#একজোড়া_আগুন_পাখি
®অরনীতা তুশ্মি (#তুশকন্যা)
পর্ব→১৫
আনায়া অফিসে এসে জানতে পারলো কেনীথ আজও অফিসে আসেনি। সে কোথায় গিয়েছে কিংবা কবে আসবে এই বিষয়েও কেউ কিছু জানে না। আনায়া ছোট করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে ভাবলো,
“ভালোই হয়েছে। যতদিন আসবে না ততদিন একটু শান্তিতে কাজ করা যাবে। নাহলে এই লোকটা মানেই তো এক বড়সড় আ*তংক।”
আনায়া কেনীথের দিয়ে যাওয়া মোটামুটি অনেক কাজই পূর্বের দিনে সম্পন্ন করে রেখেছিলো যে কারণে আজ আর তার কাজ বলতে তেমন কিছুই নেই। এজন্য নিজের কেবিনে বসে বসে তার নিজের একাডেমিক বই পড়ছিলো। আনায়া প্রতিদিনই এমনটা করে। বাড়ি থেকে আসার সময় কোনো একটা একাডেমিক বই নিয়ে আসে, যদি কাজ না থাকে তবে ওসব পড়েই সময় কাটায় কিন্তু আজ এই মূহুর্তে আর একাডেমিক বই পড়ার কোনো ইচ্ছে জাগছে না। সবকিছুই প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে। কেমন এক বদ্ধ জায়গা যন্ত্রের মতো দিন পার করতে হচ্ছে। আবার এছাড়া করারও বা কি আছে।
আনায়া নিজের চেয়ারে বসে ডেস্কে একহাত ছড়িয়ে মাথা রেখে আনমনে নানা বিষয় নিয়ে ভেবে যাচ্ছে। খোলা চুলগুলো টেবিলের উপর এলোমেলো হয়ে পড়ে রইছে। পরণে সাদা আর বেবি পিংক কালার কম্বিনেশনের কুর্তি আর তার ভাবুক গালে ফুটে ওঠা টোল। যদিও ইনায়ার মতো খুব ধবধবে ফর্সা কিংবা অতিরিক্ত লাবন্যময়ী নয় তবুও সবমিলিয়ে মেয়েটা এক চমৎকার সৌন্দর্যের অধিকারী।
আনায়া একদিকে তারেকের কথা ভাবছে অন্যদিকে রেহানের কথা। সেই কতমাস হলো রেহানের সাথে তার সামনাসামনি দেখাসাক্ষাৎ নেই। ছেলেটাকে প্রচন্ড মনে পড়ছে তার। রেহান যদিও আগের চেয়ে অনেকটা সুস্থ তবুও আনায়ার মনে হচ্ছে একবার রেহানের তার কাছে আসা উচিত। কিন্তু এই বাইনা রেহানের কাছে এই মূহুর্তে করাটা একদম বোকামি। রেহানের আরো সুস্থতার প্রয়োজন তার উপর ওখানে ও তো বসে বসে নেই। পড়াশোনারও যথেষ্ট চাপ রয়েছে। সবকিছু ফেলে রেখে তার কাছে আসাটার কথা বলাটা কি অনেক বেশি গাধামি হয়ে যায় না! তবে এটাও ভেবেনিয়েছে যে এমাস কিংবা সামনে মাসের মধ্যেই একটা স্মার্ট ফোন কিনে নেবে। এই আধুনিক কালে এসেও এমন দুজন দুজনকে না দেখার মতো দুর্ভোগের কোনো মানো হয়!
অন্যদিকে আবার আনায়া কেনীথের বিষয়টিকে স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছে। কারণ কেনীথের পারসোনালিটি হিসেবে তার ওসব ব্যবহার খুব বেশি অস্বাভাবিক নয়। মূল কথা লাইফে অনেক কিছুই স্যাক্রিফাইস করতে হয় আর যেটা তাকেও করতে হবে। তবে এসবের মাঝে সবকিছুর উর্ধ্বে আরো একটি বিষয় রয়েছে যার প্রতি সবসময় সজাগ থাকা প্রয়োজন। আর যাইহোক, নিজের চারিত্রিক বিষয়ে কেউ আঘাত করলে কিংবা প্রত্যক্ষ ভাবে কোনো বাজে উদ্দেশ্যে ক্ষতি করলে চাইলে, তা কখনোই মুখ বুজে সহ্য করার ক্ষমতা আনায়ার নেই। তখনও যে ফ্যামিলির কথা ভেবে নিয়ে অন্যায় সহ্য করবে তা তো হতে পারে না।আনায়া এসব ভাবনা চিন্তা রেখে আবারও রেহানের ভাবনায় বুদ হলো।
রেহান যা করছে তা তো সব তার আর ওর ভবিষ্যতের জন্য। ওর লাইফ সেটআপ হয়ে গেলেই তো আর কোনো টেনশন নেই। তখন তো রেহানের বউ হতে আর কোনো বাঁধা নিষেধ থাকবে না।
হঠাৎ রেহানের বউ হওয়ার কথা চিন্তা করেই আনায়া কিঞ্চিৎ লজ্জায় মুচকি হেসে ফেললো। এখনোই কি না কি ভেবে যাচ্ছে। শুধু রেহানের লাইফ সেটআপ হলেই তো হবে না তারটাও তো করতে হবে। বিয়ের পর বাবা আর ছোট বোনের কি হবে সেটাও চিন্তার বিষয়। আর যাইহোক কখনো বোন আর বাবাকে অন্যের বোঝা বানানোর চিন্তা ভাবনা করার মেয়েতো আনায়া নয়। আপাতত এসব থাক, বিয়ে-শাদি না হয় পরেও সময়-সুযোগ করে করা যাবে। কোনো তাড়াহুড়ো করে দুটো ফ্যামিলির মধ্যে কোনো প্রবলেম ক্রিয়েট কিংবা কেউ কোনো কিছুতে কষ্ট পায়, এটা আনায়া চায় না। সবার মাঝেই যেন হাসিখুশির সামঞ্জস্যপূর্ণতা বজায় থাকে।
আনায়া মুচকি হেসে টেবিলে থেকে মাথা উঠাতে যাবে তখনই একজনের আওয়াজ কানে এলো।
—“ম্যাম আসবো! ”
আনায়া ঠিকঠাক মতো বসতেই তার নজরে এলো আয়াশ দরজাটা অর্ধেক খুলে তাতে মাথা উঁকি দিয়ে মুচকি হাসছে। আনায়া তা দেখে ত্বরিত বললো,
—“জ্বি, আসেন আসেন! এটা আবার বলতে হয়। ”
আয়াশও মুচকি হেসে কেবিনে ঢুকে দরজাটা কিছুটা চাপিয়ে দিয়ে ডেস্কের সামনে এসে বললো,
—“ম্যাম বসবো! ”
আনায় এবার ভ্রু কুঁচকে বললো,
—“এসব কেমন কথা! আপনি আমাকে বারবার ম্যাম কেনো বলছেন। আর এভাবে ভেতরে আসা, বসার জন্য পারমিশন নেওয়ারই বা কি আছে। আমি তো আপনার ছোট। ”
আয়াশ মুচকি হেসে বসতে বসতে বললো,
—“ছোট বললেই কি আর হবে! আপনি এখানকার পি.এ. এটাও তো মাথায় রাখতে হবে। রুলস বলে একটা কথা আছে না! ”
আনায়া তাচ্ছিল্যের সাথে বললো,
—“আগে আপনি আমায় তুমি করে বলুন, আর এখানকার আবার রুলস! ওটাও আছে নাকি, আমার তো জানাই ছিলো না। কতদিন ধরে আছি অথচ আমি কেনো আছি আর কি করছি তাই বুঝে উঠতে পারছি না। কেমন এক উদ্ভট জীবন হয়ে যাচ্ছে।
আয়াশ আনায়ার কথায় হাসলো।
—“কি আর বলবো,যার জন্য কাজ করি সেই তো উদ্ভট। সেখানে আমরা একটু আধটু উদ্ভট না হলে কি চলে! যাই হোক, দিনকাল কেমন চলছে তোমার। আসার সময় তো দেখলাম কি যেন ভেবে হাসছিলে। ”
—“ওহ! ও তেমন কিছুই না। কাজ কর্ম না থাকলে যা হয়। আপনিই বলুন, এভাবে কাজকর্ম ছাড়া রোবটের মতো জীবন ভালো লাগে? ”
আয়াশ হেসে বললো,
—” কি আজব! কেউ কাজ করতে চায় না আর তোমার কাজ না থাকায় বোরিং হচ্ছো। আ….. তুমি যেহেতু ভিকের পি.এ. সেক্ষেত্রে স্যারের কেবিনে হয়তো তার অগোছালো অনেক ফাইল পেয়ে যাবে। তুমি ওগুলো একবার চেক করতে পারো। পরবর্তীতে হয়তো দেখা যাবে ওসবও করতে দিতে পারে। এরচেয়ে ভালো হবে এখনই ওসব করে রাখো, তাহলে সময়ও কাটবে আর কাজও কিছুটা এগিয়ে যাবে। ইমন ভাইকেও দেখতাম নিজে নিজেই সব কি না কি করে রাখতো। ”
আনায়া আয়াশের কথাগুলো মনযোগ দিয়ে শুনে তার এই মতামতে সম্মতি দিলো। এরপর এসব নিয়ে আরো কিছুক্ষণ কথা বলার পর বললো,
—“আ…রুহি আপুর কি খবর। তাকে কয়েকদিন ধরে দেখছি না।উনার কিছু হয়েছে? ”
আনায়ার কথা শুনে আয়াশ কিছুটা চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো,
—“ওর সাথে আমার সম্পর্কটা একটু গভীর আই মিন আমাদের কলিগদের মধ্যে ওর সাথে বন্ডিংটা ভালোই, একদম ফ্রেন্ডের মতো কিন্তু কয়েকদিন ধরে ওর কোনো খোঁজখবর না পেয়ে আমি নিজেও চিন্তিত। আর যাই হোক, কখনো ও নিজের কাজ ফেলে রেখে হুট করে এভাবে গায়েব হয়ে যায় না। কবে থেকে ফোনে ট্রাই করছি তাও ওর কোনো খবর নেই। ওর যেখানে থাকে, ওখানে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম ওখানেও নাকি ও নেই।
এদিকে ওর বাবার তো বড় ক্ষমতার হাত কম নয়। প্রথমে ওর ফ্যামিলি ভেবেছিলো হয়তো তাদের জানাশোনার মাঝেই আছে কিন্তু এখন খবর নিয়ে জানতে পারছি ওর নামে পুলিশের কাছে মিসিং ডাইরি করা হয়েছে। তবে ওকে অনেক খুঁজেও নাকি কোথায়ও পাওয়া যাচ্ছে না।”
আনায়া পুরো বিস্মিত হলো এসব শুনে। লাস্ট সেদিনই মেয়েটাকে সুস্থ দেখেছিলো আবার হঠাৎ কি হলো। এরই মাঝে আয়াশ আবারও বললো,
—“শোনো আনায়া, এসব খবর যেন কারো সাথে শেয়ার করতে যেও না। এই পুলিশ আর ওর মিসিং এর বিষয়টি গোপনীয় ভাবে করা হচ্ছে। কারণ ওর বাবাই চাইছে না এই বিষয়টি জানাজানি হোক। কারণ এটা জানাজানি হলে রুহির বাবা মিডিয়ায় পরিচিত মুখ হওয়ায় তার নামে কাঁদা ছোড়াছুড়ি হবে।”
আনায়া কিছুটা অবাক হয়ে বললো,
—“এটা কেমন কথা! মেয়ে হারিয়েছে আর বাবা তাকে খুঁজতে পুলিশ লাগিয়েছে এতে মিডিয়ার কাঁদা ছোড়াছুড়ি করার কি আছে? ”
—“এটাই তো কাহিনি! রুহির কিছু বদ অভ্যাস রয়েছে। আমিও কিছুটা জানি। ঘটনা হলো লাস্ট রুহিকে মধ্যেরাতে শহরেরে নামীদামী নাইট ক্লাবে দেখা গিয়েছে। নাইট ক্লাবের অনেকেই ওর ওখানে থাকাটা নিশ্চিত করেছে। সমস্যা হলো পুলিশকে এতো কষ্ট করতে হতো না, যদি সিসিটিভি ফুটেজ গুলো থাকতো। নাইটক্লাবের আশেপাশের মোটামুটি যতগুলো সিসিটিভি ছিলো, ঐ রাতের সব ফুটেজ গায়েব করা হয়েছে।
ধারনা করা হয়েছে, সিসিটিভি হ্যাক করা হয়েছিলো৷ ”
—“এত্ত কিছু! তার মানে কেউ ইচ্ছে করে…… একমিনিট! রুহি আপু ওখান থেকে কোথায় গিয়েছে এটা কেউ দেখেনি? সিসিটিভি ছাড়াও তো কারো না কারো তার উপর নজর পড়া উচিত, কেউ তো খেয়াল…….
