একঝাঁক জোনাকি পর্ব-২৬+২৭

0
140

#একঝাঁক_জোনাকি
#ইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ২৬

অনিমা দুই হাত পাততেই নিহান তার মুঠো করে রাখা দুই হাত অনিমার হাতের উপর রেখে ছেড়ে দিলো মুঠোয় থাকা সবগুলা শিউলি ফুল।অনিমা হাত ভর্তি শিউলি ফুল দেখে খুশিতে হেসে দিলো।

“আপনি এত রাতে সামান্য শিউলি ফুলের জন্য এখানে এসেছেন?”

নিহান দুই হাত ভাজ করে বলল,

“তো?গ্রামে এতো রাত।শহরেতো এই রাত কিছুই না।আর আপনার কাছে এই বিষয়টা সামান্য হতে পারে।কিন্তু আমার কাছে না!এইযে হাত ভর্তি শিউলি ফুল দেখে আপনার যে খুশি হবার ব্যাপারটা এই খুশি, হাসি কি আমি দেখতে পেতাম যদি সামান্য কাজটা না করতাম?”

অনিমা হেসে ফুলগুলার দিকে তাকিয়ে বলল,

“ধন্যবাদ আপনাকে!আমার ইচ্ছা ছিল ফুলগুলাকে ছোয়ার।সে ইচ্ছা পুরন করার জন্য ধন্যবাদ।”

অনিমা ফুলগুলার দিকে তাকিয়ে ছিলো।ইশ কি সুন্দর ফুলগুলা।ইচ্ছা করছে সারাজীবন এভাবেই রেখে দিতে।আর নিহান গাছের সাথে হেলান দিয়ে দুই হাত ভাজ করে অনিমার খুশি হওয়ার মুহুর্তটাকে দেখছিল।যদি এখানেই সময়টা থেমে যেতো! হঠাত গাছ থেকে একটা ফুল ঝড়ে নিহানের উপর পরল।চারদিকে পছন্দ বাতাস সেইজন্যই বোধহয়।নিহান ফুলটাকে নিজের হাতে নিলো।কি একটা ভেবে অনিমার দিকে এগিয়ে গেলো।কিছুটা এগিয়ে অনিমার সামনে দাঁড়ালো।অনিমা টের পায়নি নিহান যে ওর সামনে।ও ফুলগুলাকে দেখা নিয়ে ব্যস্ত।নিহান ফুলটাকে অনিমার ডান কানে গুজে দিলো।অনিমা অবাক হয়ে তাকাতেই নিহান মৃদু হেসে বলল,

“ভালোবাসি!”

অনিমা অবাক এবার সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে গেছে সেটা ওর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।

“আমি জানি এরকম একটা সিচুয়েশনে আমার এই কথাটা বলা উচিত হয় নি। আপনিও আমাকে সেরকম ভাবে দেখেননি।তবে আপনাকে এখনই আমাকে ভালোবাসতে হবে না। আমি অপেক্ষা করব আপনার জন্য! যদি আমাকে ভালোবাসতে আপনার সারাজীবন লাগে আমি অই সারাজীবনই ওয়েট করব।আমার কোন আফসোস থাকবে না।শুধু আপনি আমার পাশে থাকবেন।আমার সাথে থাকবেন।”

নিহানের কথাগুলো শুনে অনিমার কথা বলা বন্ধ হয়ে গেছে।ওর এখন এই মুহুর্তে কি বলা উচিত সেটাই বুঝতে পারছেনা।

“এত রাতে অইখানে কে?”

