#একজোড়া_আগুন_পাখি
#পর্বঃ২২
#তুশকন্যা
“কি… চাই… আপনার? আপনি কেনো…
আনায়া থেমে বলা কথাগুলো সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই কেনীথ নিজের বলিষ্ঠ হাতে পেছিয়ে রাখা কোমড়ের বন্ধনকে আরেকটু দৃঢ় করতেই আনায়ার কথা বন্ধ হয়ে গেলো। অন্যদিকে লাগাদার কেনীথ গরম নিশ্বাস ঘাড়ে গলায় আঁচড়ে পড়ছে। আনায়ার যেখানে দম নেওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে সেখানে কেনীথ পুনোরায় দৃঢ় কন্ঠে বলতে লাগলো,
—“এককথা বারবার বলতে ভালো লাগে না। সঠিক সময় এলে তো…
এতোটুকু বলেই কেনীথ নিজের মুখটা আনায়ার গলার কাছে আরেকটু অগ্রসর করতে নিলে আনায়া ত্বরিত এক ঝাঁটকায় কেনীথের কাছ থেকে সরে আসতে চাইলে, কেনীথের শক্ত বন্ধন থেকে মুক্তি না পেলেও কোনোমতে কেনীথের দিকে ঘুরে ওর বুকে নিজের দুহাত দিয়ে জোড়ে ধাক্কা দিলো। এতে কেনীথ নিজ ইচ্ছেতেই খানিকটা সরেও এলো।
কিন্তু আনায়ার তো ইচ্ছে ছিলো কেনীথকে সোজা সুইমিংপুলের পানিতেই ফেলে দেবে। কেনীথের মতো লোকের সাথে এমন কিছুই করার কথা ভাবাটাও হাস্যকর। যথারীতি আনায়ার এই ইচ্ছে পূর্ন না হলেও রক্তগরম চোখে কেনীথের দিকে তাকিয়ে বললো,
—” আমার সাথে বাজে কিছু করার কথা চিন্তাও করবেন না। নয়তো আমি আপনাকে…
এবারও কেনীথ আনায়ার কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে আনায়ার দিকে এগিয়ে গেলো। মূহুর্তেই কেনীথের স্তব্ধ মুখের দিকে চেয়ে আনায়ার কথার সুরও থেমে গেলো। কিছুক্ষণ আগে হাতে ছুরিটা রইলেও এখন সেটাও নেই। কেনীথ অনেকক্ষণ আগেই তা নিজের কব্জায় নিয়ে নিয়েছে। সঙ্গে আনায়া কেনীথকে দূরে সরিয়ে দিলে কেনীথ তখনই ছুরিটা পেছনের সুইমিংপুলের মাঝে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে।
এখন আপাতত তার আত্নরক্ষার জন্য কিছুই নেই। অন্যদিকে কেনীথ আর এক মূহুর্তও দেরী না করে ত্বরিত নিজের বলিষ্ঠ একহাতে আনায়ার কোমড় পেঁচিয়ে নিজের কাছে টানলো। আনায়াও তাল সামলাতে না পেরে কেনীথের বুকে আঁচড়ে পড়তে নিলেও এবার নিজেকে কোনোমতে সামলে কিছুটা দূরত্ব তৈরি করলো। ঠিক তখনই আনায়ার রাগান্বিত চেহারায় কেনীথ বিস্ময় ছড়িয়ে দিতে খুব স্বাভাবিক কন্ঠেই বলতে লাগলো,
—“ইউ নো হোয়াট, তারা! সেইদিন কনসার্টে যখন প্রথমবার তুই আমাকে চড় মেরেছিলি। সেদিন প্রচন্ড বিস্মিত হয়ে ছিলাম আমি। পাব্লিকের ভি.কে. হওয়ার পর এই দুঃসাহসিকতা কেউ কল্পনা করতেও ভয়ে কাঁপতো। সেখানে আচমকা কেউ আমাকে চড় মেরেছে এটা সত্যিই…যাই হোক, ইচ্ছে তো ছিলো সেই দুঃসাহসিক ব্যাক্তিটাকে নিজ বিস্মিত চোখে দেখে ভিকের সবচেয়ে ভয়ং*কর হিস্ট্রি গড়ে ফেলার।
কিন্তু আমার দুভার্গ্য আর তোর সৌভাগ্যক্রমে এমন কিছুই হয়নি। ছেলে কিংবা মেয়ে হোক, তা আমার কাছে ফ্যাক্ট করে না। কিন্তু তোর সম্পূর্ণ আড়াল করা মুখের সেই উন্মুক্ত চোখজোড়া আমায় সেদিন বিস্মিত করছে। স্থগিত করে দিয়েছিলো নিজের সমস্ত রাগকে।”
এটুকু বলেই কেনীথ আনায়ার চোখের দিকে চেয়ে খানিকটা মুচকি হেসে পুনোরায় বলতে লাগলো,
—“তুই আবার এটা ভাবিস না যে, সিনেমাটিক স্টাইলে হিরোদের মতো তোর চোখ দেখে পাগল হয়ে দিন দুনিয়া সব ভুলে গিয়েছিলাম। সত্যি বলতে তখন এই চোখগুলো আমার খুব পরিচত লেগেছিলো। বহু বছর আগের সেই একজোড়া চোখের সাথে তোর এই চোখজোড়া খুব মিলে গিয়েছিলো। তবুও আমি নিশ্চিত ছিলাম না যে ওটা আদোও তুই কিনা?
