রেহান কোথায়! ও ঠিক আছে তো ? ”
হুট করে আনায়ার কথা শুনতেই ইমনের মুখটা চুপসে গেলো। সে আনায়ার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে। আনায়া মনে প্রাণে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছে যেন তার এই দূঃসপ্নের মতো রেহানের এক্সিডেন্টের ঘটনাটাও যেন তার ভ্রম হয়। এই মূহুর্তে আনায়া বাস্তব কল্পনা কোনটাই মেলাতে পারছে না।
আনায়া আর রেহানের বিষয়টা আনয়ার বাবা এবং আনোয়ার বোন দুজনেই জানে। রেহান নিতান্তই ভদ্র মানুষ তাই আনার বাবা কিংবা আনায়ার বোনের এই বিষয়ে কোন আপত্তি নেই। তারা দুজনেই রেহানকে খুব পছন্দ করে।
এদিকে ইমন কিছু বলছে না দেখে, আনায়ার অস্থির মন আরো অস্থির হয়ে উঠছে। ইমন বলতে লাগলো,
—“আনায়া রেহানের অবস্থা তেমন ভালো না! খুব বাজে ভাবে এক্সিডেন্ট হয়েছে। এখন হসপিটালেই ভর্তি রয়েছে। ”
আনয়ার চোখ ছলছল করে উঠলো। খুব কষ্ট করে নিজের কান্নাটুকু আটকে রাখল এরপর পাশে তাকিয়ে দেখল ইনায়ার চোখেও পানি ছলছল করছে। দেশে থাকতে ইনায়া আর রেহানের মাঝে অনেকটা গাঢ় বন্ধুত্ব ছিলো।একদম নিজের বড় ভাই মনে করতো। কিন্তু যখন ইমন এর কাছ থেকে শুনলো রেহানের এক্সিডেন্ট হয়েছে তখন থেকে তারও মনটাও ভালো নেই।
অন্যদিকে মাঝ রাতে নিজের বোনের এক্সিডেন্ট।সবকিছু মিলে তার মনে হচ্ছে তাদের জীবনে আবারও এক অজানা ঝড় আসতে চলেছে।
ইমন এবার আনায়ার উদ্দেশ্যে বলল,
” তুমি রেহানের এক্সিডেন্টের খবর কোথায় পেলে! ওর ওখান থেকে কোনো ফোন এসেছিল নাকি?
তোমার এক্সিডেন্টটাও তো রাতেই হয়েছে। ”
আনায় নিজেকে সামলিয়ে রেহান কে বলল,
“আমি স্যারের সাথে বাড়ি ফিরছিলাম। তখন রেহানের ফোন এলে ওর সাথে কথা বলতে থাকি। এরই মাঝে হঠাৎ রেহানের ওপাশ থেকে বিস্ময়কর আওয়াজ আসে। আমি রেহানকে কয়েকবার ডাকলেও ও কোনো সাড়া দেয় না। আর এরই মাঝে আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাদের গাড়িটারও এক্সিডেন্ট হয়ে যায়।আচ্ছা উনার কি অবস্থা! ”
–“স্যার তো ঠিকই আছে। তার জন্য এসব ঘটনা নতুন কিছু না! কিছুদিন পর পরই তিনি গাড়ির অবস্থা আর নিজের অবস্থা বারোটা বাজিয়ে ফেলে। কিন্তু গাড়ির নেশা ছাড়তে পারে না। তুমি আবার ভেবো না উনি ঠিকঠাক ড্রাইভিং করতে জানে না।উনার কার ড্রাইভিং পুরোই অস্থির কিন্তু কার এক্সিডেন্ট করানোটাও মনে হয় ওনার শখ। ”
এরই মাঝে পাশ থেকে ইনায়া ভ্রু কুঁচকে বললো,
—“মানে! আপনাদের স্যার নিজের শখ মিটাতে গিয়ে আমার বোনের এক্সিডেন্টে করিয়ে দিয়েছে!”
—“ঠিকটা বলতে পারছি না ইরা! আনায়াকে সাথে নিয়ে ওনার এতোটা কেয়ারলেস হওয়াটা মানায় না। আবার এই প্রথমই হয়তো উনি কাউকে কার শেয়ার করেছে। হয়তো এজন্য আনায়ার বিষয়টা খেয়াল করেনি!”