কথাটা শুনেই অনিমা চমকে পিছনে তাকিয়ে আবার নিহানের দিকে তাকালো।নিহান কিছু না ভেবেই অনিমার হাত ধরে গাছের পিছনে লুকিয়ে গেলো।আবির টর্চ লাইট ফেলল গাছের সামনে।ভ্রু কুচকে এলো আবিরের।সে স্পষ্ট জানলা থেকে ছায়া দেখেছে।এখানে তো কারোর থাকার কথা!কেও নেই কেন?ভুল দেখলো নাকি?কিছুক্ষন এদিক সেদিক খুজাখুজি করে কাওকে না পেয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো।আবিরকে চলে যেতে দেখে নিহান একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।এই ছেলে যদি নিহান আর অনিমাকে দেখে ফেলতো নির্ঘাত সারা বাড়িতে বলে বেড়াতো।পরে নিহানকে সবাই পিঞ্চ মেরে কথা বলতো।নিহান আর অনিমার দুর‍ত্ব মাত্র কয়েক ইঞ্চির।দুজম দুজনের নিঃশ্বাস শুনতে পাচ্ছে।অনিমা নিহানের দিকে তাকালো।নিহান সামনে তাকিয়ে আছে।অনিমার কানে শুধু নিহানের একটু আগে বলা কথাগুলো বাজছে।ওর কি করা উচিত এখন?কি বলা উচিত?ছেলেটা ওর জন্য অনেক করেছে।বিয়ের আগ থেকে এখন পর্যন্ত।যখন ওর পাশে কেও ছিলো না তখন শুধু নিহানই ছিল।সবসময় ওকে ভরসা,সাহস দিয়ে গিয়েছে। নিজের মার সাথে পর্যন্ত যুদ্ধ করেছে।আচ্ছা ও কি নিহানকে ঠকাচ্ছে?অধিকার থেকে দুরে রাখছে?এসব কথা মাথায় আসতেই অনিমা একটা কাজ করে বসলো।নিহানের গালে নিজের ডান হাত দিয়ে ওর দিকে ফিরালো।একটু এগিয়ে গিয়ে নিহানের ঠোটে নিজের ঠোট ডুবিয়ে দিলো।অনিমার উষ্ণ স্পর্শ পেয়ে নিহানের চোখ বড় হয়ে গেলো।এক্ষুনি যেন অক্ষিকোটর থেকে বেরিয়ে আসবে।মনে হচ্ছে স্বপ্ন।হার্টবিট কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে নিহানের সাথে নিঃশ্বাসও।কয়েক সেকেন্ড পর অনিমার হুশ আসতেই সরে এলো নিহানের থেকে।এটা সে কি করে ফেলল?অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,

“অরিন কান্না করছে।আমি যাচ্ছি।”

বলেই চলে গেলো।এক প্রকার দৌড়েই চলে গেলো বাড়ির দিকে।নিহান এখনো স্তব্ধ হয়ে বসে আছে ঠোটে নিজের হাত দিয়ে। অনিমা কি সত্যিই একটু আগে নিহানকে স্পর্শ করলো?বিশ্বাস হচ্ছে না ওর।আচ্ছা ও জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে না তো?ভেবেই নিজের গালে চিমটি কাটলো।নাহ!অনিমা সত্যিই ওকে কিস করেছে!ভেবেই মন আনন্দে ভরে উঠলো।খানিকটা লজ্জাও লাগছে।জীবনের ফাস্ট কিস ওর!এত খুশি কই রাখবে ও?নাচতে মনে চাচ্ছে!কিন্তু নিজেকে দমিয়ে নিলো।এত রাতে নাচলে কেও দেখলে নির্ঘাত ভাববে ওকে জিনে ধরেছে!

.
.
অনিমা রুমে চলে এসে একটা বড় শ্বাস নিলো।এটা সে কি করলো, কেন করল মাথাতেই আসছেনা।অরিনের দিকে তাকালো।ঘুমাচ্ছে! ইচ্ছা করেই মিথ্যা বলেছে।নইলে আসতে পারতোনা।নিহানের আসার শব্দ শুনে অনিমা দৌড়ে বিছানায় শুয়ে পরল!অরিনের পাশে।চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলল খিচে।যাতে নিহান ভাবে সে ঘুমিয়ে আছে।নইলে যদি প্রশ্ন করে তাহলে কি উত্তর দিবে?নিহান খুশি মনে ঘরে ঢুকতেই দেখলো অনিমা শুয়ে আছে চোখ বন্ধ করে!নিহান বুঝতে পারছে অনিমা আসলে যে ঘুমায়নি বরং ঘুমের বাহানা করছে।হাসি এলো ওর।নিচে শুতে শুতে বলল,

“আমি জানি আপনি ঘুমাননি।কারন আপনার চোখের পাতা দ্রুত নড়ছে।একজন ডাক্তারকে বোকা বানাচ্ছেন?”

