একটি শব্দ
লাবিবা আল তাসফি
(৩)
৬.
আকাশে ঝকঝকে রোদ উঠেছে। মাজায় ব্যাথা নিয়েও নুপুর আজ বেশ কিছু কাপড় ধুয়েছে। অধিকাংশই বিছানার চাদর আর পর্দা। পুতুল মেয়েটা কথা শোনে না। কতদিন ধরে এগুলো ধুয়ে দিতে বললেও এড়িয়ে গেছে। নুপুর কেন যেন রাগ করতে পারে না মেয়েটার উপর। বয়সে পুতুল নুপুরের থেকে অনেকটাই ছোট। বাবা নেই। বাড়িতে বৃদ্ধা মা। তিনি চলাফেরা করতে পারেন না। পুতুলের আয়ের উপর মা মেয়ের সংসার চলে। এজন্যই হয়তো নুপুরের এমন কোমল আচরণ পুতুলের প্রতি!
ভেজা কাপড় ছাদে টানানো দড়িতে নাড়তে নাড়তে চোখ কুঁচকে ফেললো নুপুর। সূর্যটা ঠিক মাথার উপর। আলো সরাসরি এসে চোখে বিঁধছে। নুপুর এক হাতের সাহায্যে রোদের আড়াল হতে চেষ্টা করলো। তখনি ছাদে এলো অন্য ফ্লাটের একজন মহিলা। নুপুরের সাথে এই বাড়ির কোনো ফ্লাটের মানুষের সাথেই তেমন সখ্যতা নেই। নুপুর কথা কম বলে। ছোট থেকেই সে মানুষের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে শিখেছে। বাড়ির অন্য সবার থেকে অবশ্য এই মহিলাটিকে সে ভালো চেনে। তাকে বাড়ির সকলে মিতা আপা বলে ডাকে। নুপুরদের ফ্লাটে প্রায়শই লবণ,তেল সহ টুকিটাকি জিনিসের জন্য আসেন তিনি। দু পাঁচ মিনিটের জন্য বসে টুকিটাকি গল্পও করেন। এই যেমন আজ কি রান্না করেছেন, তার স্বামী ভোলা স্বভাবের জন্য তেল না কিনে ফিরে এসেছেন, নতুন কেনা শাড়িটা কিনে ঠকে গিয়েছে কিনা ইত্যাদি। নুপুরের তাকে শোনানোর মতো গল্প না থাকায় গল্প বেশিদূর আগাতো না।
‘ভাবী নাকি? অসুস্থ মনে হচ্ছে যে?’
নুপুর হেসে জবাব দেয়,
‘ঠিক অসুস্থ না। তবে মাজার ব্যাথাটা হালকা বেড়েছে।’
মিতা ছাদের দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ায়। তার কৌতূহলী চোখ দুটো কিছু একটা বলার আশায় উদগ্রীব হয়ে আছে। নুপুরও বিষয়টি লক্ষ্য করল। তবে সে ভেবে পেল না এমন কি কথা জানতে চাইতে আগ্রহী মিতা?
‘ভাইয়া কোথায়? অফিসে?’
নুপুর জবাবে মুচকি হেসে মাথা নাড়ে। মিতু পুনরায় বলে,
‘ভাইয়া কি কাজ করেন?’
নুপুর বুঝতে না পেরে বলে,
‘জ্বী?’
‘মানে ভাইয়া কোন পোস্টে আছেন?’
‘অডিট অফিসার।’
জবাবে মিতু কেমন করে হাসলো। উপহাসের সুরে বললো,
‘তাহলে তো মোটা ইনকাম করে। দু হাত ভরা টাকা আছে দেখেই এই নারী ঐ নারীর পেছনে খরচ করার সময় হয়। আমাদের জনের ইনকাম যা তা দিয়ে টায় টায় সংসার চলে। বিলাসীতা করার সুযোগ নাই। হাতে অঢেল টাকাও থাকে না, অন্য নারীর দিকে তাকানোর সুযোগ ও হয় না।’
নুপুরের মনে হলো তার বুকের ভেতরটা কে যেন খেমচে ধরলো। কথাগুলোর তিক্তটা যেন ব্লেডের থেকেও ধারালো। নুপুরের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। পা যেন দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। এত নিষ্ঠুর শব্দগুলো কেন তাকে শুনতে হলো। কেন তার স্বামীকে এত নিষ্ঠুর ভাবে জাজ করা হচ্ছে? কেন?
