একজোড়া আগুন পাখি পর্ব-১০

0
22

#একজোড়া_আগুন_পাখি
®অরনীতা তুশ্মি (#তুশকন্যা)

পর্ব→১০

—“ইরা!!!”

হঠাৎ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিচয় কন্ঠস্বর শুনে ইনায়া চমকে উঠলো সঙ্গে হাত থেকে একটা ছোট বাক্স নিচে পড়ে গেলো। হঠাৎ করেই তার মস্তিষ্ক হিসেব মেলাতে পারলো না যে সে আদোও ঠিক শুনেছে কিনা!

তবে পিছনে ফিরে চোখে মুখে ফ্লাশ লাইটের আলো সঙ্গে আনায়াকে কিছুটা ভীতিকর মনে হতেই জোরে চিৎকার দেওয়ার জন্য মুখ হা করে শব্দ বের করার আগেই হয়তো তার মস্তিষ্ক তাকে জানান দিলো,

“থেমে যা ইরা! এটা তোরই নিজের বোন আনায়া!”

ইনায়া সঙ্গে সঙ্গে দুই হাত দিয়ে তার নিজের হা করে থাকা মুখ শক্ত করে চেপে ধরলো। এটা দেখে আনায়া ভ্রু কুঁচকে ফেললো অন্যদিকে ইনায়া নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে একটু উচ্চস্বরে বলে ফেলল,

—“আপু তুমি! ”

অন্যদিকে আনায়া সাথে সাথে বললো,

—“ইরা আস্তে, বাবা এসব জানতে পারলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। একমিনিট! বাবা ঘুমাচ্ছে তো! ”

বোনের কথা শুনে ইনায়া মাথা ঝাঁকিয়ে বললো,

—“হুম! কিন্তু তুমি তো বলেছিলে আজ তোমাদের কোম্পানি থেকে ঢাকার বাহিরে যাচ্ছে তাহলে তুমি এখনে কি করছো! ”

আনায়া এবার নিজের শান্ত শিষ্ট চেহারাটাকে পরিবর্তন করে কিছুটা গম্ভীর আর রাগা*ন্বিত করে ইনায়াকে বললো,

—“সেটা না হয় পরের কথা! কিন্তু তুই এখানে কি করছিস সেটা বল আগে। ”

আনায়ার কথায় ইনায়া ঢোক গিলে বলতে থাকলো,

—“আমি, আমি আসলে……..!

—“তুমি আসলে একটা অবাধ্য মেয়ে। তোমাকে যেটাই নিষেধ করা হবে তুমি ঠিক ওটাই করার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকবে। মাথার মধ্যে শুধু সেটাই ঘুরতে থাকবে কখন তুমি নিজের মোক্ষম সুযোগ পাবে আর সেই নিষিদ্ধ কাজের জন্য উঠেপড়ে লাগবে, তাই তো! ”

ইনায়া ইনোসেন্ট মুখ বানিয়ে আনায়ার উদ্দেশ্য বললো,

—“আপু এভাবে বলো না! আমি তো শুধু…. আচ্ছা তুমি আমাকে পরে বকাঝকা করো। আপতত তুমি এটা দেখো আমি কি পেয়েছি! ”

আনায়া ইয়ানায়া কথা শুনলো না বরং আবারও রাগা*ন্বিত কন্ঠে বললো,

—“আগে আমার কথা শেষ করতে দেও। তুমি ভালো করেই জানো, একটু পর আর আমি তোমাকে কিছুই বলবো না, কারণ ততক্ষণে তুমি আমায় ভুজুংভাজুং বুঝিয়ে ঠান্ডা করে ফেলবে। ”

ওর কথা শুনে ইনায়ার যেন হাসি পেলো। তাই এমন সিচুয়েশনে কোনো প্রকার নিজের মধ্যে ভীতি না রেখে মুচকি হেঁসে বললো,

—“আমি জানি তো! তুমি তো আমার কোল্ড কফি। শুধু মাঝেমধ্যে একটু হট হতে চাও! ”

—“ইনায়া!

—“বাদ দেও না ! প্রমিজ করছি আজকের পর আর এমন কিছু করবো না। ”

কিন্তু মনে মনে ছোট করে বললো, “এই কথা সত্যি না! ”

আনায়া ভ্রু বললো,

—“তোর প্রমিজ আর ফাঁটা বেলুন দুটোই এক! যতক্ষণ বেলুনে বাতাস আছে ততক্ষণ তোর প্রমিজ আছে ।”

ইনায়া বোনের কথায় মৃদু দাঁত খিঁচে বললো,

—“আচ্ছা এতো কেনো বকাবকি করছো। এখানে আসা নিষেধ কারণ বাবা এই জায়গার নাম শুনলেই অসুস্থ হয়ে যায়। এখন তুমই বলো আমাদের বাড়িতেই এমন একটা রহস্যময় ঘর আছে অথচ তোমার মাঝে কখনো কৌতুহল জাগেনি, যে এই রহস্যের কারণ বের করি! ”