আমি চাইলে অবশ্য তোর পুরো ডিটেইলস খুব সহজেই তখনই বের করে ফেলতাম কিন্তু আমি তখনও তোকে আরেকটা সুযোগ দিয়েছিলাম। সবকিছু আরো একবার ভেবে তোকে সম্পূর্ণ ছেড়ে দেওয়ার সিন্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু তোর ভাগ্য হয়তো এটা চায়নি।
তুই পুনোরায় আমার কাছে এলি তবে সেটাও আবার আমারই পি.এ. হয়ে।”
কেনীথ এটুকু বলে পুনোরায় তাচ্ছিল্যের সাথে শব্দহীনভাবে হাসলো। এদিকে আনায়া কেনীথের কথা বুঝতে পারছে না এমন নয়। কিন্তু কেনীথের কথার আসল প্যাচটা ঠিক ধরতে পারছে না। মনের মধ্যে তো শুধু প্রশ্নই জমে যাচ্ছে কিন্তু এখন পর্যন্ত তো কোনো প্রশ্নের উওরই কেনীথের কাছ পায়নি। এবারও আনায়াকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কেনীথ বলতে লাগলো,
—“আমাদের গল্পটা না… হয়তো অন্যরকম হতে পারতো। কিন্তু এমনটা হয়নি,আমাদের ভাগ্য এমটা চায়নি।
এমনিতে তোর প্রতি তো আমার ইন্টারেস্ট কখনোই ছিলো না কিন্তু… জানি না, হয়তো এখনো নেই। তেমন কিছু হলে নিশ্চয় তোকে নিয়ে আমার সেরকম কোনো পরিকল্পনা হতো না। কিন্তু… আমার সাথে যেটা হয়েছে এবার সেটা তোর সাথেও হবে। কারণ এবার আমি চাই, এমনটা হোক।”
শেষের কথাটুকু কেনীথ খানিকটা দৃঢ় কন্ঠে বললো। অন্যদিকে আনায়া কেনীথের দিকে খানিকটা কপাল কুঁচকে চেয়ে ওর কথাগুলো শোনার পাশাপাশি বিশ্লেষণ করতে চাইলো। আনায়া এবার খানিকটা কৌতূহল নিয়ে কেনীথকে জিজ্ঞেস করলো,
—“সত্যি করে বলবেন প্লিজ। আপনি আদতে কে আর আমার কাছে কি চান?”
