একমুঠো রোদ্দুর পর্ব-০২

0
26

#একমুঠো_রোদ্দুর
#পর্বঃ২
#আদওয়া_ইবশার

বিয়ে করা সম্ভব না! বললেই হলো না কী? বাবা-মা আর তার এতো স্বাদের পাত্রী অতসী। মা তো ইতিমধ্যে অতসীকে পুত্রবধূ হিসেবে মন থেকে মেনেও নিয়েছে। আর এই ছেলে কী না এখন তাদের সবার আশায় বালি ঢেলে বলছে অতসীকে বিয়ে করা সম্ভব না?

“কেন? অতসীকে তোর পছন্দ হয়নি? হ্যাঁ রে, তোর চোখ দুটোতে কী ঐসব উগ্রবাদ, সন্ত্রাসীদের ছাগলমার্কা মুখ দেখে দেখে ছানি পরেছে? না হলে তো আর ওকে অপছন্দ হবার কথা না।”

দৃষ্টির এমন জবাবে দিহান যারপরনাই বিরক্ত। কপাল কুঁচকে অসন্তুষ্ট মুখে কিছু বলতে যাবে, এর আগেই দৃষ্টি পূণরায় চেঁচিয়ে বলে ওঠে,

“এই, তুই প্রেম করিস না তো? সত্যি করে বল, তোর গার্লফ্রেন্ড আছে?”

হুটহাট দৃষ্টির এমন চেঁচানোতে দিহান ভীষণভাবে চমকায়। ভড়কায় প্রেম করার কথা শুনে। হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে থাকে বোনের উৎসুক মুখের দিকে। কতক্ষণ পর কন্ঠে অবাকতার রেশ ধরে রেখেই জবাব দেয়,

“প্রেম আর আমি! ভাবনাটা একটু বেশিই অবান্তর মনে হচ্ছেনা?”

“অবান্তর কেন মনে হবে? ছেলে মানুষ তুই,প্রেম করতেই পারিস।এখানে অবাস্তবের কী আছে?”

হতাশ হয়ে দিহান দুই পাশে মাথা নাড়ে। স্বগোক্তি করে বলে,

“আমি প্রেম করি,ভাবনাটাতে যেমন অবান্তরের কিছু নেই, তেমন তোমারও এতো অবাক হয়ে চিল্লাচিল্লি করার কোনো কারণ আমি খোঁজে পাচ্ছিনা আপু। একটু আগে তুমি নিজেই বলেছো, এক বাচ্চার মা হয়েছো, বুড়ো হচ্ছো। এবার অন্তত পক্ষে নিজের বাচ্চামো স্বভাবটা কমানো প্রয়োজন তোমার। কথায় কথায় ঢংগি মেয়েদের মতো চিল্লিয়ে উঠার স্বভাবটাও বদলানো প্রয়োজন। খুব বাজে স্বভাব এটা। একদম সহ্য হয়না আমার। ইচ্ছে করে মুখে দুই-তিনটা বুলেট পুরে আজীবনের জন্য জবান বন্ধ করে দেই।”

মুখের উপর জবাবটা ছুড়ে দিয়ে আর এক মুহূর্ত দাঁড়ায়না দিহান। বিরক্তিতে চোখ-মুখ কুঁচকে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। এই আধ পাগলি গুন্ডার বউয়ের কাছে তার আসাটাই ভুল হয়েছে। এর কাছে সমস্যার সমাধান খোঁজা আর মরুভূমির বুকে ঘাস খোজা একই কথা।