আনায়া নির্বিকার বললো,

—“নাহ! কারণ আমি কোনো ডিটেকটিভ নই! ”

বোনের কথা শুনে ইনায়া হতাশ হলো। তার এই বোনটা এমন কেনো, শুধু শুধু মিথ্যা বলে।

—“আমি জানি তুমি মিথ্যা বলছো! ”

—“জানিস যখন তাহলে এটাও জানার কথা আমি কেনো এসব নিয়ে মাথা ঘামাই না, যে কাজ করলে বাবা অসুস্থ হয়ে যায় সে কাজ আমি কখনোই করবো না।”

—“হুম,এটা সত্যি তবে পুরোপুরি নয়। তুমি চাইলেও এতদিন এই ঘরে আসতে পারনি কারণ তোমার কাছে এই ঘরের চাবির সন্ধান ছিলো না।আর আমার গুনধর বোন যখন খোঁজাখুঁজি করেও চাবি পেলো না তখন সে এসব নিয়ে ভাবাই বন্ধ করে দিলো। কিন্তু এরমানে এই তো যে, তোমার মাঝেও এই ঘরটা নিয়ে কিউরিওসিটি ছিলো আর এখনো আছে! ”

আনায়া ইনায়ার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো,

—“চাবি কোথায় পেয়েছিস! ”

ইনায়া শব্দহীন ভাবে হেসে ফেললো,আর কিছুটা ভাব নিয়ে বলতে লাগলো,

—“মাম্মাহ! আ’ম ইনায়া শিকদার ইরা। এসব আমার বা হাতের খেলা। ”

—“এই মাঝরাতে ঢং শুরু করলে মা*র খাবি কিন্তু!”

—“কথায় কথায় ঝাড়ি দেও শুধু। চাবিটা আমি বাবার রুমে যে অনেক পুরোনো ওই বিশাল বড় মাটির ফুলদানি আছে না! ওটার তলায় স্কচটেপ দিয়ে লাগিয়ে রাখা ছিলো। ওখান থেকেই নিয়ে এসেছি।”

ইনায়ার কথা শুনে আনায়া ভ্রু কুঁচকে বললো,

—“এই রুম বাবা বন্ধ করেছে যখন থেকে আমার বুঝ হয়েছে ঠিক সেই সময় থেকে। এতোদিন পর্যন্ত চাবি তো বাবার কাছেই ছিলো হয়তো। তাহলে তুই কি করে জানতে পারলি চাবি ওই ফুলদানির নিচে ছিলো। কারণ বাবা অসুস্থ হওয়ার আগেও তো কখনো এই ঘরে আসতো না আর অসুস্থ হওয়ার পরে তো তার একার পক্ষে এইখানে আসার কোনো সম্ভবনাই নেই, তবে! ”

—“এটাই তো ইরার খেলা! আমি এই ঘরের চাবিটা অনেকদিন ধরেই খোঁজাখুঁজি করতাম। বাবার উপস্থিতিতে তো আর রুমে গিয়ে তল্লাশি করা যাবে না তাই বাবা ঘুমালে কিংবা যখন ওই রুমে থাকতো না তখন খুঁজতে যেতাম। কিন্তু সমস্যা হলো আমি এতো খোঁজা-খুঁজি করেও চাবি পাই নি। কিন্তু কিছুদিন আগে বাবার একটা কাজে আমার সন্দেহ হয়। বাবা যতক্ষণ ওই রুমে থাকতো ততক্ষণ তার নজর ওই ফুলদানির দিকে থাকতো।

শেষে কি যেন ভেবে আমি ওই বড় ফুলদানির কাছে যাই। যদিও আগেও আমি ফুলদানির ভেতরে খোঁজা খুঁজি করে দেখেছিলান। কিন্তু এবার আর হাল ছাড়লাম না। ফুলদানি উপরে, ভেতরে আগা গোরা চেক করার পর ওটা উল্টিয়ে দেখি নিচে স্কচটেপ দিয়ে চাবিটা সাবধানে আঁটকে রাখা।”

আনায়া একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,

“তার মানে বাবা এইজন্যই ওটা কাউকে ধরতে মানা করতো। শুধু মাত্র বাবার মায়ের স্মৃতি, এই জন্য।
যেটাই হোক, এখানে আর থাকার প্রয়োজন নেই৷ বাবা যেহেতু এতো কলাকৌশল করেছে তবে নিশ্চয় কোনো কারণ আছে যা আমরা জানতে না পারি। সেক্ষেত্রে এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। চাবিটা দে আমায়! ”

