একজোড়া আগুন পাখি পর্ব-৩৯(৪র্থ অংশ)

0
6

#একজোড়া_আগুন_পাখি
#তুশকন্যা

পর্ব—৩৯ (৪র্থ অংশ) সারপ্রাইজ পার্ট ✨

#একজোড়া_আগুন_পাখি
#তুশকন্যা

পর্ব→৩৯ (৪র্থ অংশ)

[উত্তেজ”না মূলক পর্ব। উত্তে”জনা নিতে না পারলে দূরে থাকুন।নয়তো এই জিনিস লেখিকা নিজেও গেলে না]

কেনীথ আনায়ার গলার ভাঁজে মুখ গুঁজে রাখা অবস্থায়,অস্পষ্ট স্বরে গাইতে থাকে,

ঝলসানো রাতের
এ পোড়া বরাতে
তুমি আমার অন্ধকার
আর রোশনাই________

চল বলে ফেলি
কত কথাকলি
জন্মেছে বলতে তোমায়
তোমাকেই চাই _______

নিমিষেই আনায়ার চোখ বেয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে। কেনীথ আবারও বলে,

“তোর কছে কিচ্ছু চাই না আমি।
শুধু চাই, তুই আমার কাছে…
নিজের মতো করো থাকিস।
ভয় না পেয়ে,মুখ না লুকিয়ে
আমায় শুধু একটু ভালোবাসিস।”

কেনীথ ধীরে ধীরে আনায়ার গলার ভাঁজ থেকে মুখ তোলে। তার চোখ দুটো আনায়ার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। দগ্ধ সেই চোখজোড়া, গভীরতায় ভরা, যেন কত কিছু বলতে চায়, অথচ শব্দ খুঁজে পায় না। আনায়ার নিঃশ্বাস আটকে আসে, বুকের মাঝখানে হঠাৎ যেন একটা শক্ত কিছু গেঁথে গিয়েছে। ওর গলা শুকিয়ে চৌচির। চোখের পাতা মৃদু কম্পনে কেঁপে ওঠে। খুব কাছ থেকে কেনীথের শরীরের তাপ, হৃদয়ের ধকধক শব্দ, নিঃশ্বাসের ভার… সবকিছু আনায়াকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে।

তারা একে অপরের এতটাই কাছে, এতটাই নিরাবরণে, যেন দুটো দেহ মিলিয়ে একটি অস্তিত্বে পরিণত হয়েছে। কেনীথ ধীরে ধীরে, আনায়ার গালের এক পাশে হাত রাখে। আনায়ার কপালের কাছে ছড়িয়ে থাকা, চুলগুলো সরিয়ে দেয়। সেই স্পর্শে আনায়ার পুরো শরীর বয়ে যায় বিদ্যুতের ন্যায়,অজানা এক শিহরণ। এক মুহূর্তের জন্য ওর চোখে জল জমে ওঠে। কিন্তু সেটা কান্না না—কোনো এক অচেনা অনুভব, যেটা ব্যথার থেকে আরো বেশি গভীর।

কেনীথ তখনো চুপ, কিন্তু তার চোখে যেন কোনো এক গভীর তৃষ্ণা। সে আবার আনায়ার দিকে ঝুঁকে আসে, ওর কপালের ঠিক মাঝখানে হালকা ঠোঁট ছোঁয়ায়। আনায়ার শরীর যেন ক্রমাগত গলে যেতে লাগে। কেনীথের বুকের তাপ আর ওর নিঃশ্বাসের ভারি ধাক্কা মিলেমিশে যেন এক ভৌতিক মায়ার ঘোর তৈরি করেছে। আনায়া এক মুহূর্তের জন্য চোখ বন্ধ করে নেয়। কিন্তু ও জানে,আজ হয়তো সবকিছু ঠিক আগের মতো থাকবে না।

আনায়া তখনো শক্ত ভাবে চোখ বুঁজে রয়েছে। যেন দৃষ্টিটুকু খুললেই চারপাশটা ধ্বসে পড়বে। নিঃশ্বাস চললেও তা আর নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই। বুকের মধ্যে কী এক অসহনীয় অনুভব তাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। এক তীব্র অস্বস্তি তার সর্বত্র শরীর জুড়ে। নিঃশ্বাস টানতে পারছে না ঠিকমতো,বুকের ভেতর ধরা পড়েছে এক অদৃশ্য ঝড়। গলার নিচে জমে থাকা শ্বাস, আর ছটফট করা স্পর্শের আতঙ্ক মিলেমিশে ওকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে।

ঠিক তখনই, সে অনুভব করল;কেনীথের উত্তপ্ত নিশ্বাস যেন আগুনের মতো এসে পড়ছে ওর গালের পাশে, ঠোঁটের কাছে। শ্বাসের তীব্রতা এত বেশি, এত কাছে…যেন সে নিঃশ্বাস নয়, ওকেই স্পর্শ করে ফেলছে। আনায়ার ঠোঁট কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠল। গলা শুকিয়ে চৌচির হয়ে গিয়েছে । ঢোক গিলতে চায়, কিন্তু গলার ভেতর কেবল জমাট ভয়,আ”তং’ক।

তার মনে হচ্ছে, কেনীথ নিজের মুখটা ক্রমাগত তার দিকে এগিয়ে আনছে। ধীরে, মগ্ন, অথচ নিয়ন্ত্রণহীন এক আকর্ষণে।

আনায়া চোখ খুলে তাকাতে পারছে না। সাহস হচ্ছে না তার। যদি চোখ খোলার পর বাস্তবটা তার ভাবনার চেয়ে আরো বেশি ভয়ং”কর হয়? যদি সত্যিই কেনীথ এতটা কাছে চলে আসে?

হঠাৎ করেই সে কেঁপে উঠল।তীব্র শিহরণ সারা দেহ বেয়ে নেমে গেল। আনায়া স্পষ্ট বুঝল—কেনীথ তার ঠোঁটে আঙুল ছুঁইয়ে দিয়েছে।

আনায়ার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠেছে। হৃদকম্পন এত জোরে হচ্ছে, যেন বুকের খাঁচা ভেঙে বেরিয়ে আসবে। ঠোঁটের কোণে হালকা ঘাম জমেছে। সে নিজেকে স্থির রাখতে পারছে না, এমনকি ভেতরের কাঁপনটাও আর লুকানো যাচ্ছে না।

এই মুহূর্তে, আনায়া খুব ভালো করেই জানে, সে আর নিজের মাঝে নেই। শরীর, মন, অনুভব—সব যেন কেনীথের একটুখানি আঙুলের ছোঁয়াতেই বিদ্যুতের ঝলকের ন্যায় ঝলসে উঠছে। আর সেই ঝলসানো অনুভূতি তাকে ক্রমাগত গলিয়ে দিচ্ছে, নিঃশেষ করে দিচ্ছে ধীরে ধীরে।

এমন মূহূর্তে হঠাৎই সে টের পেল,কেনীথের উষ্ণ নিশ্বাসটা আরো ঘন হয়ে পড়ছে। আগুনের ন্যায় উত্তপ্ত— একদম তার গালের পাশে, ঠোঁটের ঠিক কাছেই যেন থেমে রয়েছে। সে বুঝে ফেলল,কেনীথ তার মুখটা এবার আরো এগিয়ে এনেছে। এই অনুভবেই যেন, বুকের নিচে গড়ে ওঠে এক নিঃশব্দ বিস্ফো”রণ।

আনায়ার গলা শুকিয়ে চৌচির। গলার গভীরে জমে থাকা বাতাসটাও বেরোতেই পারছে না। একই সময়, তার শরীর শিউরে উঠল আরো এক অজানা শিহরণে। কেননা সে স্পষ্ট বুঝতে পারল,কেনীথ তার ঠোঁটে আলগোছে নিজের আঙ্গুল নাড়চাড় করতে শুরু করেছে। এই,স্পর্শটাও অস্থির কিংবা বেপরোয়া নয়। বরং এটি আরো বেশি গভীর, মন্থর…একটা প্রগাঢ় আবেশে পরিপূর্ণ। আঙুলটা ঠোঁটে থেমে ছিল খানিকক্ষণ, তারপর আবারও ধীরে ধীরে নড়চড় শুরু হয়। শব্দ ছাড়াই উজ্জীবিত হচ্ছে কেনীথের প্রতিটি অনুভব…ঠোঁটের ওপর, নিঃশব্দে, তবুও দহনময়।

অথচ আনায়ার সমস্ত অনুভব অবশ হয়ে গেল। চোখের কোণ কেঁপে উঠল। দেহের ভেতরটা থরথর করে উঠছে বারবার। সে নিজেকে আটকে রাখতে পারছিল না। অজান্তেই দুই হাতে, চেপে ধরল চাদর। বুকের নিচে জমে থাকা কাঁপন যেন বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইছে।

ঠিক সেই মুহূর্তে…কেনীথের প্রচন্ড ভারী কন্ঠে বলে উঠল, ”

হোয়াই আর দে সো সফট? ইট’স ঠু মাচ!…দে’আর মেইকিং মি ক্রেইভ অ্যা টেইস্ট।”

কেনীথ এটুকু বলেই থেমে যায়৷ এদিকে আনায়ার এহেন কথা শুনতেই আকস্মিক চোখ খুলে যায়। পুনোরায় মুখোমুখি হয় কেনীথের নেশা মাখানো চোখজোড়ার। একইসময় কেনীথ মাতাল স্বরে আবারও বলে,

“ক্যান আই বাইট দেম… জাস্ট ওয়ান্স?”

বিস্ময়ে আনায়ার চোখ ছানাবড়া। অকস্মাৎ ঢোক গিলে ভাবতে লাগে, “এসব কি হচ্ছে?” কেনীথের হাবভাব মোটেও সুবিধার নয়। আনায়া সুযোগ বুঝে তার ঠোঁট কামড়ে চেপে ধরে। কেনীথের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে মনে মনে আওড়ায়,

“ওহ, খোদা! তুলে নেও আমায়। আর এভাবে বাঁচা সম্ভব না।”

এদিকে কেনীথ ওর কাজে খানিকটা কপাল কুঁচকে ফেলে। গাম্ভীর্যের সাথে বলে ওঠে,

“হুঁশ! তারা মাই ব্লাড! ডোন্ট বাইট দেম লাইক দ্যাট…দোজ লিপস আর মাইন টু টেস্ট। অনলি আই গেট টু বাইট দেম।”

আনায়া কেনীথের কথায় আরো বেশি ঘাবড়ে যায়।অস্থির হয়ে আকস্মিক কয়েকবার ঢোক গেলে। একইসাথে নিজের ঠোঁট আরো শক্তভাবে চেপে ধরে। তৎক্ষনাৎ কেনীথেরও চোখমুখ কুঁচকে যায়।

—“কিপ ডুয়িং দ্যাট… অ্যান্ড আই সোয়্যার, আই’ম গোয়িং টু ডু সামথিং ব্যাড।”

কেনীথের এ কথাতেও আনায়া নির্লিপ্ত। সে কি করবে না করবে কিচ্ছু মাথায় আসছে না।ওদিকে কেনীথ তাকে প্রতিনিয়ত ঘাবড়ে দিচ্ছে, একের পর এক অদ্ভুত শিহরণ জাগানো কথাবার্তা বলে।

—-“ইউ রিয়েলি ওয়ান্ট টু বি কিসড্ দ্যাট ব্যাডলি, হাঃ?…কিপ বাইটিং দ্যাট লিপ, এন্ড আই’ল মেক ইউ বেগ।”

আনায়ার কিছু করতে চেয়েও, যেন কিছুই করতে পারছে না। উল্টো পুরো শরীর অকস্মাৎ কাঁপতে শুরু করেছে।যা কেনীথ স্পষ্ট অনুভব করে।

“ইউ আর ট্রেম্বলিং,আনায়া… ইজ ইট ফিয়ার, অর ইজ ইট দ্য ওয়ে আই মেইক ইউ ফিল?”