***
রাত প্রায় আড়াইটার দিকে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে চুপিচুপি বাসায় ঢুকে রক্তিম। পুরো বাড়ি তখন অন্ধকারে নিমোজ্জিত। গোটা দিন আর অর্ধ রাত পযর্ন্ত একের পর এক দলীয় মিটিং, এলাকার উন্নয়নমূলক কাজের অগ্রগতি ঘুরে ঘুরে দেখতে গিয়ে শরীরের বারোটা বাজিয়েছে। ইচ্ছে করছে এখানেই শরীর ছেড়ে শুয়ে পরতে। মাথাটাও কেমন ভারী হয়ে আছে। ঘুটঘুটে অন্ধকারেই দেয়াল ঘেঁষে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নিজেকে একটু স্থির করে উদ্যত হয় বাতি জ্বালাতে। ঠিক সেই মুহূর্তে অন্ধকারাচ্ছন্ন নিরব পরিবেশটাকে চুরমার করে রক্তিমের কর্ণকুহরে ভেসে আসে এক নারী কন্ঠের শ্লেষাত্মক কিছু কথা।

” সম্মানীয় এমপি মহোদয় রাতবিরাতে নিজের বাসায় চোরের মতো প্রবেশ করে, ঘটনাটা একবার পাবলিক হলে মান-ইজ্জত থাকবে কিছু?”

এমন ভূতুড়ে পরিবেশে হঠাৎ নারী কন্ঠের আভাস পেয়ে প্রথম দফায় রক্তিম খানিক চমকালেও, কন্ঠটা অতি পরিচিত বুঝতে পেরে স্বাভাবিক চিত্তে ফিরে আসে।বুক ফুলিয়ে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বাড়ি জ্বালাতেই দেখতে পায় রোষপূর্ণ নজরে দৃষ্টি তাকিয়ে আছে তার দিকে। মাঝে মাঝে দৃষ্টির এমন রোষাগ্নি নজর দেখে রক্তিমের ভীষণ হাসি পায়। খুব কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে পেটে খিল ধরা হাসিটাকে আটকে রেখে গম্ভীরতা বজায় রাখতে। যে মেয়ের বিয়ের আট বছর পরেও তার শান্ত সুরের ছোট্ট একটা ধমকে বুক কাঁপে এখনো, সেই মেয়ে কী না মাঝে মাঝে তাকে চোখ রাঙ্গানি দেবার মতো দুঃসাহস করে!ভয় পাবে দূরের কথা,এই কথা ভাবলেই তো রক্তিমের দম ফাটা হাসির উপদ্রব হয়। তবে এটা ঠিক, রক্তিমের গম্ভীর্যপূর্ণ ব্যক্তিত্বের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ভীষণরকম এক সত্য হলো, দৃষ্টি নামক এই মেয়েটাই তার সমস্ত ক্লান্তি দূর করার একমাত্র জড়িবুটি। মুখে স্বীকার করুক আর না করুক।চিরন্তন সত্য এটাই, তার গভীর আঁধারে নিমোজ্জিত জীবনটা ভালোবাসা নামক একমুঠা রোদ্দুর দিয়ে এই মেয়েটাই আলোকিত করেছে। নতুন করে জীবনের মানে শিখিয়েছে তাকে, বাঁচতে শিখিয়েছে নবউদ্যমে। পিছুটান হিসেবে দিয়েছে মুঠোভর্তি ভালোবাসা সহ ফুটফুটে এক সন্তান। বিয়ের আটটা বছর পাড় হয়ে গেলেও এসবের জন্য রক্তিম কখনো আলাদা করে দৃষ্টির প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেনি। তাদের বৈবাহিক জীবনে প্রথম কক্সবাজার ঘুরতে গিয়ে একবার মনের কথা প্রকাশ করার পর রক্তিম আর কখনো মুখে ভালোবাসি শব্দটাও উচ্চারণ করেনি। তবুও দৃষ্টি কখনো তার প্রতি কোনো অভিযোগ তুলেনি। বরং তার গম্ভীরতার মাঝেই এক চিলতে সুখ খোঁজে নিয়ে সে বিনিময়ে দিয়ে গেছে মুঠো মুঠো ভালোবাসা। অথচ রক্তিম! রাজনীতি নামক গ্যারাকলে পরে না পারছে তার কলিজার অবিচ্ছেদ্য অংশ রোদ্রিককে একটু সময় দিতে, আর না পারছে তার আঁধারে ঘেরা জীবনে আলোর মশাল জ্বালিয়ে চলার জন্য মসৃণ পথ খোঁজে দেওয়া অর্ধাঙ্গীকে নিয়ে ভালোবাসা নামক সুখ রাজ্যে হারিয়ে যেতে। এই না পারার অনুশোচনাটুকু নিরব ঘাতকের মতো রক্তিমের বুক পাজরে প্রতিনিয়ত যে কতটা রক্তক্ষরণ ঘটায়, এই খবর কী কেউ রাখে? দায়িত্বের ভার, চাপা স্বভাব আর গম্ভীর্যতার আড়ালে তার অনুভূতি গুলো ধ্বসে পরছে প্রতিনিয়ত। বুক চিরে চাপা এক দীর্ঘশ্বাস বের করে রক্তিম দৃষ্টির থেকে নজর সরিয়ে একটু ঝুঁকে পায়ের জুতা খুলতে খুলতে জানতে চায়,

