একজোড়া আগুন পাখি পর্ব-২৪+২৫

0
86

#একজোড়া_আগুন_পাখি
#পর্বঃ২৪
#তুশকন্যা

“আমি হলাম সেই পুরুষ, যাকে পৃথিবীর কেউ চাইবে না। কারণ আমি পুরুষ হিসেবে পৃথিবীর কোনো সম্পর্কের জন্যই যোগ্য নই।… আমি জানি, তুইও কোনোদিন আমায় মন থেকে চাইবি না।”

আনায়া অদ্ভুত চোখে কেনীথের দিকে চেয়ে কয়েকবার পলক ফেলতেই কেনীথ পুনোরায় মুচকি হেসে বললো,

—“আমার অতীত, বর্তমান কিংবা ভবিষ্যতের সকল কর্ম সম্পর্কে যেই জানতে পারবে সেই আমাকে শয়তান, জানো**য়ার, পিশাচ… এইসব হিসেবে আখ্যাত করবে।”

আনায়ার মুখোটা খানকিটা উন্মুক্ত হলো সঙ্গে চোখজোড়ায় মিললো অবাধ বিস্ময়। খানিকটা ঢোক গিলে এবং কপাল কুঁচকে বললো,

—“আপনি এমন কি কাজ করেন?…আর এতোই যদি খারাপ হয় তবে এখন জোর করে বেঁধে ধরে খাওয়াচ্ছেন কেনো। যা করার সরাসরিই তো করতে পারেন।”

কেনীথের মাঝে আনায়ার কথায় কোনো হেলদোল হলো না। ও নিজের মতো করে আরো এক টুকরো আপলকে ছুরির আগায় বিঁধিয়ে আনায়ার মুখের সামনে ধরতেই আনায়া খানিকটা বিরক্তি নিয়েই মুখে নিলো। অন্যদিকে কেনীথ অকপটে মুচকি হেসে হেসে বলতে লাগলো,

—“শয়তানদের মাঝে সবচেয়ে নি*কৃষ্ট কিংবা খারাপ শয়তান কারা হয়, জানিস?”

আনায়া এমন প্রশ্ন শুনে হকচকিয়ে গেলো। মনে মনে বললো,

—“বেটা আমি তো মতো শয়তানের উপর পিএইচডি করেছি নাকি? ”

আনায়া কিছু বললো না বিধায় কেনীথ নিজের কর্মরত হাতটা থামিয়ে দিলো এবং আনায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের সাথে কিঞ্চিৎ বাঁকা হেসে বললো,

—“জানিস না? তবে আমিই বলছি।”

এই বলেই কেনীথ আপেল আর ছুরিটা রেখে দিয়ে এবার দুহাত দিয়ে আনায়ার কোমড় চেপে বসলো। কেনীথের উন্মুক্ত শরীরে আনায়ার সম্পূর্ণ পিঠ ঠেকে আছে। এবার দুহাত দিয়ে এমন ভাবে পেছিয়ে ধরেছে যেন আনায়াকে কেনীথ নিজের বুক্ষস্থলের মাঝে ঢুকিয়ে ফেলবে। আনায়া খানিকটা মোচড়ামুচড়ি করে বলতে লাগলো,

—“বলবেন ভালো কথা, কিন্তু এভাবে পেচিয়ে ধরে নিশ্বাস…

আনায়ার বাকি কথাটুকু আর সম্পূর্ণ হলো না বরং তার আগেই কেনীথ আনায়ার কানের কাছে ফিসফিস করে বলতে লাগলো,

—“যারা নিজের শিকারকে প্রথমে যত্ন-আত্তি করে খাইয়ে পরবর্তীতে কষ্ট দেয়, তারাই সবচেয়ে খারাপ কিংবা নি*কৃষ্ট শয়তান।বুঝলি…

এই বলেই কেনীথ আনায়ার মাথায় একটা টোকা দিলো। এদিকে আনায়া কেনীথের কথার অর্থ বুঝতেই অজানা শিহরণে জেগে উঠলো। এই কেনীথ তার সাথে আসলে করবেটা কি? জ্যান্ত আ*গুনে পুড়বে নাকি গরম পানিতে সিদ্ধ করবে? আরেহ, এমনটা তো গল্প সিনেমায় হয়, সত্যি সত্যি এমন করবে নাকি?

এরই মাঝে কেনীথ হুট করে কিছু একটা বলতে গিয়ে আনায়ার বাম হাতের দিকে নজর পড়ে তার কথা থেমে গেলো। কেনীথ খানিকটা ভ্রু কুঁচকে আনায়ার বাম হাতটা জোর করে ধরে মেহেদিতে আঁকা নিজের নামটা দেখলো। সঙ্গে তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বললো,

“কাহিনি কি রে? তোর হাতে…

এই বলেই কেনীথ ছোঁ মে*রে আনায়ার ডান হাতটা টেনে হাতের তালুতে রেহানের নামটা দেখেই আনায়াকে জিজ্ঞেস করলো,

—” এগুলো কি রে? বিয়েতে নিজের হবু জামাইয়ের নাম লিখেছিলি ভালো কথা কিন্তু আমার নাম… এমনটা তো তোর করার কথা ছিলো না। তুই কি জানতি আমি….

আনায়ার চোখেমুখে এবার গম্ভীরতা বিরাজ করলো। কেনীথের নাম পর্যন্ত ঠিক ছিলো কিন্তু রেহানের নামটা সমানে আসতেই কেনীথের প্রতি পুনোরায় তীব্র বি*দ্বেষ জন্মাতে লাগলো। তাই কেনীথ নিজের কথা সম্পূর্ণ করার আগেই আনায়া কেনীথের কাছ থেকে নিজের হাত দুটো মূহুর্তেই ছাড়িয়ে নিলো। এবং ক্ষো*ভে কপাল কুঁচকে গম্ভীর সুরে বললো,

—“ইনায়া লিখেছিলো ভুল করে। তা ছাড়া কিছুই না।”

কেনীথ বাঁকা হেসে বলতে লাগলো,

—“আরে বাহ, ইরা তো সেই জিনিস। সুন্দর করে আমার নামটা লিখেছে তো লিখেছেই, তাও আবার বাম হাতেই লিখেছে। ডান হাতে তোর শুভ প্রেমিক রেহান আর বাম হাতে তোর অশুভ কেনীথ…

কেনীথ কি যেন একটা বলতে চেয়েও আর কথাটা সম্পূর্ণ করলো না। বরং বিষয়টিকে তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে উড়িয়ে দিলো। এদিকে আনায়া ঘাড় ঘুরিয়ে অদ্ভুত ভাবে চেয়ে রইলো কেনীথ দিকে, তবে কিছু বললো না । সঙ্গে কেনীথও কিছুক্ষণ আনায়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই হঠাৎ চোখমুখ গম্ভীর করে বললো,

—“সর এখান থেকে।”

আনায়া কিছু না বলে কপাল কুঁচকালো। ওমনি কেনীথ ওর কোমড় থেকে দুহাত সরিয়ে নিয়ে মাথার পিছনে দিয়ে বিছানার সাথে হেলান দিলো। এবং গম্ভীর আওয়াজে আনায়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,

—“সরে যেতে বলেছি আমি।”

আনায়াও ঠিকঠাক কিছু বুঝলো না তবে সে যে ছাড়া পেয়েছে তাই তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে নেমে এলো। এবং কেনীথের দিকে অদ্ভুত চাহনি নিয়ে তাকিয়ে রইছে। হঠাৎ করেই এই লোক এমন অদ্ভুত আচরণ কেনো করে আনায়ার তা জানা নেই?

অন্যদিকে আনায়ার কপলা কুঁচকে থাকা চেহারা দেখে কেনীথ বিরক্তি নিয়ে বললো,

—“কাহিনি কি? রাতে কি আমার সাথে শুতে চাস?ইচ্ছে থাকলে চলে আয়, মানা করবো না।”

কেনীথ এমন বিরক্তির সুরে বলা কথা গুলো শুনে আনায়া নিজেই খানিকটা হকচকিয়ে গিয়ে প্রচন্ড বিরক্ত হলো। কপাল কুঁচকে ঝটপট উত্তর দিলো,

—“ফালতু কথা বলে মেজাজ খারাপ করবেন না।”

পরোক্ষণেই খানিকটা নরম সুরে বললো,

—“আপনি কি আমায় চলে যেতে বলছেন? মানে আমি এই বাড়ি ছেড়ে যেতে পারি? আপনি আর কিছু করবেন না?”

আনায়া কিছুটা খুশি আবার অনেকটা চিন্তিত। কারণ কেনীথের কথার সঠিক অর্থটা সে বুঝতে পারেনি। কেনীথ ওকে হঠাৎ কোথায় যেতে বলছে।তাই খুশি আর দুশ্চিন্তা দুটোকেই মিশ্রিত করে কেনীথকে প্রশ্নটা করে ফেলেছে। অথচ এদিকে কেনীথ তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বিরক্তি নিয়ে বললো,

—” কোলের উপর বসিয়ে আপেল কেটে খাওয়ানোর জন্য কি, তোকে আমি এখানে নিয়ে এসেছিলাম। মেজাজ খারাপ হচ্ছে, চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়।”

এই বলেই কেনীথ একটা বালিশ কোনমতে ঠিক করে চিত হয়ে শুয়ে মাথার পেছনে দুহাত দিয়ে চোখ বুঝলো। অন্যদিকে আনায়া তব্দা খেলেও ও সিওর ছিলো কেনীথ তাকে ভুলেও যেতে দেবে না। শুধু শুধু গাধার মতো জিজ্ঞেস করেছে। তবে এবার কেনীথের উদ্দেশ্যে খানিকটা তেজ নিয়ে বললো,

—“এই যে শুনুন, প্রথমে তো ঠিকই ভাব নিয়ে বললেন। আমি নাকি আপনার বাড়ির সেই বন্দী যাকে আপনি সব সুযোগ সুবিধা দেবেন?”

কেনীথ চোখ বুজে থাকা অবস্থাতেই বললো,

—“তো? হাত, পা, গলা ব্যাথা করছে? টিপে দেবো?”

আনায়ার দাঁত খিঁচে দাঁড়িয়ে রইলো। পুনরায় নিজেকে শান্ত করে বললো,

—“গলা টিপে মে*রে ফেলার জন্য নিশ্চয় আমাকে আনেননি?…যাক বাদ দিন। আপনি আমায় কিভাবে মারবেন সেটা আপনার ব্যাপার। আপাতত এই রুম থেকে বের হন, আমি ঘুমাবো।”

এবার কেনীথ কিছুক্ষণ চোখ বুজে চুপ থাকার পর হুট করেই বসে পড়ে আনায়ার দিকে তাকালো। আচমকা এমন কাজ করায় আনায়া বিছানার কাছ থেকে কয়েক পা দূরে হকচকিয়ে সরে এলো।
এদিকে কেনীথ খানিকটা বিস্ময় আর কপাল কুঁচকে বললো,

—“তোর মাথায় কি চলছে বল তো?”

আনায়া প্রথমে কিছুটা কপাল কুঁচকে থাকা অবস্থায় চুপ রইলেও পরবর্তীতে নির্বিকারে বলতে বলতে লাগলো,

—“চলছে তো আপনার মাথায়। আমাকে কি জিজ্ঞেস করছেন? আমার ঘুম পেয়েছে, আর আমি আপনাকে যেতে বলেছি। এতে এতো অবাক হওয়ার কি আছে?”

—“হুট করে তোর সাহস একটু বেশিই বেড়ে গিয়েছে না? আমার বাড়ি, আমার রুম থেকেই বের হতে বলছিস? ভয়ডর বলে কিছু নেই নাকি? ”

—“আজব তো এখানে ভয় পাওয়ার কি আছে। আজ বাদে তো কাল আপনার হাতে ম*রতেই হবে।তবে ম*রার আগে একটু আরামে ঘুমানোর আবদার তো করতেই পারি।”

এইটুকু বলেই আনায়া ঢোক গিললো। মনে হচ্ছে ও কেনীথের কাছ থেকে কিছু অন্যরকম উত্তরের আশা করছে। সঙ্গে তার মাথাতেও চলছে কিছু উদ্ভট চিন্তাভাবনা। আপাতত সিন্ধান্ত নিয়েছে, যা কান্নাকাটি করার তা এই বাড়ি থেকে বের হয়েই করবে। কেনীথের হাতে এতো সহজে জীবন তো শেষ হতে দেওয়া যাবে না? তার জীবন এতোই সস্তা নাকি?