মিতু নুপুরকে দিকে বেদনার চোখে তাকালো। শান্তনার কন্ঠে বললো,
‘ওসব নিয়ে আর ভাববেন না ভাবী। পুরুষ মানুষ কুকুরের সমান। তাদের অনৈতিক কাজ কর্ম নিয়ে ভেবে নিজেদের মনের অশান্তি বাড়ানোর কি দরকার? নিরবে মেনে নেন। আমারা তো চাইলেই বরকে দুই কথা শুনিয়ে বাপের বাড়িতে উঠতে পারি। আপনার তো সেই জায়গাটুকুও নেই। এখানেই ধৈর্য ধরে মাটি কামড়ে পড়ে থাকেন। নিজের জায়গা আগলে রাখেন। ।’
নুপুরের বুকটা দ্বিতীয় বারের মতো কাঁপল। তবে এবার সে চুপ থাকলো না। শক্ত গলায় বললো,
‘আপনি ঠিক কোন ধারণা নিয়ে আমার স্বামীর বিষয়ে এতগুলো কথা বললেন তা আমার ঠিক জানা নেই। তবে আমার স্বামী যদি কোনো অন্যায় করে থাকে সেটা আমি আমার মতো করে সামাল দিব। বাইরের একজন মানুষের থেকে নিজ স্বামীর বিষয়ে এসব কথা শোনা মোটেও আনন্দের বিষয় নয়। এ ধরণের কথা কাউকে বলার আগে অবশ্যই ভেবে দেখবেন। আপনার কথাগুলো সত্যি হলে হয়তো আমার জীবন রূপ বদলাবে কিন্তু যদি মিথ্যা হয়? এই অপমান, তিক্ততা কি দিয়ে পোষাবেন?’
মিতার মুখ খানিকটা চুপসে এলো। সে নিজের পিঠ বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠল। বলতে শুরু করল,
‘আমি আপনাকে আঘাত করতে চাইনি ভাবী। ভুল বুঝবেন না। এই পুরো বাড়িতে আমনার সাথেই আমার একটা আন্তরিক সম্পর্ক আছে। পুতুলের মুখে আপনার সংসারের এই হালের কথা শোনার পর থেকে আমি ঠিক করে ঘুমাতে পারি না। বাচ্চার বাপ ফিরতে দেরী করলেই প্রেশার বেড়ে যায়। আপনি কোন পরিস্থিতিতে যাচ্ছেন তা বুঝতেই পারছি। লজ্জার কারণে কাউকে বলতে পারছেন না সেটাও বুঝি। কিন্তু ভাবী, আপনি যে কোনো সময় আমার কাছে আসতে পারেন। আমি…’
‘আমার সংসারে তেমন কিছুই ঘটেনি। আমি মানসিক, শারীরিক কোনোভাবেই অশান্তিতে নেই। প্লিজ এত ভাববেন না।’
নুপুর বালতিতে থাকা অবশিষ্ট কাপড়গুলো না টানিয়েই বালতি হাতে ছাদ থেকে নেমে এলো। তার হাত পা কাঁপছে। এতটা সময় সে কিভাবে ওখানে দাঁড়িয়ে ছিল তা একমাত্র সে এবং তার রব জানেন। নুপুর ফ্লাটে ঢুকেই মেঝেতে বসে পরে। বুকের ভেতরটা কেমন দুমড়ে মুচড়ে আসছে। প্রথমে পুতুল এখন আবার মিতা। ঠিক কি হচ্ছে? এই মানুষগুলো তার সরল স্বভাবের মানুষটাকে কেন এমন জঘন্য ভাবে ব্যাখ্যা করছে?
৭.
