#একদিন_বিকালে_সকাল_হয়েছিলো
লেখিকা: শারমিন আক্তার সাথী
পর্ব:৪৭
৬২!!
পরের দিন দুপুর নাগাদ, শিহাব মারুফ এসে ঢাকা পৌঁছালো। এরপর বাসে উঠল ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে। ওদের সাথে উর্মি আর ঢেউও আসল। বাসে উঠার কিছুক্ষণ পর শিহাব, রেনুকে কল করে বলল,
‘রেনু।’
‘হ্যাঁ কী খবর আপনার? কোথায়?’
‘এই আর ঘন্টা দেড়ের মধ্যে বাসায় পৌঁছাব। শোনো আমি আবার কল করলে গেটের সামনে এসো। তিনজন গেস্ট আছে আমাদের সাথে। তারা কিন্তু দুপুরে খাবে। তাদের বাসায় নামিয়ে দিয়ে আমাকে জরুরি কাজে যেতে হবে।’
‘আচ্ছা।’
রেনু অতিথী আসার কথা হাসি বেগম আর লিপিকে বলার পর, তারা তাড়াহুড়ো লাগিয়ে দিলো। নাস্তার দিকটা তো সামলে নিবে কিন্তু দুপুরে কি দিয়ে ভাত দিবে চিন্তা করছে। হাসি বেগম, রেনুকে বলল,
‘তোর বেক্কল বরের কান্ড দেখছিস? তিনজন মেহমান আসবে অথচ আমাদের একবার সকালে জানালো না পর্যন্ত। ঘরে লোক বলতে তো আমরা তিন মহিলা। সাজ্জাদ রাতে ফিরবে, তোর শ্বশুর সাহিরকে নিয়ে তার বোনের বাসায় গেছে। তোদের জিজ্ঞেস করলাম কী রান্না করবি, দুই জা মিলে আলু সিদ্ধ আর ভাত দিয়ে গল্পে মেতে রইলি এখন মেহমানকে কি আলুভর্তা আর ভাত খাওয়াবি?’
রেনু বলল,
‘মা কেউ বাসায় নেই। তিনজন মোটে আমরা। তাই আলুভর্তা আর ভাত রান্না করেছি। তাছাড়া ফ্রিজে রান্না করা মুরগির মাংস ছিলো। ভাবলাম দুপুরটা তিনজনার চলে যাবে। রাতে রান্না করব।’
হাসি বেগম বললেন,
‘শুধু মহিলারা ঘরে থাকলে যা হয়। কিন্তু মেহমানকে তো ওসব খাওয়ানো যাবে না।’
রেনু বলল,
‘আপনি চিন্তা করবেন না। কিছু একটা ব্যবস্থা করে ফেলছি।’
রেনু ফ্রিজ থেকে দুই রকমের মাছ, আর মুরগির মাংস পানিয়ে ভেজালো। যাতে তাড়াতাড়ি বরফটা গলে যায়। হালকা কুসুম গরম পানিতে ভেজালো, যাতে জলদি নরমাল হয়। মাছ ভিজিয়েই চুলায় মুসুরের ডাল বসিয়ে দিল। ততক্ষণে লিপি পেয়াজ, মরিচ কেটে ফেলছে। রেনু, হাসি বেগমকে বলল,
‘মা, ইলিশ মাছ আর রুই মাছ, আর লেয়ার মুরগি ভিজিয়েছি, দেশী মুরগী কিংবা গরুর গোস্ত সেদ্ধ হতে তো অনেক সময় লাগবে। ডাল চুলায় বসিয়েছি। এতে হবে নাকি আরও কিছু করতে হবে?’
‘একটা সবজি হলে ভালো হতো।’
রেনু বলল,
‘মা অাজকে সকালে তাজা সবজি আসেনি।’
হাসি বেগম বললেন,
‘এখন এটা দিয়ে চালিয়ে নিচ্ছি। বাকি রাতে ভালো মন্দ খাওয়াবো।’
রেনু আচ্ছা বলে রাইস কুকারে চাল ধুয়ে দিয়ে দিল। ভাত তিনজনের পরিমান রান্না করেছিলো এখন আরও চারজন হয়েছে। ভাতে হবে না, তাই নতুন করে ভাত রান্না করছে রেনু। লিপি ততক্ষণে ইলিশ মাছ ধুয়ে ভাজতে লাগল। রেনুকে বলল,
‘তুই গেটের কাছে যা। শিহাব ভাই তো এসে পড়ল বলে। আমি মাছ রান্না করছি। শোন ফ্রিজ থেকে আদা আর রসুন বাটার বক্সটা দিয়ে যা।’
রেনু বলল,
‘ভাবি শিহাব কল করলে তারপর যাবত।’
‘আচ্ছা তাহলে রুই মাছটা নুন, হলুদ মেখে ভাজ ততক্ষণে। আগে ডালটা পেয়াজ রসুন দিয়ে বাগার দে।’
‘আচ্ছা।’
হাসি বেগম ততক্ষণে শরবত তৈরী করে ফেলেছেন। সাথে ফল কাটল দুই রকমের। কয়েকটা ডিম এনে লিপির কাছে দিয়ে বলল,
‘ডিমগুলো পোচ করে দে। এসে তো দুপুরের ভাতই খাবে, বেশি নাস্তা দিলে ভাত খেতে পারবে না।’
লিপি বলল,
‘আচ্ছা মা।’
ঘন্টাখানিক পর শিহাব কল করল। ততক্ষণে রান্না প্রায়ই শেষের দিকে। তিনজন দক্ষ গৃহিনী মিলে অতি দ্রুত সব রান্না প্রায়ই শেষ করে ফেলল। শিহাবের কল পেয়ে রেনু ওড়নাটা ঠিক করে মাথায় দিয়ে গেটের কাছে গেল। শিহাবও ততক্ষণে এসে পড়েছে। ওরা বাস থেকে নেমে ক্যাব বুক করে বাড়ি এসেছে। উর্মি গাড়ি থেকে নামার পর রেনু, উর্মি দুজনার চোখাচোখি হতেই দুজনেই বেশ ধাক্কা খেল। রেনু ধাক্কা খেল উর্মি দেখতে শশীর মতো বলে, আর উর্মি ধাক্কা খেল, রেনুর মতো এত সুন্দরী রমনী দেখে। রেনু, উর্মির কাছে গিয়ে বলল,
‘শশী…!’