আনায়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই আয়াশ বললো,
—“আরে ওখানে যেগুলো যায় সব মাতাল! কে কার খবর নেবে, সব তো নেশায় বুদ হয়ে থাকে। তবে পুলিশ ইনভেস্টিগেশন করে কয়েকজনের থেকে জেনেছে যে, রুহি ক্লাব থেকে বের হওয়ার সময় সে একা বের হয়নি বরং তার সাথে আরো এক বড়সড় দেহের মানুষও ছিলো। এখন কে ছিলো সেটাই কেউ সঠিক ভাবে বলতে পারছে না। লোকটা নাকি একদম মুখে মাক্স ক্যাপ পড়া বলতে গেলে ছদ্মবেশী ছিলো।
বুঝতে পারছো, ঘটনাটা কোনো স্বাভাবিক কিছু নয়; ইট’স কমপ্লিকেটেড। ”
আনায়া এসব শুনে সত্যিই অবাক হলো। তারমানে মেয়েটার কেউ ক্ষতি…… উফ!এমন কিছু যেন না হয়। মেয়েটা যতই উগ্র হোক না কেনো ক্ষতির সম্মুখীন যেন না হয়। এমন কিছু প্রার্থনা করেই আনায়া আয়াশের সাথে এই বিষয়ে আরো কিছু কথা বললো একটা পর্যায়ে গিয়ে জানতে পারলো আজ আয়াশ হয়তো তাড়াতাড়িই কাজ শেষে চলে যাবে। এজন্য একটু পর আর ওর সাথে দেখাও হবে না। এদিকে রুহির ফ্যামিলির সাথে যোগাযোগ থাকায় ওর সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে তাই সেগুলোই ঘটনা শুনতে লাগলো।
____________________
বাহির থেকে ঠান্ডা বাতাস রুমে এসে প্রবেশ করছে। পর্দাগুলো মনের আনন্দে দোল খেয়ে যাচ্ছে। টেবিলের উপর মাথা হেলিয়ে পড়ে পড়ে ঘুমতে থাকা তরুনী ঠান্ডা বাতাসের দরূনো বারবার সেই শিহরণে শিহরিত হচ্ছে।
রাত কয়টা বাজে আনায়ার তা জানা নেই। কেনীথের কেবিনের ফ্লোরে আর টেবিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অর্ধশত ফাইল। এসব নিয়েই অনেকক্ষণ আগে বসেছিলো আনায়া। নিজের কেবিনে না গিয়ে পাকনামি করে ওখানেই কাজ করতে বসে গিয়েছে।
কেনীথের চেয়ারের বসে ওর ডেস্কে মাথা এলিয়ে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে আনায়া। কেনীথ রুমে সবসময় একটা অন্ধকার আর আবদ্ধ থাকায় অনেকটা জেলখানার মতোই মনে হয়। কিন্তু আনায়া আজ সেসবও চেঞ্জ করতে গিয়েছিলো তবে তা আর হয়নি। বারান্দায় দরজাটা একদম খুলে রাখায় সেখান দিয়ে বাহির থেকে সাই সাই করে বাতাস ভেতরে প্রবেশ করলেও রুমে আর চকচকে আলোর ব্যবস্থা করতে পারেনি।
বাধ্য হয়েই নিজের রুম থেকে টেবিল ল্যাম্প এনে কাজে বসে গিয়েছিলো।
ঠান্ডা বাতাসের শিহরণে একটা সময় পর হঠাৎ আনায়ার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। হুট করেই ধরতে পারলো না সে ঠিক কোথায় রয়েছে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো রুমের সবজায়গা অন্ধকার শুধু তার সামনে রাখা টেবিল ল্যাম্পের কারণে আশেপাশে কিঞ্চিৎ পরিমাণ আলো ছড়িয়ে রয়েছে।
একে তো আচমকা ঘুম থেকে উঠেছে অন্যদিকে এতো বড় রুমটায় টেবিল ল্যাম্পের আলোর বিস্তারটা আনায়ার খুব সামান্যই মনে হলো।
আনায়া বুঝতে চেষ্টা করলো এখান সে ঠিক কোথায় আর কি কারণে রয়েছে। একটা সময় পর তার মনে পড়তেই চমকে উঠলো। তাড়াহুড়ো করে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ফাইলের মাঝ থেকে নিজের ফোনটাকে বের করে সময় দেখতেই মাথায় একহাত দিয়ে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো। এসব কি! রাত বারোটার ছুঁইছুঁই । সে নেশা করে নাকি ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়েছিলো? আনায়া চোখে এখন সর্ষে ফুল দেখার মতো অবস্থা।
এতো রাত হয়ে গেলো অথচ তার সামান্য হুসও হলো না! এতো বড় গাধামি করলো কি করে। আশেপাশের সবাই হয়তো কাজ শেষে এতোক্ষণে চলেও গিয়েছে। এতোক্ষণ তো কারো থাকার কথা নয়। গাধামিটা তো সেই-ই করেছে। নিজের কেবিনে থাকলে নিশ্চয় গার্ড এসে দেখে যেত কেউ আছে কিনা কিন্তু কেনীথের রুমে থাকায় হয়তো দেখতেও আসেনি।
আনায়ার পুরো কান্না পাচ্ছে! কিন্তু এখন কান্নাকাটি করার সময় মোটেও না। তাড়াতাড়ি এখান থেকে যেতে হবে। অফিসে কেউ না থাকলে গার্ড বারোটার পর অফিসের ভেতরের মেইন গেইট বন্ধ করে দিতে পারে।
এই ভেবে আনায়া কোনো মতে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের ওরনাটা ঠিক করে ফোনটা হাতে নিয়ে নিলো। তার ব্যাগ,তার কেবিনেই রেখে এসেছে।
আনায়ার আশেপাশে তাকানোর আর সময় নেই। প্রথমে ভাবলো ফাইলগুলো সব ঠিকঠাক করে রেখে যেতে হবে।এই ভাবনায় ফ্লোর আর ডেস্কের ফাইলগুলো গোছাতে গিয়ে একবার ফোন চেক করতে গিয়ে আবারও বেচারী চমকে উঠলো।
ত্বরিত ভাবলো এখন এসব ফাইলগুলো সব গুছিয়ে রেখে যেতে যেতে অনেক সময় লেগে যাবে। তখন আবার আরেক বিপদ। কি করবে,না করবে কিছু বুঝে উঠতে পারলো না৷ তবে বেশি সময় নষ্ট না করে ভাবলো আপাতত যতটুকু গুছিয়েছি ততটুকুই থাক, বাকিটা কাল সকালে তাড়াতাড়ি এসে ঠিক করা যাবে। আর কেনীথ যেহেতু কবে আসবে তার ঠিকঠিকানা নেই তাহলে এতো টেনশন করারও প্রয়োজন নেই।
আনায়া ফোনের ফ্লাশ লাইটটা অন করে টেবিল ল্যাম্পটা বন্ধ করে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে উদ্বেগ হলো।
—“ফাইলগুলো যেভাবে রাখা ছিলো, পুনরায় সেভাবেই থাকা চাই।”
কিন্তু মূহুর্তেই এক গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনতে পেয়ে আনায়া ভিষণ ভাবে চমকে যাওয়ায় তার হাত থেকে ফোনটা নিচে পড়ে গেলো। আনায়ার মূহুর্তেই কিঞ্চিৎ সময়ের জন্য দমটা বন্ধ হয়ে গেলো। সে যা শুনলো এটা কি সত্যি নাকি তার ভ্রম। আনায়া গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। আওয়াজটা তো মনে হলো সামনে থেকে এসেছে কিন্তু সামনে কিংবা আশেপাশে তো কেউ নেই। তাহলে কোথায় থেকে আওয়াজ এলো, বারান্দা থেকে! নাকি এখানে আবার ওসব ভুত আত্মা রয়েছে। এইজন্যই কি এই ঘর এমন অন্ধকার রাখা হয়। আনায়ার এবার এসব ভেবে সত্যিই কান্না পাচ্ছে। কিন্তু নিজের এমন বোকামি চিন্তা ভাবনা আর আচরণে বিরক্তও হচ্ছে। কিসব আজব চিন্তা ভাবনা।
আনায়া নিচু হয়ে আগে ফোনটা তুলে হাতে নিলো। এরপর কিছু বলতে চেয়েও দেখলো গলা থেকে আওয়াজ বের হচ্ছে না। আনায়া বিরক্ত হলো নিজের উপর। কিছুুটা নিজেকে তটস্থ করে বারান্দার দিকে অগ্রসর হতে লাগলো। আর যেতে যেতে অনেকটা কষ্ট করেই গলা থেকে আওয়াজ বের করলো,
—“ওখানে… কে….!”
এটা বলেই আর আনায়া সামনের দিকে অগ্রসর না হয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ বারান্দার দিকে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো আদোও ওখানে কেউ আছে কিনা তবে এতো রাতে বারান্দায় যাওয়ার আর সাহস হলো না।
কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও যখন কোনো সারাশব্দ এলো না তখন আনায়া নিজের বোকামির জন্য তাচ্ছিল্যর সাথে হেসে পিছনে ঘুরে যেতে নিলেই হঠাৎ বারান্দা থেকে আসতে থাকা কিছু পায়ের আওয়াজ শুনতেই ত্বরিত পিছনে ফিরে তাকালো।
এরপর যা হলো তার জন্য হয়তো আনায়া নিজেও প্রস্তুত ছিলো না।পিছনে ঘুরে তাকাতেই দেখলো বারান্দা হতে অন্ধকারে একটি ছায়া মানব তার দিকে দ্রুত গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। আর এটা দেখেই আনায়ার মস্তিষ্ক আগে পিছনে ডানে বামে কিছু না ভেবেই ফোনটা নিচে ফেলে রেখেই জোরে চিৎকার দিয়ে ভয়ে দৌড়ে পালাতে নিলেই, ফ্লোরে পড়ে থাকা একটা ফাইলের পিচ্ছিল কভারের উপর পা পরায় নিজের ব্যালেন্স হারিয়ে সোজা ধপাৎ করে ফ্লোরে আঁচড়ে পড়লো।
—-“আ……………………………
কেনীথের রুমটা সাউন্ড প্রুভ যেহেতু তাই তার আওয়াজ আশেপাশে কারো কানে পৌঁছানোর সম্ভবনা ক্ষীণ। কিন্তু তার এমন উদ্ভট চিৎকার শুনে আনায়ার পেছনে সটানভাবে দাঁড়িয়ে থাকা ছায়া মানবটা গম্ভীর আর ক্ষী*প্ত সুরে বললো,
—“শাটআপ!!! ”
আওয়াজটা শুনে আনায়া নিজের চিৎকার থামিয়ে ভাবলো এই কন্ঠস্বর তো তার চেনা। কিন্তু সে যেটা ভাবছে ওটা কি করে সম্ভব। আজ সারাদিনও তো কেনীথ স্যার অফিসে ছিলো না তাহলে এখন কোথায় থেকে এলো। আচ্ছা উনি কি সত্যি, সত্যিই এসেছেন? তবে আমি কোনো এতো ভয়ে রাম ছাগলের মতো চেচাচ্ছি!
মনের মধ্যে অবাধ সাহস ঢুকিয়ে পেছনে ঘুরে তাকানোর সিন্ধান্ত নিলো। কিন্তু পিছনে তাকাতেই তার সব সাহস হাওয়ায় উড়ে গেলো।
তার ফোনটা নিচে পড়ে থাকায়, সেই ফ্লাশ লাইটের আলো উপরের দিকে প্রতিফলিত হওয়ায় ছায়া মানবের শারীরিক গঠনের দৃশ্যটা সম্পূর্ণ অস্পষ্ট ভয়ং*কর দা*নবের মতো দেখাচ্ছে।
আর এটা দেখেই আনায়ার হুস উড়ে যায় যায় অবস্থা। এবার আনায়া ফ্লোরে বসা অবস্থায় আবারও একই সুরে চিৎকার দিতে দিতে চোখ বন্ধ করে সামনে থেকে পেছনে দিকে অগ্রসর হতে লাগলো।
—“আ………….
—“যাস্ট শাট আপ “তারা”! ”
প্রচন্ড বিরক্তিপূর্ণ কন্ঠ বলা কথাটা শুনে আনায়া এবার চিৎকার থামিয়ে থম মেরে ফ্লোরেই বসে রইলো। এরপর ধীরে ধীরে চোখ খুলতেই তাকিয়ে দেখলো রুমে খুব সামান্য পরিমাণের অফ হোয়াইট কালারের লাইট গুলো জ্বালানোয় চারপাশটা কিছুটা আলোকিত হয়েছে আর আনায়ার সেই ছায়া মানবের জায়গায় কেনীথের বলিষ্ঠ দেখ আর চেহারা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
আনায়া কয়েকবার চোখের পাপড়ি ঝাপটে আমতাআমতা সুরে বললো,
—” স্যার, এটা কি সত্যিই আপনি নাকি…….. ”
আনায়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই কেনীথ বললো,
—“ফাইল গুলো যেভাবে ছিলো ঠিক সেভাবেই যেন থাকে। সময় মাত্র পাঁচ মিনিট।”
আনায়া হুট করেই কিছু বুঝতে পারলো না কিন্তু যখনই তার মস্তিষ্ক সক্রিয় হলো তখনই ত্বরিত বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে কাজে লেগে পড়লো৷ একে একে আশেপাশে যতগুলো ফাইল ছরিয়ে ছিটিয়ে ছিলো তার সবগুলো গুছিয়ে ছোট কাভার্ডে সাজিয়ে রাখতে লাগলো।
এদিকে কেনীথ একই জায়গায় সটানভাবে দাঁড়িয়ে প্যান্টের পকেট দুহাত গুঁজে আনায়ার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে। পরনে কালো রংএর জ্যাকেট আর কালো আর রেড কম্বিনেশনের টিশার্ট আর কালো প্যান্ট। চোখেমুখে একই সেই গাম্ভীর্যের ছাপ। চুল গুলোও প্রতিনিয়ত যেমন অবহেলায় এলেমেলো অগোছালো থাকে অনেকটা অমন করেই হাফ মেসি বান করা।
কেনীথ যে তার চোখমুখ শক্ত রেখেও তাকে পর্যবেক্ষণ করছে আনায়া তা ঠিকই বুঝতে পারছে। আড়চোখে সেও এসব মাঝেমধ্যে খেয়াল করলেও কখনো মুখ ঘুরিয়ে সরাসরি কেনীথের দিকে তাকানোর সাহস হচ্ছে না। কিন্তু এদিকে আনায়ার কলিজার পানি শুকিয়ে গিয়েছে। কোনোমতে কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরতে পাড়লেই বাঁচে।
আনায়া সব কাজ শেষ করে পিছনে তাকিয়ে দেখলো কেনীথ তার দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে। যা দেখে আনায়া কেনীথের সাথে তার চোখাচোখি হওয়ার আগেই নজর নিচের দিকে ফেলে বললো,
—“স্যার সরি! ”
সামনে থেকে কোনো সারা শব্দ না এলে আনায়া কেনীথের দিকে কিঞ্চিৎ তাকিয়েও আবার চোখ নামিয়ে ফেললো আর বললো,
—“আ…ফাইল গুলো না গুছিয়েই চলে যাচ্ছিলাম এজন্য। সরি স্যার, হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়ায় কিছু বুঝতে পারিনি। ”
—“I don’t like chaotic work.Make sure such mistakes don’t happen next time.”