এই চার দুনিয়ায় আপন বলে যদি কোনো শব্দ থাকে সেই শব্দটা কেবল সাকিবকে ব্যাখ্যা করে। সাকিবের সাথে প্রথম সাক্ষাত থেকেই মানুষটা তার ভিষণ আপন। এই অতি আপন মানুষটাকে ছাড়া এক মূহুর্ত নিজেকে কল্পনা করা মুশকিল হয়ে পড়ে। সেখানে সেই মানুষটার বিরুদ্ধে বলা এমন কঠিন কথাগুলো সে কিভাবে সহ্য করবে? নুপুর একবারের জন্যও চায়না সেসব তিক্ত কথায় প্রভাবিত হতে। চায় না সে তার স্বামী নামক মানুষটাকে এমন তিক্ততায় ঘেরা কথায় সামিল করতে। বুকের ভেতরটা আরো ভারী হয়ে আসে।
বেলা গড়াতে চলছে। দুপুরের আজান দিতে বাকি নেই বেশি। পুতুল আজ ছুটি নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে গেছে। তার মা কে নিয়ে খালার বাড়িতে যাবে এমন কিছু বলেছিল। রান্না শেষ। আজকের আয়োজন অল্প। নুপুর মেঝে থেকে উঠে রুমে যেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। ক্লান্ত শরীরে ঘুম ভর করেছে। মস্তিষ্ক ও ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত। কিছুটা বিশ্রাম চাই তার। চোখ বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে। নুপুরের চোখের পাতা বন্ধ হওয়ার আগেই বেল বাজল। কেউ এসেছে। একবার দুবার করে পরপর পাঁচবার বেল বাজলো। দরজার ওপাড়ে যেই হোক না কেন সে ভিষণ ব্যস্ত। নুপুর বিছানা থেকে টেনে তোলে নিজের শরীর। হেঁটে গিয়ে দরজা খুলতেই পুতুল হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢোকে। পুতুলকে এভাবে হাঁপাতে দেখে নুপুর কপালে ভাঁজ ফেলে বলে,
‘এভাবে হাঁপাচ্ছিস কেন? কিছু হয়েছে?’
পুতুল মেঝেতে হাত পা ছড়িয়ে বসে বিলাপের সুরে বললো,
‘সর্বনাশ হইছে সর্বনাশ! কিচ্চু করবার না পাইরে দৌড়াই আপনের কাছে আইলাম।’
নুপুর মন কেমন করে উঠলো। পুতুলের মায়ের কিছু হয়নি তো? এই মেয়েটাও যে তার মতো সর্বহারা হয়ে যাবে!
নুপুর ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করতে করতে বলে,
‘জিড়িয়ে নে। আমি শরবত করে দিচ্ছি। গরম কি বেশি লাগছে? এসি অন করে দেই?’
‘লাগতো না। খালি শরবত হইলেই হইবো।’
পুতুল শরবত খেয়ে বড় করে শ্বাস ফেলে। জামার ভেতর থেকে ছোট একটা ব্যাগ বের করে বেশ পুরতন একটা অ্যান্ড্রয়েড ফোন বের করে ব্যাগ থেকে। নুপুর কোনো কথা ছাড়া পুতুলের কাজ দেখছে। সে আপাতত চিন্তিত। পুতুলের আচরণে মনে হচ্ছেনা তার মায়ের কিছু হয়েছে। তাহলে কি ঘটেছে?
পুতুল ফোন থেকে একটা ছবি বের করে নুপুরের সামনে ধরে। নুপুর এক পলক দেখতেই চিনতে পারে ছবিতে থাকা মানবটিকে। পড়নে হালকা নীল রঙের শার্ট। নুপুরের মনে পড়ে আজ সাকিব এই শার্ট পড়েই বের হয়েছে। কোনো ভয়ংকর কথা শোনার ভয়ে বুকের ভেতরটায় ব্যাথা শুরু হয়। এই ব্যাথা ব্যাখ্যা করার নয়। নুপুর ঢোক গিলে পুতুলের দিকে তাকায়। পুতুল এবার বড় গলায় বলে,
‘আমারে বিশ্বাস করেন না আপনে। এখন কন এইডা ভাইজানে না? এই দেখেন কোন বাড়িতে ঢুকতাছে সে? আমি বাড়ি সহ ফটো তুলছি।’
পরপর অনেকগুলো ছবি। ছবিগুলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সাকিব একটি বাড়ির ভেতরে ঢুকছে। এ বাড়িতেই পুতুল কাজ করে। নুপুর চোখ সরিয়ে নিল। তার ধৈর্য্যর বাঁধ ভেঙেছে। আর সহ্য হচ্ছে না। তার হৃদয় আর নিতে পারছে না। সে চড়া গলায় পুতুলকে বললো,
