একঝাঁক জোনাকি পর্ব-৫+৬

0
161

#একঝাঁক_জোনাকি
#ইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ০৫ (বোনাস পর্ব)

দরজা নক করতেই তিথি এসে দরজা খুলে অনিমার দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কেটে বাবার পিছনে দাঁড়িয়ে গেলো।অনিমার বাবা সোফায় বসে চা খাচ্ছিলো।

অনিমা একবার সেদিকে তাকিয়ে নিজের রুমের দিকে যাবার জন্য পা বারাতেই পিছন থেকে অনিমার বাবা বলল,

– “সারাদিন কোথায় ছিলে?”

পিছন থেকে তিথির মা বলল,

– “কই আর থাকবে?নিহানের সাথেই ছিল!আমার মেয়েটার বিয়ে ভেংগে এখন অই ছেলের সাথেই ঘুরা হচ্ছে।কত্তবড় ফাজিল মেয়ে!”

-“আহ!তুমি চুপ থাকবে?আমি অনিমাকে জিজ্ঞেস করেছি। তোমাকে নয়।অনিমার উত্তর অনিমাই দিবে।তুমি কেন দিচ্ছো?ওর কি মুখ নেই?”

অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

“কি হলো বলছিস না কেন?তোর মা যা বলছে তা কি সত্যি?তিথির জন্য যে ছেলে দেখা হয়েছিল তার সাথে সারাদিন ছিলি?”

অনিমা মাথা নিচু করে বলল,

“আম্মু তো বলেই দিয়েছে।আমার বলার কি দরকার?”

অনিমার বাবা রাগে হাতে থাকা কাপটা স্বজোরে আছাড় মারলেন।কাপের হালকা ভাংগা অংশ ছিটকে অনিমার গালে গিয়ে লাগলো।চোখের একটু নিচে কেঁটে গেছে।রক্ত বের হচ্ছে।

“তোর এত বড় অধঃপতন হয়েছে?ছোটবোনের জন্য দেখা ছেলেকে হাত করে নিয়েছিস?লজ্জা নেই তোর?”

-“আমি হাত করে নিই নি।উনি নিজেই আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছেন!”

-অই ছেলে তোকে বিয়ের কথা বলল আর তুই রাজি হয়ে গেলি?কেন হলি?”

-“আমি রাজি হয়েছি তোমাকে কে বলেছে?”

-“তাহলে তোর হাতে এগুলা কি?”

দরজার সামনে থেকে নিহান এসে বলল,

-“আমি ওকে দিয়েছি অইগুলা।”

-“তুমি?”

অনিমা দরজার দিকে তাকাতেই দেখল নিহান দাঁড়িয়ে আছে।অনিমার গালের ক্ষতটা নিহানের চোখে পরল সবার আগে।তিথি বলল,

“উনিই আমাকে দেখতে এসেছিলেন।এখন আপুকে বিয়ে করতে চাইছে।আর আপুও নাচতে নাচতে রাজি হয়ে গেছে।”

নিহান হেসে বলল,

-“কেমন বাবা আপনি?আপনার আদৌও বাবা হবার কোন যোগ্যতা আছে?আমার তো মনে হয় না আছে বলে?অন্যের কথা শুনে নিজের আপন, রক্তের মেয়ের গায়ে হাত তুলতে আপনার একটুও বিবেকে বাধলো না?অনিমা রাজি হয়েছে কিনা সেটা না জেনেই কত্তগুলা কথা শুনিয়ে দিলেন মেয়েটাকে!তিথি আর ওর মা নাহয় ওর আপন, রক্তের না!কিন্তু আপনি?আপনি তো ওর বাবা।আপনি কি করে…..”

-“আমাকে জ্ঞান দিতে আসবে না একদম!আমি আমার মেয়ের সাথে কিরকম আচরন করব সেটা কি তোমার থেকে আমার শিখা লাগবে?”

