#একজোড়া_আগুন_পাখি
#পর্বঃ২৩
#তুশকন্যা
“ইচ্ছে তো করছে তোকে এখনই শেষ করে ফেলতে। কিন্তু এখন এমনটা করলে তো সবকিছুই এক নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে, তাই না? ”
কানের কাছে ফিসফিস করে বলা কথাগুলো আনায়ার মস্তিষ্কে সক্রিয় হতেই ও নিজের চোখদুটো আচমকা খুলে ফেললো। কেনীথ এতোক্ষণ তার গলার কাছে মুখ দিয়ে রইলেও এবার আনায়া চোখ মেলে তাকাতেই কেনীথ নিজের জায়গা পরিবর্তন করলো।
আনায়ার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকার পর ওর কাছ থেকে নিমিষেই নিজেকে সরিয়ে নিলো তবে সম্পূর্ণ রুপে নয়। প্রথমে একহাত আনায়ার কোমড়ের পাশে রেখে, অতঃপর অন্যহাতে ভর দিয়ে কাত হয়ে আনায়া পাশে শুয়ে পড়লো। তারপর খানিকটা হেঁসে বলতে লাগলো,
—“আগেও বলেছিলাম, ওসব করার জন্য বহু সময় পড়ে আছে। আমার যদি ইচ্ছে হয় তো হলো, নয়তো কিছুই নয়। যত যাই হোক,তুই তো আবার পারসোনাল ব্লাড।”
কথাটুকু বলে কেনীথ তাচ্ছিল্যের সাথে খানিকটা মুচকি হাসতেই আনায়া কিঞ্চিৎ মাথাটা কাত করে কেনীথের দিকে স্তব্ধ আর বিস্মিত চোখে চেয়ে দেখলো। এদিকে কেনীথও নিজের হাসোজ্জল মুখে আনায়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একটা সময় পর মূহুর্তেই চোখমুখ শক্ত করে ত্বরিত বিছানা থেকে নেমে এলো। এবং সটানভাবে দাঁড়িয়ে আনায়ার উদ্দেশ্য বললো,
—“খাবার নিয়ে আসছি। আপাতত আর কোনো সিনক্রিয়েট করবি না। নয়তো আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না।”
এই কেনীথ হুট করে কি করে, কেনো করে তা আনায়ার জানা নেই। তবে কেনীথ যে কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের কেউ নয় তা আনায়া খুব ভালো করেই টের পাচ্ছে। কেনীথ রুম থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হলেই হুট করে আনায়ার গলা শুকিয়ে চোখ বেয়ে পানি ঝাড়তে লাগলো। আনায়া বিরক্তি আর কষ্টে নিজের একহাত দিয়ে গালটা মুছতেই শুনতে পেলো,
—“হেই ব্লাড…
কেনীথ গম্ভীর মুখে চলে যেতে নিয়েছিলো তবে পুনোরায় আনায়ার দিকে ঘুরে দরজার রিমোটাকে শুন্যের মাঝে ছুড়ে দিয়ে পুনোরায় সেটাকে ক্যাচ ধরলো। অতঃপর আনায়ার উদ্দেশ্য চোখে মেরে কিঞ্চিৎ বাঁকা হেসে রুম থেকে প্রস্থান করলো। এটা দেখা মাত্রই আনায়া খানিকটা চমকে গেলেও তার চোখমুখেও ক্ষো*ভের উদ্রেক হলো।
এই কাজটা নিশ্চিত সেই প্রথমেই করেছিলো। তার কথার জাল আর পেটে হাতের অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ করে বিমোহিত করার উদ্দেশ্য ছিলো শুধু একটা বাহানা। শুধু কৌশলে রিমোটাকেও তো নিলো আবার তাকে পানিতে নাকানি চুবানি খাইয়ে ছাড়লো। তবে এতো কিছুর মাঝে কেনীথকে যে একটা চড় আর থুথু দিতে পেরেছে এটাই যেন আনায়াকে স্বস্তি দিচ্ছে।
সঙ্গে বিরবির করে নিজেকে ওয়াদাও করলো যে,
