একটি অপ্রেমের গল্প পর্ব-১৬

0
163

#একটি_অপ্রেমের_গল্প
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
১৬।

অন্বিতাকে এত তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে দেখে খানিকটা অবাক হন আসিয়া বেগম। জিজ্ঞেস করেন,

‘এই সময় একা এলি কী করে?’

অন্বিতা ভেতরে এসে বলল,

‘মাহিরের গাড়িতে করে এসেছি।’

‘যাক, নিশ্চিন্ত হলাম। এবার ফ্রেশ হয়ে নে, আমি খাবার দিচ্ছি।’

‘আমি খেয়ে এসেছি, মা। তুমি শুয়ে পড়ো।’

‘আর কিছুই খাবি না?’

‘না না, পেট একেবারে ফুল।’

‘বেশ তবে, ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড় গিয়ে।’

________

সবেই জ্ঞান ফিরেছে অমিতের। চোখ খুলেই সম্মুখে সে তার বন্ধু অনয়কে দেখল। আশ্বস্ত হলো সে। অনয় উদ্বিগ্ন সুরে বলল,

‘কী করে হলো এসব?’

ক্লান্ত, ক্ষীণ সুরে অমিত বলল,

‘রাস্তা পার হতে গিয়ে।’

‘একটু দেখে পার হবি না? কী অবস্থা হয়েছে, দেখেছিস?’

‘আমি তো আর ইচ্ছে করে করেনি।’

‘হয়েছে, তোকে আর কিছু বলতে হবে না। বাইরে ঐ লোকটা আছে, যার গাড়ির সাথে তোর এক্সিডেন্ট’টা হয়েছে। পুলিশ ডেকে মামলা দিব ভাবছি।’

‘না না, দরকার নেই। উনার কোনো দোষ ছিল না, উনি আমাকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি। উনাকে চলে যেতে বল।’

অনয় উঠে দাঁড়াল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

‘তোর মতো ভালো মানুষের অভাব বলেই দুনিয়ার আজ এই অবস্থা।’

এই বলে সে রিসেপশনের দিকে গেল। নার্স একজন এল কেবিনে। অমিতের পালস্ চেক করে বলল,

‘কোনো অসুবিধা হলে জানাবেন। আর কিছুক্ষণ পর আপনাকে খাবার দেওয়া হবে।’

‘ঠিক আছে।’

লোকটার সাথে কথা বলে অয়ন কেবিনে ফিরে আসে। অমিত আশেপাশে চোখ বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে,

‘আমি কোন হাসপাতালে আছি বল তো?’

‘অপরাজিতা নার্সিংহোমে।’

কিঞ্চিৎ হাসল অমিত। অয়ন ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘এই অবস্থাতেও তুই হাসছিস?’

‘এখানে কে কাজ করে জানিস?’

‘কে?’

‘অন্বিতা।’

‘তো?’

অমিত ফের হাসল। অয়ন তার পেটে গুতা দিয়ে বলল,

‘শা* হারামী, এই অবস্থাতেও মুখ দিয়ে হাসি বের হয়। আন্টিকে ফোন দিয়ে বলব আমি?’

‘আরে না না, মা’কে ভুলেও কিছু জানাস না।’

‘তাহলে ভদ্র ছেলের মতো ভেটকানো বন্ধ করে রেস্ট নে।’

অমিত এক পল চুপ থেকে ফের ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘অন্বিতা কই রে?’

‘আশ্চর্য, সেটা আমি কী করে বলব?’

খানিকা চওড়া গলায় বলল অনয়। অমিত ঠোঁট চেপে হাসি আটকাল। বলল,

‘রাগছিস কেন? এত বড়ো একটা সুযোগ কি হাতছাড়া করা যায়, বল? আসার পর তুই দেখেছিস তাকে?’

অনয় ক্ষুব্ধ হয়ে সোফায় বসল। ক্ষিপ্ত সুরে বলল,

‘না, তুই আর মানুষ হবি না।’

অমিত একটু জোরে হাসতে নিলেই মাথায় চাপ লাগে তার। “উহ” বলে থেমে যায় সে। অনয় দাঁত খিঁচে বলে,

‘একেবারে ঠিক হয়েছে। আরো হাস, হাসতে হাসতে মাথার সেলাইটা খুলে ফেল।’

অমিত উদ্বিগ্ন সুরে জিজ্ঞেস করল,

‘মাথায় সেলাই লেগেছে?’

‘তো কী বলছি? দুই ভাগ হয়ে গিয়েছিল মাথা, পরে সেলাই করে জোড়া লাগিয়েছে।’

অমিত কপাল কুঁচকে বলে,

‘এবার বেশি বলছিস। দুই ভাগ হয়ে গেলে আমি বাঁচতাম না-কি?’

‘এখন কি তোর বেঁচে যাওয়া নিয়ে আফসোস হচ্ছে?’

‘একেবারেই না। অন্বিতার জন্য তো আমাকে বাঁচতেই হতো, তাই না?’

এই বলে চোখ টিপ দিল সে। অনয় রাগে জ্বলে উঠে বলল,

‘ভাই, সবে এত বড়ো একটা অপারেশন থেকে বের হয়েছিস। তোর মাথাটাকে একটু রেস্ট নে, দয়া করে।’

অমিত মুখ কালো করে বলে,

‘তোর সাথে কথা বলে শান্তি নেই। অন্বিতা থাকলে আমাকে বুঝতো।’

‘আরে আমার বাপ, মেয়েটার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।’

‘তো কী হয়েছে, বিয়ে তো আর হয়ে যায়নি।’

‘কী আশ্চর্য, এক্সিডেন্টের পর কি মাথাটা তোর পুরোপুরি’ই নষ্ট হয়ে গিয়েছে?’