আনায়া মাথা নিচু থাকা অবস্থাতেই মাথা আশেপাশে নাড়িয়ে বললো,
—“ওকে স্যার!……. আ…..
আনায়া কিছু বলা আগেই কেনীথ শান্ত সুরে বললো,
—“Leave now ”
এরপর আনায়া আর কিছুই বললো না। আর না কেনীথের দিকে তাকিয়ে তার গতিবিধি দেখার চেষ্টা করলো। সোজা পিছন দিকে ঘুরে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
আনায়া কেনীথের রুম থেকে বেরোতেই দেখলো চারপাশ পুরো অন্ধকার ছেয়ে গিয়েছে। পুরো এরিয়ার যতগুলো লাইট ছিলো সব নিভে দেওয়া হয়েছে। কেমন যেন গা ছমছমে পরিবেশ। না চাইতেও ভয়ে কাটা দিচ্ছে।
আনায়া এসব আর বেশি ভাবতে চাইলো না। ফালতু মনে যত বেশি এসব ভাবা যায় এ যেন আরো তত বেশি ভয় ঢুকিয়ে দেয়। আনায়া তড়িঘড়ি করে সিঁড়ি দিয়েই নিচে নেমে চলে গেলো। তার শুধু তার ফোনের ফ্লাশ লাইট অন করা আর আশেপাশে ছোট ছোট ডিজাইনার লাইট জ্বালানো। আনায়া চাইলে লিফটেই যেতে পারতো কিন্তু এই মূহুর্তে আর লিফটে করে যাওয়ার সাহস তার হবে না। এমনিতেই মন মস্তিষ্কের অবস্থা আ*তংকে সময়ের মতোই বারোটা বেজে গিয়েছে।
আনায়া নিচে আসতেই হুস হলো এখন সে বাড়ি যাবে কিভাবে। এখন যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। সবার প্রথমে উপায় হিসেবে ইমনের কথা মাথায় এলো কিন্তু ইমন যে শহরের বাহিরে এই কথা মাথায় আসতেই বেচারীর কান্না করতে ইচ্ছে হলো। এই মূহুর্তে ইমন ছাড়া আর কে তাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে পারবে।
আগে পিছে না ভেবে হাঁটা শুরু করতে চাইলে আবার নিজেই নিজের কাজে রেগে গেলো। মাথাটা মনে হয় তার পুরোই গিয়েছে। এতো দূর রাস্তা সে কোন গাধীর মতো হেঁটে যেতে চাইছে তাও আবার এতো নির্জন রাতে। এমনিতেই এখানকার আশেপাশের এরিয়া অন্য জায়গার চেয়ে আলাদা। কেমন যেন চুপচাপ আর নিস্তব্ধ।
আনায়া কিছু ভাবতে পারছে না। মাথা পুরো হ্যাং হয়ে গিয়েছে। এখন করবেটা কি। পার্কিং এরিয়ায় গিয়ে চিন্তায় অস্তিরতা নিয়ে হাঁটাহাঁটি করতে লাগলো। ভাবতে লাগলো কাকে ফোন করলে কাজ হতে পারে। তার সাহায্য করার মধ্যে শুধু তার ফ্রেন্ডরাই আছে কিন্তু ওদের এ বিষয়ে সাহায্য করতে বললে তো ওরা ওর সম্পর্কে সব জেনে যাবে। তখন তো আবার মহা ঝামেলা।
পরক্ষণেই ভাবলো একবার ইমনকেই ফোন দেবে। তার কোনো বিশস্ত ফ্রেন্ড থাকলে কাজ হয়ে যাবে।
এই ভাবনা নিয়েই আনায়া ইমকে ফোন করলো কিন্তু ভাগ্য তার এতোই খারাপ যে ইমনের ফোন পুরো সুইচঅফ। আনায়ার তো ইচ্ছে করছে রাগে দুঃখে চিৎকার করতে। দু’হাত খিঁচে নিজের রাগ কিছুটা কন্ট্রোল করে ভাবতে লাগলো এবার তার বন্ধু ছাড়া কোনো উপায় নেই।
প্রথমে ভাবলো এই বিষয়ে মেয়েদের বলে লাভ নেই। সাবাকে জানানো মানে তো মহা বিপদ, শিখা তো কিছু করতেই পারবে না আর আলো কি করবে তা ও নিজেই বুঝতে পারবে না। ওর বাবা মা এমনিতেই অনেক স্ট্রিট।
অন্যদিকে সায়েমের বাসা অনেক দূরে, তাজিম আর রনকই পারবে হেল্প করতে। কিন্তু কাকে ফোন করলে কাজ হবে তাই বুঝে উঠতে পারছে না। তাজিম একটু খোলামেলা স্বভাবের, ও না চাইতেও দেখা যাবে এই বিষয়ে তার পুরো ফ্রেন্ড সার্কেল জেনে গিয়েছে। আর এমনিতেই ওদের একজন জানা মানে পুরো দুনিয়া জানা।
তবে রনককে কিছুটা বিশ্বাস করা যায় আর এমনিতেও ও সন্দেহ করে বসে রয়েছে। ওকেই ভালো করে বুঝিয়ে বললেই কাজ হবে। এই ভেবেই আনায়া রনককে ফোন করে করলো। প্রথম বার ফোন উঠিয়েই বললো,
—“কি রে এতো রাতে ফোন করলি যে! ”
—“আ…একটু দরকার ছিলো। আচ্ছা তুই এখন কোথায় আছিস। ”
—“কেনো ভার্সিটি বললাম না, আজ সন্ধ্যায় মামা বাড়িতে যাবো। ভুলে গিয়েছিস?”
আনায়া থম মে*রে গিয়ে আশাহত কন্ঠ বললো,
—“ওহ! তারমানে তুই তোর মামা বাড়িতে, ওটা তো শহরের বাহিরে তাই না? ”
—“হুম!আচ্ছা কি হয়েছে বলতো। কোনো প্রয়োজন……কি দরকার তা তো বললি না। ”
আনায়া হাসি সুরে বললো,
–“নাহ, তেমন কিছু না। তুই এলে বলবোনি৷ ”
—“হ তাই করিস, আর রাতের বেলায় হবু জামাইরে ফোন না করে আমাকে ফোন দিস কোন আক্কেলে! কয়েকদিন পর বউ পালানো কিংবা পরকীয়ার মামলা দিবি এইজন্য? ”
রনকের কথা শুনে আনায়ার মেজাজ আরো খারাপ হলো। এমনিতেই টেনশনে বাঁচে না তার উপর ফালতু মার্কা সব কথাবার্তা। প্রচন্ড বিরক্ততে নিয়ে বললো,
—“নাউজুবিল্লাহ! উফ….চুপ থাক তুই। এমনিতেই মেজাজ গরম আর খারাপ করিস না। ”
—“হুম, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। আচ্ছা ভালো থাক।
এরপর সৌজন্যমূলক সব বিদায় শেষে আনায়া আবারও চিন্তিত হয়ে পড়লো। হঠাৎ তখনই মনে যে সে তার ব্যাগ না নিয়েই নিচে নেমে এসেছে। এখন যেন আনায়ার গড়াগড়ি করে কাঁদতে ইচ্ছে হলো। শেষে আর সময় নষ্ট না করে সেই সিঁড়ি বেয়েই উপরে চলে গেলো।
নিজের কেবিন থেকে ব্যাগটা নিয়ে যেই না আবারও সিঁড়ির উদ্দেশ্যে অগ্রসর হয়েছে অমনি অন্ধকারে কারো সাথে ধাক্কা লেগে ধপাৎ করে সোজা নিচে সঙ্গে তার ভুবন ভুলানোর মতো চিৎকার,
—-“আম…..মা……..
—“হোয়াট দ্যা হেল। এভাবে চেঁচানো বন্ধ কর। ”
হঠাৎ আবারও ধমক শুনতেই আনায়া চুপ। আশেপাশে এবার সত্যিই অনেকটা অন্ধকার। কেউ থাকলে তা ঠিক বোঝারও উপায় নেই আর এখানে আনায়া তো মাথায় বস্তা খানেক টেনশন নিয়ে ঘুরছে।
আনায়া নিজেকে ত্বরিত তটস্থ করে বললো এটা কেনীথ। আসলেই আজ সে গাধা, ছাগল, হাঁস,মুরগী সবকিছুর মতো কাজকর্ম করছে শুধু ব্রেইনটাই খাটাচ্ছে না। তবে এর মাঝে সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো দুইবার ধপাৎ করে নিচে পড়ে যাওয়ায় তার কচি কোমড় খানা যায় যায় অবস্থা। এসব নিয়ে নিজেকে যেমন গালাগালি করছে তেমন কেনীথকেও বাদ দিচ্ছে না৷ কেনীথের এমন ভুত পি*শাচদের মতো চলাফেরা করাটা কি খুবই জরুরি? স্বাভাবিক মানুষের মতো কি থাকা যায় না?বিষয়টি এমন হলে মানুষদের মধ্যে না থেকে নিমগাছ, তেঁতুল গাছ, বেল গাছে গিয়ে থাকলেই তো হয়।
আনায়া উঠে দাঁড়িয়ে নিজের ফোনের লাইটটা ভালো করে ধরতেই কেনীথ আর আশপাশটা কিছুটা পরিষ্কার হলো এবং আনায়া আমতা আমতা করে বললো,
—” সরি স্যার! তাড়াহুড়োয় খেয়াল ছিলো না। আপনার কোথাও লাগেনি তো! ”
কেনীথ অকপটে বললো,
—“নিচে তুুই পড়ে গিয়েছিলি আমি না! ”
আনায়া বোকার মতো চেহারা বানিয়ে বললো,
—“ওহ হ্যাঁ!”
—” বাড়ি না গিয়ে এখানে কি করছিলি?”
—“বাড়ি যাবো তো! আ….ব্যাগটা ভুলে রেগে চলে গিয়েছিলাম আরকি।”
কেনীথ আর কিছু না বলে সোজা লিফটের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো। এদিকে আনায়া থম মে*রে কিঞ্চিৎ সময় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেই তার মস্তিষ্ক তাকে জানান দিতেই সে দৌড়ে সে সিঁড়ির দিকে অগ্রসর হতে গিয়ে কেনীথের কন্ঠস্বর শুনে থেমে গেলো।
—“ওদিকে কেনো যাচ্ছিস। ”
আনায়া পাশে ফিরে তাকিয়ে দেখলো কেনীথ লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে। আনায়া ওর কথার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে ওর দিকে এগিয়ে যেতেই কেনীথ সামনের দিকে মুখ ঘুরিয়ে লিফটের ভেতরে চলে গেলো। আনায়াও আর দেরী না করে লিফটের ভেতরে গিয়ে কেনীথের পাশে গিয়ে কিছুটা পেছনে দাঁড়ালো।
লিফটের ভেতরে হালকা আলোর মাঝে লিফট ক্রমশই নিচে নামছে আর এদিকে আনায়ার বুক ধকধক করে যেন উপরে উঠছে। লিফটের ভেতরে তো চলে এসেছে কিন্তু কেনীথ যে তার পাশে থাকলে কলিজা, ফুসফুস,হৃদপিণ্ড সব শুকিয়ে যায় ;একথা মাথায় রাখবে কে!
আনায়া নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো।আর মনে মনে বলতে লাগলো, এমন সিচুয়েশনে যেন তার শত্রুর কপালে ভুলেও না জোটে। গত কিছুক্ষণ ধরে জীবনটা তার যায় যায় উপক্রম।
এদিকে আনায়া যে নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে নিজের দুহাত মুঠো করে কচলিয়ে যাচ্ছে এটা আর কেনীথের আড়চোখের আড়াল হলো না।মনের মাঝে নানান ভাবনার পর শুধু ওই বাঁকা হাসিই হাসলো, যাহাকে শয়তানি হাসি বললে ভুল কিছু হবে না। হয়তো এই হাসি বর্তমান কিংবা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্য।
______________________
নিচে নামতেই কেনীথ পার্কিং এরিয়া থেকে কেনীথের গাড়ি পর্যন্ত আনায়া কেনীথের পেছন পেছনই গেলো কিন্তু এরপর… এরপর সে কি করবে।
আনায়া চুপটি করে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে চিন্তিত চিত্তে কিছু ভাবনা চিন্তায় অবস্থা নাজেহাল করছে আর এদিকে কেনীথ নিজের ব্রান্ড নিউ গাড়ি নিয়ে রাস্তায় এসে আনায়ার থেকে কিছুটা সামনে দাঁড়িয়ে।
কেনীথ গাড়ির ভেতর থেকে আনায়ার সকল কিছুই পর্যবেক্ষণ করছে। এদিকে আনায়া ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো যে পুরো সাড়ে বারোটা। এদিকে তার সামনে শেষ উপায় বলতে কেনীথ আর তার গাড়ি। কিন্তু সেটাও যে কখনো ফুড়ুৎ করে চলে যাবে কে জানে। গিয়ে যে কেনীথের কাছে হেল্প চাইছে তার সাহসও হচ্ছে না। যদিও এর আগে একবার হেল্প নিয়েছে তবুও এই কয়েকদিনে তার জীবনের লক্ষ বলতেই এই লোকটার থেকে দূরে থাকা। অথচ ঘুরেফিরে উদ্ভট কেনীথের কাছেই শরণাপন্ন হতে হয়।
আনায়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কেনীথের গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। গিয়ে মাথাটা কিছুটা নিচু করে কেনীথের উদ্দেশ্য বললো,
—“স্যার একটা হেল্প লাগতো, বাড়ি যেতে হবে।”
কেনীথ জানতো এমন কিছুই হবে,তাই সে কিঞ্চিৎ মুচকি হাসলো। কেনীথ স্টিয়ারিং এ এক হাত রেখে সামনে দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থাতেই বললো,
—“ফাস্ট! ”
আনায়া ভ্রু কুঁচকে আবার ত্বরিত সোজা করে বললো,
—“আ….হ্যাঁ। থ্যাংক ইউ স্যার। ”
এই বলে আনায়া তাড়াতাড়ি দরজা খুলে কেনীথের পাশে বসে পড়লো। আর মনে মনে অনেকটা খুশি হয়ে বলতে লাগলো,
—“বেডা কে যতটা তাঁরছেরা ভেবেছিলাম ততটা না!”
