#একজোড়া_আগুন_পাখি
®অরনীতা তুশ্মি (#তুশকন্যা)
পর্ব→০৭
তারেক শিকদার হুইল চেয়ারে বসে রইছে। আনায়া ভার্সিটির জন্য তৈরি হয়ে বাবাকে এখন নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে ইনায়াও স্কুল ইউনিফর্ম পড়ে একদম ফিটফাট হয়ে ডাইনিং টেবিলে খাবার খাচ্ছে।
অন্যদিকে ফরিদা ঘর বাড়ি গোছানোর টুকটাক কাজ করে নিচ্ছে। এমনিতেই দুইবোন সবসময় বাড়িঘর একদম পরিষ্কার আর ফিটফাট রাখে তবুও ফরিদা যখনই এই বাড়িতে আসে তখনই তার কাজ হলো কিছু না কিছু একটা করবেই। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না।
তবে এরই মাঝে হঠাৎ বাড়ির বাহিরে এলাকার কয়েকজন লোকজন জড়ো হয়ে ডাকাডাকি শুধু করতে লাগলো। বাড়ির বাহির থেকে এতো আওয়াজ শুনে আনায়া ফরিদাকে দরজা খুলে দিতে বললো। মূহুর্তেই কয়েকজন লোক এসে তাদের বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়লো। হঠাৎ এতো লোকজন দেখে আনায়া ভ্রু কুঁচকালো। একবার সন্দেহ নিয়ে পেছন ফিরে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে একদম নির্বিকারে নিজের খাবার খেয়ে যাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে যেন কিছুই হয়নি।
এরই মাঝে এলাকার কয়েকজন মধ্যে বয়স্ক লোকেরা বলতে লাগলো,
—“দেখো আনায়া! তোমার বাবা অসুস্থ তাই তাকে কিছু বলেও লাভ হবে না। তাই বরাবরের মতো তোমাকেই বলতে হচ্ছে। দয়াকরে তুমি এসবের সমাধান করো। ”
তারেক শিকদার সহ আনায়া আর ফরিদাও উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে। আবার কিসের সমাধান। আনায়ার একবার মন বলছে ইনায়া হয়তো কিছু করেছে আবার মন বলছে এলাকার লোকজন তো আগে থেকেই তাদের দেখতে পারে না। তারা কিছু করুক বা না করুক দল-বল নিয়ে তো বাড়িতেই হাজির হয়। আজও হয়তো তাদের কোনো পাঁকা ধানে মই পড়েছে কে জানে। আনায়া বিষয়গুলো নিয়ে বিরক্ত তবে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক থেকেই ভদ্রতার সহিতে বলতে লাগলো,
—“চাচা কি হয়েছে? একটু খুলে বলবেন প্লিজ! ”
—“কি হয়েছে! কি হয়নি সেটা বলো। তোমার এই আদরের বোনকে সামলাও! ওর কর্মকাণ্ডের জন্য তো এলাকায় টিকতে পারছি না।”
আনায়া ভ্রু কুঁচকে ইনায়ার দিকে তাকালো। মনে মনে যা ভেবেছিলো। নিশ্চিত কিছু একটা গন্ডগোল করে এসেছে। অথচ হাবভাবে মনে হচ্ছে বেচারী ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না। পায়ের আগা থেকে চুলের গোড়া পর্যন্ত ধোয়া দুধে ধোঁয়া তুলশি পাতা। আনায়া নিজের কন্ঠস্বর গম্ভীর করে ইনায়াকে ডাকলো,
—“ইরা এদিকে আয় বলছি! এনারা সব কি বলছে আবার কি করেছিস তুই। ”
—“আপু খাবারটা কি শেষ করে যাবো নাকি……
—“এখনি আয়!”