—“বেটা কেনীথ,তুই যখন আমার জীবন ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছিস তখন আমি তো তোকে মোটেও ছেড়ে দিবো না। তোর জীবনকে ঝালাপালা করতে না পারলে, তোর বেঁচে থাকাই হারাম না করতে পারলে আমার নামও আনায়া না। অতন্ত্য তোর জীবনকেও ধ্বং*স না করে তো আমি ম*রছি না। এটা স্বয়ং আনায়ার ওয়াদা। আমাকে যেভাবে কষ্ট দিচ্ছিস, আমাকে যেভাবে কাঁদাচ্ছিস। ঠিক সেভাবেই তোকে একদিন এর চেয়েও বেশি কষ্ট দিয়ে কাঁদিয়ে ছাড়বো।
এটা শুধু আমার ওয়াদা না পারলে তোরই কসম দিলাম আমি। এই কসম রাখতে না পারলে তুই নিজেই মরে যাস। তাতেই শান্তি পাবো আমি।”
রাগের মাথায় এতোকিছু বিরবির করার পর আনায়া থেমে গিয়ে হঠাৎ এক দীর্ঘশ্বাস ফেললো।এরপর মনে মনে নানান প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চাইলো। বিশেষ করে সে কেনীথের কিভাবে পূর্বপরিচিত, তাই ভাবছে। নিজের মস্তিষ্কের বারবার চাপ প্রয়োগ করেও লাভ হলো না। কই, সে তো আগে কখনো কেনীথকে দেখেনি। সে কেনীথের গলার প্রিয় গানগুলো শুনতো সে হিসেব ভিন্ন কিন্তু…কোনো কিছুতেই লাভ হলো না। কেনীথকে সে তার জীবনে আগে কখনোই দেখেনি অথচ কেনীথের কথাবার্তা শুনে মনে হয় কেনীথ তার বিষয়ে সবকিছু জানে। কিন্তু কিভাবে জানে এটাই তো প্রশ্ন?
আনায়া যখন নিজের প্রশ্নের উওর না পেয়ে অস্থিরতায় উত্তেজিত হতে লাগলো তখনই হঠাৎ ঘাড়ে আচমকা ব্যাথা অনুভব হলো। মূহুর্তেই ঘাড়ে হাত দিতেই চোখমুখ কুঁচকে গেলো সঙ্গে কিছুক্ষণ আগের কেনীথের পৈ*শাচিক কর্মকাণ্ড মনে হতে লাগলো। যার ফলে পুনোরায় কেনীথের প্রতি আবারও জমতে থাকলো তীব্র ক্ষো*ভ আর রাগ।
______________
রাতের জন্য সামান্য খাবার বলতে স্টেক আর ম্যাশ পটেটো সুন্দর করে ট্রে-তে সাজিয়ে কেনীথ আনায়ার রুমে এলো। এসেই দেখতে পেলো আনায়া রুমের কোথায় নেই। ট্রে-টা নিয়ে কেনীথ বিছানায় গিয়ে বসলো। এরপর খাটের সাথে হেলান দিয়ে একপা গুটিয়ে, অন্যপা বিছানায় পাশে শুন্যে মৃদুভাবে ঝুলাতে লাগলো।এরপর নিজের হাতদুটো মাথার পিছনে দিয়ে, চোখ দুটো বুঁজে গম্ভীর স্বরে বলতে লাগলো,
—“বারান্দা থেকে লাফ দিতে চাইলে যাস্ট হাত-পা, কোমড় ভা*ঙ্গবে। এছাড়া কিছুই করতে পারবি না। তারচেয়ে খেয়ে নে, বেশি করে লাফালাফি-চেঁচামেচির জন্য শক্তি পেয়ে যাবি।”
কেনীথ কিছুক্ষণ সময় ধরে চোখ বুঁজে থাকার পর নিজের চোখজোড়া খুলে পাশে ফিরে দেখলো, আনায়া ধীরে ধীরে বারান্দা ছেড়ে তার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। কেনীথ খানিকটা লক্ষ করে দেখলো আনায়ার চোখ মুখ লাল হয়ে রয়েছে। মনে হচ্ছে কান্না করেছে সঙ্গে প্রচন্ড রে*গেও আছে। হুট করেই কেনীথ কিঞ্চিৎ মুচকি হাসলো।
এদিকে আনায়া একটা সময় পর কেনীথের সামনে এসে দাঁড়ালো। এলোমেলো লেহেঙ্গা, সঙ্গে দোপাট্টাকে ওরনার মতো শরীরে পেঁচিয়ে নিয়েছে। খোঁপা চুলগুলো এবার ছেড়ে দিয়েছে। চুল গুলো এবার আগের চেয়ে বেশি এলোমেলো লাগছে। কেনীথের কেনো যেন মনে হচ্ছে আনায়া নিজের চুল নিজেই টেনেহিঁচড়ে এই অবস্থা করেছে।