এদিকে কেনীথ কিছুক্ষণ ওর দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে থাকার বাঁকা হাসলো। ওর এমন বাঁকা হাসি দেখে আনায়া ভেতরে ভেতরে হকচকিয়ে গেলেও তা প্রকাশ করলো না। বরং চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই কেনীথ তাচ্ছিল্যের সাথে বলতে লাগলো,

—“তোকে আমি যতটা গাধী ভেবেছিলাম তুই ততটা গাধী না। বরং তার চেয়ে বড় গাধী।
যারা নিজেরাই নিজেদের সবচেয়ে বেশি চালাক ভাবে, তারাই মূলত এসব গাধা গাধীর আওতায় পড়ে।
অনেক হয়েছে, তুই যা জানতে চাচ্ছিস তা ঠিক সময়েই জেনে যাবি। খেয়েছিস এবার ঘুমিয়ে পড়।”

আনায়ার আর বুঝতে বাকি নেই কেনীথ এবারও তার উদ্দেশ্য ধরে ফেলেছে। কিন্তু আপাতত নিজেকে আর কোনো ট্রেস দিতে চাচ্ছে না। তাই খানিকটা হতাশা আর বি*ক্ষি*প্ত সুরে বললো,

—“তো, আপনি যদি এখানে থাকেন তবে আমি কোথায় ঘুৃমাবো?”

—“কোথায় আবার, নিচে ঘুমাবি? বিছানায় আমি কোনো জায়গা দিতে পারবো না।”

আনায়া বিস্মিত হয়ে বললো,

“মানে? আপনার এতো বড় বাড়িতে থাকতে, আপনাকে এখানেই থাকতে হবে?আশেপাশে তো আরো কতগুলো রুম আছে, ওগুলোতে থাকুন না? নয়তো দরজা খুলে দিন, আমি নিজেই চলে যাচ্ছি।”

—“এই সুযোগ সুবিধা আমি তোকে দিতাম, তবে তোর অতিরিক্ত বারান্দায় উঁকিঝুঁকি দেওয়াটা আমার পছন্দ হচ্ছে না। তাই আমি এখানেই থাকবো। এমনিতেও এই রুমটাতে অনেকদিন থাকা হয় না। আজ থেকে ভালোই লাগছে।”

এই বলেই কেনীথ দুহাত দুপাশে দিয়ে শরীর মোচড়াতেই কটমট শব্দ হলো। এরপর আর এক মূহুর্তও দেরী না করে শুয়ে পড়লো।

এদিকে আনায়া দাঁত কটমট করে বিরবির করতে করতেই রুমের আশেপাশে ঘুরতে লাগলো। এই রুমে বসার জন্য আলাদা কোনো সোফাও নেই। এরমানে শুতে হলে একদম ফ্লোরে শুতে হবে। নয়তো কোনো উপায় নেই।

আনায়া প্রচন্ড বিদ্বেষ নিয়ে খাট থেকে খানিকটা দূরে গিয়ে ফ্লোরে বসতেই অতিরিক্ত ভারী এই কারুকাজ করা লেহেঙ্গার দরূন প্রচন্ড অতিষ্ঠ হয়ে উঠলো। সেই সকাল থেকে এখন পর্যন্ত এভাবেই এক লেহেঙ্গা পড়ে সে কি করে রইছে তা তো সে নিজেই জানে। অন্যদিকে এখন তো মধ্যে রাতের চেয়েও হয়তো বেশি রাত। কেমন যেন ক্লান্তিতেই চোখ দুটো লেগে আসছে। অথচ ব্লাউজের চুমকি পাথরের কারুকাজে শরীর অস্থিরতায় অবশ হয়ে যাচ্ছে।

আনায়া মাথা উঁচিয়ে একবার খাটের দিকে তাকালো। কাত হয়ে শুয়ে থাকা কেনীথের পিঠ ব্যতীত কিছু দেখা যাচ্ছে না। ঘুমিয়ে গিয়েছে কিনা তা জানা নেই। অবশ্য এতো তাড়াতাড়ি ঘুমানোর কথাও না আর যদি ঘুমিয়েও যায় তবুও আনায়ার কিছু আসে যায় না। তার নিজের ঘুম হারাম করে কেনীথের শান্তির ঘুম আনায়া বসে বসে তো আর সহ্য করবে না।

আনায় আগে পিছে কিছু না ভেবে জোরে চেঁচিয়ে বললো,

“এই যে শুনছেন…?”

কেনীথ কোনো প্রকার নড়াচড়া না করেই গম্ভীর সুরে উত্তর দিলো,

—“বল”

আনায়া পুনোরায় তেঁজ নিয়ে বললো,

—“কি বলবো আমি, ঘুমানোর জন্য বিছানা দিলেন না তো ঠিক আছে কিন্তু…

আনায়া নিজের সম্পূর্ণ কথা শেষ হওয়ার আগেই কেনীথ নিজের পাশ থেকে একটা বালিশ নিয়ে আনায়ার দিকে না তাকিয়েই ছুঁড়ে মারলো। যা আচমকা আনায়ার মাথায় এসে লাগলো।

—“এখন চুপচাপ ঘুমা।”

আনায়া খানিকটা ক্ষে*পে গিয়ে বললো,

“বেশি বোঝেন কেনো? আগে আমার কথা শেষ হতে তো দিন। আমি বলছিলাম… এসব লেহেঙ্গার চুমকি পাথরের মাঝে আমি আর থাকতে পারছি না। তুলে আনায়ার সময় তো হুট করেই নিয়ে এলেন এবার দয়া করে একটা নরমাল ড্রেসের ব্যবস্থা করে দিন!”

আনায়ার মুখের দিকে পিঠ দিয়ে কাত হয়ে শুয়ে থাকা অবস্থাতেই কেনীথ বললো,

—“সরি, এই মূহুর্তে এসবের কোনো ব্যবস্থা করতে পারনো না। আমার বাড়িতে মানুষ হিসেবে আমি একাই থাকি, সেক্ষেত্রে….

কেনীথ নিজের কথা শেষ না করেই বিছানায় হাতড়ে নিজের কালো টিশার্টটা নিয়ে পুনোরায় আনায়ার দিকে ছুঁড়ে মা*রলো। এবং সাথে সাথেই উল্টো হয়ে শুয়ে বালিশে মুখ দিয়ে থাকা অবস্থাতেই বললো,

—“লাস্ট অপশন হিসেবে ঐ টিশার্ট। চাইলে পড়তে পারিস। এমনিতে আমার কাছে আরো নতুন টিশার্ট রয়েছে কিন্তু এখন শোয়া থেকে উঠে আবার ড্রেসিং রুমে… আমার ঘুম পাচ্ছে। আমি তোর জন্য এতো কষ্ট করতে পারবো না। আর তোর ড্রেসের ব্যবস্থা সকালে করে দেবো। এখন তুই কি করবি তোর ব্যাপার কিন্তু আমাকে আরেকবার বিরক্ত করলে সোজা উপরে পাঠানোর ব্যবস্থা করবো।”

এদিকে বালিশের মাঝে মুখ রেখে কথাগুলো তো কেনীথ অকপটে বলে শেষ করলো কিন্তু আনায়া থামলো না।সে কেনীথের কথা শেষ হতে হতেই মুখ ভেঙ্গিয়ে প্রথমে বিরবির করে বললো,

“সোজা উপরে পাঠানোর ব্যবস্থা করবো… আসছে আমার।”

এই বলেই পুনোরায় দাঁত কটমট করে বললো,

“লাগবে না আপনার দয়ার টিশার্ট। দয়া করে বাঁচতে দিয়েছেন এই তো অনেক। আপনি আর আপনার জ*ঘন্য টিশার্ট জাহান্নামে যান।”

এই বলেই আনায়া কেনীথের টিশার্ট টা দিয়ে ইচ্ছে করে জোরে জোরে ঘষামাজা করে ফ্লোরটা খানিকটা পরিষ্কার করে নিলো। এরপর সেই টিশার্টটা সরাসরি কেনীথের উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে ফেললেও তা কেনীথের গায়ে না লেগে পুনোরায় বিছানার কোণায় পড়ে রইলো।

কালচে ফার্নিচার, কালচে দেওয়ালে ঘেরা চাপ পাশে হলুদ রং-এর হালকা আলো জ্বলছে। রুমটা ধীরে ধীরে আনায়ার কাছে অন্ধকার হয়ে আসতে লাগলো। বুঝতে পারলো মাথাটা আর চলছে না, এবার ঘুমে পুরো চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসছে। আনায়া নিজের লেহেঙ্গার অস্বস্তি নিয়েই ফ্লোরে রাখা বালিশে মাথা রেখে কাচুমাচু করে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ লেহেঙ্গার জন্য প্রচন্ড অস্বস্তি হলেও একটা সময় তা ঘুমের ঘোরে হারিয়ে ফেলে, নিজেই ঘুমের দুনিয়ায় ডুবে গেলো।

___________

হয়তো বা গভীর রাত। চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার। আনায়ার চোখজোড়া বন্ধ। তাই চারপাশে আলো রইলেও হয়তো এই মূহুর্তের জন্য তার কাছে তা সম্পূর্ণ অন্ধকারই ঠেকবে। কিছুক্ষণ আগেও ফ্লোরে থাকায় শরীরে মৃদু ঠান্ডা অনুভব হলেও এখন আর হচ্ছে না। অদ্ভুত রকমের উষ্ণতায় হারিয়ে যাচ্ছে আনায়া।

আনায়া নিজের মাথায় কারো হাত বুলিয়ে দেওয়া অনুভব করছে। তবে চোখ খুলে সেই মানুষটিকে দেখার মতো পরিস্থিতিতে সে নেই। মস্তিষ্ক তার ঘুমের ঘোরে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে রইছে।

তবে হুট করেই ছোট বাচ্চাদের মতো গুটিসুটি হয়ে কারো উন্মুক্ত দেহের বক্ষপিঞ্জরে ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা করলো। অবশ্য সে নিজে থেকে নয় বরং কোনো বলিষ্ঠ হাত তার দেহকে টেনে নিতেই সে নিজেও তাতে সাই দিলো। তবে তার মাথায় হাত বুলানো বন্ধ হতেই আনায়া ঘুৃমের ঘোরে দু একটা শব্দ থেমে থেমে বলতে লাগলো,

“রেহান… মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে। প্লিজ… প্লিজ একটু মাথায় হাত… বুলিয়ে দেও না।”

এই বলতে না বলতেই যেন আনায়াকে ঘুম আবারও টেনেহিঁচড়ে ধরলো। তবে কিছুক্ষণের মাঝেই অনুভব করলো সেই বলিষ্ঠ হাতে কেউ তাকে আরো খানিকটা জড়িয়ে ধরলো সঙ্গে আলতো হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেও লাগলো। এদিকে আনায়ারও আর এক মূহুর্তও লাগলো না সম্পূর্ণ রুপে ঘুমের দুনিয়ায় তলিয়ে যেতে।

___________

অন্ধকারের কালো আভাস মুছে গিয়ে চারপাশে ভোরের আলো ফুটে গিয়েছে। কিন্তু আনায়া ফ্লোরে পড়ে পড়ে বেজায় ঘুমাচ্ছে। কত রাতে ঘুমিয়েছে তা জানা নেই কিন্তু আপাতত তার ঘুম আর অন্যান্য দিনের মতো সকাল সকাল ভাঙ্গেনি। তবে আরামের ঘুম আর বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না।আনায়া ঘুমের মাঝে অনুভব করলো কেউ তার পিঠে অনবরত ঠেলাঠেলি করছে। আনায়া ঘুমের মাঝেই কপাল কুঁচকে নড়েচড়ে রাগান্বিত সুরে বললো,

—“ইনায়া ভাগ এখান থেকে। বিরক্ত করিস না, ঘুমাবো….

আনায়া নিজের কথা শেষ না করতেই আবারও ঘুমিয়ে যেতে নিলে হঠাৎ রাম ধমকে চমকে সোজা উঠে বসে পড়লো।

—“পরে ঘুমাবি, এখন ওঠ!”