নিহানের কথায় অনিমা পাত্তা দিলো না।এখন পাত্তা দিলেই বিপদ।অনিমার কোন উত্তর না পেয়ে নিহান চোখ বন্ধ করলো।এখন আর অনিমাকে ঘাটাতে ইচ্ছা করছেনা।তাই ঘুমটাকেই শ্রেয় মনে করলো।
সকালে ঘুম থেকে উঠে নিহান দেখল অনিমা ঘুমাচ্ছে।তাই আর ডাক দিলো না।ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখল অনিমা ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে।

“নিচে ডাকছে আপনাকে ব্রেকফাস্টের জন্য।”

“অরিন?”

“আমার কাছে থাকবে।”

“আচ্ছা।”

“তাহলে ফ্রেশ হয়ে নিন।”

অনিমা কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো।দরজা বন্ধ করেই একটা শান্তি নিঃশ্বাস ফেলল।যাক গতকাল রাতের ব্যাপারে কোন কথা তুলেনি নিহান।
অনিমা ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখল নিহান বসে আছে বিছানায়।অনিমা মুখ ফুটে বলল,

“চলুন।”

নিহান বসা থেকে উঠে অরিনকে কোলে নিলো।জেগে আছে সে।নিচে নেমে অনিমাকে চেয়ারে বসিয়ে নিজে বাচ্চাটাকে নিয়ে পাশে বসে পরল।নিহান অরিনকে এক হাতে কোলে রেখেছে আরেক হাতে সে খাচ্ছে খাওয়ার মাঝেই আবির বলল,

“নিহান কালকে রাতে বাগানে চোর ঢুকেছিলো।টের পেয়েছিলি?”

ব্যাস এই কথা শুনেই অনিমার খাবার নাকে মুখে উঠে গেলো।নিহান সামনে থেকে একটা পানির গ্লাস অনিমার দিকে এগিয়ে দিলো।অনিমা পুরো পানির গ্লাসটা এক চুমুকেই শেষ করে ফেলল।আবির ভ্রু কুচকালো।চোরের কথা শুনে ভাবির কেন বিষম খেলো বিষয়টা মাথায় আসলোনা।

“না টের পাইনি।ধরতে পেরেছিস চোরটাকে?”

ঠোট উল্টে আবির বলল,

“নাহ!মনে হয় আমার আসার টের পেয়েছিল তাই পালিয়ে গেছে।”

“আহারে!”

.
.
“কথায় কথায় বিষম খাওয়াটা কি আপনার রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে অনিমা?”

নিহানের কথা শুনে নিহানের দিকে তাকালো। না বুঝে বলল,

“মানে?”

অরিনকে নিয়ে বিছানায় বসতে বসতে বলল,

“এই নিয়ে আপনি কয়বার বিষম খেয়েছেন আপনি জানেন?খাবার মাঝে কোন কথা উঠলেই আপনার বিষম উঠে!”

অনিমা কিছু না বলে চুপ করে রইল।

“আজকে বিকালেই আমরা চলে যাবো।রেডি থাকবেন।”

“হুম।”

“আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?”

“বলেন!”

“অইদিন মারিয়া যে বলল আপনার ১৫ বছরের ভালোবাসা যাকে আপনি ১৫ বছর ধরে ভালোবেসে এসেছেন ওর এখন কি খবর?মানে কোন যোগাযোগ আছে?”

অনিমার কথা শুনে নিহান মনে মনে হাসলো।

“নাহ!”

” অহ আচ্ছা।”

“আপনার কোন ফাস্ট লাভ ছিলো?”

“নাহ!”

“সবার জীবনেই কেও না কেও প্রথমে আসে। আমার জীবনেও তেমনি মেয়েটা এসেছিলো।”

নিহানের কথা শুনে অনিমার রাগ হলো অনেক।মুখ ফুলিয়ে বলল,

“এতোই যখন ভালোবাসেন তখন ওকে বিয়ে করলেই পারতেন!”