“রোদ্রিক ঘুমিয়েছে?”

“হ্যাঁ।”

ক্ষণকাল নিরব থেকে ভারমুখে জবাব দেয় দৃষ্টি। রক্তিম পূণরায় জানতে চায়,

“শ্রেদ্ধেয় কুটুমগণ আছে না কী গেছে?”

রক্তিম কাদের কথা জানতে চেয়েছে দৃষ্টি বুঝেও না বোঝার ভান করে জিজ্ঞেস করে,

“কাদের কথা বলছেন?”

“কাদের আবার? রোদ্রিকের নানা-নানি আর মামার কথা।”

“রোদ্রিকের নানা-নানি,মামা আপনার কী হয়?”

আড়চোখে তাকিয়ে জানতে চায় দৃষ্টি। প্রত্যুত্তরে রক্তিম বিরক্তিমাখা স্বরে বলে ওঠে,

“এতো কৈফিয়ৎ দিতে পারবনা। ক্ষিদে পেয়েছে, খাবার দাও দ্রুত।”

হতাশ বদনে দৃষ্টি কতক্ষণ তাকিয়ে থাকে রক্তিমের ক্লান্ত-বিধ্বস্ত মুখের দিকে। তার এমন হতাশায় ডুবিডুবি চাহনি দেখেও রক্তিম কোনো তোয়াক্কা না করে পা বাড়ায় নিজ রুমের দিকে। বিয়ের আট বছর পাড় হওয়ার পরও এখনো তাদের জামাই-শাশুড়ির ঠুকাঠুকি শেষ হয়নি। শশুরের সাথে রক্তিমের সম্পর্কের কিছুটা উন্নতি হলেও শাশুড়ির সাথে এখনো সাপে-নেউলের বিবাদ। প্রতিনিয়ত দিলশান আরা সুযোগ খোঁজে বেড়ায়, কীভাবে রক্তিমকে কথার জালে ফাঁসিয়ে নাকানিচুবানি খাওয়ানো যায়। আর রক্তিম! সেও কী কোনো অংশে কম যায় না কী? জন্মগতভাবেই তো তার ঘাড়ের রগ একটা ত্যারা, তার উপর শাশুড়ির এমন খুচাখুচি মনোভাব। এসবের ভীড়ে সে কী আর ভদ্র-সভ্য জামাই সাজার নাটক করবে? আজ পযর্ন্ত আড়ালে আবডালেও শশুর- শাশুড়ি কথাটা মুখে উচ্চারণ করেনি। তাদের কথা জানতে হলে সবসময় এমন ঠ্যাস দিয়ে আকারে-ইঙ্গিতে জানতে চাইবে।কথায় আছে না, যেমন দা তেমন কুমড়ো! এদের ক্ষেত্রে এই কথাটা ভীষণ প্রযোজ্য, যেমন জামাই তেমন শাশুড়ি। এদের মাঝে পরে সর্বদা দৃষ্টির অবস্থা হয় টাইট। না পারে মা’কে রেখে স্বামীর পক্ষ নিতে, আর না পারে স্বামীকে রেখে মায়ের পক্ষ নিতে। মাঝে মাঝে এদের বাকযুদ্ধ দেখে দৃষ্টির ইচ্ছে হয় রোদ্রিকের মতোই ফ্লোরে হাত-পা ছড়িয়ে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদতে।