আনায়া সিট বেলটা লাগাতে কেনীথ গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার জন উদ্বেগ হলো। এরপর সাই-সাই করে গাড়ি চলতে লাগলো তার আপন গতিতে। গাড়ির স্পিডটা যথেষ্ট বেশিই ছিলো তবে সমস্যা বাঁধলো আজ কেনীথ গাড়ির জানালা আর বন্ধ করেনি বরং খুলেই রেখেছে। যে কারণে বাহির থেকে বাতাস গাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে আনায়ার খোলা চুলগুলো সব এলোমেলো করে দিচ্ছে।
দু’হাত দিয়ে কানের পাশে গুঁজেও কাজ হলো না তবে যখন বিরক্তিতে চুল ঠিক করতে গিয়ে পাশে নজর পড়লো তখনই সে আঁতকে উঠলো। তার চুলগুলো গিয়ে সব কিছুক্ষণ পরপর কেনীথের মুখে আঁচড়ে পড়ছে। অথচ কেনীথ নির্বিকারে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আনায়ার এটা দেখে কলিজা শুকিয়ে গিয়েছে।
মনে মনে দোয়া দুরূদ পড়ে ভাবতে লাগলো এই বেডায় এখনো কোনো রিয়েক্ট করেনি মানে, নিশ্চিত মারা*ত্মক ক্ষেপে আছে তার উপর। আনায়া চমকে উঠলো এই ভেবে যে, বেটায় আবার শেষমেশ তাকে গাড়ি থেকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে চলে যাবে না তো!
আনায়া আগে পিছনে ভাবনা চিন্তা রেখে ত্বরিত নিজের বড় বড় চুল গুলো নিয়ে খোপা করতে লাগলো। কিন্তু হঠাৎ পাশ থেকে খুকখুক করে কাশির আওয়াজ শুনতেই আনায়া আড়চোখে তাকিয়ে দেখলো কেনীথ সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে আর কেশে যাচ্ছে।
সে ভাবলো বাহিরের ঠান্ডা বাতাসের জন্য হয়তো এমন হচ্ছে অথচ কাহিনি কিছু ভিন্ন। আর যাই হোক, আনায়ার দুহাত উঁচিয়ে চুল বাঁধার দৃশ্য আড়চোখে খেয়াল করতে গিয়েই কেনীথের বিপত্তি বেঁধে গিয়েছে।
এদিকে আনায়া তাড়াহুড়ো করে চুলগুলো খোঁপা করে বললো,
—“স্যার বাহিরের বাতাস বেশি ঠান্ডা লাগলে বন্ধ করে দিতে পারেন। ”
আনায়ার কথায় কেনীথ কিছুই বললো না উল্টো তার কাশিও কমছে না।এদিকে গাড়িও সে ভালোই স্পিডে চালিয়ে যাচ্ছে।
আনায়া কি করবে হঠাৎ বুঝতে না পেরে নিজের ব্যাগ থেকে পানির বোতলটা বের করে সেটা খুলে কেনীথের মুখের সামনে ধরলো। ওমনিই কেনীথ গাড়ির স্পিডটা কমিয়ে দিয়ে আনায়ার দিকে তাকালো। আর আনায়া বেচারি কেনীথের হুট করে তাকানোতে ভরকে গেলো। তবুও স্বাভাবিক গলায় বলার চেষ্টা করলো,
—“স্যার গাড়িটা থামিয়ে পানিটা খেয়ে নিন। আ……অথবা আপনি হা করুন আমি বরং…….
এরই মূহুর্তেই কেনীথ নিজের মুখ হা করতেই আনায়া আর নিজের কথা সম্পন্ন করলো না। কয়েকবার চোখের পলক ফেলেই কেনীথের মুখে পানি ঢেলে খাইয়ে দিলো। কেনীথ একবার মুখে নিয়ে ত্বরিত মুখ সরিয়ে নিলো আর আনায়াও কিছু বললো না।যেহেতু কাশি থেমে গিয়েছে তবে সমস্যা আর কি!
তবে শেষ বারের মতো আনায়া আড়চোখে আরেকটি বার কেনীথকে আড়চোখে দেখে মনে মনে বললো,
–“যত যেমনই হোক না কেনো, লোকটা তার ছেঁড়া বড় ভাই হিসেবে কিন্তু একদম পারফেক্ট। ”
এই ভেবেই সে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো আর এদিকে কেনীথ নিজের প্রতি বিরক্ত। এভাবে উইক হওয়াটা মোটেও তার জন্য স্বাভাবিক বিষয় নয়। তার ক্ষেত্রে এমনটা মোটেও কাম্য নয়। তাকে নিজেকে নিজের কন্ট্রোল করতে হবে, এইভাবে দূর্বল হয়ে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
কেনীথ দশটার দিকে নিজের অফিসে এসে তার কেবিনে ঢুকেই আনায়াকে ওমন অবস্থায় দেখতে পায়। আর ঠিক তখনই ওর নিষ্পাপ ঘুমন্ত চেহারার উপর মূহুর্ত ক্ষণিকের জন্য আসক্ত হয়ে পড়ে। নিস্তব্ধ অগোছালো রুমটার সবকিছু এড়িয়ে আনায়ার ঠিক সামনা সামনি চেয়ারে বসে পড়ে। এরপর ঠিক আনায়া মতোই ডেস্কে একহাত ছড়িয়ে তাতে মাথা রেখে আনায়ার ঘুমন্ত চেহারা দেখতে থাকে।
আনায়ার সে ঘুমন্ত চেহারায় চিন্তার ছাপ আর গালে পড়া কিঞ্চিৎ টোল দেখে মাঝেমধ্যে মুখে মুচকি হাসিও ফোটে। তবে সেটা তার সেই বাঁকা কিংবা শয়তানি হাসি নয় বরং আনায়ার নিষ্পাপ ঘুমন্ত চেহারার মতোই এক প্রানবন্ত হাসি।
আর এসব নিয়েই কেনীথ নিজের উপর বিরক্ত। তখন ওমন সব কাজ করা আর এখন আবার সেই একই কাহিনি। এখনকার মতো তখনও অবশ্য আনায়া কিছু টের পাওয়ার আগেই সামলে নিয়েছে।
মনে মনে নিজের রাশিয়া যাওয়াটাকেই দোষারোপ করছে। ওখানে গিয়েই একদম ফ্যামিলি ম্যাটিরিয়ালের রোগ ধরেছে। তবে এই রোগ কিভাবে ছাড়াতে হয় তা কেনীথের ভালো করেই জানা আছে।
_________________
আনায়ার বাড়ির সামনে এসেই কেনীথ তার গাড়িটা থামালো। বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে এখন প্রায় রাত দুইটার ছুঁইছুই। এতো রাতে মানুষের আনাগোনা থাকার সম্ভবনা কম সেক্ষেত্রে আনায়াকে কেনীথের গাড়ি থেকে তার বাড়ির সামনে নামতে দেখাটাও।
আনায়া দেরী না করে কেনীথকে ধন্যবাদ দিলো ঠিকই কিন্তু কেনীথ আর ওসব পাত্তা দেয় নাকি! কোনোকিছু না বলেই সোজা গাড়িটা ঘুরিয়ে নিজ গন্তব্য চলে গেলো। এদিকে আনায়া আর এসবে কিছু মনে করে না। এসব তার কাছে অনেকটা নরমালই হয়ে গিয়েছে।
আধারে ঢাকা রাত আর আশেপাশে ঝিঁঝি পোকাদের গা ছমছম করার মতে আওয়াজ ভেসে বেড়াচ্ছে। তবে আনায়া এবার আর তেমব ভয় পেলো না। মুচকি হেসেই নিজের বাড়ির উদ্দেশ্য অগ্রসর হলো।
আনায়া বাড়ির বাগানের মেইন গেইট পার হয়ে সদর দরজার কাছে এসে চাবি দিয়ে দরজার লক খোলায় ব্যস্ত এমন সময় হঠাৎ আনায়ার চাবি ঘোরাতে থাকা হাতটা থেমে গেলো। চোখে মুখে আকস্মিক ভাবে সন্দেহ আর চিন্তার ছাপ পড়লো।চারপাশে ঝিঁঝিপোকাদের ডাক আর দমকা ঠান্ডা বাতাস যেন পরিবেশটাকে আরে ভীতিকর করে তুলেছে।
আনায়ার হুট করেই কেনীথের একটা কথা বারবার মনে হচ্ছে যা এতোক্ষণ মাথায় আসেনি।
কেনীথ তখন ধমক দেওয়ার সময় তাকে” তারা” নামে ডেকেছিলো। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব! এই নামটা তার পরিবার ব্যতীত আর কারো জানার কথা নয়। এরচেয়েও বড় বিষয় তার পরিবারে এই নামটা বহু বছরেও কেউ মুখে আনেনি। আর না এই নাম কখনো তার বার্থ সার্টিফিকেট, একাডেমিক কিংবা জব যাই হোক না কেনো কোথাও তার এই নাম ব্যবহার করা হয়নি। যদিও এসব তারা বাবার ইচ্ছেতেই হয়েছে কিন্তু এই নাম তো কারো জানার কথা নয়। এমনকি ইনায়াও হয়তো জানে না তার নাম তারা। সেখানে কেনীথ কি কিভাবে জানলো তার এই নাম! কিভাবে! কিভাবে!