আনায়া প্রচন্ড গম্ভীরতা নিয়ে বলা প্রশ্নটা শুনে কেনীথ আনায়ার দিকে কিঞ্চিৎ মুচকি হেসে ওকে ধীর গতিতে আরো খানেকটা কাছে টানতে লাগলো। পাশাপাশি আনায়ার গালের কাছে হাত অগ্রসর হতে হতে বিমোহিত সুরে বলতে লাগলো,
—“এখনই জানতে হবে? না জানলে হয় না…
কথাটুকু কোনো মতে শেষ করতে করতেই কেনীথ আনায়ার দিকে নিজের মুখ এগিয়ে, সঙ্গে আনায়ার কানের পাশে হাত দিয়ে নিজের কাছে খানিকটা টেনে নিতে চাইলে তার আর সম্ভব হলো না।
আনায়া কেনীথের উদ্দেশ্যটুকু তার মস্তিষ্কে নড়েচড়ে উঠতেই সে আবারও যতটুকু পারলো নিজের হাত দিয়ে দূরে সরিয়ে দিতে। তবে এতে কাজ হবে না তাই আনায়া সঙ্গে সঙ্গে আরো এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটিয়ে ফেললো।
কেনীথের মুখ বরাবর থুতু ছুঁড়ে, একই সাথে আবার ওর গালে চড়ও লাগিয়ে দিয়ে র*ক্তগরম চোখে বলতে থাকে,
—“বলেছিলাম আমি, আমার সাথে অসভ্যতা করার কথা আর দ্বিতীয়বার ভাববেন না । প্রথমবার করেছিলেন আর তখন ছেড়ে দিয়েছিলাম দেখে এখনও ছেড়ে দেবো এমনটা কিন্তু নয়।”
এদিকে আনায়ার অনাকাঙ্ক্ষিত থুথুতে কেনীথ চোখবুঁজে কোনোকিছু রিয়েক্ট করার আগেই যখন সেই মূহুর্তেই গালে চড় পড়লো, তখন কেনীথের চোখজোড়া ক্ষনিকের জন্য বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি ওর ঠোঁটেও অদ্ভুত মুচকি হাসি ফুটে উঠলো।
কিছুক্ষণ সময় একই ভাবে অতিক্রম হওয়ার পর কেনীথ নিজের ঘাড়টা সোজা করে তীক্ষ্ণ চোখে আনায়া দিকে তাকালো। এবং নিজের বাঁকা হাসি মাখা মুখতে বললো,
—“দিতে হলে একটাই দিতি। একসাথে দুটো দেওয়ার কি প্রয়োজন… ছিলো।”
কেনীথের কথা শেষ হতে না হতেই, নিজের হাসি মুখটাকে মূহুর্তেই ভয়ংকর রুপে কঠিন করে, আনায়ার গালে কষিয়ে সজোড়ে চ*ড় মারলো। এদিকে অনাকাঙ্ক্ষিত চড়ে আনায়া তাল সামলাতে না পেড়ে সোজা ফ্লোরে আঁচড়ে পড়লো।
কেনীথের চড় অনুযায়ী অবশ্য এমনটা হওয়ারই ছিলো। সাধারণত এমন চ*ড় সে তার জীবনের ইতিহাসে কখনো খেয়েছে কিনা আনায়ার জানা নেই। এক চ*ড়েই যেন মাথাটা পুরো ঘুরে গিয়েছে। ভেবেছিলো কেনীথ হয়তো সেভাবে কিছুই করবে না অথচ ও তো আনায়াকেও ছাড় দিলো না। তবে আনায়া নিজের কাজের উপর একটুও অনুতপ্ত হলো না।
দু’হাতে ভর দিয়ে আধশোয়ার মতো পড়ে থাকা আনায়ার চোখ মুখ যতটা বিস্মিত তারচেয়ে বেশিও ও রাগান্বিত। যে কারণে গালের প্রচন্ড ব্যাথাটাও আর তার অনুভব হচ্ছে না। ভেতরে ভেতরে নিজের রাগটা কমেনি বরং আরো বেড়ে গিয়েছে অথচ তাকে দেখে সেটা বোঝার তেমন উপায় নেই।
এদিকে আনায়া যখন ফ্লোরে পড়ে থেকে জলজল করতে থাকা সুইমিংপুলের পানির দিকে স্তব্ধ চোখে তাকিয়ে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে তখনই কেনীথ আবারও হাঁটু গেড়ে আনায়ার সামনে বসে পড়লো। এরপর মুচকি হেসে আনায়ার মুখ বরাবর নিজের মুখখানি এগিয়ে নিয়ে বলতে লাগলো,