টেবিলে খাবার রেডি করে কতক্ষণ অপেক্ষা করার পরও রক্তিমকে নিচে নামতে না দেখে বিরক্ত হয়ে ওঠে যায় দৃষ্টি।রুমে গিয়ে দেখতে পায়, সাহেব একেবারে গোসল সেড়ে ঘুমন্ত ছেলেকে বুকে জড়িয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। মাথার চুল গুলোও ঠিকঠাক মুছেনি। দৃষ্টির খুব করে অভিমানে গাল ফুলিয়ে বলতে ইচ্ছে হয়, “ছেলে যখন সারাদিন পাপ্পা পাপ্পা করে কেঁদে অস্থির হয়, তখন তো কোনো খোঁজ থাকেনা। তবে এখন কেন ঘুমন্ত ছেলেকে বুকে জড়িয়ে আহ্লাদ দেখাচ্ছে? থাকুক এখনো ছেলের থেকে দূরে। লাগবেনা তাদের মা-ছেলের এই পাষন্ডকে।” মনে মনে কথা গুলো একাধিকবার আওড়ালেও মুখ ফুটে বলার সাহস হয়না দৃষ্টি। প্রলম্বিত একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বিছানার এক কোণে ফেলে রাখা তোয়ালে হাতে নিয়ে এগিয়ে যায় পাষাণ পুরুষটার দিকে। এলোমেলো ভেজা চুল গুলো মুছতে মুছতে বালিশে নজর যেতেই হঠাৎ চেঁচিয়ে ওঠে,

“দিন দিন কী আক্কেল-জ্ঞান সব ভাতের সাথে চিবিয়ে খেয়ে ফেলছেন? চুলের পানিতে বালিশকেও গোসল করিয়ে দিয়েছেন। এটা এখন আমি কীভাবে শুকাবো?”

তড়িৎ চোখ মেলে ঘুমন্ত রোদ্রিকের দিকে এক নজর তাকিয়ে চাপা স্বরে ধমকে ওঠে রক্তিম,

“আস্তে কথা বলতে পারোনা? বালিশ বড়ো না কী আমার ছেলে বড়ো? ওর ঘুম ভেঙ্গে গেলে খবর আছে তোমার?”

বিপরীতে মুখ ভেংচায় দৃষ্টি। বিরবির করে রক্তিমকে বকতে বকতে বেরিয়ে যায় রুম ছেড়ে। কতক্ষণ পর আবারও উপস্থিত হয় হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে।

“দয়া করে খাবারটুকু গিলে আমাকে নিস্তার দিন। ঘুমের জন্য চোখে এখন সরিষা ফুল দেখছি।”

দৃষ্টির কথার ধরণে পূণরায় রক্তিম চাপা একটা হুঙ্কার ছুড়তে গিয়েও তার ঘুমে ঝুলঝুল চোখ দুটো দেখে দমিয়ে নেয় নিজেকে। থমথমে মুখে গম্ভীর সুরে আদেশ ছুড়ে,

“ছেলে বুকের উপর দেখছোনা? খাইয়ে দাও।”