আনায়া তার সামনে এসে দাঁড়াতেই কেনীথ খানিকটা হেঁসে বললো,
—“তোকে দেখতে পুরো পেত্নীর মতো লাগছে।”
কেনীথের কথা শুনে আনায়া ওর দিকে ফিরে তাকালো। মূহুর্তেই মেজাজটা আরো খারাপ হয়ে গেলো তবে আপাতত কিছু বলতে চাইলো না। এদিকে কেনীথও ত্বরিত নিজের চোখমুখ পুনোরায় গম্ভীর করে , তার সামনে রাখা ট্রে-এর দিকে ইশারা করে বললো,
—“ওখানে চুপচাপ বসে, খাবারটা খেয়ে নে।”
আনায়া কেনীথের ইশারা মতো ট্রে-র পাশে বসে পড়লো। দুজনের মাঝে ব্যবধান হিসেবে এবার খাবার ট্রে-এর অবস্থান। কিন্তু এবার আনায়ার চোখমুখ খানিকটা কুঁচকে গেলো। এসব কি খাবার নিয়ে এসেছে? এগুলো আদোও খাওয়ার মতো কিছু হলো নাকি?
এমনটা নয় যে আনায়া এসব খাবার প্রথম দেখছে। এর আগেও একবার রেহানের ইচ্ছেতে তাকে এসব খাবারের স্বাদ নিতে হয়েছিলো। আনায়া সেদিনের কথা আজও ভোলেনি। আর এই খাবারের মতো বাজে স্বাদ সে আর অন্যকিছুতেও পায়নি। যদিও ম্যাশ পটেটোটা সে কোনোভাবে খেয়ে নিয়েছিলো কিন্তু স্টেক তৈরির প্রসেসিং আর স্বাদেই সেদিনও আর তার ওসব খেতে রুচিতে কুলোয়নি তার। সে ভেবে পায় না মানুষ এই আধসিদ্ধ জিনিসটাকে কিভাবে এতো মজা করে খায়।
আর আজও সারাদিন উপোষের পর তার কপালে এটাই জুটলো, ভাবতেই বেচারীর কপালের উপর দু-তিনটে চ*ড়-আ*ঘাত করতে ইচ্ছে হলো।
—“চেয়ে চেয়ে কি শুধু দেখতেই থাকবি নাকি খাবি।”
—“আমি এসব খাবো না।”
কেনীথ খানিকটা কপাল কুঁচকে আনায়ার অকপটে বলা কথাটা শুনলো।
—” আগেভাগেই বলে দিচ্ছি, আমি ঢং করে খাইয়ে দিতে পারবো না। খেতে হলে খাবি নয়তো না।”
কেনীথের এমন ত্যারা কথা শুনে আনায়া প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,
—“যতদিন পর্যন্ত আমার হাত আছে ততদিন পর্যন্ত কারো আমাকে দয়া করে খাইয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই।”
—“তবে সমস্যা কি?”
আনায়া চোখমুখে প্রচন্ড বিদ্বেষ প্রকাশ করে বললো,
—“এসব জঘন্য খাবার আমি খাই না।”
কেনীথ কপাল কুঁচকে বললো,
—“এগুলো জঘন্য খাবার? তুই কি এসব প্রথম দেখছিস?”
—“মোটেও না, আমি এর আগেও এসব খেয়েছি দেখেই বলছি। এগুলোর স্বাদ আমার কাছে পুরো জঘন্য লাগে। এই আলু সিদ্ধ তো কোনো মতে…
—“ম্যাশ পটেটো…
—“আই নো, ম্যাশ পটেটো…আলু ভর্তা, হোয়াট এভার। আমি বাঙ্গালি খাবার ছাড়া আর কিছু খাই না। এগুলো খাওয়ার চেয়ে না খেয়ে থাকাই ভালো।”
আনায়া কাঁটাচামচ দিয়ে স্টেকটাকে মুখের কাছে ধরে নাকমুখ কুঁচকে এদিক ওদিক করে দেখছে। এদিকে কেনীথ আনায়ার দিকে তাকিয়ে খানিকটা বিরক্ত হলেও সে নিয়ে কোনো রিয়েক্ট করলো না। বরং নির্বিকারে বলতে লাগলো,
—“তুই কি করবি সেটা তোর ইচ্ছে। কারণ, না আমি বাঙ্গালি খাবার খাই, না ওসব আমি রান্না করতে পারি। আর এমনিতেও আমি ছাড়া ক্লারা আর কেনেলও এসবই স্টেক-ই পছন্দ করে।”
আনায়া স্টেকটাকে ট্রে-তে রেখে দিয়ে খানিকটা অবাক সুরে বললো,
—“এই বাড়িতে আপনি ছাড়া আরো কেউ থাকে নাকি?