“সুযোগ পেলে ওকেই বিয়ে করতাম কিন্তু সুযোগটাই ছিলো না। ”

“অহ আচ্ছা।মেয়েটার নাম কি?”

“বলা যাবে না।”

“কেন?অই মেয়ে মানা করেছে?”

অনিমার কথা শুনে নিহান এবার হেসে দিলো।নিহানকে হাসতে দেখে অনিমার ভ্রু কুচকে এলো।এটা কি হাসির কথা ছিলো যে নিহান হাসছে!

“আমি কি কোন হাসির কথা বললাম যে আপনি হাসছেন?”

নিহান হাসতে হাসতেই বলল,

“হ্যা!তা না হলে কি?”

“এটা কিভাবে হাসির কথা হলো?”

নিহান হাসি থামিয়ে বলল,

“আপনি যে মেয়েটার কথা বলছেন আইমিন আমার ফাস্ট লাভ অই মেয়েটার সাথে তো আমার যোগাযোগই নেই।তাহলে ও কি করে আপনাকে ওর নাম বলতে মানা করবে?”

অনিমা কিছু না বলে চুপ করে রইলো।নিহান বুঝল অনিমা জেলাস ফিল করছে।জেলাস ফিল আরও করানোর জন্য নিহান বলল,

“আসলে ওকে যেভাবে ভালোবেসেছিলাম সেভাবে এই পর্যন্ত কাওকেই ভালোবাসতেই পারি নি।”

“তাহলে গতকাল রাতে যে আমাকে বললেন আমাকে ভালোবাসেন সেটা কি মিথ্যা ছিলো?”

“আপনাকে ভালোবাসি না এটা কে বলল?আমি বলেছি ওর মতো কাওকে আর ভালোবাসতে পারি নি।”

“কথাটার মানে কি এটা বুঝায় না আপনি গতকাল রাতে মিথ্যা বলেছেন?”

“নাহ!আমি ওকে যেমন ভালোবাসি আপনাকে তেমন ভালোবাসি।”

অনিমার রাগ হলো।মনে হলো নিহান আসলেই ক্যারেকটারল্যাস!নইলে একসাথে দুইজনকে কিভাবে ভালোবাসে?মুখ গম্ভীর করে বলল,

“আমাকে আপনার ভালোবাসতে হবে না।অই মেয়েকে ভালোবাসেন তাহলেই হবে।”

“আচ্ছা।”

নিহানের কথা শুনে অনিমা অবাক হয়ে গেলো।ওর কথায় রাজিও হয়ে গেলো?অনিমা কথা বলা থামিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।এছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না।অনিমার কান্ড দেখে নিহান হেসে দিলো।আহারে!বোকা মেয়েটা জানেও না সে কার উপর রাগ করছে!বাথরুমের আয়নার সামনে নিহানকে ইচ্ছামতো বকে বাথরুম থেকে বের হলো।সামনে তাকাতেই দেখল নিহান অরিনের সাথে খেলছে।কই লোকটাকে দেখে তো বুঝাই যায় না লোকটা তলে তলে এমন।বাইরে এমন ভাব দেখায় যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানে না!

“ওয়াশরুমের সামনে দাঁড়িয়ে কি ভাবছেন?”

নিহানের কথায় হুশ আসলো অনিমার।হঠাত নিহান বসা থেকে উঠলো। এগিয়ে গেল অনিমার দিকে।অনিমার ভ্রু কুচকে এলো।এই লোক এখন ওর দিকে এগিয়ে আসছে কেন?কয়েক পা এগিয়ে অনিমার সামনে এসে দাঁড়ালো।ওদের মাঝে এখন আর কয়েক ইঞ্চির দুরত্ব।অনিমা পিছাতে পিছাতে ওয়াশরুমের দরজার সাথে পিঠ লেগে গেছে।অনিমাকে অবাক করে দিয়ে নিহান……

চলবে….