#চলবে
#একজোড়া_আগুন_পাখি
®অরনীতা তুশ্মি (#তুশকন্যা)
পর্ব→১৬
সারা রাত আনায়ার নানা চিন্তা ভাবনায় চোখে ঘুম আসেনি। সবসময়ই তার মস্তিষ্ক একটাই চিন্তা করেছে যে কেনীথ কি করে তার নাম জানতে পারলো। ঠিক কি করে, আবার অতিরিক্ত চিন্তায় তার একটা সময় পর মনে হয়েছে যে কেনীথ তাকে এই নামে হয়তো কিছুই ডাকেই নি। হয়তো অন্যকিছু বলেছে। আর তার মনে এখন সন্দেহ জাগছে।
কখনো এটা মনে হয়েছে তো কখনো ওটা৷ সবকিছু মিলিয়ে গুলিয়ে ফেলার অবস্থা হয়েছিলো তার। একসময় অতিরিক্ত মাথা ব্যাথা নিয়ে ভোর রাতের কিছুক্ষণ আগে ঘুমাতে পেরেছে। কারন তখন তার মনে আরো কিছু সন্দেহ এক হয়ে জেগে উঠেছিলো। সেই শুরুর দিকের ঘটনায় তার জামা আর কেনীথকে নিয়ে এক বিদঘুটে কল্পনা। আনায়া সবসময় সেই বিষয়টিকে তার অতিরিক্ত চিন্তা আর কল্পনা হিসেবেই নিজেকে বুঝ দিয়েছে।
তবে এখন যখন কেনীথের ছোটখাটো বিষয়গুলোকে সে এক করতে চায় তখনই মাথাটা পুরো গুলিয়ে যায়। কিভাবে যেন মনে হতে থাকে সবকিছু সত্যি আর কেনীথ কোনো সাধারণ মানব নয়। সে নানান রহস্যে ঘেরা এক মানব।
আর পরক্ষণেই সেইদিনে র*ক্তের বাথটাবে ডুবে থাকা বিষয়টি মাথায় আসতেই ভাবতে থাকে সে যা যা ভাবছে সব ভুল। এসবও কি কখনো হয় নাকি। সেই কল্পনায় তো সে কেনীথকেও চা*পাতি বসে থাকতে দেখেছিলো, এসব সত্যি হলে নিশ্চয় সে আজ বেঁচে থাকতো না।আর সবচেয়ে বড় বিষয় কেনীথ একজন নামকরা রকস্টার হয়ে এমন পি*শাচদের মতো কোনো কাজ করবে কেনো।
সারারাত এতো চিন্তা ভাবনা করেও কোনো লাভ হয়নি। শেষমেশ কোনো না কোনো ভাবে কিছু সন্দেহ থেকেই যায়। এজন্য আনায়া বাধ্য হয়েই বিষয়টি নিয়ে ঘাটাঘাটি বন্ধ করে দিয়েছে।
____________
এমনিতেই সারারাত ঠিক মতো ঘুম হয়নি আর এখন সকাল সকাল ইনায়ার অত্যাচার। সেদিন রাতে বাধ্য হয়েই আনায়া ইনায়ার ইচ্ছে মানতে রাজি হয়েছে। প্রমিজ করছে যে, তাকে ভিকের কাছে নিয়ে যাবে দেখা করানোর জন্য। আর সে অনুযায়ী কথা ছিলো ভিকে যখনই অফিসে আসবে সেদিনই যেন তাকে নিয়ে যাওয়া হয়।
সকাল সকাল আনায়া মুখ ফসকে কেনীথের অফিসে ফেরার কথাটা ইনায়াকে বলে ফেলেছে আর এতেই শুরু হয়েছে ওর ঘ্যানঘ্যান।
আনায়া প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছিলো বিধায় বলে দিয়েছে ভার্সিটি থেকে ফিরে এসে তাকে সঙ্গে করে অফিসে নিয়ে যাবে।
আনায়া ভার্সিটির জন্য তৈরি হবে এরই মাঝে শিকদার বাড়িতে হঠাৎ ইমনের আগমন। ইমনকে দেখে আনায়া কিছুটা অবাক হলো কারণ ইমনের ফিরতে আরো কিছুদিন লাগার কথা ছিলো। কিন্তু এখন দেখায় খুশিই হলো।
ইমনকে বসতে দিয়েই আনায়া খেয়াল করলো যে ও আজ এমনি আসেনি বরং হাতে কিছু গোলাপ ফুলের তোড়া আর ছোট একটি গিফট বক্সও রয়েছে। ইমন সেগুলো আনায়াকে দিতেই আনায়া বললো,
—“ভাইয়া এসব কি? ”
ইমন মুচকি হেসে বললো,
—“এসব আমি নই তোমার বিলাতী জামাই পাঠিয়েছে। আই মিন, গিফটটা ও পাঠিয়েছে আর ফুল গুলো আমাকে কিনে দিতে বলেছে। ”
আনায়া কিছুটা কপাল কুঁচকে বললো,
—“হঠাৎ এইসব…. কেনো? ”
ইমন হেসে বললো,
—“আজ আনায়া ম্যামের জন্মদিন তাই! ”
আনায়া কিছুটা অবাক হলো এটা শুনে। আজ যে তার জন্মদিন এটা তো তার মাথাতেও ছিলো না আর এদিকে রেহান সেই সূদুর থেকে তার জন্য এতোকিছু ব্যবস্থা করেছে, ভাবতেই অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। আনায়া পাশে ফিরে তাকিয়ে দেখলো ইনায়া মিটমিট করে হাসছে তা দেখে আনায়া বললো,
—“হাসছিস কেনো, তুই না প্রতিবছর ঢং করে বারোটা বাজতেই উইশ করিস তা এই বছর কি হলো শুনি। ”
ইনায়া মুচকি হেসে অকপটে বললো,
—“এই বছরটা বিলাতী দুলাভাইএর জন্য ছাড় দিয়েছি। বেচারা বিলাতী দুলাভাই কাল রাতে ফোন করে বলেছিলো আমায়, যেন এবার সবার আগে বার্থডে উইশটা সেই করতে পারে৷ আর এজন্য তাকে সুযোগ করে দিতে হবে। ”
আনায়া ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই পাশ থেকে ইমন বললো,
—“সরি বোন, তোমার বিলাতী জামাই এইসব গিফট কাল রাত বারোটার আগেই দিতে বলেছিলো আর ও তখনই তোমাকে উইশ করতো কিন্তু আমার বাহির থেকে ফিরতে ফিরতে ভোর হয়ে গিয়েছে এজন্য আর এসব দিতে পারিনি। আর এখন তোমাকে কোনো উইশও করতে পারলাম না। কারণ এটা আমার শাস্তি, ঠিক সময়ে কাজ করতে পারিনি বলে। ”
আনায়া কপাল কুঁচকে বললো,
—“এসব কেমন ছেলেমানুষী কাজকর্ম। ওকে এসব করতে বলেছেটা কে, ওয়েট করেন আমি এখনই ফোন করছি৷ ”
ইমন আনায়ার ঝগড়া বাঁধানোর প্রস্তুতি দেখে সে অপ্রস্তুত সুরে বললো,
—“আরে… আনায়া…
ইমন বলতে দেরী আর আনায়া রেহানকে ফোন করতে দেরী নেই। রেহানকে ফোন করতেই ওপর প্রান্ত থেকে আওয়াজ এলো,
—“হ্যাপি বার্ড ডে জান….! গিফট পছন্দ হয়েছে,রাতেই উইশ করতাম কিন্তু দুইবার ফোন করেও পাইনি আর পরে ভাবলাম একেবারে গিফট দিয়েই উইশ করবে। একমিনিট, আমার আগে তোমাকে আবার কেউ উইশ করেনি তো? ”
আনায়া একনাগাড়ে বলা কথাগুলো শুনে হালকা কপাল কুঁচকে বললো,
—“না কিন্তু এসব কি রেহান। এসব কেনো করতে গিয়েছো আমি আগেও……
রেহান আনায়াকে থামিয়ে বললো,
—“তোমার ধমকা ধমকি রাখো, আগে বলো গিফট পছন্দ হয়েছে কিনা! ”
আনায়া নির্বিকারে বললো,
—“এখনো খুলে দেখিনি।”
রেহান অবাক সুরে বললো,
—“খুলে দেখার আগেই ফোন দিয়ে ঝাড়া ঝাড়ি শুরু করে দিতে চাচ্ছো, ওটা খুলে দেখার পর কি করবে কে জানে। ”
—“কেনো কি পাঠিয়েছো তুমি? ”
আনায়া কপাল কুঁচকে কথাটা বলতে বলতেই জিনিসটার গায়ে থেকে রেপিং পেপারটা সরাতেই পাশ থেকে ইনায়া অবাক সুরে বললো,
—“আই ফোন ফিফটিন প্লাস….!!! ”
ইনায়ার দিকে তাকিয়েই আনায়া আইফোনর বক্সটা দেখে গম্ভীর মুখে টেবিলের উপর রাখলো। কন্ঠস্বর গম্ভীর করে রেহানকে কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই রেহান বললো,
—” ফোন কি লাউডস্পিকারে?”
আনায়া নিজেকে দমিয়ে বললো,
—“নাহ, কেনো? ”
এটা শোনা মাত্রই রেহান ত্বরিত বলতে লাগলো,
—“প্লিজ আমার সাথে আর রাগারাগি করবে না। তোমাকে আগে যখন ফোন দিয়েছিলাম তখন তুমি নেওনি। শুধু ফোন কেনো তুমি কোনো কিছুই নেও নি। কারণ তুমি এসব পছন্দ করো না। কিন্তু এখন কোনো মানা করতে পারবে না।আমি এটা তোমার বার্থডে গিফট হিসেবে পাঠিয়েছি তো এখন তোমাকে নিতেই হবে!”
আনায়া কিছুক্ষণ গম্ভীর মুখে চুপ থেকে বললো,
—“সবই ঠিক ছিলো কিন্তু এতো দামী ফোন দিতে কে বলেছিলো? ”
রেহান হেসে বললো,
—“আমি আমার বউ কে যেন তেন বার্থডে গিফট দেবো নাকি? দিলে অবশ্যই বেস্ট কিছুই দেবো। ওহ হ্যাঁ,আরেকটা জিনিসের কথা তো ভুলেই গিয়েছি। ফোনটাকে যে র্যাপিং পেপার দিয়ে র্যাপ করে দিয়েছি সেটার সাথে কিন্তু একটা কাগজও আই মিন চিঠিও আছে। একটু দেখো তো পেয়েছো কিনা? ”
আনায়া খেয়াল করে গিফট পেপারটা হাতে নিয়ে দেখলো সেখানে একটা চিঠি ভাজ করে স্কচটেপ দিয়ে আঁটকে রাখা। আনায়া ওই স্কচটেপ টা খুলতে খুলতে বললো,
—“এটাতে আবার কি দিয়েছো? ”
আনায়ার কথা শুনতেই রেহান তৎক্ষনাৎ বলতে লাগলো,
—“আনায়া!আনায়া! ওটা প্লিজ এখন খুলে পড়তে যেও না।”
রেহানের কথা শুনে আনায়া থেমে গিয়ে কপাল কুঁচকে বললো,
—“কেনো! ”
—“বুঝই তো, হবু বউয়ের জন্য লিখেছি। আশেপাশে হয়তো তোমার ভাসুর আর আমার শালীকাও রয়েছে। তুমি ওটা একটু আলাদা ভাবে পড়ে নিও।”
রেহানের কথা শুনে আনায়া কেশে একবার ডানে-বামে তাকিয়ে ইমন আর ইনায়াকে দেখে বললো,
—“ঠিক আছে। ”
—“আচ্ছা শোনো, তোমাকে তো এখন ফোনে ঠিকমতো পাওয়াই যায় না।আর তুমি যখন ফ্রী থাকো তো আমি তখন ব্যস্থ। এখনও একটু প্যারাতে আছি, তোমাকে আমি সময় করে রাতের দিকে ফোন করবো।প্লিজ একটু লাইনে থেকো। ”
রেহানের এই ছোট্ট আবদার শুনে আনায়া আর মানা করলো না। রেহানের সাথে আরো কিছু সৌজন্যে মূলক কথা বলা শেষে ওকে বিদায় দিয়ে ফোন রেখে দিলো। ফোন রেখে দিতেই তার দুপাশ থেকে ইনায়া আর আনায়া চিৎকার করে তাকে জন্মদিনের উইশ করলো। সঙ্গে ইনায়া ওকে একটা একটা রিং আর ইমন একটা ঘড়ি উপহার দিলো। আনায়াও হাসি মুখে সেসব গ্রহন করলো।
এরপর আবার আনায়ার নতুন ফোনে তার সিম সহ বাকি ডিটেইলস গুলো এড করে আনায়াকে ফোনের খুটিনাটি বিষয় গুলো বোঝালো।
সবশেষে যাওয়ার আগে ইনায়ার সাথে ইমনের কথায় লেগে গেলো। ইমন যে এতোদিন তার কাছে থেকে কেনীথের পিএ এর বিষয়টি গোপন করেছে এটাই হলো মূল কারণ। এরপর ইমন তাকে কিছু একটা বুঝিয়ে সুজিয়ে ম্যানেজ করলেও শর্ত হিসেবে আজ তাকে কেনীথের সাথে দেখা করাতে হবে এটাই ফাইনাল হয়। আনায়া আর ইমনও আর তর্ক না করে ওর শর্তে রাজী হয়ে যায়। বাকিটা কি হবে তা ইনায়া নিজেই ওখানে গেলে বুঝে যাবে।কেনীথ ইনায়ার সাথে তো দেখা করতে চাইবে না এটা তো সিওর, বাকি না হয় ওকে ওখান থেকে একটু ঘুরিয়ে আনলে আর তেমন কি সমস্যা হবে।
__________________
আনায়া, ইনায়া আর ইমন ;আজ তিনজনে মিলে একসাথে কেনীথের অফিসে এসেছে। আনায়া আর ইনায়ার সাথে ইমনও ভাবলো আজ একটু দেখা করে যাবে পুরোনো কলিগদের সাথে। সেই উদ্দেশ্যেই দুজনকে সাথে নিয়ে আসা।
ইনায়াকে যদি কেনীথের সাথে দেখা করানো যায় তবে তো ভালোই আর তা না হলে কিছুই করার নেই। ইনায়া কেনীথের জন্য যতই পাগলামো করুক না কেনো, ওর ইচ্ছে পূরণ না হলে নিশ্চয় কোনো সিনক্রিয়েট করবে না।এমন মেয়ে অন্তত ইনায়া হয়।
ইনায়ার পরণে সাদা রংএর এক সিম্পল গাউন। বড় বড় চুল গুলো ফ্রান্স বিনুনি করা৷ এমনিতে ইনায়া কখনো প্রসাধনী জিনিস ইউজ করে না কারণ তার ওসব মেকআপ করতে কখনোই ভালোও লাগে আবার তার এসবের প্রয়োজনও পড়ে না। ন্যাচরাল লুকেই অসম্ভব সুন্দর লাগে ওকে।
অন্যদিকে আনায়াও সিম্পল সাদা রং এর একটা লং কুর্তি আর সাধারণ ভাবেই পরিপাটি হয়ে এসেছে। চোখে মুখে কিছুটা ক্লান্তির ছাপের পাশাপাশি কিছুটা টেনশনও হচ্ছে।
ইমন এসেই পুরোনো কলিগদের সাথে গল্প জুরে দিয়েছে। এজন্য আনায়া শুধু ইনায়াকে নিয়েই উপরের ফ্লোরে চলে গেলো কেনীথের সাথে আনায়াকে দেখা করাতে।
আশেপাশে বিকেলের সময় ফুরিয়ে সন্ধ্যা হতে চললো। আনায়া প্রথমে ইনায়াকে কেনীথের খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারলো কেনীথ এখনোও আসনি৷ সঙ্গে আবার এটাও বললো যে উপরের ফ্লোরে কি কোনো একটা কাজ রয়েছে যা আনায়া এসেই যেন সম্পন্ন করে ফেলে। এজন্য সে ইনায়াকে নিয়ে নিজের কেবিনে চলে গেলো।
–“ইরা! আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবো। আমি না আসা পর্যন্ত কিন্তু, তুই এখানেই থাকবি।”
ইনায়াও বোনের কথায় খুশি মনে রাজি হয়ে গেলো।এদিকে আনায়াও দেরী না করে নিজের কাজে চলে গেলো। কিন্তু তার মাথার মধ্যে এখনও একটাই চিন্তা ঘুরছে যে সে কেনীথকে কি বলবে। এটা বলবে যে, ওর বোন তার সাথে দেখা করতে এসেছে। এটা বললে কেনীথ রাজি হবে? নাকি….. এই কেনীথ আবারও রেগে উল্টো পাল্টা রিয়েক্ট না করে বসে।
আনায়া এসব বিরবির করতে করতেই উপরে চলে গেলো। আর এদিকে বেচারি ইনায়া একা একা রুমের মধ্যে থেকে বোর হতে লাগলো। মন তো তার ছটফট করছে কেনীথ না আসা পর্যন্ত একবার পুরো অফিসটা ঘুরে দেখার কিন্তু রুম থেকে বের হলেই তো তার বোন রেগে আগুন পাখি হয়ে যাবে।
____________
আনায়া নিজের কাজ শেষ করে তার কেবিনে আসতেই চমকে গেলো। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো ইনায়া রুমের কোথাও নেই। আনায়া মাথা হাত দিয়ে ভাবতে লাগলো এই মেয়ে আবার কোথায় গিয়েছে। আসার সময়ে তো আশেপাশে কোথাও নজরে পড়লো না। তবে কি নিচে ইমন ভাইয়ের কাছে চলে গিয়েছে?