—“হুম!”
—“কই আমি তো এখন পর্যন্ত কাউকে দেখিনি।”
—“কারণ আমি দেখাইনি তাই দেখিসনি। ক্লারা আর কেনেলকে মানুষ ভাবার প্রয়োজন নেই। ওরা দুটো কুকুর।”
আনায়া বিস্মিত চোখে কেনীথকে কিছুক্ষণ দেখার পর পুনোরায় চোখমুখ কুঁচকে বললো,
—“ছ্যাহ…কুকুর যেটা খায় সেটা আপনিও খান। এতো বড়লোক হয়ে তবে লাভটা কি?”
কেনীথ এবার বিরক্তি নিয়ে বললো,
—“তোকে কে বললো,আমার কুকুর যেটা খায়, সেটা আমিও খাই?”
আনায়া নির্বিকারে বললো,
—“তো কি? আপনি যদি গরু খাসির স্টেক খান তবে ওরা কি মানুষেরটা খায় নাকি?”
—“হুম।”
কেনীথের এমন নির্বিকার জবাবটা আনায়া প্রচন্ড বাজে রকমের ফালতু মশকরা মনে হলো। তাই চোখমুখ ছোট করে বিড়বিড় করে বললো,
—“আজা**ইরা লোক…
আনায়ার এই বিড়বিড় করে বলা কথা কেনীথ ঠিকই শুনতে পেলো সাথে ও নিজেও আনায়ার এমন ঢিলামি কাজকর্মে বিরক্তি নিয়ে বললো,
—“বেশি বকবক না করে তাড়াতাড়ি খেয়ে নেয়। এমনিতেও তোকে যে এটুকু খেতে দিয়েছি এটাই তো অনেক।”
আনায়া এবার খানিকটা ক্ষে*পে গিয়ে বললো,
—“তো আমি কি বলেছিলাম, আমার উপর এতোটুকু দয়া দেখাতে। আমাকে দিয়ে আপনার কোনো কাজ নেই,আপনি আমায় ভোগও করতে চান না। শুধু কিছু জিজ্ঞেস করলেই বলতে থাকেন, সঠিক সময় এলে সব জানতে পারবো। আর এতোটুকু আমি ভালো করেই বুঝতে পারছি যে সেই সঠিক সময়টা আমাকে তীব্র কষ্ট দেওয়ার জন্যই প্রস্তুত হচ্ছে। তাহলে কষ্ট দিয়ে মে*রে ফেলতেই যদি হয় তবে এসব তামাশা করার কি প্রয়োজন। একবারেই মে*রে ফেলুন। তাহলেই তো কাহিনি…
—“নিজেকে খুব চালাক ভাবিস তাই না? আগেও বলেছি এখনও বলছি। যখন সময় আসবে তখন এমনিতেই সব জেনে যাবি। আর তোর তো মনেপ্রাণে দোয়া করা উচিত যেন সেই সময়টা অনেক দেরীতে আসে। নয়তো সবচেয়ে বেশি কষ্ট তো তুই-ই পাবি।”
কেনীথের ধারনা মতে আনায়ার উদ্দেশ্য এটাই ছিলো। কথায় কথায় কোনো ভাবে কেনীথের কাছ থেকে এই বিষয়ে কিছু একটা জানতে পারলেই হলো। কিন্তু কেনীথ যেরকম চতুর তাতে আনায়ার এই ইচ্ছে ,সপ্ন হয়েই থেকে যাবে। কোনোভাবেই আনায়া কেনীথের কথার প্যাচ ধরতে পারছে না। কেনীথ যে তাকে মে*রে ফেলবে না এটা সিওর। তাকে ভোগের জন্যও সে এখানে আনেনি। তবে একটা কারণ যদি থাকে তা হলো মানসিক কষ্ট। কেনীথ তাকে এটাই দিতে পারবে। এরচেয়ে বেশি কিছু তো সে আন্দাজ করতে পারছে না।এরই মাঝে কেনীথ ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো,
—“রাত অনেক হয়ে যাচ্ছে, তারাতাড়ি খেয়ে নে।”
আনায়া নিজের ধ্যান থেকে বেরিয়ে বললো,
—“বললাম তো আমি খাবো না এসব।”
এবার কেনীথ আধশোয়া থেকে সরাসরি বসে গিয়ে চোখমুখ শক্ত করে আনায়ার দিকে এগিয়ে আসতে নিলো। অন্যদিকে আনায়া ত্বরিত ঢোক গিলে খানিকটা পিছিয়ে গিয়ে বলতে লাগলো,
—“কাছে আসবেন না, কাছে আসবেন না। আমি খেয়ে নিচ্ছি…