ইনায়া আধখানা রুটিটা রেখে হাত ধুয়ে বোনের কাছে এসে দাঁড়ালো। বিস্তৃত এক মুচকি হেসে বললো,
—“বলো আপু কি বলবে! ”
—“কি বলবো মানে! কি করেছিস তুই, এনারা বাড়িতে তোর নামে নালিশ কেনো নিয়ে এসেছে। ”
ইনায়া নির্বিকারভাবে বলতে লাগলো,
—“তা আমি কি করে জানবো। মানুষরে পেছনে লাগা ছাড়া এনাদের কোনো কাজকর্ম আছে নাকি। ”
—“ইরা! বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু, এনারা সবাই তোর বয়সে অনেক বড়। ”
—“তো! বড় হয়েছে দেখে কি তারা কোনো অন্যায় কিংবা ভুল করতে পারবে না, নাকি! আর এমনিতেও তুমি আমার কথা এখন শুনবে না। যা বলবো তাই তোমার কাছে ভুল মনে হবে তুমি বরং এনাদের কাছেই শোনো তারা এখানে কেনো এসেছে। ”
আনায়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই সেই লোকদের মাঝে একজন বলতে লাগলো,
—“ঠিকই বলেছে ও! ওকে আর কিছু বলতে হবে না। যা বলার আমরাই বলছি। ”
এরপর আর কি! কাল বিকেলে ঘটা সব ঘটনা আনায়াকে লোকজন মিলে শোনাতে লাগলো। তবে পুরো ঘটনাতেই সব দোষ ইনায়াকে দিতে লাগলো। এ আর নতুন কি! এইজন্য ইনায়া এসবে পাত্তা দেয় না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেও ঘুরেফিরে সব দোস ইনায়াকেই দেওয়া হবে।
আপাতত এলাকাবাসীর নালিশ কিছুটা এরকম,
—“আনায়া তুমি তোমার বোনকে সামলাও। নাহলে এই মেয়ে নিজে তো পুরোপুরি বিগড়ে গিয়েছে এখন আমাদের মহল্লার ছেলেমেয়ে গুলোকেও বিগড়ে দিচ্ছে। তুমিই বলো, ওর মতো আমাদের এলাকার আর কোনো মেয়ে আছে নাকি। যে মাস্তানদের মতো ওতো গুলো ছেলে সঙ্গ নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আমাদের তো মাথাতেই ঢোকেনা, তোমার মতো মেয়ের ,একই মায়ের পেটের বোন ওমন হয় কি করে। ”
তখনই ইনায়া তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলতে লাগলো,
—“তো আপনার কি ভেবেছিলেন। আমার বোনের মতো আমিও ভোলা ভালা সুশীল মেয়ে হবো যাতে আপনারা আমাদের যখন ইচ্ছে তখন ধুয়ে যেতে পারেন। আর এমনিতেই কাল আমি কোনো অন্যায় কিছু করিনি, যে আপনারা আমার বাড়িতে এভাবে দলবল নিয়ে নালিশ জানাতে হবে। ”
—“আনায়া….!
—“আপু তুমি…..
—“আনায়া ভালো করে বলছি এই মেয়েকে সময় থাকতেই সামলাও। এমনিতেই বিগড়ে গিয়েছে আর দুদিন পর আর একে হাতের কাছেও পাবে না। কোথায় কি করে বেড়াবে কে জানে, এমনিতেই সারাদিন জোয়ান জোয়ান ছেলে নিয়ে ঘুড়ে…….
এবার ফরিদা বলতে লাগলো,
—-“এই যে মিয়া! তুমি কেরা গো এই বাড়ির মাইয়াদের চরিত্র নিয়ে কথা তোলো। আনায়া আপনাদের সন্মান দিয়ে বাড়িতে এখনো দাঁড়ায় থাকতে দিয়েছে দেখে যা ইচ্ছে তাই বলে যাচ্ছেন।
—“তুমি কামের বেডি চুপ থাকো। শিকদার বাড়ির মানুষ আদর যত্ন করে দেখে মুখে খই ফুটতে শুরু হয়েছে। খাও তো মানুষের বাড়ি কাম কইরা। ”
—“কষ্ট কইরা কাম কইরা খাই। মাইনষের মতো হারাম খাইতে যাই না।”