আনায়া প্রথমে চমক গিয়ে কেনীথের দিকে কপাল কুঁচকে খানিকটা সময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ চোখের সামনে কেনীথকে দেখে কিছু বুঝে উঠতে পারছিলো না সে কোথায় আছে। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই গতকালের সব ঘটনা মনে এলেই দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।

কিন্তু কেনীথের কাজকর্ম দেখে ওর সকাল সকাল মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। নিচে ফ্লোরে শুয়ে যখন আনায়া ঘুমাচ্ছিল তখন কেনীথই ওর পিঠে পা দিয়ে গুঁতাচ্ছিলো আনায়াকে ঘুম থেকে তোলার জন্য। আনায়া ভেবে পায় না একটা মানুষ কতটা অসভ্য হলে এমনটা করে।

আনায়া নিজের ক্ষিপ্ত চোখে মাথা উচিয়ে শিরদাঁড়া সোজা করে দাড়িয়ে থাকা কেনীথকে দেখলো এবং বলতে লাগলো,

—“কি চাই? এমন অসভ্যের মতো কেনো করছেন?”

কেনীথের গম্ভীর মুখ খানা একই রইলো। সকাল বেলায় একদম সেজেগুজে কালো টিশার্ট আর প্যান্ট পড়ে হাজির হয়েছে। সঙ্গে হাতে কয়েকটি শপিং ব্যাগও রয়েছে। আনায়ার কথা শোনা মাত্রই তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে শপিং ব্যাগ গুলো ওর দিকে ছুঁড়ে ফেললো। যেগুলো কিনা তার লেহেঙ্গা আর কোলের কাছে গিয়ে পড়লো। আনায়া চোখ মুখ কুঁচকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কেনীথ নিজের পকেটে দু’হাত ঢুকিয়ে গম্ভীর সুরে বললো,

—“গোসল করে এখান থেকে কোনো একটা ড্রেস পড়ে নিস। দ্বিতীয়বার যেন একই কথা বলতে না হয়।”

—“এতো সকালে এগুলো আপনি কোথায় পেলেন। আপনি কি…

—“ওসব তোর না জানলেও চলবে। যেটা বলছি সেটা কর। ফ্রেস হয়ে রান্না করবি।”

আনায়া বিস্ফোরিত সুরে বললো,

—“মানে? আপনি কি আমায় এখানে কাজের লোক বানানোর জন্য নিয়ে এসেছেন? আমি পারবো না এই সকাল সকাল গোসল করে, আপনার জন্য রান্না করতে। এতে চাইলে আমায় মে*রে ফেলতে পারেন। এমনিতেও আমার আর বাঁচার শখ নেই।”

প্রথমে আনায়ার গলার সুর ক্ষি*প্ত রইলেও পরবর্তী কথা শেষ করে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। এদিকে কেনীথ বিরক্তির সুরে বললো,

—-“অযথা বকবক করতে থাকা মানুষজন আমার পছন্দ না। আমার ব্যবস্থা আমি নিজেই করতে পারি। এখন তুই তোরটা কর। তোর খাওয়ার টাইপের জন্য যা যা লাগে মোটামুটি সবই এনে দিয়েছি। বাকি নিজের রান্নাটুকু এখন নিজই করে নে। আমি আর কোনো হেল্প করতে পারবো না।
আর হ্যাঁ, এতো সকালে তুই গোসল করবি কিনা তা তোর ব্যাপার। কিন্তু এমন অপরিষ্কার চেহারা আর জামাকাপড় নিয়ে ভুলেও আমার কিচেনে ঢুকবি না। যেতে হলে গোসল করেই যাবি। অপরিষ্কার লোকজন আবার আমার একটু বেশিই অপছন্দ ।”

কেনীথ কথা শেষ হতে না হতেই বড়বড় পা ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো। এদিকে আনায়া কিছুক্ষণ তব্দা খেয়ে কেনীথের কাজকর্ম দেখার পর দাঁত খিঁচে বললো,

—“ইব*লিশ শয়*তান! আমাকেই অপরিষ্কার বলে গেলো? ইচ্ছে তো করছে একে চি*বিয়ে খেয়ে বাঁচি।”

এই বলেই কিছুক্ষণ বিরবির করে রাগ ঝাড়ার পর শপিং ব্যাগগুলো একবার কোনোমতে বিরক্তি নিয়ে দেখলো। প্রায় ৬-৮ টা জামা নিয়ে এসেছে। হঠাৎ করেই আনায়া কি যেন ভেবে মনে মনে বললো,

—“যা ভেবেছিলাম তাই, এই বেটায় আমায় এতো সহজে মারবে না। এতোগুলা জামা নিশ্চিয় আমার লা*শকে পড়ানোর জন্য নিয়ে আসনি। উদ্দেশ্য তো এর অন্য কিছুই। শুধু কি তাই জানতে হবে। আর না জানলেও সমস্যা নেই। আগে আমায় এখান থেকে যেকোনো উপায়ে বেড়োতে হবে।”

এই বলেই আনায়া কয়েকটা জামা বাহির করে দেখলো মোটামুটি সবগুলো জামাই কালচে লাল আর কালোর কম্বিনেশনর নয়তো পুরোটাই কালো। আনায়া পুনোরায় বিরবির করে বললো,

—“নিজে এক ইব*লিশ, এখন আমাকেও বানাতে চাচ্ছে ইব*লিশ।সব কালো, এমন কালো তো শ*য়তানই পড়বে।”

তবুও আনায়া বাধ্য হয়েই একটা ড্রেস বের করে সম্পূর্ণ খুলে দেখতেই খানিকটা অবাক হলো। এগুলো তো একদম আনায়ার সাইজের আর সঙ্গে সে যেমন টাইপের কুর্তি গুলো পড়ে ঠিক তেমনই। আনায়া মনে মনে ভাবলো কেনীথ তো তাকে এসব জামায় আগেও দেখেছিলো কিন্তু তার ড্রেসের একদম খাপে খাপ সাইজের খবর কি করে জানলো।

এরই মাঝে হঠাৎ মনে পড়লো আজ রাতের কথা। তার মনে হচ্ছে আজ সে বিছানাতেই শুয়েছিলো। এবং তার পাশে হয়তো কেউ ছিলো। তার সাথে আনায়া কথাও বলেছে কিন্তু আনায়া আদোও নিশ্চিত হতে পারছে না যে এসব তার সপ্ন ছিলো নাকি বাস্তব।

এসব ভাবতে গিয়ে মূহুর্তেই নিজেকে ধমকে শুধালো যে,এসব কিছুই তার সপ্ন ছিলো। রেহানের সাথে বিয়েটা হলে আজ নিশ্চয় তাকে এখানে থাকতে হতো না।আনায়া যতই নিজেকে ঠিক রাখতে চায়না কেনো। শেষমেশ নিজের এই পরিণতি তাকে ভেতরে ভেতরে হুটহাট আ*ঘাত করে কাঁদিয়ে দেয়। এখনও অবশ্য কয়েক ফোঁটা জল চোখ হতে গড়াতেই তা নিমিষেই হাতের তালুর দরূন গায়েব করে ফেললো।

____________

আনায়া গোসল করতে গিয়ে আরেক দফায় অবাক হলো। এতো বড় বিলাসবহুল বাথরুম? তবুও কতটা ভুতুড়ের মতো লাগছে। কালো, সাদা, লাল… উফ, এই বাড়ির ডিজাইন গুলোই যথেষ্ট, সাধারণ মানুষকে পাগল বানিয়ে দিতে। আনায়া ওতো কিছু না ভেবে দ্রুত গোসল করে নিলো।

গোসল শেষ করেই একপ্রকার কাঁপতে কাঁপতে বাহিরে এলো। গোসলের পানি নরমলই ছিলো তবে এতো সকালে তা পুরো বরফ পানির মতো লেগেছে আনায়ার। আর যাই হোক, গোলসে গিয়ে তো আর কেনীথকে এই বিষয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করে জানাতে চাইবে না। অবশ্য গোসল করার সময় ততটা ঠান্ডা টের না পেলেও এখন গোসল শেষে ভালোই টের পাচ্ছে।

আনায়া নিজের ভেজা চুল নিয়ে রুমে আসতে না আসতেই হঠাৎ তার কানে এলো,

—“এমন মৃগীরোগীর মতো কাঁপা-কাঁপি করছিস কেনো?”

বিছানায় কেনীথ আর তার কথা শুনেই আনায়ার মেজাজ খারাপ হলো। এই লোক আবার এসেছে?

আনায়া কিছু না বলে কালো রংএর টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এগিয়ে গিয়ে বললো,

—“আমি যাই করি না কেনো, আপনার এতো সমস্যা কি?”

আনায়ার কথার উত্তরে কেনীথ কিছুই বললো না। বরং আনায়ার কাছে এগিয়ে গিয়ে তার ড্রেসিং টেবিল থেকে একটা হেয়ার ড্রায়ার বের করে আনায়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,

—“ধর… তাড়াতাড়ি চুল শুকিয়ে নে। তোর অসুখ হলে আমার কিছু আসে যায় না কিন্তু সারাদিন কানের কাছে খুকখুক কাশি আর হাঁচির শব্দ আমি সহ্য করতে পারবো না।”

এই বলেই কেনীথ পাশেই ভাব নিয়ে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে পড়লো। অন্যদিকে আনায়া কেনীথের দিকে ক্ষি*প্ত চোখে চেয়ে ওর হাত থেকে ঝাপটে হেয়ার ড্রায়ারটা হাতে নিলো।

এদিকে কেনীথ হেয়ার ড্রায়ারটা লাইনের সাথে কানেক্ট করে দিয়েছে কিন্তু আনায়া হেয়ার ড্রায়ারের সুইট অন করতে গিয়ে ওটা ভুলবশত ওর হাত থেকে আচমকা পড়ে। যায় সঙ্গে সঙ্গে চলতে থাকা হেয়ার ড্রায়ার মূহুর্তেই বন্ধ হয়ে যায়।

কেনীথ আনায়ার কাজে ওকে কিছু না বলেই আগে হেয়ার ড্রায়ারটাকে তুলে পুনরায় চালু করতে গিয়ে দেখলো তা আর অন হচ্ছে না। স্তব্ধ চোখে আনায়ার দিকে তাকাতেই আনায়া ভাবলেশহীন ভাবে বলতে লাগলো,

“আমি ইচ্ছে করে কিছু করিনি। ভুলবশত হয়ে গিয়েছে। আর এসব জিনিস একটু দেখেশুনে কেনা উচিত। একদম হকার মাল দুই টাকার মতো৷পড়ার আগেই ভেঙ্গে যায়। আপনি বরং…”

আনায়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই কেনীথ আরো একটা হেয়ার ড্রায়ার বের করে তা অন করে বললো,

“একদম চুপ থাকবি।”

এই বলেই কেনীথ আনায়ার চুলগুলো আগা থেকে রশ্মির মতো ধরে ধরে শুকাতে লাগলো। যেন মনে হচ্ছে চুল নয় বরং ভেজা পাটের সুতো শুকাচ্ছে। এদিকে আনায়া তড়িঘড়ি করে কয়েকবার মানা করলেও কেনীথ শুনলো না। নিজের মতো করে কাজ চালিয়ে যেতে লাগলো আর আনায়া হতে লাগলো বিরক্ত।

তবে কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই কেনীথ হেয়ার ড্রায়ারটাকে আনায়ার হাত ধরিয়ে দিয়ে বললো,

“এখন নিজেরটা নিজেই কর। আমি আর পারবো না।”

এই বলেই কেনীথ বড়বড় পা ফেলে অকপটে রুম হতে বেড়িয়ে গেলো। অন্যদিকে বেআক্কেল মতো তাকিয়ে আনায়া কেনীথের যাওয়ার পানে দেখতে লাগলো। এই মানুষটা এমন কেনো। পুরোই অসহ্যকর। আনায়া মুহূর্তেই নিজের চোখমুখ বিরক্তিতে কুঁচকে বললো,

—“আমার জীবনের সবচেয়ে বাজে,শয়*তান, অ*সভ্য, উদ্ভট, আর বিরক্তিকর লোক এই কেনীথ। অভিশাপ দিচ্ছি, এই বেটার কপালে এমন বউ জুটুক যাতে দিনে রাত্রে বউয়ের প্যারাতেই এর জীবন ত্যানা ত্যানা হয়ে যায়।”