এছাড়া আবার কোথায় যাবে। আচ্ছা যদি বেশি ছটফট করতে করতে আশেপাশে কোনো গোলমাল করতে থাকে তবে…..আয়ানা তুই তো শেষ।
মনে মনে এসব ভেবেই ত্বরিত রুম থেকে বেড়িয়ে আর ইনায়ার খোঁজ করতে যাওয়ার সুযোগ হলো না। তার আগেই একজন এসে তাকে জানিয়ে গেলো, কেনীথ নাকি চলে এসেছে। আর এসেই তাকে ডেকেছে।
আনায়া একটি ছোট দীর্ঘ শ্বাস ফেলে কেনীথের কেবিনের দিকে এগোতে লাগলো অথচ তার মন ছটফট করছে ইনায়ার খোঁজ নিতে। একবার ইমনকে ফোনে জানালে ভালো হতো। কিন্তু এটা ভাবার আগেই খেয়াল করলো সে কেনীথের রুমের সামনে চলে এসেছে।
বাধ্য হয়েই নিজের মনকে কিছুক্ষণ শান্ত করে সিন্ধান্ত নিলো কেনীথের সাথে দেখাটা করেই ইনায়াকে খুঁজতে যাবে। আর এটাও ভেবে নিলো যে ইনায়াকে এবার পেলে সোজা ইমনের সাথে বাড়ি পাঠিয়ে দেবে আর মন,মুখ, মস্তিষ্ক থেকে এই কেনীথের নামটাই গায়েব করে দেবে। ওর সাথে দেখা করানোটা তো এখন বহু দূরের কথা। দুমিনিট কোনো কিছু তে ধৈর্য নেই মেয়েটার, দিন দিন যেন উচ্ছন্নে যাচ্ছে।
দরজা যেহেতু খোলাই ছিলো তাই আনায়া সামান্য আওয়াজ করেই দরজা খুলে আওয়াজ করলো,
—“স্যার, আসবো? ”
—“ইয়েস!”
আনায়া উত্তর পাওয়া মাত্রই সম্পূর্ণ দরজা খুলে আবার পুরনোয় চাপিয়ে দিয়ে সামনে তাকাতেই তার চোখ ছানাবড়া। আদোও সে যা দেখছে এসব কি সত্যি নাকি তার ভ্রম। আনায়া চোখে মুখে অবাধ বিস্মিয়।
কেনীথের ডেস্কের একপাশে এক পা ফ্লোরে ভর দিয়ে উল্টো করে বসে রইছে আর কেনীথের পাশেই তার চেয়ারে বসে থেকে আনায়ার গুনধর বোন মনের সুখে চকলেট খাচ্ছে।আবার টেবিলের উপরও কয়েক রকমের চকলেট সীমিত পরিষরে ছড়িয়ে রইছে।
ইনায়াকে দেখে প্রচন্ড হাসিখুশি মনে হচ্ছে। হয়তো কেনীথের সাথে কোনো কিছু নিয়ে কথা বলছিলো। তবে আনায়া ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখেমুখে প্রফুল্লতা নিয়ে বললো,
—“আপু, তুমি এসেছো? ”
ইনায়ার কথায় কেনীথ পিছনের দিকে তাকিয়ে নির্বিকারে একবার আনায়াকে দেখে আবারও সামনের দিকে ইনায়ার দিকে তাকালো তবে কোনো কিছু বললো না। এদিকে আনায়া এখনো নিজের বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে পারেনি। কি বলবে তাও বুঝে উঠতে পারছে না তবুও নিজেকে তটস্থ করে নরম সুরে বললো,
—” ইনায়া তুই এখানে…. আমাকে না জানিয়ে…কখন….?
—“আমি যাস্ট রুম থেকে বেড়িয়ে আশপাশটা ঘোরাঘুরি করছিলাম হঠাৎ ভিকে কে দেখে ডাক দিলাম তো পরে ভিকের সাথেই এখানে চলে এসেছি। প্লিজ আমাকে বকবে না।”
ইনায়া ওভাবেই বসে বসে চকলেট খেতে খেতে কথাগুলো বললো। ওর কথাবার্তা দেখেও আনায়া কিছুটা অবাক হলো। অন্যান্য সময় হলে ইনায়া নিশ্চিত তার কাছে এসে সরি বলে মানানোর চেষ্টা করতো কিন্তু এখন তো পুরো ভিন্ন কিছু দেখছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে ওর মনে কোনো ভয়ডর নেই আর থাকলেও সেটা কেনীথের সান্নিধ্যে এসে উড়ে চলে গিয়েছে। মনে হচ্ছে যেনো কেনীথই ওর প্রটেক্ট করার জন্য বসে রইছে।
আনায়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইনায়ার পাশেই ডেস্কে বসে থাকা কেনীথ ইনায়ার উদ্দেশ্যে বললো,
—“তোমার বোন তোমাকে বকাও দেও! ”
এটা শুনে ইনায়া যেন কিঞ্চিৎ আহ্লাদী সুরে বললো,
—“শুধু কি আমাকে বকে! ইউ নো হোয়াট ভিকে, আমার সাথে সাথে রাতদিন তোমাকেও বকতে থাকে। ”
আনায়ার যেন এটা শুনতেই মাথা গরম হয়ে গেলো। এই মেয়ে কি নিজের মায়ের পেটের বোনকে সিংহের মুখে ফেলতে চাচ্ছে। অন্যদিকে কেনীথ আনায়ার দিকে তাকালো না বরং কিঞ্চিৎ বাঁকা মুচকি হেসে বললো,
—“আমাকে কি কি বলে বকে? ”
ইনায়া যেন নিজের কথার ঝুলি নিয়ে বসার প্রস্তুতি নিলো। উদ্বিগ্ন হয়ে বলতে লাগলো,
—“কি কি বলে বকে না সেটা বলো! সবসময় বলতে থাকে তুমি নাকি আমাদের মতো ছোটখাটো কচি কচি ছেলেমেয়ের মাথা খাচ্ছো। দিনদিন মাথায় ভেতর তোমার নেশা ঢুকিয়ে দিচ্ছো।তুমি নাকি নিজেই একটা তার ছেঁড়া পাগল সঙ্গে আমাদেরও নাকি তার ছেঁড়া পাগল বানিয়ে দিচ্ছো। শুধু তাই নয়, একটি সিক্রেট বলি। আপু কিন্তু তোমাকে ইদানীং তার ছেঁড়া বড় ভাই বলে থাকে। আমি কয়েকদিন এটা বলতে শুনেছি। ”
ইনায়ার কথার মাঝে কেনীথ কয়েকবার পিছনে ফিরে আনায়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসেছে। আর এবার তার ছেঁড়া বড় ভাইয়ের কথা শুনে শেষ বারের মতো আনায়ার দিকে ফিরে ভ্রু উঁচিয়ে বাঁকা হেসেছে।
আনায়া বেচারীর যেনো এবার “ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি ” এর মতো অবস্থা। পারলে গড়াগড়ি করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে ওর। জানে না বাড়িতে গিয়ে ইনায়ার কি অবস্থা করবে কিন্তু আপাতত নিজের অপ্রস্তুত আর অসহায় চেহারাটাকে স্বাভাবিক করতে হবে। তাই ইনায়াকে বললো,
—“বোন আমার, দেখো সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। ইমন ভাই ওয়েট করছে আরো কি দেরী করার ইচ্ছে আছে তোমার। ”
ইনায়ার যেন এবার বোনের কথার ধরন আর চেহারার ভঙ্গি দেখে কিছুটা ধ্যান ভাঙ্গলো। কি বলতে গিয়ে কতদূর বলে ফেলেছে। কে জানে তার এই বোন আজ তার কি অবস্থা করবে। তবুও যেন কেনীথের নেশা ছাড়ছে না। এতোদিন পর নিজের সপ্ন পূরণ হয়েছে আর এই উল্লাসে সে নিজেকেই ভুলে গিয়েছে। সঙ্গে আনায়া আসার আগে আরো যে কি কি কেনীথকে বলেছে সেসব জেনে তো তার বোন তার আ*গুনে ঝ*লসে দেবে।
আনায়া নিজেকে তটস্থ করে কেনীথের উদ্দেশ্য বললো,
—“আচ্ছা ভিকে আমি বরং চলে যাই এখন।পড়ে কখনো সময় সুযোগ করে আসবো।”
এই বলেই ইনায়া চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে অগ্রসর হতে নিলেই আবারও পাশে ফিরে কেনীথের দিকে তাকিয়ে বললো,
—“ভিকে! লাস্ট একটা রিকুয়েষ্ট রাখবে প্লিজ। ”
কেনীথ ওর দিকে তাকিয়ে বললো,
—“হুম! ”
—“একটা অটোগ্রাফ দিবে। স্মৃতি হিসেবে রেখে দেবো। ”
কেনীথ মুচকি হাসলো, যার অর্থ বুঝে নিয়ে ইনায়া এখন কাগজ টাইপে কিছু খুজতে লাগলো। গাধীর মতো আসার সময় কিছুই আনেনি। এখন কেনীথ অটোগ্রাফটা দেবে কিসে।
ইনায়া উপায় না পেয়ে কেনীথের দিকে ইনোসেন্ট চেহারা নিয়ে বললো,
—“গাধীর মতো কিছুি আনিনি, ইট’স ওকে এবার না হয় থাক। পড়ে কখনো সময় পেলে নিয়ে আসবো।”
ইনায়ার ইনোসেন্ট চেহারার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর কেনীথ ইনায়াকে সামনের দিকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—“ওই সেল্ফটায় রেড-গোল্ডেন কালারের যে ছোট গিটার এওয়ার্ডটা রয়েছে, ওটা নিয়ে এসো।”
ইনায়া ওর কথা শুনে ত্বরিত কেনীথের ইশারা করা জিনিসটাকে নিয়ে এলো। গিটারটা অন্যকোনো ধাতুর তবে নিচের স্টেজ অংশটুকু গাঢ় কালচে লাল রং-এর কাঠের। সঙ্গে সামনে সোনালি স্টিল প্লেটের উপর কেনীথরে নাম লেখা। কেনীথ ওটা হাতে নিয়ে উল্টিয়ে ডেস্কে থাকা একটা পেন দিয়ে নিচের অফ হোয়াইট অংশটায় আবারও নিজের নামের সাইন একে দিলো। এরপর সেটা ইনায়ার দিকে এগিয়ে দিতেই ইনায়া বিস্মিত হয়ে কেনীথের দিকে তাকালো আর বললো,
—“এটা আমার জন্য? ”
—“হুম! পছন্দ হয়েছে? ”
ইনায়া প্রফুল্ল চিত্তে বললো,
—“ভিকে! ইউ আর দ্য বেস্ট। আপু আমাকে বলেছিলো তুমি নাকি অনেক রা*গী, ভ*য়ংকর আমার সাথে নাকি তুমি কখনো দেখাই করবে না।কতশত ভয় দেখালো অথচ তুমি…….. তুমি অনেক ভালো। থাংক ইউ সো মাচ। ”
কেনীথ নির্বিকারে বাঁকা হেসে বললো,
—“ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম। বাট.. মাঝেমধ্যে বড়দের কথা বিশ্বাস করে নিতে হয়। চোখে যা দেখা যায় তা সবসময় সত্যি হয় না। ”
ইনায়া ওর কথায় কি বুঝলো জানা নেই তবে সে খিলখিল করে হেসে ফেললো সঙ্গে কেনীথের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আনায়ার কাছে গিয়ে বললো,
—“চল আপু, যাওয়া যাক। ”
এদিকে আনায়া তো পুরো তব্দা খেয়ে বসে আছে, কেনীথের এতো ভালো রুপ দেখে। সে নিজের মন প্রাণ, আত্না কোনোটাকেই বিশ্বাস করতে পারছে না যে এটাই সেই রাগী গ*ম্ভীর কে*নীথ কিনা। একটা মানুষ এতোটা পরিবর্তন কিভাবে। সঙ্গে আবার ইনায়ার জন্য চকলেট সাথে নিজের এওয়ার্ডটাও দিয়ে দিলো। কিভাবে সম্ভব, এই লোকটি এতো রহস্যময় কেনো। এতোকিছুর মাঝে আনায়াও কেনীথের সব কথাও ঠিক ভাবে খেয়াল করেনি। করলে হয়তো তার সন্দিহান মনে হুট করে নতুন সন্দেহ ঢুকে যেতো।
আনায়া নিজের বোনের ডাক শুনে নিজেকে তটস্থ করলো। আপাতত নিজেকে স্বাভাবিক করাটা জরুরি, এই ইনায়াকে না হয় পরেও ঠিক করা যাবে।তাই কিছুটা অপ্রস্তুত সুরেই বললো,
—“হুম,চল। ”
আনায়া আর ইনায়া দুজনেই চলে যেতে নিলে পেছনে ঘুরে বসে থাকা কেনীথ ওমন অবস্থাতেই বললো,
—“স্টপ! ”
কেনীথের কন্ঠস্বর শুনে ইনায়া আনায়া দুজনে কেনীথের দিকে তাকালো। কেনীথ পেছনে ঘুরে তাকিয়ে বললো,
—“ইনায়া! তুমি স্ট্রং গার্ল, রাইট? ”
ইনায়া মাথা ঝাকিয়ে বললো,
—“হুম! ”
—“তবে নিচ পর্যন্ত নিশ্চয় একাই যেতে পারবে, যদি কোনো প্রবলেম না থাকে। তোমার বোনের কাজ এখনো শেষ হয়নি। সো……..
ইনায়া হয়তো বাকিটা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বললো,
—“ঠিক আছে, আমি একাই যাচ্ছি। আর আপু তুমি মন দিয়ে কাজ করো। আমি তাহলে যাই, বাই বাই!”