—“তুমি কি আমায় গাধী পেয়েছো। আমি জানি, তুমি এখন আমায় চলে যেতে বলে পরে ঠিকই আবার নিজে এখানে আসবে। শুধু শুধু ভাব ধরছো। আর এতো যে বাবার অসুস্থের কথা বলছো, বাবা তো ঘুমেই আছে। বাবাকে যদি এই বিষয়ে আমরা কিছু না বলি তবে সে জানবে কি করে আর অসুস্থই বা হবে কি করে। আরেকটা কথা সত্যি করে কথা বলো তো, ওই ফুলদানির ভেতরে চাবি কিন্তু তুমিও খুঁজেছিলে তাই না! ”

ইনায়ার মুচকি হেসে বলা কথায় আনায়া চোখ ছোটো ছোট করে বললো,

—“মাঝ রাতে আর মিথ্যা না বলি। আর তুই তো সবই জানিস, এখন আবার জিজ্ঞেস করার কি আছে। এখন এটা বল, তুই কি পেয়েছিস? ”

—“ওহ, দেখাচ্ছি! ”

ইনায়া প্রথমে মাটি থেকে একটা ছোট বক্স বের করা আনায়ার হাতে দিলো। আনায়া কাঠের বক্সটাকে দেখে বললো,

—“এটা কি!”

—“খুলে দেখো! ”

আনায়া ইনায়ার দিকে একবার তাকিয়ে বক্সটা খুলতেই একটা ছোট স্টার শেইপের লকেট সহ সোনার চেইন পেলো। কিন্তু চেইনটা সোনার হলেও লকেটটা অন্য কোনো ধাতুর। আর একটু অদ্ভুত, সাথে কিছুটা থ্রি ডি টাইপের। পেছনে আবার খুব ছোট্ট একটু ফাঁকা অংশও আছে। কেমন যেন এক অদ্ভুত ছোট গর্তের মাঝে চিহ্ন আঁকা।

জিনিসটা দেখতে যেমন ইউনিক তেমনি অসম্ভব সুন্দর। ইনায়া তো মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে এটা সে নিজে ব্যবহার করবে।

এরই মাঝে আনায়া জিনিসটা হাতে নিয়ে বললো,

—“এটা এখানে এলো কি করে! ”

তখনই ইনায়া ভ্রু কুঁচকে বললো,

—” এটা তুমি আগে দেখেছো? তুমি না বললে, তুমি এখানে কখনো আসোনি। ”

—“আরে এটা তো আমারই, আমার বুঝ হওয়ার পর এটা কয়েক বছর আমার গলায় দেখেছি এরপর হুট করে একদিন হারিয়ে ফেললাম। এর জন্য সে কি কান্না, বাবা মা সহ কত খোঁজাখুঁজি করলো সবাই কিন্তু শেষ তো পেলামই না। আর আজকে এটা এখানে দেখছি! ”

বোনের কথা শুনে ইনায়া ভ্রু কুঁচকে আনায়ার দিকে তাকালো। অন্যদিকে আনায়াও ইনায়ার দিকে সন্দিহান চোখে তাকিয়ে দুজনেই একসাথে বললো,

—“তার মানে কাজটা বাবা-ই হয়তো করেছে। ”

তবে আনায়া আবারও বললো,

—“এই ঘরে হয়তো আরো রহস্য আছে। এসেছি যখন তবে সবটা খুঁজেই যাবো, এই ঘরে এমন আছেটা কি! ”

আনায়া কথা শুনে ইনায়াও বাঁকা হাসলো।

_______________

সম্পূর্ণ রুমটা কালো ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঘেরা। বহুবছরেও যে এই ঘরে কারো প্রবেশ হয়নি তা ভালোই বোঝা যাচ্ছে। তাদের মতো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন বাড়িতে এমন এক ভুতুড়ে পরিত্যক্ত ঘরও আছে! হাস্যকর বিষয়।
চারপাশে মাকড়শার জালের ছড়াছড়ি। রুমটা মোটামুটি ভালোই বড়সড়। একটা পরিত্যক্ত খাটের উপর নষ্ট হয়ে পড়ে থাকা তোশক, বালিশ। কাঠের খাটটাও অনেকটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

সাথে বড়সর এক কাঠের আলমারি, দুটো চেয়ার আর একটা ছোট টেবিল। মোটামুটি অনেক কিছুই আছে। তবে পুর জায়গায়টায় এতো ধুলোবালি আর মাকড়সার আস্তানা জমেছে যে তা বলার বাহিরে।

দুই বোন মিলে যতটা সম্ভব হলো মাকড়সার জাল গুলো ভেঙ্গে ফোনের লাইট আর ইনায়ার নিয়ে আসা টর্চ লাইট দিয়ে আশেপাশে খোঁজ খুঁজি করতে লাগলো কোনো নতুন রহস্যের সন্ধানের আশায় তখনই হঠাৎ ইনায়া গিয়ে আলমারি খুলতেই চমকে উঠলো। তাড়াতাড়ি আনায়াকে ডাক দিতে সেও চলে এলো,