-“আমি সে কথা বলিনি!আমি বলেছি কারোর কাছ থেকে কোন কিছু শোনার আগে বাচাই করে নেওয়া লাগে সেটা আদৌও সত্য কিনা!আপনি তা করেন নি।অনিমাকে আমি জোর করে নিয়ে গিয়েছি শপিং এ।সত্যি কথা বলতে শপিং এ নিয়ে যাওয়া আমার কোন উদ্দেশ্যই ছিলো না।কিন্তু অনিমা না খাওয়া ছিল।মেয়েটার শুকনো মুখ সহ্য করতে পারিনি।তাই শপিং এর নাম করে খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিলাম।যেটা করা উচিত ছিল আপনার।সেটা আমাকে করতে হয়েছে।একটা মেয়ে যদি নিজের বাসাতে সামান্য খাবারটুকু না খেতে পারে,তাকে দরজা বন্ধ করে আটকে রাখা হয়, বাজে কথা শুনানো হয় সেই মেয়েটার যে মানসিক ভাবে অসুস্ত হতে যে সময় লাগবে না তা কি আপনি জানেন?নাহ,আমি আমার হবু স্ত্রীকে এই পরিবেশে রাখতে পারব না।যেখানে ওকে পদে পদে অপমান করা হয় এরকম পরিবেশে ওর থাকা উচিতও না!আমি ওকে আমার সাথে নিয়ে যেতে চাই!আপনারা অনুমতি দিলেও আর না দিলেও।”

তিথির মা বলল,

-“এসব কি বলছ বাবা?তোমার সাথে ও থাকবে মানে?”

-“আমি আমার হবু স্ত্রীকে এরকম একটা পরিবেশে রাখতে পারিনা!মিস অনিমা, আপনি রেডি হয়ে আসুন।এক্ষুনি।”

অনিমার বাবা একটু এগিয়ে বলল,

-“তুমি আমার সামনে আমার মেয়েকে নিয়ে যাবে আর আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখব?সেটা তুমি ভাবলে কি করে?”

-“ভাবিনি তো!আমি উনাকে নিয়ে যাবো।দেখুন সারাজীবন তো নিজের মেয়ের প্রতি বাবা হিসেবে যে দায়িত্ব পালন করা লাগে সেই দায়িত্বটাকে আপনি অবহেলা করেছেন,নিজের মেয়েকে আশ্রিতার মতো করে রেখেছেন।এখন অন্তত অনিমার ভালো কথা ভেবে হলেও আশা করি আপনি বাধা দিবেন না আমাকে।এখানে থাকলে অনিমার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।সাথে ওর পেটে যে বাচ্চাটা আছে তারও ক্ষতি হয়ে যাবে।একজন বাবা হিসেবে আপনি নিশ্চয়ই তা চান না।আমি নিয়ে যাচ্ছি মিস অনিমাকে।”

বলেই অনিমার দিকে কয়েক পা এগিয়ে অনিমার হাত ধরে দরজার দিকে হাঁটা দিলো।

তিথি গিয়ে তার বাবাকে বলল,

-“আব্বু!এটা তুমি কি করলে?নিহানের সাথে আপুকে যেতে দিলে কেন?”

তিথির মা এগিয়ে এসে বলল,

-“আমার মেয়েটা একমাত্র শুধু নিহানকেই পছন্দ করেছিলো।তুমি এটা কি করলে?”

-“আমি এখন কোন কথা শুনতে চাচ্ছি না।অনিমার গর্ভে যে সন্তান আছে সেটা বলোনি কেন তুমি আমাকে?”

-“অনিমাই তো বলে নাই।না বললে জানব কিভাবে?”

-“ওকে ঘরে আটকে রেখেছিলে কেন?আর কেন কোন খাবার দাওনি?”

