#একটা_বসন্ত_বিকেলে
#অরনিশা_সাথী
|১৭|
এর মাঝেই কেটেছে আরো বেশ কিছুদিন। অনার্স প্রথম বর্ষের ফাইনাই এক্সাম চলছে। আজকেই আয়াতের লাস্ট এক্সাম। এক্সাম দিয়ে মাত্রই ক্লাস থেকে বের হলো আয়াত৷ আকাশে মেঘ করেছে। যখন তখন বৃষ্টি হতে পারে। বিয়ের আগে প্রায়ই আয়াত আর ইরা বৃষ্টিতে ভিজতো। কিন্তু এখন আর বৃষ্টিতে ভেজা হয় না। তপ্ত শ্বাস ফেললো আয়াত। এদিক সেদিক তাকিয়ে রাফিয়াকে খোঁজার চেষ্টা চালালো। না পেয়ে ব্যগ থেকে ফোন বের করে ফোন করলো রাফিয়াকে,
–“হ্যাঁ আয়ু বল।”
–“কোথায় তুই? দেখছি না যে।”
–“ক্যানটিনে চলে আয়, শানও এখানেই আছে।”
আয়াত লাইন কেটে দিয়ে ফোন ব্যাগে রেখে দিলো। তারপর হাঁটা লাগালো ক্যানটিনের দিকে। একটা চেয়ার টেনে বসলো আয়াত। এক্সামের ব্যাপারে কথা হলো সকলের মাঝে কিছুক্ষণ। ওদের সকলের এক্সামই মোটামুটি ভালো হয়েছে। শান জিজ্ঞেস করলো,
–“কি অর্ডার দিবো আয়ু ভাবী?”
–“কফি হলেই হবে।”
শান গিয়ে আয়াত আর ওর জন্য কফি এবং রাফিয়ার জন্য স্যান্ডউইচ অর্ডার দিয়ে আসলো। মিনিট দশেক বাদে কফি আর স্যান্ডউইচ দিয়ে গেলো। পরিবেশ অন্ধকার হয়ে এসেছে। বাইরে ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছে। রাফিয়া এক বাইট স্যান্ডউইচ মুখে নিয়ে বললো,
–“ওয়েদারটা কি সুন্দর না?”
আয়াত মুচকি হাসলো। প্রকৃতিতে দৃষ্টি রেখে কফিতে এক চুমুক দিয়ে বললো,
–“ভীষণ সুন্দর। বৃষ্টির থেকে বৃষ্টি আসার আগ মূহুর্তটাই বেশি সুন্দর।”
বলতে বলতেই বৃষ্টির ফোঁটা পড়তে শুরু করলো। আয়াত বেশ উৎফুল্ল মনে কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর বৃষ্টি দেখছে। ধীরে ধীরে বৃষ্টির বেগ বাড়তে শুরু করলো। আয়াত কফিতে শেষ চুমুক দিয়ে বললো,
–“শান বৃষ্টিতে ভিজবে?”
–“ভিজতে চাও?”
শানের জবাবে আয়াত মৃদু হেসে মাথা নাড়ালো। রাফিয়া জানালো ও বৃষ্টিতে ভিজবে৷ শান একগাল হেসে বললো,
–“তাহলে চলো ভিজি।”
শান উঠে গিয়ে খাবারের দাম দিয়ে আসলো। তারপর তিনজন মিলে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। শান বললো,
–“ওয়ান, টু, থ্রী___”.