—“কি আজব মানুষ এগুলো, নিজের শখ হয়েছে তো একাই ম*র! আমার বোনকে কেনো সাথে নিলো। আর তুই কেনো ওনার সাথে আসতে গিয়েছিলি। ”
আনায়া বললো,
—“আমি বুঝতে পারিনি যে কাজ শেষ হতে ওতো দেরী হয়ে যাবে। আর আশার পথে নিচে এসে দেখি কোনো অটো-রিকশা কিছুই নেই। ইমন ভাইকে ফোন দিতে চেয়েছিলাম তার আগেই স্যার এসে বললো আমি তার সাথে যাবো কিনা। উপায় না পেয়ে তার সাথে চলে এসেছি। ”
ইমন বললো,
—“বুঝতে পারছি না কি বলবো, একবার মনে হচ্ছে এই প্রথম স্যার কাউকে হেল্প করলো আবার মনে হচ্ছে তিনি হয়তো……..
—“আমাকে চিন্তে পেরে রিভেঞ্জ নিয়েছে! ”
—“আ’ম নট সিওর! কারণ তিনি আবার তোমার ট্রিটমেন্টও করে দিয়েছে৷ ”
আনায়া আর ইমনের কোনো কথাই ইনায়া কিংবা তারেক বুঝতে পারলো না।কিসের চিনতে পারা আর কিসের রিভেঞ্জ!
তবে কিছুক্ষণের মাঝেই তাদের কথোপকথন সেখানেই শেষ হলো।
_______________
অন্যান্য অফিস কিংবা স্টুডিওর মতো ভিকের অফিস নয়। এখানে ডিসিপ্লিন জিনিসটা খুব কঠোরভাবে প্রত্যেক এমপ্লয়িকে মানতে হলেও ভিকের জন্য বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সাথে ভিকের পি.এ. হওয়ার সুবিধার্থে আনায়াকেও মানতে হবে ভিকের আজব সব রুলস এন্ড শিডিউল ।
আনায়াকে সকাল সকাল একদম ফিটফাট হয়ে অফিসে যেতে হবে না। তার অফিস টাইম হবে একদম দুপুরের শেষ প্রহর কিংবা বিকেল থেকে সোজা মধ্যে রাতের শুধু পর্যন্ত। মাঝে মধ্যে এই সময় সূচির ব্যতিক্রমও হবে সেটা ভিকের প্রয়োজন অনুযায়ী
এখানে অন্যান্য এমপ্লয়িদের জন্য বরাদ্দ অফিসের প্রপার রুলস আনায়াকে মানতে হবে না বরং ভি.কে. যখন যেটা বলবে সেটাই করতে হবে। এইজন্যই অন্য সবার চেয়ে এই পদের সেলারিটাও অন্য সবার চেয়ে বেশি।
বেলা বাজে আড়াইটার কম ! ভিকে সারে তিনটের পর অফিসে আসবে। আনায়া আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুলের আগায় চিরুনী করছে। তবে তার মন অন্য জায়গায়। একটা বিষয় নিয়ে প্রচন্ড চিন্তা ভাবনায় পরে গিয়েছে।
আনায়া কেনো যেন বার বার নিজেকে আয়নায় পর্যবেক্ষণ করছে। মাথায় সাদা ব্যান্ডেজ করা। ইমনের কথা অনুযায়ী ব্যান্ডেজটা ভিকে করে দিয়েছে।
এরপর একবার আয়নায় নিজেকে দেখলো। চোখ মুখ একদম শুকিয়ে গিয়েছে। আনায়া তাচ্ছিল্যের মৃদু হাসি হাসলো।
এরপর নিজের জামার দিকে তাকালো। সকাল বেলা নিজের রুমে শোয়া অবস্থায় যে জামা দেখেছিলো এখন সেটা চেঞ্জ করে অফিসের জন্য বের করা জামা পড়েছে। আবার কালকে অফিসে যে জামাটা পড়ে গিয়েছিলো সেটা ছিলো ভিন্ন। বর্তমানে সে বেগুনি রংএর লং কুর্তি সাথে একপাশে সাদা ওড়না ঝুলিয়ে রেখেছে।
তার নিজেকে এই সব পর্যবেক্ষণ করা সবকিছুর মূলেই হলো তার সেই অদ্ভুত সপ্ন। বারবার সেগুলোই কেনো যেন তাকে ভাবাচ্ছে।
আনায়া কি যেন ভেবে হুট করেই ইনায়াকে ডাকলো।
ইনায়া দৌড়ে আনায়ার রুমে চলে এলো।
—“কি হয়েছে আপু! কোনে সমস্যা! ”
আনায়া তাড়াহুড়ো করে ইনায়াকে বললো,
—“আমার কালকের ড্রেসটা চেঞ্জ করে সকালের ড্রেসটা তুই পড়িয়ে দিয়েছিলি!”