______________

কালো রংএর লম্বা কুর্তি পড়ে সঙ্গে গলায় কালো রংএর ওরনা ঝুলিয়ে নিচে নেমে এলো আনায়া। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সোফার একপাশে পায়ের উপর পা তুলে ভাবলেশহীন হয়ে ফোন চালিয়ে যাচ্ছে কেনীথ। তবে আনায়া খেয়াল করলো কেনীথকে এখন অনেক বেশিই গম্ভীর দেখা যাচ্ছে। চোখেমুখে যেন চিন্তার ছাপও রয়েছে।

আনায়া সেসবে পাত্তা দিলো না। এই বাড়ির কিচেনটা কোন দিকে সেটা খুঁজে দেখাটা জরুরি। কিন্তু আগ বাড়িয়ে কি থেকে কি করে ফেলবে, সে জন্য কেনীথকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করলো। যতই হোক, আনায়ার কাছে এই বাড়িটা কেনো যেন কেনীথের চেয়েও বেশি অদ্ভুত মনে হয়। সে মনে মনে ভাবছে,যখন ও এখান থেকে বেড়িয়ে গিয়ে মানুষকে জানাবে যে তাদের শহরে আশেপাশে এমন জায়গাও আছে; তখন হয়তো তার কথা কেউই বিশ্বাস করবে না। উল্টো তাকে পাগলও ভাবতে পারে।

আনায়া এসব চিন্তা ভাবনা ফেলে রেখে কেনীথের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। আর কেনীথ আনায়াকে নিজের দিকে অগ্রসর হতে দেখেই ওর দিকে আচমকা বলতে লাগলো,

—“দূরে থাক, খবরদার আমার আশেপাশে আসবি না।”

আনায়া মূহুর্তেই থেমে গেলো। তবে কপাল কুঁচকে বিরক্তি নিয়ে বললো,

—“আজব তো, আমি কি আপনার আশেপাশে ঘেঁষার জন্য ম*রতে থাকি নাকি? এমন অদ্ভুত ব্যবহার না করে, এটা বলুন যে আপনার বাড়ির কিচেন কোথায়? আমার খিদে পেয়েছে। নিজে যখন কিছুই করবেন না তখন আমাকে তো আমার ব্যবস্থা করতেই হবে, তাই না?

কেনীথ গম্ভীর মুখে আনায়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর বললো,

—“সোজা গিয়ে বামে… ”

এই বলেই কেনীথ পুনরায় নিজের কাজে মনোযোগ দিলো। এদিকে আনায়া কেনীথের এমন উদ্ভট ব্যবহার আর ভাব দেখে মনে মনে ভেঙ্গিয়ে বললো,

—“এ্যাহ… কি আমার কাজ দেখাচ্ছে… বেটা খা*চ্চোর।

আনায়া কেনীথের কথামতো ধীরে ধীরে কিচেনটা খুঁজে নিলো। কিন্তু কিচেনে পা রাখতেই বিস্ময়ে মুখ কিঞ্চিৎ হা হয়ে গেলো। যাস্ট একজন মানুষ থাকে এই বাড়িতে অথচ…এটা কিচেন না খেলার মাঠ। এতো বড় কিচেনে এই লোক এমন কি কাজ করে। বাড়িতে তো কোনো সার্ভেন্টও নেই। আর আনায়ার কাছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, সবার অগোচরে এই জঙ্গলের মাঝে এমন রহস্যময় বাড়িটা বানিয়েছে কে?

মানে কেনীথ তো আর নিজে নিজে বাড়ি বানায়নি, নিশ্চয় কোনো ইন্জিনিয়ার, সঙ্গে কর্মচারী তো থেকেছেই। বাড়িটাও তো ঠিকভাবে দেখা হয়নি। কত আগের বাড়ি কে জানে। যাই হোক, আনায়া এখন আর এগুলো নিয়ে ভাবতে চাইলো না। তবে এখানেও কালচে লাল আর কালো রংএর ছড়াছড়ি দেখে আনায়া বিরক্ত হলো। একটা মানুষের শখ নয় বরং যথেষ্ট পাগল হলে নিজের বাড়িকে ভুতের বাড়ি বানিয়ে ফেলে।

এদিকে আনায়া কিচেনের ভেতরে গিয়ে দেখলো গুনে গুনে দুটো বড়সড় ফ্রিজ রাখা। এবার এই বিষয়টি নিয়ে খানিকটা তাচ্ছিল্যের সাথে হাসলো।

“একজন মানুষ অথচ ফ্রিজ লাগে দুটো। কি বড়োলোকি… অবশ্য এসবকে বড়লোকি নয়, ভন্ডামি বলে। নিশ্চয় এই কেনীথ বেটা কালা টাকা কামায়। ”

এসব বিরবির করতে করতেই আনায়া প্রথম ফ্রিজটা খুলতে যেতেই হুট করে আচমকা পেছন থেকে তার নামে ধমক শুনে থেমে গিয়ে পিছনে ফিরলো।

—“ওই ফ্রিজ খোলার প্রয়োজন নেই।”

আনায়া কপাল কুঁচকে বললো,

—“কেনো?এখন কি আমাকে…

—“বাজে কথা না বলে, পাশের ফ্রিজ থেকে যা লাগবে তা নিতে পারিস। ঐ ফ্রিজে কেনেল আর ক্লারার জন্য খাবার আলাদা করে রাখা।”

—“আপনার কুকুর? ”

—“হুম।”

—“ঢং দেখে বাঁচি না। দেশের কত মানুষ ভাত পায় না আর এদিকে কুকুরের জন্যই নাকি আলাদা ফ্রিজ।”

আনায়ার তাচ্ছিল্যের সাথে বলা কথাগুলো শুনে কেনীথও বিরক্তি নিয়ে বললো,

—“দেশের মানুষের চিন্তা তোর করতে হবে না।তুই তোর নিজের চিন্তা কর। আর কেনেল আর ক্লারা যাস্ট কুকুর না ওরা আমার…

কেনীথর কথা শেষ হওয়ার আগেই আনায়া ফট করে বলতে লাগলো,

—“আপনার বাচ্চা? তা আপনার বউ বুঝি কুকুর। কু/ত্তারে বিয়ে করছিলেন তাই না?”

মূহুর্তেই কেনীথের চোখমুখ শক্ত হয়ে গেলো। অথচ আনায়ার মুখে দিব্বি শয়তানি হাসি। এদিকে কেনীথ নিজেকে সর্বোচ্চ স্বাভাবিক রেখে খানিকটা তাচ্ছিল্যের সাথে বললো,

—“ভুল কিছু বলিস নি। সত্যিই কু/ত্তারেই বিয়ে করছিলাম। তবে সেই কু/ত্তার বাচ্চা কেনেল আর ক্লারা নয়।”

মূহুর্তেই আনায়া কিছুটা তব্দা খেলেও পুনোরায় জিজ্ঞেস করলো,

—“মানে? আপনি কি সত্যিই…”

—“সেটা তো তুই-ই ভালো জানিস।”

এতোটুকু বলেই কেনীথ আর কোনো কথা না বলে সোজা কিচেন থেকে বেরিয়ে এলো। এদিকে আনায়া চোখ ছোট ছোট করলো। সঙ্গে কেনীথকে বিরবির করে কিছু গালাগালি করতে করতেই চুপচাপ নিজের রান্নায় মনোযোগ দিলো।

___________

একটা প্লেটে দুটো রুটি আর কিছু সাধারণ সবজির মিক্স ভাজি সাজিয়ে, আনায়া খেতে খেতে কেনীথের সামনে এসে দাঁড়ালো। এবং একবার সবজি সহ রুটির টুকরো মুখে দিতে দিতেই বললো,

—“এই যে আপনি খাবেন? যদি খান তবে আপনার জন্যও নিয়ে আসছি।”

—“নাহ!”
কেনীথ এবার নিজের ফোন ছেড়ে নিজের আই প্যাডের দিকে চেয়ে খুব তড়িঘড়ি করে কিছু করে যাচ্ছে। আনায়ার কথা শুনে ওর দিকে না তাকিয়েই উত্তরে শুধু এতোটুকুই বললো।
এদিকে কেনীথের এমন ভাব দেখে আনায়া ভাবলেশহীন হয়ে বিরবির করে বললো।

—“না খেলে আমার কি!”

এই বলেই আনায়া গিয়ে কেনীথ পাশে বসে অল্প অল্প রুটি ছিঁড়ে তাতে সবজি তুলে খেতে লাগলো। এরই মাঝে হুট করে পাশে থাকা কেনীথ কি করছে তা দেখার শখ জাগলো। তবে আনায়া নিজের শখকে চাপা দিয়ে একই জায়গায় চুপচাপ পায়ের উপর পা তুলে খাবার খেতে লাগলো। তবে বেশিক্ষণ স্থির থাকতে পারলো না। তড়িঘড়ি করে কেনীথের উদ্দেশ্য বললো,

—“আচ্ছা শুনেন… আপনার বাগানে একটু যেতে দেবেন। বেশি কিছু না, যাস্ট একটু ঘুরে আসবো।”

কেনীথ নিজের মতো কাজ করতে থাকা অবস্থাতেই অকপটে বললো,

—“এটা আমার বাড়ি…কোনো রিসোর্ট নয়। আর আমি তোকে পিকনিকে নিয়ে আসিনি।”

আনায়ার চোখমুখ শক্ত হলো। সঙ্গে মুখে দেওয়ার জন্য রুটির টুকরো ধরে রাখা ডান হাতটা থেমে গেলো।

—“আমি জানি সেটা… কিন্তু আমি আপনার মতো প্রতিবন্ধী না। না এখানে জেলখানার মতো ফিল পাচ্ছি না বাড়ির মতো,পুরো জগাখিচুরি।”

কেনীথ এবার আনায়ার দিকে ফিরে তাকালো। ওর দিকে খানিকটা মুখ এগিয়ে নিয়ে মুচকি হেসে বললো,

—“তো তুই কি চাচ্ছিস শুনি?”

হঠাৎ কেনীথের এমন রুপ চেঞ্জ হতে দেখে আনায়া তব্দা খেয়ে গেলো। ও বললোটা কি আর কেনীথ এভাবে কি বলতে চাচ্ছে। আনায়া কেনীথকে বেআক্কেলের নজরে দেখে ধীর সুরে বলতে লাগলো,

—” আমি আবার কখন কি….