তিথির মা এবার তুতলাতে তুতলাতে বলল,

-“অনিমা আমার মেয়ের বিয়ে ভেংগেছে।আমার অনেক রাগ হয়েছিল।তাই রাগের মাথায়…..”

অনিমার বাবা রেগে বলল,

-“তাই রাগের মাথায় আমার মেয়েটাকে না খাইয়ে রেখেছো?”

-“আমাকে মাফ করে দাও।আমি বুঝতে পারি নাই।”

অনিমার বাবা একটা শ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করার চেষ্ঠা করলেন।রাগটাকে কমানোর জন্য সোফায় চুপ করে বসে রইলেন।
.
.
-“আপনি যে আমাকে এভাবে নিয়ে আসলেন। এখন কোথায় থাকব আমি?আমার শেষ থাকার ঠিকানাটাও আপনি শেষ করে দিলেন?”

নিহান কিছু না বলে হেঁটেই যাচ্ছে সামনের দিকে।

-“আপনি কি আমার কথা শুনছেন না?”

-“হ্যা শুনছি।কিন্তু উত্তর দেবার প্রয়োজন মনে করছিনা।এখন একটা কথাও বলবেন না।গাড়িতে বসুন।”

-“আপনার ইচ্ছায় আমি সব করব?আপনি যা বলবেন তা করতে আমি কেন রাজি হবো?”

নিহান দুই কদম এগিয়ে অনিমার দুই কাধে হাত রেখে বলল,

-“আপনি এখন রেগে আছেন।আগে শান্ত হোন।নিজেকে শান্ত করুন।”

অনিমাকে গাড়ির সিটে বসে দিল।নিজেও গাড়ির দরজা খুলে নিজের সিটে বসে পরল।পিছনের সিট থেকে ফাস্ট এইড বক্সের ঢাকনা খুলে কোলের উপর রাখল।একটা অয়েনমেন্ট বের করে অনিমার দিকে সোজা হয়ে বসে বলল,

-“আমার দিকে ফিরুন।”

অনিমা কোন উত্তর দিল না।এই লোকটা এমন কেন?বলা নাই কওয়া নাই হুট করে এসে হুট করে ঘরের বাইরে নিয়ে আসবে?আমার কাছ থেকে অনুমতিরও প্রয়োজন নেয় না?আমি রাজি আছি কিনা সেটাও জানতে চায় না!সবসময় নিজের যা মন চায় তাই করে!

-“আমার দিকে ফিরতে বললাম না?”

তাও অনিমার কোন উত্তর নেই।একটা শ্বাস ফেলে বলল,

-“আপনার রাগ করার যথেষ্ট কারন আছে।আপনার জায়গায় যে কেও থাকলেও রাগ করতো এটা স্বাভাবিক!কিন্তু আমি যা করেছি তা আপনার কথা ভেবে করেছি।আপনার অনাগত বাচ্চার কথা চিন্তা করেই কাজটা করেছি।অই বাড়িতে থাকলে বাচ্চাটা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতো না।একজন ডাক্তার হিসেবে বলছি।আপনি কি চান না আপনার বাচ্চা সুস্থ -স্বাভাবিক আর ৫ টা বাচ্চাদের মতো বেড়ে উঠুক?কোন ক্ষতি না হোক?চান তো?”

-“তা তো চাইই!কিন্তু এখন আমি কোথায় থাকব?আমার তো থাকার কোন জায়গা নেই।আমি তো কোন চাকরিও করিনা যে বেতনের টাকা দিয়ে নতুন আলাদা বাসা ভাড়া নিবো!”

-“আপনি কোন টেনশন করবেন না!যেহেতু আপনাকে আমি বাসা থেকে নিয়ে এসেছি সেহেতু আপনার খাওয়া-থাকার ব্যাবস্তা করা সম্পূর্ণ আমার দায়িত্ব।আর আমি দায়িত্ব থেকে এক ফোটাও পিছুপা হবো না!ভরসা রাখতে পারেন আমার উপর!এবার তো ফিরুন!”