আনায়ার এমন অনুনয়ে কেনীথও থেমে গেলো। তবে হঠাৎ নিজের পরণের কালো টিশার্টটা খুলে বিছানার একপাশে ছুড়ে ফেললো। সেটা আনায়ারও চোখের নজর এড়িয়ে গেলো না। বরং আনায়া চামচ দিয়ে খানিকটা ম্যাশ পটটো তুলতে তুলতে ঢোক গিলে মনে মনে ভাবলো,
—“এই বেটার উদ্দেশ্য কি? এ কি আসলেই আমাকে… না, না, এমনটা হলে তো আগেই করে ফেলতো।… অবশ্য আগে বলতে সে এখানে এসেছেই তো কিছুক্ষণ আগে। করার হলে তো রাতেই… না, না, এমনটা যেন না হয়। নয়তো আমার ম*রা ছাড়া আর উপায় থাকবে না”
এই বলতে বলতেই আনায়া আনমনে একটুখানি সেই ম্যাশ পটেটো নিয়ে মুখে তুলতেই বিস্বাদে চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো। মনে মনে ভাবলো,
—“এটা তো সেইদিনের রেস্টুরেন্টের চেয়েও জঘন্য স্বাদের।”
আনায়ার চোখমুখের ভঙ্গিমা দেখে কেনীথ আনায়ার সামনে ট্রে-টা এক নিমিষেই নিয়ে সরিয়ে নিয়ে খাটের পাশে টেবিলে রেখে দিলো। এদিকে আনায়া খানিকটা চমকে গেলো কেনীথের কাজকর্ম দেখে। কেনীথ আবার রেগে গিয়ে কিছু করবে না তো। চোখমুখের গাম্ভীর্যতা দেখে তো ঠিক সুবিধার মনে হচ্ছে না।
কেনীথ গম্ভীর কন্ঠে বললো,
—“উঠে দাঁড়া।”
আনায়া কিঞ্চিৎ ঢোক গিললো তবে সঙ্গে সঙ্গে উঠেও দাঁড়ালো। এরই মধ্যে কেনীথ রুমের মাঝে থাকা একটা দূরের টেবিলের দিকে ইশারা করে বললো,
—“ওখানে একটা ছুরিসহ ফলের ঝুড়ি আছে। সুন্দর করে ওটা নিয়ে আয় এখানে। আর হ্যাঁ,ছুড়ি দেখে মাথায় যেন আবার ভুত না চাপে । এসব ছুড়ি দিয়ে কিন্তু তুই আমাকে মা*রতে পারবি না।”
আনায়া পুনরায় খানিকটা বিরক্তি নিয়ে কেনীথকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখে আবার ওর কথামতো ফলের ঝুড়িটা নিয়ে এনে কেনীথের হাতে দিলো। এদিকে কেনীথ আনায়ার কাছ থেকে ফলের ঝুড়িটা নিয়ে তার পাশে বিছানায় রাখতে রাখতেই, অন্যহাত দিয়ে আনায়ার হাতে আচমকা টান দিয়ে নিজের উরুতে বসালো। এরপর ত্বরিত আনায়ার কোমড়ে শক্ত করে নিজের বলিষ্ঠ হাত দিয়ে পেঁচিয়ে ওকে নিজের কাছে আবদ্ধ করে ফেললো।
এদিকে আনায়া এবার ছটফট করতে করতে বললো,
—“প্লিজ, ছেড়ে দিন আমায়। মাফ করেন আমায়। আপনি যেটা বলবেন সেটাই করবো, আপনার জঘন্য খাবারগুলোও খেয়ে নিচ্ছি। তবুও কথায় কথায় এভাবে আমার সাথে চিপকে যাবেন না। আমার পুরো অসহ্য লাগে এসব।”
কেনীথ শক্ত গলায় বললো,
—“শুধু তোর নয়, আমারও তোকে অসহ্য লাগে। এমনিতেই মেজাজ খারাপ করে ফেলেছিস। যখন বারবার খাবার খেতে বলেছি তখন ঢং করেছিস। শেষে আমার খাবার খেয়ে এমন ভাব করলি যেন তা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অখাদ্য। হোয়াট এভার,হতেই পারে তোর ভালো লাগেনি। কিন্তু এখন চুপচাপ ফলগুলো খেয়ে নিবি। কারণ এই রাতের বেলায় অন্তত তোর খাবার নিয়ে আমি আর কোনো প্যারা নিতে চাই না।”