—“ওই ফরিদা! এবার কিন্তু বেশি…..
পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে বিধায় আনায়া কিছু বলবে তার আগেই ইনায়া বলতে লাগলো,
—“ও… চাচা! অন্যের মেয়ের চরিত্র নিয়ে কথা বলার আগে নিজের বাড়িতে খোঁজ নেন। অনেক কিছুই জানতে পারবেন।”
—“মানে! কি বলতে চাও তুমি? আমার মেয়ে তোমার মতো নাকি। ”
ইনায়া তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো,
—” না না আমার মতো হবে কেনো। আমি তো ভালো না এইজন্য ওতো গুলো ছেলে সঙ্গ নিয়ে ঘুরি। আপনার মেয়ে তো ভদ্রোচিতভাবে প্রতিপালিত কোকিল কন্ঠি সুশীল কন্যা। এজন্য-ই মনে হয় টিউশনির অলিগলির চিপায় চাপায় সর্বক্ষণ তার লীলাখেলা চলে, তাই না! আমি মাইয়া এতো কিছু বুঝি না। বাহিরে বাহিরে সারাদিন ঘুরে বেড়াই তো এইজন্য মাঝেমধ্যে এদিক ওদিক নজর চলে যায়, হি হি। ”
ইনায়া কথা শেষ করে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলে বোনের এমন কথাবার্তা শুনে আনায়া ওকে জোরে ধমক দেয়। তবে ইনায়ার মুখ থেকে হাসিখানা আর যায় না।অন্যদিকে ফরিদাও আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে মুচকি মুচকি হেসে চলেছে। তারেক শিকদার থম মেরে হুইল চেয়ারে বসা আর আনোয়ার নিজের মেয়ের সম্পর্কে এসব শুনে সম্পূর্ণ হতবিহ্বল।
আনোয়ার কিছু বলছে না বিধায় পাশ থেকে তার বয়সী আরো একজন ইনায়ার উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো,
—” এই মেয়ে চুপ কর। নিজের চরিত্র ঢাকতে এখন আরেকজনের নামে নোংরামো ছড়াচ্ছিস! ”
—“ওহ, তাই নাকি চাচা। তারা আপনার মেয়ে একটু জিজ্ঞেস করবেন। কয়েকদিন পর তাকে এতো এতো জুয়েলারি, ঘড়ি, জামা এসব কে দেয়। আপনি যে কিপটা তাতে মনে হয় না ওসব আপনি দেন। জিজ্ঞেস করবেন, একজন মানুষের বছরে কয়বার জন্মদিন হয় আর তাকে কয়বার তার ফ্রেন্ডরা জন্মদিনের গিফট দেয়। ”
এই কথা শুনে এই লোকেরও এবার মুখ বন্ধ। ইনায়ার মুখে বাঁকা হাসি কিন্তু আনায়া রাগান্বিত সুরে ইনায়াকে বললে,
—“ইরা বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু! এবার কিন্তু আমি……
—“না! না! তোমারে কিছু করতে হবে। যা বলার তা তোমার বোন বলে দিয়েছে। এই মেয়ে বরাবরই আমাদের অপমান অপদস্ত করে। ঠিক আছে! ঠিক আছে! আর এ বাড়িতে আসবো না কখনো। ”
এ কথা শোনা মাত্রই ইনায়া জোরে জোরে বলে ফেললো,
—“আলহামদুলিল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ! ”
আনায়া ইনায়ার দিকে চোখ গরম করে তাকালেও তাতে আর কোনো কাজ হলো না। অন্যদিকে বাকি লোকেরা আবারও কিছুটা ক্ষেপে গিয়ে কয়েকটা কথা শুনিয়ে বাড়ি থেকে বিদায় নিলো।
সবাই চলে যেতেই আনায়া ইনায়ার দু’ই বিনুনি করা চুলগুলো টেনে ধরতেই ইনায়া ঘাড় বেকিয়ে বললো,
—“ওহ… আপু…ছাড়ো! ব্যাথা লাগে তো!