আনায়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই কেনীথ একটা অদ্ভুত কাজ করে ফেললো। হুট করেই আনায়ার কথার মাঝে আর হাতে থাকা রুটির টুকরোটা মুখে তুলে নিলো। এবং খেতে খেতে গম্ভীর কন্ঠে বললো,

—“জঘন্য খাবার বানাস তুই। সরে যা এখান থেকে।”

এই বলেই কেনীথ তো পুনোরায় নিজের কাজে মনোযোগ দিলো কিন্তু আনায়া পুরো তব্দা খেয়ে থ হয়ে বসে রইছে। প্রথমে কেনীথকে বেআক্কেল ভাবা আনায়া নিজেই এখন বেআক্কেল হয়ে গিয়েছে। কিছুক্ষণ বিস্ফোরিত চোখে কেনীথের দিকে তাকিয়ে থাকার পর নিজের হাতের দিকে তাকিয়েই চেঁচিয়ে বলতে লাগলো,

—“অসভ্য লোক, অভদ্র লোক। বলেছিলাম তো খেতে ইচ্ছে হলে আমি নিজেই এনে দিচ্ছি… তা না। এ্যাহ…ছিহ…আমার হাতেই…আমার খাওয়াটাই নষ্ট করে দিলো।”

আনায়ার এমন কথাবার্তায় কেনীথের মাঝে কোনো হেলদোল হলো না দেখে আনায়া শেষে দাঁত খিচে এসব বলতে বলতেই সোফা থেকে উঠে গিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো। এদিকে আনায়া চলে যেতেই কেনীথ মুচকি হেসে বিড়বিড় করে বললো,

—“ফায়ার বার্ড… ।”

তবে এটা বলা মাত্রই কেনীথ মূহুর্তেই চোখমুখ পুনোরায় গম্ভীর করে ফেললো। আর নিজেকে বারবার সচেতন করতে চাইলো নিজের প্রত্যেকটা ছোট-বড় পদক্ষেপ নিয়ে। এরই মাঝে হুট করে আজ রাতের কথা মাথায় এলো।
আনায়া তখন প্রচন্ড ঘুমে আসক্ত। অন্যদিকে ছিলো কেনীথ সজাগ। চারপাশে পিনপতন নিরবতায়। কিছুক্ষণ বিছানায় কেনীথ এপাশ ওপাশ করলো। কিছুতেই ঘুম আসছে না।হঠাৎ এটা কোন রোগে ধরলো কে জানে। এমনিতে অবশ্য এটা রোগ নয় কারণ কেনীথ হলো রাত জাগা পাখি। অন্ধকারই তার ভালোবাসা কিংবা ভালোলাগা। কিন্তু এখন তার ঘুম না হলেও কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছে।

যে কারণে কেনীথ আচমকা উঠে বসলো। মাঝরাতে খুব মৃদু পরিসরে ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে তার। টিশার্ট খুঁজতে এসে বিছানা হতে নিচে নেমে এলো। তখনই টিশার্টের আগে নজর পড়লো গুটিশুটি হয়ে ফ্লোরে শুয়ে থাকা আনায়ার দিকে। তবে মূহুর্তেই কেনীথ ওর দিক হতে নজর সরিয়ে ফেললো।

তখনই আবার নজর পড়লো আনায়ার পায়ের কাছে পড়ে থাকা নিজের কালো রংএর টিশার্টের দিকে। টিশার্ট তো নয় মনে হচ্ছে ঘর মোছার ত্যানা। ঠিক এমন ভাবেই টিশার্টের হাল বানিয়েছে আনায়া।

হুট করেই মেজাজটা খারাপ হতেই পুনোরায় আনায়ার দিকে ফিরে তাকালো। কিন্তু মূহুর্তেই নিজের মাঝে জেগে ওঠা মেজাজটা গায়েব হয়ে গেলো। কেনীথ লক্ষ করে দেখলো আনায়ার ঠোঁট দুটো অনবরত নড়াচড়া করছে। প্রথমে ভাবলো হয়তো ঠান্ডায় কাঁপছে কিন্তু আরেকটু ভালো করে খেয়াল করতেই দেখলো ও বিড়বিড় করে হয়তো কিছু বলছে।

কেনীথ কপাল কুঁচকে ধীরে পায়ে আনায়ার কাছে গিয়ে ওর মুখের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। এরপর ওর এলোমেলো চুল আর ঘুমন্ত সেই নিষ্পাপ চেহারায় মূহুর্তেই আঁটকে গেলো। সেইবার প্রায় ঘন্টা খানেক ধরে অফিসে আনায়ার এই ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আনায়ার পুরো মুখশ্রীর শ্রেণিবিন্যাস করেছিলো। সেই কথা মাথা আসতেই কেনীথ কিঞ্চিৎ ঢোক গিলে আনায়ার ঠোঁটের দিকে নজর দিলো। হ্যাঁ,সত্যিই আনায়া ঘুমের মাঝে কিছু বলছে। তবে তা ঠিকঠাক শোনা যাচ্ছে না। কেনীথ নিজের মাথাটাকে কিঞ্চিৎ কাত করে আনায়ার মুখের কাছে নিয়ে এলো। ঠিক তখনই আনায়ার অস্ফুটস্বরে বলা কথাগুলো ওর কানে এলো,

—“শয়তান বেটা কেনীথ…দেখিস তোর জীবনেও ভালো হবে না।…তোর বউ তোকে ঠিকঠাক মতো… ভাতও খেতে দিবে না। না খেয়েদেয়ে শুকিয়ে কঙ্কাল হয়ে তুই ম*রে যাবি।”

আনায়ার এমন কথাবার্তা শুনে কেনীথ আচমকা ওর মুখের দিকে তাকালো। কি সব অদ্ভুত কথাবার্তা তাও সেটা ঘুমের মাঝে। আচ্ছা ও কি ঘুমের মাঝে কেনীথের সাথে ঝগড়া করছে। কেনীথ এমন চিন্তা ভাবনা করে কিঞ্চিৎ মুচকি হাসলো।

আনায়া আর ওর মুখের মাঝের দূরত্ব খুবই ক্ষীণ। কিন্তু কেনীথের গরম নিশ্বাসে মাঝেমধ্যে আনায়ার মুখের উপর আঁচড়ে পড়লেও তার মাঝে কোন হেলদোল নেই। বোঝাই যাচ্ছে, প্রচন্ড ঘুমে দিন দুনিয়া সব ভুলে গিয়েছে। এরই মাঝে কেনীথ আনায়ার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই আচমকা নিজের মুখটা পাশে সরিয়ে নিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। এবং সরাসরি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে রুম থেকেই বেড়িয়ে যেতে অগ্রসর হলো।

কিন্তু কয়েক কদম এগোনোর পর পুনোরায় আনায়ার কাছে ফিরে এসে কিছুক্ষণ সটানভাবে থমকে দাঁড়িয়ে রইলো। আর আনায়ার দিকে তাকিয়ে রইলো এক নজরে। কি যেন ভাবতে না ভাবতেই হুট করে আনায়াকে খুব সাবধানে কোলে তুলে নিলো। এরপর আনায়াকে বিছানায়া শুইয়ে দিয়ে নিজেও আনায়ার পাশে শুয়ে পড়লো।

অতঃপর আনায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে, আনায়কে নিজের বলিষ্ঠ হাতে টেনে নিতেই আনায়াও অনায়াসে কেনীথের উন্মুক্ত বক্ষস্থলের মাঝে গুটিসুটি হয়ে এগিয়ে গেলো। তবে হুট করেই তখন আনায়ার কেনীথকে রেহান ভেবে নিজের আবদার রাখায় কেনীথ বিন্দুমাত্রও রাগ করেনি। বরং দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ঘুমন্ত আনায়ার আবদার পুরন করেছে।

পুরো কয়েকঘন্টা ধরে একই ভাবে আনায়ার মাথায় হাত বুলিয়েছে আর ওকে নিজের বলিষ্ঠ দু’হাতে নিজের বক্ষস্থলের সাথে আগলে রেখেছে।পুরো সমটায় একবারের জন্যও নিজের চোখ জোড়া দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ করেনি। তবে সেই সঙ্গে মাথার মধ্যে চালিয়েছে নানান চিন্তা ভাবনার খেলা। সেই খেলায় অবশ্য একটা সময় পর কেনীথ তার নিজের উত্তরও পেয়েছে।

আর সেই কারণেই কেনীথ ভোর হওয়ার আগেই আনায়াকে পুনরায় খুব সাবধানে ফ্লোরে শুইয়ে দিয়েছে। আর এদিকে এতো কিছু হওয়ার পর এসব কিছু আনায়ার কাছে অজানাই রয়ে গেলো। অবশ্য আনায়া যদি এর মাঝে জেগেও গিয়ে কোনো সিনক্রিয়েট করতো তখন হয়তো কেনীথের রুপটাও ভিন্ন হতো।

পুরো ঘটনা পুনরায় মস্তিষ্কে পুনরাবৃত্তি করে কেনীথ সর্বশেষে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। এবং নিজের চোখমুখ অনেকটাই গম্ভীর আর শক্ত করে নিজের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো,

“কেনীথ! ইয়োর লাইফ হ্যাজ নাউ কমপ্লীটলি টার্নড ইন্টু আ ফায়ারি গেইম। যেখানে সামান্য আবেগ, অনুভূতিই তোকে সম্পূর্ণ রুপে হারিয়ে দিতে পারে। সো বি কেয়ারফুল অ্যান্ড স্টে ফোকাসড অন, হোয়াট ইউ ট্রুলি ওয়ান্ট। ”

#চলবে

#একজোড়া_আগুন_পাখি
#পর্বঃ২৫
#তুশকন্যা

প্রায় অনেকক্ষণ সময় পার হওয়ার পরও যখন আনায়া ফিরে এলো না।তখন কেনীথ নিজের কাজকর্ম সব থামিয়ে কপাল কুঁচকে কিচেনের দিকে তাকালো। ড্রইং রুম থেকে অবশ্য কিচেন সরাসরি দেখা যায় না।

কেনীথ আর দেরী না করে কিচেনে গিয়ে দেখলো সেখানে আনায়া নেই। সেখানে থেকে বেড়িয়ে যেতে নিলেও আর বেড়িয়ে এলো না। বরং ফ্রিজ খুলে কিছু মাংস স্টেক করে কেনেল আর ক্লারার উদ্দেশ্যে যেতে লাগলো।

কিচেন থেকে বেশ খানিকটা দূরে কেনেল আর ক্লারার থাকার জায়গা। কেনীথের একহাতে খাবার অন্যহাত তার পকেটে গুটানো। শিরদাঁড়া সোজা করে বড় বড় পা ফেলে হেঁটে চলেছে। কিন্তু একটা সময় গিয়ে হুট করেই কেনীথ থেমে গেলো। আচমকা পাশে ফিরে অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে বললো,

“তুই এখানে কি করছিস?”

হঠাৎ অনাকাঙ্ক্ষিত গম্ভীর কন্ঠস্বরে অন্ধকার হতে চমকে কেউ বেড়িয়ে আসতে লাগলো।
একটা সময় আনায়া ইতস্তত চেহারা নিয়ে কেনীথের সামনে এসে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বলতে লাগলো,

“আমি তো…একটু…,আপনি বাহিরে যেতে দেবেন না তাই বাড়িটাই ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম।”
কেনীথ আনায়ার দিকে কিঞ্চিৎ কপাল কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতে থাকতেই আনায়া যতটা পারলো নিজেকে স্বাভাবিক করে ফেললো। অন্যদিকে কেনীথ তার কুঁচকে থাকা কপালটাকে স্বাভাবিক করে বললো,

“এখানে ঘুরে ঘুরে দেখা যাবে এমন কিছু তো আমি দেখছি না। যাই হোক…তোর যেটা ভালো মনে হয় কর। কিন্তু ভুলেও আমার রুমে যাওয়ার চেষ্টা করবি না। নয়তো সেটা তোর জন্যই খারাপ হবে।”

আনায়া কেনীথের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে কয়েকবার চোখের পাপড়ি ঝাপটিয়ে বললো,

“ঠিক আছে, ঠিক আছে।আমি কেনো আপনার রুমে যাবো শুধু শুধু।… আচ্ছা আপনি কি কোথায় যাচ্ছেন?”

—“হুম”

কেনীথের গম্ভীর কথার সুরে আনায়া ঘাড় উঁচিয়ে বললো,

—“কোথায়?”

কেনীথ পুনোরায় গম্ভীর কন্ঠে জবাব দিলো,

—“কেনেল আর ক্লারাকে খাবার দিতে।”

আনায়া খানিকটা মুখ ভেঙ্গিয়ে বললো,

—“ওহ আপনার ঐ কুত্…আচ্ছা বাদ দিন। আমিও যাই আপনার সাথে?

—“ইচ্ছে”

কেনীথ এই বলেই আরে একমুহূর্তও দেরী না করে পুনরায় তার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। অন্যদিকে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা আনায়াও কেনীথের যাওয়ার পানে কিঞ্চিৎ মুচকি হেসে কেনীথের পেছন পেছন যেতে লাগলো।

_________

“ও মা আ…!”

—“যাস্ট শাটআপ।”

কেনীথের ধমক শুনে আনায়া নিজের চিৎকার দিতে থাকা মুখটা নিজ হাতে চেপে ধরলো। তবে কিছুক্ষণ চুপ থেকেই পুনরায় বিস্মিত চোখে কেনীথের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,

—“এগুলো কুকুর নাকি বাঘ-ভাল্লুক। এতো বড়… বড়…

এদিকে আনায়ার কথা নিমিষেই থেমে গেলো সঙ্গে আচমকা ও কয়েক পা পিছিয়ে গেলো। কেননা ওর ওমন চিৎকার শুনে শান্ত হয়ে বসে থাকা কেনেল-ক্লারা হুট করেই ডাকাডাকি করতে লাগলো। এতেই আনায়ার কলিজার পানি শুকিয়ে গিয়েছে। একে তো বড়সর দেখতে তার উপর এমন কালো কুচকুচে। আনায়ার মতে এমন কুকুর তো নিমিষেই জ্যান্ত মানুষ খেয়ে ফেলতে পারবে।

এদিকে কেনীথ আনায়ার কাজকর্মে কোনো পাত্তা না দিয়ে ক্লারা আর কেনেলের সামনে খাবার দিয়ে শান্ত হতে বললো। এরপর তার পাশেই রাখা রকিং চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ বুঁজলো। অতঃপর কেনেল আর ক্লারার উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো,

—“ওকে দেখতে কেমন লাগে?”