পরোক্ষণে রেনু, উর্মির আপাতমস্তক তাকিয়ে বলল,
‘নাহ! আপনি আমাদের শশী নন। শশী এত লম্বা নয়, ওর স্বাস্থ্যও এত ভারী নয়। গোলগাল, চিকন শরীরের পুতুলের ন্যায় আমাদের শশী। কে আপনি?’
ইন্সপেক্টর মারুফ বলল,
‘ও আমার স্ত্রী।’
শিহাব বলল,
‘রেনু, উর্মি আর ঢেউকে ঘরে নিয়ে যাও। আমরা কিছুক্ষণ পর আসছি। আর তোমার যত প্রশ্ন আছে উর্মির কাছে করো, উর্মি সব জানে।’
রেনু, উর্মিকে দেখে বলল,
‘আপনার চেহারা আমার ননদের সাথে অনেক মিলে।’
উর্মি হেসে বলল,
‘আমি জানি। শশীকে দেখেছি আমি। আমি তো প্রথমে ভেবেছিলাম আপনি শশী বলে জড়িয়ে ধরে কান্না করবেন।’
রেনু স্মিত হেসে বলল,
‘আপনি নিঃসন্দেহে শশীর মতো দেখতে, তবে ওর কার্বনকপি নন। আমাদের শশী একটা জীবন্ত পুতুল। ওকে সরাসরি দেখলে বুঝতে পারবেন। হয়তো চোখ ধাঁধানো সুন্দরী নয়, তবে সত্যি জীবন্ত পুতুল। যাকে দেখলেই জড়িয়ে ধরে আদর করে বলতে ইচ্ছা করে,
‘তুমি আমার লক্ষী খেলার পুতুল।’
উর্মি হেসে বলল,
‘বাহ্!’
রেনু বলল,
‘আপনিও খুব সুন্দর দেখতে। আপনি হলুদ ফর্সা মানুষ থাকে না তেমন। শশীর গায়ের রঙ গোলাপি ফর্সা। দেখতে বেশ লাগে।’
উর্মি বলল,
‘সুন্দরী তো আপনি। আপনার এমন চোখ ধাঁধানো সুন্দরী আমি কখনও দেখিনি। আপনার গায়ের রঙ দুধে আলতা। একগ্লাস ধবধবে সাদা দুধের মধ্যে দুই এক ফোটা আলতা দিলে রঙটা যেমন হয় আপনি ঠিক তেমন।’
রেনু লজ্জা পেয়ে হাসল। তারপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
‘আপনাকে দেখে আমার শশীটার কথা মনে পড়ছে। ব্যাডলি মিস হার।’
রেনু নিজের চোখের কোণে জমা অশ্রু মুছল।
উর্মি, রেনুর কাঁধে হাত রেখে বলল,
‘শশী সত্যি খুব লাকি এমন ভাইয়ের বউ পেয়ে।’
‘হ্যাঁ ও সত্যি লাকি। আমার চেয়েও শশীকে বেশি ভালোবাসে বড় ভাবি। বড় ভাবি তো শশীকে নিজের প্রথম সন্তান মানেন।’
উর্মি মুগ্ধ হয়ে বলল,
‘বাহ্! কি চমৎকার পরিবার আপনাদের!’
শিহাব, রেনুর কাছে এসে কিছু কাগজ ওর হাতে দিয়ে বলল,
‘এগুলা কাবাটে আমার অফিসিয়াল ফাইলের কাছে রেখো।’
‘আচ্ছা।’
‘রেনু ওনাদের ভিতরে নিয়ে যাও। আমি আর মারুফ সাহেব কিছুক্ষণ পর আসছি।’
রেনু বলল,
‘এই দুপুরবেলা ফিরেই, আবার কোথায় যাচ্ছেন?’