বলতে বলতেই তিনজনে একসাথে দৌড়ে মাঠে নেমে গেলো। তিনজনে মন খুলে বৃষ্টিতে ভিজছে। আনন্দ করছে। বৃষ্টিতে জমে যাওয়া পানিতে লাফাচ্ছে। ওদের তিনজনের দেখা-দেখি তে আরো কয়েকজন স্টুডেন্টস নেমে গেলো মাঠে, বৃষ্টিতে ভেজার জন্য। মুষলধারে বৃষ্টি হতে শুরু করলো। শান বললো,
–“এবার চলো বাসায় যাওয়া যাক।”
আয়াত আবদারের স্বরে বললো,
–“বাসা তো বেশি দূরে না, চলো না ভিজতে ভিজতেই যাই।”
–“পাগল তুমি? ভাইয়া দেখলে খবর আছে।”
–“তোমার ভাইয়াকে আমি দেখে নিবো চলো না প্লিজ।”
আয়াতের কথা আর ফেলতে পারলো না শান। রাফিয়াও আয়াতের সাথে তাল মেলাচ্ছে। তাই রাজি হয়ে গেলো শান৷ ভাবলো বৃষ্টির পর এসে বাইক নিয়ে যাবে৷ জনমানবহীন রাস্তা। আশেপাশের কিছু কিছু দোকানের সাটার নামিয়ে রেখেছে বৃষ্টির কারণে। কিছু কিছু মানুষ বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ছাউনির নিচে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। আয়াত ওরা ভিজতে ভিজতে কিছুদূর যাওয়ার পরই ওদের সামনে একটা গাড়ি এসে থামলো। ওদের কারোরই বুঝতে অসুবিধা হলো না এটা শ্রাবণের গাড়ি। শান আর রাফিয়া শুকনো ঢোক গিললো। শ্রাবণ গাড়ির কাঁচ নামিয়ে ওদের উদ্দেশ্য করে থমথমে গলায় বললো,
–“বৃষ্টিতে ভিজে অসুখ বাঁধানোর প্ল্যান তিনজনের?”
আয়াত কিছু বলতে চাইলে শ্রাবণ বললো,
–“নো সাউন্ড, এই বৃষ্টিতে ভিজে যদি তিনজনের একটারও জ্বর এসেছে তাহলে তিনটাকেই জ্বর শরীরে দুই ঘন্টা করে সুইমিংপুলে সাতার কাটাবো।”
শ্রাবণের এহেন কথায় কেউ আর কোনো টু শব্দ করলো না। শ্রাবণ আবারো বললো,
–“যেমন ভাবী তার তেমন দেবর জুটেছে কপালে। দুজনেই এক।”
শান আর আয়াতকে কথা শোনানোতে রাফিয়ে মুখ টিপে হাসলো। শ্রাবণ রাফিয়াকে এক ধমক দিয়ে বললো,
–“তুই হাসছিস কেন? তুই আয়াতের বোন তাই তুইও যে ওর মতোই হবি এটা আর আলাদা করে বলার প্রয়োজন মনে করছি না আমি।”
রাফিয়ার মুখটা চুপসে গেলো। শ্রাবণ এক ধমকে তিনটাকেই গাড়িতে উঠে বসতে বললো। শান বললো,
–“তুমি ভাবীকে নিয়ে যাও। ক্যাম্পাসে বাইক রেখে এসেছি আমরা বাইকে করে আসছি।”
শ্রাবণ আয়াতকে গাড়িতে উঠে বসতে বললো। আয়াত চুপচাপ বাধ্য মেয়ের মতো গাড়িতে উঠে বসলো। রাফিয়া শানকে বললো,
–“আমি তোর সাথে যাবো না।”
কথাটা বলে রাফিয়া গাড়িতে উঠতে গেলেই শান ওর হাত টেনে ধরে ক্যাম্পাসের দিকে হাঁটা ধরে। ওদের যেতে দেখে শ্রাবণ গাড়ি স্টার্ট দিলো। রাফিয়া নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
–“তুই আমাকে এভাবে টেনে নিয়ে আসলি কেন হারামি।”
–“এত্ত সুন্দর ওয়েদার, ভাইয়া ভাবীকে একটু প্রাইভেসি দেওয়ার দরকার না? তোর মাথায় তো গোবর ভরা, গাধী একটা।”
রাফিয়া চোখ কটমট করে তাকালো শানের দিকে। শান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে পার্কিং এরিয়া থেকে বাইক নিয়ে এসে রাফিয়ার সামনে থামাতেই রাফিয়া বাইকে চেপে বসলো।
–
শ্রাবণ একমনে গাড়ি চালাচ্ছে। আর আয়াত গাল ফুলিয়ে বৃষ্টি দেখছে। ভেবেছিলো আজ অনেক দিন পর মন ভরে বৃষ্টিতে ভিজবে কিন্তু এই লোকটার জন্য পারলো না। বাসার সামনে এসে শ্রাবণ গাড়ি থামালো। দারোয়ান এসে শ্রাবণের হাতে ছাতা দিয়ে গেলো। আয়াত কাঁদোকাঁদো চেহারা বানিয়ে বললো,
–“প্লিজ এখন একটু অন্তত ভিজি?”
