একজোড়া আগুন পাখি পর্ব-৩৪

0
12

#একজোড়া_আগুন_পাখি
®অরনীতা তুশ্মি (#তুশকন্যা)

পর্ব→৩৪ [🚫প্রাপ্তমনস্ক ও মুক্তমনাদের জন্য🚫]

গাঢ় নীল রং এর আলোয় আচ্ছাদিত চারপাশ। বড়সড় এক ঘরের মাঝে চলছে এক নারীকে পশুর ন্যায় ছিঁড়েখুঁড়ে খাওয়ার কার্যক্রম। থমথমে নিরবতাকে ভেদ করে মাঝেমধ্যেই করুণ চিৎকার আর আর্তনাদ বাতাসের ভারী স্তর ভেদ করে ছড়িয়ে পড়ছে।

একটি নারী দেহ আর তা ভোগ করতে ব্যস্থ ছয়জন বলিষ্ঠ দেহের পুরুষ।ছয়জন অমানুষের নিষ্ঠুরতার ভারে মেয়েটির ক্ষুদ্র শরীর থরথর করে কাঁপছিলো। নির্লজ্জ ঠাট্টা আর তীব্র নির্ম*মতা তাদের চোখে-মুখে।স্বাভাবিক অবস্থায় ছয়জনকে দেখতেই আর দশজন ভদ্র স্বাভাবিক পুরুষদের ন্যায় মনে হলেও এখন প্রত্যেকেই সম্পূর্ণ রুপে জা*নোয়া*রে পরিণত হয়েছে।

অল্প বয়সী মেয়েটার হৃদয়বিদারক করুন চিৎকার গুলোও ছ’জনের মাঝে কোনো দয়া-মায়ার অনুভুতিকে জাগ্রত করতে পারছে না। বরং মেয়েটির অসহায় চিৎকার গুলোই তাদের বেশি আনন্দ দিচ্ছে। এই সুযোগ কি তারা বার বার পায়? মোটেও না! মেয়েটি যদি কাজের নিয়ম ভঙ্গ না করতো তবে তার এই পরিণতি কখনোই হতো না। আর সঙ্গে তারাও এই কাজ করার সুযোগ কিংবা নির্দেশ পেতো না।

মেয়েটির নাম লিজা, সে যথেষ্ট রূপবতী ছিলো। তবে সেটা ছিলো আপেক্ষিক। বর্তমানে তার সেই রুপে শুধু মানুষ রূপী জানো//য়ার গুলোর আঁচড় আর খাবলে খাওয়ার বি*ষাক্ত ক্ষ*ত গুলো বিরাজ করছে। একটু আগেই সে কতশত মুক্তির প্রার্থনা করছে কিন্তু সবকিছুই বৃথা গিয়েছে। শরীরের প্রতিটি শিরা যেন জ্বলন্ত লোহার মতো তাকে পোড়াচ্ছে। তার আত্মার প্রতিটি কোণ ভেঙে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে। এক সময় সে তার সম্পূর্ণ দেহটাই নিথর হয়ে পড়লো।

প্রায় ঘন্টাখানেক একটানা অমানুষিক কার্যকলাপ চালানোর পর লোকগুলো শান্ত হলো। তবে সেটাও কারো নির্দেশে। লোকগুলো যে যার মতো সরে গিয়ে সামান্য কাপড়ের সাহায্যে নিজেদের বিশেষ অংশ ঢাকবার চেষ্টা করলো। উন্মাদনায় এতোক্ষণ তাদের খেয়াল ছিলো না যে তারা ব্যতীত আরো একজন খানিকটা দূরে দাঁড়িয়েই নির্বিকারে এসব দেখছিলো। এবং যাকে তাদের মতোও পুরুষেরা ভয় পায়।

অবশ্য সে ব্যক্তিটিকে তারা ছয়জন মাথাতে না রাখলেও, ফ্লোরে বিধ্বস্ত রুপের অসহায় লিজার চোখজোড়া বারংবার এই পৈ*শাচিকতাকে উপভোগ করতে থাকা নারীটিকে দেখছিলো। সে জানতো এই ছয়জন তার অনুনয়কে পাত্তাও দেবে না। কারণ তারা জানো/য়ারে রুপান্তর হয়েছে। কিন্তু যে নারীটি এসব নির্বিকারে দাঁড়িয়ে উপভোগ করছিলো সে তো তাকে বাঁচাতেই পারে। একটু হলেও তো দয়া করতেই পারে। কারণ তার মতো তো সেও একজন নারী।এইটুকু অনুনয় নিয়ে সর্বক্ষণ চোখের জল ফেলে লিজা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ছিলো সে। কিন্তু মেয়েটি ছিলো বরাবরই গম্ভীর আর নির্বিকার। যেনো তার এসবে কিচ্ছু আসে যায় না। একজন মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের সাথে এসব নিজ চোখে দেখে সে যেনো উপভোগ করছে। এমনটাও কি বিশ্বাস যোগ্য? হ্যাঁ,তার ক্ষেত্রে এসব অস্বাভাবিক নয়। বরং লিজার সাথে এসব পৈশা*চিক কাজগুলো করার জন্য ছ’জন কে নির্দেশটা এই মেয়েটিই দিয়েছে।

পায়ে ছয় ইঞ্চির লম্বা কালো হাই হিল জুতা। গায়ে সিম্পল ব্লাক ডার্ক ব্লু কালারের টপ আর কালো রংএর সর্ট স্কার্ট যা হাঁটুর খানিকটা নিচ পর্যন্ত ছুঁয়েছে। সিল্কি ঘন চুল গুলো ঘাড় পর্যন্ত। ধবধবে গোলাপি ফর্সা চেহারা। হাতদুটো শুরু থেকেই তার বুকে গুঁজে রাখা ছিলো। চোখেমুখে এক অদ্ভুত ভাবভঙ্গি। শান্ত স্বাভাবিক চোখ জোড়ায় আগু*নের লা*ভার মতো টগবগ করছে আর গোলাপী ঠোঁটের কোণায় কিঞ্চিৎ পৈ*শাচিক হাসি।

ছ’জন লিজাকে ফেলে রেখে সরে যেতেই কিছুক্ষণ সময় একইভাবে অতিবাহিত হওয়ার পর সেই অদ্ভুত মেয়েটি লিজার দিকে এগোতে লাগলো। এদিকে মেয়েটিকে এগিয়ে আসতে দেখে বাকি ছজনের গলা শুকিয়ে গেলো। ক্রমান্বয়ে মেয়েটির ক্যাটওয়াক করে হেঁটে আসার দরূন হাইহিলের খটখট শব্দ গুলো যেন তাদের কলিজা কাঁপিয়ে তুলছে। কারণ তারা ঠিক নিজেরাও জানে না যে, তারা নিজেরা যদি জা*নো*য়ার হয় তবে এই শান্ত চেহেরার একটি মেয়ে ঠিক কতটা জ*ঘন্য রুপের ভয়ং*কর সাইকো হতে পারে।

