একঝাঁক জোনাকি পর্ব-২০

0
124

#একঝাঁক_জোনাকি
#ইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ২০

সকালে মিষ্টি রোদের আলোয় অনিমার ঘুম ভেংগে গেলো।আরমোড়া ভেংগে ঘুম থেকে উঠে বসল।পাশ ফিরর তাকাতেই অরিনকে দেখতে পেলো ঘুমাচ্ছে।একটু ঝুঁকে মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে উঠতেই যাবে হঠাত চোখ গেলো অরিনের পাশে। ফ্লোরে বসে বিছানায় মাথায় হাত রাখা ঘুমন্ত নিহানের উপর চোখ গেলো।অরিনের পাশেই রয়েছে।ভ্রু কুচকে এলো অনিমার।উনি এভাবে কেন ঘুমাচ্ছেন?গত রাতে তো ফ্লোরে ঘুমিয়েছিলেন তাহলে এখন এই অবস্তায় এখানে?বিছানা থেকে নেমে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলো নিহানের কাছে এগিয়ে গেলো।পাশের জানলা থেকে আলো এসে একদম নিহানের মুখে পরছে।যার ফলে কিছুক্ষন পর পর বিরক্ত হয়ে চোখ মুখ কুচকে আসছে।নিহানের মুখের এক্সপ্রেশন দেখে অনিমার হাসি আসলো।অনিমা এগিয়ে গিয়ে নিহানের সামনে একটু ঝুঁকে দাঁড়ালো যদিও এই অবস্তায় ঝুঁকা নিষেধ তাই সাবধানেই ঝুঁকলো।অনিমার ছায়া নিহানের মুখের উপর পরতেই নিহানের মুখ স্বাভাবিক হয়ে গেলো।

“এই যে শুনছেন?”

নিহানের কোন হেলদোল নেই।অনিমা এবার নিহানের কাধে হাত রেখে একটু ঝাঁকালো যাতে নিহান ঘুম থেকে উঠে।কিন্তু অনিমার আশায় এক বালতি পানি ঢেলে নিহান অনিমার হাতটা টেনে জড়িয়ে ধরল।অনিমা এখন কি করবে ভেবে পাচ্ছে না এভাবে থাকাও যায় না।এবার মনের মধ্যে একটু জোর নিয়ে খানিকটা চিল্লিয়েই ডেকে উঠলো অনিমা।অনিমার চিল্লানোতে নিহান হুড়মুড় করে ঘুম থেকে উঠলো।অনিমাকে দেখেই শান্ত হয়ে বলল,

“কি হলে ডাকছেন কেন?”

কিছু একটা মনে হতেই শুয়া থেকে উঠে বলল,

“প্রবলেম হচ্ছে?কি প্রবলেম?চলুন ডাক্তারের কাছে যাই।”

নিহানের কথা শুনে অনিমা হাসবে নাকি সেটা বুঝতে পারছেনা।কিছু হলেই লোকটা এত হাইপার হয়ে যায়।মনে হয় যেন সমস্যাটা ওর না নিহানের নিজের হয়েছে।নিজের হাসিটাকে থামিয়ে বলল,

“নাজ,কোন সমস্যা হয়নি।”

নিহান এবার অবাক হয়ে বলল,

“তাহলে?”

অনিমা ইশারা করে বলল,

“আপনি এভাবে ঘুমিয়ে আছেন কেন?”

অনিমার কথা শুনে নিজের দিকে তাকাতেই নিহান বুঝল। অরিনকে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে কখন যে নিজেই ঘুমিয়ে গিয়েছে টের পায়নি।

“কাল রাতে অরিনের ঘুম ভেংগে গিয়েছিলো।কান্না করছিলো অনেক।তাই ঘুম পাড়াচ্ছিলাম।কখন চোখ দুটো লেগে গিয়েছে টের পায়নি।”

“আমাকে ডাকলেই তো হতো।আপনি কেন এত কষ্ট করতে গেলেন?”

