একঝাঁক জোনাকি পর্ব-০৭

0
156

#একঝাঁক_জোনাকি
#ইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ০৭

“ফিরে আসলেন যে?কোন কিছু ফেলে দিয়ে চলে গিয়েছিলেন?”

“নাহ!”

“তাহলে?”

নিহান পুরো ঘটনা খুলে বলতেই অনিমা অবাক হয়ে বলল,

“তাহলে এখন?এখন কি করবেন?”

“এক কাজ করা যায়।আপনি এই রুমেই থাকুন।আমি পাশের রুমটাতে থাকছি।”

“কিন্তু পাশের রুমতো পুরাই খালি?খালি ফ্লোরে ঘুমাবেন কিভাবে?”

“আমার অভ্যাস আছে।আমি গেলাম ঘুমাতে।আপনিও খাবার শেষ করে ঘুমিয়ে পরুন!”

নিহান পাশের রুমে ঢুকেই ফ্লোরে বসে পরল। বসতে না বসতেই পকেটে থাকা মোবাইলটা তীব্র শব্দে বেজে উঠল।এত রাতে আবার কে ফোন করল?ভেবে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করতেই ফোনের স্কিনে মা নামটা ভেসে উঠল। ফোনটা রিসিভ করে কানের পাশে ধরতেই চিন্তিত কন্ঠে বলে উঠলেন,

“কিরে বাসায় আসলিনা যে?এত রাত হয়ে গেছে?কই তুই?”

নিহান ঠিক গুছিয়ে মিথ্যা কথা বলতে পারে না।যতবারই বলতে গেছে ততবারই মার কাছে ধরা খেয়েছে।এমন একটা মিথ্যা বলতে হবে যাতে করে মা না বুঝে।নিজেকে সামলিয়ে জিহবা দিয়ে ঠোটটাকে ভিজিয়ে বলল,

“একটু আগে রওনা হচ্ছিলাম বাসায় যাবার জন্য কিন্তু একজন সিরিয়াস পেসেন্ট এসে গিয়েছে।এখন উনার অপারেশনটা আমাকে করতে হবে।রেডি হচ্ছে সবকিছু।আর কিছুক্ষনের মধ্যেই অপারেশন শুরু হবে।কালকে একেবারে রাতে আসব সব কাজ শেষ করে।”

“ফোন করে জানাতে হয় না?কত টেনিশনে ছিলাম জানিস?”

“সরি আম্মু!মনে ছিল না।”

“যাইহোক খেয়েছিস কিছু?”

“হুম।কিছুক্ষন আগে খাবার দিয়ে গেল।খেয়ে নিয়েছি।এখন রাখি।অপারেশনের টাইম হয়ে গিয়েছে।পরে দেরি হয়ে যাবে।”

“আচ্ছা।”

“হুম!সাবধানে থাকিও।আর মেডিসিন নিয়েছো?”

“হুম।”

“আচ্ছা।রাখি তাহলে!আল্লাহ হাফেজ।”

ফোনটা কেটে একটা শ্বাস ফেলল।যাক আম্মু কিছু বুঝে নাই।বুঝলে যে কি হতো আল্লাহই জানে!পরক্ষনেই মোবাইলটা পাশে রেখে হাটু ভাঁজ করে বসল।

“মিস অনিমা!আপনি কি জানেন আমি আপনার জন্য মিথ্যা বলেছি আম্মুর কাছে।যে ছেলে বড় হবার পর একবারও মিথ্যা বলেনি সে ছেলে তার মার কাছে মিথ্যা বলেছে?সবচেয়ে বড় কথা ধরাও পরেনি!এত্ত বড় অসাধ্য কাজটা সে সাধন করেছে ভাবতে পারছেন?শুধুমাত্র আপনার জন্য! আপনি কবে আমায় বুঝবেন?কবে বুঝতে পারবেন আমি কিসের জন্য আপনার পাশে আছি?কিসের জন্য আপনাকে নিয়ে সারা দুনিয়ার সাথে লড়ছি?ইভেন নিজের মা-বাবার সাথেও!কবে একটু বুঝদার হবেন আপনি অনিমা?”

ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।অনিমাকে তো খুব করে বলে দিলো ফ্লোরে ঘুমাবার অভ্যাস তার আছে!কিন্তু এখন সে কিভাবে ঘুমাবে?খালি ফ্লোরে কি ঘুমানো যায়?ও কোনদিন ঘুমায়নি।তবুও একটু চেষ্টা করল।দেখা যাক!ঘুম আসলেও আসতে পারে।ভেবে পাঁচ দশ মিনিট শুয়ে থাকার পরও ঘুম চোখে ধরা দিলোনা।বিরক্ত হয়ে শুয়া থেকে উঠে বসে পরল।
.
.

সকালে অনিমার ঘুম ভাংগলো চোখে মুখে সূর্যের আলো পরায়। মোবাইলে টাইম চেক করতেই দেখল ৭ টার কাছাকাছি বেজে গেছে।ভোরে ফজরের নামাজ পড়ে একটু শুয়েছিল।কখন ৭ টা বেজে যাবে টেরই পায়নি।অনিমা শুয়া থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে।হাত মুখ ধুয়ে চুলটাকে হাত দিয়ে কোনমতে খোপা করল।এখনো কিছুই তো রান্না হয়নি!অথচ বাবার বাসায় ফজরের নামাজ পড়েই রান্নাবান্নার কাজ সারতে হতো!কি করে যে দেরি হয়ে গেল।উনি কি ভাববে?নিশ্চয়ই মনে করবে আমি ইচ্ছা করে এতক্ষন ঘুমিয়েছি।দরজা ঠেলে বের হয়ে কিছুদুর এগিয়ে কিচেন রুমে যেতেই দেখলো নিহান কি যেন করছে।অনিমা কয়েক পা এগুতেই নিহান প্লেটে খাবার বারতে বারতে বলল,

“উঠে পরেছেন?”

“আপনি আমায় ডাক দেননি কেন?তাহলে তো আমিই সবকিছু বানাতাম।”

“ডাক দিতে চেয়েছিলাম।বাট পরে মনে হলো কি দরকার?যেহেতু আমি রান্না করতে পারি।তাই আর ডাক দেইনি।”

নিহান কিচেন রুম থেকে একটা প্লেত একটু এগিয়ে এসে অনিমার হাতে দিয়ে বলল,

“খেয়ে নিন।”

বলে নিজের প্লেটটা নিয়ে ফ্লোরে বসে পরল।কিছুক্ষন খাওয়ার পর সামনে তাকাতেই দেখল অনিমা এখনো হাতে প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কি যেন ভাবছে সে ফ্লোরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে।নিহান যে ওর দিকে তাকিয়েছে সেটা ও টেরই পায়নি।নিহাম শান্ত স্বরে বলল,

“মিস অনিমা!আপনি কি এখনো আমার উপর বিশ্বাস করতে পারছেন না?”

নিহানের কথা শুনে চমকে নিহানের দিকে তাকাতেই দেখল নিহান তাকিয়ে আছে।

“না না।এমন কোনকিছুই নয়।”

“তাহলে কি এত ভাবছেন?আর খাবার খাচ্ছেন না কেন?কোন সমস্যা? ”

“নাহ!এইতো খাচ্ছি।”

বলে বসে খাওয়া শুরু করল।প্লেটের রুটি ছিড়তে গিয়ে দেখল রুটির আকার মানচিত্রের মতো হয়েছে।অনিমা হালকা হাসলো রুটির অবস্তা দেখে।দেখেই বুঝা যাচ্ছে লোকটা অনেক চেষ্টা করেছে গোল করার। কিন্তু সে গোল করায় ব্যর্থ হয়ে যেভাবে হয়েছে সেভাবেই টেলে নিয়েছে।নিহান অনিমার দিকেই তাকিয়ে ছিলো।খাবার খেয়ে অনিমার মুখের রিয়েকশান দেখার জন্য। পর মুহুর্তে রুটির দিকে তাকিয়ে হাসতে দেখে নিজেও হেসে ফেলল।টানা ৭ বার বেলেছে সে রুটিটাকে। কিন্তু প্রত্যেকবারই বেলার সময় একেক সেইপ হয়। গোল হয় না।তবুও হাত দিয়ে যত সম্ভব পেরেছে গোল করেছে।