মেয়েটি বুকে হাত গুঁজে একই ভাবগাম্ভীর্যের সাথে লিজার কাছে এলো। অতঃপর লিজাকে সম্পূর্ণ রুপে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। ভঙ্গুর পুতুলের মতো বস্ত্রহীন দেহটা ফ্লোরে পড়ে রইছে। শরীরের সব জায়গায় আঁচড়ের দাগ। অনেকগুলো জায়গায় কামড়ে মাং*স তুলে নেওয়া হয়েছে। সেসব জায়গা থেকে অনবরত র*ক্ত গড়াচ্ছে। ঠোঁট-গালে আঁচড় আর কা*মড়ের ক্ষততে র*ক্ত ঝড়ছে। লিজার পুরো শরীরটাই যেন নিজের র/ক্তে মেখে গিয়েছে।

ছ’য়জন জানো*য়ার এতোটাই পৈশাচিক হয়ে উঠেছিলো যে জ্যান্ত লিজার মাথার চুলগুলো একপাশে টেনে তুলে ফেলেছ। মাথায় সেই অংশের চামড়া খানিকটা উঠে গিয়ে র*ক্তে ঢেকে গিয়েছে।

সেই অদ্ভুত মেয়েটি সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো। লিজার একপাশের চোখও যেন খানিকটা উপড়ে গিয়েছে। এমনটাই মনে হচ্ছে তার। লিজা যেখানে পড়ে রইছে তার আশেপাশে অনেকটা জায়গা জুড়ে শুধু র*ক্তের ছড়াছড়ি। লিজার পা জোড়ার মাঝ থেকে যেন র*ক্তের স্রোত বইছে। একজন মেয়ে হয়ে আরেকটি মেয়ের এমন করুন অবস্থা থেকেও মাঝে কোনো হেলদোল হলো না।সে নির্বিকারে সবকিছু পর্যবেক্ষণ এর পর সেই ছ’জনের দিকে মুখ তুলে তাকালো।

মেয়েটি সেই লোকগুলোর দিকে তাকাতেই লোকগুলো কেঁপে উঠলো। কিন্তু মেয়েটি যখন ঠোঁটে পৈশা*চিক হাসি ঝুলিয়ে বললো,
“গুড জব, গাইস!”

ওর এমন সম্মোধনে লোকগুলো অনেকটা ইতস্তত হয়ে হাসতে চেষ্টা করলো কিন্তু এই মূহুর্তে কোনো হাসি পাচ্ছে না বিধায় পুনোরায় চুপচাপ হয়ে গেলো। এদিকে মেয়েটির এহেন কথা শুনে লিজার চোখ থেকে বহু কষ্টে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। সে জানে না গলা থেকে কোনো আওয়াজ বের হবে কিনা তবুও কিছু বলার চেষ্টা করলো। শুরুর দিকে কোনো কথা বলতে না পারলেও অত্যন্ত করুন সুর বের হতে লাগলো। এটুকু চেষ্টা করতে গিয়েই লাল হয়ে যাওয়া চোখজোড়া আরো বেশি লাল হয়ে উপড়ে বেড়িয়ে আসতে চাচ্ছে।

তবে লিজার আওয়াজ কানে পৌঁছাতেই মেয়েটি ওর দিকে তাকালো। তখনই লিজা বহু কষ্টে অস্ফুটস্বরে বললো,

“প্লিজ আমায় ক্ষমা করো। বাঁচতে দেও আমায়! আমি আর সহ্য করতে পারছি না”

লিজার সবগুলো কথাই আঁটকে আঁটকে আসছিলো। কথা বলতে গিয়ে উন্মুক্ত দেহটা উপরে উঠে আসছিলো বারবার। মনে হচ্ছিলো জানটা হয়তো এখনই বের হয়ে আসবে। অথচ এসব দেখে মেয়েটি তাচ্ছিল্যের সাথে কিঞ্চিৎ হাসলো। অতঃপর নিজের জুতোর সামনের দিকের সরু অংশটা লিজার গালের সাথে স্পর্শ করলো। জুতো দিয়ে কিছুটা গালের উপর ভর দিতেই লিজার ব্যাথায় চোখমুখ কুঁচকে গেলো। কিন্তু মেয়েটি নির্বিকারে নিজের জুতো দিয়ে লিজার গালে খানিকটা ধাক্কা দিতেই ওর মাথাটা কাত হলো।

এদিকে মেয়েটি এবার নিজের পা গাল থেকে সরিয়ে লিজার গলার মাঝ বরাবর নরম অংশে নিজের জুতোর সরু কাঠির ন্যায় হিলটাকে কাত করে রাখলো। নরম অংশে সরু হিলটা যেন প্রায় গেঁথে পরবে। ওদিকে ছ’জন লোক বুঝে গিয়েছে যে এবার মেয়েটা কি করবে। ওদের প্রত্যেকেরই ঘাম ছুটে যাচ্ছে।

অথচ মেয়েটি নিজের ঘাড়টা খানিক কাত করে, লিজার আকুতিভরা টলটলে চাহনির দিকে নিজের আগুন ঝড়া শান্ত চোখে তাকিয়ে বললো,

“হোয়াট ডিড ইউ সে, বেইবি?… ক্ষমা! উফফ…তুমি কি জানো না যে বিশ্বাসঘাতকতা কিংবা বেঈমানী যে করে তাকে ইনা কখনোই ক্ষমা করে না!”

এই বলতে না বলতেই মেয়েটির চোখ-মুখ গম্ভীর আর শক্ত হয়ে উঠলো। অন্যদিকে লিজা ফুঁপিয়ে উঠে কিছু বলতে চাওয়ার আগেই ইনা মেয়েটি নিজের নিকৃ*ষ্টতর পদক্ষেপটা নিয়ে নিলো। নিমিষেই লিজার গলার মাঝ বরাবর ছয় ইঞ্চি সরু হিলটা ডাবিয়ে দিলো। মূহুর্তেই ফিনকি দিয়ে র*ক্ত উঠে ইনার ধবধবে ফর্সা পায়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে লাগলো। এতে বাকিরা আতংকে ভয়ে কুঁচকে গেলেও ইনা রইলো নির্বিকার। মুখের কিঞ্চিৎ পৈশাচিক হাসিটা এখন বিস্তৃত হলো। তবে লিজার এখনো প্রাণ বের হয়নি।

পুরো শরীর অকেজো হলেও জানটা এখনো সেই বিধ্বস্ত দেহে আঁটকে রইছে। চোখজোড়ার মধ্যমণি যেন প্রায় বের হয়ে এসেছে। এরই মাঝে ইনা গলার মাঝেই নিজের পা টাকে মোচড়াতে লাগলো। লিজার জান যায় যায় অবস্থা, এই মূহুর্তে সে নিজের মৃত্যু জন্য সর্বোচ্চ প্রার্থনা করেও যেন ফল পাচ্ছে না।এরই মাঝে ইনা লিজার গলা থেকে সরু হিটটাকে টেনে তুলতেই লিজা জোরে শ্বাস নিয়ে থমকে গেলো। তবে ওর চোখজোড়া বদ্ধ হলো না।ম*রে গিয়েছে কিনা তাও নিশ্চিত নয়। থমকে যাওয়া বিধ্বস্ত চোখজোড়া যেন এখনো ইনার কাছে বাঁচার আকুতি করছে।