—-“আপু দেখো এসব কি! ”

আনায়া ভেবেছিলো আলমারি হয়তো লক করা থাকবে। আর এখন ইনায়া আলমারি খোলার পর দেখতে পেলো সব অদ্ভুত অদ্ভুত জিনিস।

সাধারণ আলমারি যেসব জিনিস থাকে তেমনই কিছু জিনিস রাখা। অনেক পুরনো কিছু জামা, দুই একটা শাড়ি, পাঞ্জাবি আরো অনেক কিছুই তবে সেগুলো ব্যবহার করা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। সম্পূর্ণ জিনিস গুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে আনায়া আর ইনায়া যে জিনিস গুলো দেখে বিস্মিত হয়ে তা হলো কাপড়ের একপাশে অনেকগুলো পুরোনো অ/স্ত্র যেমন, ক*রাত, চাপা/তি, ধারা*লো ছু*রি সহ আরো কিছু জিনিস রাখা।

প্রথমে বাড়িতে এমন এক রহস্য ময় ঘর তার উপর সেই ঘরের আলমারিতে এসব জিনিস রেখে দেওয়ার মানে কি! কোনো খারাপ রহস্য জড়িয়ে নয় তো এই ঘরের সাথে।
তবে এসবের মাঝে আনায়া আরেকটি বিষয়ে সন্দেহ হলো। বাঙ্গালী কাপড়চোপড় ছাড়াও কিছু ওয়েস্টার্ন ড্রেসও ছিলো আলমারিতে। কিন্তু সে তো তার বাবা মাকে কখনো এসব ড্রেসে দেখেনি। বিশেষত মেয়েদের যে কাপড় রাখা সেগুলো তো তার মাকে কোনোদিনও পড়তে দেখেনি।

_____________________

বিছানার ঠিক মাঝ বরাবর সেই চেইন সহ বক্সটা রাখা। একপাশে আনায়া তো অন্য পাশে ইনায়া ভাবুক চিত্তে বসে রইছে। দুজনের মাঝে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ওমন সময় আনায়া নিজের ফোনে সময় দেখে ইনায়াকে বললো,

—“ইরা! অনেক হয়েছে, এখন গিয়ে ঘুমিয়ে পর। আর এসব কথা ভুলেও মুখ থেকে বের করবি না।”

ইনায়া তখনও বোনের কথা শুনে ভাবুক চিত্তে বললো,

—“আমি বাচ্চা না আপু। আচ্ছা তবে তুমি থাকো, আমি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ছি। ”

দু বোন মিলে সেই ঘরে খোঁজাখুঁজির পর আর তেমন কিছুই পায়নি যা দেখে সরাসরি কোনো কিছু সন্দেহ করা যায়। সেজন্য আনায়া আর ইনায়া বেশি দেরী না করে শুধু সেই বক্সটা নিয়ে রুমে আবারও আগের মতো তালা লাগিয়ে নিজেরদের রুমে চলে এসেছে।

আর এখন ইনায়া আনায়ার রুম থেকে চলে যেতে চাইলে আনায়া বললো,

—“ইরা! ”

–“হুম!

—“এই চেইনটা তো তোর পছন্দ হয়েছে, নিয়ে যা। তবে সাবধানে পরিস, বাবার চোখে সামলে পড়লে কিন্তু কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। ”

ইনায়া চোখ ছোট ছোট করে বললো,

—“তোমাকে কে বলেছে এটা আমার পছন্দ হয়েছে। এটা তোমার জিনিস আমি কেনো নিতে যাবো। ”

—“আমাকে গাধী পেয়েছিস। পছন্দ হয়েছে নিয়ে যা শুধু সাবধানে ব্যবহার করিস৷ ”

ইনায়া বোনের কথা শুনে আনায়ার কাছে গিয়ে ওর কাছ থেকে চেইনটা নিলো তবে সেটা নিজে না পড়ে উল্টো আনায়ার গলায় পড়িয়ে দিতে লাগলো,

—“এই কি করছিস এটা! ”

—“চুপ থাকো তুমি, আমার পছন্দ হয়েছিলো ঠিকই কিন্তু এতোটাও না যে বোনের এতো বছর পর ফিরে পাওয়া শখের জিনিস নিয়ে নেবো। যেটা তোমার তা তোমারই থাকবে। আমি কখনো তোমার জিনিস নিতে যাবো না।”

আনায়া হেসে বললো,

—“বড় বোনের জিনিস নিলে কিছু হয় না।”

—“কিন্তু আমি নিতে চাই না। দেওয়ার হলে তোমার আগের জামাইটাকে দিও! ”

আনায়া ভ্রু কুঁচকে বললো,

—“এটা কেমন কথা! কার কথা বলিস তুই, রেহান! ”