“আই নো ইউ আর ট্রেমব্লিং, মাই ব্লাড…বাট আই ওয়ান্ট টু সি হাউ মাচ ইউ ক্যান টেক।”

আনায়া আবেশে চোখ বুজে ফেলে। এরচেয়ে বেশি কিছু করার সাহস তার নেই। আর এটা দেখলাত্রই কেনীথ আবারও বলে,

“আর ইউ স্কেয়ার্ড? ইফ আই স্টার্ট কিসিং ইউ নাউ, আই ওয়োন্ট স্টপ আনটিল ইউ’আর ব্রেথলেস এন্ড ট্রেম্বলিং ইন মাই আর্মস।”

“আই ওয়ান্ট টু গেট লস্ট ইন দ্য ওয়ার্মথ্ অফ ইউর কিস। হেই ব্লাড, প্লিজ সে সামথিং। আই কান্ট ওয়েট এনি লঙগার।”

আনায়া এবারও কিছু বলে না। এদিকে কেনীথ আনায়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই যেন কিছুটা বিরক্ত হলো। পাশে মুখ ফিরিয়ে অকস্মাৎ হাই তুলে আনায়ার গলার ভাজে মুখ গুঁজে দেয়।

—“আমি তোর শরীর নয়—আত্মাকে ছুঁতে চাই। যে নিজেকে এখনো জানেনি, আমি তাকে জানতে চাই।”

এবার আনায়ার কপাল আকস্মিক কুঁচকে যায়। মনে মনে কিছুটা বিরক্ত আর হতাশার সাথে আওড়ায়,

“শরীর পর্যন্ত কি, কম ছিল নাকি! এখন আবার আত্নাকেও ছুঁতে চাচ্ছে। ও খোদা! ঠাডা আমার মাথার উপর ফালাও।”

এরইমাঝে আনায়া টের পায়, কেনীথের আর কোনে সাড়াশব্দ নেই। কেনীথের ঘুমের উপক্রম হয়েছে ভেবে আনায়া মনে মনে দারুণ খুশি। ঠিক এতোক্ষণ পর এসে সে শান্তিতে ভারী শ্বাস ফেলল। অনুভব করতে লাগল, তার নিজের গলায় আছড়ে পড়া কেনীথের সকল ভারী নিশ্বাস। আনায়া ভেবেই নিয়েছে কেনীথ হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে।—”যাক!অবশেষে বাঁচা গেল।”

আনায়া এ কথা বলেই কেনীথকে আলতো হাতে ধাক্কা দিয়ে সরানোর চেষ্টা করে। তবে খুব বেশি একটা লাভ হয়না। দুবার ধাক্কা দিতেই,কেনীথ নড়েচড়ে ওকে আরো শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে। এতে আনায়া কিছুটা বিরক্ত হলেও নিরাশ হয় না। সে কিছুক্ষণ এভাবেই থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।আর কিছুক্ষণ পর, কেনীথের ঘুম গভীর হলে ,সহজেই নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পারবে—এই আশায়।

আনায়া আরো কিছুটা সময় ওভাবেই চুপচাপ শুয়ে থাকে। কিন্তু এটা মোটেও তার কাছে সহজ কোনো বিষয় নয়। কেনীথের উত্তপ্ত শরীর আর এলোমেলো চুলে…সবমিলিয়ে তার অবস্থা ঘেমে, অস্থির—বেহাল।

এরইমাঝে আনায়া এক অদ্ভুত ঘটনার সম্মুখীন হয়। আচমকা সে অনুভব করে, তার গলার ভাঁজের কিছুটা জায়গা ভেজা ভেজা লাগছে। আনায়া হঠাৎ ভেবে পায় না হঠাৎ পানি কোথায়…আনায়া ভাবতে ভাবতেই আকস্মিক চমকে ওঠে।কেনীথ কি কাঁদছে? এটা কি হয়? আদৌও কি এসব সত্যি?

আনায়া সিলিং এর দিকে চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে থাকে। কিঞ্চিৎ ঢোক গিলে তার মুক্ত হাতটা ধীরে ধীরে, কেনীথের ঘাড়ের উপর আলতোভাবে রাখে। শীতল কন্ঠে নিন্মস্বরে বলে,

“আ..আপনি কি কাঁদছেন?”

আনায়ার আর কিছু বলার সুযোগ হয়না। অকস্মাৎ কেনীথের বাচ্চাদের মতো কান্না জুড়ে দেওয়ার আওয়াজে সে একদম থতমত খেয়ে যায়।এসব কি হচ্ছে? সে তার জীবনের ইতিহাসে কেনীথকে কখনো এভাবে কাঁদতে দেখেনি। শুধু এভাবে কেনো? কেনীথকে তো সে কখনো কাঁদতেই দেখেনি।

আনায়া চোখ পিটপিট করে ঢোক গেলে। এরইমাঝে কেনীথ অস্ফুটস্বরে বলতে শুরু করে,

“”আমি তোকে ছাড়া বাঁচতে পারব না, আনায়া!আই ওয়োন্ট লেট ইউ গো।ইউ আর যাস্ট মাইন, নাও এন্ড ফরএভার।

তোকে ছাড়া আমার সবদিন মরুভূমির মতো। আমার শ্বাস নিতেও প্রচন্ড কষ্ট হয়। তোকে ছাড়া আমি কিছু ভাবতে গেলেই, আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।প্রতিবার যখনই আমি তোর কথা ভেবেছি, আই ফিল লাইক আ’ম লস মাই কন্ট্রোল।

আই’ম অ্যাডিকটেড টু ইউ,তারা! এভরি মোমেন্ট, এভরি সেকেন্ড… আই যাস্ট নিড ইউ৷ ইউ’ভ টেকেন, ওভার মাই এন্টায়ার এক্সিটেন্স।

ইউ আর নট যাস্ট ইন মাই হার্ট। ইউ আর মাই সোল।ইউ আর মাই অবসেশন,মাই ম্যাডনেস,মাই ব্লাড,মাই লাইফ,মাই এভরিথিং।”

কেনীথ থেমে থেমে একের পর এক নিজের কথাগুলো আওড়াতে লাগল। এদিকে আনায়া সম্পূর্ণ স্তব্ধ,হতভম্ব। কেনীথের চোখের পানিতে তার গলা ভিজে সিক্ত হয়ে গিয়েছে। তবুও কেনীথের পাগলামি থামছে না। এদিকে একটা পর্যায়ে গিয়ে আনায়া নিজেই অকস্মাৎ ফুঁপিয়ে উঠল। তার চোখের কোণে জমে থাকা জল আকস্মিক গড়িয়ে যেতে লাগল। নিঃশব্দের কান্নার বেগ আরো বেড়ে উঠল।কেনীথের ঘাড়ের উপর ছড়িয়ে থাকা চুলগুলোর মাঝে আনায়া হাত গলিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। একই সময় কেনীথ আবারও বাচ্চাদের মতো ক্রন্দন স্বরে বলে উঠল,

“আমি জানি, তোর আমাকে ভালোবাসার মতো কোনো কারণ আর অবশিষ্ট নেই। আমাকে হয়তো পুরপুরি কখনো ক্ষমাও করা যায় না। কিন্তু আমি চাই, তুই আমাকে ভালোবাস। অনেক বেশি…অনেক অনেক বেশি। যতটা আমি তোকে ভালোবাসি ঠিক তার চেয়েও অনেক বেশি।

আই ডোন্ট যাস্ট ওয়ান্ট ইউ,… তারা! আই নিড ইউ। আই কান্ট ব্রেথ উইথ আউট ইউ।ইউ হ্যাভ বিকাম মাই লাইফ, মাই এভরিথিং।

তুই আমাকে ছেড়ে গেলে আমি কখনোই ভালো থাকতে পারব না। যদি আমায় নিজের শ”ত্রু ভাবিস, তবে তাই ঠিক। তবুও নিজেকে আমার থেকে দূরে রেখে…প্লিজ আমাকে এতো বড় শাস্তি দিস না৷ বাঁচব না আমি তোকে ছাড়া…বুঝিস না কেনো? আমায় একটু বুঝলে কি ক্ষতি হয়? কখনো আমায় বোঝার চেষ্টা করিস না তুই!তুই অনেক পঁচা! অনেক বাজে!…নাহ, নাহ, তুই নাহ! আমি খারাপ। তুই অনেক ভালো। আমার তোকেই লাগবে।”

কেনীথ নিজের মতো আওড়াতে আওড়াতেই হঠাৎ টের পায়, সে ব্যতীত আরো কেউ কান্না করছে। নিমিষেই সে চুপ হয়ে যায়।মুখ তুলতেই, ঘোলা ঘোলা চোখে আনায়ার কান্নামাখা মুখটা দেখে তার কপাল কুঁচকে যায়। আনায়ার হাত তখনও কেনীথের ঘাড়ের চুলগুলোর মাঝে নিবদ্ধ। এদিকে কেনীথ তার একহাত আনায়ার গালে আলতোভাবে রেখে বলল,

“তুই কাঁদছিস কেনো? আমি তোকে কোথাও কষ্ট দিয়েছি? আমার জন্য কোথাও ব্যাথা পাচ্ছিস? সরে যাবো?”

কেনীথ সরে আসতে নিলে আনায়া আকস্মিক ওকে নিজের দু’হাতে আঁকড়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। এবার যেন কেনীথ কিছুটা ভড়কে যায়৷ আনায়া ওকে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে জড়িয়ে রাখে। কেনীথ কিছুটা নড়েচড়ে ওর মুখ তুলে তাকায়। আনায়ার নাকের ডগার সংলগ্নে তার নাকের ডগা সম্পূর্ণ লেগে রয়েছে। আনায়া চোখ দু’টো বুঁজে রেখে অনবরত ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে। এমন মূহুর্তে কেনীথ এসব দেখে কিছুটা উদ্বিগ্ন স্বরে বলল,

“কি হয়েছে, ব্লাড? এতো কাঁদছিস কেনো?”