শিহাব বলল,
‘একটু জরুরি কাজ আছে। বাড়ি ফিরে সব বলছি।’
‘খেয়ে যান।’
‘নাহ সময় নেই। এসে খাবো। তুমি উর্মি আর ঢেউ এর দিকে খেয়াল রেখো। এত লম্বা জার্নিতে ওরা খু্ব ক্লান্ত।’
‘সে আপনার চিন্তা করতে হবে না। আপনি সাবধানে যাবেন।’
রেনু, মারুফ, শিহাবকে বিদায় দিয়ে, ঢেউকে কোলে নিয়ে উর্মিকে বলল,
‘ভিতরে চলুন।’
ভিতরে নিয়ে যেতে যেতে রেনু বলল,
‘আমার পরিবারের সবাইকে দেখলে বুঝতে পারবেন, আমরা একে অপরকে কতটা ভালোবাসি।’
রেনু, ঢেউকে বলল,
‘মামনি জার্নি করে ক্লান্ত লাগছে?’
ঢেউ বলল,
‘একদম না। মা ক্লান্ত। মা তো বাসে তেমন চড়ে না, তাই বমি করেছে।’
রেনুর, উর্মির দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আপা, আপনার কি বেশি খারাপ লাগছে?’
উর্মি মাথা নেড়ে বলল,
‘আরে না না। অনেক বছর পর এত লম্বা জার্নি করলাম তো তাই একটু ক্লান্তি লাগছে। আমার বাসে তেমন ট্রাভেল করা হয়নি।’
‘বুঝেছি। তাছাড়া দু’দিন যাবত গরমটাও বেশ পড়ছে।’
‘হ্যাঁ।’
‘ভিতরে আসুন, ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিন, দেখবেন ভালো লাগবে।’
উর্মি ভেতরে গেল। হাসি বেগম আর লিপিও সবার মতো চমকালো উর্মিকে দেখে। উর্মি হেসে সালাম দিলো,
‘আসসালামু আলাইকুম।’
হাসি চোখ পানিতে ভরে এলো। কান্নাভেজা কণ্ঠে বলল,
‘ওয়ালাইকুম আসসালাম। তুমি তো আমার শশীর মতো দেখতে।’
উর্মি বলল,
‘জি মামনি। আমি আপনাকে মামনি ডাকি?’
হাসি বেগম নিজেকে আটকাতে পারলেন না। উর্মিকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘কতদিন হয়ে গেছে আমার মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরি না। আজ মেয়েটাকে না পারলেও তারমতো দেখতে কাউকে জড়িয়ে ধরলাম। আমার একটু শান্তি লাগছে। মা তোমার নাম কি?’
উর্মি চোখের কোণে জমা অশ্রু মুছে বলল,
‘উর্মি।’
লিপি, উর্মির গালে হাত দিয়ে বলল,
‘বোন তোমাকে দেখতে অনেকটা আমাদের শশীর মতো। কিন্তু তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না?’
উর্মি বলল,
‘আমি ইন্সপেক্টর মারুফের স্ত্রী।’
লিপি বলল,
‘ওহ আচ্ছা।’
লিপি ঢেউ এর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘মামনি তোমার নাম কি?’
ঢেউ মিষ্টি করে বলল,
‘ঢেউ বিনতে মারুফ।’
লিপি বলল,
‘বাহ্। সুন্দর নাম। আমাদের বাসায়ও তোমার মতো একটা মিষ্টি বাচ্চা আছে। সে বিকালে আসবে। তখন তার সাথে খেলতে পারবে।’
ঢেউ খুশি হয়ে বলল,
‘আচ্ছা।’
রেনু বলল,
‘চলেন ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নিবেন।’
রেনু, উর্মিকে একটা রুমে নিয়ে গেল।
মারুফ, শিহাব সরাসরি হসপিটালে আসল রাযীনের কাছে। ডাক্তার সাহিন ওদের আলাদা কথা বলার ব্যবস্থা করে দিলেন। রাযীন ল্যাপটপে ভিডিও চালু করার আগে বলল,
‘আপনারা বাইরে থেকে ঘুরে আসুন, আমি প্রমাণের অংশে গেলে আপনারদের ডাকব।’
মারুফ হেসে বলল,
‘ওই ভিডিও আমাদের না দেখাই বেটার। তোমরা ইয়াং ছেলে মেয়ে খুব দুষ্টু।’
রাযীন তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল,
‘আপনারা ভিডিও দেখেছেন?’