—“হুম! ওটা তো সারাদিন অফিসে পড়েছিলে এজন্য চেঞ্জ করে দিয়েছি। ”
আনায়া ভ্রু কুঁচকে বললো,
—“ওই জামাটা নিয়ে আয় তো! ”
ইনায়া বোনের কথা মতো জামাটা নিয়ে এলো। ধোয়ার জন্য একসাথে অনেকগুলো কাপড় জড়োসড়ো করে রেখে দিয়েছিলো বিধায় জামাটা কুঁচকে গিয়েছে।
আনায়া জামাটা হাতে নিয়েই উল্টো পাল্টা করে ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো। সে না চাইতেও তার মন কেনো যেন বারবার বলছে যদি সপ্নটা সত্যিই হতো তাহলে নিশ্চয় র*ক্তের দাগ লেগে থাকতো। সে তো পুরো র*ক্তের মধ্যেই ডুবে ছিলো। কিন্তু জামাতে তো কোনেকিছুই লেগে নেই। একদম পরিষ্কার!
আনায়া আবারও ইনায়াকে জিজ্ঞেস করলো,
—“জামাতে কি কিছু লেগে ছিলো। ”
—“কি লাগবে! শুধু রাত্রে বেলা তোমাকে গাড়ি থেকে নামাতে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছিলো। আর আমি জামাটা ধুই-ও নি!”
—“তুই কি আমাকে গোসল করিয়ে ছিলি! ”
—“কি বলো,ওতো রাতে গোসল করাতে কেনো যাবো! ”
আনায়া আবারও জামাটাকে হাতিয়ে দেখতে লাগলো। কিছুক্ষণ যেতেই হঠাৎ তার ভ্রু জোড়া ভিষণ ভাবে কুঁচকে গেলো। চিন্তিত চিত্তের ফলে গালে সৃস্টি হলো ছোট বড় দুটো টোল।
—“আচ্ছা, আমাকে এখানে কে কে নিয়ে এসেছে আর কখন নিয়ে আসা হয়েছে।”
ইনায়া বোনের এসব কথাবার্তা শুনে কিছুটা বিস্মিত হলো। তার বোনটা এসব কথা বার্তা কখনো তেমন বলে না। তাহলে আজ আবার কি হলো। তবুও ইনায়া বললো,
—“কে আবার! ইমন ভাইয়াই তোমাকে নিয়ে এসেছে। আর তোমাকে রাত তিনটের পরে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। ”
আনায়া ভ্রু কুঁচকে বললো,
—“রাত তিনটের পর ! আমাদের গাড়ির এক্সিডেন্ট তো মনে হয় বারোটার দিকে হয়ছিলো। ”
—“আচ্ছা তুমি কিসের হিসেব মিলাচ্ছো বলো তো! তোমার মনে কি চলছে কিছুই তো বুঝতে পারছি না। আর শোনো, তোমার সাথে যে তোমার অফিসের ওই পাগলা স্যার ছিলো, উনিই তো ইমন ভাইয়াকে ফোন করে জানিয়েছে। ইমন ভাইয়া বললো উনিইও নাকি মাথায় চোট পেয়েছে আর তোমারা দুজনেই নাকি প্রথমে সেন্সলেস ছিলে। কিন্তু প্রথমে ওনার জ্ঞান ফেরায় ইমন ভাইকে জানাতে পেরেছে। ”
আনায়া কিছু বললো না। শুধু বোনের কথা চুপচাপ শুনে গেলো। তবে ইনায়া বললো,
—আচ্ছা তোমার কি হয়েছে আপু বলো তো! সকালে ঘুমের মধ্যেও কি কি যেন বলছিলে। আবার এখন কি সব জিজ্ঞেস করছো। কোনো সমস্যা! থাকলে বলতে পারো। আমি কিন্তু এখোনো আর ছোট নেই, রেহান ভাই বলেছে! ”