#একঝাঁক_জোনাকি
#ইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ২৭

বাথরুমের আয়নার সামনে নিহানকে ইচ্ছামতো বকে বাথরুম থেকে বের হলো।সামনে তাকাতেই দেখল নিহান অরিনের সাথে খেলছে।কই লোকটাকে দেখে তো বুঝাই যায় না লোকটা তলে তলে এমন।বাইরে এমন ভাব দেখায় যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানে না!

“ওয়াশরুমের সামনে দাঁড়িয়ে কি ভাবছেন?”

নিহানের কথায় হুশ আসলো অনিমার।হঠাত নিহান বসা থেকে উঠলো। এগিয়ে গেল অনিমার দিকে।অনিমার ভ্রু কুচকে এলো।এই লোক এখন ওর দিকে এগিয়ে আসছে কেন?কয়েক পা এগিয়ে অনিমার সামনে এসে দাঁড়ালো।ওদের মাঝে এখন আর কয়েক ইঞ্চির দুরত্ব।অনিমা পিছাতে পিছাতে ওয়াশরুমের দরজার সাথে পিঠ লেগে গেছে।অনিমাকে অবাক করে দিয়ে নিহান হাত বারিয়ে ওয়াশরুমের লাইটের সুইচ বন্ধ করে দিয়ে সরে এসে বলল,

“দিনের বেলা যে লাইট জ্বালিয়ে ওয়াশরুমে যেতে হয় সেটা আজ জানলাম!”

অনিমা মনে মনে নিজেকে বকলো।লাইট কখন জ্বালালো সে?এমন ঘটনা কেন ঘটছে তার সাথে।

“ভুলে মেবি জ্বালিয়ে ফেলেছি।ধন্যবাদ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য। ”

নিহান হেসে বলল,

“আরেহ!ইট’স ওকে।”

অনিমা অপ্রস্তুত হেসে বিছানায় বসে পরল।নিহানও কিছু না বলে বাইরে বেরিয়ে গেলো।দাদীর রুমের সামনে গিয়ে দরজায় নক করতেই দাদী বললেন ভিতরে আসতে।নিহান রুমে ঢুকে বলল,

“দাদী আজ বিকালেই আমরা চলে যাব। ”

দাদী চেয়ারে বসে ছিলেন। নিহানের কথায় অবাক হয়ে বললেন,

“সেকি!গতকাল রাতেই না এলি!আজই চলে যাবি!অন্তত একটা দিন থাক!তোর বউকে নিয়ে ঘুরে আয় কোথাও!মেয়েটা তো আশেপাশের কিছুই দেখলো না!”

“আমি জাস্ট একদিনের ছুটি নিয়ে এসেছি হাসপাতাল থেকে।আর অরিন তো ছোট!এ অবস্তায় অনিমা কি করে ঘুরতে বের হবে?অরিন একটু বড় হোক তারপর আমরা সবাই মিলে আসবো। টানা এক সপ্তাহ থাকব।আশেপাশের সবকিছু অনিমা আর অরিনকে ঘুরে দেখাবো!”

“আচ্ছা যাস আজকে।তোকে তো আর আটকাতে পারব না!এতদিন তোর মা তোকে আসতে দেয়নি তোর পড়ালেখায় ক্ষতি হবে বলে।আর এখন তুই আসবি না তোর বিয়ে হয়েছে বলে! অরিন ছোট বলে।ওরাই তোর সব আমরা কেও কিছুই না তোর কাছে।”

নিহান কিছুটা এগিয়ে দাদীর সামনে হাটু গেড়ে বসে পরল।দাদীর কোলে মাথা রেখে বলল,

“এরকটা কেন বলছো?আম্মু না চাইলেও আমি চুরি করে লুকিয়ে যে কতবার এসেছি সেটা ভুলে গেছো?”

দাদী কোন কথা বলল না।

“অরিন বড় হোক প্রতি বছরে একবার আসব!না না ছুটি পেয়েই চলে আসব।আর তুমি তো অনিমাকে দেখতে চেয়েছিলে আমি ওকে নিয়ে এসেছি।তোমার মন খারাপ দেখে আমি ঢাকায় চলে গেলেও শান্তি পাবো না!একটু বুঝার চেষ্টা করো!”