—“নাউজুবিল্লাহ! রেহান ভাইকে তো আমি বড় ভাই মানি। আর সে তো তোমার ভবিষ্যৎ জামাইও না, আমি বলছিলাম তোমার আগের জামাইয়ের কথা। ”

—“ইরা! মা*র খাবি কিন্তু, উল্টো পাল্টা এসব কি বলিস। আমি আবার কবে বিয়ে করেছি৷ ”

—“আরে আমার কথা শুনো আগে, আমি ভিকের কথা বলছি। ভিকেকে তুমি যেভাবে অপছন্দ করো তাতে মনে হয়, ও তোমার আগের জন্মের শ*ত্রু জামাই।”

আনায়া চোখ ছোট ছোট করে ইনায়ার উদ্দেশ্যে বিরক্তি নিয়ে বললো,

—“তোর মাথা কি সত্যিই গেছে! খালি চেহারায় বড় হয়েছিস, বুদ্ধি মধ্যে মাথায় কিছুই নেই! ”

—“অতকিছু জানি না আমি, আমার বিয়ে কিন্তু ভিকের সাথেই দিতে হবে। নাহলে দেখো আর মাদার তেরেসা হয়ে বাড়ি ছাড়বো। ”

—“ইনায়া!! ”

—“ধমকিয়ে লাভ নেই,আ’ম সিরিয়াস!

—“যা ভাগ এখান থেকে, রাতের বেলা এসেছিস মাথা খাওয়ার জন্য!”

ইনায়া আর কিছু না বলে রুম থেকে চলে যেতে লাগলো ঠিকই তবে যেতে যেতে আবারও বললো,

—“মনে থাকে যেনো! নাহলে কিন্তু মাদার তেরেসা হয়ে যাবো। ”

অন্যদিকে আনায়াও আর কিছু না বলে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। নিজের গলায় চেইনটা সুন্দর করে ঝুলিয়ে তা জামার নিচে ঢুকিয়ে দিলো যাতে তা সচারাচর কারো চোখে না পড়ে।

এরপর বিছানায় শুতে শুনতে বলতে লাগলো,

—“কি এক ভিকে ভিকে লাগিয়ে রেখে মাথাটা পুরো শেষ করে দিচ্ছে। প্রথমে ভার্সিটিতে একদল পাগল, বাড়িতে এলে এক পাগল আর সব পাগলের গুরু তো অফিসেই থাকে। এতোগুলো পাগলের সাথে থাকার জন্যই কি এই পৃথিবীতে এসেছিলাম, আফসোস ! ”

_____________

দুপুর বেলায় স্কুল থেকে ফেরার পথেই হঠাৎ রোহানের সাথে ইনায়ার দেখা। হুট করে ইনায়া আর বিষয়টিকে পাত্তা দিলো না।এমনিতেই মন মেজাজ ভালো না। কিন্তু রেহান আগ বাড়িয়ে ইনায়ার কাছে এসে বললো,

—“কি রে মাইয়া! দেখলা তবু কথা কইলা না!”

ইনায়া বিরক্তি নিয়ে বললো,

—“এসব কি ধরনের ভাষা! ”

—“বাপ রে! হঠাৎ কি হলো। এমনিতেই আজ সূর্যের তেজ অনেক বেশি, এক্সট্রা করে আর তোমার তেজ দেখাইয়ো না! কাহিনি কি বলো তো! ”

—“ঘুম হয়নি মাথায় অনেক টেনশন! ”

—“এই বসয়ে এতো টেনশন, জামাই বিদেশে থাকে নাকি। এই থামো তো তুমি আবার কান্না টান্না করছো নাকি। এই তোমার কি জামাই ম*রছে! ”

ইনায়ার বিষয়গুলো হঠাৎ অসহ্য লাগলো। তার আজ কি হয়েছে সে হয়তো নিজেও জানে না। খুব বাজে কিছু তার মস্তি*ষ্ককে শেষ করে দিচ্ছে। কিন্তু সেটা কি তার জানা নেই।

ইনায়া কিছু বললো না দেখে রোহান বললো,

—“তো ইরাবতী! আইসক্রিম খাবা! ”

—“এসব ইরাবতী টিরাবতী নাম আমার পছন্দ না।”

—“ওক্কে! তা ফিউচার বেয়াইন সাহেবা প্লাস মিস ইরা আইসক্রিম খাবা! ”

—“খাওয়া যেতে পারে! ”

—“তবে চলো! ”

রোনারে সাথে ইনায়া যেতে যেতে তার উদ্দেশ্যে বললো,

—“আপনার বাড়িতে তো এখানে না তবে…….

—“একটু দরকার ছিলো আরকি!