ইনায়া তো নাচতে নাচতে চলে গেলো এদিকে আনায়া পড়লো মাইনকার চিপায়। হঠাৎ কেনীথ কেনো তাকে এখানে থাকতে বললো। কিছু আবার করবে না তো? তার সম্পর্কে যে আনায়া এতোকিছু বলে তা শুনে তো এবার কিছু করাটাই স্বাভাবিক। নিশ্চয় এতোক্ষণ ইনায়াকে ভুজংভাজাং বুঝিয়ে সব শুনেছে আর ভালোমানুষীর রুপ ধরে ছিলো। এবার নিশ্চয় নিজের আসল চেহারা দেখাবে।
কেনীথ উল্টোদিকে ঘুরে বসে আর আনায়ার এদিকে টেনশনে অবস্থা নাজেহাল। এখন কি আদোও তার কিছু করার আছে। ইচ্ছে করছে দুনিয়া থেকেই চলে যেতে। শুধু শুধু এইসব আ*তংকের দুনিয়ায় ফেঁসে গিয়েছে।
তবুও আনায়া নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,
—“স্যার কিছু করতে হবে। ”
কেনীথ আনায়া দিকে নির্বিকারে তাকিয়ে বললো,
—“হুম! ”
এরপর সোজা ডেস্ক থেকে নেমে আনায়া দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। আনায়া কেনীথের চেহারা ভঙ্গি দেখে কিছুই বুঝতে পারছে না।একদম স্বাভাবিক, একটু আগে যেমন বাঁকা হাসি হাসছিলো তেমন কিছুই নেই। উল্টো পাল্টা চিন্তায় একবার ঢোক গিললো। কিন্তু কিছু বললো না।এদিকে ওর একদম সামনে এসে দাঁড়িয়ে পকেটে হাত গুঁজে আনায়ার দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকালো। হয়তো সেই নজর অনেক কিছুই বলছিলো তবে আনায়ার সেসব বোঝার সামর্থ্য হলো না।
আনায়া ভেবেছিলো কেনীথ কিছু না করলেও কঢ়া কথা আজ শুনিয়ে ছাড়বে কিন্তু তেমন কিছুই হলো না । উল্টো আনায়ার দিকে তীক্ষ্ণ নজরে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর শুধু বললো,
—“কিছু না। যাস্ট লিভ নাউ।
কেনীথ কথাটা বলেই আবারও উল্টো ফিরে ডেস্কের দিকে চলে গেলেও আনায়া বুঝলো না হঠাৎ এটা কি হলো। তাকে তো কিছুই বললো না। কিন্তু এখন যেহেতু চলে যেতেই বলেছে তবে এখানে থাকার কোনো মানেই নেই। আপাতত এখান থেকে সরতে পারলেই হলো।
___________________
আজ কেনীথের জন্য এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটায় সে কিছুটা বিরক্ত হলো। তবে সহজে উল্টো পাল্টা কাজ করার লোক তো সে নয়। রুহির কেসটাকে নিয়ে ইনভেস্টিগেটেশন দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত পুলিশ অফিসার যেনো আদা জল খেয়ে এই কাজে নেমেছে। যে করেই হোক রুহির সন্ধান তার পাওয়াই চাই।
তাই তো আজ রাত নয়টা নাগাদ হঠাৎ সে আর তার একজন এসিস্ট্যান্ট নিয়ে ভিকের অফিসে হাজির। হুটহাট এমন ঘটনা ভিকের অফিসে খুব দূর্লভ বিষয়। কেনীথের সাথে দেখা করতে হলে আগে তার পারমিশন নিতে হয় এছাড়া কেনীথ এসব বিষয়ে কখনো নিজেকে জড়ায় না। বেশি প্রয়োজন হলে এইসব কাজ তার পি.এ. এর দায়িত্বে থাকে।
কিন্তু আজ কিছুটা ভিন্ন ঘটনা ঘটেছে। হঠাৎ গার্ড কেনীথের ল্যান্ড লাইনে ফোন করে জানালো দুজন পুলিশ এসেছে সিভিল ড্রেসে তার নিজেদের আইডি কার্ড দেখিয়েছে। কিন্তু গার্ড তাদের ভেতরে যাওয়ার পারমিশন না দিলেও তারা কেনীথের সাথে দেখা না করে যেতে রাজি নয়।
কেনীথ বিষয়টি নিয়ে ঘাবড়ালো না বরং বিরক্তিতে কিছুটা কপাল কুঁচকালো। সঙ্গে গার্ডকেও বললো তাদের যেন ভেতরে আসতে দেওয়া হয়।
যেহেতু অফিসের সকল এমপ্লয়িদের ফোন নম্বর কেনীথের কাছে রয়েছে তাই কেনীথ গার্ডের ফোন রেখেই আনায়াকে ফোন করলো। এই মূহুর্তে ওকে রুহির কেবিন থেকে কিছু ফাইল আনার জন্য সঙ্গে কেনীথের সঙ্গে থাকতেও হবে তাই। কিন্তু কয়েকবার ফোন দিয়েও যখন আনায়ার ফোন ব্যস্থ দেখালো তখনই হঠাৎ কপাল কুঁচকে গিয়ে মেজাজটা কিছুটা বিগড়ে গেলো। এমন কি কথা বলছে যে, তার ফোনটাই ধরতে পারছে না। চোখে দেখে না নাকি!
কেনীথের চোখমুখ গম্ভীর হলো। সে রুম থেকে বেরিয়ে আনায়ার রুমের দিকে অগ্রসর হতে নিলেই দুজন লোকের কন্ঠস্বর শুনে আর সামনে এগোতে পারলো না। কেনীথ রুম থেকে বেরিয়ে যেই না দরজাটা অতিক্রম করেছে অমনি পাশ থেকে এক মধ্যে বয়স্ক লোকের কন্ঠস্বর শোনা গেলো,
—“কি মিঃ ভিকে! আমাদের আসতে বলে এখন নিজেই পালিয়ে যাচ্ছেন। ”
কেনীথ ঘাড় ঘুরিয়ে অবাক দৃষ্টিতে পাশে তাকালো। এরপর সম্পূর্ণ ভাবে সেই দুজন লোকের দিকে ঘুরে ঘাড় কিঞ্চিৎ কাত করে থাকা অবস্থাতেই বাঁকা হেসে বললো,
—“আমার অফিস থেকে আমিই পালাবো? পুলিশ ইন্সপেক্টর আহসান, আ’ম রাইট৷ ”
লোকটি কিঞ্চিৎ হেসে বললো,
—“আপনার মতো এতো বড় মাপের মানুষ আমার নাম জানে এটাই তো অনেক। কিন্তু আমার প্রফেশন তো এতোটুকুতেই খুশি নয়। তাহলে চলুন, যে কাজে এসেছি তা আগে সম্পূর্ণ করি। ”
লোকটির তাচ্ছিল্যের সাথে বলা কথা গুলো শুনে কেনীথ মুচকি হেসে বললো,
—” এই প্রফেশনে ধৈর্যটা খুব ম্যাটার করে, এতো অধৈর্য হলে চলবে? ”
এই বলেই কেনীথ আবারও নিজের রুমে দিকে অগ্রসর হলো। তবে যেতে যেতে একবার একহাতে আবারও আনায়াকে কল করলো কিন্তু লাভ হলো না।
________________
—“আপনার তো দিনের বেলায় দেখাই মেলে না। এজন্য শেষমেশ রাতে আসতে হলো। ”
চেয়ারে বসতেই সামনে পায়ের উপর পা তুলে নির্বিকারে বসে রুবিক্স কিউব ঘোরাতে থাকা কেনীথের উদ্দেশ্য কথাগুলো পুলিশ অফিসার আহসান বললো। তবে তার কথার উত্তরে কেনীথ শুধু মুচকি হাসলো। তা দেখে লোকটি কিছুক্ষণ নিরব থাকার পর চোখমুখ গম্ভীর করে বললো,
—“আপানার অফিসেরই এমপ্লয়ি রুহি! তাকে চেনেন তো? ”
—“না চেনার কি রয়েছে! ”
—“যাক ভালো কথা। শুনে খুশি হলাম। তা সে যে নিখোঁজ এটাও নিশ্চয় জানেন। ”
—“হুম! ”
কেনীথের আনমনে রুবিক্স কিউব ঘোরানো দেখে লোকটির বিরক্ত লাগলো। কিন্তু বাধ্য হয়েই এসব সহ্য করলেও এবার কিছুটা কঢ়া কন্ঠে বললো,
—“তার খোঁজ খবর নেওয়ার কোনো চেষ্টা করেছিলেন? না মানে আপনার অফিসেরই একজন আপনার এমপ্লয়ি এভাবে নিখোঁজ তার খোঁজ খবর…….
আহসানের কথা শেষ হওয়ার আগেই কেনীথ অকপটে বললো,
—“পুলিশ অফিসারদের কমন সেন্স যে এমন তা জানা ছিলো না। সাধারণ এক এমপ্লয়ির খোঁজ নিতে শেষে আমার কাছে কাছে?”
কেনীথের তাচ্ছিল্য যেন লোকটির গায়ে লাগলো না বরং কেনীথের এতো এ্যাটিউট তার সহ্য হলো না। তবুও কিছু ভেবে একটা মুচকি হেসে বললো,
—“কি আর করি বলুন, আপনাদের মতো বড় মাপের মানুষদের মতো তো আর বড় মাপের ব্রেইন নেই। আমরা ছোটখাটো ব্রেইন নিয়ে চলা মানুষজন। তাই আপনার কাছে এসেছিলাম, যদি আপনার সান্নিধ্যে এসে আমাদের ছোট ব্রেইনটা যদি আরেকটু বড় হয়ে যায়। ”
আহসানের মতো কেনীথরও এই লোকটিকে বিরক্ত লাগছে। সাধারণ অফিসারের চেয়ে একটু বেশিই ইঁচড়েপাকা টাইপের। কিন্তু এইসব বিষয়ে রিয়েক্ট করার লোক কেনীথ তো নয়। খুব ঠান্ডা মাথাতেই এসব ছোটখাটো বিষয়কে সামলে নিতে হয়।
কেনীথকে কিছু বলছে না বিধায় লোকটি বললো,
—“রুহিকে লাস্ট দেখতে পাওয়া যায় শহরের নামকরা সেই লাভলী নাইট ক্লাবে। রুহি প্রায়ই এসব জায়গায় যাওয়া আসা করতো। অন্যান্য দিনের চেয়ে সেদিন রুহি অনেকটা আগেই নাইট ক্লাব থেকে বেড়িয়ে পড়ে। তবে সে সেদিন একা ছিলো না। তার সাথে এক বড়সড় দেহের গড়নের কালো ড্রেস পড়া ছদ্মবেশী লোকও ছিলো। দেখতে নাকি অনেকটা আপনারই মতো। আমি নিজে এসব বলছি না, সেখানে আধমাতাল হয়ে থাকা লোকের কথা অনুযায়ী বানানো স্কেচ থেকে বলছি। শুধু একটা স্কেচ নয় কয়েকটা স্কেচ থেকে একই রকম ছবি পেয়েছি।”
আহসান এবার হেসে কথাগুলো বলা শেষ করে কেনীথের সামনে ডেস্কের উপর কিছু স্কেচ করা আঁকা ছবির কাগজ রাখলো। ছবিতে একটি একটি মেয়ে আর কেনীথের মতে বলিষ্ঠ দেহের একজন লোককে দেখা যাচ্ছে। যদিও রুহির চেহারা স্পষ্ট হলেও তার পাশে থাকা লোকটিকে সম্পূর্ণ মাক্স, ক্যাপ দিয়ে ঢাকা। শারীরিক গঠন ব্যতীত চেহারা বোঝার কোনো উপায় নেই। কেনীথ আবারও হাসলো সঙ্গে কেনীথ এবার নিজের রুবিক্স কিউবটা ঘোড়ানো বাদ দিয়ে আহসানের দিকে তাকালো। এবং মুচকি হেসে বলতে লাগলো,
—“যেখানে রকস্টার ভিকের এক কনসার্টে যেতে পারাটাই কারো কাছে ভাগ্যের বিষয় সেখানে এই ভিকেই কিনা শহরের ওই লো ক্লাস নাইট ক্লাবে যাবে, রিডিকিউলাস! ”
কেনীথ এই ইগো, এ্যাটিটিউট বরাবরের মতোই লোকটির পছন্দ হলো না।তবুও মুচকি হেসে বললো,
—“এটা আপনি না হলে তো অন্য কেউ হবে। ভালো করে দেখুন তো কোনো ভাবে লোকটাকে চিনতে পারেন কিনা?”