‘না তো। আমি একেবারে ঠিক আছি, আর সুস্থ মস্তিষ্কে সঠিক কথা বলছি।’

অনয় উঠে দাঁড়াল। এই ছেলের সাথে কথা বলে এবার তার উল্টো মাথা ধরেছে। সে বলল,

‘রেস্ট নে তুই, আমি কফি নিয়ে আসি।’

‘দেখিস, অন্বিতাকে পাস কি-না। ওর আজকে নাইট ডিউটি ছিল।’

অনয় জবাব না দিয়েই বেরিয়ে এল। কেবিনে শুয়ে শুয়ে তা দেখে হাসল অমিত।

__________

আজ একটু বেলা করেই হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে অন্বিতা। রোদ বেশ। গাড়িতে থাকায় এই তপ্ত গরম থেকে বেঁচে গিয়েছে যদিও। সে নার্সিংহোমে নেমেই আগে গেল অমিতের সাথে দেখা করতে। কেবিনের দরজায় দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘আসব?’

তার গলা পেয়ে অমিত, অনয় দুজনেই দরজার দিকে তাকায়। অমিত হেসে বলে,

‘আসুন না, অনুমতি নিতে হবে না।’

অন্বিতা তার বেডের কাছে গেল। জিজ্ঞেস করল,

‘কেমন আছেন এখন?’

‘অনেক ভালো। এই যে দেখুন, আমার বন্ধু কী চমৎকার সেবা যত্ন করছে। এমন সেবা যত্নেরও পরেও কেউ খারাপ থেকে পারে?’

স্যুপের বাটিটা পাশে রেখে অনয় ধীর গলায় বলল,

‘বাজে কথা কম বলিস।’

অমিত অন্বিতার দিকে চেয়ে বলল,

‘আমি কি আপনাকে একটাও বাজে কথা বলেছি, বলুন তো?’

অন্বিতা বিস্ময় নিয়ে বলল,

‘না তো, কেন?’

অনয় দাঁত কটমট করে অমিতের দিকে তাকায়। অমিত হেসে বলে,

‘আমার বন্ধু বলছিল। যাকগে সেসব, কালকে না আপনার নাইট ডিউটি ছিল, তবে তাড়াতাড়ি চলে গেলেন যে?’

‘স্যার বলেছিলেন, তাই।’

‘স্যার কে?’

‘মাহির আশহাব। এই নার্সিংহোমের ওনার।’

‘ওহ আচ্ছা। আপনি উনার আন্ডারেই আছেন?’

‘জি।’

‘কোন ডিপার্টমেন্ট?’

‘কার্ডিওলজি।’

‘এখন তো মনে হচ্ছে ব্যথাটা মাথায় না পেয়ে বুকে পেলে ভালো হতো।’

ক্ষীণ আওয়াজে বলল অমিত। অন্বিতার কানে না গেলেও অনয়ের কানে ঠিকই পৌঁছেছে তা। সে নাক ফুলিয়ে চোয়াল শক্ত করে তাকাতেই হাসল অমিত। অন্বিতা জিজ্ঞেস করল,

‘কিছু বললেন?’

‘না, তেমন কিছু না।’

‘আপনারা নাস্তা করেছেন?’

‘জি। নাস্তা অনেক আগেই শেষ।’

‘ঠিক আছে, রেস্ট করুন তবে। আমি কাজে যাই।’

‘আচ্ছা, আসুন।’

অন্বিতা বেরিয়ে এল কেবিন থেকে। অনয় ক্ষুব্ধ গলায় বলল,

‘তোর মতো বেহায়া, বেয়াদব ছেলে আর একটাও দেখেনি আমি।’

‘এখন দেখে নে তবে।’

অনয় উঠে দাঁড়াল। বলল,

‘আমি আর তোর সাথে কথাই বলব না।’

এই বলে সে সোফায় গিয়ে বসল।

,

একটা ছোট্ট অপারেশন অনুশীলনের জন্য সকল ইন্টার্ন ডাক্তারদের অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়েছে। মাহিরও এসেছে তাদের দেখিয়ে দেওয়ার জন্য। সবার সামনে অনেক যন্ত্রপাতি রাখা। মাহির একটা একটা করে তুলে দেখাচ্ছে সব। সবাই যন্ত্রপাতিগুলো তার কথামতো নাড়িয়ে চাড়িয়ে দেখে নিচ্ছে। স্ক্যাল্পেল’টা হাতে নেয় মাহির। এটা দিয়ে একটা নরম বস্তু কেটে দেখায়। সবাইকে একই কাজ করতে বলে। মাহিরের অভিজ্ঞতা আছে বলে খুব সহজেই কেটে ফেললেও বাকিদের খানিকটা বেগ পোহাতে হচ্ছে। অন্বিতা কাজটা সহজ করার জন্য সেই বস্তুটাকে হাতে নিয়ে কাটতে গেল। হাত নিচে রেখে একটু চাপ দিয়ে স্ক্যাল্পেল’টা চালাতেই সেটা কেটে গেল সুন্দর মতো। খুশি হলো অন্বিতা। হাত বের করে বস্তুটা পাশে রাখতে নিলেই খেয়াল করল, কেবল সেই জিনিসটাই কাটেনি, কেটেছে তার হাতও।

চলবে…