কেনীথের কথা পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা আনায়া না বুঝলেও কেনেল আর ক্লারা কেনীথের কথায় জোরে জোরে ডেকে সারা দিতে লাগলো। এদিকে আনায়া আবারও খানিকটা চমকে কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে কেনীথের দিকে তাকাতেই দেখলো কেনীথও তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। এদিকে আনায়া প্রথমে এই হাসির অর্থ বুঝতে না পেরে কপাল কুঁচকে ফেললো। তখনই আনায়ার উদ্দেশ্যে কেনীথ বলতে লাগলো,

“ওরা তো বলছে, ওদের নাকি তোকে পছন্দ হয়েছে।”

আনায়া কিঞ্চিৎ তব্দা খেয়ে বললো,

“মানে?”

—“মানে তোর মাংস খেতে ওদের কোনো অসুবিধা নেই?”

কেনীথের কথা শুনে আনায়া বিস্মিত চোখে বললো,

“কিহ!”

________________

খাটের উপর বসে বসে আই প্যাডে দিকে চেয়ে কপাল কুঁচকে অনবরত কি না কি করে যাচ্ছে। অন্যদিকে আনায়া বারান্দায় হতে নিচের বাগানে কিছুক্ষণ উঁকিঝুঁকি দিতেই ত্বরিত রুমের ভেতরে এসে কেনীথের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো,

—“আপনার মতো আপনার বাগানের গাছ ফুলগুলোও তো ভারী অদ্ভুত? বিশ্বাস করুন, আমি এতো তরতাজা গাছ-ফুল খুব কমই দেখেছি। এগুলোকেও কি আপনি ভিআইপি খাবার দাবার দেন নাকি? না মানে, একটু বেশিই অদ্ভুত তো… ”

কেনীথ নিজের কাজ থেকে ধ্যান সরিয়ে আনায়ার দিকে তাকালো। এবং স্বাভাবিক কন্ঠেই বলতে লাগলো,

—“তুই প্রচন্ড ফালতু ভাবে টাইম পাস করছিস। হোয়াট এভার, ভুল কিছু বলিস নি। আমার বাগানের দেখভালও ভিআইপি স্টাইলেই করি।”

আনায়া খানিকটা বিরক্ত হয়েই বললো,

—“তা আমাকেও একটু বলেন, আমিও একটু শুনি।”

—“তোর শুনে কাজ নেই। ওসবের সাধ্য তো নেই।”

—“আসছে…টাকার গরম দেখাতে।”

—“এখানে টাকা নয় কলিজার পানি লাগবে, সঙ্গে হাড় হাড্ডির গুড়ো।”

—“মানে?”

—“আপাতত আর কোনো কিছুর মানে জেনে লাভ নেই। আমাকে এখন যেতে হবে তবে যথা সময়ে ফিরে আসবো। চুপচাপ রুমে বসে থাকবি না ঘুমাবি তা তোর ব্যাপার। কিন্তু টইটই করে যে লাফালাফি করতে না দেখি।”

—“আপনার তো নাকি দিনের আলো ভালো লাগে না। তবে এখন কোথায় যাচ্ছেন?”

কেনীথ চলেই যাচ্ছিলো তবে আনায়ার কথার উত্তরে গম্ভীর কন্ঠে বললো,

—“সব কিছুর কৈফিয়ত আমি তোকে দিতে বাধ্য নই।

—“যাক বাবা, আমি আবার….

আনায়াকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কেনীথ দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো।এদিকে প্রথমে আনায়া খানিকটা ইনোসেন্ট হওয়ার ভাব নিলেও মূহুর্তেই কিঞ্চিৎ বাঁকা মুচকি হাসলো।

_________

চারপাশে শুনশান নিরবতা। বিকেল পেড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলেছে। আনায়া বিছানায় বসে সঠিক সময়ের অপেক্ষা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলো তা সে নিজেও জানে না। আচমকা ঘুম থেকে জেগে উঠে বিস্মিত হয়ে নিজের উপর গালাগালি করতে লাগলো। তবে বেশি সময় নষ্ট না করে একবার বাহিরে গিয়ে পরিস্থিতি দেখে নেওয়া উচিত। আদোও কেনীথ এসেছে কিনা তাও তো আনায়ার জানা নেই।

আনায়া চুপচাপ রুম থেকে বেড়িয়ে পড়লো। এরপর সোজা নিচে এসে প্রথমে স্বাভাবিক কন্ঠেই ডাকতে লাগলো,

—“আপনি কি আছেন?”…এসে পড়েছেন আপনি? নাকি এখনো আসেননি। মিঃ ভিকে, আপনি আশেপাশে থাকলে প্লিজ একটু সাড়া দিন।”

এটা বলেই কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর আনায়া খানিকটা মুচকি হেসে বললো,

“তারমানে আপনি কোথাও নেই, তাই তো?”

এবার আনায়া কিঞ্চিৎ বাঁকা হেসে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,

“সো মাম্মাহ… এবার কাজে লেগে পড়। যা হওয়ার হবে কিন্তু আমি হাল ছাড়বো না।”

এই বলেই আনায়া আশেপাশে আরেকটু খুঁজেও যখন কোথাও কেনীথের দেখা পেলো না তখন দ্রুত পায়ে সিঁড়িবেয়ে প্রথমে দোতলায় পৌঁছে গেলো। উদ্দেশ্য তার প্রথমে কেনীথের রুমটাকে চেক করা। সে মনেপ্রাণে বিশ্বাসী যে এখানে এমন কোনো রহস্যের সন্ধান মিলবে যা পুরো গেমকেই চেঞ্জ করে ফেলতে পারে।

আনায়া দরজা খুলতে গিয়ে দেখে দরজা বন্ধ করা। এবার সে কিছু একটা খুজতে লাগলো। মূহুর্তেই সে তার কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি খুঁজেও পেলো। তা দেখে মুচকি হেসে এবার নিজের গলা থেকে স্টার শেইপের সে লকেটটা খুলে ফেললো। এবং তা কালচে দরজার মাঝে ছোট একটা স্টার শেইপের আকৃতিতে প্রবেশ করাতেই মুহুর্তেই দরজার লকটা খুলে গেলো। তবে আনায়া এতে মোটেও বিস্মিত হলো না বরং মুচকি হেসে চেইনটা পুনোরায় গলায় পড়ে নিলো।

তার বিস্মিত না হাওয়াও অবশ্য কারণও রয়েছে। কারণ এমন ঘটনার সাক্ষী সে এর আগেও একবার হয়েছে। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পরও যখন আনায়া ফিরে এলো না এবং কেনীথ আনায়াকে খুঁজতে কিচেনের দিকে গিয়েছিলো।সেই সময়টাতে আনায়া মূলত ভিন্ন কিছুর সন্ধান পেয়েছিলো।

কিচেন থেকে খানিকটা দূরে একদম ফাঁকা জায়গা খানিকটা অন্ধকারে একটা পেইন্টিং আনায়ার নজরে পড়ে। কেনীথের বাড়িতে সব পেইন্টিং গুলো খুবই উদ্ভট হলেও এবার চেনা পরিচত সাধারণ একটা গোল্ডেন স্টারের ছবি দেখে আনায়া খানিকটা খুশি হয়েছিলো। সেটাকে আরেকটু পর্যবেক্ষণ করতে গিয়েই আনায়া খেয়াল করে বাড়ির অন্যসকল জায়গার চেয়ে এই জায়গাটা অনেকটাই পরিত্যক্তের মতো। মনে হচ্ছে ঠিকঠাক ভাবে জায়গাটা পরিচর্যাও হয় না। তবে হলেও সেটা খুব কম।

আনায়ার এমনটা মনে হওয়ার কারণ হলো আশেপাশে সহ বড় ফ্রেমে বাঁধানো ছবিটাতেও অনেকটা ধুলাবালি জমে গিয়েছে। এর কারণটা অবশ্য আনায়া ঠিক বুঝতে পারলো না তবে আনায়া ছবিটার দিকে খেয়াল করে দেখলো এই ছবিটা মোটেও স্বাভাবিক নয়।

আনায়ার আচমকা নিজের লকেটের কথা মনে পড়তেই চমকে উঠলো। তার অদ্ভুত স্টার শেইপের লকেট আর ছবিটা তো একই রকম দেখতে। একদম হুবহু কালার, ডিজাইন সব এক। এটা কি সম্ভব?

মূহুর্তেই মাথাটা পুরো ঘুরে গেলো। এদিকে সে কেনীথের পূর্বপরিচিত অন্যদিকে আবার এই সাধারণ লকেটটাও কেমন রহস্যময় হয়ে উঠলো। চারপাশে সবজায়গায় তো শুধু রহস্যই মিলছে তবে এই রহস্যের উত্তর কোথায় মিলবে তাই তো জানা নেই।

সেহেতু জায়গাটা অনেকটাই অন্ধকার তাই আনায়া চাইলেও ঠিকঠাক সবকিছু পরিষ্কার ভাবে দেখতে পেলো না। যে কারনে ছবিটা দেখতে গিয়ে এলোমেলো ভাবে হাত লেগে ছবিটা নড়ে উঠলো। আর সঙ্গেই ছবির ফ্রেমের পেছন হতে কিছু একটা নিচে পড়ে গেলো।

আনায়া প্রথমে খানিকটা চমকে উঠলেও দ্রুত নিচে পড়ে থাকা জিনিসটা হাতে নিয়ে দেখলো একটা অদ্ভুত ধরনের ছোট ছুরি। যা অনেকটা রাজকীয় কারুকার্যে শোভিত সোনালী আর কালচে রংএর। তবে উপরে একটা খোলসের মতো আরো একটা সোনালী পাতের আস্তরণ রয়েছে। যার কারণে আনায়া অনেকবার টানাটানি করেও তা খুলতে পারলো না।

এরপর আনায়া ভালো করে খেয়াল করে দেখলো ছুরিটার মাঝে একটা স্টার শেইপের ফাঁকা অংশের খোলসের মতো কিছু। মনে হচ্ছে এর মাঝে সেইম শেইপের কিছু প্রবেশ করালেই তা খুলে যাবে। আনায়া কিছুক্ষণ কপাল কুঁচকে জিনিসটা দেখার পর ত্বরিত নিজের লকেটটা বের করে ছুটির ঠিক জাগয়া বরাবর স্টারটাকে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তা বাউন্স করে খুলে গেলো। এতো ধারালো ছুরির আনায়া খানিকটা বিচলিতও হলো।

তবে আনায়া এই বিষয়টি দেখে প্রথমে যতটা বেশি অবাক হয়েছিলো তার চেয়ে বেশি খুশিও হয়েছিলো। কারণ এটা দেখা মাত্রই তার মাথায় খেলে গিয়েছিলো নতুন ভাবনা। অবশ্য আনায়া অনেক আগে থেকেই এমন কিছুর প্লান করছিলো। আর কিছু হোক বা না হোক, আনায়ার মতে পৃথিবীর সব সমস্যারই একটা না একটা সমাধান রয়েছে। আর যখন সেই একটি সমাধানও আমাদের হাত ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে তখন হতাশ না হয়ে দ্বিতীয় সমাধানের খোঁজ করা উচিত।

__________

তখন থেকে ছুরিটা আনায়ার কোমড়ের পেছনে জামার নিচেই গুঁজে রাখা আছে। আর এখন আনায়া দরজা খোলা মাত্রই খুব দ্রুত কেনীথের ঘরে প্রবেশ করলো। প্রথমে রুমের সাইজটা দেখে আনায়ার মাথা চক্কর দেওয়ার মতো অবস্থা। আগেকার রাজা-বাদশারাও হয়তো এমন বিলাসিতা-সৌখিনতা করেনি। একরুমই যেনো ফুটবল খেলার মাঠের সমান। অথচ রুমে খুব সামান্যই জিনিসপত্র রাখা। বিশাল বড় খাট আর কিছু সামান্য ফার্নিচার। একপাশের দেওয়ালে তো শুধু ছোট বড় পেইন্টিং ঝুঁলিয়ে রাখা। আবার অন্যদিকে পুরো দেওয়ালের সঙ্গেই আকা বিশাল বড় বড় দুটি চোখ এবং যার আশেপাশে নানা ফুল লতাপাতার কারুকার্যে ঘেরা।