‘আমি তোকে গোয়েন্দা হতে বলিনি। এখন বাড়িতে যা। আন্টি একা আছেন।’
অন্যসময় হলে পুতুল দু একটা কথা বলতো। কিন্তু নুপুরের মুখের দিকে চেয়ে আজ আর সাহস হলো না। বাধ্য মেয়ের মতো বেরিয়ে গেল। পুতুল যেতেই নুপুর কান্নায় ভেঙে পড়লো। এতদিনের জমিয়ে রাখা অভিমান, অভিযোগ সব কান্নার রূপে বেরিয়ে আসতে লাগলো। এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো এসব কিছুর দ্বায় তার মায়ের। কেন সে নুপুরকে জন্ম দিল আর কেনই বা তাকে একা ফেলে চলে গেল। যখন যাওয়ারই ছিল নুপুরকে সাথে নিয়ে যেত! তাহলে আজ এই ভার সহ্য করতে হতো না। হয়তো সে একটু ভালো থাকতো।
নুপুর অগোছালো পায়ে রুমে যায়। ল্যাগেজ বের করে জামা কাপড় গোছাতে শুরু করে। সাকিব কিভাবে তার সাথে এমনটা করতে পারল? নুপুরের চোখের জল থামতে চাইছে না। সে একহাতে চোখ মুছতে মুছতে অন্যহাতে এলোমেলো ভাবে ব্যাগ গোছাচ্ছে। কোনো কিছু ভাবার মতো মানষিকতা নেই তার। সে আর এই যন্তণা সহ্য করতে পারছে না।
৮.
সন্ধ্যা নেমেছে। আশপাশের মসজিদ থেকে সুমধুর আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে। সাকিব আজ অফিস থেকে দ্রুত লিভ নিয়েছে। তার সাথে আজ কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি রয়েছে। রাস্তা থেকে বাসা পর্যন্ত আসার পুরোটা সময় সে একটা কথাই ভেবেছে, ‘ নুপুর যে খুব কাঁদবে। মেয়েটা ভিষণ আবেগী!’
বেশ কয়েকবার কলিংবেল দিলেও কেউ দরজা খুললো না। সাকিব বাসার এক্সট্রা চাবিটাও আজ নিতে ভুলে গেছে সে। কল দিয়েও কাজ হচ্ছে না। সাকিব চিন্তিত হয়ে পড়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়লো না তো মেয়েটা? অতি চিন্তায় দিকহারা হয়ে সিদ্ধান্ত নিল দরজা ভাঙবে। ঠিক তখনি নুপুর এসে দরজা খুললো। পরনের শাড়ি এলোমেলো। হাত খোপা করা চুলগুলো খুলে পিঠে ছড়িয়ে পড়েছে। চোখ মুখ ফোলা। যেন কয়েকঘন্টা কেঁদেছে। সাকিবের শ্বাস আটকে এলো যেন। কি হয়েছে? এমন কেন লাগছে নুপুরকে?
নুপুর ক্লান্ত চোখে সাকিবকে দেখলো। সাকিবের কোলে একটা বাচ্চা ছেলে। কোলের বাচ্চাটা তার বুকের সাথে লেগে ঘুমিয়ে পড়েছে। পুতুলের বলা ঘটনাকে নিজ চোখের সামনে দেখে অবাক হলোনা নুপুর, ঘাবড়ালোও না। কেবল প্রশ্নবিদ্ধ চোখে চেয়ে রইল। সাকিব পুতুলেও চাহনির অর্থ বুঝলো। সে হাসতে চেষ্টা করলো। বললো,
‘তোমার জন্য কিছু বিশেষ অতিথিদের এনেছি। মাথায় কাপড় দাও।’
নুপুর শাড়ির আঁচল টেনে সুন্দর করে মাথা ঢাকলো। বাহির থেকে একে একে তিনজন বাসার ভেতরে প্রবেশ করলো। এর ভিতর একজনকে নুপুর চেনে। হ্যাঁ, এই একজনকে নুপুর তার বিয়ের পর সবসময় কাছ থেকে দেখতে চাইত। সাকিবের আম্মা হালিমা বেগম। নুপুর তাকে দেখা মাত্রই কেঁদে ফেলল। এমন অতিথি সে সত্যিই আশা করেনি। বাকি দুজনের একজন বেশ মিষ্টি দেখতে একটা মেয়ে এবং পাশে সাকিবের ভাই সাহিল। ঠিক করে লক্ষ্য না করলে যে কেউ তাকে সাকিব ভেবে ভুল করবে। সাহিল হেসে সালাম দিলো। নুপুর তখনো কাঁদছে। নুপুরকে কাঁদতে দেখে হালিমা বেগমের শক্ত মুখ কোমল হয়ে এসেছে। সে কখনোই এই বিয়ে মেনে নিতে চাননি। কিন্তু এমন একটা মেয়েকে সে কিভাবে ফিরিয়ে দিবে?