“হয়েছে!যাহ,কিন্তু অরিন বড় হলে আসবি কিন্তু…”

নিহান মিষ্টি হেসে বলল,

“অবশ্যই!”

.
.
নিহান ট্রেন স্টেশনে টিকেট কাউন্টারে টিকেটের জন্য দাঁড়িয়ে আছে।আর অনিমা একটু দুরে। টানা ১০ মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অবশেষে টিকেট পেয়ে অনিমার কাছে যেতেই অনিমা বলল,

“আসার সময় তো বাসে করে এসেছিলেন।তাহলে এখন ট্রেনে করে যাচ্ছেন যে?”

“ট্রেনে করে গেলে তাড়াতাড়ি হবে।আজকে নাইট ডিউটি আছে আমার।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যেতে পারলেই বাঁচি।”

কিছু একটা ভেবে আবার বলল,

“আপনার ট্রেনে যেতে অসুবিধা আছে?”

“নাহ!কি অসুবিধা থাকবে?জাস্ট জিজ্ঞেস করলাম এই আরকি!”

“ট্রেনে উঠতে পারবেন তো?”

বলতে না বলতেই ট্রেন এসে পরল।

অনিমা একবার ট্রেনের দিকে তাকিয়ে বলল,

“পারব!”

নিহান অরিনকে অনিমার থেকে নিজের কোলে নিয়ে নিলো।নিজে ট্রেনে উঠে তারপর হাত বারিয়ে দিলো অনিমার দিকে। অনিমা একবার নিহানের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার হাতের দিকে।নিহান বিরক্ত হয়ে বলল,

“কি হলো?হাত ধরছেন না কেন?ট্রেন ছেড়ে দিবে তো!”

অনিমা ডান হাত এগিয়ে নিহানের হাতে রাখল।সিটে বসে শান্তির নিঃশ্বাস ফেলল।কিছুক্ষন বাদেই ট্রেন তার নিজের গতিতে চলতে শুরু করল।অনিমা একবার নিহানের দিকে তাকালো।অনিমার এই মুহুর্তে অনেক জানতে ইচ্ছা করছে নিহান যাকে ভালোবাসতো সে দেখতে কেমন!নিশ্চয়ই সুন্দরী!বুঝালো নিজের মনকে যে মেয়েটা সুন্দরী। কারন এই মুহুর্তে এসে এই প্রশ্ন করাটা মানায় না।উফফ এতদিন তো প্রশ্নগুলা মাথায় আসেনি।তাহলে এখন একের পর এক অই মেয়েকে নিয়ে কেন প্রশ্ন জাগছে মনে?নিহান কি ভাববে?নিশ্চয়ই ভাববে আমি অই মেয়েটাকে নিয়ে অনেক কৌতুহল!বিরক্তিকর!মন বলছে জিজ্ঞেস করতে।ওর অধিকার আছে জানার।আর ব্রেন বলছে কি দরকার পুরনো অতীত নিয়ে ঘাটাঘাটি করার!সবার জীবনেই কেউ না কেউ থাকে!নিহানও এর ব্যতিক্রম নয়।সোহানের প্রেমের বিষয়টা তো স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়েছিলো তাহলে নিহানের পুরনো প্রেমের কথা মানতে পারছেনা কেন?কই যখন সোহান বলেছিল সে একটা মেয়েকে ভালোবাসে তখন তো সে অই মেয়ের বিষয়ে জানার একটা ফোটাও আগ্রহ দেখায় নি।বরং মেয়েটার মুখ যাতে না দেখতে হয় সেজন্য তাড়াতাড়ি ভোর হতেই বাড়ি ছেড়েছিলো।তাহলে নিহানের ক্ষেত্রে এত তফাৎ কেন?
শেষমেষ নিজের মন আর মস্তিষ্কের সাথে যুদ্ধ করতে করতে বলেই ফেলল,

“অই মেয়েটা দেখতে কেমন ছিলো?”