এদিকে ইনা মুচকি হেসে লোকগুলোর দিকে তাকালো। ওর এই হাসি প্রত্যেকের মাঝে শিহরণ জাগিয়ে তুললো। তবে ইনা ইশারা ওদের কাছে কিছু একটা চাইলো। যেটা বুঝতেই তাদের অবস্থা আরো খারাপ। তবে ইনার কথা না শুনলে তাদের অবস্থাই খারাপ হবে তা নিশ্চিত। যে কারনে একজন খুব দ্রুত দৌড়ে গিয়ে রুমের একটা কোণা থেকে একটা কুড়াল এনে ইনার সামনে তুলে ধরলো।

ওর এই কাজে ইনার মুখের সন্তুষ্টির হাসি ফুটলো। লোকটির দিকে কিঞ্চিৎ মুচকি হেসে কুড়ালটিকে হাতে নিলো। তবে লোকটি ইনার হাসিতে মোটেও হাসলো না।তার চোখ মুখ শুকিয়ে গিয়েছে। জা*নো*য়ার হলেও নিজের জীবনের ভয় তাদের আছে। আর ইনা হলো সেই ব্যাক্তি যার কারো প্রাণ নিতে কোনো বিশেষ কারণ লাগে না। ইচ্ছে হলে শেষ করে ফেলতে একটুও দ্বিধাবোধ করবে না।

ধারালো কুড়ালটাকে ইনা হাতে তুলে নিতেই লোকটি পিছিয়ে গিয়ে বাকিদের সাথে বসে পড়লো। এদিকে ইনা কুড়াল দিকে হাতে নিয়ে ধারালো অংশটাকে এপাশ ওপাশ করছে দেখছে। চোখে-মুখে তার পৈশা*চিক হাসি। সবকিছু মিলিয়ে থমথমে শিহরণ জাগানো সন্ধিক্ষণ তৈরি হয়েছে।

তবে এসবকে ছাপিয়ে ইনা নিমিষেই চোখমুখ শক্ত করে হাতের কুড়ালটা ঘুড়িয়ে সজোরে লিজার মাথার মাঝ বরাবর আঘাত করলো। এক কোপে নিমিষেই মাথার খুলি ভেঙ্গে গিয়ে লিজার মস্তিষ্কের অর্ধেকটা বেড়িয়ে এলো। যা দেখে ইনার মুখে পুনোরায় হাসি ফিরলো। সে কুড়োলটাকে জোরে অন্যদিকে ছুঁড়ে মারলো। কুড়ালটা ফ্লোরে পড়তেই একটা জোরে শব্দ হলো। যে শব্দে লোকগুলোর পুরো শরীর কেঁপে উঠলো।

একটু আগেই ইনা নামক মেয়েটা লিজার সাথে হওয়া সবকিছু নিজ চোখে নির্বিকারে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলো। সে মেয়ে হওয়া স্বত্বেও লিজার সাথে হওয়া এতো বড় পৈশা*চিক দৃশ্য তার মনের বিশেষ কোনো অনুভূতিকে জাগ্রত করতে পারেনি। তার সামনেই দুজন লোক লিজার হাত আর দুজন পা ধরে রেখে লিজাকে সম্পূর্ণ রুপে ছিড়েখুঁড়ে খেয়েছে অথচ পুরো বিষয়টি সে উপভোগ করেছে।

কিন্তু এখন ইনার এসব পৈ*শাচি*কতা গুলো এই ছ’জনে মনে এক অজানা আতংক জাগিয়ে দিচ্ছে। এসব দৃশ্য তাদের কাছে নতুন নয়। তবে ইনার মাঝেমধ্যেই এসব পৈ*শাচি*কতা তাদের মতো মানুষ রুপী জা*নোয়া*রদেরও গায়ে শিহরণ জাগিয়ে দেয়।

ইনা একহাঁটু গেঁড়ে লিজার মাথার কাছে বসলো। তার একহাত হাঁটুর উপর ভাজ করে রাখা৷ এবার চেহেরায় গম্ভীর্যের ছাপ। কিছুটা রাগান্বিত লাগছে তাকে। ইনা কিছুক্ষণ নিষ্প্রাণ লিজাকে একনজরে তাকিয়ে দেখলো। অতঃপর ওর চেহেরা থেকে নজর সরিয়ে বেড়িয়ে আসা মস্তকের দিকে রাখলো। ইনা প্রথমে একআঙ্গুল দিয়ে মাথার উপরের দিকে চুল কিংবা ময়লা গুলো সরিয়ে দিলো। অতঃপর নিজের দুহাত দিয়ে কৌশলে মাথার মগজটাকে টেনে বের করলো।

নিমিষেই শিরা উপশিরা গুলো ছিঁড়ে মগজটা ইনার হাতের মুঠোয় চলে এলো। ইনা ভালো করে একবার মগজটাকে দেখে সেটা পাশে রেখে দিলো। অতঃপর নিজের স্কার্টের একপাশে থেকে একটা ধা*রালো মাঝারি আকারের ছুরি বের করলো। এবার সে আরো এক জঘন্য কাজ করে বসলো। ছুরিটা দিয়ে খুব বাজে ভাবে লিজার বুকের নরম দু’টো অংশ কেটে নিলো। তার এসব কাজে সেই ছ’জন হতভম্ব হলেও ইনা এসবে একদম নির্বিকার। তার কাছে এসব বিশেষ কিছু মনে হচ্ছে না।কারণ এসব জিনিস নিয়ে তার পরবর্তী কার্যক্রমটা যেন আরেকটু বেশিই জ*ঘন্য হতে চলেছে।

ইনা মজগ আর বুকের বাকি দুটো অংশ একত্রে দুহাতে হাতে তুলো নিলো। সেগুলো নিয়ে এবার নির্বিকারে হেঁটে রুম থেকে বের হওয়ার জন্য উদ্বেগ হতেই সে থেমে গিয়ে পাশে ঘাড় ঘুরিয়ে ছ’জনের উদ্দেশ্যে বললো,

“সবকিছু পরিষ্কার চাই!”