আনায়া ছাড়লো না বরং রাগান্বিত সুরে বললো,
–“এখন ছাড়বো কেনো! কতবার বলেছি বড়দের সাথে বেয়াদবি করবি না। তাহলে এসব কেনো করিস। ”
—“বেয়াদবি কই করলাম যা সত্যি তাই-ই তো বলেছি। মিথ্যা তো বলিনি। ”
আনায়া এবার ওকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
—“তোকে এতো সত্যি বলতে বলে কে শুনি। আর এলাকায় এতো পাকনামি করতেই বা কে বলে! ”
—” আমি পাকনামি না করলে তো তুমি কিছুই বলবে না আর ওদিকে ওরা সবাই আমাদের অবলা ভেবে ধুয়ে দিয়ে যাবে। আর সবচেয়ে বড় কথা আমি আমার সুশীল নম্র ভদ্র বোন আনায়া না বরং এলাকার “ভিকু” গ্যাং এর লিডার ধানিলঙ্কা ইনায়া শিকদার ইরা, কোনো মহীয়সী নারী না !”
ইনায়ার কথা শেষ হতে না হতেই আনায়া ইনায়ার মাথার পেছনে চাটি মারতেই ইনায়া পড়ে যেতে নিলে আবার নিজেকে সামলে নেয়।
—“দিন দিন বেশি খারাপ হয়ে যাচ্ছিস! এখন খাবার গুলো শেষ করে তাড়াতাড়ি স্কুলে যা। এবার লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি, আবারও যদি তোর নামে কিছু শুনেছি তাহলে…..
আনায়ার কথাখানি শেষ হওয়ার আগেই ইনায়া বিড়বিড় করে বললো,
—-“ওয়ার্নিং তো তুমি প্রতিবারই দেও! ”
আনায়া কথাটুকু শুনতে পেয়ে ধমক দিলো,
—“আনায়া….!
—“সরি আপু…. আচ্ছা আপু শোনো না! ”
—-“কি….!”
—“অনেকখানি তো খেয়ে নিয়েছি বাকিটা না খেলে হয় না! ”
—“হবে না কেনো অবশ্যই হবে। তুই খাবার শেষ না করে স্কুলে গেলে আমি তোকে ঝাড়ু দিয়ে পে*টাবো। ”
মুহূর্তেই ইনায়ার হাসোজ্জল মুখখানা চুপসে গেলো আর আনায়া বলতে লাগলো,
—“মানুষ আর হতে পারলি না জীবনে! ”
________________
ভার্সিটিতে ঢুকতেই একঝাঁক বন্ধুর মেলা এসে আনায়াকে ঘিরে ধরলো। আনায়ার এতোগুলা ফ্রেন্ডদের মাঝে একবারে ক্লোজ তেমন কেউ নেই যাকে আনায়া নিজের সব বিষয় শেয়ার করে। তবে প্রত্যেকটা বন্ধু-বান্ধবীই তার প্রিয়। তাদের গ্রুপটা মূলত সাতজনের। আনায়া বাদে এই গ্রুপে ৩জন মেয়ে আর ২ জন রয়েছে।
আলো আর সাবা দুজনই উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে আর শিখা উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের। তবে এসব নিয়ে কারো তেমন অহংকার না থাকলেও সাবার মাঝে প্রায়ই এসব নিয়ে অহংকার করতে দেখা যায়। দামি ফোন, দামি গাড়ি, ড্রেস এসব নিয়ে সারাদিন কথা বলতেই তাকে আলোচনা করতে দেখা যায়।
অন্যদিকে রনক, সায়েম আর তাজিম তিনজনেই উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান তবে তাদের মাঝে কখনো অহংকারের ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না। এমনিতে অবশ্য তিনজন দেখতে অসম্ভব সুদর্শন। এদিকে সাবা তাজিমকে পছন্দ করলেও তাজিম কখনো সাবাকে বন্ধু ব্যাতীত অন্য কোনো নজরে দেখে না।এই নিয়ে তাদের ফ্রেন্ডশিপে মাঝে মধ্যেই ঝামেলা বেঁধে যায়।
গত দু’দিন আনায়া বাদে বাকি ৬ জন গিয়েছিলো সাবার আয়োজিত পিকনিকে। সেখানে আনায়াকে যেতে বলা হলেও আনায়ার পারিবারিক ব্যস্থতা বাড়িতে অসুস্থ বাবার জন্য ও যেতে পারেনি। বিষয়টি প্রত্যেকেই জানে। তাই আজ ভার্সিটিতে আনায়ার দেখা মিলতেই সবাই ওর সাথে কথা বলতেই উৎসুক হয়ে পড়লো।
প্রথমে প্রত্যেকেই আনায়া আর রেহানের খোঁজ খবর নেওয়ার পর শিখা আনায়াকে জিজ্ঞেস করলো,
—“আমি শুনলাম তুই নাকি সব টিউশনি বাদ দিয়েছিস। তাহলে এখন করিসটা কি? ”
আনায়া একটু অপ্রস্তুত হলো। সে ভি.কে. এর পি.এ. তা মনের ভুলেও বলা যাবে না। তার বন্ধু বান্ধবী ভি.কে. এর সব পাগলা ফ্যান। তার বিষয়ে জানতে পারলে জীবন পুরে ত্যানাত্যানা করে ফেলবে। আনায়া একটু গুছিয়ে নিয়ে ধীরেসুস্থে বললো,
—“একটা এনজিওতে জব পেয়েছি। আপাতত ওটাই করছি। ”
তখনই সায়েম বললো,
—“তুই অনার্সও শেষ করলি না তার আগেই এনজিওতে চাকরি! কপাল আছে দেখছি। ”
এরই মাঝে সাবা বললো,
—“বাদ দে ওর কথা। দেখ গিয়ে নরমাল কোনো জব পেয়েছে। তার চেয়ে আনায়া তুই আমাকেই বলতি বাবাকে বলে তোর ভালো কোনো জবের ব্যবস্থা করে দিতাম। ”
আনায়া মুচকি হেসে বললো,
—“তার আর প্রয়োজন নেই রে। আপাতত যা পেয়েছি তাতেই সন্তুষ্ট। ”
আনায়ার কথা শুনে সাবা আর কিছু বললো না বরং মুখে সামান্য ভেংচি কাটলো যা আনায়ার চোখ এড়ালো না। তবে এসবে আনায়া কখনোই কিছু মনে করে না। সে জানে তার বান্ধবীটা কেমন।
_________________
সারে চারটার দিকে ভিকের অফিসে পৌঁছাতেই খবর এলো কেনীথ আনায়াকে তার কেবিনে ডেকেছে। আজ ভার্সিটি থেকে ফিরে বাড়ির সব কাজ সাথে নিজে গোসল করে ফ্রেস হতে হতেই আনায়ার অনেকটা দেরী হয়ে গিয়েছে। তবে প্রথমে বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি কারণ তার মতে আজও তাকে পুরোটা সময় বসেই কাটিয়ে দিতে হবে। কিন্তু হঠাৎ কেনীথ ডেকেছে শুনে গলা শুকিয়ে গেলো বেচারীর। মনে মনে ভাবছে দেরী হয়ে যাওয়ার কোনো পানিশমেন্ট দিয়ে না বসে।
আনায়া আগেপিছে আর কোনো কিছু না ভেবে সোজা কেনীথের রুমে চলে গেলো। গিয়েই দেখতে প্রথমে কেনীথের দর্শন। পায়ের উপর পা তুলে ফোনে স্ক্রল করছে। আজও কালো রংএর টিশার্ট আর প্যান্ট পড়া। চুলগুলো এলোমেলো হাতে কালো ব্রেসলেট পায়ে কালো স্নিকার্স। আহামরি কিছু না তবে এই এলোমেলো ছদ্মবেশেও দেখতে অদ্ভুত সুন্দর লাগে তাকে।
আনায়া বাকিসব চিন্তা রেখে কেনীথের সামনে দাড়িয়ে কিছুটা ধীরগতিতে বলতে লাগলো,
—“স্যার, ডেকেছিলেন?”