অনিমার কথা শুনে নিহান ভ্রু কুচকে বলল,

“কোন মেয়ে?”

অনিমার রাগ হলো। এই ছেলের জীবনে কয়টা মেয়ে ছিল যে সে চিনতে পারছে না কোন মেয়ে।দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“যে মেয়ে আপনার প্রথম ভালোবাসা ছিল!পনেরো বছরের ভালোবাসা!”

নিহান বুঝতে পেরে বলল,

“হুম সুন্দর ছিলো।প্রথম দেখায় প্রেমে পরে গিয়েছিলাম তাহলে বুঝুন কেমন সুন্দর! ”

“অহ আচ্ছা।”

অনিমাকে জ্বালাতে নিহানের ভালো লাগছে।আরেকটু জ্বালানের জন্য বলল,

“আমার দেখা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মেয়ে ছিল।ওকে দেখার পর আর কাওকে মনে ধরেনি।”

অনিমা কোন উত্তর না দিয়ে জানলার বাইরে তাকালো।কথা বলতে ইচ্ছা করছে না আর।এই ছেলে কেমন নিজের বউয়ের সামনে অন্য মেয়ের প্রশংসা করছে!বলছে কিনা অই মেয়েকে দেখার পর আর কাওকে মনে ধরেনি!কেন উনার মনের স্পেস কি এতোই কম?

“আপনার অই মেয়ের প্রতি এতো ভালোবাসা দেখে আপনাদের মাঝে নিজেকে কেমন যেন ভিলেন লাগছে।”

অনিমার কথা শুনে নিহান কিছু না বলে জানলার দিকে তাকিয়ে হাসলো।

.
.
অনিমাকে বাসার সামনে দিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে চলে গেলো নিহান।নিহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা শ্বাস ফেলে বাড়ির দিকে পা বারালো।বাড়িতে ঢুকতেই দেখলো মুক্তা বেগম সোফায় বসে সিরিয়াল দেখছেন!অনিমাকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নিলেন।অনিমা একটা শ্বাস ফেলে সিড়ি বেয়ে উঠছিলো হঠাত পিছন থেকে মুক্তা বেগম বললেন,

“নিহান কোথায়?ওকে দেখলাম না যে?”

“উনার রাতের বেলা হাসপাতালে ডিউটি আছে।ফিরতে অনেক রাত হবে।”

“অহ!অরিনকে আমার কাছে দিয়ে যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।”

নিহানের মার কথা শুনে চমকে নিহানের মার দিকে তাকাতেই মুক্তা বেগম বিরক্ত হলেন।

“কি হলো এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে কি দেখছ?বাচ্চাটাকে রেখে যাও ফ্রেশ হয়ে আসো!রহিমাকে বলছি যাতে তোমার জন্য খাবার রেডি রাখে।”

অনিমা সিড়ি থেকে নেমে কয়েক পা এগিয়ে নিহানের মার দিকে অরিনকে বারিয়ে দিলো। নিহানের মা হাতে থাকা টিভির রিমোট সামনের টেবিলে রেখে অরিনকে নিজের কোলে নিয়ে নিলেন।অনিমা রুমের দিকে চলে গেলো।

রাত ১২ টা,

নিহান ঘরে ঢুকতেই দেখল পুরো বাড়ি অন্ধকার!অবশ্য অন্ধকার থাকারই কথা।সবাই নিশ্চয়ই ঘুমাচ্ছে।গায়ে থাকা সাদা এপ্রোনটা খুলে সোফার উপর রেখে হাতে থাকা ঘড়ি খুলতে খুলতে ড্রয়িংরুমের লাইট অন করলো।সোফায় বসে কিছুক্ষন রেস্ট নিলো।আজকে অনেক দখল গেছে তার উপর দিয়ে।ক্লান্তিতে শরীর এক ফোটাও নড়তে চাচ্ছে না।ইচ্ছা হচ্ছে এখানে শুয়ে ঘুমিয়ে পরতে।শরীরে এক ফোটাও শক্তি নেই যেন।শরীরের সাথে যুদ্ধ করে এক প্রকার উঠে পরল।গরম লাগছে অনেক।গোসল করতে হবে ভেবেই নিজের রুমে গিয়ে আলমারি থেকে ট্রাউজার আর গেঞ্জি বের করলো। তাওয়াল নিতে গিয়ে চোখ পরল ঘুমন্ত অনিমার দিকে।এগিয়ে গিয়ে বসলো ফ্লোরে হাটু মুড়ে।গালের উপর চুল পরে আছে।আর এজন্যই বারবার বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে ফেলেছে।নিহান হেসে ডান হাত দিয়ে বারিয়ে দিয়ে চুলগুলাকে সরিয়ে দিলো।