মারুফ হেসে বলল,
‘না না তেমন কিছু দেখিনি। একটু দেখতে নিয়েছিলাম কিন্তু তোমাদের রোমান্টিকতা দেখে, পুরোপুরি দেখার সাহস হয়নি। শিহাব সাহেব বন্ধ করে দিয়েছিলেন।’
রাযীন খুব লজ্জা পেলো। বলল,
‘আমাকে জিজ্ঞেস না করে দেখা উচিত হয়নি।’
মারুফ বলল,
‘আমরা কীভাবে জানব যে তোমরা টোনাটুনি এত রোমান্টিক।’
রাযীন আবারও লজ্জা পেলো।
শিহাব বলল,
‘তোমার ফ্ল্যাটে হিডেন ক্যামেরা ছিলো আগে কেন বলোনি? তাহলে শশীকে এত কষ্ট পেতে হতো না।’
রাযীন মন খারাপ করে বলল,
‘এতদিন তো আমি কথাই বলতে পারিনি। বা নিজের শারিরীক অক্ষমতা, যন্ত্রনায় ব্রেইনও ঠিকভাবে কাজ করছিলো না। তারপর যখন বলতে পারলাম, তখন বিষয়টা একদম মাথায় ছিলো না। সেদিন ডাক্তার সাহিন তার ওয়াইফকে তাদের বিবাহ বার্ষিকীতে গিফ্ট দেওয়ার কথা বলছিলেন তখন মনে পড়ল।’
মারুফ ভ্রু কুচকে বলল,
‘বিবাহ বার্ষিকীর সাথে হিডেন ক্যামেরার কী সম্পর্ক?’
রাযীন বলল,
‘আপনাদের কী ধারনা আমি শশীর উপর নজর রাখতে ক্যামেরা লাগিয়েছি?’
মারুফ বলল,
‘তো কেন লাগিয়েছিলে?’
‘আমি শশীকে নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি। ওর উপর নজর রাখার প্রশ্নই উঠে না। আমি আমাদের ফাস্ট ম্যারেজ এনিভার্সারিতে ইউনিক কোনো গিফ্ট শশীকে দিতে চেয়েছিলাম। ভাবলাম আগামী এক বছর আমাদের একসাথে কাটানো মুহূর্ত, বিভিন্ন খুঁনসুটিময়, ভালোবাসার ছোটো ছোটো মুহূর্তের ভিডিও, ছবি একসাথে কালেক্ট করে সুন্দর করে এডিট করে শশীকে গিফ্ট করব। সে কারণেই খাবার রুমে, রান্না ঘরে, ড্রয়িং রুমে ক্যামেরা লাগিয়েছিলাম। কিন্তু আমি ঐসব ভিডিও নিজেও তেমন দেখতাম না। জাস্ট মাঝে মাঝে ক্যামেরা মেমরি থেকে ভিডিওগুলা কালেক্ট করে ল্যাপটপে রাখতাম।’
শিহাব বলল,
‘বাহ। এনিভার্সারির জন্য এত লম্বা সময়ের প্ল্যান প্রথম শুনলাম।’
রাযীন মুখ ভার করে বলল,
‘শশীকে নিয়ে আমি আমাদের বৃদ্ধাকাল পর্যন্ত সবকিছু প্ল্যান করে রেখেছি। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা প্ল্যান বোধ হয় অন্যকিছু ছিলো। তাই তো…! আমার প্ল্যানে তো আমাদের নাতি নাতনীর নাম পর্যন্ত ঠিক করা আছে।’
মারুফ হেসে বলল,
‘সো ফাস্ট। আগে বাবা হও তারপর নাতি নাতনীর চিন্তা করো।’
রাযীন হেসে বলল,
‘আর ছয়-সাত মাস পর আমি এমনি বাবা হবো। পৃথিবীর বেস্ট বাবা হবো।’
শিহাব হেসে বলল,
‘এখন ভিডিও গুলো দেখে আমাদের ডেকো। আমরা ততক্ষণে বাইরে থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে আসি।’
রাযীন বলল,
‘আপনারা এখন লাঞ্চ করেননি?’
শিহাব বলল,
‘সময়ই পাইনি।’
‘কী বলেন? সাড়ে তিনটা বাজে। যান প্লিজ খেয়ে নিন দ্রুত।’
ওরা বের হয়ে যেতেই রাযীন ডান হাত দিয়ে ল্যাপটপের মাউস ধরল। কিন্তু ডান হাতটা এখনও বেশ কাঁপে। কাজ করতে সমস্যা হয়। রাযীন বাম হাত দিয়েই চেষ্টা করে ভিডিও প্লে করল। প্রথমে কিছুক্ষণ শশীর সাথে কাটানো মিষ্টি সময়গুলোর খুনসুটি দেখল। শশী একটা স্লিভলেস কুর্তি আর জিন্স পরা। কুর্তিটা পিছনটা অনেকটা জায়গা ব্যাকলেস। শশী তখন নিজের চুলের নিচের দিকটা কার্লি করেছে। এতে ওর চুলগুলো আরও সুন্দর লাগছিলো। শশী চুল খোলা থাকায় ব্যাকলেস জামায়ও পিছনটা দেখা যাচ্ছিল না। কিন্তু রাযীন শশীর চুল একপাশে সরিয়ে রেখে পিঠে নাক ঘসতে ঘসতে বলছিলো,
‘তোমার সবকিছু এত সুন্দর কেন? আমার ঘোর লেগে যায়।’
শশী মৃদু হেসে বলেছিলো,
‘তোমার যাতে ঘোর লাগে, সে জন্যই আমি এত সুন্দর।’
‘তুমি এই স্লিভলেস আর ব্যাকলেস জামা শুধু আমার সামনে পরবে। খবরদার বাইরে কখনও যাবে না।’
শশী নাক ফুলিয়ে বলেছিলো,
‘জনাব, এটা আপনিই পছন্দ করে কিনে দিয়েছিলেন। আপনাকে দেখানোর জন্যই আজ পরেছি।’
‘সত্যি জামাটায় তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।’