আনায়ার কান্না থামবার কোনো নাম নেই। উল্টো সে ফুঁপিয়ে আওড়াতে লাগল,

“আর কক্ষনোও ছেড়ে যাব না, আপনাকে। প্রমিজ করছি,যেভাবেই হোক না কেনো, বাকিটা জীবন সবসময় আপনার পাশেই থাকব। আর কখনো কোনো অভিযোগ রাখব না। আমি চেষ্টা করব আপনাকে ভালোবাসার। হয়তো আমি লোভী কিংবা স্বার্থপর… না কি…কিছু জানি না আমি। কিন্তু আমি…আমি ভালো থাকতে পারছি না আপনাকে ছাড়া। ঘুরেফিরে সবসময় শুধু আপনার চিন্তাই মাথায় ঘুরতে থাকে। আর প্রতিবার আমি.. আমি… আমি ভালোবাসি আপনাকে।”

আনায়ার বলতে বলতে দম ফুরিয়ে এসেছে। অস্থিরতায় হাত পা কাঁপছে। সর্বশেষ কথাগুলো বলতে গিয়েও অনবরত ঢোক গিলেছে। কথাগুলো যেন তার গলায় বারবার জমাট বেঁধে আঁটকে যাচ্ছিল। তবে শেষমেষ নিজের অভিব্যক্তি সম্পূর্ণ হলেই সে আবারও ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। এরমাঝে কেনীথ ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই নিজেও কেঁদে উঠল। কেনীথ কান্নার আওয়াজ আনায়া চোখ খুলে স্তব্ধ হয়ে তাকায়।চোখ পিটপিট করে কিছুক্ষণ কেনীথের বাচ্চাদের মতো কাঁদতে দেখে বলে,

“এখন আবার আপনি কেনো কাঁদছেন? বললামই তো আমি আর ছেড়ে যাব না আপনাকে।”

কেনীথ কাঁদতে কাঁদতে জবাব দেয়,”তুই কাঁদছিলি বলেই তো আমি কাঁদছি।”

এবার যেন আনায়া কিছুটা বিরক্ত হয়। বিরক্তিতে তার চোখ ছোট ছোট হয়ে আসে। কিছুটা হতাশা মিশ্রিত কন্ঠে কেনীথের উদ্দেশ্যে বলে,

“হয়েছে, আর কাঁদতে হবে না। আমাকে ছেড়ে দিন। আপনি ঘুমিয়ে যান, আমারও ঘুম পেয়েছে। যেতে হবে।”

আনায়ার যাওয়ার কথা শোনামাত্রই কেনীথের কান্না থেমে যায়। আনায়ার দিকে অদ্ভুত শীতল চোখে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই আচমকা ওকে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে। আনায়া কিছুটা কপাল কুঁচকে বলে,

” কি হলো? আবার এমন করছেন কেনো?”

কেনীথ পাশে একবার তাকিয়ে ঝড়েরবেগ বোঝার চেষ্টা করে। এখনো পুরোদমে ঝড় বয়ে চলেছে। কেনীথ পুনোরায় আনায়ার দিকে তাকিয়ে ইনোসেন্ট বাচ্চার মতো করে বলে,

“বাহিরে ঝড় হচ্ছে।”

—“হুম,তো?”

—“আমার ঘুম আসবে না।”

আনায়া চোখ পিটপিট করে তাকায়।

—“আপনি কি ভয় পাচ্ছেন?”

—“নাহ, তবে আমার তোকে লাগবে৷”

আনায়া কিছুটা আমতাআমতা করে বলে,

“হুম ঠিক আছে। আমি পাশের ঘরেই আছি। কোনো প্রয়োজন পড়লে…”

–“নাহ,আমার তোকে এখানেই লাগবে। আমার কাছেই লাগবে।”

আনায়া ঠোঁট ভিজিয়ে ঢোক গেলে। কেনীথের ভাবভঙ্গি, অভিব্যক্তি কোনোটাই সুবিধার নয়। কিছুটা ঘাবলা মনে হচ্ছে। তবে এটাও ভাবছে, এমন জ্বরের ঘোরে আবার তেমন কিসের ঘাবলা থাকতে পারে।

—“আচ্ছা ঠিক আছে, আমি এখানেই… এই রুমেই থাকব। কিন্তু আগে আমায় ছেড়ে তো দিন। প্রমিজ করছি, আমি এই রুম থেকে যাব না।”

—“আমি তা বলিনি,আমি বলেছি তোকে এখানে থাকতে মানে…আমার সাথে এভাবেই…”

কেনীথের অভিব্যক্তি আনায়ার কাছে স্পষ্ট। সে কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

“দেখুন আপনার মাথা ঠিক নেই। আপনি প্লিজ,আর কোনো পাগলামি… ”

আনায়ার কথা আর শেষ হলো না। বরং কেনীথকে ধাক্কা দিয়ে সরে যেতে নিলে, এক বিপত্তি আভাস পেয়ে সে বিস্ময়ে সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে যায়। আনায়া সরে যেতে নিলেই কেনীথ নড়েচড়ে ওকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে।আর ঠিক তখনই, হঠাৎ করেই আনায়ার টের পায়, কেনীথের পরনের তোয়ালেটার ঢিলে হয়ে এসেছে। একরকম নেমে যাওয়ার উপক্রম। মুহূর্তেই ওর চোখ মুখ শুকিয়ে যায়, কণ্ঠ চেপে আসে। আতঙ্ক আর লজ্জার তীব্র ঢেউ যেন ওকে একত্রে আছড়ে ফেলে। আনায়া চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। ঠোঁট শুকিয়ে যায়, চোখের কোণ কেঁপে ওঠে মৃদু ভাবে। তৎক্ষনাৎ কেনীথ ওর অভিব্যক্তিতে কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,

“কি হলো?”

আনায়া ঢোক গিয়ে কেনীথের দিকে তাকায়। ঠোঁট ভিজিয়ে চাপা স্বরে বলে,

“আপনার তোয়া…তোয়ালেটা খুলে যাচ্ছে। আমাকে ছেড়ে, দ্রুত ওটাকে সামলান।”

আনায়ার কথা শুনে নিমিষেই কেনীথের অভিব্যক্তি পরিবর্তন হয়। সে অদ্ভুত ভাবে মুচকি হেসে বলে,

“একেবারে খুলে ফেলি?”

এ কথা শুনে আনায়ার চোখ বিস্ময়ে ছানাবড়া। অনেকটা চেঁচানো স্বরে বলে ওঠে,

“কিহ্!!!”

কেনীথ আনায়ার কথায় আবারও দুষ্টু হাসিতে মেতে উঠে, আনায়ার চোখে চোখ রেখে শীতল কন্ঠে বলে,

“তোরও সুবিধা হবে,সাথে আমারও। কি বলিস, খুলেই ফেলি।”

আনায়া বিস্ময়ে, অস্বস্তিতে কেঁদে ফেলার উপক্রম। আর ঠিক সেই মূহুর্তে কেনীথ নিজের কথা শেষ করা মাত্রই, অকস্মাৎ মুচকি হেসে আনায়ার ঠোঁট আঁকড়ে ধরে। একই সাথে,আনায়া বেশি কিছু করে ফেলার পূর্বেই, কেনীথ ভারী দুটো কম্বল একহাতে টেনে তাদের মাথা সহ সম্পূর্ণ ঢেকে ফেলে।

ইয়োর লিপস আর ট্রেমব্লিং উইথ ডিসায়ার… ইট এক্সাইটস মি মোর দ্যান এনি থিং এলস।
অর্থ: তোর ঠোঁট ইচ্ছার কারণে কাঁপছে… এটা আমাকে সবকিছুর চেয়েও বেশি উত্তেজিত করে।

_____________

সারারাত তী”ব্র ঝড়ের শেষে, প্রায় অনেকটা বেলা হবার পর সূর্যের দেখা মেলে। সেই সূর্যের কিরণ আনায়ার রুমের কাঁচের জানালা ভেদ করে, আনায়ার ঘুমন্ত মুখশ্রীতে আছড়ে পড়েছে। যার দরূন আনায়া তার ঘুমের মাঝেই চোখমুখ কিছুটা কুঁচকে ফেলে। ঘুমাতেও অস্বস্তি হচ্ছে। এমনিতেও যেন, আজ তার ঘুমটা মোটেও পুরো হয়নি। সবমিলিয়ে ঘুমের ঘোরেই সে বিরক্ত হয়ে উঠেছে।

কিন্তু ততক্ষণেই আনায়ার অর্ধচেতন মস্তিষ্ক আনায়াকে জানান দেয়, তার তো এলোবেলা করে ঘুমানোর কথা নয়। তাকে ঘুম থেকে উঠতে হবে, ভোর সকালে। এরপর ইনায়ার দেখভাল, রান্না করা সহ কত কাজ! অথচ সে এখনো বিছানায়?

আনায়া ঘুমের ঘোরেই উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। শোয়া হতে উঠে বসার নিয়তে, নড়চড় করতেই তার অনুভব হয় যে, সে একটুও নড়াচড়া করতে পারছে না। হাত পা যেন অবশ হয়ে রয়েছে। কেউ যেন তাকে আঁকড়ে নিজের সাথে আঁটকে রেখেছে। নিজের উপর এক বড়সড় ভরও অনুভুত হয় তার। একই সাথে সে টের পায়, তার শরীরের প্রচন্ড ব্যাথা। ব্যাথার চোটে সমস্ত শরীর নিস্তেজ হয়ে, বিছানার সাথে লেগে রয়েছে।

আনায়া চোখবুঁজে সবকিছু অনুভব করতে করতেই, অকস্মা চমকে নিজের বন্ধ চোখজোড়া খুলে ফেলে। শুরুতেই সে কিছু বুঝে উঠতে পারে না। সে আদতে কোথায় রয়েছে। কিন্তু উপর দিকে আর আশেপাশে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারে, এটা তারই ঘর। তবে যেই না, নিজের গলার ভাজে কেউ মুখ গুঁজে, তার কোমড় পেঁচিয়ে নিজের সাথে আঁকড়ে ধরে ঘুমাচ্ছে… তা টের পায়, তখনই যেন আনায়ার হুঁশ উড়ে যায়।তার অস্থির মন উদ্বিগ্ন হয়ে ভাবতে থাকে, “এটা কে?”

ঠিক তখনই, আনায়ার গত রাতের কথা ধীরে ধীরে মনে পড়তে লাগে। এখন যেন সবকিছুই, তার চোখে ভাসতে শুরু করেছে। সে কম্বলের নিচে নিজেদের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করতেই, আনায়া লজ্জা আর তীব্র অস্বস্তিতে চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়। নিমিষেই তার সর্বস্ব কুঁক’ড়ে যায়।মনে মনে চিৎকার করে আওড়ায়,

“এটা কি করলাম আমি!”