এই বলেই আর একমুহূর্তও দেরী না করে সেই রুমটা ত্যাগ করলো। ইনা এবার এগিয়ে সোজা একটা কিচেনে প্রবেশ করলো। এই পুরো জায়গাটা কোনো বাড়ির অংশবিশেষ নয়। এটা খানিকটা মাটির নিচে আর খানিকটা উপরে ;সব মিলিয়ে এটি গুপ্ত আস্তানা। যার পুরোটাই মূলত সকল অনৈ*তিক কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়।

ইনা কিচেনে গিয়ে সম্পূর্ণ মগজ আর বাকি দুটো বিশেষ অংশ খুব ভালো করে পরিষ্কার ভাবে ধুয়ে নিলো। অতঃপর সম্পূর্ণ মগজটা ফ্রাইপ্যানের খানিকটা বাটারের মাঝে উল্টোপাল্টা করে ভাজতে লাগলো। আর লিজার বুকের সেই বিশেষ দুটি অংশকে বড়সড় একটা পাতিলে ফুটন্ত গরম পানির মাঝে সিদ্ধ করতে ছেড়ে দিলো।

ইনার মগজ ভাজা হয়ে গেলে বাকি দুটো সিদ্ধ টুকরোকেও সে খানিকটা মশলা ছড়িয়ে দিয়ে সার্ভিং প্লেটের মাঝে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে নিলো। অতঃপর দুহাতে দু-পদের রান্নার প্লেট নিয়ে ক্যাটওয়াক স্টাইলে হেঁটে হেঁটে অন্য একটা রুমে প্রবেশ করলো।

সেখানে কয়েকজন কালো পোশাক পড়া গার্ড রুমের এদিক ওদিক অ*স্ত্র হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইছে। অন্যদিকে একজন মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি কালো রংএর বড়সড় কোর্ট পড়ে ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে রইছে। তার উচ্ছ্বসিত মুখটা দেখে মনে হচ্ছে সে যেন ইনার জন্যই অপেক্ষা করছিলো। ইনা গম্ভীর্যের সাথে ডাইনিং টেবিলের কাছে পৌঁছাতেই লোকটির সামনে খাবারের প্লেট দুটো যেন অনেকটা ছুঁ*ড়ে মার*লো। বিষয়টি এমন নয় যে ইনা খাবারগুলো ফেলতে চেয়েছে, বরং সে তার কাজে প্রচন্ড বিরক্তি প্রকাশ করলো।

ইনা এবার ত্বরিত জোরে একটা চেয়ার টানলো। অতঃপর তাতে গা ছেড়ে পায়ের উপর পা তুলে বসলো। এবং এক হাত চেয়ারের ব্যাকরেস্টের উপর নির্বিকারে রেখে মাথাটা আরেকটু পেছনে হেলান দিয়ে চোখজোড়া আধোবুঁজে ফেললো।

ইনার এহেন ভাবভঙ্গিদেখে লোকটি তাচ্ছিল্যের সাথে হাসলো। তবে সে একটা ওয়াইনের বোতল খুলে একটা গ্লাসে ঢেলে ইনার দিকে ঠেলে দিয়ে বললো,

“ইনা! তোমার রা*গটাকে একটু কমালেও তো পারো। এতো রা*গ ভালো না।”

ইনা চোখদুটো পুরোপুরি খুলে নিজের মাথা এবার সামনের দিকে খানিকটা ঝুকিয়ে ঘাড় কাত করে লোকটির দিকে তাকালো। অতঃপর চোখমুখে তাচ্ছিল্য আর বিরক্তি মিশিয়ে লোকটিকে কিছু বলতে চেয়েও বললো না। বরং গ্লাসটা উল্টো লোকটির দিকে ঢেলে দিলো।

লোকটিও হেসে গ্লাসটা নিয়ে এক ঢোকে পুরো ওয়াইনটা খেয়ে নিলো। অতঃপর মগজ আর বাকি সিদ্ধ মাংশের প্লেট দুটো দ্রুত নিজের সমানে ঠিকঠাক সাজিয়ে নিলো। তার কাছে রান্না দুটো খুবই আকর্ষণীয় মনে হচ্ছে। সে সোনালী রংএর ছুরি কাঁটাচামচ নিয়ে খাবার গুলো ছোটছোট টুকরো করে খেতে শুরু করলো। তার কাছে খাবার গুলো এতোক্ষণ আকর্ষণীয় লাগছিলো আর এখন যেন পুরো অমৃত মনে হচ্ছে। সে অবশ্য এমটাই আশা করেছিলো। সে জানতো, ইনার রান্না খারাপ হতেই পারে না।

লোকটি নিজের খাবার খেতে খেতেই বললো,

“উফ,ইনা! অসাধারণ রাঁধো তুমি!”

ইনা লোকটির এহেন প্রশংসায় একটুও খুশি হলো না। বরং বিরক্তিতে তার চোখমুখ আরেকটু বিগড়ে গেলো। এরই মাঝে লোকটি আবারও বললো,

“শুনো, আজ রাতের মধ্যেই ৪০ টা বাচ্চা পাঠাতে হবে। সবকিছু ঠিকঠাক আছে তো!”

ইনা বিরক্তির সাথে মাথা কিঞ্চিৎ ঝাঁকিয়ে বললো,

“হুম!”

আবারও দুজনের মাঝে নিরবতা জমলো। এবার ইনা পা নাচাতে নাচাতে বললো,

“ওকে কবে শেষ করতে পারবো?”

লোকটি প্লেটের দিকে তাকিয়েই নির্বিকারে বললো,

“কার কথা বলছো?”

ইনার যেনো এটা শুনে পুরো মেজাজ বিগড়ে গেলো। চোখমুখে প্রশ্ন শক্ত হয়ে উঠলো। ইনা দাঁত খিঁচিয়ে বললো,

“আমাকে রাগাস না!”

লোকটি খাবার খেতে থাকা অবস্থাতেই বললো,

“তুমি কি এগুলো খাবে। মজা হয়েছে, একটু টেস্ট করে দেখতে পারো।”

ইনার মেজার এবার তুঙ্গে। ও এক নিমিষেই চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। ওর বসে থাকা চেয়ারটা হাতের ধাক্কায় ছিঁটকে পড়ে যেতে নিয়েও পড়লো না।ইনা টেবিলের উপর থাকা ফলের ঝুড়ি থেকে একটা ছুরি উঠিয়ে খাবারে একটা প্লেটে ছুড়িটাকে বসিয়ে লোকটির দিকে খানিকটা ঝুকলো। অতঃপর লোকটির মুখের দিকে আগুন ঝড়া চোখে তাকিয়ে বললো,

“শা/লা! বেশি হেঁয়ালি করবি তো এখানেই মে/রে গেঁড়ে রাখবো।”

ওর এই কান্ডে আশেপাশে গার্ডগুলো এগিয়ে আসতে নিলে ইনা চোখ গরম করে ওদের দিকে তাকাতেই ওরা সব পিছিয়ে গেলো। লোকটিও খানিকটা মুচকি হেঁসে বললো,

“শান্ত হও ইনা। চুপচাপ বসো, আমি বলছি।”

ইনা খানিকটা সময় ওর চোখের দিকে ক্ষি*প্ত নজরে তাকিয়ে থাকার পর জোরে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করলো। অতঃপর পুনোরায় চেয়ার টেনে নিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসে পড়লো।

লোকটি এবার নিজের কালো কোর্ট থেকে একটা ছোট কাগজের দলা বের করে ইনার সামনে টেবিলের উপর রাখলো। দেখে মনে হচ্ছে কাগজের ভেতরে কোনো কিছু রাখা রয়েছে। ইনা জানে এটা কি। কাগজের ভেতরে থাকা জিনিসটা ইনার কাছে অমূল্য। সে খানিকটা মুচকি হেসে কাগজটা তুলে নিলো। কাগজের ভাজ গুলো খুলতেই কিছু সাদা গুঁড়োর দেখা মিললো। এটা হলো অত্যন্ত পাওয়ারফুল একটা ড্রাগ। যেটা ইনা মাঝেমধ্যেই খেয়ে থাকে। তবে অতিরিক্ত খেলে ও ভারসাম্যহীন হয়ে যায় বিধায় লোকটি মাঝেমধ্যেই নিয়ম করে এটা এনে ইনাকে দেয়। ইনা নিমিষেই পুরো ড্রাগটা খেয়ে নিয়ে তৃপ্তির শ্বাস ফেলে চোখ বুজলো।

ওর ভাবভঙ্গি দেখে লোকটিও শান্তি পেলো। ইনা নিতান্তই রাগ চটা মেয়ে। ওর এতো রাগই না যেন কবে তাদের শেষ করে দেয়। তবে লোকটিকে খানিকটা অবাক করে দিয়ে ইনা চোখবুঁজে পা ঝুলাতে ঝুলাতে বললো,

“তুই কি ভেবেছিস! এসব দিয়ে আমায় কাবু করবি?”