‘আর জনাব এটার সাথে আমি ফুল হাতার লং কটি বানিয়ে নিয়েছি। বাইরে গেলে সেটা পরেই যাব। এখন ছাড়ো আমাকে গরম লাগছে। কখন থেকে জোকের মতো চিপকে আছো।’
‘নাহ ছাড়ব না। তোমাকে আমার সবসময় জড়িয়ে থাকতে ইচ্ছা করে। তোমার শরীরের ঘ্রাণটা এত মিষ্টি। মনে হয় সবসময় নাক ডুবিয়ে রাখি। আর এত টাইট জিন্স পরছো কেন? তুলোর মতো নরম শরীর তোমার। এত টাইট জিন্সে দেখবে লাল হয়ে গেছে।’
শশী খানিকটা রেগে বলেছিলো,
‘হ্যাঁ তুমি তো সব জানো। আমার শরীর আমি তোমার চেয়ে ভালো জানি।’
রাযীন হেসে বলেছিলো,
‘ঠিক আছে। ঘরে বসে যা খুশি পরো, নো প্রোবলেম বাট এসব বাইরে একদম পরবে না। এসবে তোমাকে অসম্ভব হট লাগে। লোকে কুনজর দিবে। আমার বউর দিকে কেউ নজর দিবে তা আমি সহ্য করতে পারব না।’
‘রাযীন, তুমি কিন্তু পজেসিভ হচ্ছো।’
‘অবশ্যই। তোমাকে নিয়ে আমি চূড়্ন্ত পর্যায়ের পজেসিভ।’
শশী, রাযীনকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘আই লাভ ইউর পজেনিভনেস।’
রাযীন মৃদু হাসল।
পুরো ঘটনাটা মনে পরায় আবারও মৃদু হাসল রাযীন। মনে বলল,
‘কত সুখী ছিলাম আমরা। একটা ঝড় সব এলোমেলো করে দিলো।’
রাযীন বেশি অপেক্ষা না করে সরাসরি ঘটনার দিন বিকালের ঘটনা দেখতে লাগল। সন্ধ্যার আগে ঘন্টা খানিকের জন্য ও শশীর থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে গিয়েছিলো। তারপর ফিরেছিলো সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর। মোটামুটি এক ঘন্টার বেশি সময় রাযীন বাইরে ছিলো। মানে খাবারে বিষটা ঐ এক ঘন্টা সময়ের মধ্যেই মেশানো হয়েছে। কারণ রাযীন ঘরে ফেরার পর কেউ আসেনি। আর রাযীন ফেরার আগেই শশী রান্না শেষ করেছিলো। রাযীন নিজে বাইরে যাবার পর থেকে গভীর মনোযোগ দিয়ে ভিডিও দেখতে লাগল। শশী রান্নাঘর থেকে খাবার এনে টেবিলে রাখছে। তখন দরজার কলিং বেল বাজল। রাযীন নিজে নিজে বলল,
‘এই সময় হয়তো সুমী আপা শশীর বই ফেরত দিতে এসেছিলো।’
শশী আবার খাবার রুমে আসল। হাতে থাকা বইটা টেবিলে রেখে চলে গেল। তখন মাগরিবের আযান দিচ্ছে চারদিকে। মানে শশী এখন বাথরুমে ঢুকবে, ওযু করবে আর রুমে বসেই নামাজ পড়বে। রাযীন তীক্ষ্ণ চোখে ভিডিওর দিকে তাকিয়ে আছে। দেখল সুমী খাবার রুমে আসছে। ঢাকনা উঁচু করে বাটিতে কি আছে তা দেখছে। তারপর কোমরে গোজা ছোট্টো একটা কাঁচের বোতল বের করল। সেটার মুখ খুলে চিংড়ি মাছের বাটিতে কিছুটা তরল ঢেলে দিয়ে, মাছটা নাড়াচারা করে ঢাকনাটা ঢাকা দিয়ে চলে গেল।
রাযীন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
‘ওহ তাহলে এই ব্যাপার।’
গোসল করে খাওয়ার পর উর্মির এখন কিছুটা ভালো লাগছে। রেনু, লিপি উর্মিকে গেস্ট রুম দেখিয়ে রেনু বলল,
‘আপা আপনি রেস্ট নিন। তাহলে কিছুটা ভালো লাগবে। বিকালে উঠার পর নাহয় গল্প করব আমরা। ততক্ষণে শিহাব আর মারুফ সাহেবও এসে পড়বেন।’
উর্মি বলল,
‘আচ্ছা।’
রাযীনের কল পেয়ে শিহাব ও মারুফ আসল। ওরা আসার পর ভিডিওটা দেখিয়ে রাযীন বলল,
‘সুমী আপা প্রথমে এসে বই ফেরত দিয়ে ঠিক-ই চলে যান। তারপর আবার আসেন মাগরিবের নামাজের সময়। তিনি হয়তো জানতেন শশী এখন, ওযু করে নামাজ পড়বে। সেই সময়টার সুযোগ নিলেন। আমার বাসার ডুপ্লিকেট চাবি করে রাখা তার জন্য পানির মতো সহজ ছিলো। কারণ আমরা তো ওখানে বছরে দুই-একবারও যেতাম না। তো সারাবছর চাবি সুমী আপার কাছেই থাকত। তো বুঝতেই পারছেন। সে চাবি দিয়ে দরজা খুলে বিষ মিশিয়ে আবার চলে যায়। শশী রুমে নামাজে ব্যস্ত থাকায় সুমী আপাকে দেখেনি। সে কারণে শশী, সুমী আপাকে কোনো রকম দোষারপ করেনি। এখন শশীকে বের করতে আর ঝামেলা হবে না। আদলতে এই প্রমাণটাই যথেষ্ট শশীকে মুক্তো করার জন্য।’
শিহাব বলল,
‘তুমি যে সুস্থ সেটা কী সবাইকে জানাবে এখন?’