কিছুক্ষণ এভাবেই অতিবাহিত হবার পর আনায়া ধীরে ধীরে পুনোরায় চোখ খুলে ফেলে। সে কেনীথের জন্য,না নিজের শরীর নড়চড় করতে পারছে, না মাথাটা এদিক-সেদিক নিতে পারছে। কেনীথের বাঁধন এতোই শক্ত যে, তা থেকে এই মূহুর্তে আনায়ার মুক্তি পাওয়া অসম্ভব প্রায়। তৎক্ষনাৎ আনায়া গলা শুকিয়ে এলো। ভাবতে শুরু করল, এখান থেকে কিভাবে নিজেকে উদ্ধার করবে। কেনীথ উপর হয়ে তার গলায় মুখ গুঁজে রাখায়, ওর চেহেরাটাও দেখা যাচ্ছে না। এরইমাঝে আনায়া টের পেলো, কেনীথ নড়ে উঠেছে। এর মানে ও জেগে যাচ্ছে। হায়!হায়! এমনটা হলে, আনায়া এই অবস্থায় কিভাবে কেনীথের মুখোমুখি হবে। সম্ভব নয়! কোনো মতেই সম্ভব নয়!

আনায়া এই ভেবেই পুনরায় ঘুমানোর ভাণ করতে লাগে। চুপচাপ চোখদুটো বুঁজে নিয়ে, অবচেতনের ন্যায় শুয়ে থাকে।

এদিকে কেনীথের ঘুম ধীরে ধীরে ভেঙে যায়৷ আনায়ার গলার ভাজ থেকে মুখ তুলতেই কপাল অনেকটাই কুঁচকে যায়। ঘুমের ঘোরে চোখ পিটপিট করে আনায়াকে দেখতে থাকে৷ অতঃপর নিজেদের অবস্থা ও অবস্থান বোঝা মাত্রই বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে তাকায়৷ অথচ মনে মনে আওড়ায়,

“আরেহ বাহ্! আমি তো পুরো ফাটিয়ে দিয়েছি!”

ওদিকে আনায়া চোখ বুঁজে চুপটি করে সব বোঝার চেষ্টা করছে। শুরুতে নিয়ত ছিল, কেনীথ ওঠার আগেই সে চলে যাবে। কিন্তু এখন যেহেতু, কেনীথ উঠেই গিয়েছে, তাই আপাতত তার আশা কেনীথ যেন নিজেই সুন্দর মতো চলে যায়৷ তবেই সে প্রাণ খুলে শ্বাস নিতে পারবে। কিন্তু এমন কিছুই ঘটে না। কেনীথ নিজের হাত শুরুতে আনায়ার পিঠ থেকে সরিয়ে নিলে,আনায়ার মনে কিছুটা আশ্বাস জাগে। কিন্তু কেনীথ সেই আশ্বাসকে ভেস্তে দিয়ে অকস্মা আনায়ার কোমড় জড়িয়ে শুয়ে পড়ে। একই সাথে নিজের মুখ গুঁজে দেয় আনায়ার গলার ভাজে।

কেনীথের এহেন কান্ডে আনায়া বিস্মিত। বিস্ময়ে আকস্মিক নিজের চোখজোড়া খুলে যায়। মনে মনে ভাবতে শুরু করেছে, কাল রাতের জ্বরটা কি আদৌও সত্য ছিল নাকি ওটা কেনীথের পরিকল্পনা। পরক্ষণেই মনে হয়, জ্বল তো যথেষ্ট ছিল। সে জ্বরে তারই ম”রার দশা হয়েছিল। তবে কেনীথ কেনো এখন এমনটা করছে। হিসেবে তো তার নিজেরও অবাক হওয়ার কথা৷

আনায়া ঠোঁট ভিজিয়ে আবারও ঢোক গেলে। এরইমাঝে কেনীথ আনায়াকে আরেকটু অপ্রস্তুত করে তুলতে, ওর গলার ভাঁজে ঠোঁট ছুঁইয়ে ফিসফিসিয়ে আওড়াতে লাগল,

“হাউ ডু ইউ ফিল নাউ…তারা মাই ব্লাড!”

আনায়া অকস্মা কেঁপে উঠল। কেনীথ জেগে রয়েছে! এখন কি করবে সে। এদিকে আনায়া হতে কোনো উত্তর না আসায়, কেনীথ কিঞ্চিৎ মুচকি হাসল।

—“আই নো ইউ ফিল মাই ব্রেথ অন ইয়োর নেক… জাস্ট ইমাজিন হোয়াট কামস নেক্সট।”

এই বলেই, আচমকা আনায়ার গলার ভাজ থেকে কেনীথ নিজের মুখ তোলে। আর ওমনই আনায়া নিজের চোখ বুঁজে নেয়।কেনীথ তা দেখমাত্রই আরো কিছুটা মুচকি হাসে। আনায়ার একদম মুখ বরাবর নিজের মুখ এনে বলতে লাগে,

“আর কত অভিনয় করবেন?…যত যাই বলেন, নারী যে অভিনয়ে সত্যিই সেরা, তা আমি আপনাকে না দেখলে কখনোই বুঝতে পারতাম না।”

এটুকু বলতে না বলতেই সে, আনায়ার ঠোঁট আলতোভাবে চুমু খেয়ে নেয়। তৎক্ষনাৎ আনায়া কিঞ্চিৎ ঢোক গিলো,চোখ খুলে ফেলে। এবং মুখোমুখি হয় শয়তানি হাসিতে মুচকি মুচকি হাসতে থাকা কেনীথের।কেনীথের এহেন হুটহাট কান্ডে আনায়া স্তব্ধ, বিস্মিত।

নিজের এতো কাছে কেনীথকে পেয়ে আনায়া কিছটা ইতস্তত বোধ করছে। অস্থির হয়ে, ঠোঁট চেপে কেনীথের নজর থেকে নিজেকে সরানোর পায়তারা করছে।

কেনীথ সবই, নিজের সুক্ষ্ম নজরে পর্যবেক্ষণ করল। এবং শেষমেশ আলতো হেসে বলল,

“লজ্জা পাচ্ছিস?”

আনায়া কিছু বলে না। দাঁত খিঁচে চুপচাপ কেনীথের দিকে তাকিয়ে থাকে। আনায়ার এহেন অবস্থা দেখে কেনীথের যেন আরো হাসি পেল। তবে এবার সে না হেসে খানিকটা গম্ভীর্যের সাথে বলল,

“তোর আপত্তি না থাকলে চল আবার শুরু করি।”

কেনীথ এহেন কথা শোনা মাত্রই আনায়া বেশম খেল। ত্বরিত কিছুট একটা বলার চেষ্টা করতে লাগল,

“দে…দে…দে….”

আনায়া কিছু বলে ওঠার আগেই কেনীথ ওর কোমড়টা আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরে। নিজের সাথে সম্পূর্ণ মিশিয়ে নিয়ে বলে,

“হ্যাঁ,হ্যাঁ,বলো জান! আর কি চাই তোমার?আরো কিছু কি দেবার… বাকি রয়েছে আমার?”

কেনীথ এমন আলাভোলা চেহেরা বানিয়ে… উল্টোপাল্টা কথার ইঙ্গিতে আনায়া আরো ঘাবড়ে যায়।হাত পা নিস্তেজ হয়ে পড়ে নিমিষেই। কোনো মতেই বুঝতে পারছে না যে, সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না কোনো? তবে সে নিজেকে যথাসাধ্য সামলে নিয়ে আবারও বলল,

“দে…দে…দেখুন!”

—“হুম, বলো মাই ব্লাড! আমার কি তোমার আরো কিছু দেখার বাকি রয়েছে? আই মিন, আমার জানা মতে তো আমি সবটাই দেখে নিয়েছি, রাইট?”

এবারও আর আনায়া নিজের কথা সম্পূর্ণ করতে পারে না। কেনীথ দু’হাতে আনায়ার কোমড় পিঠ জড়িয়ে নেয়। তার কাজকর্ম অভিব্যক্তি এমন যে, সে পারলে আনায়ার মধ্যখানে প্রবেশ করতে চাইছে। একদিকে দুটো অনাবৃত দেহ মিলেমিশে একাকার। স্পর্শকাতর স্থানসহ সর্বস্বে একে অন্যের ত্বক লেগে রয়েছে।আবার গায়ের উপর দুটো মোটা কম্বল এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে।আর এদিকে কেনীথ দুষ্টুমি মাখা সকল কথায়, আনায়া আরো ভড়কে গিয়েছে। আনায়া অপ্রস্তুত হয়ে গেলে, তৎক্ষনাৎ কিছু একটা মনে পড়তেই তার চোখমুখ, চোয়াল শক্ত হয়। কেনীথের দিকে দৃঢ় চোখে তাকিয়ে বলে ওঠে,

“আপনার না জ্বর এসেছিল?”

কেনীথ আলতো স্বরে জবাব দেয়,

“হুম, তো?”

—“আপনার সব মনে আছে?”

আনায়ার এহেন সন্দিহান অভিব্যক্তিতে, কেনীথ আচমকা হেসে ফেলল। নিজের বড়বড় চুলগুলো এলোমেলো হয়ে নিচের দিয়ে ঝুকে পড়ায়, মাথা নাড়াচাড়া করে সরানো চেষ্টা করল। তবে কোনোমতেই আনায়াকে ছাড়ল না। এদিকে কেনীথের হাসির কারণ আনায়ার কাছে স্পষ্ট নয়। কেনীথ জ্বর তো মিথ্যে ছিল না, তবে হাসছে কেনো?কোনোভাবে বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাঁধানোটাও কি তার পূর্ব পরিকল্পনা ছিল?

—-“মাঝরাতের তেমন কিছু, ঠিক মনে নেই। তবে শেষরাতেরটা…. এহেম এহেম।”

কেনীথ খানিকটা কেশে উঠে, শয়তানি ভঙ্গিতে তীর্যক মুচকি হেসে আনায়াকে চো’খ মা”রল। ওদিকে আনায়ার যেন এবার কিছুটা মেজাজ খারাপ হলো৷ কঢ়া কন্ঠে অবাক সুরে কেনীথকে জিজ্ঞেস করল,

“তবে এসব আপনার পূর্বপরিকল্পিত ছিল?”

—-“পুরোপুরি বলা চলে না। তবে কিছুটা।”

—-“মানে?”

—-“আমার টার্গেট ছিল, আজ যেভাবেই হোক,কিছু একটার ব্যবস্তা করেই যেতেই হবে৷ কিন্তু এটা ভাবিনি যে হঠাৎ জ্বরে পড়ে, সবকিছু এতো সহজে হয়ে যাবে।”

কেনীথ এটুকু বলে ঠোঁট কামড়ে হাসতেই, আনায়া বিরক্তিতে চোখ ছোট ছোট করে ফেলল।

—“তাই বলে,এভাবে কেউ বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাঁধাবে? আবার রাতে আমি নিজেই চুল মুছতে বলে গিয়েছিলাম,অথচ… আপনার চুল ভেজা ছিল কেনো? হুঁশ আক্কেল, থাকে কই আপনার?”