সে চোখজোড়ার দিকে আনায়া আচমকা তাকাতেই বুকের মাঝে হাত চাপড়ে ঢোক গিললো। মনে হচ্ছে চোখ দুটোই তাকে সম্পূর্ণ রুপে গিলে খাবে। আনায়া প্রথমে ভেবেছিলো চোখদুটো কেনীথের হয়তো কিন্তু পরে খেয়াল করলো এই চোখজোড়া কোনো মেয়ের হয়তো। তবে চোখজোড়া আদতে কার তা আনায়া খেয়াল করে দেখার প্রয়োজন মনে করলো না বিধায় তার কাছে বিষয়টি অজানাই রয়ে গেলো।

আনায়া এসব ছেড়ে রুমের অন্যান্য দিকে নজর বুলাতে লাগলো। খেয়াল করে দেখলো রুমে আরো একটি দরজা রয়েছে। যেটা নিশ্চয় বাথরুমই হবে।এছাড়া আর তেমন কিছুই নেই দূরে একটা বড়সড় বারান্দা ব্যতীত।

যে কারণে আনায়া খোঁজার মতো তেমন কিছুই দেখতে পেলো না। তবে এসেছে যখন এমনি এমনি তো যাওয়াও যাবে না। তাই দ্রুত গতিতে বিছানার পাশে ছোট কাভার্ডের কাছে গিয়ে ড্রয়ার গুলো খোঁলার চেষ্টা করলো। কিন্তু সবার উপরের ড্রয়ারটা ব্যতীত বাকি সকল ড্রয়ার লক করে রাখা। আনায়া পুনোরায় স্টার শেইপের লক সিস্টেমের কিছু আছে কিনা তা খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করলো তবে এবার আর এখানে তেমন কিছুই দেখতে পেলো না। এসব সাধারণ জিনিসে এমনটা থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। আনায়া বিরক্তি নিয়ে প্রথম ড্রয়ারটাও খুলতে গিয়ে দেখলো কিঞ্চিৎ খুলে আর বাকিটা খুলছে না। হয়তো কিছু একটার সাথে আঁটকে গিয়েছে।

আনায়া প্রচন্ড বিরক্ত হলো এসব দেখে। কি করতে এসেছে আর এসব কি হচ্ছে। আনায়া ত্বরিত কোমড়ের পেছন থেকে ছুরিটা বের করে সেটার লকটা খুললো। এবং দ্রুত গতিতে সেলটা খুলতে গিয়ে খানিকটা আঙ্গুলের সাথে লেগে গিয়ে র*ক্ত
বের হতে লাগলো। আনায়া আরো বেশি বিরক্ত হলো তবে এরই মাঝে ব্যাথায় হাত ঝাড়ি দিতে গিয়ে ছুরির শেলটা কাভার্ডের নিচে ছিটকে চলে গেলো।

আনায়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে শেলটা বের করতে গিয়েও ব্যর্থ হলো। এতো চিকন জাগয়ায় তার হাত কোনোভাবেই ঢুকবে না। চারপাশে লাল রং-এর আলো জ্বলছে আর টেবিলের নিচে পুরোটাই কালো কুচকুচে। আনায়া এবার এসবের চিন্তা বাদ দিলো। তার ভাবনা মতো যে এখানে কিছুই হবে না তা খুবই ভালোই বোঝা হয়ে গিয়েছে। কেনীথকে সে পরে দেখে নিবে কিন্তু আগে এখান থেকে বের হতে হবে।

আনায়া ছুরিটা নিয়ে দ্রুত ড্রয়ারে মাঝে জোরে চাপ দিতেই ত্বরিত খুলে গেলো। তবে সেখানে যেসব জিনিস রাখা ছিলো তাতে আনায়া পুরো তব্দা খেয়ে গেলো। কয়েকটা ছোট কাঁচের শিশি ব্যতীত কিছুই নেই। আনায়া হতাশ হয়ে একটা কাঁচের শিশি হাতে নিয়ে দেখলো তাতে খুব ছোট করে ইংরেজিতে “poison”। যা দেখে আনায়া কপাল কুঁচকে বিরক্তি নিয়ে বললো,

—” বি*ষ? এই বেটায় এসব রেখে কি করে? আর বড় কথা আমি এটা নিয়ে কি করবো। নিয়ে নেবো?… যদি এখান থেকে বের হওয়ার প্লান কাজে না আসে তবে এটা বেটাকে খাইয়ে উপরে পাঠিয় দেবো। প্লানটা খারাপ না।”

আনায়া যাস্ট একটা ছোট শিশি উঠিয়ে ড্রয়ার লাগিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসতে চাইলো। কিন্তু হুট করেই কেনো যেন বাথরুমটা দেখতে যাওয়ার শখ জাগলো। শখ নয় বরং না চাইতেও তার মন বলছে ওখানে যাওয়া উচিত। আজও আনায়ার মতে একখান প্রশ্ন ঘুরপাক খায়।

আনায়া তার বুক সমান একটা কাভার্ডের উপরে ফুলদানির পাশে ছুরি আর শিশিটাকে রেখে বাথরুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। এরপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজা খোলা মাত্রই চমকে উঠলো। পা বাড়িয়ে দুকদম যেতে না যেতেই ওর চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিতেই ওর হাত-পা সহ পুরো শরীর কাঁপতে লাগলো।

এতো দিন যেটাকে সে সপ্ন আর বাস্তবতায় গুলিয়ে ফেলতো আজ ঠিক তেমনটাই তার চোখের সামনে দৃশ্যমান। সেই একই চিরচেনা লাল রং-এর আলোয় আচ্ছাদিত বিশাল বাথরুম। সেই একই পজিশনে রাখা বাথটাব আর তার সামনে ঠিক সেই জাগয়া যেখানে…কেনীথ বসে ছিলো।

আনায়া বুঝতে পারছে না সে নিজের চোখের সামনে এসব কি দেখছে। অনবরত তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। যদি সেই ঘটনা সত্যিই হয় তবে… আনায়ার র*ক্তের বাথটাবে ডুবে থাকা,সেটাও কি…?আনায়া জানে না, তার চোখমুখ দিয়ে অনবরত ঘাম ছুটছে। না চাইতেও এখন মনের মাঝে কেনীথকে নিয়ে ভয় ঢুকছে। আর ভয় পাওয়া মানেই সে দূর্বল হয়ে যাবে। আনায়া নিজেকে শক্ত করতে চেয়েও কোনো লাভ হলো না বরং এরই মাঝে নাকের কাছে অনবরত র*ক্তের গন্ধ ভিড়তে লাগলো। যেটা দরজা খোলার সাথে সাথেই আনায়া অনুভব করলেও এতোকিছুর মাঝে এই বিষয়টি খেয়াল করার সুযোগ হয়নি।

আনায়া নিজের অজানা ভয়ে কাঁপতে থাকা শরীরে বাথ টাবের দিকে এগোতে লাগলো। কারণ ওখান থেকেই গন্ধটা বেশি তীব্র অনুভব হচ্ছে। আনায়া বাথটাবের সামনে দাঁড়িয়ে দেখলো বাথটাবটা ঘন তরলে পূর্ণ করে রাখা হয়েছে। বাথরুমের লাল আলোতে তরলটা দেখতেও একদম কালচে দেখাচ্ছে।

আনায়া কাঁপা কাঁপা হাতে নিজের হাত এগিয়ে তরলের মাঝে খানিকটা আঙ্গুল চুবিয়ে তা নিজের নাকের কাছে এনে শুঁকতেই ওর মাথা ঘুরতে লাগলো। হাত পা অবশ হয়ে যাবে এমন অবস্থা। ত্বরিত অন্যহাতে নিজের মুখ চেপে যত দ্রুত সম্ভব সেখান থেকে বেড়িয় আসতে চাইলো। এখানে আর এক মূহুর্তও থাকলে আনায়া আর সজ্ঞানে থাকতে পারবে না।

আনায়া নিজের সর্বস্ব শক্তি প্রয়োগ করে একপ্রকার ছুটতে লাগলো। প্রথমে বাথরুম হতে আর পরবর্তীতে সোজা রুম থেকে বেড়িয়ে পড়লো। এরমাঝে না দরজা লাগানোর সুযোগ হলো না তা সেই ছুরি আর শিশিটা। তার হিমোফোবিয়ার জন্য সে অতটুকু সময় যে ওখানে সজ্ঞানে থাকতে পেরেছে এটাই তো অনেক।

আনায়ার শরীর এখনো ঠিকঠাক ভাবে কাজ করছে না। অনবরত মাথা চক্কর দিচ্ছে। এই মূহুর্তে আনায়া আর কোনো কিছু না ভেবে দ্রুত বাড়ির সদর দরজায় পৌঁছে গেলো। সেখানেও সে স্টার শেইপের ডিজাইন খুঁজে পেলো। আনায়ার জানা ছিলো এমনটাই হবে। হাঁপাতে থাকা আনায়া কিঞ্চিৎ মুচকি হাসলো। তবে এই হাসি দীর্ঘস্বায়ী হলো না। নিজের গলা হতে লকেটটাকে দরজায় ঠিক সঠিক স্থানে প্রবেশ করিয়েও কোনো লাভ হলো না। আনায়া পুনোরায় একই কাজ করলো তবে কোনোভাবেই দরজা খুললো না। আনায়া এটা দেখে অস্থির হয়ে উঠলো। সঙ্গে মনের ভেতর ভিড়তে লাগলো আ*তংক, ভয়। সে এটা কোথায় এসে পড়েছে। কেনীথ আদতে কি তাই তো সে বুঝতে পারছে না। বি*ষের বিষয়টি না হয় মানা যায় কিন্তু ওসব এত্তো এত্তো র*ক্ত…!

আনায়া দরজায় প্রচন্ড গতিতে ধাক্কাধাক্কি করতে লাগলো। কোনো প্রকার সন্তোষজনক ফলাফল না পেয়ে অস্থিরতায় কাতর হতে লাগলো। চোখের কোনায় পানি জমতে শুরু করলো। আনায়ার আর এক মূহুর্তও এখানে থাকার ইচ্ছে নেই। কেনো যেন তার শুধু এটাই মনে হচ্ছে কেনীথকে সে যেমন সাধারণ পাগল ভেবেছিলো ও তা নয়। কোনো ভ*য়ংকর… আনায়ার আর নূন্যতম ভাবার মতো অবস্থা নেই।

আনায়া দরজা থেকে সরে এসে পুনোরায় ড্রইং রুমের দিকে ছুটলো। শুধুমাত্র এই আশায় যে, কিছু না কিছু বের হওয়ার উপায় তো পাওয়াই যাবে। আনায়া প্রচন্ড অস্থিরতার সঙ্গে হাঁপাতে লাগলো। ছুটতে ছুটতে সোফা সহ আশেপাশে সবজায়গায় রিমোট খুঁজতে লাগলো। বেচারীর মাথায় নেই যে আদোও রিমোট এখানে পাবে কিনা। কিন্তু আপাতত জানপ্রাণ লাগিয়ে সন্ধান চালাতে লাগলো। মাঝেমাঝে আতংকে চোখ হতে আপনা আপনি পানি ঝড়তে লাগলে আনায়া ত্বরিত নিজের হাতের সাহায্য মুছে নিলো কিন্তু নিজের ব্যার্থ চেষ্টা করাটা সে আর থামালো না।

এরই মাঝে হন্য হয়ে ছুটতে থাকা আনায়া যখন সুইমিংপুলের একদম পাশ হতে অতিক্রম করতে লাগছিলো, ঠিক তখনই আচমকা তার পায়ের এক আকস্মিক টান পড়ে। আনায়ার অস্থির মস্তিষ্ক অনুভব করলো যে কেউ সজোরে পানি হতে আনায়ার পা ধরে খিঁচে পানিতে টেনে নিচ্ছে। আর ধারনা মতে ঠিক এমনটাই হলো।