অনিমা কিছু না বলে নিহানের দিকে ফিরল।নিহান একটু এগিয়ে এসে অয়েন্টমেন্টটা লাগাতে লাগাতে বলল,

“একটু জ্বলবে!সহ্য করে নিবেন।”

অয়েনমেন্ট লাগিয়ে একটা বেন্ডেজ লাগিয়ে সোজা হয়ে বসতে বসতে বলল,

-“এত অপমান সহ্য করেন কিভাবে?আমি হলে তো কবেই বেরিয়ে আসতাম।”

নিহানের কথা শুনে অনিমা হালকা হেসে বলল,

“দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে তেঁতো কথা শুনতেও মিষ্টি লাগে!আমার ক্ষেত্রেও সেইম হয়েছে।অপমান শুনতে শুনতে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।এখন আর গায়ে লাগে না!মার ভাষ্যমতে গন্ডারের চামড়া কিনা!”

অনিমার কথা শুনে নিহান এক পলক অনিমার দিকে তাকালো।পরক্ষনেই নিজেকে সামলে মুখ ফিরিয়ে নিলো।অই চেহারায় তাকানোর সাহস নিহানের নেই।গলা ঝেড়ে বলল,

“সবসময় অপমান সহ্য করতে হয় না!প্রতিবাদ করতে হয়।যে দোষ আপনি করেন নি তার জন্য কথা শুনবেন কেন?”

নিহানের কথায় অনিমা কোন উত্তর দিলো না।চুপ করে কাঁচের জানালার বাইরেই দৃশ্য দেখছে।দৃশ্য দেখছে বললে ভুল হবে।ভাবছে সে।আচ্ছা তার জীবনটা এমন কেম হলো?অন্য স্বাভাবিক মেয়েদের মতো হলেও তো পারতো?নিজের ঘরে নাহয় সুখ না ই পেলো। অন্তত সংসার জীবনে তো সুখ জুটলেও পারতো!তাও পেলো না!ও কি সুখ পাবার এতই অযোগ্য?নাকি সুখ শব্দের জিনিসটা তার কপালে সয় না?কি জানি!কোন একটা কারণ হবে হয়তো!

#চলবে…..

#একঝাঁক_জোনাকি
#ইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ০৬

গাড়ি রাস্তার পাশে পার্ক করে নিহান অনিমাকে বলল,

“চলুন!আপনার জন্য বাসা খুঁজে বের করি।”

নিহানের কথা শুনে অনিমা অবাক হয়ে বলল,

“এতরাতে?বাসা খুঁজে পাবেন আপনি?”

“চেষ্টা করলে অবশ্যই পাবো!চেষ্টা করে তো দেখি পাওয়া যায় কিনা!”

নিহানের কথা শুনে অনিমা গাড়ি থেকে বের হলো বাসার খুুঁজার উদ্দেশ্যে।কিছু রাস্তা হাঁটার পর অনিমা বলল,

“এখনো তো কোন বাসাতে টুলেট দেখতে পাচ্ছি না।”

“বাসা তো পাওয়া যায় মাসের শেষ দিকে।এভাবে মাসের মাঝখানে বাসা পাওয়াটা অনেক টাফ হয়ে যাবে।”

বলতে বলতেই সামনে একটা বিল্ডিংয়ে টুলেট দেখতে পেয়ে অনিমাকে হাত দিয়ে দেখিয়ে বলল,

“অইযে দেখুন!বলতে না বলতেই বাসা পেয়ে গেছি।চলুন গিয়ে দেখি।”