রেহানের আমতা আমতা করে বলা কথায় ইনায়ার কিছুটা সন্দেহ হলো তবে আপাতত কিছু বললো না।

___________________
কেনীথের কথা মতো আনায়া সন্ধ্যার পর অফিসে গিয়ে দেখতে পেলো পুরো অফিসটাই কেমন নিস্তব্ধ। চারপাশে দু-একজন মানুষ ব্যতীত কারোরই দেখা নেই। অবশ্য এটা স্বাভাবিক বিষয়, স্টুডিওর সব লোকজন সহ অফিসের আরো কিছু লোক গতকালই চিটাগং পৌঁছে গিয়েছে।

তবে বর্তমানে অফিসের দুই একটা ব্যতীত বাকি সব লাইটই বন্ধ করে রাখা। এমনিতেই রাত সন্ধ্যা তার উপর আশেপাশের এমন অন্ধকার অন্ধকার পরিবেশ। না চাইলেও কেমন যেন এক ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।

তবে আনায়া এসব ছেড়ে চিন্তা করছে তারা আজ যাবে কখন আর নিচেও তো কোনো আর অফিসের গাড়ি দেখতে পেলো না। এরই ভাবনায় কিছুক্ষণ একই জায়গায় দাঁড়িয়ে চিন্তা করার পর আনায়া কেনীথের কেবিনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। আনায়া পরনে আজ বড়সর ব্লাক এন্ড হোয়াইট কম্বিনেশনের কুর্তি। সাথে কালো রংএর জরজেট ওড়না গলায় পেঁচিয়ে রাখা।সঙ্গে গলার পড়া সেই স্টার শেইপের লকেট সহ চেইন যেটা আনায়া জামা আর ওড়নার নিচে ঢাকা পড়ে গিয়েছে।

কাঁধে একটা মাঝারি সাইজের কাপরের ব্যগ। মোটামুটি তাতে টুকটাক প্রয়োজনীয় জিনিস নেওয়া হয়েছে তার। চুলগুলো মেসি বান করা তবে বাড়ি থেকে অফিসে আসতে আসতেই সিল্কি বেবি চুল গুলো এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছে।

আনায়া কিছুটা তাড়াহুরো করে কেনিথের কেবিনে যেতেই কিছুটা অবাক হলো। আশেপাশে কেনীথের ছায়াটা পর্যন্তও নেই। বুঝতে আর বাকি রইলো না কেনীথ আর নেই। তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বেরিয়ে এসে একজনকে জিজ্ঞেস করতেই সে আনায়াকে বললো কেনীথ নাকি নিচে তার গাড়িতে তার জন্য অপেক্ষা করছে। আনায়া মাথার মধ্যে হঠাৎ কিছু প্রশ্নের উদয় হলেও সেসব রেখে তারাতাড়ি লিফটে করে নিচে নামলো।

নিচেই পার্কিং এরিয়া হওয়ায় প্রথমে কেনীথের গাড়ি খুঁজতে লাগলো। কিন্তু কেনীথের গাড়ি আদোও কোনটা সেটা খুঁজে বের করাই তো বড় কথা। আনায়া আশেপাশে কিছুক্ষণ খোঁজার পর রাস্তার ধারে দাঁড় করিয়ে রাখা কালো আর মৃদু লাল রংএর চকচকে গাড়িটা দেখতেই মনে হলো ওটাই নিশ্চয় কেনীথের।

আপাতত আনায়া একটি সূত্র বানিয়ে মুখস্থ করে ফেলেছে, “যেখানেই লাল কালোর আভাস দেখিবে, সেখানেই কেনীথের সন্ধান মিলিবে। ”

যদিও কথাটা কিছুটা হাস্যকর তবে আনায়ার মতে কথাটা পুরোপুরি ফেলে দেওয়ার মতো না।আর তা আরেকবার প্রমাণ হলো যখন আনায়া গাড়ির কাছে পৌঁছালো।

ভেতরে আদোও কেনীথ আছে কিনা আনায়া পুরোপুরি নিশ্চিত নয়। কারণ গাড়িটার কালার কেনীথের সেই গাড়িটার মতো হলেও ডিজাইনটা আলাদা। এই গাড়িটাই আলাদা রকমের স্পোর্টি টাইপের ফিল দিচ্ছে। সঙ্গে গাড়িটা দেখে মনে হচ্ছে আজই প্রথম হয়তো একে রাস্তায় বের করা হয়েছে। একদম নতুন আর চকচক করছে।

তবে আনায়া কি করবে হঠাৎ করেই বুঝে উঠতে পারলো না কিন্তু কিছু তো একটা করতে হবে। আনায়া ঠোঁট মৃদু কা*মড়ে ধরে চিন্তা ভাবনা করতে করতেই হঠাৎ তার গালের টোল গুলো দৃশ্যমান হলো। চোখেমুখে চিন্তার স্পষ্ট ছাপ অথচ দেখতে একদম বাচ্চাদের মতো।