—“আমি সহস্রবার বৃষ্টিতে ভিজতে রাজি। সহস্রবার জ্বর বাঁধিয়ে পু”ড়তে রাজি। যদি জানি, শেষ রাতে তোকে ঠিক, এভাবে কাছে পাব।”

অদ্ভুত স্বরে কেনীথ এ কথা বলামাত্রই কিঞ্চিৎ মুচকি হেসে ফেলল। ওদিকে আনায়া স্তব্ধ চোখ তার দিকে তাকিয়ে। আনায়ার হাভভাবে কেনীথের যেন আরো বেশি হাসি পেল। ওমনি সে আবার, অবুঝের মতো জিজ্ঞেস করল,

“” আমার না হয় জ্বরের ঘোরে তেমন কিছু মনে নেই। কিন্তু,তোর তো নিশ্চিত, সব মনে রয়েছে। প্লিজ, বল না! কাল রাতে কি কি হয়েছে?”

কেনীথের উদ্দেশ্য ছিল আনায়াকে আরেকটু অস্বস্তিতে ফেলে দেওয়া। আর ঠিক তাই হলো। আনায়া অস্বস্তিতে বিরক্ত হয়ে চোখমুখ খিঁচে নেয়। কেনীথকে জোরে ধাক্কা দিয়ে সরাতে চায়। কিন্তু কেনীথের শক্তির সাথে পেরে ওঠে না।

—-“সরুন, অসভ্য লোক!”

—-“আয় হায়, আমি কি সভ্য নই?”

—-“কোন কালে, সভ্য ছিলেন আপনি? সরতে বলেছি, দ্রুত ছেড়ে দিন আমায়। অনেক কাজ বাকি আমার। এতো বেলা হয়ে গিয়েছে, আমি কখন কি করব।”

কেনীথ একবার পাশে মুখ ফিরিয়ে, দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে,ঘড়িতে সময়টা দেখে নিল। খুব একটা বেলা হয়েছে বলে তার মনে হলো না। সে আনায়া দিকে নির্বিকারে তাকিয়ে বলে,

“ওতো বেলা হয়নি যে, তুই যেভাবে চিল্লাচিস। এমনিতেও আমি না ছাড়লে কি করবি তুই?”

—-“কি করব মানে?…এই দেখুন…ভাববেন না…মানে…”

—“কি হলো? থেমে যাচ্ছিস কেনো?”

—-“প্লিজ সরুন না!”

—“তোর হাত পা নেই? তোর যাওয়ার ইচ্ছে থাকলে যা।আমাকে সরতে বলছিস কেনো?”

—“নিজের এই জলহস্তীর মতো শরীরটা নিচে ফেলে রেখেছেন আমায়। আবার বলছেন… ”

—“আরেক শুধু জলহস্তী বলে দেখ আমায়। এবার সত্যিই তোকে চেপেই মে”রে ফেলল।”

দু’জনের উল্টোপাল্টা কথার মাঝেও এখন ঝগড়ার সূচনা ঘটছে। একে অপরের সাথে মিশে থাকলেও, দুজনের অভিব্যক্তিতে যেন তীব্র যুদ্ধের প্রয়োজন চলছে।

আনায়া কেনীথকে জোরে ধাক্কা দিতেই কেনীথ ওকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে, নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।কেনীথের এহেন সব কারবারে, আনায়া কঢ়াভাবে চোখ রাঙিয়ে বলে,

“কি চাই, আপনার?”

—“তোকে!”

হুটহাট কেনীথের এমন পরিবর্তন আনায়ার বোধগম্য নয়। একটু আগেই যার চেহেরায় জেদের আভাস ছিল, এখন তার সেই চোখ দুটোতে দৃশ্যমান অদ্ভুত এক আসক্তি। আনায়া অকস্মা কেনীথের চোখের দিকে তাকিয়ে ঢোক গেলে।
ওমনিই কেনীথ কিঞ্চিৎ তীর্যক বাঁকা হেসে বলে,”

“তা বল না! কত রাউন্ড-পাউন্ড হলো?”

কেনীথের এহেন কথায় আনায়ার ভ্রু কুঁচকে যায়। মনে মনে ভাবতে লাগে, এটা কিসের কত রাউন্ড-পাউন্ডের কথা বলছে।

—“কিসের কথা বলছেন আপনি?”

আনায়ার অবুঝ অভিব্যক্তিতে কেনীথ ঠোঁট কামড়ে হেসে বলতে লাগল,

“মুনলিট হাস, দ্য সাইলেন্স পাউন্ডস!
সফট লিপস টাচ জেন্টলি, রাউন্ড বাই রাউন্ড।
আ হুইসপার ব্লুমস, আ হিটেড সাউন্ড।
টু বডিস্ লস্ট, দেন স্লোলি ফাউন্ড।”

কেনীথের এহেন ছন্দে ছন্দে বলা কথাবার্তার সবই আনায়ার মাথার উপর দিয়ে গেল। তবে যখনই এগুলো বোঝার চেষ্টা করে, তৎক্ষনাৎ তার চোখ-মুখ কুঁচকে যায়। বিরক্তিকর অভিব্যক্তিতে বলে ওঠে,

“ছিহ!এসব কি?”

—-“কেনো সুন্দর না?”

—-“মোটেও না! আপনি ওসব… ওসব…”

—“কোন সব?…তারা মাই ব্লাড!মাই হার্ঠ, মাই সুইঠার্ট।”

কেনীথ শুধু আনায়াকে বিব্রত করার চেষ্টা করছে।এছাড়া তার কাজকর্ম অভিব্যক্তিতে আর তেমন কিছুই প্রকাশ পেল না।

—-“যান!দূরে যান! আর অস”ভ্যতা করবেন না!”

—“আরেহ, অসভ্যতা কখন করলাম।আমি তো যাস্ট…ঠিক আছে চল তোকে আরেকটু শোনাই।”

এই বলেই কেনীথ আবারও ছন্দে ছন্দে বলতে লাগল,

“ইওর নেইলস ডিগ ডীপ, মাই সেন্সেস ড্রাউন।
উই রাইজ, উই ফল—দেন স্পিন অ্যারাউন্ডওয়ান। মোর কিস, দেন লস্ট ইন সাউন্ড।
বাই রাউন্ড ফাইভ, উই ওউন দ্য গ্রাউন্ড।”

—-“ছিঃ, আপনি এই রাউন্ড…! অসভ্য!…অসভ্য লোক! ভালো হতে পারবেন না কখনো?”

—-“আমি ভালো হতে চাইলেও, আপনি তো আর, আমায় ভালো হতে দেবেন না!”

—-“কি বলতে চাইছেন, আমি আপনাকে ভালো হতে মানা করেছি?”

—“তা কেনো করবেন?আপনি নিজেই তো আমাকে, সব দুষ্টু বিদ্যা দিয়ে খারাপ বানিয়েছেন।”

কেনীথের কথা শুনতেই আনায়া কপাল কুঁচকে ফেলল। ওমনিই কেনীথ বলতে বলতে সেদিন তার এপ্যার্টমেন্টের রাতে মাতাল হওয়ার ঘটনাটা বলতে লাগল—সেই সাথে আনায়ার সকল পাগলামি কথাবার্তা আর কাজকর্ম। এসব শোনামাত্রই আনায়া কপাল কুঁচকে চেঁচিয়ে বলল,

“ছিহ্,এসব কথা আমি জীবনেও বলিনি। আমি কেনো এসব কাজকর্ম করব? নিশ্চিত আপনি বানিয়ে বলছেন।”

—-“হ, আমার ঠেকা পড়ছে! ভ’ণ্ডামি করবি তুই, আর দোষ দিবি আমাকে?”

আনায়া আর কিছুই বলে না। বরং কেনীথের কাছ থেকে ছাড়া পেতে মোচড়ামুচড়ি করতে লাগল। ওদিকে কেনীথ আনায়াকে আরো শক্ত করে চেপে ধরে বলল,

“কি ভেবেছিস? আমি না ছাড়লে যেতে পারবি এখান থেকে?”

—-“এই আপনার সমস্যা কি? কি শুরু করেছেন এসব?”

—-“দু’মিনিট চুপচাপ শুয়ে থাক।তোকে জড়িয়ে রেখে, আমি এই দু’মিনিট তোকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখব।”

কেনীথ কথা শোনামাত্রই আনায়া শান্ত হয়ে যায়। তবে তার চোখ এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। কেননা কেনীথ এতক্ষণে তার চোখের দিকে নিস্তব্ধ চাহনিতে তাকিয়ে থাকতে শুরু করেছে। এমন কি একবার চোখের পলকও ফেলছে না।কিন্তু আনায়ার কাজকর্মতে সে কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল,

“হুঁশ!…তারা!”

—“কি হয়েছে?”

—“আমার দিকে তাকা!”

—“পারব না আমি।”

—“কেন পারবি না?”

—“পারব না তাই…”

আনায়া আর কিছুই বলতে পারে না। তার অভিব্যক্তি স্তব্ধ। কেনীথের রহস্যময় চোখজোড়ায় তার নজর আটকে গিয়েছে। আনায়ার এহেন অবস্থা দেখে কেনীথ কিঞ্চিৎ মুচকি হাসে। আনায়ার মুখের কাছে নিজের মুখটা খানিক এগিয়ে কামু”ক স্বরে বলে উঠল,

“একটা চুমু খাই?”

আনায়া কিছুই বলে না বরং কিঞ্চিৎ ঢোক গিলে, চুপচাপ শুয়ে থাকে। ওদিকে কেনীথ আনায়ার এহেন নির্লিপ্ততাকে সম্মতি ভেবে আনায়ার ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁতে নিলেই বিপত্তি বাঁধে। অকস্মা ফোন বেজে উঠতেই কেনীথের কপাল কুঁচকে যায়। একইসাথে আনায়াও যেন ঘোর থেকে বেরিয়ে আসে। কেনীথ চোখ ফিরিয়ে বালিশের আশেপাশে হাতিয়ে ফোনটা খুঁজে বের করে। স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই নজরে পড়ে জ্বলজ্বল করে ভেসে ওঠা নাম—”Garbage P.”

কেনীথ কিছুটা বিরক্ত হয়ে ফোনটা কেটে দেয়। ঠিক তৎক্ষনাৎ আরো একটা নাম্বার দেখে ফোন আসে—”Duffer P.”। এবারও নামটা দেখতেই কেনীথ চোখমুখে বিরক্তির আবহ ফুটে ওঠে। তবুও কলটা রিসিভ করে নিরেট কন্ঠে বলে উঠল,

“কি হয়েছে? বারবার ফোন দিচ্ছিস কেনো?”

—“দরজা খোলো ব্রো! আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকব?”

পাভেলের এহেন কথায়, কেনীথ কপাল কুঁচকে বলল,

“তুই কোথায়?”

—“তোমার বউয়ের বাসার সামনে।”

—“তুই এখন এখানে কি করছিস?”

—“কি মুশকিল! আমাকেই না সেই ভোর বেলায় টেক্সট করে বললে, আমি যেন তোমার পড়ার জন্য জামাকাপড় নিয়ে আসি।”

কেনীথ কুঁচকে থাকা কপাল মিলিয়ে যায়। কিছুটা ভারী শ্বাস ফেলে বলে,

“থ্যাংকস্, কিন্তু কিছুক্ষণ ওয়েট করতে হবে। ব্যস্ত আছি।”

—“কি বলো? কি করছো তুমি? আর কতক্ষণ ওয়েট করব আমি?”