মামার বাড়ির আবদার, না কী আলগা পিরিতি দেখালো দ্যা গ্রেট পাষাণ শিকদার? ছেলে কী নিজ থেকে বুকের উপর গিয়েছিল না কী? নিজেই তো আহ্লাদ দেখানোর জায়গা না পেয়ে ঘুমন্ত ছেলেকে টেনে বুকে তুলেছে। এখন আবার সেই অযুহাতে হুকুম চালাচ্ছে খাইয়ে দেবার জন্য!যত্তসব দৃষ্টিকে খাটানোর ধান্দা।শান্ত নজরে কতক্ষণ রক্তিমের গম্ভীর মুখটা দেখে নিয়ে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে দৃষ্টি উদ্যত হয় রক্তিমকে খাইয়ে দিতে। খাওয়ানো শেষ করে এঁটো প্লেটটা সেন্টার টেবিলের এক পাশে রেখেই চুপচাপ নিজ স্থানে পাশ ফিরে শুয়ে পরে। চোখ দুটোতে ঘুম নেমেছিল মাত্রই। এর মাঝেই উদোরে হঠাৎ বলিষ্ঠ হাতের স্পর্শ পেয়ে ঘুম ছুটে যায়। খানিক চমকালেও হাতের মালিককে অনুভব করতে পেরে শান্ত থাকে দৃষ্টি। বিড়াল ছানার মতো গুটিশুটি মেরে লেপ্টে যায় ঐ বলিষ্ঠ পুরুষালী বক্ষস্থলে। দীর্ঘ প্রশ্বাসের সাথে টেনে নেয় আরাধ্য পুরুষের দেহের ভাজে লুকিয়ে থাকা মাতাল ঘ্রাণ। বুক পাজরে নাক ঘষে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে,

“দিন দিন আপনার এই রাজনীতি পেশাটা আমার সতীন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।”

অস্পষ্ট হেসে রক্তিম দৃষ্টির কাঁধে মুখ লোকায়। অল্প অল্প উষ্ণ পরশে শুষে নিতে শুরু করে তার মনের কোণে জমে থাকা অভিমান গুলো। এর মাঝেই কানে বাজে রোদ্রিকের ঘুম জড়ানো কন্ঠস্বর,

“পপ্পা!” তড়িৎ দৃষ্টির কাধ থেকে মুখ সরিয়ে পাশ ফিরে ছেলেকে বুকে টেনে নেয় রক্তিম। রোদ্রিকের ঘুমঘুম আদুরে মুখটা ছোট্ট ছোট্ট চুমুতে ভরিয়ে দিতে দিতে আহ্লাদী সুরে বলে,

“আমার বাবাটা ভালো আছে?”

বাবার মুখটা দেখতে পেয়ে মুখ ভরে হাসে রোদ্রিক। পরপর কিছু একটা ভেবে ঠোঁট ফুলিয়ে বাবার বুকেই মুখ লুকিয়ে বলে ওঠে,

” আমি রাগ করেছি।”

এক হাতে রোদ্রিকের মুখটা নিজের দিকে ফিরিয়ে রক্তিম জানতে চায়,

“খুব বেশি রাগ করেছে আমার আব্বাজান?”

উপর-নিচ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দেয় রোদ্রিক।রক্তিম ঠোঁট চেপে হেসে রোদ্রিকের পুরো মুখ জুড়ে টপাটপ চুমু খেয়ে জানতে চায়,

“এখনো রাগ আছে?”

“রাগ চলে গেছে।”

প্রাণখোলা হেসে দুহাতে রক্তিমের গলা জড়িয়ে ধরে জবাব দেয় রোদ্রিক। পরপর চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে বলে,

“পাপ্পা, মামা মিসের সাথে বেশি কথা বলেছে।”

“আচ্ছা! বকে দিব মামাকে।”

বাবার থেকে আশানুরূপ জবাব পেয়ে অত্যধিক খুশিতে লাফিয়ে ওঠে রোদ্রিক। পূণরায় ভীষণ উৎফুল্লতার সাথে তোতা পাখির মতো একে একে পুরো দিনের ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো বলতে শুরু করে। বাবাকে বলবে বলে সে পেটের ভিতর কত কত কথা জমিয়ে রেখেছিল! রাত শেষ হলেও তার কথা শেষ হবার নই। এদিকে দুই বাপ-ছেলের বকবকে দৃষ্টির চোখ থেকেও ঘুম পালিয়েছে। মন্দ লাগছেনা তবুও। নির্ঘুম চোখ দুটোই এক রাশ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকে বাপ-ছেলের হাসি হাসি মুখের দিকে। কয়েক ঘন্টার ঘুম তার কতটুকু ক্লান্তি দূর করতো? তার থেকেও দ্বিগুণ ক্লান্তি দূর করতে বোধহয় সক্ষম হয়েছে এই হাস্যোদ্দীপ্ত মুখ দুটি।

চলবে….