#একঝাঁক_জোনাকি
#ইশরাত_জাহান_ অধরা
#পর্বঃ১১
নিহান গাড়ি থেকে বেরিয়েই বাসে উঠে পরলো।বাসে চোখ বুলাতেই অনিমাকে নজরে পরল।আর দেরি না করে অনিমার পাশে গিয়ে বসে পরল।অনিমাকে ডাকতে গিয়েও ডাক দিলো না।ঘুমাচ্ছে মেয়েটা!ঘুমাকনা!কি দরকার ঘুম ভাংগানোর?ভেবেই আর ডাক দিলোনা।একটু ভালো করে তাকাতেই দেখলো অনিমা দরজায় মাথা ঠেকিয়ে ঘুমাচ্ছে।ফলস্বরুপ বাসের ঝাকানিতে অনিমার মাথাটাও কাচের জানলায় ঠেকছে।ভ্রু কুচকে আসছে বারবার।নিহান আর উপায় না পেয়ে ধীরে ধীরে সযত্নে অনিমার মাথাটা হাত দিয়ে টেনে নিজের কাধে রাখলো।অনিমাও ঘুমের ঘোরে আরও ঝাপটে ধরল নিহানকে। নিহানের হার্ট দ্রুত বিট করা শুরু করেছে।অনিমার গরম নিঃশ্বাস নিহানের বুকে আছড়ে পরছে।নিহান খালি গলায় শুকনো ঢোক গিলল।এই প্রথম অনিমা নিহানের এত কাছে।অনিমার নিঃশ্বাসের শব্দ স্পষ্ট শুনা যাচ্ছে।হঠাত বাসের কনডাক্টার ভাড়া চাইতেই নিহান ইশারায় চুপ থাকতে বলে ফিসফিসিয়ে বলল,
“ভাড়া কত?”
কনডাক্টারও নিহানেত মতোই মাথা নিচু করে ফিসফিসিয়ে বলল,
“ত্রিশ টাকা।”
“আমি যাবার সময় দিয়ে গেলে কি কোন সমস্যা হবে?”
“আচ্ছা।পরেই দিয়েন ভাড়া।”
কনডাক্টার চলে যেতেই নিহান আবারও অনিমার দিকে তাকালো।বিড়ালের ছানার মতো গুটিশুটি হয়ে ঘুমিয়ে আছে।অনিমাকে নিজের কাধে দেখে নিহানের মুখ হাসি ফুটে উঠলো।বিশ্বজয়ের হাসি!মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি জিনিসটা পেয়েছে সে।কিন্তু হাসি বেশিক্ষন টিকলো না।গাড়ির ব্রেকে অনিমার ঘুম ভেংগে গেলো।ভালো করে চোখ মেলে আশেপাশে তাকাতেই নিহানকে চোখে পরল।ভ্রু কুচকে বলল,
“আপনি এখানে কিভাবে?”
“আব… ইয়ে মানে…গাড়িটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।তাই আর উপায় না পেয়ে বাসেই উঠেছিলাম।আর বাসে উঠতেই আপনাকে দেখলাম।”
“ডাক দেননি কেন আমাকে?”
“ঘুমাচ্ছিলেন তাই আর ডাক দেইনি।”
কথা বলতে বলতেই গন্তব্যস্তলে পৌছে গেল।বাস থেকে নেমে হাঁটতে হাঁটতে অনিমা বলল,
“জিজ্ঞেস করবেন না?আমি বাইরে গিয়েছিলাম কেন?কোথায় গিয়েছিলাম বা কি কাজে গিয়েছিলাম?”
নিহান হেসে বলল,
“না জিজ্ঞেস করব না।আপনি বলতে না চাইলে জিজ্ঞেস করে লাভ কি?”
অনিমা অবাক হয়ে বলল,
“আপনার জানার কোন আগ্রহ নেই?আমি সারাদিন কোথায় ছিলাম?”
“আগ্রহ তো আছে।আপনি বললে শুনব।তবে আপনি যদি না চান তাহলে থাক! আপনাকে তো জোর করতে পারি না।সেই অধিকারও আমার নেই।”
“আমি চাকরিতে আবার জয়েন করেছি।আজকে থেকেই।সারাদিন অফিসে ছিলাম।”
নিহান খুশি হয়ে বলল,
“বাহ!বেশ ভালো তো!এই খবরটা আপনি আমায় এখন জানাচ্ছেন?”
“সময় পাইনি।”
“তাহলে ঠিক আছে।আমি অনেক খুশি হয়েছি।প্রত্যেক মেয়েদেরই নিজের পায়ে দাঁড়ানো উচিত।বাই দা ওয়ে আপনার অফিসটা কোথায়?”