বাসার গেটের সামনে লাগানো টুলেট থেকে ফোন নাম্বারটা মোবাইলে ডায়াল করার পর কিছুক্ষন রিং হতেই এক ভদ্র মহিলা ফোন ধরলেন।নিহান সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলো টুলেটে যে বাসা ভাড়ার কথা বলা হয়েছে তা এখনো খালি আছে কিনা!ভদ্র মহিলা হ্যা বলে নিহানকে উপরে আসতে বললেন।রুম দেখিয়ে কথা-বার্তা বলে ফাইনাল করবেন।নিহান পকেটে ফোন রেখে অনিমাকে বলল,

“চলুন!বাড়ির মালিকের সাথে দেখা করে রুমটা দেখে আসি।”

“কিন্তু টুলেটে তো বলা আছে চার রুম।চার রুম দিয়ে আমি কি করব?আমার এক রুম হলেই হবে।”

“আগে দেখে আসি।আর এখন এমনিতেও বাসা খুঁজে পাবেন না।এটা অনেক ভাগ্য করে পেয়েছি।”

সবদিক থেকে বিবেচনা করে অনিমা রাজি হলো।ভদ্রমহিলার কথা অনুযায়ী ৩ তলায় গিয়ে বাসায় নক করতেই দরজা খুলে ভিতরে আসতে বললেন।নিহান আর অনিমা ভিতরে ঢুকতে সোফায় বসতে বলে নিজেও সামনের একটা সিংগেল সোফায় বসে দুইজনের দিকে ভালো করে তাকিয়ে বলল,

“তা তোমরা তো মনে হয় হাজবেন্ড ওয়াইফ?”

মহিলার কথা শুনে অনিমা তড়িৎগতিতে নিহানের দিকে তাকালো।ভদ্রমহিলা যে এ কথা বলবেন তা নিহানের ভাবনায় আসে নাই। অনিমা মানা করতেই যাবে নিহান অনিমার হাতে হাত রেখে বাধা দিয়ে বলল,

“জ্বি আমরা ম্যারিড!”

“তোমরাই কি শুধু থাকবে নাকি তোমাদের সাথে আরও কেউ….”

“নাহ নাহ শুধু আমরাই থাকবো।”

“আচ্ছা!তোমরা ম্যারিড শুনে খুশি হলাম।আসলে ম্যারিড কাপল ছাড়া আমি ভাড়া দেই না।বুঝোই তো?”

“জ্বি। ”

“তাহলে চলো তোমাদের বাসাটা দেখিয়ে দিয়ে আসি।”

“জ্বি।”

“তোমাদেরকে আমার পছন্দ হয়েছে।এখন বাসা তোমাদের পছন্দ হলেই হয়।”

বলতে বলতেই চারতলায় বাসার সামনে এসে পরলেন।চাবি দিয়ে তালা খুলে ভিতরে গিয়ে পুরো রুম দেখিয়ে বললেন,

“পছন্দ হয়েছে তোমাদের?”

” বাসা ভাড়াটা যদি বলতেন….”

“বাসাভাড়ার ব্যাপারে চিন্তা করো না তো!পছন্দ হয়েছে কিনা তাই বলো। ”

“জ্বি।পছন্দ হয়েছে।”

“তাহলে এখন বাসাভাড়ার কথায় আসি।দেখো তোমাদের তো বললামই তোমাদের আমার খুবই পছন্দ হয়েছে।অনেক ভদ্র তোমরা! দেখেই বুঝা যাচ্ছে।তোমাদের জন্য বাসা ভাড়া ১৮০০০ টাকা।সাথে গ্যাস,কারেন্ট বিল আলাদা।”

বাসা ভাড়ার দাম শুনে অনিমা চমকে বলল,

“ভাড়া তো অনেক।একটু কমানো যায় না?”

বাড়িওয়ালা মুখে থাকা পান চিবুতে চিবুতে বললেন,

“তাহলে ১৬০০০ টাকাই দিও।আর কমাতে পারব না বাপু!”