—“ঐ শ্লা! তুই আসছিস কতক্ষণ হয়েছে?আসার সাথে সাথেই তো ফোন দিয়ে চেঁচাচ্ছিস। আর বাকি রইল তো ওয়েট করা…আমি যতক্ষণ চাইব ততক্ষণই তুই দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকবি। নয়তো দেখিস তোর কি করি!”

—“আচ্ছা, ঠিক আছে! ঠিক আছে! রাগ করো না প্লিজ। কিন্তু তুমি করছো টা কি?”

কেনীথ এবার বেজায় বিরক্ত হলো। তবে নিজের রাগ কোনোমতে দমিয়ে রেখে জবাব দেয়,

“বউ নিয়ে শুয়ে আছি।”

এদিকে এটা শোনা মাত্রই পাভেল বিস্ময়ের সাথে বলে,

“কিহ সত্যি!”

—“হুম, একদম সত্যি! আয়, এসে দেখে যায়।”

কেনীথের এহেন অভিব্যক্তিতে পাভেল কাছে বিষয়টা স্রেফ কেনীথের মজা ব্যতীত আর কিছুই মনে হলো না। সে কিছুটা হতাশ হয়ে বলে উঠল,

“ওহ্ ব্রো! সকাল সকাল শুধু শুধু মজা…”

—“ফোন রাখ, ডাফার!”

কেনীথ প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে, ফোনটা বালিশের কাছে ছুঁড়ে ফেলল।কিন্তু মুখ নামিয়ে আনায়ার তাকাতেই পুনোরায় তার কপাল কুঁচকে যায়। আনায়ার কঢ়া চোখের চাহনি দেখে বলে উঠল,

“কাহিনি কি? তোর আবার কি হলো?”

—“আপনি ওসব কেনো বলতে গেলেন?”

—“কোন সব…ওহ্! চিন্তা করিস না। ঐ গাধা ওসব বুঝবে না৷”

—“বুঝবে না ছাই।”

—“আচ্ছা, বাদ দে এসব। চল, আগে একটা জোরসে চুমু খেয়ে নেই।”

কেনীথ কথাটা বলতে না বলতেই আনায়ার দিকে মুখ এগিয়ে নিলে,আনায়া তৎক্ষনাৎ কেনীথের ঠোঁট নিজের হাতের তালু দিয়ে ঠেকিয়ে দেয়। অতঃপর কঢ়া কন্ঠে বলে ওঠে,

“খবরদার! অনেক হয়েছে। দ্রুত গোসল সারতে হবে। ওদিকে আবার ইনায়া উঠে গিয়েছে কিনা কে জানে।”

এই বলেই আনায়া কেনীথকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতেই কেনীথ বলে উঠল,

“আমিও যাই?”

—“কোথায়?”

—“তোর সাথে… গোসলে?”

—“গ”র্দান নেব সোজা,অসভ্য লোক!”

—“শুধু গলা কেনো,আর কিছু চাই না বুঝি?”

আনায়া আর কিছুই বলল না। কঢ়া করে চোখ রাঙাতেই, কেনীথ ঠোঁট কামড়ে মুচকি হাসল।

___________

গোসল শেষে আনায়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছে। খুব একটা সময় নেই নি। প্রায় তাড়াহুড়ো করেই গোসল সেরে বেরিয়ে এসেছে। আর কেনীথও ইতিমধ্যে গোসলে করতে চলে গিয়েছে। ওদিকে আবার পাভেল এখনো হয়তো দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে।

আনায়া তাড়াহুড়ো করে আয়নার সামনে নিজেকে দেখে খানিকটা চমকে উঠল। গলার কাছে নিজের নজর পড়তেই চোখ তারা ছানাবড়া। আদোও তার গলা কি আস্ত রয়েছে? মনে হয় তো না। গলার প্রতিটি ভাজে, ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে, লাল লাল দাগ হয়ে রয়েছে। কিছু জায়গা অবশ্য কিছুটা কালচেও হয়ে গিয়েছে৷ অবশ্য সেগুলো হয়তো কামড়ে…। আনায়ার আর বেশি ভাবতে পারে না। মূহুর্তেই রাতের কথা চোখে ভেসে উঠতেই, কিঞ্চিৎ ঢোক গেলে।

মাঝরাত পেরিয়ে যতই সময় এগিয়ে চলছে, ততই যেন দুটো প্রাণ আরো উম্মাদ হয়ে যাচ্ছে।বাইরে অঝোরে বৃষ্টি, আকাশের গর্জন যেন তাদেরই ভেতরের তোলপাড়ের প্রতিধ্বনি। জানালার কাঁচে বিদ্যুতের চমক ধাক্কা দিচ্ছে, মাঝে মাঝে ঝলকে ঝলকে আলোকিত হচ্ছে অন্ধকার ঘর। কম্বলের ভেতর জড়ানো দুটো দেহ।না, শুধু দেহ নয়, যেন দুটো উন্মত্ত আত্মা।যারা সময়ের ধার ধারতেও তখন ভুলে গিয়েছে।একে অন্যের প্রতিটা স্পর্শে যেন সমস্ত সত্তা কেঁপে ওঠে।

নিশ্বাস দুটো এলোমেলো, উত্তপ্ত। একে অপরের খুব কাছাকাছি থাকার মধ্যে যে কত গভীর ভাষাহীন কথা লুকিয়ে থাকে, তা বুঝে নেওয়া যাচ্ছে শুধু অনুভবেই। তৃষ্ণার্ত প্রহরের ন্যায় একে অন্যকে তীব্র ভাবে চাইছে তারা। এদিকে সময়ও যেন থেমে গিয়েছে। ঘরের নিস্তব্ধতা আর ঝড়ের চিৎকার একসাথে মিশে এক অদ্ভুত আবহ তৈরি করছে।

কম্বলের তলায়, অন্ধকারে, আলো-আঁধারির খেলার মাঝখানে, দুটো প্রাণ যেন একে অপরের মধ্যে নিজেকে হারিয়ে দিচ্ছে—নিঃশব্দ, অদম্য, এবং অবিরত… ঘরের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।তাদের নিঃশ্বাসের শব্দ যেন ছাপিয়ে যাচ্ছে ঝড়ের শব্দকেও। শরীরের উষ্ণতা মিশে যাচ্ছে ঘামের ফোঁটায়, স্পর্শের ধারায়, এবং কখনো বা হালকা কাঁপুনিতে।

তবে শেষরাতে গিয়ে আনায়ার পাগলামি ছিল কেনীথেরও চিন্তাধারার বাহিরে৷ কেনীথের সবে মাত্র জ্বর ছাড়তে শুরু করেছে। যার দরূন সে নিজেই সম্পূর্ণ অস্থির হয়ে উঠেছে। অথচ ওদিকে আনায়া উন্মাদনায় তার নিজেরই পাগলপ্রায় অবস্থা।কেনীথ থেমে গিয়ে একপলক আনায়ার চোখের দিকে তাকায়।সেই চোখে এখন ঝড়ের থেকেও বেশি জড়ালো বুনো আগুন। যেন গভীর রাতে তার ভেতরে জেগে উঠেছে অন্য এক রূপ। আরো বেপ”রোয়া, আরো দাবিহীন, যাকে আর তার নিয়ন্ত্রণে রাখাও সম্ভব নয়।

আনায়া ঠোঁট থেকে ঘাড়, ঘাড় থেকে বুকে—তার প্রতি স্পর্শে একপ্রকার হিং”স্র মায়া। সে যেন নিজের সমস্ত আবেগ, কষ্ট, ভালোবাসা আর তৃষ্ণাকে একসাথে ঢেলে দিচ্ছে কেনীথের শরীরে।একইসাথে বেড়ে চলেছে তার এলোমেলো নিঃশ্বাসের শব্দ ।

“আমি তোমাকে চাই… পুরোপুরি… ঠিক এখনই…।” আনায়ার কণ্ঠস্বর ফিসফিস করে ওঠে। কিন্তু তাতে এমন এক দাবির জোর থাকে যা অস্বীকারের ক্ষমতা কোথাও রাখে না। কেনীথ অবাক, কিন্তু এক মুহূর্তেই সে নিজেকে ছেড়ে দেয় সেই তাণ্ড”বে।কেনীথও তখন এলোমেলো নিশ্বাসের সাথে বলে ওঠে,

“ডু ইউ নো, হাউ ব্যাডলি আই ওয়ান্ট টু ইউ, ব্লাড?”

কেনীথের শ্বাস এলোমেলো। একসাথে তার সব কথা সম্পূর্ণ হয়না। সে আবারও বলে,

“সো প্লিজ…ইউ ডোন্ট নিড টু স্পিক।ইওর বডি সেজ এভরিথিং আই নিড টু নো।”

এই বলেই তারা লিপ্ত হলো আরো এক গভীর চুম্বনে। দুজনের দম ফুরিয়ে জান যায় যায় উপক্রম। আনায়ার অবস্থা বেগতিক দেখে,কেনীথ তাকে কিছু সময়ের জন্য ছেড়ে দেয়। আনায়ার কপালে কপাল ঘেঁষে বলে,

“ইয়োর লিপস্ আর ড্রাইভিং মি ওয়াইল্ড। আই ওয়ান্ট টু ফিল দেম, অল ওভার মি—অ্যাগেইন্ড এন্ড অ্যাগেইন্ড।

কেনীথ আবারও উন্মাদ হয়। কিন্তু আনায়া আর কেনীথের সাথে পেরে ওঠে না। সবমিলিয়ে তার অবস্থা নাজেহাল। সে তখন কেনীথের থেকে দূরে সরতে চায়। কিন্তু কেনীথ তাতে বাঁধা দেয়। এই মূহুর্তে দূরে সরার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ কেউই যে আর হুঁশে নেই। কিন্তু কেনীথের উন্মাদনায় আনায়া কিছুটা ভীতু হয়ে কেঁপে ওঠে। ওমনি কেনীথ গম্ভীর স্বরে বলে,

“আই নো ইউ আর স্কেয়ারড্, বাট আই ক্যান সি ইন ইউর আইজ…ইউ ওয়ান্ট দিস ঠু, আনায়া।…লেট মি শো হাউ মাচ।”

এই বলামাত্রই কেনীথের পরবর্তী পদক্ষেপ আনায়াকে সম্পূর্ণ কাঁপিয়ে তোলে। আনায়া আবেশে নিজেকে আঁটকে রাখতে পারে। সে অস্ফুটস্বরে চিৎকার করে ওঠে। কিন্তু সে আওয়াজগুলো বাহিরে ঝড়ের তান্ডবের সাথে মিলিয়ে যায়। কিন্তু কেনীথ মোটেও থামে না।

—“আই ক্যান ফিল ইয়োর হার্টবিট এগেইনস্ট মাইন। ইউ আর টেরিফাইড, বাট ইট’স অনলি মেকিং মি ওয়ান্ট ইউ মোর। স্টে স্টিল,লেট মি টেক ইউ।”