রেহানের নাম শুনতেই আনায়া সব চিন্তা উড়ে গেলো। রেহানের জন্য তার কান্না পাচ্ছে। সকাল বেলা ইমনের কাছে পাগলের মতো জিজ্ঞেস করছিলো রেহানের কাছে সে যেতে পারবে কিনা এই মূহুর্তে। কিন্তু এই মূহুর্তে আনায়ার বিদেশে যাওয়ার পসিবল নয়। ওর ভিসা কিংবা অন্য কোনো ডকুমেন্টসই নেই বিদেশে যাওয়ার জন্য। প্রথমে কিছুটা পাগলামো করলেও পরবর্তীতে নিজেকে সামলে নিয়েছে। বাড়িতে অসুস্থ বাবা সাথে ছোট বোনও আছে। সে চলে গেলে এদের কে দেখবে।
অন্যদিকে বাস্তবতা মেলাতে গেলে রেহানের কাছে পৌঁছেতেও যথেষ্ট সময় লাগবে। কিন্তু তার কাছে এতো কাঠখড় পুড়িয়ে গিয়েও কোনো লাভ নেই। সে গিয়ে তো আর ডাক্তারের কাজ করতে পারবে না। আনায়ার কাছে যখন কোনো অপশন থাকে না তখন মনের বিরুদ্ধে যেতে তাকে এসব নানা যুক্তি দিয়ে মন মনকে শান্ত করাতে হয়। সে প্রত্যেকেবারই পরিস্থিতির শিকার হয়ে যায়। এবারও রেহানকে কাছ থেকে দেখার ইচ্ছে তাকলেও তা আর পূরণ হবে না। শুধু সৃষ্টি কর্তার কাছে একটাই প্রার্থনা করতে হবে যেন নিজের প্রিয় মানুষটার সাথে খারাপ কিছু না হয়।
—-“ও আপু! আবারও কই হারিয়ে গেলে!
আনায়া ধ্যান থেকে ফিরতেই ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
—“কিছু না! তুই তোর রুমে যা!”
—“ঠিক আছে! ”
তবে ইনায়া চলে গেলো না। ওখানেই চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।
—“কি হলো!কিছু বলবি। ”
—“আপু জানো কি হয়েছে! ”
আনায়া চোখ জোড়া কিছুটা ছোট ছোট করলো।
—“কি হয়েছে! ”
ইনায়া উৎসুকভাবে আনায়াকে বলতে লাগলো,
—“আপু জানো ভিকের সেই রাতে কনসার্টে একটা মেয়ে চ*র মেরেছে! ”
আনায়া মুখ স্বাভাবিক হলো আর ভাবতে লাগলো। এই গাধীটা আর এই জীবনে একটা বিষয়ে বড় হলো না। ঔই মাথা পাগলা লোকটার মধ্যে এরা পায়টা কি! আর এ তো মনে হয় জানেও না যে আমার চাকরিটা কোথায় হয়েছে। আর ও পাগলামো করবে দেখে ইমন ভাইয়ার কথাটাও বলিনি কখনো। অবশ্য ইমন ভাই নিজেই এই বিষয়টি গোপন রাখতো। নাহলে ভি.কে. এর পি.এ. হওয়ার সুবাদে তার পাগলা ফ্যান গুলো জীবন তেনা তেনা করে দিবে।
আনায়া কিছু বলার আগেই ইনায়া আবারও বললো,
—“আমি তো এই খবরটা জানতামই না! কাল স্কুলে গিয়ে দেখি এই কাহিনি। সবাই ওই বেডিরে গালাগালি করছে। ”
—“কোন বেডি!”
—“মানে, ওই যে মেয়েটা। যে ভিকে কে মে*রেছে। বিশ্বাস করো আপু। ওরে যদি একবার পাই তাহলে আমি মে*রে মে*রে একদম থেথ*লে দিতাম। শয়*তান বেডিটার সাহস কতো! ভিকে কে মা….
বাকিটা আর ইনায়া বলে শেষ করতে পারলো না। তার আগেই আনায়া বেশম খেয়ে উঠলো।
—“কি হলো আপু, পানি খাবে!”