—“সাহস থাকা ভালো , কেনীথের ব্লাড হিসেবে দুঃসাহস থাকাটাও আরো ভালো। কিন্তু অসভ্যতা আমার পছন্দ নয়। নেক্সট টাইম এমন কাজ করলে ফলাফল এরচেয়েও বেশি খারাপ হবে। সো…
এতোক্ষণ কেনীথের দিকে থেকে খানিকটা মুখ ফিরিয়ে থাকা অবস্থাতে কেনীথের সকল কথা মনোযোগ সহকারে শুনলেও, আবারও কেনীথের কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই আনায়া পুনোরায় কেনীথের দিকে ফিরে ওর মুখ বরাবর থুতু ছুঁড়ে মারলো।সঙ্গে খানিকটা বাঁকা হেঁসে দাঁত খিঁচে বলতে লাগলো,
—“সো… করেই ফেললাম অসভ্যতা। আমারও দেখা ইচ্ছে রয়েছে এর ফলাফল ঠিক কতটা ভয়ংকর হতে পারে! হা হ…
আনায়া তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে পুনোরায় মুখ ফিরিয়ে সুইমিংপুলের পানির দিকে তাকিয়ে রইলো। সুইমিংপুল পুল আর তাদের মাঝের দুরত্বটা খুব বেশি নয়। বরং তারা দুজন একদমে সুইমিংপুলের পাশেই রইছে। এদিকে কেনীথ খানিকটা সময় স্তব্ধ থাকার পর নিজেকে আর কন্ট্রোল না করতে পেরে পেছন থেকে আনায়ার ঘাড় চেপে ধরলো। এরপর আনায়া কিছু বুঝে উঠতে পারার আগেই এক মূহুর্তও দেরী না করে ত্বরিত আনায়ার মুখ খানি পানিতে ঢুবিয়ে দিলো।
কেনীথের চোখমুখ শক্ত ও গম্ভীর। যতটা পারছে নিজেকে কন্ট্রোল করে হলেও আনায়াকে পানিতে চেপে ধরছে। একদিকে নিজের সর্বোচ্চ রাগও প্রয়োগ করতে পারছে না আবার নিজের রাগকে পুরোপুরি কন্ট্রোলও করতে পারছে না। কেনীথ খুব ভালো করেই জানে যে সে নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পারলে আর আনায়ার বাঁচার কোনো সম্ভবনা নেই। একবার নিজের বিকৃত মস্তিষ্ক বলছে আনায়ার জন্য এতোটুকু প্রয়োজন আবার মনে হচ্ছে এমনটা না করলেও চলবে।
অন্যদিকে আনায়া হুট করেই এমন একটা পরিস্থিতির স্বীকার হওয়ায় তার আর করার মতো কিছুই নেই। নাক মুখ দিয়ে পানি ঢুকে গিয়ে একদম দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। ঠিকভাবে নিশ্বাস নেওয়ার মতো অবস্থা নেই। নিজের হাত দুটোও কোনো কাজে লাগাতে পারছে না। এতোক্ষণ শুধু ছটফট করে উঠে বসার চেষ্টা করছিলো আর এখন বাঁচার।
প্রায় মিনিট খানেকের মতো চুবিয়ে রাখার পর যখন আনায়া প্রায় দম বের হওয়ার মতো অবস্থা ঠিক তখনই কেনীথ আনায়ার ঘাড় ধরে পলকের মাঝে আনায়ার মাথাটা পানি থেকে উঠালো।
পানি থেকে ওঠা মাত্রই ফ্লোরে এলোমেলো হয়ে বসা আনায়া জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু কিছুতেই যেন ঠিক মতো শ্বাস নিতে পারছে না উল্টো অনবরত কাশতে লাগলো। বলতে গেলে আনায়া পুরো হাঁপাচ্ছে। শ্বাসনালীতে হয়তো পানিও প্রবেশ করে গিয়েছে। সঙ্গে অক্সিজেনের অভাবেই এখন হাইপোক্সিয়া দেখা দিচ্ছে। যে কারনে মাথা ঘোরা, নিশ্বাস না নিতে পারা, চারপাশ খানিকটা অন্ধকার দেখা সহ নানান অসুবিধা হতে লাগলো। আনায়া তো ভেবেছিলো আজই হয়তো জীবনটা শেষ হয়ে যাবে।