এই বলেই ইনা চোখ খুললো। অতঃপর লোকটির দিকে বাঁকা হেসে তাকাতেই লোকটির মুখটা খানিক শুকিয়ে গেলো। ইনা পুনোরায় বলতে লাগলো,

“সাতটা বছর পার হয়ে গিয়েছে। গত তিনবছর ধরে এই পাপের দুনিয়ায় তোদের সাথে পার্টনার হয়ে কাজ করছি। অথচ তোরা আমার একটা কাজই করে দিতে পারছিস না। একটা কথা ভালো করে বলছি শুনে রাখ। আমি যা চাইছি তা যদি না হয় তবে তোরা কেউ বাঁচতে পারবি না। আমি ম/রবো এতে আমার কোনো টেনশন নেই কিন্তু ম/রার আগে সবকিছু শেষ করে দিয়েই ম/রবো।”

লোকটি ইনার কথায় ইতস্ততভাবে হাসার চেষ্টা করলো। তবে এখন আর হাসি পাচ্ছে না। একটা সাধারণ মেয়েকে সে নিজ চোখের সামনে এতোটা বিক্ষিপ্ত হতে দেখেছে। ইনাকে তার মাঝেমধ্যে অবিশ্বাস্য লাগে। লোকটি জোরে নিশ্বাস ফেলে বলতে লাগলো,

“তোমার কথা মতো চেষ্টা তো আর কম করিনি। কিন্তু তুমিও ভালো করে জানো যে সে কে। তার পাওয়ার কতটুকু তা তো আন্দাজে রয়েছে। আর বড় কথা শা/লার কলিজাটাই বেশিই বড়। এতোবার ম/রেও মরছে না।বিশ্বাস করো, ওকে মে/রে সবার আগের ওর কলিজা বের করে মেপে তারপর পুরো কাঁচ্চা চিবিয়ে খাবো।”

ইনা বিরক্তি নিয়ে লোকটির দিকে তাকিয়ে বললো,

“ফালতু কথা বন্ধ করেন। এটা বলেন যে, এখন ওর আপডেট কি। জেল থেকে বেড়িয়েছে?”

“এখনো বের হয়নি, আজ হয়তো বেড়োবে।”

ইনা কিছুক্ষণ গম্ভীর্যের সাথে ভাবতে লাগলো। অতঃপর হাতে থাকা ছুরিটা টেবিলের মাঝে ছুঁড়ে মেরে বললো,

“তবে আজ আবার হোক!”

লোকটি ওর হাভভাব দেখে কপাল কুঁচকে বললো,

“মানে?”

ইনা মুচকি হেসে চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে বুকে দু-হাত গুঁজে উল্টো ঘুরে যেতে যেতে বললো,

“এবার যেন আর কোনো ভুল না হয়। সুসংবাদটা এবার যেভাবেই হোক শুনতে চাই আমি।”

ইনা এই বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। অন্যদিকে লোকটি কঠিন চিন্তায় পড়ে গেলো।এবারও না জানি কোন পাগলামি করে বসে ইনা।

_________

পুলিশ স্টেশনের লক-আপের মধ্যে এক কোণায় ফ্লোরে বসে রইছে কেনীথ। এক পা মাটিতে ছড়ানো, অন্য পা ভাজ করা। হাটুর উপর একহাত ছড়িয়ে মাথা নিচু করে বসে রইছে। বেশভূষায় ব্যাপক পরিবর্তন। পরনে কালো রংএর হুডি আর কালো রংএর প্যান্ট। মাথায় আর আগের মতো ঘাড় সমান চুলগুলো নেই। সাত বছর আগে এক্সিডেন্টে অপারেশনের জন্য তার কাঁধ সমান চুলগুলো সব কেটে ফেলতে হয়েছিলো। এরপর চাইলে সে আবার নিজের চিরচেনা স্টাইলে ফিরতে পারতো কিন্তু সে আর তেমনটা করেনি।

চুলগুলো এখন মডার্ন পম্পাডোর স্টাইলে কাটা। অর্থাৎ চুল সামনের দিকে কিছুটা উঁচু এবং পেছনে সেট করা হয়। পাশে সাধারণ ফেইড বা আন্ডারকাট।তবে বর্তমানে খানিকটা এলোমেলো। এছাড়া চোয়াল, গাল এবং থুতনির দাড়ি সুসামঞ্জস্যভাবে ছোট করে ছাঁটা। সবমিলিয়ে কেনীথের লুকটা আর আগের মতো অগোছালো না হলেও অনেকটাই ফর্মাল আর ক্যাজুয়াল মনে হয়।

আগের মতো এখন না কনসার্টে একদম লেদার জ্যাকেট, বুট জুতো, ব্রেসলেট এসব পড়ে যায়, আর না প্রতিদিনের পোশাক হিসেবে কালো টিশার্ট পড়ে। সব জায়গায় সব ক্ষেত্রেই তার পোশাক এখন হুডি। শীত, বর্ষা, গ্রীষ্ম যেটাই হোক না কেনো, সে হুডি ছাড়তে নারাজ। তাও সে একই রংএর কালো হুডি আর প্যান্ট।

আর এই লক-আপের মধ্যে পড়ে পড়ে দিন রাত পার করাটা এখন নতুন কিছু নয়। দেশের প্রায় সকলেই জানে তার এই ঘটনা। আগে কনসার্টে গিয়ে গোলমাল হতো বিধায় সেসময় পুলিশদের সাথে কাটছাঁট করার ব্যবস্থা থাকতো কেনীথের পি.এ এর। কিন্তু গত পাঁচ বছর ধরে কেনীথের নিজের জন্য কোনো পি.এ. রাখেনি। কেননা তার আগা গোড়া সবকিছুর দায়িত্ব এখন পাভেলের। পাভেলই কেনীথের সব দায়িত্ব পালন করছে।