আনায়া অস্থির হয়ে বললো,
—“আরে সারাদিন না খেয়ে এখন এই খালি পেটে ফল খেলে…আপনি কি আমায় এভাবে মা*রতে চান নাকি?”
—“খালি পেটে ফল খেলে কেউ ম*রে যায় না।”
আনায়া আরো কিছু বলতে চেয়েও কিছু বললো না।বারবার মোচড় মুচড়ি করেও লাভ হচ্ছে না। এমন ভাবে পেট চেপে ধরেছে যেন নিশ্বাস এখনই বন্ধ হয়ে যাবে। আলাদা করে গ*লা চেপে মা*রার আর কোনো প্রয়োজন পড়বে না।
আর এদিকে কেনীথ নির্বিকার আনায়ার পেট পেচিয়ে রাখা হাত আর অন্যহাত দিয়ে একপাশ করে একটা আপেলের উপর ছু*রি চালাচ্ছে। এরই মাঝে আনায়া অনুনয় করে বললো,
—” আপনাকে অনুরোধ করছি। প্লিজ আমাকে ছাড়ুন। আমি নিজের হাতে খেয়ে নিতে পারবো তো।”
কেনীথ এবার ফল কাটতে কাটতেই নিজের মুখটা আনায়া কানের কাছে নিয়ে হাস্কি কন্ঠে বলতে লাগলো,
—“সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ অন্ধকার রাত। মানববসতি থেকে বহু দূরে এই বিশাল বড় বাড়ির অবস্থান। পুরো বাড়িতে তুই আর আমি ব্যতীত আর কোনো মানুষের অস্তিত্ব নেই। তাই বলছি, যেভাবে আছিস চুপচাপ বসে থাক। আমি এখন উল্টোপাল্টা কিছু করে ফেললে তোকে বাঁচাতে কেউ আসবে না।”
আনায়ার মাঝে হুট করেই এক অদ্ভুত শিহরণ জেগে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে কিঞ্চিৎ ঢোকও গিললো। তবে পুনোরায় কথায় জোর এনে বলতে লাগলো,
—“আমি জানি, আপনি আমাকে এসব যাস্ট ভয় দেখানোর জন্য বলছেন। আপনি আদতে এমন কিছুই আমার সাথে করবেন না। আপনি নিজেই তো এমনটা বলেছেন।”
আনায়ার কথা শুনে কেনীথ তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বললো,
—“যদি বলি আমার মুড চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে।”
এবার আনায়ার চেহারার রং পাল্টে গেলো। এবং কিছুটা পাশে ফিরে কেনীথের দিকে তাকালো। অন্যদিকে কেনীথ আনায়ার অবস্থা দেখে পুনোরায় হেসে ওর মুখের সামনে ছুরির আগায় বিঁধে রাখা আপেলের টুকরোটাকে ধরে বললো,
—“যা বলছি তাই কর। আমি এই মূহুর্তে কিছু করে ফেললে তুই আদতে কাঁদা আর ছটফট করা ছাড়া কিছুই করতে পারবি না। এখন হা কর…
কেনীথের হালকা কথার কঠোর হুশিয়ারিতে আনায়া কয়েকবার চোখের পলক ফেলে হা করে ছুরির আগা থেকে আপেলের টুকরোটাকে মুখে তুলে নিলো ঠিকই কিন্তু পরক্ষণেই তা চিবোতে চিবোতে বললো,
—“আচ্ছা, আপনি যেটা করছেন সেটা তো ঠিক নয়। আমাকে তুলে এনে… আচ্ছা মানলাম কোন না কোনো ঘটনার জন্য আমার সাথে আপনার বিশাল শ*ত্রুতা। মানে আপনি আমাকে নিজের শ*ত্রু ভাবেন। কিন্তু এই যে আপনি একটা অবিবাহিত মেয়েকে বারবার এভাবে কথায় কথায় হুটহাট পেটে, কোমড়ে চেপে ধরেন। আবার ঠোঁটে ঠোঁট… যাই হোক। এখন আবার আজেবাজে কাজ করার হুশিয়ারীও দিচ্ছেন। এসব কি আদোও ঠিক?