আনায়ার যখন এই করুন অবস্থা ঠিক ওই মূহুর্তে হাঁটু গেড়ে বসে আনায়ার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে থাকা কেনীথ আরো একট কান্ড ঘটিয়ে ফেললো আনায়ার সাথে। অপ্রস্তুত আনায়ার মাথার পেছনে এক হাত আর অন্যহাত আনায়ার গালে রেখে ওর ওষ্ঠের সাথে নিজের ওষ্ঠ মিলিয়ে দিলো। অবশ্য এবারের উদ্দেশ্য তার আনায়ার ঠোঁটে কাটাছেঁড়া করা নয় বরং হাইপোক্সিয়া অবস্থাটাকে স্বাভাবিক করতে মুখে-মুখে শ্বাসপ্রশ্বাস কিংবা মাউথ-টু-মাউথ রেসপিরেশন করতে চাইছিলো। উদ্দেশ্য মত কেনীথ সেটাও করে ফেললো।
নিস্তেজ আনায়ার সাথে এমনটা করতে থাকা অবস্থাতে আনায়া নিজের সর্বশক্তি দিয়ে বাঁধা দিতে চেয়েও কিছুই করতে পারেনি। কেনীথ ওর মুখে বাতাস দিতেই যেন ওর বাকি জীবনটা এমনিতেই শেষ হয়ে যাওয়ার মতো দশা। আনায়া পুরো সময়টা নিজের নিস্তেজ শরীরে কিছু করতে না পারলেও, কেনীথ ঠিক সময় পর আনায়াকে ছেড়ে দিয়ে হাতের পিঠ দিয়ে নিজের মুখ মুছে আনায়ার দিকে স্তব্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো।
অন্যদিকে আনায়া কিছুক্ষণ কাশতে কাশতে ভেতরে প্রবেশ করা পানিটুকু কেশে কেশে বের করলো। এখন অনেকটাই ঠিকঠাক মতো শ্বাস নিতে পারলেও মাথাটা চক্কর দিচ্ছে। তবে মনে হতে লাগলো কিছুক্ষণের মাঝে ধীরে ধীরেই তা ঠিক হতে লেগেছে তবুও এখন বসা থেকে দাঁড়ানোর মতো শক্তিটাও সে জোগাতে পারছে না। যদিও সে কেনীথের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না কিন্তু তার মস্তিষ্ক মন কোনোটাই কেনীথের সামনে একমুহূর্তও থাকতে চাইছে না।
এমন অবস্থায় কেনীথ ক্ষণিকের মাঝেই সরাসরি আনায়াকে পাঁজাকোলে তুলে নিতেই আনায়া কোনোমতে হাত ছোড়াছুড়ি করে কেনীথকে বাঁধা দিয়ে আধোআধো শ্বাস ফেলে বললো,
—“ধরবেন বা আমায়।… ছাড়ুন আমাকে… প্লিজ ছেড়ে….
আনায়ার কথায় ভ্রূক্ষেপ না করেই কেনীথ খানিকটা হুমকিস্বরূপ ভাবে অকপটে বললো,
—” এবারও তেজ দেখাতে এলে সোজা পানিতে চুবিয়েই তোর কাহিনি আজই শেষ করে ফেলবো।… আশা করি, দ্বিতীয়বার আর এমন ভুল করবি না।”
কেনীথ আনায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললেও আনায়া কেনীথকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে অন্যদিকে তাকিয়ে। সঙ্গে তার একহাত পেটের কাছে তো অন্যহাত শূন্য ঝুলছে। আপাতত নিজের মধ্যে রাগ ক্ষোভ জন্মানোর মতোও ক্ষমতাটুকু তার নেই। সেখানে কেনীথের সাথে পুনরায় কিছু করার তো কোনো সম্ভাবনাই নেই।
অন্যদিকে কেনীথ বড়বড় পা ফেলে দ্রুত গতিতে উপরের তলায় চলে গিয়ে আনায়াকে নিয়ে পুনোরায় সেই রুমে গিয়ে প্রবেশ করলো। অতঃপর আনায়াকে বিছানার কাছে নিয়ে গিয়ে শুয়ে দিতে চাইলে আনায়া অস্ফুটস্বরে বললো,
—“আমাকে নামিয়ে দিন। আমি একাই…
কেনীথ এতোক্ষণে প্রায় আনায়াকে বিছানায় শুয়েই দিয়েছিলো কিন্তু আনায়ার আধোআধো কথাগুলো শুনে কি যেন ভেবে আনায়াকে পুনরায় শূন্যে তুলে ফেললো। অন্যদিকে আনায়া বিষয়টি ঠিক বুঝলো না। যখন সে নামিয়ে দিতে বললো তখন নামিয়ে দিলো না অথচ এখন আবার নামিয়ে দিতে গিয়েও পুনরায় কেনো শূন্যে তুলে নিলো।