কেনীথ যেন আরো উন্মাদ হয়ে ওঠে। যা আনায়ার সহ্য সীমার বাহিরে চলে যায়। তার অস্ফুট গোঙ্গানির আওয়াজ ক্রমশই তীব্র হয়। একইসময় কেনীথ আবারও বলে,

“ট্রাস্ট মি, বেইবি…আজ তোর ভেতর থেকে এমন সব, অনুভূতি জাগিয়ে তুলব। যা যে-কোনো শব্দের চেয়ে তীব্র হবে।”

আনায়া সম্পূর্ণ নিস্তেজ হয়ে গিয়েছে। অথচ কেনীথের উত্তেজনার কমতি নেই। কিন্তু আনায়া একদমই আর এসব সহ্য করতে পারছে না। প্রতিবার কেনীথের বিশেষ উদ্যেগে আনায়ার জান বেড়িয়ে আাসার উপক্রম। সে কোনোমতে নিজেকে সামলে কেনীথকে দু’হাতে সরানোর চেষ্টা করতেই, কেনীথ আনায়ার দুহাত শক্তভাবে বিছানার সাথে চেপে ধরে। অনেকটা নিরেট কন্ঠে বিধ্ব”স্ত সুরে বলতে লাগে,

“দ্য হার্ডার ইউ ফাইট ইট,দ্য ডিপার আই’ল টেক ইউ। দেয়ার’স্ নো টার্নিং ব্যাক, নট নাউ, নট এভার।

ইউ ওয়ার মেড ফর মি, আনায়া। আমার শুধু তোকেই চাই, শুধু তোকে। সো প্লিজ, আমাকে আমার কাজ করতে দে।”

এটা বলামাত্রই কেনীথের পরবর্তী উদ্যেগ যেন, আনায়াকে সম্পূর্ণ ভেতর থেকে চিঁড়ে ফেলে। যদিও বা কেনীথের পিঠে অসংখ্য নখের আঁচড় গেঁথে গিয়েছে। তবে এবার যেন আনায়া আর নিজের হুঁশে নেই। সে একহাতে কেনীথের পিঠ ও অন্যহাতে বাহু…এতোশক্ত ভাবে আঁকড়ে ধরে যে, আনায়া নখের দরূন কেনীথ গায়ের চামড়া ভেদ করে মাংস উপ্রে যাওয়ার উপক্রম হয়। এদিকে কেনীথের বাহুতে সরু লোহা গেঁথে, শুরুতে অনেকটাই ক্ষ”ত হয়ে ছিল। যা কেনীথও যেমন গুরুত্ব দেয়নি তেমনি আনায়ারও নজরে পড়েনি। আর শেষমেশ আনায়ার নখের আঁচড় সেই ক্ষ”ততে পরতেই, শুকিয়ে যাওয়া ক্ষ’ত অংশটুকু হতে ফিনকি দিয়ে র”ক্ত প্রবাহ শুরু হয়৷ কেনীথ ব্যাথায় কিছুটা চোখ কপাল কুঁচকে ফেললেও, তেমন একটা গুরুত্ব না। বরং সে আনায়ার ভারী বিধ্ব”স্ত নিঃশ্বাস আর অস্থিরতায় বেড়িয়ে আসা নানান অস্ফুট আওয়াজে কা”মু”ক স্বরে বলে,

“হাশ নাউ, ব্লাড…ফিল মি। ফিল মি, হোয়াট আ’ম ডুইং টু ইউ।”

ঘরজুড়ে শুধু এলোমেলো গুঞ্জন, নিঃশ্বাসের ধাক্কা, মাঝে মাঝে বিছানার কাঠের শব্দ।এবং আনায়া কেনীথের উন্মাদনার হাহাকার, যেটা থামে না…বরং প্রতিটি মুহূর্তে আরো তীব্র হয়ে ওঠে।

রাত গড়িয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আনায়া কিংবা কেনীথ কেউই থামার নাম নিচ্ছে না।যদিও বা কেনীথ থেমে যায়, তৎক্ষনাৎ আবার আনায়ার পাগলামি শুরু হয়। দুজনের চুল এলোমেলো, ঠোঁট লাল হয়ে গিয়েছে চুম্বনের ছাপে। তবে আনায়ার চোখে এক বিশেষ পাগলাপ্রায় উন্মাদনা—যেটা কেনীথ আগে কখনও দেখেনি।

আনায়া আর ভাবতে পারেনা। নিমিষেই মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে তার। এসব ভাবতে গিয়েই গলা শুকিয়ে চৌচির হয়ে গিয়েছে। কোনোমতে ঢোক গিলে, ঠোঁট ভিজিয়ে নিজেকে সামলায়।

পরনে তার এ্যাশ কালারের কুর্তি। তার সাথে সাদা ওড়না। লম্বা চুল বেয়ে টুপটুপ করে পানি ঝড়ছে। আনায়া তাড়াহুড়োয় চুলগুলো ঠিকঠাক শুকাতে পারেনি। ওদিকে গোসল করতে গিয়ে বেঁধেছিল বিপত্ত। সর্বস্থানে এতো পরিমাণ ব্যাথা দলা পেকে রয়েছে যে, এখন হাঁটাচলাতেই জান যায় যায় অবস্থা। গতরাতে যে শুধু কেনীথ পাগলামি করেছে, এমনটা নয়। শেষরাতে গিয়ে কেনীথের চেয়ে আনায়া আরো বেশি পাগলামিতে মেতে উঠেছিল। দুজনের এমন উম্মাদের ন্যায় কার্যকলাপে দুজনের অবস্থাই এখন বেহাল।

ওদিকে কেনীথের পিঠে পানি পড়তেই যেন জ্বলে জ্বলে উঠছে। পিঠে এতো পরিবার নখের আঁচড়ের দাগ কেটে রয়েছে যে, তা গননা করা প্রায় মুশকিল। তবুও কেনীথ শয়তানি মনে ব্যাপারটাকে উপভোগ করতে ব্যস্ত।

এদিকে আনায়া কোনোমতে গলায় ওড়নাটা কয়েকটা প্যাচ দিয়ে পড়ে নেয়। এবং একইসাথে তাড়াহুড়ো করে ওড়না টান দিতে গিয়ে সোজা গলায় ফাঁস লেগে যায়। সে নিমিষেই খানিকটা কেশে উঠল। নিজের উপর বিরক্ত হয়ে পুনোরায় ঠিকঠাক করতে লাগল। ঠিকই তখনই আবার তার নজর আঁটকে যায় আয়নায়। ভালোমতো নিজের ঠোঁটটা খেয়াল করতেই কেঁপে ওঠে। এই ঠোঁট নিয়ে জনসম্মুখে যাওয়া তার সম্ভব নয়৷ ঠোঁট আর ঠোঁট নেই। কামড়ের দাগ আর কেটে যাওয়ায় রক্ত জমাট বেধে, পুরো জায়গাটা পরিপূর্ণ হয়ে রয়েছে।

আনায়া দ্রুত ওড়নার প্যাচটা গলা থেকে খুলে ফেলল। এবং ওড়না দিয়ে মাথায় বড়সড় একটা ঘোমটা দিয়ে নেয়। নিজেকে কোনোমতে শেষবারের মতো একপলক দেখে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।

আনায়া দরজা খুলতেই দেখে, কেউ একজন, একটা ছোট ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। পরনে চিরচেনা কালো রঙের প্যান্ট আর ডার্ক ব্রাউন কালারের হুডি। আনায়া জানে এটা পাভেল। আর এ-ই কারনেই সে মুখ উঁচিয়ে দেখার ইচ্ছে পোষণ করল না। বরং সে কিছুটা ইতস্ততভাবে বলল,

“ভে…ভেতরে আসুন।”

এদিকে অবশ্য পাভেল যেন বুঝতে পারল না, আনায়া এমন বিহেভ করছে কেনো। কিছু কি হয়েছে? আনায়ার মাথায় এতো বড় ঘোমটার জন্য তার মুখটাও সে ঠিকঠাক দেখতে পারেনি।

পাভেল এই নিয়ে বেশি কিছু বলল না। আনায়ার হাতে ব্যাগটা ধরিয়ে দিয়ে বলতে লাগল,

“ব্রো,এগুলো নিয়ে…”

—“জ্বী।”

পাভেলের কথা শেষ হবার পূর্বেই আনায়া ব্যাগটা নিয়ে একপ্রকার ছুটে ভেতরে যেতে লাগল। এতে পাভেল কিছুটা অবাক হয়ে কপাল কুঁচকে ফেললেও পরবর্তীতে বিষয়টা যেন তার কাছে অনেকটাই বোধগম্য হয়। ওড়নার নিচ হতে বেড়িয়ে থাকা চুল থেকে পানি পড়তে দেখে, সে নিজের মতো করে অনেকটাই আন্দাজ করে নেয়।এবং অতি উল্লাসে, কিছুটা জোরেই বলে ওঠে,

“আরেহ্, সেরাহ্! সেরাহ্! ব্রো যে এতো ফাস্ট… ভাবতেও পারিনি।”

পাভেল তার হুঁশে না থাকলেও, আনায়ার কানে এ কথা যাওয়ামাত্রই সে লজ্জায় একদম কুঁকড়ে ওঠে। কোনমতে ব্যাগটা হাতে নিয়ে রুমে প্রবেশ করেই দরজা চাপিয়ে দেয়। জোরে জোরে কয়েকবার শ্বাস ফেলে, বিছানায় ব্যাগটা রেখে বাহিরে আসার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। এখন কোনোমতে ইনায়ার কাছে যাবে নয়তো সোজা রান্নাঘরে ঢুকে যাবে।

তবে তার পরিকল্পনা নিমিষেই ভেস্তে যায়। সে রুম থেকে বেড়িয়ে আসতে নিলে পেছন থেকে কেনীথ তার হাত টেনে ধরে।

গেসল শেষে এইমাত্রই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছতে ব্যস্ত ছিল সে। মাঝেমধ্যে কি কি সব ভেবে যেন মুচকি মুচকি হাসছিলও৷ তবে হুট করে আনায়াকে এতো তড়িঘড়ি করে রুমে ঢুকে আবার বেড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা তার বোধগম্য হয়না।আনায়া এতোই তাড়াহুড়োয় ছিল যে, সে রুমে থাকা কেনীথকেও দেখতে পায়নি।

হাতে টান পড়ায় আনায়া পেছন ফিরে তাকায়।তখনই কেনীথের কপাল কুঁচকে থাকা চেহেরাটা নজরে আসে। কেনীথ কিছুটা সন্দিহান স্বরে ওকে জিজ্ঞেস করে,

“কাহিনি কি?এভাবে ছোটাছুটি করছিস কেনো?”