কেনীথ কিঞ্চিৎ বাঁকা হেসে বললো,
—“ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলে সময় নষ্ট করাটা আমার পছন্দ নয়। আর যাস্ট ফাইভ মিনিট সময় দেবো বাকিটা….. ”
লোকটি চোখমুখ কঠিন করে বললো,
—” অফিসে থাকা, মিস রুহির সকল ডিটেইলস চাই।”
কেনীথ নির্বিকারে বললো,
—“আজ পসিবল নয়! ”
—“কেনো পসিবল নয় মিঃ ভিকে। ”
—“কারণ সেসব এখনো গোছানো নেই।”
লোকটি হেসে বললো,
—“নতুন করে কিছু এড করে গুছিয়ে দেবেন নাকি। যেন আমাদের চোখ এড়িয়ে অনেক কিছুই গায়েব হয়ে যায়। ”
লোকটির কথা শুনে কেনীথ শুধু মুচকি হাসতো তবে কিছুই বললো না।যে-কারণে আহসান এবার তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললো,
—“আমরা সকল ইনফরমেশন নিয়েই যাবো। আপনি আপনার লোকদেরকে বলুন যা যা গোছানোর তা যেন গুছিয়ে আমাদের সবকিছু দিয়ে দেয়। ”
কেনীথের চেহারায় এবার কিছুটা গাম্ভীর্যের ছাপ দেখা গেলো। কিছুটা তাচ্ছিল্য আর রাগী কন্ঠে এক ভ্রু উঁচিয়ে বললো,
—“এখানের আসার আগে আমার সম্পর্কে কিছুটা হলেও জেনে আসা উচিত ছিলো। এই সুযোগ সবাই পায় না, আর যে একবার পেয়ে যায় সে দ্বিতীয়বার সুযোগ পাবে কিনা তার কোনো গ্যারান্টি নেই। এন্ড দ্য মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট থিং, কেনীথের উপর জোড় খাটিয়ে কোনো লাভ নেই। উল্টো এই দুঃসাহসিকতা করলে তার পরিমাণ মোটেও ভালো হয় না। ”
___________________
আহসানের সাথে কেনীথের সংলাপ আর বেশি দূর এগোলো না। কেনীথের কথা মতো পাঁচ মিনিট সময় পেরিয়ে যেতেই আহসান আর তার এসিস্ট্যান্টকে কেনীথ খানিকটা তাচ্ছিল্যের সাথে চলে যেতে বলেছে। আর তারাও কেনীথের এতো ইগো, এ্যাটিটিউট সহ্য না করে গম্ভীর মুখে অফিস থেকে চলে যায়।
দুজনের চলে যেতেই কেনীথ সেই অতি পরিচিত নম্বরে ফোন করলো। মূহুর্তেই ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ আসার পূর্বেই কেনীথ বললো,
—“পুলিশ ইন্সপেক্টর আহসান হক। ”
নামটা শুনতেই ওপাশ থেকে কিছু সময় নিয়ে তড়িঘড়ি করে কেউ বললো,
—“বস! ইনি তো পোস্টিং হয়ে আপনার ওখানে নতুন এসেছে। আগে রাজশাহীতে ছিলো। কিছু করেছে নাকি? ”
কেনীথ সেসব কথায় পাত্তা না দিয়ে অকপটে বললো,
—“এর ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করে দেখ। যদি আগের কিংবা বর্তমানে কোনো ভেজাল করে থাকে তবে শেষ করে দে। দেশের মধ্যে এতো সুন্দর কীটদের থাকার প্রয়োজন নেই। আর যদি সত্যিই উত্তম পুরুষ হয়ে নিজের প্রফেশনের প্রতি দরদী হয়ে থাকে তবে শেষ করার প্রয়োজন নেই৷ শুধু মিঃ রেহানের মতো দুদিন পর একটা বড় এক্সিডেন্টে করিয়ে বছর খানেকের জন্য হসপিটালে থাকার ব্যবস্থা করে দে। ঠিক দুদিন পরই কিন্তু, এখনই করার কোনো প্রয়োজন নেই। তাহলে নতুন করে আবার সন্দেহের উৎপত্তি হবে।”
ওপর প্রান্তের লোকটা সামন্য ঢোক গিললো। মাঝেমধ্যে তার নিজেকে দোষারোপ করতে ইচ্ছে করে, কোন আক্কেলে যে এই কেনীথের সঙ্গ ধরেছিলো কে জানে। মৃ*ত্যুর আগ পর্যন্ত এখন এই সঙ্গ ছাড়তেও পারবে না। এই চিন্তা করলেই মৃ*ত্যু তার এমনিতেই নিশ্চিত করে ছাড়বে কেনীথ। কেনীথের কথা শেষে শুধু ছোট করে এইটুকুই বললো,
—“ওকে, বস। যেমনটা বলেছেন ঠিক তেমনটাই হবে। ”
_____________________
রাতের বেলায় অফিসের অনেকেই এখন বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। আর এদিকে নিজের কেবিনে বসে বসে আনায়া সেই কখন থেকে রেহানের সাথে কথা বলছে। কিছুক্ষণ আগে ভিডিও কলে কথা বলেছিলো আর এখন অডিও কলে। ফোন সম্পর্কে ধারনা যতটা কম তার চেয়ে বেশি রেহানের সাথে কথা বলাতে আসক্ত থাকায় কেনীথ যে তাকে কতবার ফোন দিয়েছে এতে তার হুসই নেই।
এদিকে কেনীথের মেজাজ মোটেও কমেনি। নিজের কেবিন থেকে বের হয়ে আশেপাশে তাকাতেই দেখলো অনেকেই বাড়ি চলে গিয়েছে। আশেপাশ থেকে নজর সরিয়ে কেনীথের নজর সরাসরি আনায়ার কেবিনে দিকে পড়লো। কেনীথ বড়সড় পা ফেলে সেখানে গিয়ে দেখলো দরজা চাপিয়ে রাখা আর ভেতর থেকে হেসে কথা বলার আওয়াজ আসছে।
কেনীথ মূহুর্তেই কপালটা কুঁচকে ফেললো। কিন্তু সে সরাসরি ভেতরে প্রবেশ না করে দুবার দরজায় নক করলো। কিন্তু কোনো কাজ হলো না, উল্টো ভেতর থেকে আনায়ার হেসে হেসে কথা বলার আওয়াজ গুলো শুনতে পেয়ে মেজার আরো বিগড়ে গেলো। কেনীথ শেষ বারের মতো আরেকবার দরজায় নক করলো কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হলো।
বাধ্য হয়েই তৎক্ষনাৎ দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করতেই তার নজর পড়লো দূরে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে হাসতে হাসতে কথা বলতে থাকা আনায়ার দিকে।
আনায়া জানালার দিকে ফিরে থাকায় ও আর কেনীথকে প্রথমেই দেখতে পেলো না। এদিকে কেনীথের চোখমুখ লাল হয়ে গিয়েছে। তার আর বুঝতে বাকি নেই যে আনায়া রেহানের সাথেই এতোক্ষণ ধরে কথা বলছে। আর এইজন্য দিন দুনিয়া ভুলে এখানে পড়ে রইছে।
কেনীথ দরজাটা সরোজে লাগিয়ে লক করে দিতেই আনায়া শব্দ শুনে চমকে পেছনে ফিরে তাকালো। কেনীথের এমন রুপ দেখে আনায়া হঠাৎ অনেকটাই চমকে উঠলো। ত্বরিত ফোনটা কানে ধরে নিচু স্বরে বললো,
—“রেহান আমি একটু পড়ে ফোন করছি। ”
এই বলেই কল কেটে দিয়ে সোজা কেনীথের দিকে তড়িঘড়ি করে এগিয়ে এসে অপ্রস্তুত সুরে বললো,
—“স্যার,কিছু হয়েছে আপনাকে এমন……..
কেনীথ আনায়ার দিকে তীক্ষ্ণ নজর ফেলে বললো,
—“যাস্ট চেক ইউর ফোন! ”
আনায়ার মস্তিষ্কে কথাটার অর্থ বুঝতেই অপ্রস্তুত হয়ে তড়িঘড়ি করে নিজের ফোন চেক করতে লাগলো। সে কি চেক করবে প্রথমে না বুঝতে পারলেও হুট করে কল লিস্টটা চেক করতেই গলা শুকিয়ে গেলো। এতোবার কেনীথ তাকে ফোন করেছো অথচ আনায়া একটুও টের পাইনি। এমনি এমনি তো কেনীথ তাকে ফোন করবে না। নিশ্চিত কোনো ঘটনা ঘটে গেছে। কিন্তু এখন সে কি করবে।
আনায়া ঠোঁট ভিজিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কেনীথ বললো,
—“এটা কাজ করার জায়গা, কারণ এটা অফিস। কোনো কমিউনিটি সেন্টার নয়৷ ”
আনায়া কেনীথের কথায় ঢোক গিললো অন্যদিকে কেনীথ তীক্ষ্ণ সুরে আবারও বললো,
—“আমি এখানে কাউকে বসে বসে থাকার জন্য নিজের পি.এ. বানাইনি। অফিসের এমপ্লয়ির নিখোঁজ হওয়ার জন্য পুলিশকে জবাবদিহি করার কাজটা আমার নয়। এসব কিছু হ্যান্ডেল করার দায়িত্বটা ভিকের পিএকে করতে হয় আর যদি সেটা না পারে তো এখানে তার কাজের কোনো প্রয়োজন নেই। ”
কেনীথ ডেস্কের পাশে দাড়িয়ে আর এটা বলতে না বলতেই কেনীথ ডেস্কে থাকা গ্লাসের পেন হোল্ডারটা হাতে নিয়ে কাঁচের ডেস্কেটায় সজোর আঘাত করতেই সেটা তো ভাঙ্গলো সঙ্গে ততক্ষণে কিছু কাঁচের টুকরো ঢুকে গিয়ে হাতের তালুর বিভিন্ন অংশ কেটে গেলো।
হঠাৎ এমন কিছু যে কেনীথ করবে তা আনায়া বিন্দুমাত্রও বুঝতে পারেনি। সে তো এটাও বুঝতে পারছে না কেনীথ আসলে কিসের কথা বলছে। হঠাৎ এখানে পুলিশ আসলো কখন। যদিও কেনীথের রাগ আনায়ার পি.এ. হওয়া সত্বেও ঠিকমতো কাজ করেনি এই কারণে নয়।বরং অন্যকিছুও রয়েছে।
কেনীথের হাত শক্ত করে মুঠো করে রাখায় র*ক্ত যেন আরো চুয়ে চুয়ে গ্লাসের টেবিলটার উপর পড়ছে। আনায়া হঠাৎ এমন কিছু দেখে বিচলিত হলো। এমনিতেও তার হালকা পাতলা হিমোফোবিয়া রয়েছে। হুট করে একটু বেশি র*ক্ত দেখে ফেললে মস্তিষ্ক নাড়াচাড়া দিয়ে ওঠে। যদিও বিষয়টি খুব গুরুতর নয়, আনায়া সবসময় এসব বিষয়কে ম্যানেজ করে নেয়। তাই খুব একটা সমস্যা না হলেও একনাগাড়ে র*ক্তের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলে তার গা গুলাতে শুরু করে।
আনায়া কেনীথের ওমন অবস্থা দেখে তড়িঘড়ি করে কেনীথের কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর হাত ধরতে চাইলে কেনীথ বাঁধা দিলো। যদিও আনায়াও কনফিউজড সে কি করবে। তবুও কিছুটা জোড় করে হাত ধরে পাশে থাকা টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু নিয়ে কেনীথের মুষ্টি করা হাত পরিষ্কার করতে লাগলো আর অনুনয় করে বলতে থাকলো,
—“স্যার সরি! আমি সত্যিই কিছু বুঝতে পারিনি। প্লিজ হাতটা এভাবে মুষ্টি বেঁধে রাখবেন না। তাহলে আরো বেশি ব্লাড বের হবে। কাঁচের টুকরো গুলোও পরিষ্কার করা হয়নি এভাবে মুষ্টি করে রাখলে তো ওসব ভেতরে ঢুকে যাবে।”
আনায়া বারবার কেনীথের দিকে আর ওর হাতের দিকে তাকিয়ে কাজ করছে আর তড়িঘড়ি কথা গুলো বলছে। যদিও কেনীথের নজর সম্পূর্ণ নিচের দিকে। না সে আনায়ার দিকে তাকাচ্ছে না নিজের হাতের দিকে। শুধু এক ধ্যানে আনায়ার কথা শুনে যাচ্ছে।
—“স্যার, আ’ম রিয়েলি সরি। আর কখনো এমন ভুল করবো না।আমি রেহানের সাথে আই মিন আমার ফিয়্যান্সের সাথে………
এবার আনায়ার সম্পূর্ণ কথাটুকু শেষ হলো না।তার আগেই কেনীথ এমন এক কাজ করে বসলো যে আনায় দুঃস্বপ্নেও কখনো কল্পনা করতে পারেনি। আনায়া মূহুর্তেই হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে পড়লো। মস্তিষ্কের সবকিছু যেন গড়মিল হয়ে গেলো।
আনায়া কেনীথের হাতের র*ক্ত পরিষ্কার করতে করতেই কথাগুলো বলছিলো হঠাৎ রেহান আর ফিয়্যান্সের কথা বলতেই যেন সেটা তার কাল হলো। কেনীথ ঠিক ঐ মূহুর্তেই নিজের বলিষ্ঠ বাম হাত দিয়ে আনায়ার পিঠে হাত দিয়ে আঁকড়ে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিলো। অন্যদিকে তার র*ক্ত মাখা ডান হাত দিয়ে আনায়া মাথার পেছনে চুলের অংশটুকু শক্ত করে হাত ছড়িয়ে আঁকড়ে ধরে ততক্ষণে নিজের কাছে নিয়ে এসে দুই ওষ্ঠকে মিলিত করলো।
ঘটনাটা এতো তাড়াতাড়ি ঘটলো যে আনায়া কিছুই বুঝতে পারলো না।কেনীথ যত সহজেই খুব দ্রুত আঁকড়ে ধরেছিলো ঠিক তত দ্রুতই আবারও এক পৈশা*চিক কাজ করে আনায়াকে ছেড়ে দিলো।
পৈশাচিক এই কারণে বলা হলো কেননা আনায়াকে কেনীথ ছেড়ে দিতেই সে বিস্মিত চোখে কেনীথকে দেখতে দেখতে তার হাত নিয়ে তার ঠোঁটে ছোয়ালেই কিছু তরল পদার্থ নিজের আঙ্গুলের ডগায় অনুভব করতে লাগলো। সঙ্গে ধীরে ধীরে মস্তিষ্ক ঠিক ভাবে সক্রিয় হতেই নিজের ওষ্ঠে ব্যাথা অনুভব করলো। তার যেন মনে হচ্ছে এই মূহুর্তেই এক নি*কৃষ্ট জা*নোয়ার তার ওষ্ঠকে ছিড়েখুঁড়ে দেয়ার পরিকল্পনায় ছিলো।
আনায়া কেনীথের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিজের কাঁপতে থাকা আঙ্গুলের ডগায় লেগে থাকা র*ক্ত গুলো একবার দেখে নিয়ে আবারও কেনীথের দিকে বিস্মিত নজরে তাকাতেই দেখতে পেলো কেনীথ নিজের কাঁধ খানিকটা বাঁকা করে বাঁকা হেসে বললো,
—“আশা করি বার্থডে গিফটটা পছন্দ হয়েছে। হ্যাপি বার্থডে মাই ব্লাড! ”
#চলবে