কেনীথ আনায়ার দিকে তাকালো না বরং ওভাবেই ফোনের স্কিনে তাকিয়ে স্ক্রল করতে করতেই বললো,
—“কাল রাতে চিটাগং আমার কনসার্ট রয়েছে, যেখানে যেতে হবে। সবকিছু যেন প্রপার গোছানো থাকে। কোনো ভুল হোক তা আমি চাই না। ”
এরপর আনায়ার দিকে না তাকিয়ে ডেস্কে রাখা একটা কালো ফাইল আনায়ার দিকে ঠেলে দিয়ে বললো ,
—“এখানে সব ইন্সট্রাকশন প্লাস ইনফরমেশন রয়েছে। ভালো করে দেখে নিয়ে কনসার্টে বিষয়টি স্টুডিওর সবাইকে জানিয়ে দিস। ”
আপাতত সব কিছু তো ঠিকই ছিলো কিন্তু সর্বশেষে একটি শব্দে আনায়া চমকে উঠলো। হঠাৎ কেনীথের কাছ থেকে তুই সম্মোধনটি প্রচন্ড অপ্রস্তুতকর লাগলো। তবে আনায়া নিজেকে সামনে ফাইল টা হাতে নিয়ে বললো,
—“ওকে স্যার! ”
এরপর আনায়া সেখান থেকে উল্টো ঘুরে ফিরতে লাগলেই পেছন থেকে কেনীথের আবারও ভারিক্কি কন্ঠস্বর শোনা গেলো।
—-” এখানে কে কখন আসবে-যাবে তাতে আমার কোনো আগ্রহ নেই তবে আমি যখন যাকে ডাকবো তাকে তখনই যেন আমার সামনে পাই। ”
আনায়া বিস্মিত হয়ে পিছন ফিরে তাকাতেই কেনীথের তীক্ষ্ণ চোখে চোখ পড়লো তার। মূহুর্তেই আ*তংকে গায়ে শিহরণ বয়ে গেলো। আনায়া বুঝতে পারে না এই লোকটা কথা বার্তা এতো কম বলে অথচ একেকটা কথার মাঝেই যেন পারমা*নবিক বো*মার বিস্ফো*রণ ঘটায়। আনায়া মাথাখানি হালাক কাত করেই রুম থেকে বেড়িয়ে আসতে লাগলো। তবে তার চোখে এখনো কেনীথের স্তব্ধ চোখ জোড়াই ভাসছে। সাধারণ মানুষের চোখের মণি নাকি নীল, বাদামী, কালো আরো কত কিছু হয় কিন্তু এই লোকের চোখ এমন র*ক্ত লাল কেনো কে জানে। যদিও সেটা খুবই মৃদু তবে আনায়ার কাছে তা তার কলিজা
কাঁপানোর জন্যই যথেষ্ট।
_____________________
আজও মাঠের মধ্যে এসে জড়ো হয়েছে গতকালকের সেই কলেজ পড়ুয়া ছেলে সাথে ইনায়ার ভিকু গ্যাং। তবে আজ ভিকু গ্যাং এর সাথে এলাকার ছোট বড়ো আরো অনেক ছেলেমেয়ে রয়েছে। তাদের সবার দাবি তাদের মাঠে তারা খেলতে পারবে না শুধু শহরের সেইসব ছেলেদের জন্য! এটা কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না।
কলেজের ছেলেদের মাঝে রোহানও রয়েছে। তার মুখে আজ হাসি বিরাজ করছে। সকালে ফোন করে ভাইয়ের খবর নিয়ে জেনেছে তার ভাই রেহান আগের চেয়ে অনেকটাই সুস্থ। সে আর তার বাবার সাথে গোপনে ভিডিও কলে কথাও বলেছে। তবে তার মায়ের সাথে কথা হয়েছে অডিও কলে। ছেলের এমন অবস্থার কথা জানানো কোনো পক্ষেই সম্ভব নয়। এমনিতেই হার্টের রুগী। বর্তমানে তার মা জানে তার ছেলে ভিষণ ব্যস্থ যে কারণে একসপ্তাহ তার সাথে কোনো কথাবার্তা হবে না। একপ্রকার ফোন ছাড়াই থাকতে হবে। আর তিনি তাই বিশ্বাস করেই বসে রইছেন মাঝেমধ্যে তার স্বামী আর ছোট ছেলের কথায় সন্দেহ হলেও তার কিছু করার থাকে না। এমনিতে যুগ হিসেবে তিনি প্রযুক্তির সাথে তেমন ভাবে সম্পৃক্ত নন। ঘরোয়া জীবনযাপনই তার পছন্দ।
বর্তমানে এখানে আসার উদ্দেশ্য তার বন্ধুরাই। এবারও তাকে জোর করেই নিয়ে এসেছে। একটা সময় পর দুই পক্ষের বড়সড় কথা কাটাকাটি হওয়ার পর তা থেমে যায়। এবং তাদের সমোঝোতা হয় যে সপ্তাহে ৩ দিন কলেজের ছেলেরা আর ৪ দিন এলাকার ছেলেমেয়েরা খেলবে। তবে এই দিন ছাড়া সব দিনগুলোতেই প্রত্যেকেই মাঠে আসতে পারে সেক্ষেত্রে কোনো পক্ষরই তাতে বাঁধা দেওয়া যাবে না তেমনি কারো খেলাতে কোনো সমস্যাও করা যাবে না।
কথা মতো আজ কলেজের ছেলেরা খেলবে আর এলাকার ছেলেমেয়েরা চাইলে তাদের দর্শক হতে পারে। আর ঠিক এমনটাই হলো। দুই পক্ষের মধ্যে আর কোনো ঝামেলা রইলো।
এই ডিসিশনের প্লানটা অনেকটা ইনায়া নিজেই দেয়। যে কারণে খেলা শেষে রোহান ইনায়ার কাছে এসে বলতে থাকে,
—“হেই পিচ্চি! তোমার মাথায় তো অনেক বুদ্ধি!”