–“এমনিতেই ভিজে চুপসে আছো। আরো বেশি ভিজলে সত্যিই জ্বর আসবে।”
–“প্লিজ, বেশি না পাঁচ মিনিট।”
আয়াতের আবদার যেন ফেলতে পারলো না শ্রাবণ। তাই চোখের ইশারায় সায় জানালো। আয়াত খুশি হয়ে নামতে গেলেই শ্রাবণ গম্ভীর স্বরে বললো,
–“মাত্র পাঁচ মিনিট কিন্তু।”
আয়াত মাথা নাড়িয়ে নেমে যায়। গার্ডেনে একা একা বৃষ্টিবিলাশ করছে ও। কিন্তু ওর ভালো লাগছে না একা ভিজতে। তাই শ্রাবণের কাছে দৌড়ে গেলো। শ্রাবণ বাসার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছাতা বন্ধ করছিলো। সেসময়ে আয়াত শ্রাবণের হাত ধরে বললো,
–“প্লিজ আপনিও ভিজুন, একা বৃষ্টিতে ভিজে মজা নেই। পার্টনার দরকার একজন।”
কথাগুলো বলে শ্রাবণকে টেনে নিয়ে গার্ডেনের দিকে চলে গেলো আয়াত৷ দুদিকে হাত মেলে দিয়ে বৃষ্টিকে উপভোগ করছে আয়াত। আর শ্রাবণ মুগ্ধ চোখে আয়াতকে দেখছে৷ শ্রাবণকে ওভাবে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আয়াত এগিয়ে আসলো শ্রাবণের। শ্রাবণের দুহাত ধরে গোলগোল হয়ে ঘুরতে লাগলো শ্রাবণকে নিয়ে।
শান আর রাফিয়ে সবেই বাড়ি ফিরেছে৷ রাফিয়া নিজের বাসায় চলে গেছে আর শান বাইক পার্ক করে সোজা ভিতরে চলে গেছে। গার্ডেনের চোখ যায়নি ওর তাই শ্রাবণ আর আয়াতকে দেখতে পায়নি। সানিয়া মেহরাব জানালার ধারে দাঁড়িয়ে শ্রাবণ আর আয়াতকে এভাবে একসাথে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে মুচকি হাসলো৷ যাক শ্রাবণটা এবার অন্তত কাজ থেকে একটু বেরিয়ে বউয়ের দিকে নজর দিচ্ছে। সম্পর্ক আগের তুলনায় অনেক বেশি স্বাভাবিক হয়েছে। সানিয়া মেহরাবকে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসতে দেখে শান এগিয়ে গেলো সেদিকে। মায়ের দৃষ্টি অনুসরণ করে শানও গার্ডেনের দিকে তাকিয়ে শ্রাবণ আর আয়াতকে দেখতে পেলো। শান বললো,
–“যাক অবশেষে তোমার রসকষহীন ছেলেটা রোমান্টিক হচ্ছে।”
শানের কথায় সানিয়া মেহরাব শানের পিঠে থাপ্পড় মেরে আলতো হেসে বললো,
–“ও তোর বড় ভাই হয় অসভ্য।”
শান মুখ বাকিয়ে বললো,
–“হ্যাঁ বড় ভাই দেখেই যা ইচ্ছে বলতে/করতে পারে। একটু আগেই আমাদের সবাইকে ধমকালো বৃষ্টিতে ভেজার জন্য। আর এখন সে নিজেই বউয়ের সাথে বৃষ্টি বিলাস করছে।”
–“হয়েছে হয়েছে, এবার তাড়াতাড়ি ভেজা জামা কাপড় ছেড়ে অন্যগুলো পড়ে নে।”
শান চলে যেতে নিয়েও আবার পিছু ফিরে বললো,
–“আম্মু, লাঞ্চে তোমার হাতের খিচুড়ি আর ইলিস আর বেগুন ভাজা চাই কিন্তু।”
–“সব রেডি আছে, ফ্রেশ হয়ে আয় দ্রুত।”
শান হেসে চলে গেলো। সানিয়া মেহরাব আরো একবার বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা শ্রাবণ আর আয়াতকে দেখে মুচকি হেসে নিজের রুমে চলে গেলো।
শ্রাবণ এবার আয়াতের হাত ধরে বললো,
–“অনেক হয়েছে এবার চলো।”