আনায়া এরই মাঝে গাড়ির জানালার সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর কিছুটা ঝুঁকে গিয়ে জানালার গ্লাসে আঙ্গুল দিয়ে নক করলো। মূহুর্তেই হুট করে কালো গ্লাসটা নিচে নামতে লাগলো অন্যদিকে আনায়া কিছুটা চমকে উঠে নিজের মাথা কিছুটা পিছয়ে নিতেই চোখের সামনে দৃশ্যমান হলো সেই সুদর্শন পুরুষের।

আলাদা কোনো সাজগোছ নেই। রাতের বেলাতে চোখে কালো গ্লাসের চশমা, পরণে ফিটফাট কালো রংএর টিশার্ট। তবে টিশার্টের মাঝে একটা লাল রংএর র/ক্তাক্ত এক স্টার আকৃতির কিছু ডিজাইন করা। সাথে সেই চিরপরিচিত এলোমেলো চুল।

আনায়া হঠাৎ কি বলবে বুঝতে পারে না তবে মৃদু সুরে মুচকি হেসে বললো,

—“স্যার, আমাদের আজ যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আশেপাশে তো তেমন কাউকে……

—“ভেতরে এসে বস! ”

আনায়ার কথা হুট করেই কেনীথের গম্ভীর আওয়াজে থেমে গেলো। সঙ্গে মস্তিষ্কও তার নিজের কার্যকলাপে আঁটকে গেলো। ইমন তাকে আগেও বলেছিলো কেনীথের তুই করে সম্মোধনের অভ্যাস আছে তবে বিষয়টি আনায়ার কাছে এতো তাড়াতাড়ি সহজ হওয়ার মতো নয়। কিন্তু করারও তো কিছুই নেই। শেষমেশ ছোট করে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে গাড়ির দরজা খুলে কেনীথের পাশের সিটে গিয়ে চুপচাপ বসলো।

আনায়া আড় চোখে কেনীথের দিকে তাকিয়ে দেখলো ও একদম চুপচাপ স্টিয়ারিংএ একহাত রেখে সামনের দিকে তাকিয়ে বসে রইছে। মুখে কোনো কথাবার্তা নেই নাম নিশানও নেই।

কিন্তু আনায়া নিজেকে তটস্থ করে কেনীথের দিকে তাকিয়ে বললো,

—“স্যার, বাকিরা যাবে না! ”

কেনীথ আনায়ার দিকে তাকিয়ে তড়িৎ তাকালো তবে কিছু বললো না, এদিকে আনায়া কিছুটা ভরকে গেলো কেনীথের হুট করে তাকানোর ফলে।

অন্যদিকে কেনীথ আবারও সামনের দিকে তাকিয়ে নির্বিকারে বললো,

—“সবাই চলে গিয়েছে,শুধু আমরা দুজনেই বাকি রয়েছি। ”

—“ওহ….কিহ!!!”

—“এনি প্রবলেম! ”

—“আ….নাহ!”

আনায়ার মনে মনে কান্না করতে ইচ্ছে করছে। সে তো ভেবেছিলো সে হয়তো অফিসের গাড়িতে আর সবার সাথে মিলে যাবে কিন্তু এখানে তো….. এতোটা পথ তাকে এই রক/স্টার নামক টেরো/রিস্টের সাথে যেতে হবে! যে মানেই হলো এক আতং/কের কারখানা।এরই মাঝে কেনীথ আনায়ার ভাবনা চিন্তাকে উরিয়ে দিয়ে গাড়ী স্টার্ট দিলো।

গাড়ির সবকটা জানালা বন্ধ। ফাঁকা রাস্তা, আর কেনীথ যেন গাড়ি চালাচ্ছে না বরং পারলে উড়িয়ে দিবে। অথচ কেনীথ তার স্টাইল অনুযায়ী মিডিয়াম স্প্রিডে গাড়ি চালাচ্ছে। কিন্তু আনায়ার কাছে বিষয়টি নতুন হওয়ায় তার এই স্প্রিডটাকেই সবচেয়ে বেশি মনে হচ্ছে।

তবে আনায়ার প্রচুর বোরিং লাগছে। ইমনের সাথে থাকলে তো ও সারা রাস্তাই বকবক করতে থাকে।এমনিতে মেয়েটা একটু কথা বলতে বেশি পছন্দ করে তবে সেটা পরিচিত বা ফ্রিন্ডলি মানুষগুলোর সাথে কিন্তু এখানে তার পাশে যে বসে আছে তার মুখ থেকে দুই একটা শব্দ শোনাই ভাগ্যের বিষয়।তার মতো ছাগলের মতো গল্প করতে যাবে নাকি!