আনায়া রোহানের কথা শুনে বিরক্ত হলো তাই চোখ ছোট ছোট করে বললো,
—“তা আপনি কি ৮০ বছরের বুড়ো যে আমাকে পিচ্চি পিচ্চি করছেন। আমার থেকে কতোই বা বড় হবেন, তাহলে পিচ্চি পিচ্চি করেন কেনো! ”
রোহান হেসে বললো,
“আচ্ছা ঠিক আছে, আর পিচ্চি বলবো না।তুমি একটু ঝাঁঝালো কথা বলো তো একজন্যই পিচ্চি বলেছি। পিচ্চিরা তো সাইজে ছোট হয় তবে একেকটা পুরো আগুন বো*মা ”
ইনায়া কিছু বললো না বরং উল্টো ঘুরে বাড়ি ফিরতে লাগলেই রোহান বললো,
—“আরে কোথায় যাও! ”
ইনায়া না ঘুরেই বললো,”বাড়ি!”
—“তো একা যাও কেনো! আমাকেও নিয়ে যাও! ”
ইনায়া এবার পেছন ফিরে বললো,
—“কেনো আপনার কি বাড়ি নেই! ”
—“আছে তো! ”
—“তাহলে?”
—“তাহলে আর কি! আচ্ছা তুমি ব্রাজিল নাকি আর্জেন্টিনা! ”
—“CR7”
—“ওহ, মানে রোনালদো ফ্যান। ”
—“হুম, কারণ ভিকে রোনালদো ফ্যান! ”
রোহান ভ্রু কুঁচকে বললো,
—“ভিকে মানে……”
—“ভ্যাম্পেয়ার কেনীথ! ”
—“তুমি ওরও ফ্যান নাকি! ”
—“হুম, কেনো! ”
—“আমিও তো ভিকের ফ্যান! ”
ইনায়া এতোক্ষণ গম্ভীর আর বিরক্ত নিয়ে রোহানের সাথে কথা বললেও এখন ভিকের নাম শুনে পুরো গলে গেলো। এই একটা ভিকে-ই আছে যেখানে সে পুরোপুরি আঁটকে যায়। এবার মুখে হাসি ফুটিয়ে উৎসুকভাবে রোহানকে বললো,
—“সত্যিই তুমি ভিকের ফ্যান! ”
—“হুম, এতে মিথ্যা বলার কি আছে। আর তুমি আমাকে তুমি করে কেনো বলছো। ”
—“এতোক্ষণ পরিচত ছিলাম না এখন তো পরিচিত হলাম। যদি তোমার সমস্যা থাকে তাহলে আর বলবো। ”
—“বাপরে, আমরা দুজন ভিকের ফ্যান এজন্য পরিচিত হলাম। ”
—“হু, এছাড়া অবশ্য আর কোনো কারণ নেই। তবে………আচ্ছা , তুমি রেহান আহমেদ কে চেনো! না মানে কেনো জানি তোমাকে…..
–“তুমি ভাইয়াকে কি করে চেনো!”
—“রেহান আহমেদ তোমার ভাই? ”
—“হুম,আমি রোহান আহমেদ। কিন্তু তুমি এটাতো বললে না তুমি ভাইকে কিভাবে চেনো। এক মিনিট তুমি আবার ভাইয়ার গালফ্রেন্ড নও তো!”
পরক্ষণেই রোহান আনায়ার চোখের দিকে ঝুঁকে গিয়ে বিস্ময়ের সুরে বলতে লাগলো,
—“আল্লাহ তোমার চোখ গুলো তো ভাইয়ার গালফ্রেন্ডের চোখের মতোই।তার মানে তুমিই…… অ্যা…..ভাইয়া এমন একটা পিচ্চি মেয়েকে কিভাবে তার গার্লফ্রেন্ড বানালো। তুমি তো দেখি আমার চেয়েও ছোট এখনো তো স্কুলও……
—“এইযে, এইযে…. একমিনিট! এসব কি আবোলতাবোল বকছো। আমি কেনো তার গার্লফ্রেন্ড হতে যাবো। ছিঃহ, কার সাথে কি। আমি রেহান ভাইকে মন প্রাণ দিয়ে বড় ভাই মানি সাথে দুলাভাইও! ”
—“আ….মানে তুমি নও তোমার বড় বোন…..
ইনায়া চোখ ছোটো করে বললো,
—“হুম!”
—“তাহলে চোখ……..
—“পাগল নাকি, কিসের চোখ!”
—“ওহ সরি! ভাইয়া আসলে বলেছিলো তার গার্লফ্রেন্ড আছে তো সে কে তা জানার জন্য আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু ভাইয়া শুধু একজোড়া চোখের ছবি দেখিয়েছিলো। আর তোমার চোখের সাথে অনেকটা মিল আছে। ”
—“অ্যা….অদ্ভুত ব্যাপার। যাই হোক তোমাদের বাড়িতে আপুর সম্পর্কে কেউ জানে নাকি?”