“আপনি ঘুমাচ্ছিলেন।তাই আর ডিস্টার্ব করিনি।তাছাড়া হাসপাতালের বেডে তো ভালো করে ঘুমাতে পারেন নি তিনদিন ধরে।তাই আর ঘুম থেকে জাগাইনি।যাইহোক,ফ্রেশ হয়ে আসুন।”

“আপনি হাসপাতালে যাবেন না?”

“কয়দিনের জন্য ছুটি নিয়েছি।আপনি সবকিছু সামলাতে পারবেন না তাই।”

অনিমা মাথা নেড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।নিহান অরিনের দিকে একবার তাকালো।ঘুমাচ্ছে মেয়েটা।র থেকে বেরিয়ে ব্রেকফাস্ট নিয়ে আসলো রেডি করাই ছিলো আগে থেকে।রহিমার হাত থেকে প্লেট নেওয়ার সময় জিজ্ঞেস করলো,

“আম্মু ঘুম থেকে উঠেছে?”

রহিমা উপর নিচ মাথা নাড়ালো।

“প্রেসার কি কমেছে?”

“হো। দেখলাম সকালে বাইরে চলে গেলো হাঁটার লাইগা।”

“আচ্ছা।আম্মু আসলে আমাকে ডাক দিস!”

রুমে ঢুকতেই দেখল অনিমা ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসে আছে।খাবারের ট্রেটা অনিমার কাছে রেখে বলল,

“ব্রেকফাস্ট করে নিন।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

ফ্রেশ হয়ে আসতেই অনিমা বলে উঠলো,

“অরিম যেহেতু ঘুমিয়ে আছে আমি রান্না ঘরে গিয়ে একটু হেল্প করি।নইলে মানুষ কি ভাববে?”

নিহান হাতে থাকা তোয়ালেটা চেয়ারের উপর রেখে বলল,

“কিচেনে অনেক লোক আছে হেল্প করার জন্য। আপনার যাওয়ার আমি কোন প্রয়োজন দেখছিনা।সবচেয়ে বড় কথা এই অবস্থায় আপনাকে আমি কিচেনে যেতে দিতেও পারিনা।কয়েকটা দিন যাক আপনি সুস্ত হোন তারপর ভাবা যাবে।এসব নিয়ে টেনশন না করলেও চলবে আপনার!”

“তাই বলে সারাদিন বসে থাকব?”

“কই বসে থাকবেন?অরিনকে তো দেখবেন!এটা কি বসে থাকা হলো?”

অনিমা চুপ হয়ে গেলো।এই লোকের সাথে কথা বাড়িয়ে কোন লাভ নাই।সময় নষ্ট।তাই চুপ থাকাটাকেই শ্রেয় মনে করলো।

দুপুরে,

অনিমা অরিনকে নিয়ে বসে ছিলো।হঠাত রুমে মারিয়া আসলো।

“ভাবি!কেমন আছো?”

“ভালো!তুমি?”

“আমিও!বাবুর নাম কি রেখেছো?”

“অরিন!পুরো নাম এখনো ঠিক করা হয়নি।”

“আমার কোলে দিবে অরিনকে?”

অনিমা মারিয়ার কোলে অরিনকে দিয়ে দিলো।

“কি কিউট!তুমি তো মনে হয় এখনো গোসল করো নি।”

“কিভাবে করব?অরিনকে কে দেখবে?”

“আমি রাখছি অরিনকে। তুমি যাও শাওয়ার নিয়ে নাও।”

“রাখতে পারবে ওকে?”

“অবশ্যই।দেখছো না কি চুপচাপ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমাকে মনে হয় ওর অনেক পছন্দ হয়েছে।তুমি যাও।”

“বড্ড উপকার করলে।এই গরমে এতক্ষন যে কিভাবে গোসল ছাড়া সেটা আমিই জানি।”

গোসল সেরে মাথায় তোয়ালে পেচিয়ে বাথরুম থেকে বের হয়ে বলল,

“জ্বালায়নি তোমাকে?”