নিহান হেসে বলল,

“থ্যাংক ইউ।আমি বাসাটা ভাড়া নিতে চাচ্ছি!এডবান্স কত দিতে হবে?”
.
.
“আপনি ১৬০০০ টাকায় বাসাটা ভাড়া নিলেন কেন?এত টাকায় আমি…. ”

বাড়িওয়ালার সাথে কথা বলে অনিমাকে ঘরে বসিয়ে বাইরে গিয়েছিল ফ্যান,চাদর,হাড়ি-পাতিল আরও প্রয়োজনীয় বাজার করতে ।খাটও কিনার ইচ্ছা ছিল।তবে সাথে সাথে তো আর খাট পাওয়া যাবে না।অর্ডার দিয়ে বানিয়ে নিতে হবে।কেবল তোশক,আর চাদরই কিনেছে।সব কিছু কিনে বাসায় ফিরে নিহান কেবল ফ্লোরে বসেছিলো।বাড়িওয়ালাকে বলে দিয়েছে আজকেই উঠতে চায় সে।বাড়িওয়ালাও রাজি হয়েছে যেহেতু ক্যাশে এডভান্স পেয়ে গিয়েছে।অনিমার কথা শুনে নিহান বলল,

“আর কি করার ছিল?কোথায় থাকতেন আপনি?
(আর সবচেয়ে বড় কথা আমারও উচিত হয় নি হুট করে কিছু না ভেবে নিয়ে আসাটা।কিন্তু অই কথাগুলা শুনে আমি নিজেকে আটকাতেও পারিনি।)

লাস্টের কথাটুকু মনে মনেই বলল।

” আপনি যে বললেন আমরা ম্যারিড!আসলে তো আমরা তা না!মিথ্যা বললেন কেন?”

“আমার অই মহিলাকে প্রথম দেখেই মনে হয়েছিল উনি আমাদের সন্দেহ করছেন।কিছুক্ষন পর পর কথা বলার মাঝে সন্দেহের চোখে তাকাচ্ছিলেন।আর কোন বাড়িওয়ারাই চাইবে না তার বাসায় শুধু একজন মেয়ে থাকুক।অনেক সময় অনেক দুর্ঘটনা হয় না?তাই বলতে বাধ্য হয়েছি।দেখলেনই তো এই বাসাটাই খুঁজতে কত কষ্ট করতে হয়েছে আমাদের।এই বাসা বাদ দিয়ে যদি আরেকটা খুঁজতে যেতাম তাহলে যে বাসা পেতাম সেটারও তো কোন গ্যারান্টি নেই।”

“কিন্তু আপনি এখানে থাকবেন নাকি?বাড়িওয়ালা যদি দেখে আপনি নেই তাহলে তো বুঝে ফেলবে””

“সমস্যা নেই।বলে দিব অফিসের কাজে বাইরে গিয়েছি।উনি তো আর জানেন না আমি ডাক্তার। আর জানলেও বলে দিব নাইট ডিউটির কাজ করি আমি।ব্যাস!এটা কোন সমস্যা না।বাই দা ওয়ে,অনেকক্ষন তো হয়ে গেল!ক্ষিধে পায়নি আপনার?”

“নাহ!”

“মিথ্যা বলছেন কেন?খেয়েছেন সেই দুপুরের দিকে।এখন রাত ১০ টা বাজে।নিশ্চয়ই ক্ষিধে পেয়েছে! ”

বলতে বলতেই পাশে থাকা ব্যাগ থেকে একটা খাবারের প্যাকেট বের করে অনিমার হাতে দিয়ে বলল খেয়ে নিতে। যেহেতু অনেক রাত হয়ে গিয়েছে তাই বাইরে থেকে খাবার আনাটাকেই বেস্ট মনে করেছে নিহান।এত রাতে গিয়ে আবার রান্নার ঝামেলা না করাই ভালো। অনিমা সামনে খাবার নিয়ে বসে আছে প্রায় ১০ মিনিট হলো।এখনো একটা দানাও মুখে তুলেনি সে।আসলে ভাবছে খাবারটা খাওয়া ঠিক হবে কিনা!হুট করেই তো একটা মানুষকে আর বিশ্বাস করা যায় না।যদি কিছু মিশিয়ে থাকে খাবারে?
অনেকক্ষন অনিমাকে বসে থাকতে দেখে নিহান অবাক হলো।ভ্রু কুচকে বলল,

“খাচ্ছেন না কেন?কোন সমস্যা? ”

অনিমা আমতা আমতা করে বলল,

“আমি আপনাকে ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারছি না।যদি…..”