আনায়া ইতস্ততভাবে বলে,

“ছোটাছুটি আবার..কখন করলাম।…হাত ছাড়ুন আমার। রান্না করতে হবে।”

আনায়ার বলতে দেরি, কিন্তু কেনীথের হেঁচকা টানে আনায়াকে নিজের বুকে আঁচড়ে ফেলতে দেরি নেই। কেনীথ আচমকা আনায়ার কোমড় পেঁচিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। আনায়ার একহাত গিয়ে ঢেকে, কেনীথের উন্মুক্ত ভেজা বুকের বাম পাশ বরাবর। আনায়া রাগ দেখাতে গিয়ে নিজেই থমকে যায়। ভীতু হয়ে কেনীথের উন্মুক্ত বুকের সাথেই মিশে থাকে৷ এদিকে কেনীথের চোখমুখে প্রচন্ড গাম্ভীর্যের ছাপ। সে তীক্ষ্ণ চোখে আনায়াকে দেখতে লাগল।

আনায়ার মাথা হতে ঘোমটাটা সড়ে, নিচে পড়ে গিয়েছে। তবে গলায় এভাবে ওড়নায়া পেঁচিয়ে রাখতে দেখে কেনীথের কপাল খানিকটা কুঁচকে যায়।

—“এভাবে কেনো ওড়ান…”

এই বলতে না বলতেই কেনীথ অকস্মাৎ আনায়ার গলা হতে ওড়নাটা হেঁচকা টানে নিচে নামিয়ে দেয়। ওমনি আনায়া চেঁচিয়ে ওঠে।—”আরেহ্ কি করছেন!”

কেনীথ আনায়াকে পেছন থেকে কিছুটা ঝাঁকি দিয়ে আরো নিজের কাছে টানে। গলায় এতো লাল দেখে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রয়েছে সে। আনায়ার দিকে তাকাতেই, আনায়া বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল,

“এভাবে কি তাকিয়ে দেখছেন? এসব আপনার জন্যই হয়েছে।”

কেনীথ কিছুই বলল না। আনায়ার দিক হতে চোখ সরিয়ে, গলার দিকে তাকিয়ে রইল। আলতোভাবে ভাবে একহাতে আঙ্গুল ছুঁইয়ে, আনায়ার দিকে শীতল চোখে তাকিয়ে, করুন স্বরে বলল,

“জ্বলছে?”

আনায়া এদিকে একদম নুইয়ে গিয়েছে। কেনীথের চোখজোড়ার ওমন চাহনির দিকে, বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা তার সম্ভব নয়। তবে সে চেয়েও নিজের চোখ ফেরাতে পারছে না। এরইমাঝে কেনীথ তার মুখ এগিয়ে আনতে লাগল। আনায়া আকস্মিক ঢোক গিলল। সে ভেবেই নিল, কেনীথ গলায় নিজের ঠোঁট ছোঁয়াবে। আর ঠিক এমনটাই হলো। কেনীথ আনায়ার ভাজে মুখ গুঁজে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতেই আনায়া কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠল। তবে পরক্ষণেই কেনীথ যা করল, তা আনায়া মোটেও আশা করেনি।

চুমু খেয়ে তৎক্ষনাৎ সে আনায়ার গলার ভাজে, লাল লাল র‍্যাশের মাঝেই, নিজের খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি দিয়ে সজোরে কয়েকবার ঘষে দেয়। নিমিষেই ব্যাথার জ্বালায় আনায়া সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যেন ছ্যাত করে উঠল।—”আহ্!”

আনায়ার চোখ-মুখ খিঁচে চোয়াল শক্ত হয়ে গিয়েছে।কেনীথ গলার ভাজ থেকে মুখ তুলে ফিক করে হেসে ফেললেও, আনায়া নিজের ব্যাথা আর সহ্য করতে পারল না। ত্বরিত নিজের হাত ছোটাছুটি করে, একবার কেনীথের চুল টেনে, পরক্ষণেই ওর বুকে সরোজ কয়েকটা কিল মে”রে আঘাত করে।

তবে কেনীথের এতেও হাসি থামল না। সে অদ্ভুত এক দুষ্ট শয়তানি হাসিতে মেতে উঠেছে। আনায়ার হাত ছোটাছুটিকেও সে থামাবার প্রয়োজন মনে করল না।উল্টো প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী স্বরে বলে উঠল,

“উফ! আ’ম যাস্ট প্রাউড অফ মাই সেলফ। আমার যে এতো ঠ্যালেন্ঠ রয়েছে, আমি তো জানতামই না। বউয়ের গলায় কত্ত সুন্দর ওয়ার্ল্ড ম্যাপ এঁকে ফেলেছি। কি শিল্প! কি সৌন্দর্য!, চমৎকার! অতুলনীয়! বিস্ময়কর এক ব্যাপার স্যাপার।”

কেনীথের কথাবার্তা আর ভাবভঙ্গিতে আনায়া চোখমুখ রাগ-বিরক্তিতে কুঁচকে যায়। কেনীথকে জোরে ধাক্কা দিয়ে কিছুটা সরে এলো।

—“হাসি পাচ্ছে? খুব মজা নিচ্ছেন তাই না? অসভ্য লোক! শপথ করে বলছি, আর একবারও আমার আশেপাশে ঘেঁষতে পারবেন না। কারণ আমি দেব না।”

কেনীথ আনায়ার এহেন রাগ মিশ্রিত কথাকে একটুও পাত্তা না দিয়ে, আনায়াকে পুনরায় নিজের কাছে টেনে নেয়। অতঃপর কিছুটা সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে,

“উঁহু! কিছুটা মিথ্যে বললেন আপনি।”

—“মানে?”

—“ভাববেন না, আমার কোনোকিছুই মনে নেই। শেষ রাতে কে কতটুকু পারফরম্যান্স দেখিয়েছে তার কিছুটা হলেও মনে রয়েছে আমার।”

আনায়া রাগে দাঁত খিঁচে বলে,

“কি বলতে চাইছেন আপনি?”

কেনীথ তীর্যক হেসে বলে,

“সাচ অ্যা গ্রেইট পারফরম্যান্স,বেইবি!”

—“রাখুন আপনার বেইবি, অসভ্য লোক!”

—“ঐ তোর সমস্যা কি রে?কখন থেকে শুধু আমাকেই অস’ভ্য অস”ভ্য করে যাচ্ছিস। তুই নিজে খুব সভ্য? তবে এই দেখ, কি হাল করেছিস আমার।”

এই বলেই কেনীথ আনায়াকে ছেড়ে দিয়ে, পেছন ঘুরে তাকায়৷ নিমিষেই আনায়া খানিকটা চুপসে যায়। কেনীথ ধবধবে ফর্সা পিঠের সর্বত্রে নখের আঁচড়ের লাল লাল দাগ স্পষ্ট।

—“দেখ কি হাল করেছিস আমার পিঠের! আবার আমাকেই অসভ্য বলিস।কি পরিমাণে জ্বলছে তোর কোনো আন্দাজ আছে?”

কেনীথ আনায়ার দিকে ফিরে তাকাতেই, আনায়া খানিকটা ঢোক গিলে ঠোঁট ভেজায়। অতঃপর নিজেকে সামলানোর প্রচেষ্টায় কঢ়া কন্ঠে বলে উঠল,

“তো শুধু আপনার একারই জ্বলছে নাকি? দেখুন এসে, আপনার চেয়ে আমার বেশি…”

—“হুম! হুম! দেখা না! না করেছে কে? আমারটা তো আমি দেখালাম। এখন তুই দেখা, আমি তোর কোথায় কি করেছি?”

কেনীথের কথার উদ্দেশ্যে আনায়া চোখমুখ কুঁচকে ফেলল। রাগে তার গা জ্বলছে। ওদিকে কেনীথ নির্বিকারে আবারও বলল,

“হাহ্! এখন তো আর দেখাতে পারবি না। একেই বলে চোরের মায়ের বড় গলা।”

—-“আআআআআহ! আপনাকে তো আমি…!”

—“বলো ব্লাড!কি করবা তুমি?”

আনায়া আর কেনীথের কথায় তেমন গুরুত্ব দেয় না।এখানে যতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে ততক্ষণই কেনীথ উল্টোপাল্টা কথা বলবে আর তারও মেজাজ খারা”প হবে।এরচেয়ে এখান থেকে সরে যাওয়াই ভালো।

আনায়া আর একটা কথা না বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে লাগল। ঠিক তৎক্ষনাৎ পেছন থেকে কেনীথ আবারও চেঁচিয়ে ওঠে,

“ওই! আমার জামাকাপড় তো দিয়ে যা! নাকি তুই চাইছিস, আমি এভাবেই সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়াই। যাতে সবাই জানুক, তুই এই অবলা অসুস্থ কেনীথকে একা পেয়ে, তার কি হালটাই না করেছিস। আহ্,কি দুক্ক আমার।”

আনায়া পেছনে ফিরে চোয়াল শক্ত করে, গরম চোখে, কেনীথের হাস্যজ্জ্বল চেহেরার দিকে তাকায়৷ নিমিষেই তার মেজাজটা আরো বিগড়ে যায়।নিজেকে কোনোমতো সামলে নিয়ে, সে বিছানার কাছে গিয়ে একটা প্যান্ট আর টিশার্ট এনে কেনীথ দিকে ছুঁড়ে মা”রে। কেনীথ তৎক্ষনাৎ তা ধরে নিয়ে মুচকি হাসে।—”থাংক্কু জান!”

—“আমার কি মনে ফূর্তি ধরেছে?”

—“শুধু মনে কেনো? মন, মস্তিষ্ক, অঙ্গ, প্রত্যঙ্গ—সর্বস্তরে আমার যৌবনের ফূর্তি কিলবিল করছে।”

—“অসহ্যকর।”

আনায়া দাঁত কিড়মিড়িয়ে এটুকু বলেই পেছনে ঘুরে রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে লাগে। তবে কেনীথ এবারও বাঁধা দেয়। পেছন থেকে হঠাৎ কেনীথ চেঁচিয়ে বলে উঠল,

“হেই ব্লাড! এই দেখ!”

—“কি দেখ…ব…”

আনায়া কপাল কুঁচকে পেছনে ফেরার মূহুর্তেই, আচমকা তার মুখে কিছু একটা উড়ে এসে পড়ে চারপাশ ঢেকে যায়। আনায়া তৎক্ষনাৎ জিনিসটা ছুঁতেই যা বোঝার বুঝে যায়। কোনমতে আবারও উল্টো ঘুরে চিল্লিয়ে বলে,

“আআআআআ,ছিইইইইইইইই…”

আনায়া আর একমুহূর্তও দাঁড়ায় না। একপ্রকার দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে লাগে। ওদিকে কেনীথ তখনও মশকরা করে বলতে থাকে,

“কিরে!দৌড়াছিস কেনো? একবার ফিরে তাকা আনায়া! যাস্ট একবার তাকা!”

আনায়া আর কেনীথের কথা শোনে কই। সে এতক্ষণে রুম থেকে বেড়িয়ে বহুদূর চলে গিয়েছে। অথচ সে যা ভাবছিল এমন কিছুই হয়নি। কেনীথ এতক্ষণে জামাকাপড় সবটাই পড়ে ফেলেছে।

চলবে________________