‘কাঁদেনা মা। তুমি কাঁদলে তোমার এই মা নিজেকে ক্ষমা কিভাবে করবে?’
হালিমা বেগমের কথা বলার ধরন বেশ সুন্দর। গোছালো। নুপুরের কান্না থেমেছে সময় নিয়ে। পরিচয় পর্বের শেষে জানা গেছে সাকিব বিয়ে করার কয়েক মাস পরেই সাহিলের বিয়ে হয়। একপ্রকার জেদ করেই সাহিলকে বিয়ে দেন হালিমা বেগম। সাহিল তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে শহরে এসেছেন দিন বিশেক হবে। কাছে পাশেই ভাড়া নিয়েছে বাসা। সাহিল সাকিবের সাথে কন্টাক্ট করেছে কিছুদিন আগে। সাকিব এর মাঝে বার দুয়েক সাহিলের সাথে দেখা করেছে। কিন্তু পুরো বিষয়টা নুপুরের থেকে গোপন রাখা হয়েছে তাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য।
কথাগুলো শোনার পর থেকেই নুপুর কেমন থমকে গেছে। তার অস্বাভাবিক আচরণ দেখে সাকিব নুপুরের পিছু পিছু রান্নাঘরে আসে। দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
‘সারপ্রাইজ দেওয়ার বিষয়টা ছেলেমানুষী হয়ে গেছে তাই না? স্যরি! আমি তোমাকে মোটেও আপসেট করতে চাইনি। রাগ করিও না কেমন? প্লিজ!’
নুপুর জবাব দিলো না। সে সেমাই রান্নার জন্য দুধ জ্বাল দিচ্ছে। সাকিব পুনরায় বললো,
‘লেটস্ কম্প্রোমাইজ ওকে! তুমি এবারের মতো আমার ভুলটা ইগনোর করবে। নেক্সট তুমি কোনো ভুল করলে সেটা আমিও ইগনোর করবো। ৫০/৫০ চান্স।’
নুপুর সাকিবের দিকে ফিরল না। চোখের জল আড়াল করে বললো,
‘বেশ। এই ডিলেই থাকছি। এখন সুকেজ থেকে কিছু বাটি এনে দাও।’
সাকিব বাটি আনতে চলে গেল। নুপুর শাড়ির আঁচলে চোখ মুছতে মুছতেই হেসে ফেললো। আজ সন্দেহ নামক একটা ছোট শব্দের জন্য তার সাজানো সংসার বিলিন হতে চলেছিল। আবার বিশ্বাস নামক একটা শব্দ তাকে তার বিলিন হতে যাওয়া সম্পর্ককে আরো জোরালো ভাবে আঁকড়ে ধরতে সাহায্য করেছে। কিন্তু সাকিব যখন রুমে ঢুকে কাপড় এলোমেলো দেখবে, বিছানার উপর ল্যাগেজ দেখবে তখন তাকে কি বলবে নুপুর? সাকিবের উপর বিশ্বাস ধরে রেখেই সে তার চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে বাতিল করেছে। সাকিবের মুখ থেকে সত্যটা না জেনে নুপুর চট করে সবকিছুকে মেনে নিতে পারছিল না। সবটা জানার পর সাকিব রাগ করলে নুপুর সাকিবের সাথে করা ডিলের ব্লাক কার্ডটা নাহয় তখন ইউজ করবে!
নুপুর তপ্ত শ্বাস ফেলে রান্নায় মনোযোগ দেয়। তার শ্বাশুড়ি মা মিষ্টি জাতীয় খাবার পছন্দ করেন খুব। তাই বেশ যত্ন নিয়ে রান্না করছে সে। সাহিল বসার রুম থেকে গলা উঁচু করে ডাকে নুপুরকে,
‘ভাবী কোথায়? এখানে আসেন, গল্প করি।’
নুপুর ও গলা উঁচু করে জবাব দেয়,
‘আসছি ভাই। দুই মিনিট।’
সমাপ্ত
(সময় স্বল্পতায় রিচেক করা হয়নি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)