“খাবারে কোন ক্ষতিকারক জিনিস মিশাই তাই তো?”

“আমি কথাটা অইভাবে বলতে চাইনি।”

নিহান আর কিছু না বলে অনিমার সামনে থেকে খাবারটা নিয়ে এক লোকমা মুখে নিয়ে খেয়ে প্লেটটা অনিমার কাছে আবার ফেরত দিয়ে বলল,

“এখন খেতে কোন অসুবিধা আছে?”

অনিমা মাথা নাড়ালো।মনে মনে শান্ত হলো।

“আমি তাহলে যাচ্ছি।দরজা ভালো লক করবেন!আর এইযে মোবাইলটা রাখেন।আমার নাম্বার সেইভ করা আছে।কোন অসুবিধা হলে কল দিবেন।মনে থাকবে?”

“কিন্তু মোবাইল….”

“দরকারেই দিচ্ছি এটা।কোন অসুবিধা হলে আমি জানব কি করে?যাইহোক আসছি।”

বলে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।

“এত রাতে কোথায় যাচ্ছ তুমি?”

কয়েক সিড়ি পেরিয়েছে নিহান।কথাটা শুনে পিছনে তাকিয়ে দেখল বাড়িওয়ালা দাঁড়িয়ে আছে।

“আপনি এত রাতে…. ”

“সিসি ক্যামেরায় দেখলাম বাইরে যাচ্ছো।কিসের কারনে?”

“আব ইয়ে মানে…..বাসায় লবন নেই।সেটা কিনতে যাচ্ছি।”

“সামান্য লবনের জন্য বাইরে যাচ্ছো?আমার সাথে আসো!”

নিহান বাড়িওয়ালার পিছু পিছু গেল।কিছুক্ষনের মধ্যেই তিনি একটা ছোট কাঁচের বাটিতে লবন এনে নিহানের হাতে দিয়ে বলল,

“বুঝলে! রাস্তাটা তেমন ভালো না।ছিনতাইকারীর দল বসে থাকে।তাই রাতের বেলা না যাবার চেষ্টা করবা।আর কোন প্রয়োজন হলে আমাকে বলবা।আমি চেষ্টা করব। ঠিক আছে?”

“আচ্ছা।ধন্যবাদ। ”

.
.
অনিমা তখনও খাচ্ছিলো।হঠাত দরজা খুলার আওয়াজ শুনে মুখভর্তি খাবার নিয়ে সামনে তাকাতেই দেখল নিহান মুখ কালো করে রুমে ঢুকেছে।মুখের খাবারটুকু শেষ করে বলল,

“ফিরে আসলেন যে?কোন কিছু ফেলে দিয়ে চলে গিয়েছিলেন?”

“নাহ!”

“তাহলে?”

নিহান পুরো ঘটনা খুলে বলতেই অনিমা অবাক হয়ে বলল,

“তাহলে এখন?এখন কি করবেন?”

“এক কাজ করা যায়।আপনি এই রুমেই থাকুন।আমি পাশের রুমটাতে থাকছি।”

“কিন্তু পাশের রুমতো পুরাই খালি?খালি ফ্লোরে ঘুমাবেন কিভাবে?”

“আমার অভ্যাস আছে।আমি গেলাম ঘুমাতে।আপনিও খাবার শেষ করে ঘুমিয়ে পরুন!”

চলবে…..