আনায়া একবার মনে হলো রেহানের সাথে ফোন করে কথা বলা যেতে পারে। এতে হয়তো আর বোরিং লাগবে না ঠিকই কিন্তু এই লোকের সামনে রেহানের সাথে সুন্দর ভাবে কথা বলতে গেলেও আনায়ার মাঝে আ/তংক তৈরি হয়ে যাবে। বস মানুষ, কোন কথাকে কি ভাববে কে জানে।

একটা সময় বাধ্য হয়েই মনের মধ্যে বকবক করতে লাগলো। অন্যদিকে তার পাশে বসে থাকে লোকটিও ড্রাইভ করতে করতে চশমার নিচ থেকে আড় চোখে আনায়া বিরবির করে ঠোঁট নাড়ানো দেখতে দেখতে মৃদু বাঁকা হাসলো।

___________

নিস্তব্ধ রাত! সময় ঠিক কত এখন তা আনায়ার জানা নেই। তার গভীর ঘুৃম এসির ঠান্ডা বাতাসে ভেঙ্গে গিয়েছে। কনুই পর্যন্ত জামার হাত থাকা সত্ত্বেও মেয়েটা হাত-পা গুটিয়ে কাঁপতে লাগলো। মূহুর্তেই আনায়া নিজের ঘুমের ঘোর থেকে বেরিয়ে এলো।

ধীরে ধীরে তার মস্তিষ্ক সক্রিয় হতেই বুঝতে পারলে সে এখনো গাড়িতেই আছে। পুরো গাড়িতে কোনো আলোর নাম নিশানাও নেই। একদম অন্ধকার বানিয়ে রাখা। আনায়া নিজের ফোন থেকে ফ্লাশ লাইটটা অন করে পাশে তাকাতেই চমকে উঠলো। আশেপাশে কোথাও কেনীথ নেই।

হুট করেই পিছনে তাকিয়ে দেখলো, নাহ! পিছনেও কেনীথের অস্তিত্ব নেই। একে তো বুঝতে পারছে না এতো রাতে কেনীথ কোথায় গায়েব হলো অন্যদিকে জায়গাটা ঠিক কোথায় তাও আনায়ার জানা নেই। গাড়ির ক্লাস দিয়েও বাহিরে অন্ধকার ব্যতীত আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আনায়ার মনে হঠাৎ অজানা ভয় জাগতে শুধু করলো, ছুটতে লাগলো ফর্সা ত্বকে ঘাম।

আনায়া কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। তবে আনায়ার মনে আরেকটি বিষয়ে অদ্ভুত লাগছে। বর্তমানে গাড়ির এসির পাওয়ারটা একটু বেশিই মনে হচ্ছে। সেই সন্ধ্যার দিকই হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছিলো ও। কিন্তু সেই সময় এসির পাওয়ার এতোটাও বেশি ছিলো না।তাহলে কি কেনীথই……যদি করেও থাকে তবে সেটা বড় বিষয় নয় আপাতত কেনীথ কোথায় গায়েব হলো। জায়গাটাকে দেখে তো কোনো লোকালয় মনে হচ্ছে না। আচ্ছা এমনটা হয়নি তো, যে তাদের গাড়িটা মাঝ পথে নষ্ট হয়ে গিয়েছে আর কেনীথ গাড়ির বাহিরে সেটারই ব্যবস্থা করছে।

আনায়ার এসব হঠাৎ অসহ্য লাগলো। একদিকে এসির কনকনে ঠান্ডা বাতাসে আর বসে থাকতে ইচ্ছে করছে না আবার এই এসির পাওয়ার কিভাবে কমাবে তাও তো জানা নেই। ইমনের গাড়িতে তো কখনো এসি ছিলো না।

আনায়া নিজের শারিরীক ও মস্তিষ্কের খেলায় আর সহ্য করতে না পেরে বাহিরে যাওয়ার সিন্ধান্ত নিলো। সে জানে না বাহিরে যাওয়াটা ঠিক হবে কি না কিন্তু এখানে এই এতে ঠান্ডার মধ্যে বসে থাকাও সম্ভব না।

আনায়া দরজাটা খুলে গাড়ি থেকে বের হয়ে যেন আরো চমকে উঠলো। এটা সে কোথায় আছে! হাত পা এবার ঠান্ডায় না বরং ভয়ে হিম হয়ে এলো।চারপাশ ঘুটঘুটে অন্ধকার। এতোক্ষণ এসির ঠান্ডা বাতাস ছিলো আর এখন প্রকৃতির ভীতি/কর শিহরণ জাগানোর মতো আচমকা গায়ে আছড়ে পড়া বাতাস। বেচারীর কলিজার পানি হুট করেই শুকিয়ে গেলো।

এরই মাঝে হঠাৎ একটা কণ্ঠস্বর শুনতেই আনায়া চমকে গিয়ে তার ফোনের লাইটটা সেই কন্ঠস্বর আসা দিক নিদর্শন করে সামনের দিকে ধরতেই একটি অস্পষ্ট বড় ছায়া মানবকে নজরে পড়লো। অথচ তার সেই ভী/তিকর আর রাগা/ন্বিত কন্ঠ স্বর আনায়ার এখনো কানে বেজে চলেছে।

—“Why the hell are you f**king here!”

#চলবে