আর আজ এই লক-আপে পড়ে থাকার কারণ হলো গতকাল রাতে তার কনসার্টে বিশাল গোলমাল বাঁধিয়েছিলো কেনীথ। একটা অল্পবয়সী মেয়ে হুট করেই স্টেজে উঠে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরেছিলো। যদিও মেয়েটা এই কাজ কেনীথের উপর প্রগাঢ় ভক্তি থেকেই করেছিলো কিন্তু এটা কেনীথকে কে বোঝায়। গত কয়েকবছরে কেনীথের পরিবর্তন গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মেয়েদের প্রতি তার এলার্জি টাইপের বিদ্বেষ। আশেপাশে মেয়ে দেখলেই নাক ছিটকানো এখন যেন তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। যে কারণবশত মেয়েটি শুরুতেই ভালোমতো কেনীথকে না ছাড়তে রাজি হলে কেনীথ নিজেও আর রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সেই মেয়েটাইকেই বেঁধোরে পি*টিয়েছে। অবশ্য মেয়েটির চুলের মুঠি ধরে গালে কয়েকটা ঘুষি পড়তে না পড়তেই লোকজন মেয়েটিকে সরিয়ে নিয়ে যায় আর কেনীথকেও থামিয়ে দেয়।

তবে এটা নিয়ে মিডিয়া আর পুরো পাব্লিক সহ সব কেনীথের উপর খানিকটা ক্ষেপেছে। যথারীতি ভালো একটা কেসও ঘাড়ে জুটেছে। এখন গতকাল থেকে এখন সন্ধ্যা পর্যন্ত লকআপেই পড়ে রইছে। কেনীথের অবশ্য এসবে মাথাব্যথা নেই। একটু পর পাভেল এসে নিশ্চিত ছাড়িয়ে নিয়ে যাবে। কারণ দেরী হলে কেনীথ নিজেই আর পাভেলকে আস্ত রাখবে না।

গত কয়েকবছরে কেনীথের পাগলামি সম্পর্কে এখন পুলিশ স্টেশনের লোকজনেরও যথেষ্ট ধারণা হয়ে গিয়েছে। যেকারণে খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ওর ধারে কাছেও কেউ ঘেঁষতে যায় না। আর যতক্ষণ কেনীথ পুলিশ স্টেশনে রয়েছে তো সবার মাঝে খানিকটা আতংক থেকেই যায়। যদিও কেনীথ পুরো সময় খাওয়াদাওয়া ছাড়াই চুপচাপ পার করে দেয় তবে ওর এই নিস্তব্ধতাই সবাইকে ভয় পাইয়ে দেয়।

কিছুমাস আগের ঘটনা। এভাবেই লক-আপে বসে ছিলো। হঠাৎ ও পানি চাইলে একজন কনস্টেবল ওকে পানি দিতে এসে খানিকটা এ্যাটিটিউট দেখিয়ে তুইতোকারি করেছিলো। এতে কেনীথ একটা বিশেষ পাত্তা দেয়নি। কিন্তু যখনই পানি দিতে গিয়ে ইচ্ছে করে মশকরা করার জন্য ওর মুখে আর শরীরে পানি ঢেলে দেয় তখনই কাহিনি পুরো বিগড়ে যাও। সেদিন কনস্টেবল ম*রতে ম*রতে বেঁচেছে। স্টেশনের লোকজন একসাথে এসেও কেনীথকে সহজে ছাড়াতে পারেনি। এসব নানা ঘটনা গুলোই মূলত সবার মাঝে কেনীথকে নিয়ে আ*তংক সৃষ্টি করে।

কেনীথ গম্ভীর্যের সাথে কিছু একটা ভাবছিলো। হঠাৎ করেই ওর গম্ভীর মুখে কিঞ্চিৎ তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটলো। আর বিরবির করে বললো,

“কা*লনাগিনী!”

এরই মাঝে কেনীথ ভাবনা চিন্তাকে ভাঙ্গিয়ে পাভেলের কন্ঠস্বরে চারপাশ মুখরিত হলো। কনস্টেবল লক-আপের তালা খুলে দিতেই পাভেল ভেতরে ঢুকে এসে কেনীথকে সোজা জাপ্টে জড়িয়ে ধরে পাশেই হাঁটু গেঁড়ে নিচে বসে পড়লো। অতঃপর তড়িঘড়ি করে মুখে বিস্তৃত হাসি ঝুলিয়ে বললো,

“বস চলে এসেছি। সব সেটিংফিটিং শেষ। এবার আর কোনো চিন্তা নেই। চলো, চলো বাড়ি যেতে হবে। বাড়ি গিয়ে ধুমিয়ে ঘুম দেবো। কাল থেকে ছুটতে ছুটতে অবস্থা খারাপ।”

এই বলেই ও কেনীথকে টেনে তুলতে নিলে কেনীথ চোখ রাঙ্গিয়ে হাত সরিয়ে নিলো। অতপর সে নিজেই উঠে দাঁড়িয়ে হুডির চুপিটা মাথায় পড়ে নিয়ে জামা কাপড় ঝাড়তে ঝাড়তে বললো,

” বলেছি না, এভাবে ব্যাঙ্গের মতো সবসময় লাফালাফি করবি না।আর কাল থেকে লক-আপে পড়ে রইছি আমি আর অবস্থা খারাপ হয়েছে তোর?”

পাভেল ইতস্ততভাবে হাসার চেষ্টা করে বললো,

“তো নয়তো কি!তোমার টেনশনে আমার দুচোখের ঘুম হাওয়া হয়ে গিয়েছে। পাগল ছাগলের মতো এদিক ওদিক ঘুরে সেটিং ফিটিং করেছি। আবার বললো…”

–“হুম, জানি আমি চল এবার।”

এই বলেই দুজনে মিলে বাকিসব কাজ বাকি ছিলো তা পূরণ করে স্টেশন থেকে বেড়িয়ো পড়লো। রাত হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে খানিকটা শীতও পড়েছে। পাভেলও নিজের ধূসর রংএর হুডির টুপিটা দিয়ে নিজের একঝাঁক কোঁকড়ানো চুলগুলো ঢেকে ফেললো।

দুজনে মিলে কালো রংএর গাড়িতে গিয়ে উঠে বসলো।সবসময় যেকোনো পরিস্থিতিতে যে কেনীথ নিজের গাড়ি নিজেই ড্রাইভ করতো সে এখনা ড্রাইভিং সিটের পাশে চুপচাপ বসে রইছে। অন্যদিকে পাভেল গাড়ি ড্রাইভ করছে। গাড়ি চালাতে চালাতেই পাভেল বললো,

“ব্রো, একটা নিউজ ছিলো।”

“হুম!”

“শুনছি এ.টি. নাকি বিডিতে আসছে।”

কেনীথ ঘাড় ঘুরিয়ে নির্বিকারে পাভেলের দিকে তাকিয়ে বললো,

“এ.টি.! ওই রকস্টার মেয়েটা?”

“হুম!”