“নাহ!চুপ করে শুয়ে ছিলো!তোমার গোসল করা শেষ? ”

“হুম।”

“তাহলে আমি যাই?আম্মু ডাকছে।”

“আচ্ছা যাও।”

মারিয়া অনিমার কোলে অরিনকে দিয়েই রুম থেকে চলে গেলো।অনিমা অরিনকে নিয়ে বিছানায় বসে এক হাত দিয়ে চুল থেকে তোয়ালেটা খুলে ফেলল।চুল থেকে এখনো পানি পরছে।অরিনকে বিছানায় রাখা মাত্রই অরিন চিল্লিয়ে উঠলো।এই অবস্তায় কি করে চুলগুলো থেকে পানি মুছবে তাই বুঝতে পারছে না অনিমা।শেষে কোন উপায় না পেয়ে চুলগুলোকে অইভাবে রেখেই বসে রইলো অরিনকে নিয়ে।কিছুক্ষন বাদেই নিহান রুমে প্রবেশ করলো।অনিমার দিকে তাকিয়ে বিছানার উপর থেকে তোয়ালেটা হাতে নিয়ে অনিমার পিছনে বসে পরল।চুলে কারোর হাত লাগতেই চমকে পিছনে তাকালো অনিমা।নিহান যে এসেছে টের পায়নি আগে।নিহানকে দেখেই অনিমা বলল,

“কি করছেন?”

“চুল থেকে পানি পরছে সে খেয়াল আছে?”

“আছে।কিন্তু অরিনের জন্য চুল মুছতে পারছিলাম না।বিছানায় রাখলেই চিল্লিয়ে উঠে।”

নিহান কিছু না বলে কিছুক্ষন চুল মুছে উঠে গিয়ে বিছানার পাশের ড্রয়ার থেকে হেয়ার ড্রায়ারটা বের করে আবার অনিমার পাশে এসে বসে হেয়ার ড্রায়ারটা অন করে অনিমার চুল শুকাতে লাগলো।

নিহান বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।অনিমা দুপুরের খাবার খাওয়া শেষ করে ঘুম দিয়েছে।বারান্দার রেলিংয়ে হাত রেখে সামনেই তাকিয়ে ছিলো।হঠাত রাস্তায় একটা পিচ্চি ছেলেকে সাইকেল চালাতে দেখল।
অতীত,

মাহির ষষ্ঠ বারের মতো সাইকেল চালাতে গিয়ে ঢপাস করে রাস্তায় পরলো।ব্যাথায় চোখমুখ খানিকটা কুচকে এলো।এত চেষ্টা করছে তাও সামান্য সাইকেলটা চালাতে পারছে না।বিরক্ত হলো খুব নিজের উপর।কিন্তু কিছুক্ষন বাদেই বসা থেকে দাঁড়িয়ে উঠলো।যেভাবেই হোক তাকে সাইকেল চালানো শিখতেই হবে।নইলে ক্লাসমেটরা তাকে নিয়ে হাসবে।বলবে এত বড় ছেলে কিনা সামান্য সাইকেল চালাতে জানে না?ছিহ!চোখের সামনে সেই দৃশ্য ভেসে উঠতেই মনে মনে জোর নিলো।ওদেরকে দেখিয়ে দিবে সেও সাইকেল চালাতে জানে।ভেবেই সাইকেলে উঠে বসল।রাত তখন ৯ টা বাজে।এরকম একটা টাইমে কেও আসা যাওয়া করেনা ওদের গলিতে।তাই এই টাইমটাকেই বেছে নেওয়া।কিন্তু ওর ধারনাকে ভুল প্রমান করে দিয়ে অনিমা মাহিরের সামনে এসে দাঁড়ালো।বারান্দা থেকে কখন থেকেই মাহিরের সাইকেল চালানোর চেষ্টা সে দেখে আসছে।শেষ পর্যন্ত বাসা থেকে বেরিয়েই আসলো।সাইকেলের পিছনের দিকটা ধরে বলল,