আনায়া পাশ থেকে ফিরে কেনীথের গম্ভীর মুখের দিকে খানিকটা কপাল কুঁচকে তাকালো। অন্যদিকে কেনীথ আনায়ার কপাল কুঁচকে থাকা ভাবুক মুখের দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিৎ মুচকি হাসলো। আর তা দেখে আনায়ারও কপাল আরো খানিকটা কুঁচকে যাওয়ার আগেই কেনীথ সম্পূর্ণ শূন্য থেকে আনায়াকে ছেড়ে দিলো। যার ফলে আনায়া ধপাৎ করে সোজা বিছানার উপর আঁচড়ে পড়লো।
আনায়া কুঁচকে গিয়ে একপাশে গড়াতে লাগলো। কেননা হুট করে এমনটা হওয়া পেটের পাশে সঙ্গে হাতে খানিকটা ব্যাথা পেয়ে গিয়েছে। যদিও সেটা মারাত্মক নয়। তবুও আনায়া নিজেকে কোনমতে ঠিক করে দুহাতের ভর দিয়ে আধশোয়া হয়ে বসতে গেলে, কেনীথের পরবর্তী কার্যক্রমে ও চমকে উঠলো।
আনায়া কেনীথকে নিজের কাছে আসতে দেখে ও দ্রুত ওখান থেকে সরে যেতে চাইলে তা আর সম্ভব হলো না।বরং তার আগেই কেনীথ আনায়ার থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে ওর মাথার দুপাশে নিজের দু’হাতের ভর দিকে চড়ে বসলো। মূহুর্তেই আনায়ার হাতের ভরে আধশোয়া দেহটা ত্বরিত আ*তংক সহিত সমতল বিছনার সাথে মিলিয়ে গেলো।
এদিকে কেনীথ তার বাঁকা হাসোজ্জল মুখে আনায়ার দিকে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। মূহুর্তেই তাদের মাঝের দূরত্ব মিলিয়ে যাচ্ছে। আনায়া নিজের উন্মুক্ত হাতে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করেও কেনীথকে সরাতে পারছে না কিংবা কেনীথের থেকে সরে আসতে পারছে না।
সঙ্গে আনায়ার চোখেমুখে ছেয়ে যাচ্ছে তীব্র আ*তংকের ছাপ। সারাদিনের ক্ষুদার্ত নিস্তেজ দেহ। সঙ্গে কেনীথের উদ্ভট কাজকর্ম আর অতিরিক্ত চিন্তায় নিজের করুন দশা না দেখার মতোই। এমন অবস্থায় কেনীথ যদি তার সাথে বাজে কিছু করে ফেলে তবে সে এমনিতেই ম*রে যাবে। পরবর্তীতে বিন্দুমাত্র বেঁচে থাকার আর আশা টুকুও আর তার থাকবে না। মনেপ্রাণে চেয়ে যাচ্ছে এই মূহুর্তে কেনীথ এমন কিছু না করুক। নয়তো আনায়া তা কোনো ভাবেই আর সহ্য করতে পারবে না। আনায়া এবার কাতর স্বরে বলতে লাগলো,
—“দয়া করে এমন কিছু করবেন না। আমার গায়ে আর কলঙ্ক লাগাবেন।….আমি শেষ হয়ে যাবো। প্লিজ মাফ করে দিন আমায়…
কিন্তু কেনীথের কাছে আনায়ার কথাগুলো যেন ঠুনকো মনে হলো। কেনীথ থামলো না। সে ক্রমশই আনায়ার মুখ বরাবর নিজের মুখখানি অগ্রসর করতে লাগলো । এরপর আনায়ার গলার কাছে মুখ এগিয়ে নিতেই আনায়া নিরুপায়ের মতো চোখ বুঁজতেই ওর দুচোখ হতে অঝোরে পানি ঝড়তে লাগলো। চোখ বুঁজে ফেলার সাথে সাথেই যেন তার চেতনাশক্তিও ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হতে শুরু করলো। আর একটা সময় পর আনায়া ফুঁপিয়ে উঠে করুন সুরে অস্ফুটভাবে আওরাতে লাগলো,
—“ছেড়ে দিন আমায়।…আমার জীবনটাকে এভাবে নিষ্ক্রিয় করে দেবেন না। প্লিজ আমায় ক্ষমা করুন…
#চলবে