আনায়া সোজাসুজি ঠিকঠাক ভাবে কিছু বোঝার কিংবা করে ওঠার আগেই নিজের ভারসাম্য হারিয়ে পানির মাঝে আছড়ে পড়লো। মূহুর্তের মাঝেই আনায়া যখন সম্পূর্ণ পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে ছোটাছুটি করতে লাগলো। তখনই সে পানির নিচে থাকা মানবের অস্থিত্ব অনুভব করলো। এবং সেই মানবটিই যে আনায়ার কোমড়ে হাত পেচিয়ে নিজের দিকে অগ্রসর করছে তাও আনায়ার বোধগম্য হলো। আনায়ার আর বুঝতে বাকি নেই এই লোকটি কে।তবে অন্যান্য বারের মতো যেমন কেনীথের কাজকর্মে তার রাগ হয় এবার ঠিক তেমন কিছু হচ্ছে না। আনায়ার মাঝে শুধু এবার কেনীথকে নিয়ে আতংক বিরাজ করছে।

প্রায় কিছুক্ষণ সময় পর্যন্ত কেনীথের দরূন আনায়াকে পানির নিচে থাকতে হলো। যার ফলে একটা সময় পর ওর শ্বাস নিচে কষ্ট হতে লাগলো। অন্যদিকে কেনীথ যে আনায়ার কোমড় শক্ত করে পেচিয়ে নিজের দিকে অগ্রসর করছে তাও আনায়ার বোধগম্য হলো। আনায়ার আর বুঝতে বাকি নেই এই লোকটি কে।তবে অন্যান্য বারের মতো যেমন কেনীথের কাজকর্মে তার রাগ হয় এবার ঠিক তেমন কিছু হচ্ছে না। আনায়ার মাঝে শুধু এবার কেনীথকে নিয়ে আতংক বিরাজ করছে।

প্রায় কিছুক্ষণ সময় পর্যন্ত কেনীথের দরূন আনায়াকে পানির নিচে থাকতে হলো। যার ফলে একটা সময় পর ওর শ্বাস নিচে কষ্ট হতে লাগলো। অন্যদিকে কেনীথ যে আনায়ার কোমড় শক্ত করে পেচিয়ে নিজের কাছে বদ্ধ করে রেখেছে তা আনায়ার কাছে দৃশ্যমান। অনেকবার নিজের হাতের সাহায্যে কেনীথের কাছ হতে ছাড়া পেতে চাইলেও কোনো লাভ হয়নি।

ঠিক যখন আনায়ার অবস্থা করুন হতে লাগলো ঠিক তখনই কেনীথের পাষাণ মন গললো। এবং সে আনায়াকে সহ নিজেও পানির উপরে উঠে এলো।

কাঁধ পর্যন্ত দুজনেরই পানিতে ডুবে রইছে। শুধু দুজনের মাথাটা পানির উপর দৃশ্যমান। আনায়া জোড়ে জোড়ে হাঁপিয়ে কয়েক বার শ্বাস নিলো এরপর খানিকটা স্বাভাবিক হতেই কেনীথের দিকে নিস্তেজ চোখে তাকিয়ে দেখলো কেনীথের ঠোঁটে কিঞ্চিৎ মুচকি হাসি ঝুলছে। এমন সিচুয়েশনেও কেনীথের মাঝে কোনো হেলদোল নেয়। কেনীথের বাহুর মাঝে আবদ্ধ আনায়া মুক্ত হওয়ার জন্য নিজের হাতের সাহায্যে ছোটাছুটি করতে করতে করুন স্বরে বলতে লাগলো,

“ছাড়ুন আমায়… ছাড়ুন বলছি…কে আপনি? আপনার পরিচয় কি? সত্যি করে বলুন প্লিজ…।আমায় প্লিজ মা*রবেন না। আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি? আমি তো আপনাকে কোনোদিনও চিনতামও না। আগে কখনো দেখিওনি। তবে কিসের প্রতি*শোধ নিতে চান আপনি? আপনি…

আনায়া আরো কিছু বলার জন্য উদ্বেগ হওয়ার আগেই কেনীথ আনায়াকে নিজের কাছে আরো একটু টেনে নিয়ে এলো। এবং ধীর সুরে মুচকি হাসতে হাসতে বলতে লাগলো,

” তাহলে এতোক্ষণে মরণের ভয় ঠুকেছে। খুব তো সাহস দেখাচ্ছিলি।বারবার বারবার নিষেধ করেছিলাম কিন্তু একবারও আমার কথা শুনিসনি। এছাড়া নিজেকে প্রচুর চালাক ভাবাটা ছিলো তোর সবচেয়ে বড় বোকামি। তবে আফসোস আমার একটাই, খুব কঠিন কিছুর সাক্ষী তোকে আজই হতে হবে। কারণ এবার তাড়াহুড়োটা করতে তুই আমায় বাধ্য করেছিস।”

আনায়ার মুখ চুপসে গিয়েছে। আচমকা তার মনের ভয়টা হু হু করে বেড়ে চলেছে। তবে এবার কেনীথের হাভভাবে কেনো যেন তার চিন্তাভাবনা আকস্মিকভাবে পরিবর্তন হতে লাগলো। তার মন-প্রাণ বলছে, কেনীথ তাকে নয় বরং তার পরিবার কিংবা খুব কাছের কারো ক্ষতি করতে চায়। হঠাৎ এমনটা মনে হওয়ার কারণ আনায়ার নিজেরও অজানা। তবুও সে কেনীথকে এই বিষয়ে সতর্ক করতে চাইলেও সে সুযোগ আর হলো না। বরং তার আগেই কেনীথ আনায়াকে আরো খানিকটা শক্ত করে পেঁচিয়ে সোজা পানির অতলে ডুব দিলো।

পানি স্বচ্ছ হলেও গভীরতা অনেক। আনায়া দম আঁটকে রইছে, অন্যদিকে কেনীথ অকপটে আনায়কে নিয়ে পানির আরো গভীরে তলিয়ে যাচ্ছে। একটা সময় পর আনায়ার চোখ ঝাপসা হলো সঙ্গে তার দমও ফুরিয়ে আসতে লাগলো। ঠিক সেই মূহুর্তেই কেনীথ আনায়াকে নিয়ে সুইমিংপুলের একপাশের দেওয়ালের মাঝে গোল আকৃতির বড় গর্ত দিয়ে অন্যপাশে প্রবেশ করলো।

আনায়া নিজের করুন অবস্থায় ঠিকভাবে কিছু করতে না পারলেও এমন অদ্ভুত জিনিস দেখে আনায়া প্রচন্ড বিস্মিত হলো। তবে তার দম আচমকা ফুরিয়ে যাওয়ার ফলে অনেক বেশি পানি খেয়ে শ্বাস আঁটকে ফেললো। এমন একটা সিচুয়েশন তৈরি হয়েছে যে আনায়া সামান্য ছটফটও করতে পারছে। অতঃপর একগাদা পানি নাক মুখ দিয়ে প্রবেশ করার পর কেনীথ আনায়াকে নিয়ে নিজের বাড়ির সেই সিক্রেট অংশে প্রবেশ করলো।

কিন্তু চারপাশটায় ঠিকঠাক ভাবে চোখ বুলিয়ে নেওয়ার আগেই আনায়া সম্পূর্ণ সেন্সলেস হয়ে পড়লো।

__________

—“তারা…! তারা…!

ঠিক কতক্ষণ পর আনায়ার জ্ঞান ফিরলো তা আনায়ার জানা নেই। মাথাটা প্রচন্ড ভার হয়ে আছে। মাথার ভিজা চুল গুলো বিধ্বস্ত ভাবে এলোমেলো। ভেজা কাপড় শরীরের সাথে লেপ্টে খানিকটা শুকিয়েও গিয়েছে। আনায়া নিজের ভারী ভারী চোখের পাতা গুলো একবার কোনমতে খুলছে তো আবার কখনো তা নিমিষেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অবশ্য তার সেন্স নিজে নিজে ফিরে নি বরং তার নাম ধরে বারবার কারো ডাকাডাকিতেই জ্ঞান পুরোপুরি ফিরেছে ।

আনায়া নিজের নিস্তেজ চোখের পাতাদুটো ধীরে ধীরে খুলতে লাগলো। শরীরটাও এতো বেশি নিস্তেজ ঠেকছে যে তা বলার বাহিরে। আনায়া কোনোমতে চারপাশটা তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলো। কেমন অদ্ভুত বিশাল একখানা জায়গায়। জায়গায় কিসব অদ্ভুত সব জিনিস পত্র। দূরে সেই সুইমিংপুল। চারপাশে লাল নীল আলোর সমাহার। আনায়া নিজের হাত নড়াতে গিয়ে দেখলো তার হাতদুটো চেয়ারের হাতলের সাথে বেঁধে রাখা। আনায়া এবার নিজেকে যতটা পারলো তটস্থ করে হাত দুটোকে ছুটাতে ব্যস্থ হয়ে পড়লো। আশেপাশে আর কোনোদিকে তার তাকানোর সুযোগ হলো না।

ঠিক সেই মূহুর্তেই কারো কন্ঠস্বর শুনতে পেলো।

—“তারা!…হাতের বাঁধন না হয় পড়েও ছুটাতে পারবি কিন্তু এবার একটু সামনে তাকিয়েও তো দেখ! তোর স্পেশাল সারপ্রাইজ যে এখন তোর সামনে।”

আনায়ার কাছে এই কণ্ঠস্বর খুবই পরিচিত। সঙ্গে বর্তমানে এই কন্ঠস্বর আনায়ার কাছে এক আতং*কের সুর। আনায়া কেনীথের কথা অনুসরণ করে সামনে তাকাতেই দেখতে পেলো, তার থেকে কিছুটা দূরে একজন মধ্যবয়স্ক লোককে ঠিক তার মতো করেই চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। লোকটিকে আনায়া প্রথমে অজ্ঞান ভাবলেও পরবর্তীতে খেয়াল করে দেখলো লোকটি প্রচন্ড নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। যে কারণে মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ অবস্থায় খুবই ধীরে ধীরে নিশ্বাস নিচ্ছে।

এছাড়া লোকটির মুখে শরীরে কিসব যেন লেগে রয়েছে।আনায়া ভালো করে লক্ষ করতেই মনে হলো লোকটি মার*ধর করার ফলে বিভিন্ন জায়গায় রক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এটা দেখেই আনায়া আকস্মিক চমকে উঠলো। সঙ্গে মাথা নিচু করে চোখ বুজে বসে থাকা লোকটিকে আচমকা তার খুব পরিচত একজন মনে হলো। যে লোকটা আনায়ার বর্তমান দুনিয়ায় সবটাতেই বিরাজ করে।

আনায়া প্রচন্ড বিস্মিয়ের সাথে পাশে তাকাতেই বড়সড় দেহের কেনীথকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পেলো। কেনীথের হাতে একটি প্লায়ার্স, যেটিকে সে অনবরত টগ্ল করে যাচ্ছে। এবং আনায়ার দিকে তাকিয়ে বিস্তৃত বাঁকা হাসছে। এই প্রথম হয়তো কেনীথকে আনায়ার এতো বেশি ভ*য়ংকর মনে হচ্ছে। তার হাসিটাই যেন শরীরে আরো বেশি আতং*কের শিহরণ জাগাচ্ছে। আনায়ার মাঝে কেনীথকে নিয়ে আ*তংক আর সে মধ্যবয়সী লোককে ,এই খানে এই অবস্থায় দেখে প্রচন্ড বিস্ময় জাগিয়েছে। আর আনায়ার এই বিস্ময় কাটার আগেই কেনীথ আচমকা মাথা নিচু করে ঝিমিয়ে থাকা লোকটির মাথার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে তার মাথাটাকে সোজা করলো। আর ঠিক মূহুর্তেই আনায়ার সামনে লোকটির বিধ্বস্ত র*ক্তাক্ত চেহারাটা স্পষ্ট হলো। যা দেখা মাত্রই আনায়ার মুখ আকস্মিকভাবে উন্মুক্ত হলো সঙ্গে অস্ফুটস্বরে মুখ হতে বেরিয়ে এলো,

“বাবা…!”

#চলবে