‘নাহ। একেবারে রবিবার। এর পূর্বে জানালে অর্ক, সুমী, রাসেল এরা সতর্ক হয়ে যাবে।’
মারুফ বলল,
‘ওদের এখন গ্রেফতার করলেই তো হয়। তোমার কাছে যথেষ্ট প্রমাণ আছে। প্রমাণ তোমাদের থানায় দেখালেই হবে।’
রাযীন বলল,
‘সেটা কি সম্ভব?’
‘অবশ্যই। পুলিশ সবসময় অনডিউতে থাকে। তাদের কোনো সাপ্তাহিক ছুটি নেই। তারা সবসময় অনডিউতিতে। তুমি প্রমাণগুলো তোমাদের থানার যে প্রধান তাকে দেখালেই হবে।’
রাযীন কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
‘তাহলে সরাসরি কমিশনারকেই দেখাই। ছোটো খাটো কাউকে দেখিয়ে যা লাভ না হবে, তার চেয়ে বড় কাউকে দেখানোই বেটার। বাবাকে বললে, বাবা সব ব্যবস্থা করে দিবেন কয়েকঘন্টার মধ্যে।’
শিহাব বেশ মুগ্ধ হয়ে বলল,
‘রাযীন তোমার বুদ্ধির তুলনা হয় না।’
রাযীন হাসল।
শিহাব বলল,
‘রাযীন!’
‘জি ভাইয়া।’
‘একটা কথা জিজ্ঞেস করি?’
‘করুন।’
‘তুমি সজলের বিষয়ে সব জেনেও শশীকে এত বিশ্বাস করছো?’
‘বিশ্বাস না করার কী আছে? সজলকে তো আমি বিয়ের আগে থেকে চিনতাম। তাছাড়া শশী, সজল সম্পর্কে বিয়ের আগেই সব বলেছিলো। শশী কখনও আমাকে কোনো বিষয়ে মিথ্যা বলেনি। আমাদের সম্পর্ক নিয়ে ও সবসময় লয়াল ছিলো। কক্সবাজার বসে সজলের সাথে দেখা করতে আমিই শশীকে নিয়ে গিয়েছিলাম। শশী আমাদের সম্পর্কে সম্মান, ভালোবাসা, বিশ্বাস, ভরসা, লয়ালিটি, সব দিয়েছে। তাহলে এই মানুষটাকে কেন আমি নিজের চেয়ে বেশি ভালোবাসবো না?’
রাযীনের কথা শুনে, শিহাব অবাক হয়ে বলল,
‘রাযীন তোমাকে যত দেখছি তত মুগ্ধ হচ্ছি।’
রাযীন এবারও হাসল।
৬৩!!
রাত আটটা।
রাযীনের কেবিনে রাযীনে, আর শশীর পরিবারের সবাই উপস্থিত।
মিতু, রাযীনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না তার ছেলে সুস্থ হচ্ছে। রাযীনও অনেক্ষণ ওর মাকে জড়িয়ে ধরে রাখল। তারপর বলল,
‘মা তুমি শশীকে কেন বিশ্বাস করলে না?’
মিতু কী বলবে ভেবে পেল না। মাথা নিচু করে বলল,
‘আমাকে ক্ষমা করে দে।’
রাযীন বলল,
‘মা ক্ষমা করার প্রশ্ন না। আমি তোমার উপর রেগে নেই কিন্তু কষ্ট পেয়েছি অনেক। আমি সবসময় তোমাদের বলেছি আমাকে ভালোবাসলে শশীকেও ভালোবাসতে হবে। তোমরা মেনেও নিয়েছিলে আমার কথা। তাহলে কেন এমন করলে?’
মিতু চুপ। রাযীন আবার বলল,
‘মা আজ যদি সত্যি আমি মরে যেতাম তাহলে শশী সারাজীবন জেলে পঁচে মরত? আমার সন্তানের জন্ম জেলে হতো? তার লালন পালনও জেলে হতো? তাকে তুমি আপন করে নিতে না?’