মানুষে শত্রুতা থাকতেই পারে, ভালো কথা। আপনার শত্রু আপনার সামনেই আছে। সো, মে*রে ফেলুন নয়তো অন্যকোনো ভাবে কষ্ট দিন। কিন্তু এসব আজেবাজে কাজ করার কি দরকার। শুধু শুধু পাপ…
আচ্ছা আপনি কি ভিন্ন ধর্মের। মানে খ্রিস্টান কিংবা অন্যকিছু…আপনার নামটাও অদ্ভুত। সঙ্গে আপনার পরিচয়ও কেউ ঠিকঠাক জানে না।আচ্ছা আপনি যেই ধর্মেরই হোন না কেনো,কোনো ধর্মেই তো আপনার কাজকে সমর্থন করে না। এই যে আমার মতো এক অবলা অর্ধ বিবাহিত নারীকে তুলে আনলেন। এরপর বারবার ফালতু কাজ করার হুশি*য়ারী দিচ্ছেন। এগুলোতে তো পাপ হবে তাই না?”
আনায়ার এসব কিছু বলার কারন হলো কোনো মতে কেনীথকে বুঝিয়ে সুজিয়ে এই বিষয়ে ম্যানেজ করা। আর যাই হোক,এই লোক তার সাথে উল্টোপাল্টা কিছু করার পর ম*রে যাওয়ার চেয়ে এমনিতে ম*রা বহু গুনে ভালো। এদিকে কেনীথও অবশ্য আনায়া কথার উদ্দেশ্য ঠিকই বুঝতে পারছে।
—“সারাদিন না খেয়ে তো মাথাটা পুরোই গেছে… তুই কি আমাকে গাধা পেয়েছিস।”
আনায়া হঠাৎ চুপ করে গিয়ে বললো,
—“মানে?”
কেনীথ আনায়ার মুখে আরেকটা আপেলের টুকরো ঢুকিয়ে দিয়ে তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বললো,
—“ধর্ম যেটাই হোক, শয়তানের কখনো ধর্ম হয় না”
আনায়া বিস্মিত চোখে পাশে ঘুরে কেনীথের দিকে তাকিয়ে বললো,
—“মানে…,আপনি নিজেকে শয়তান মানেন ?”
—“তো এছাড়া আর কি? আমি যদি ধর্মকর্ম ঠিকভাবে মানতাম তবে তো তোর সামনে আজ এক শুদ্ধ পুরুষ হয়ে ধরা দিতাম। কিন্তু এমনটা তো হয়নি।”
যেদিকে আনায়া কেনীথকে নিজের কথার জালে ফাঁসিয়ে তাকে একটু ভালো করে, তার উপর দয়ামায়া করে ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলো অথচ এদিকে কেনীথ যেসব কথা বলছে তা তো সব আনায়ার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। একটা মানুষ কতটা মানসিক ভারসাম্যহীন হলে নিজেকে কি সুন্দর করে শয়তান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
এরই মাঝে কেনীথ পুনোরায় অদ্ভুত ভাবে তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বললো,
—“আমি হলাম সেই পুরুষ, যাকে পৃথিবীর কেউ চাইবে না। কারণ আমি পুরুষ হিসেবে পৃথিবীর কোনো সম্পর্কের জন্যও যোগ্য নই।… আমি জানি, তুইও কোনোদিন আমায় মন থেকে চাইবি না।”
#চলবে