—“নাহ লাগবে না! আর তুই শুধু ওই মেয়েটাকেই কেন দোষ দিচ্ছিস। দেখিস নি, ওই ভিকে একটা লোককে কিভাবে মার*ছিলো।”
আনায়ার কথাটা ইনায়ার পছন্দ হলো না।তবে সে এসব কথা শুনে অভস্ত্য। তার বোন সবসময়ই ভিকে কো নিয়েই উল্টো পাল্টা কথা বলে। অথচ স্কুল থেকে ভিকের সব নিউজ নিয়ে আসার পর সে সবকিছুই আনায়াকে বলে। নাহলে তার পেটের ভাত নাকি হজম হবে না। এমনটা ইনায়া নয় আনায়া বলে। আর প্রত্যেকবারই আনায়াকে বাধ্য হয়েই এই ভিকের প্যাচাল শুনতে হয়।
—“আর তুই দিন দিন কি হচ্ছিস বল তো! ”
—“আমি আবার কি করলাম! ”
—“কি করলাম মানে! সারাদিন ভিকে, ভিকে করতে থাকিস। স্কুল থেকে এসে কখনো ভালো কাহিনি শোনাতে পারলি না। কি এক ভিকে! তুই স্কুলে পড়াশোনা করতে যাস নাকি ভিকে নিয়ে আলোচনা করতে যাস, কোনটা বলতো! তার উপর কিছুদিন পরপরই মহল্লার আন্টিরা, তোর সমসবয়ী ছেলেগুলো এরা এসে বিচার দেয়। কথায় কথায় মুখের মধ্যে মারা*মারি , ঝগড়া*ঝাঁটি এসব ছাড়া কিছু নেই। পড়াশোনার কথা কি আদোও মাথায় আছে নাকি ওটাও এগুলোর সাথে মিশিয়ে ভুলে গিয়েছিস। ”
ইনায়া এখন মনে মনে বললো,”এই রে! আমার বোন তো এবার আমার পুরোই ক্ষেপে গিয়েছে! ”
তবে মুখে বললো,
—“কে কে তোমাকে এসব বলেছে ? বলো একবার শুধু! ”
—“কে কে বলেছে কেনো হবে, কে কে বলেনি সেটা জিজ্ঞেস কর! আর আমি নাম বললে তো তাদের সাথে গিয়ে ঝামেলা করবি, তাই না! দেখ ভালো ভাবে বলছি তোকে, মাথা থেকে এইসব গার্বেজ ঝেড়ে ফেল। এখন মন দিয়ে পড়াশোনাটা কর, ভবিষ্যৎ ভালো হবে। ”
—“গার্বেজ কেনো বলছো, ওই একটু ভিকে…”
—“সেটাই বলছি, এইসব ভিকের চিন্তা ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। এতে তোর কোনো লাভ হবে না উল্টো পড়াশোনায় ইফেক্ট পরছে। তোর নিজেরই ক্ষতি হচ্ছে। ”
—“ঠিক আছে, আমি তোমার সব কথা শুনতে রাজি আছি কিন্তু ভিকে কে ছাড়তে নয়!”
যদিও ইনায়ার প্রথম কথাটুকু শুনে আনায়া খুশি হয়েছিলো কিন্তু পরবর্তী কথাটুকু শুনেই ওর মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।
—“কেন! ভিকে কি তোরে খাওয়ায় না ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়ায়! ”
ইয়ানা নির্বিকারে হেসে বললো,
—“ওগুলো এখন কেন, ওসব তো হবে বিয়ের পর!”
আকস্মিক ভাবে আনায়ার ভ্রু কুঁচকে গেলো।
—“মানে! ”
ইয়ানা একটু লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিমায় বললো,
—“কেন, তুমি জানো না! আমি তো ভিকে কে বিয়ে করবো! ”
আনায়া বিস্মিত হয়ে বললো,
—“তোর এখন বিয়ের বয়স হয়েছে! ”
—“এখনি বিয়ে করছি নাকি! আরেকটু বড় হই তারপর। ”
আনায়ার মেজাজ তুঙ্গে উঠে গেলো। এই মেয়ের এসব কথা বার্তা আর তার সহ্য হয় না। মেজাজ গরম করে বললো,
—“চোখের সামনে থেকে সর! এই মূহুর্তে সর বলছি। নাহলে গালের মধ্যে এমন জোরে থাপ্প*ড় বসাবো যাতে আগামী একমাস আর মুখ দিয়ে ভিকের নাম উচ্চারণ করতে পারবি না। ”
ইনায়ার বোনের কথায় যেন হাসি পেলো,
—” মুখ দিয়ে বলতে পারবো না তো কি হয়েছে৷ ভিকে তো সবসময় আমার মনের ভেতরে থাকে। ওখান থেকে কিভাবে সরাবে, মেরি বেহেনা! ”
—” ইরা………..!