কেনীথ মাথা ঘুরিয়ে সামনের দিকে তাকালো। অতঃপর সিটে হেলান দিয়ে বিরক্তির সুরে বললো,

“জীবনে এমনিতেই ঝামেলার শেষ নেই আর কোথা থেকেই এই এ.টি. এসে জুড়ে বসেছে। গত দু’বছর ধরে লাইফটাই ঝালাপালা করে দিচ্ছে।”

পাভেল শুধু হতাশা গ্রস্ত হয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। অতঃপর নির্বিকারে গাড়ি চালাতে শুরু করলো। আনায়ার চলে যাওয়ার প্রায় সাত বছর পূর্ণ হতে চললো। সেদিনের ঘটনায় পু*ড়ে যাওয়া মে*য়েটার লা*শের জায়গায় আনায়া না হলেও পারতো। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত সেটা আনায়াই ছিলো। শুধু একবার নয় বরং পাভেল নিজ দায়িত্বেই পুরো তিন তিনবার মেয়েটির সাথে আনায়ার বিভিন্ন জিনিস যেমন বাড়িতে থাকা চুল কিংবা আরো বিভিন্ন জিনিস জোগাড় করে ডিএনএ টেস্ট করিয়েছিলো। কিন্তু প্রত্যেকবারই ডিএনএ টেস্টে আনায়ার জিনিসগুলোর সাথে লা/শের ডিএনএ মিলে গিয়েছে।

আনায়ার সত্যি সত্যি পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার খবর শোনার পর থেকে কেনীথ পুরো দেড়টা বছর নিস্তব্ধতার সাথে কাটিয়েছে। একদম পুরোপুরি থমকে গিয়েছিলো যেন। সেই বাড়িতে সম্পূর্ণভাবে ঘরবন্দী রুপে থেকেছে। পাভেল ওর সাথে থাকতে চাইতো তবে কেনীথ বরাবরই মানা করেছে। মাঝেমধ্যে অবশ্য পাভেল নিজেই ছোট ভাইয়ের মতো করে জোর খাটিয়েই কেনীথের সাথে থেকে ওর দেখভাল করছে। এতোগুলা মাসে পাভেল যথাসাধ্য ভাবে কেনীথকে সারিয়ে আগের মতো গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। অবশেষে তার এতোসব প্রচেষ্টা সফল হলেও কেনীথ নিজেকে গড়ে তুলেছে ভিন্ন রুপে।

আগে কেনীথকে দেখলে মনে হতো ও নিজের চুল প্রচন্ড উদাসীন। এতো বড় বড় চুল রাখে অথচ আগাছার মতো করে রাখে সবসময়।তবে চুল ছোট রাখলেই তো হয়। যথারীতি এমটাই ভাবতো সবাই কিন্তু কেনীথের বড় চুল রাখার পেছনের কারণটা খানিক ভিন্ন। ওর মা কাশফিয়া পছন্দ করতো ওর বড়বড় চুল। সঙ্গে প্রচন্ড যত্নও করতো চুলের। কেনীথও বাধ্য সন্তানের মতো মায়ের সব কথাই শুনতো। তবে কাশফিয়া চলে যাওয়ার পর কেনীথ মায়ের পছন্দ অনুযায়ী চুল গুলো তো সবসময় বড় রাখার সিন্ধান্ত নিয়েছিলে কিন্তু কখনো বিশেষ ভাবে সেগুলোর যত্ন নেয়নি।

কেনীথের ছোট বেলার ঘটনা। কেনীথ তখন মোটামুটি বড়ই হয়েছে। তবে তখন সে রাশিয়াতে। আনায়ার সাথে বিয়ে কিংবা সাক্ষাৎ এর পর্ব তখনও আসেনি। গোসলের পর কাশফিয়া কেনীথের ঘাড় সমান বড় বড় চুলগুলো তোয়ালে দিয়ে মুছে দিচ্ছিলো। কেনীথ মায়ের বাধ্য সন্তানের মতো ভদ্র ভাবে চুপচাপ বসে ছিলো। একটা সময় কেনীথ বললো,

“মা আমি বড় হয়ে গেলে এই সব চুল কেটে ফেলবো।”

এটা কথা শুনে বি*স্ফো*রণের ন্যায় কাশফিয়া বিস্মিত হয়ে বললো,

—“কিহ! কেনো? তুই তো বলেছিলি তোর বড় চুল ভালো লাগে। তবে… তুই কি এসব আমার ইচ্ছের জন্য জোর করে রাখিস?”

মায়ের এহেন উদ্বিগ্ন ভাবভঙ্গিতে কেনীথ খানিকটা ইতস্ততভাবে বললো,

“নাহ, বিষয়টি তা না। তুমি তো বলো পৃথিবীতে সবাই সারাজীবন থাকে না।একদিন সবাইকে চলে যেতে হবে। এখন বড় হওয়ার পর যদি তুমি আমায় ছেড়ে চলে যাও তখন আমি এগুলোর কি করবো। তোমার মতো ধরে বেঁধে এতো কায়দা করে যত্ন নেওয়ার ধৈর্য নেই আমার।”

কেনীথের কথায় কাশফিয়া হেসে ফেললো। পুনোরায় কেনীথের চুল গুলো ব্যস্ত হাতে মুছতে মুছতে বললো,

“আমি না থাকলে তখন তোর বউ থাকবে। তখন সেই করে দিবে এসব। এতো টেনশনের প্রয়োজন নেই। শুধু প্রমিজ কর কখনো বিশেষ প্রয়োজন কিংবা কারণ না থাকলে চুল ছোট করবি না।”

“আচ্ছা সে প্রমিজ না হয় করলাম। কিন্তু এই বউটা আবার কি জিনিস। ওটাও তোমার মতোই দেখতে?”

কাশফিয়া হেসে বললো,

“আমার মতো কেনো দেখতে হবে। তোর বউ আমার চেয়ে অনেক অনেক বেশি সুন্দর হবে।”

“সত্যি!”

“আমি মিথ্যে কেনো বলবো শুনি?”

“আচ্ছা, সে না হয় বুঝলাম। কিন্তু বউটা কি জিনিস তা তো বললে না।”

“ওহ, বউ! বউ হলো… এই যে তোর বাবা আমায় বিয়ে করেছে। আমি আমার পক্ষ থেকে তার সব দেখভাল করি আর সে আমার। এই তো, আমি হলাম তার বউ আর সে আমার বর।”

“তার মানে আমার বউ তখনই হবে যখন আমি বিয়ে করবো?”

“হুম তো!”

এবার কেনীথ ঘাড় ঘুরিয়ে কাশফিয়ার দিকে অনুনয়ের সুরে বললো,

“তবে আমায় একটা বিয়ে করিয়ে দেও না মা। বিয়ে করবো আমি।”

কাশফিয়া মুচকি হেসে বললো,

“বিয়ে করতে হলে আগে বড় হতে হবে।”

“বড় না হয়ে এখন করলে খুব সমস্যা হবে?”

“সমস্যা!হুম অনেক সমস্যা হবে। কিন্তু কথা হলো বিয়ে নিয়ে এতো ইন্টারেস্ট কোথা থেকে আসছে।”

কেনীথ এবার চুপ করে গেলো। আর কিছু বললো না। তবে খানিক সময় পেরোতেই কেনীথ পুনোরায় বললো,

“মা যদি তোমার মতো আমার বউ আমার চুল পছন্দ না করে! এমনটাও তো হতে পারে তাই না? তখন কি করবো আমি?”

“মোটেও না, এমনটা কখনোই হবে না। আমি দোয়া করে দিচ্ছি, তোর বউ আমার চাইতেও বেশি তোর চুল পছন্দ করবে। এবার খুশি?”