“আমার বানানো রুটি দেখে যদি আপনার মুখে হাসি ফুটে তাহলে আপনার জন্য আমি এভাবে হাজারো বাজে আকৃতির রুটি প্রতিদিন বানাতে রাজি।”

নিজের চিন্তায় নিজেরই হাসি পেলো নিহানের।কি এক বাজে চিন্তা!খাওয়া দাওয়া শেষ করে প্লেট কিচেনে রেখে আবার ফিরে এসে বলল,

“মিস অনিমা!দুপুরের খাবার কিচেনে রাখা আছে। ক্ষিধে পেলে খেয়ে নিবেন।আর আধোয়া প্লেটগুলা ভুলেও ধুতে যাবেন না।আমি এসে পরিষ্কার করব অইগুলোকে আর কোন প্রয়োজন হলে আমাকে কল করবেন।আপনার মোবাইলে সেইভ করা আছে আমার নাম্বার।খাবার খারাপ হলেও কষ্ট করে খেয়ে নিবেন।এর আগে রান্না করিনি আমি। তাই জানিও না খাবার ভালো হয়েছে নাকি খারাপ হয়েছে।তবে খাওয়ার উপযুক্ত যে হয়েছে সেটা আমি বলতে পারি।আস্তে আস্তে রান্না করতে করতে ঠিক হয়ে যাবে।সাবধানে থাকবেন।দরজা ভালো করে লক করবেন ঠিক আছে?”

লোকটা যে এতো কথা বলতে পারে তা অনিমা ভাবেনি।সবসময় যতবারই দেখা হয়েছে ততবারই দু একটা ছাড়া তেমন কথা বলেনি।অনিমা মাথা নাড়লো।

“আসছি তাহলে। ”

বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।নিহানের যাবার দিকে তাকিয়ে দরজা বন্ধ করে ফ্লোরে বসে পরল।ও একা ১৬০০০ টাকা ভাড়া বাসায় থাকছে।এভাবে অন্যের উপর নির্ভর করে কতদিন চলবে?নাহ কিছু একটা করতে হবে।এভাবে অন্যের উপর বসে পায়ের উপর পা তুলে তো আর খাওয়া যায়না!কিন্তু এখন সে করবেটা কি?এমন তো না যে ওর চাকরি আছে।কে ওকে চাকরি দিবে এমন একটা সময়?আগে যে অফিসে কাজ করতো সেই অফিসে যাবে কি?কিন্তু সে তো নিজেই সোহানের কথায় চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছিল।এখন গেলেই কি ওরা ওকে মেনে নিবে?এভাবেও তো সারাদিন বসে থাকা যায় না!
.
.
সোহান অনিমাদের বাড়ির সোফায় বসে আছে।অনিমার মা এক গ্লাস শরবত এনে টেবিলের উপর রাখল।এমনেতেই যা গরম পরেছে ঠান্ডা শরবত দেখে সে নিজেকে সামলাতে পারলো না।এক ঢোকে পুরো গ্লাস খালি করে টেবিলের উপর খালি গ্লাসটা রেখে বলল,

“আমাকে ডেকেছিলেন কেন?আমি যা বলার অনিমাকে বলে দিয়েছি।সে কি আপনাদের বলেনি কিছু?”

“হ্যা বলেছে।”

“তাহলে আমার এত মূল্যবান টাইম নষ্ট করার মানে কি?আপনি জানেন আমি আজাইরা বসে থাকি না।কত কাজ থাকে আমার।আমি সেই কাজ ফেলে এখানে এসেছি।”

“শান্ত হও বাবা!এত অল্পতেই রেগে গেলে হয় নাকি।শুনো তোমাকে যে কথা বলতে ডেকেছি সেটা তোমার এবং আমার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ”

“কিসের জন্য ডেকেছেন সেটা যদি বলতেন….”

চলবে…..