বোনের ধমক শুনে ইনায়া তো দৌড়ে রুম থেকে পালালো। তবে যাওয়ার সময় হাসতে হাসতে বললো,
—“নিজে করলে কিছু না৷ আর আমি শুধু বললেই দোষ। রেহান ভাইয়া শুধু ঠিক হয়ে যাক, তারপর বলবো তোমাকে তাড়াতাড়ি বিয়ে করে এই বাড়ি থেকে সরাতে। ”
ইনায়া চলে গেলো তো ঠিকই কিন্তু রেহানের কথা মনে হতেই আবারও তার মুড অফ হয়ে গেলো। তবুও মুচকি হেসে বললো,
—“ইন শা আল্লাহ! রেহানের কিছুই হবে না। ”
তবে এসব চিন্তার মাঝে আবারও সেই চিন্তাগুলো এসে তাকে ভর করলো।
আনায়া ভাবছে, গভীর ভাবে ভাবছে। কিন্তু কোনো উত্তর নেই। ওই সপ্নটা কি করে সত্যি হয়। আর যদি সত্যি নাই বা হয় তাহলে এখন যেসব ক্লু পাচ্ছে এসব কি। এগুলো তো শুধু তার অতিরিক্ত চিন্তার ফল হতে পারে না।
আনায়ার প্রথম সন্দেহর কারণ তার জামা! এই জামাটা তার নতুনই তবে এর আগেও কয়েকবার পড়া হয়েছিলো। কিন্তু এখন এই জামাটাকে দেখে মনে হচ্ছে এটা সে একবারই পড়েছে। একদম নতুন, সেই প্রথম দিনে কিনে আনার মতো।
তবে এটা যদি তার অতিরিক্ত চিন্তা ভাবনার কারনই হয় তাহলে তার চুল!
আনায়া আবারও নিজের চুল গুলো নাকের কাছে নিয়ে শুঁকে নিলো। যা ভেবেছিলো তাই, এই জিনিসটাই তার সন্দেহটাকে বাড়িয়ে তুলছে। সে শ্যাম্পু করেছিলো গত দু’দিন আগে। কাল বাড়িতে আসার পরও ইনায়া তাকে গোসলই করায় নি সেখানে ও শ্যাম্পু করাবে কিভাবে। অথচ তার চুল থেকে দিব্যি শ্যাম্পুর গন্ধ আসছে। মনে হচ্ছে বেশি কিছুক্ষণও হয়নি সে শ্যাম্পু করেছে। নিজের গায়ের গন্ধও কেমন যেন অপরিচিত লাগছে।
আর সর্বশেষে আরো একটা প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। কালকে বাড়ি ফেরার সময় আনায়া ভিকের সাথে কোনো কথাই বলেনি। এমনিকে তার বাড়ি কোথায় সেটাও তাকে বলা হয়নি। তাহলে ভিকে কিভাবে তার বাড়িতে নিয়ে আসছিলো। অন্য দিকে ইমন ভাইয়া বললো,তাদের এক্সিডেন্ট এই মহল্লায় আসার সময় সেই চৌরাস্তায় হয়েছে। কিন্তু এই রাস্তা ভিকে কিভাবে চিনলো!