কেনীথ এবার আচমকাই খানিক লজ্জা পেয়ে গেলো। তা কিসের জন্য সে জানে না তবে নিমিষেই ফর্সা গাল দুটো লাল হয়ে গেলো।

আবার আনায়ার আর বিয়ের পর তারা যখন ও শিকদার বাড়িতে ছিলো। ঘটনাটা হয়তো কেনীথের বাবা মা মা/রা যাওয়ার কিছুদিন আগের। কাশফিয়া আনায়ার ঘাড় পর্যন্ত চুলগুলোতে চিরুনী করে ঝুঁটি বেঁধে দিতে ব্যস্থ। আর সেই সময় কেনীথ তাদের পাশেই বসে বসে দুজের কার্যকলাপ দেখছিলো। মনটাও খানিক উদাস ছিলো। তার মা টা এই আনায়ার কাছে এলে যেন তাকেই ভুলতে বসে। এমনিতেই আনায়াকে তেমন দেখতে পারে না সে। তার উপর নাকি ও এখন ওর বউ হয়ে গিয়েছে। আনায়া ওর বউ হওয়াতে ওর লাভ লসটা ঠিক হয়েছে সেটা কেনীথ এখনো খুঁজে পায়নি।

এদিকে দিনে দিনে তার মায়ের কথার বিপরীত ফল পাচ্ছে সে। বিশেষ করে বিয়ে আর বউ সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে। তার মা তাকে বললো বিয়ে কত ভালোই না জিনিস আর বউতো বিশ্বসেরা ভালো। অথচ সে তো সব উল্টোপাল্টা জিনিস দেখছে। এই আনায়াকে তো তার কোনোদিক দিয়েই ভালো মনে হয় না।কেমন সবসময় তিড়িংবিড়িং করতে থাকে। যেখানে কেনীথ চুপচাপ সেখানে আনায়া এমন চঞ্চল। কেনীথের মাঝেমধ্যে আনায়াকে অসহ্য লাগলেও খানিকটা মায়াও হয়। ছোট ভেবে আর কিছু বলেও না। অবশ্য তার বলা কওয়ার সুযোগটা কোথায়। যবে থেকে এসেছে তবে থেকেই এই আনায়া জোঁকের মতো তার পেছনে লেগে থাকে আর গায়ের সাথে যেন চিপকে থাকে।

এদিকে এমন সময় কেনীথের ভাবনা চিন্তার অবসান ঘটাতে আনায়া এলো তার কাছে। ওর চুল বাঁধা শেষ। মাথায় তাল গাছের মতো একটা ঝুটি। আনায়া কেনীথের মুখোমুখি হয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। ফর্সা গুলুবুবু গালে টোল দুটো স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। কিন্তু কেনীথের কাছে আনায়ার হাভভাব কেনো যেন সুবিধার মনে হচ্ছে না।

এদিকে কাশফিয়া মুচকি হেসে ওদের দুজনকে দেখছে। কিন্তু আনায়ার সঠিক ভাবগতিক দুজনের কেউই বুঝতে পারেনি। কেনীথ হয়তো খানিকটা সন্দিহান ছিলো তবে ঠিকঠাক কিছু বুঝে ওঠার আগেই আনায়া কেনীথের পিঠের কাছে গিয়ে ওর চুলগুলো খাবলে ধরে একপ্রকার শূন্যে ঝুলতে লাগলো।

আনায়া পেছন থেকে খিটমিট করে হাসছে আর কেনীথ ভে ভে করে কেঁদেকেটে মা মা বলে চিৎকার করছে। ততক্ষণে কাশফিয়া হতভম্বের মতো এগিয়ে এসে আনায়াকে ছাড়িয়ে কোলে তুলে নিলো। আর কেনীথকে অন্যহাতে জড়িয়ে সান্ত্বনা দিতে লাগলো। কিন্তু কেনীথ কাঁদতে কাঁদতেই বলতে লাগলো,

“মা তুমি আমায় মিথ্যা বলেছো। তুমি বলেছিলো আমার চুল নাকি আবার বউ পছন্দ করবে কিন্তু তারা আমার চুল পছন্দ করে না।ও আমার চুল যখন-তখন টেনে ছিঁড়ে ফেলে। মা আমার এমন বউ চাই না। লাগবে না আমার ওর মতো বউ। মা আমায় আবার বিয়ে দেও। আমি আবার বিয়ে করবো। এই বউ নেবো না আমি। নয়তো আমি বিয়েই করবো না। কোনো বউ টও চাই না আমার।”

কাশফিয়া কেনীথকে এতো বুঝিয়েও শান্ত করতে পারছে না অন্যদিকে আনায়া কেনীথের কান্না আর কথা গুলো শুনে যেন আরো বেশি মজা পেলো। ওর ছোট ছোট দাঁতের কিটিমিটি হাসিই যেন থামছে না।

কেনীথ সিটে হেলান দিয়ে চোখবুঁজে ভাবতে ভাবতে কতদূর চলে গিয়েছিলো নিজেও বুঝতে পারেনি। এমনটা তার মাঝেমধ্যেই হয়। পুরোনো নানান স্মৃতিতে নিজেকে ডুবিয়ে ফেলে। আর এই বড় চুল কেটে ফেলার বিশেষ কারণ হিসেবে কেনীথ মনে মনে বললো,

“মা!তুমি মিথ্যে বলোনি। কিন্তু… বিশেষ মানুষ গুলোই যখন নেই তখন বিশেষ জিনিস গুলোও আর রাখার কি প্রয়োজন! আর এটাই হলো বিশেষ কারণ। আই হোপ,মা আমি আমার প্রমিজ রেখেছি।”

এই বলতে না বলতেই কেনীথ চোখ খুলে সামনে তাকালো। চারপাশে কিছু সংখ্যক গাছ পালা আর সঙ্গে সোডিয়ামের আলোয় শহরের রাস্তাটা চকচক করছে। আশেপাশে কতশত গাড়ির চলাচল। আসছে যাচ্ছে, এভাবেই সময়কাল ফুরাচ্ছে।

কেনীথ কিঞ্চিৎ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পাভেলকে কিছু বলার জন্য উদ্বিগ্ন হলো। পাভেল খুব মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। কেনীথ ওর দিকে ফিরে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে এর আগেই এক আকস্মিক ঘটনায় দুজনেই থমকে গেলো। সাথে থমকে গেলো চারপাশ।

আচমকা তাদের গাড়িতে সামনে থেকে একটা ট্রাক এসে সজোরে ধাক্কা দিলে ওদের গাড়িটা ছিটকে উল্টে পড়তে গিয়েও পড়লো না।কিন্তু কেনীথ আর পাভেল দুজনেই মাথায় আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারাতে লাগলো। চারপাশে নিমিষেই শতশত মানুষ জন জড় হয়ে গেলো। সবাই ওদের চারপাশ ঘিরে ধরলো। পাভেল আর কেনীথ দুজনেরই কপাল ফেটে র*ক্ত গড়াচ্ছে। একটা সময় দুজনেই সম্পূর্ণ রুপে অচেতন হয়ে পড়লো।

~চলবে