—“নাহ, শুধু আমি জানি। ”
–“ওহ, তবে আমাদের বাড়িতে জানে। তো আপনি চাইলে আজ আমাদের বাড়িতে যেতে পারেন। যেহেতু আমরা এখন পরিচিত। ”
—“না, না, আজ থাক! এমনিতে ভাইয়া দেশে ফেরার পর তো তোমার আপু আর ভাইয়ার বিয়ে হলে তো তুমি আমার বেয়াইন হয়ে যাবে মানে আমরা পারমানেন্ট আত্নীয় হয়ে যাবো। তখন না চাইতেও তোমাদের বাড়ি যাওয়া হবে। আপাতত আজ আর না যাই।
ইনায়াও আর কিছু বললো না। সৌজন্যে মূলক হাসি হেসে দুজনে বিদায় নিলো।
______________
রাত সারে এগারোটা। শহরের ভিআইপি এরিয়ার রাস্তাঘাটে গাড়ি চলাচল খুবই কম। বিশেষত এই এরিয়ায় এমপ্লয়িরা কাজ শেষে বাড়ি ফিরলেই রাস্তাঘাট শুনশান হয়ে যায়। রাতের বেলায় এখানে প্রাইভেট কার ছাড়া অন্যকিছু পাওয়াটাও অসম্ভব বিষয়ের মতো। তবে আজ আনায়ার চিন্তা নেই। কিছুক্ষণ আগেই ইমন তার গাড়ি নিয়ে অফিসের সামনে তাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে চলে এসেছে। সাথে আনায়ারও ইমনের কাছ থেকে কনসার্টের বিষয়ে কিছু জানার ছিলো তাই সে বর্তমানে ইমনের গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে দুজনে কথা বার্তা বলছে। গাড়িটা পার্কিং এরিয়া থেকে কিছুটা দূরে অন্ধকার রাস্তার পাশে দাঁড় করানো।
আনায়া ইমনের সাথে কিছুক্ষণ তার প্রয়োজনীয় বিষয়ে কথা বলার পর হঠাৎ ইমন আনায়াকে রেহানের সাথে ভিডিও কলে কথা বলার জন্য বলে। আনায়াও খুশি মনে রাজি হয়ে যায়। তবে সেই জায়গায় তেমন আলো না থাকায় ইমন আনায়াকে গাড়িতে বসে ডিম লাইট জ্বালিয়ে কথা বলতে বলে। আনায়াও ইমনের কথা মতো তাই করে।
আনায়া গাড়িতে বসে রেহানের সাথে ফোনে কথা বলছে। অন্যদিকে ইমন একটু দরকারে পাশের একটা শপে গিয়েছে। আনায়া রেহানকে দেখে অনেকটাই খুশি হলো। রেহান এখন আগের চেয়ে অনেকটা সুস্থ সাথে তার কথাও স্পষ্ট। মাথায় সাদা ব্যান্ডেজ এবং এখনো সে হসপিটালে রয়েছে।
দুজনের কথাবার্তা মুহূর্তেই হাসোজ্জলে পূর্ণতা পেলো। মনে হচ্ছে দুজনেই আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। একপর্যায়ে নানা হাসি ঠাট্টা শেষে রেহান হাতের ইশারায় কিস করলো । আনায়া অপ্রস্তুত হলেও মূহুর্তেই হেসে ফেললো।
প্রায় কিছুক্ষণ কথাবার্তা শেষে ইমন ফিরলে দুজনে এবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
_______________
—“Stop!”
মাঝ রাস্তায় এসে হটাৎ পরিচিত এক তৃতীয় কন্ঠ স্বর শুনে ইমন বিস্মিত হয়ে গাড়ি ব্রেক করলো। কন্ঠস্বরখানা পেছন থেকে এলো বিধায় দুজনেই ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালো। মূহুর্তেই দুজনে আরেক দফায় বিস্মত হলো।
ভালো করে নিশ্চিত হতে অন্ধকারে আচ্ছন্ন গাড়ির সব লাইট অন করতেই দেখলো পায়ের উপর পা তুলে এক হাতে কালো রংএর জ্যাকেট নিয়ে বসে রইছে কেনীথ। চোখে কালো রংএর গ্লাসেস্। তারা দুজন কিছু বলার আগেই কেনীথ গাড়ির দরজা খুলে বাহিরে বেড়িয়ে এলো এরপর ড্রাইভিং সিটের কাছে গিয়ে ইমনের দিকে তাকিয়ে গাড়ির বাহির থেকেই বলতে লাগলো,
—“আমার কারে প্রবলেম হয়েছিলো তাই এই কারে বসেছিলাম , ঠিক জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য থ্যাংকস্। এন্ড সরি ফর না জানিয়ে গাড়িতে বসার জন্য। ”
সম্পূর্ণ কথাটুকু শেষ করে কাঁধে জ্যাকেট খানা ঝুলিয়ে একহাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে বড় বড় পা ফেলে কেনীথ রাস্তার পাশের এক বড় এপ্যার্টমেন্টের ভেতরে ঢুকে পড়লো। তার মুখখানা শান্ত রইলেও কালো চশমার নিচে থাকা চোখ জোড়ার দশা কি ছিলো তা আর কারো নজরে পড়লো না।