অনিমা অফিসের নাম বলতেই নিহান অবাক হয়ে বলল,
“আরেহ! আমার হাসপাতালের কাছেই তো!ভালোই হলো। ”
অনিমা ভ্রু কুচকে বলল,
“ভালো কেন?”
নিহান অনিমার আচমকা এমন প্রশ্নে ভড়কে গেলো।গলার পিছনের দিকটায় ডানহাত দিয়ে চুলকাতে চুলকাতে বলল,
“ইয়ে মানে….কোন প্রয়োজন হলে দেখা করা যাবে। সাহায্য নেওয়া যাবে।”
কথা বলতে বলতেই বাসার সামনে এসে পরল।অনিমার কাছ থেকে চাবি নিয়ে দরজার লক খুলতে খুলতে বলল,
“খাটের ব্যবস্তা হয়ে গিয়েছে।কালকের মধ্যেই এসে পরবে।আমি ফোন দিয়ে বলছি উনাদের।”
অনিমা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“খাট?”
নিহান দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
“অহ আপনাকে তো বলাই হয়নি।যেইদিন এই বাসায় আমরা এসেছিলাম তার পরেরদিনই আমি দোকানে গিয়ে খাটের অর্ডার দিয়ে আসছিলাম।কালকে নিয়ে আসবে ওরা।”
“কিন্তু এত তাড়াতাড়ি খাট কিভাবে বানিয়ে ফেলল?”
“দোকানদার আমার চেনা একজন।উনাকে বলেছিলাম ইমারজেন্সি লাগবে।যত তাড়াতাড়ি পারে খাটটা যেন বানায়।এত তাড়াতাড়ি বানিয়ে ফেলবে আমিও ভাবি নি।চেম্বারে থাকাকালীন ফোন দিয়ে বলল খাট নাকি রেডি। সুবিধামতো যেকোন টাইমে বাসায় দিয়ে আসতে পারবে।”
“অহ আচ্ছা।”
“হুম!যান গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন।”
অনিমা জামা, তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে রওনা হলো।গোছল করা লাগবে।যা গরম পরেছে গোছল ছাড়া থাকা যাবে না।ভাবতে ভাবতেই ওয়াশরুমে ঢুকে পরল।নিহান এক গ্লাস পানি খেয়ে গায়ে থাকা এপ্রোনটা খুলে চেয়ারে রেখে দিলো।গলার টাইটা ঢিলে করে শার্টের হাতাগুলা ফোল্ড করে কিচেন রুমের দিকে রওনা হলো।খাবার বানানোর উদ্দেশ্যে।কিচেনে ঢুকেই চুলায় ভাত বসিয়ে দিলো।কিন্তু তরকারি কি রান্না করবে?ডিম ভাজি?কিন্তু ঘরে তো একটাও ডিম নেই।ভাবতে ভাবতেই অনিমা গোছল করে বেরিয়ে আসলো রুম থেকে। নিহানকে রান্নাঘরে দেখে বলল,
“কি করছেন?”
অনিমার ডাকে প্রথমে চমকে উঠলে নিজেকে সামলিয়ে বলল,
“তেমন কিছুনা!রাতের খাবার বানাচ্ছিলাম।”
“আপনি কেন রান্না করছেন?আমাকে বলুন কি রান্না করবেন আমি রান্না করছি।”
“আরে সমস্যা নাই।আমি পারবো।আপনি কি খাবেন আজকে ডিনারে?আলু ভাজি খাবেন?”
“আপনি বানাতে পারেন?”
নিহান আমতা আমতা করে বলল,
“নাহ,এর আগে বানাইনি আপনি আমাকে রেসিপিটা বলেন আমি বানাচ্ছি।”
“আপনি পারবেন না!আমি বানাচ্ছি।”
বলেই আলু আনার জন্য যেতেই নিহান পিছন থেকে বলল,
“আপনার এই অবস্তায় কাজ করাটা একদমই ঠিক না!তার উপর সারাদিন অফিসে কাজ করে আসছেন। আপনি আমাকে বলুন আমি ভাজি করছি।”
“আপনি আলু পুড়ে ফেলবেন!”
“আচ্ছা তাহলে আমি আলু,পিয়াজ,মরিচ এগুলা কেটে দিচ্ছি।আপনি জাস্ট খুন্তি দিয়ে নাড়বেন।ঠিক আছে?”
“হুম!ঠিক আছে।”
নিহান হেসে আলু, পিয়াজ,মরিচ নিয়ে বসে পরল কাটার জন্য। প্রায় এক ঘন্টা লাগালো আলু কুচি করার জন্য।অনিমা সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।আলু কুচি করার পর পেঁয়াজ কুচি করার জন্য পেঁয়াজ হাতে নিয়ে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“পেঁয়াজ কিভাবে কাটে?”