_____________
আনায়া ভিকের অফিসে এসে ভিকের রুমের সামনে ঘুরাঘুরি করছে। ভিতরে যাওয়ার সাহস কোনো ভাবেই হচ্ছে না। ভিকের রুলস অনুযায়ী সে না ডাকা পর্যন্ত তার রুমে কারো যাওয়া নিষেধ। যদি অতিরিক্ত কোনো প্রয়োজন হয় তবেই যেতে পারবে।
কিন্তু আনায়ার তো তার মনের মাঝে থাকা প্রশ্নের উওর চাই। সেগুলো তার কাছে বেশি ইম্পর্টেন্ট হলেও ভিকের কাছে তো নয়। আর ভিকে যে তার প্রশ্নের উওর দিবে তেমনটাও তো নয়। কিন্তু আনায়া নিজের প্রশ্নের উওর না পাওয়া পর্যন্ত শান্তও হতে পারছে না।
অনেক চেষ্টার পর সাহস জুগিয়ে কেনীথের রুমে ঢুকে পড়লো। কেনীথের রুমের দরজা খোলাই থাকে, তবে সে খোলা দরজা দিয়ে এমনি এমনি ঢোকার সাহসও কারো নেই। কারণ সবার কাছে কেনীথের কথাই সবচেয়ে বড় বিষয়।
যদি কেনীথের ইচ্ছে হয় তো সে অফিসের জায়গায় জায়গায় সোনা, হিরে, মনি-মুক্তা সাজিয়ে রাখবে আর বললে তা যেন কেউ স্পর্শও না করে। এই একটা কথাই যথেষ্ট সবার জন্য। সেসব জিনিসের দিকে কেউ ভুলেও তাকাবে না, ছুঁয়ে দেখা তো পরের বিষয়।
আনায়া রুমের ভেতরে গিয়ে দেখলো কেনীথ নিজের ডেস্কে নেই। আশেপাশে দেখার আগেই পাশ থেকে এক গম্ভীর কন্ঠ স্বর এলো,
—“কি চাই! ”
আনায়া তড়িৎ পাশে তাকিয়ে দেখলো কেনীথ শিরদাঁড়া সোজা করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইছে। অথচ পুরো বারান্দা পর্দা দিয়ে ঢাকা। পুরো রুমে বাহির থেকে আলো আসার কোনো উপায় নেই। রুমে হালকা লাল রংএর লাইট জ্বালানো। সবকিছু মিলে একদম সেই সপ্নের মতো ফিল পাচ্ছে সে। হঠাৎ এসব ভাবতেই আনায়ার সম্পূর্ণ অঙ্গে শিহরণ বয়ে গেলো৷
আনায়া কিছু বলছে না দেখে কেনীথ পিছনে ফিরে আনায়ার দিকে তাকালো। এরপর কান থেকে ইয়ার বাডস্ গুলো বের করলো।
আনায়া অবাক হলো, লোকটা গান শুনছিলো আবার উল্টো দিকে ঘুরেও ছিলো। আর আমি যে এসেছি এটাও না দেখে বুঝতে পারলো!
আনায়া এসব চিন্তা ছেড়ে দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আসল কথা বলতে লাগলো,
—“স্যার! একটা বিষয়ে কথা বলার ছিলো!”
কেনীথ কিছু বললো না। তার দিকে শুধু তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে। আনায়া কি বলতে চায় সেটাই হয়তো শোনার আগ্রহ তার। অথচ আনায়া কেনীথের এই চাহনি দেখেই সব কথা গুলিয়ে ফেললো। তার মনে হচ্ছে এখনি হয়তো কেনীথ এসে ওকে কিছু একটা করে দেবে। মনে মনে ভাবছে, এই লোকটা এতো ভয়ং*কর কেনো।
এদিকে এই মূহুর্তে কিছু না বললেই বিপদ। আনায়া আবারও সাহস জুগিয়ে বললো,
—“স্যার কাল রাতে…. কাল রাতে…..
নাহ! হচ্ছে না। গলা দিয়ে এখন কথা কেনো বের হচ্ছে না। এদিকে আসল কথা বলতে না পেরে অস্থির হয়ে গিয়েছে। অথচ কেনীথ তার দিকে চোখের পলক না ফেলে একই ভাবে তাকিয়ে রইছে।
—-“স্যার কাল রাতে আমাকে হেল্প করার জন্য থ্যাকংস্!
কেনীথ কিছু না বলে আবারও বারান্দার দিকে মুখ ঘুরালো। এরপর বললো,
—“ইট’স ওকে! ”
আনায়া নিজের প্রতি নিরাশ হলো। কি বলতে এসেছিলো আর কি বললো। কেনীথের পেছন পাশটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রুম থেকে চলে গেলো।
এদিকে আনায়া রুম থেকে চলে যেতেই কেনীথ প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে শিরদাঁড়া সোজা করে ঘাড়টা কিছুটা বাঁকিয়ে দাড়ালো। এরপর বাঁকা হেসে বলতে লাগলো,
“আকাশে এতো তারার ভিড়ে
যেই তারাটা ছিলো শুধু ভিকের জন্য বরাদ্দ!
সেই তারাই কিনা হতে চাচ্ছে অন্য কারো!
হাস্যকর!!! ”
#চলবে