এদিকে আনায়া আর ইমন বিস্ফো*রিত নয়নে একে অপরকে দেখলে লাগলো। দুজনের মাঝে একই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। ক্ষণিকের মাঝেই হঠাৎ কি হয়ে গেলো, কোনো কিছুরই হিসেব মেলাতে পারছে না। এদিকে ভিকের মুখে থ্যাংকস্ আর সরি এই দুটো শব্দ শুনে রীতিমত অবাক। কেনীথের মুখেও কি এসব শব্দ মানায়! না আজ পর্যন্ত তারা দুজন ব্যতীত এই শব্দ দুটো আর কারো শোনার দুঃসাহসিক ভাগ্য হয়েছে কিনা তাতে অঢেল সন্দেহ রয়েছে। তখনই বিস্মিত সুরে ইমন আনায়া উদ্দেশ্যে বললো,
—“গাড়িতে ভিকে কখন এসে বসেছে, বলোনি তো! ”
আনায়াও বিস্মিত সুরে বললো,
—“আমি নিজেও জানি না ভাইয়া! ”
কিছুক্ষণ দুজনে চুপ থেকে ঢোক গিললো। এমনিতেই গলা কেনো যেনো শুকিয়ে গিয়েছে। গাড়িতে থাকা পানির বোতল থেকে দুজনে পানি খেয়ে নিলো। এরপর ইমন পাশে তাকিয়ে দেখলো তারা কেনীথের এপার্টমেন্টের সামনেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। বিশাল বড় গেটের একপাশে বড় বড় করে লেখা “V.K.” মূহুর্তেই ইমন কিসব ভেবে এক দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।
__________
রাত দেড়টা বেজে গিয়েছে। শহরের নামি-দামি নাইটক্লাব থেকে মাতাল হয়ে বেড়িয়েছে রুহি। পরণে ছোট ওয়েস্টার্ন ড্রেস। এই মেয়েটাকে মাঝেমধ্যেই এবস জায়গায় দেখা মেলে। সাথে নামি-দামি ড্রাগ*স্ কিংবা ম*দ্যপান তার কাছে দুধভাত। বাবা তার দেশের বড় এক বিজনেস ম্যান। আলাদা করে তার জব করার দরকার ছিলো না তবে বাড়িতে থেকে সে এবস কুকীর্তি করতে পারতো না সেজন্য তার বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে একটা ফ্ল্যাটে একাই থাকে রুহি। সাথে ভিকের স্টুডিওতে কাজ করার পাশাপাশি বাবার কাছ থেকেও মাসে প্রচুর টাকা নেয় সে। ভিকের সাথে কাজ করাটা তার যতটা না শখ ছিলো তার চেয়ে বড় উদ্দেশ্য হলো তার বাজে অভ্যাসগুলোকে কন্টিনিউ করা।
সভ্য শহরের লোকালয়ে এসব নাইটক্লাব থাকবে না বিধায় শহরে থেকে প্রায় অনেকটা দূরে একটি বড় নাইট ক্লাবেই নিজর বেশির ভাগ সময় কাঁটায় রুহি। রুহি সাধারণ স্টুডিও থেকে প্রতিরাতে অনেকটা আগেই বাড়ি ফেরে ঠিকই কিন্তু রাত বাড়তেই তার গন্তব্য হয় এই নাইটক্লাব।
আজ আর ভালো লাগছে না বিধায় একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে চাইছে সে। ড্রিংকস মনে হয় একটু বেশি করে ফেলেছে। তবে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটির দিকে তাকিয়ে বিস্তৃত হাসি হাসলো মেয়েটা। সম্পূর্ণ কালো গেটআপে দাঁড়িয়ে থাকা বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী লোকটির চোখে কালো সানগ্লাস, মুখে মাক্স, গায়ে কালো ওয়েস্টার্ন জ্যাকেট সাথে বড় বড় চুল ঢাকতে কালো রংএর ক্যাপ করা। তবে এমন ছদ্দবেশী লোকটিকে যে রুহির পূর্ব পরিচিত তা খুব ভালো ভাবেই বোঝা যাচ্ছে।
দুজনে রাস্তায় বেশিক্ষণ দেরী করলো না। লোকটি রুহিকে ইশারায় ড্রাইভিং সিটের পাশে বসতে দিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লো। তখনই রুহি লোকটির দিকে তাকিয়ে মাতলামো সুরে বলতে লাগলো,
—-“কার কি তুমি চালাবে! ”
লোকটি রুহির দিকে না তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতেই বললো,
—“হুম! ”
—“জানো কেনীথ! আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না যে এটা তুমি। তুমিও কখনো আমাকে এভাবে ট্রিট করবে তা আমি কল্পনাতেও ভাবিনি।”
—“কি আর করার। আমাদের ভাগ্যে যা লেখা থাকবে তাই-ই তো হবে!
রুহি কেনীথের কথায় মুচকি হেসে নিজের সিটে হেলান দিয়ে ক্লান্তিতে চোখ বুজতে থাকলো৷ অন্যদিকে কেনীথ গাড়ি চালাতে চালাতে রুহির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো। কিন্তু সে হাসি মাক্সের নিচে থাকায় না দৃশ্যমান হলো আর না হলো তার সানগ্লাস দ্বারা আচ্ছাদিত চোখজোড়ায় চিকচিক করতে থাকা পরবর্তী পৈশা*চিক কর্মকান্ডের জলুস।
#চলবে