“আমি ধরে আছি।পরে যাবা না। সাইকেল চালাতে থাকো।”

অনিমার এমন কথা শুনে পিছনে তাকালো মাহির।এই একটা সময়ে অনিমাকে যে মাহির আশা করেনি সেটা তার চোখ মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।অনিমার হাসি আসছে মাহিরের মুখ দেখে।হাসিটাকে পেটের মধ্যে চেপে রেখে বলল,

“কি হলো?পেডেল ঘুরাও?”

মাহির সামনে ফিরে মনযোগ দিলো সাইকেল চালানোতে।কয়েক সেকেন্ড চালিয়ে আবারও সাইকেল নিয়ে পরে গেলো রাস্তায়।অনিমা হাত টেনে ধরে উঠিয়ে বলল,

“এটা সিম্পল।সাইকেল চালাতে গিয়ে পরে যাবে, ব্যথা পাবে এটা একদমই স্বাভাবিক। সবার ক্ষেত্রেই প্রথম প্রথম এরকমটা হয়।এটা নিয়ে টেনশন করার কোন দরকার নেই।আবার ট্রাই করো।”

নিহান মাথা নাড়িয়ে আবার সাইকেলে বসে পরল।পিছন থেকে অনিমা সাইকেল ধরে আছে। মাহির সাইকেল চালাতে চালাতে ভয়ে ভয়ে বলল,

“ছেড়ে দিবেন না কিন্তু!নইলে পরে যাবো।”

“ছাড়বো না।তুমি সাইকেল চালাও।মনযোগ সামনের দিকে দাও।”

বলেই সাইকেল ছেড়ে দিলো।মাহির বেশ কিছুক্ষম সাইকেল চালাতে পেরে খুশিতে বলল,

“আমি সাইকেল চালাতে পারছি।আপনি আমাকে ছেড়ে দিন নি তো!”

বলেই পিছনে তাকাতেই অনিমাকে না দেখতে পেয়ে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,

“আপনি আমাকে ছেড়ে দিয়েছেন।আমি বলেছিলাম আপনাকে না ছাড়তে।”

অনিমা জোরে চিল্লিয়ে বলল,

“না ছাড়লে শিখবে কি করে?পিছনে তাকাবে না।”

“আমি যদি এখন পরে যাই!”

বলতে না বলতেই ধপাস করে আবার পরে গেল রাস্তায়।অনিমা রাগে কমোড়ে হাত রেখে বলল,

“বলেছিলাম না পিছনে না তাকাতে।তাকিয়েছেো কেন?”

“আপনি আমাকে ছেড়ে দিলেন কেন?”

“না ছাড়লে তুমি সাইকেল চালানো শিখবে কি করে?আমি কি সবসময় তোমাকে ধরে রাখব?”

“আচ্ছা আবার ট্রাই করি।এবার আর পিছনে পাশে কোনদিকে তাকাবো না।শুধু সামনে।”

“হুম।”

মাহির আবার সাইকেলে বসলো।

“আমি ধরছি।পিছনে ভুলেও তাকাবা না তাইলেই পরে যাবা।মনে করবা আমি ধরে আছি।ঠিক আছে?”

“হুম”

কিছুক্ষন সাইকেল ধরে রেখে অনিমা সাইকেলটা ছেড়ে দিলো।মাহির এবার পুরো মনযোগ সামনের দিকে দিয়ে রেখেছে।অনিমা মাহিরের পাশে দৌড়াতে দৌড়াতে বলল,

“দেখেছো তুমি এখন সাইকেল চালাতে পারছো।”

মাহির খুশি হয়ে সাইকেল চালাতে চালাতে বলল,

“আপনার জন্যই তো!ধন্যবাদ আপনাকে।”
“আমার জন্য না তুমি নিজে চেষ্টা করেছো বলেই পেরেছো।”

চলবে…..