কথাটা বলেই আয়াতের হাত ধরে টানতে টানতেই বাসার ভিতর চলে গেলো। শ্রাবণ আয়াতকে ফ্রেশ হতে বললে আয়াত বললো,
–“আগে আপনি যান প্লিজ, আমি ততক্ষণে ব্যালকোনিতে গিয়ে আর একটু__”
–“একদমই না।”
–“প্লিজ।”
শ্রাবণ কিছুক্ষণ নিরব থেকে বললো,
–“আজ সব অন্যায় আবদার মেনে নিচ্ছি বলে ভেবো না সবসময় তোমার এরকম আবদার আমি মেনে নিবো।”
কথাটা বলেই টাওজার আর টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। আয়াত খুশি হয়ে ব্যালকোনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। বৃষ্টির বেগ আরো বাড়ছে। আয়াত হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানি ধরার প্রয়াশ চালালো। বাতাসের সাথে ছিটে আসা বৃষ্টির পানিগুলো আয়াতের শরীরে এসে লাগতেই আয়াত কেঁপে উঠে। রেলিঙে দুহাত রেখে চোখ বন্ধ করে আয়াত বৃষ্টিটাকে গভীর ভাবে উপভোগ করছে।
শুধু টাওজার পড়ে গলায় টাওয়াল ঝুলিয়ে চুল মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলো শ্রাবণ। ব্যালকোনিতে তাকাতেই আয়াতকে দেখে চোখ আটকে গেলো ওর। ভেজা কূর্তিটা গায়ের সাথে লেপ্টে আছে একদম। বাতাসের সাথে বৃষ্টির ফোঁটা এসে মুখে লাগতেই আয়াতের ঠোঁট জোড়া মৃদু কেঁপে উঠলো। সারা মুখ জুড়ে বিন্দু বিন্দু পানির ফোঁটাগুলো যেন একেকটা মুক্তোর দানার মতো চকচক করছে আয়াতের সারা মুখশ্রীতে। এই বিন্দু বিন্দু মুক্তোর দানার মতো পানি গুলোই যেন এই মূহুর্তে আয়াতের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তুলেছে। এই মূহুর্তে আয়াতকে খুব বেশি আকর্ষণীয় লাগছে শ্রাবণের কাছে। আয়াতের এমন রুপ দেখে একটা শুকনো ঢোক গিললো শ্রাবণ। তারপর গলায় ঝোলানো টাওয়ালটা ছুড়ে সোফার এককোনে ফেলে রেখে এগিয়ে গেলো আয়াতের দিকে।
শ্রাবণ আয়াতকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরাতে আয়াত চমকে গিয়ে চোখ মেলে তাকালো। আয়াতের কাঁধে মুখ গুজে দিয়ে দুই হাতে আয়াতের পেট খামচে ধরলো শ্রাবণ। শ্রাবণের আচমকা এমন স্পর্শে আয়াতের মনের ভিতর তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো। সারা শরীরে কম্পন সৃষ্টি হলো। আয়াত শক্ত করে ওর কূর্তি খামচে ধরে আছে। শ্রাবণ আয়াতকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো আয়াতের ঠোঁটে চুমু খেতে। বেশ কিছুক্ষণ পর আয়াতের ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে ভালো করে তাকালো ওর দিকে। আয়াত তখন নিচ দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছিলো। শ্রাবণ বাঁকা হেসে আয়াতকে একটানে কোলে তুলে নিয়ে আয়াতের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
–“আমাদের মধ্যকার সকল দূরত্ব ঘুচিয়ে দিবো আজ। বিন্দু পরিমান ফারাকও রাখবো না আর আমাদের মাঝে।”