“অনিমা আপনি জানেন আপনি লাখে একজন।লাখ লাখ মানুষের মাঝে দাঁড় করিয়ে যদি বলা হয় যেকোন একজনকে চুজ করো আমি আপনাকেই চুজ করব।কবে আমাকে চিনবেন?কবে আমাকে একটু বেশি না একটু ভালোবাসবেন?অই সময়টার জন্য আমি দিন দিন লোভী হয়ে যাচ্ছি।এই লোভ কিছুতেই কমছে না।তার উপর গতকাল আমার কাছে এসে আমার লোভটাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন।এই লোভ কমানোর সম্পূর্ণ ভার আপনার অনিমা।কারন আমার লোভের কারন একমাত্র আপনি!আমি অপেক্ষা করব সেদিনটার জন্য যেদিন আপনি নিজ থেকে আমার কাছে এসে ধরা দিবেন।”

বলেই অনিমার একটু ঝুঁকে অনিমার কপালে ঠোট ছুয়ালো।বেশ কিছুক্ষন ঠোট ছুইয়ে রেখে উঠে দাঁড়িয়ে পরল শাওয়ার নেওয়ার উদ্দশ্যে বাথরুমে চলে যেতেই অনিমা উঠে বসলো।বড় একটা শ্বাস নিলো।নিহান কি বললো এসব?অরিন একটু আগেই জেগে গিয়েছিলো কান্না করছিলো।কান্না থামিয়ে ঘুম পাড়িয়ে চোখ দুটো বন্ধ করতেই নিহানের আসার শব্দ শুনলো।চোখ মেলতেই যাবে হঠাত নিহান এসে সামনে বসে কথাগুলো বলাতে আর চোখ খুলেনি।
.
.
লম্বা শাওয়ার নিয়ে ট্রাউজার পরে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হয়ে ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে একটু সামনে যেতেই দেখলো অনিমা হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।দেখে মনে হচ্ছে এইমাত্রই গরম করেছে খাবারগুলো কারন প্লেট থেকে ধোয়া বেরুচ্ছে।অনিমা চোখ তুলে তাকাতেই নিহানকে এমন খালি গায়ে দেখে চিৎকার দিতেই যাবে হঠাত নিহান দৌড়ে এসে অনিমার মুখ চেপে ধরল।

“এত রাতে চিৎকার করলে মানুষ কি ভাববে?”

অনিমা ইশারায় বলল যাতে মুখ থেকে হাত সরায় নিহান সরিয়ে তাড়াতাড়ি করে হাতে থাকা টি শার্টটা পরে ফেলল।

“সরি!আসলে টিশার্টটা ভিজে গিয়েছিলো।তাই এসেছিলাম আরেকটা টিশার্ট নেওয়ার জন্য।আর তাছাড়া আমি ভেবেছিলাম আপনি ঘুমাচ্ছেন।তাই খালি গায়ে বেরিয়ে এসেছিলাম।”

অনিমা কিছু না বলে বিছানায় খাবারের ট্রে বিছানার উপর রেখে বলল,

“খেয়ে নিন।দুপুর থেকে তো মনে হয় না কিছু খেয়েছেন!”

নিহান খাবার খেতে বসে পরল।খাওয়া শেষ করে বলল,

“অনিমা আপনি কি জানেন আপনি ধীরে ধীরে আমার প্রেমে পরে যাচ্ছেন?”

চলবে….