মিতু কানে হাত দিয়ে বলল,
‘চুপ কর। আমাকে আর এসব বলিস না। আমি শুনতে পারব না।’
‘না তোমাকে শুনতে হবে। মা যখন শশীর তোমাকে প্রয়োজন ছিলো তখন তুমি ওর মা হতে পারলে না, অথচ শশী তোমার ছেলের অংশকেই নিজ মাঝে ধারণ করে আছে। তাকে পৃথিবীতে আনার জন্য কত কষ্ট করছে। একটা মেয়ে যখন মা হয়, তখন সবচেয়ে বেশি তার মাকে কাছে চায় কিন্তু তুমি ওর বিরুদ্ধে চলে গেলে। সেদিন হসপিটালে বসে তুমি শশীকে জিজ্ঞেস করেছিলে, বাচ্চাটা সত্যি আমার রাযীনের কিনা? এত অবিশ্বাস কেন মা? আমার বাচ্চা হতে পারে না? শশী আমার স্ত্রী। তাহলে আমার বাচ্চা ওর গর্ভে থাকা নিয়ে প্রশ্ন কেন করতে হবে মা?’
মিতু কান্না করতে করতে বলল,
‘আমি ওর কাছে ক্ষমা চাইব।’
রাযীন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
‘ক্ষমার প্রশ্ন না মা। আমি আর তোমাদের সাথে থাকব না। যে বাড়িতে আমার শশীর প্রতি বিশ্বাস নেই, সেখানে আমি থাকব না। আমি শশীকে নিয়ে আলাদা বাসায় চলে যাব। আলাদা থাকব। আজ এত খুশির দিনে আমার পুরো পরিবার আমার কাছে অথচ শুধু শশী নেই। বু্ঝতে পারছো ও কতটা কষ্টে আছে? আমার কতটা কষ্ট লাগছে? ওর এখন সবচেয়ে বেশি যত্নের প্রয়োজন কিন্তু এখন ও আছে সবচেয়ে অযত্নে…। আমি ওর সাথে কথা বলতে পারছি না, ওকে ছুঁয়ে দেখতে পারছি না, আমার সন্তানের কথা জানতে পারছি না।
মিতু, রাযীনের হাত দুটো জড়িয়ে ধরে বলল,
‘বেঁচে থাকতে তোর মাকে মৃত্যু যন্ত্রনা দিস না। কথা দিচ্ছি আর কখনও তোর শশীকে কখনও অবিশ্বাস করব না। আগের মতো ভালোবাসবো।’
রাযীন বলল,
‘না মা। আর কাউকে আমার শশীর খেয়াল করতে হবে না। আমিই ওর জন্য যথেষ্ট।’
রাযীনের এমন কথায় হাসি বেগম বেশ রাগ করলেন। গম্ভীর কণ্ঠে তিনি বললেন,
‘রাযীন, তুমি এখন বাড়াবাড়ি করছো? তোমার মা যা করেছেন তার স্থানে অন্য কোনো মা হলেও তাই-ই করতেন। বাবা-মায়ের ভাবনা তুমি এখন বুঝবে না। কয়মাস পর তুমি যখন বাবা হবে তখন বুঝবে সন্তানের উপর আঘাত আসলে কলিজা কেমন জ্বলে! তখন ঠিক ভুল বিবেচনা করার মতো মানসিক অবস্থা থাকে না। বেয়ান আপনি উঠুন, ওরা কোথাও যাবে না। আমি আমার মেয়েকে পরিবার ভাঙার শিক্ষা দেইনি। রাযীন এখন রেগে থাকলেও শশী ঠিক ওকে মানিয়ে নিবে। না মানলে আমি কষে দুটো চড় মারব। নয়তো আপনিই মারেন এখন। রাযীনকে মারার পরে শশীকে মারবেন। ছেলে মেয়ে বেশি ত্যাড়ামি করলে মায়ের উচিত তাকে শাসন করা। শাসন করার সবচেয়ে বেশি অধিকার কেবল মায়েরই।’
রাযীন মুখ ভার করে বলল,
‘দুই মা মিলে আমার একার উপর চড়াও হলে আমি কী করব?’
সবাই হাসল। রাযীন উর্মির দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আপনার সাথে আমার পরিচয় হয়নি।’
উর্মি হেসে বলল,
‘আমাকে দেখে সবাই বেশ চমকেছে একমাত্র আপনি ছাড়া। কেন?’
‘চমকানোর কী আছে? আপনি শশীর মতো দেখতে কেবল কিন্তু শশী নন। আমার শশীর শরীরের ঘ্রাণ পর্যন্ত আমার চেনা। আপনাকে দেখেই বুঝেছি আপনি অন্য কেউ।’
উর্মি হেসে বলল,
‘আপনার স্ত্রীর প্রতি, আপনার ভালোবাসা দেখে আমি মুগ্ধ।’
৬৪!!