কথাটা বলে রুমের দিকে পা বাড়ালো শ্রাবণ। আজকে হুট করেই একরাশ লজ্জা এসে যেন আয়াতকে জাপ্টে ধরেছে। শ্রাবণের চোখের দিকে তাকাতে পারছে না ও। দুহাতে শ্রাবণের গলা জড়িয়ে ধরে শ্রাবণের বুকে মাথা রাখলো আয়াত। শ্রাবণ মুচকি হেসে অগ্রসর হতে লাগলো বিছানার দিকে।
–
শ্রাবণ ফ্রেশ হচ্ছে। আয়াত আগেই ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে। আয়াত কাবার্ড থেকে একটা বেডশিট বের করে ভেজা বেডশিট পাল্টে ফেললো। ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ পেয়ে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। আয়াতকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে দেখে শ্রাবণ মুচকি হাসলো। তারপর চুলগুলো ভালো করে মুছে টি-শার্ট পড়ে নিলো। আয়াত নিচে নেমে স্বস্তির শ্বাস নিলো। আজকে লোকটার সামনে যেতে ওর ভীষণ লজ্জা লাগছে। আজ দুজনে এতটা কাছে আসাটাই কি এই লজ্জার কারণ? আয়াত এসব চিন্তাভাবনা মাথা থেকে সরিয়ে দিলো। লজ্জার কি আছে? নিজের স্বামীই তো স্পর্শ করেছে। আর হালাল ভাবেই স্পর্শ করেছে৷ স্বামী স্ত্রী দুজনে, তাই আজ হোক আর কাল হোক একদিন তো ঠিকই একে অপরের কাছে আসতে হতো৷ এই ভেবে চেয়ার টেনে বসলো আয়াত৷ শান আয়াতের দিকে ঝুঁকে ফিসফিস করে বললো,
–“আয়ু ভাবী? তোমরা ফ্রেশ হতে রুমে গেছো অনেক আগে। এত সময় লাগলো যে নিচে আসতে? রোমান্স করছিলে বুঝি?”
আয়াত প্রথমে চোখ রাঙিয়ে তাকালো শানের দিকে। তারপর শানের দিকে ঝুঁকে দুষ্টু হেসে বললো,
–“এত সুন্দর ওয়েদার, বাইরে এখনো মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। রোমান্স করাটা কি অস্বাভাবিক কিছু?”
শান আলতো হেসে মাথা নাড়িয়ে সোজা হয়ে বসলো। আয়াতও মুখ টিপে হাসলো। শ্রাবণ ততক্ষণে এসে বসেছে আয়াতের পাশে। আয়াত দাঁড়িয়ে খাবার বেড়ে দিলো সবার প্লেটে৷ সানিয়া মেহরাব আজ নিজের হাতে খিচুড়ি, গরুর গোশত ভূনা, ইলিশ ভাজা এবং বেগুন ভাজা করেছে। বৃষ্টির দিনে শ্রাবণ আর শান মায়ের হাতের খিচুড়ি সাথে ইলিশ মাছ আর বেগুন ভাজা পছন্দ করে খুব। তাই বৃষ্টি হলেই তিনি খুব যত্নসহকারে এসব রান্না করে দুই ছেলের জন্য। আজও এর ব্যতিক্রম হয়নি। সবাই একসাথে বেশ তৃপ্তি করে খাচ্ছে। এক পর্যায়ে শ্রাবণ খেতে খেতেই আয়াতের দিকে ক্ষানিকটা এগিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,
–“চুলগুলো সামনে এনে রাখলেও পারতে। গলার ডানপাশের লালচে দাগটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, এগুলো কি সবাইকে দেখানোর জিনিস, বিয়ে করা বউ?”
কথাগুলো বলে শ্রাবণ নিজেই আয়াতের চুলগুলো সামনে এনে দিলো। এদিকে শ্রাবণের কথা শুনেই আয়াতের গলায় খাবার আটকে গেলো৷ শান দ্রুত এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো আয়াতের দিকে। সানিয়া মেহরাব উঠে গিয়ে আয়াতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।
চলবে~