অনিমা হাতের ইশারায় পেঁয়াজ কাটার নিয়ম দেখালো।নিহান হেসে বলল,
“আরেহ!এটা তো সহজ অন্তত আলু কাটার থেকে। এক মিনিটেই হয়ে যাবে।আপনি এক কাজ করুন।পাতিল রেডি করুন। ”
অনিমা একটা ফ্রাই প্যান নিয়ে ধুয়ে চুলায় বসিয়ে নিহানের কাছে আসতেই দেখল নিহান পেঁয়াজ কেটে ফেলেছে।অনিকা অবাক হয়ে বলল,
“এত তাড়াতাড়ি পেঁয়াজ কাটা শেষ আপনার?”
বলেই নিহানের দিকে তাকাতেই দেখল নিহান নাক টানছে আর চোখ দিয়ে পানি পরছে।
“চোখ এত জ্বলছে কেন আমার?”
চোখ ঢলতে ঢলতে বলল কথাটা।অনিমা নিহানের অবস্তা দেখে হাসবে নাকি কাঁদবে সেটাই এখনো বুঝতে পারছেনা।হাসিটাকে পেটে চাপা রেখে বলল,
“এজন্যই আপনাকে মানা করেছিলাম।শুনলেন না তো আমার কথা!এখন আপনি রুমে যান।এখানে থাকলে আরও চোখ জ্বলবে!”
অনিমার কথা অনুযায়ী নিহান রান্নাঘর থেকে রুমে চলে গেলো।চোখ মেলতেই পারছেনা একদম।এরপর থেকে পেঁয়াজ কাটার সময় চোখে সানগ্লাস পরে কাটা লাগবে।কই যেন দেখেছিলো সানগ্লাস পরে পেঁয়াজ কাটলে নাকি চোখ জ্বলে না।ইশ কেন যে ভুলে গেল?অবশ্য ঘরে তো কোন সানগ্লাস ছিলও না।কালকে আনা লাগবে।হায়!সব মানসম্মান শেষ অনিমার সামনে।কাঁদতে ইচ্ছা করতাছে।কই ভাবছিলো অনিমাকে ইমপ্রেস করবে শেফদের মতো কাটার স্কিল দেখিয়ে!কি চাইল আর কি হলো!
অনিমা ভাজি রান্না শেষ করে ঘরে ঢুকতেই দেখলো নিহান মুখ কালো করে বসে আছে।শান্তনা দেবার জন্য বলল,
“প্রথমবার পেঁয়াজ কাটার সময় সবারই এরকম হয়!শুধু আপনার বেলায় না আমার বেলাতেও সেইম কাহিনি হয়েছিলো।আপনি তো তাও শুধু কান্না করেছেন।আমার পুরো মুখ লাল হয়ে গিয়েছিলো।সাথে চোখ দিয়ে পানি পরা তো আছেই।এই ব্যাপার নিয়ে আপসেট হবার কিছুই নেই।আপনি কি এখানে খাবেন নাকি বাসায় গিয়ে খাবেন?”
“এখানে খাবো।”
অনিমা অবাক হয়ে বলল,
“হঠাত এখানে খাবেন?”
“আমি অনেকদিন আলুভাজি খাই না।তাই খেতে ইচ্ছা হলো হঠাত! আপনার অসুবিধা হলে থাক আমি বাসায় গিয়ে খেয়ে নিব।”
“আরে না আমি জাস্ট অবাক হলাম।”
“তাহলে আপনি বসুন।আমি খাবার নিয়ে আসছি।”
“আচ্ছা।”
নিহান খুশিমনে কিচেনে চলে গেলো।অনিমার হাতে বানানো খাবার ও কি করে না খেয়ে চলে যাবে?অসম্ভব!
.
.
অনিমা অফিসে বসে কাজ করছিলো।কাজ করতে করতে কখন দুপুর হয়ে গেছে টের পায়নি।অফিসের সবাই খাবার খেতে চলে গেছে।একমাত্র ওই অফিসে রয়ে গেছে।সবাই অবশ্য বলেছিল একসাথে খেতে যাবার কথা।কাজের চাপে অনিমাই বলে দিয়েছে একটু পরে খেতে যাবে।সবাই ওর কথায় সম্মতি জানিয়ে চলে গেলো।কাজ শেষ হতেই চেয়ার থেকে উঠে খাওয়ার জন্য যেতেই যাবে তখন সামনে তাকাতেই দেখল…..
চলবে…..