সুমীকে গ্রেফতার করা হলো বৃহস্পতিবার রাতেই। রাযীন এমন ব্যবস্থা করেছে যে, সুমী, রাসেল, অর্ক পালাতে না পারে। সুমী, রাসেল ধরা পড়লেও অর্ককে পুলিশ ধরতে পারে না। অর্ক কীভাবে, কোথায় পালালো তা কেউ জানে না! যেনো হাওয়া হয়ে গেছে অর্ক।
সুমীকে রিমান্ডে নেওয়ার পর সুমী সব সত্যি বলে দিলো। মহিলা পুলিশের দুটো চড় খেয়েই চোখে হলুদ ফুল দেখেছিলো। যার কারণে সব কথা গড়গড় করে বলে দিলো। কীভাবে প্ল্যান করেছিলো? কেন এমন করেছে? সব কথা। রাসেল কী করেছে? অর্ক কী করেছে সব? রাসেলকে রিমান্ডে নেওয়ার পর প্রথমে বলতে না চাইলেও, পুলিশের মাইরে সব বলে দিয়েছে। রাসেলকে অর্ক বলেছিলো, সম্পত্তি পেলে ৪০% ওকে দিবে।
সুমী, রাসেল আর অর্কের এমন কাজ অর্কের বাবা রফিক রহমান নিতে পারেনি। তিনি ব্রেইন স্টোক করেন। তাকে নিয়ে হসপিটালে আছেন তার স্ত্রী সুমাইয়া। তিনিও নিজের ছেলে মেয়ের এমন কাজে বিশ্বাস করতে পারছে না। তার ছেলে মেয়ে যে, এমন জঘণ্য কাজ করতে পারে সেটা ধারণা ছিলো তাদের! অর্কের বড় ভাইও এসব বিষয় জানতেন না। কিছুদিন আগে তিনি বাবা হয়েছেন। এখন তাকে বাবা মা, পরিবার সব একসাথে সামলাতে হচ্ছে। তিনি হিমসিম খাচ্ছে সব সামলাতে।
তবে রায়হান রহমান অনৈতিক কোনো কাজ করেননি। বড় ভাইর বিপদে ঠিকই তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। তার ভাইয়ের ছেলে মেয়ে, তার একমাত্র ছেলের সাথে যতই অন্যায় করুক না কেন, তিনি তার ভাইয়ের সাথে অন্যায় করেননি। তিনি ঠিকই সবার খেয়াল রাখছেন। এমনকি পুলিশ যখন তাদের জিজ্ঞেসাবাদ করার জন্য থানায় নিতে এসেছিলেন, তিনি বড় ভাইকে থানায় নিতে দেননি। অবশেষে সব অপরাধী ধরা পরল। তবুও রবিবার কোর্ট থেকে শশীকে ছাড়বে।
৬৫!!
অবশেষে সকল তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে শশীকে, রাযীনকে খুন করতে চাইবার দায় থেকে মুক্তি দেওয়া হলো। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে এতক্ষণ শুধু শশী রাযীনের দিকেই তাকিয়ে ছিলো। রাযীন হুইল চেয়ারে বসা ছিলো।
জজ চলে যাবার পর শশী কাঠগড়া থেকে নামতে পারছিলো না। মনে হচ্ছে ওর পা দুটো জমে গেছে। এতদিনের দুঃখ, কষ্ট, অপমান সব কিছুর আজ অবসান হলো। শশী এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না, জেলের বাইরে মুক্ত বাতাসে ও নিঃশ্বাস নিবে। ওর সন্তান জন্মে পর একটা সুস্থ পরিবেশ পাবে। ভেবেছিলো ওর বাকি জীবনটা জেলেই কাটবে। ওর সন্তানের জীবনটাও জেলে কাটবে।
পূর্বের কষ্ট আর আজকে মুক্তি পাওয়ার আনন্দ একসাথে নিতে পারল না শশীর শরীরটা। মাথা ঘোরাচ্ছে ওর। চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। নিজেকে আর সামলে রাখতে পারল না শশী। মাথা ঘুরে পড়ে গেলো। শিহাব, সাজ্জাদ, রাযীনসহ সবাই ওর কাছে আসল। সবাই দৌড়ে আসলেও রাযীন তো তা পারে না। শিহাব, শশীকে ডাকছে,
‘বাচ্চা! কী হলো তোর?’
হাঁটতে পারছে না বলে, রাযীনের নিজেকে এত অসহায় লাগছে যা বলার বাইরে। শিহাব, শশীকে কোলে তুলে বলল,
’ভাই জলদি কাছের কোনো হসপিটালে চলো।’
রেনু শশীর দিকে খেয়াল করে দেখল, ওর পরনের সাদা কাপড় পিছন থেকে রক্তে ভিজে যাচ্ছে। রেনু বেশ ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল,
‘শিহাব ওর তো ব্লিডিং হচ্ছে। আবার মিসক্যারেজ হবে নাতো?’
রাযীর বেশ ভয় পেয়ে গেল। নিজেকে ওর প্রচন্ড অপরাধী মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে শশীর এ অবস্থার জন্য কোথাও না কোথাও ও-ই দায়ী।’
সবাই শশীকে নিয়ে হসপিটালে গেল।
চলবে….