একমুঠো রোদ্দুর পর্ব-০৪

0
29

#একমুঠো_রোদ্দুর
#পর্বঃ৪
#আদওয়া_ইবশার

ব্যস্ততম শহরের বুকে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। ল্যাম্পপোস্টের নিয়ন আলোয় অন্ধকারের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পেয়েছে শহরতলী। ফুটপাত ঘেঁষে গড়ে ওঠা স্ট্রিট ফুডের দোকান গুলোতে যুবক-যুবতী থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরীর উপচে পরা ভীড়। বিক্রেতাগণ ত্রস্ত হাতে খাবার বিতরণ করেও ক্রেতাদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। সন্ধ্যার পর মুহূর্তের সময়টাতে প্রচুর বেচাকেনা হয় স্টল গুলোতে। ভীড়ভাট্টা, হৈ হুল্লোড়ে ভিন্ন রকম এক আমেজ ছড়িয়ে পরে চারিদিকে। গাজীপুর চৌরাস্তার এই কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের দুটো দল টহল দিচ্ছে ছদ্মবেশে। মিশিয়ে নিয়েছে নিজেদের সাধারণ মানুষের ভীড়ে। কিছু উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়ের ফুচকার স্টল গুলোর সামনে দাঁড়িয়ে হা হা হি হি করাটা দিহানের অসহ্য লাগছে। উচ্চ স্বরে হাসতে হাসতে মেয়ে গুলোর একে অপরের গায়ে লুটিয়ে পরা দেখে খুব ইচ্ছে করছে, এক একটার কান বরাবর তার কড়াপরা শক্ত হাতের থাপ্পড় লাগিয়ে আজীবনের জন্য বধির করে দিতে। মেয়েদের এমন অতিরিক্ত আহ্লাদীপনায় গায়ে জ্বালা ধরে দিহানের। খেতে এসেছিস ভালো কথা, ভদ্রবেশে খেয়ে চলে যা। তা না করে এমন ফাটা গলায় হা হা হি হি করে ছেলেদের এটেনশন পাবার ধান্দা জুড়িয়েছে। এখন যদি এদের রঙ্গলিলা দেখে কোনো ছেলে টিটকারি ছুড়ে, তবেই কেল্লাফতে। ডিরেক্ট ইভটিজিং এর অভিযোগ করে দিবে। আমজনতাও তখন আর এটা খতিয়ে দেখবেনা, ইভটিজিং করার সাহস কোথা থেকে পেয়েছে ছেলে গুলো। পাবলিক প্লেসে রাতবিরাতে যদি কোনো মেয়ে এমন উশৃঙ্খলের মতো হাসিমজা করে তবে ছেলেরা তো লাই পাবেই। শেয়ালের সামনে মুরগি রেখে দিলে কী শেয়াল না খেয়ে সাধু সেজে বসে থাকবে? যত দোষ নন্দঘোষ! হাঁটুর নিচে ঘিলু নিয়ে চলা আল্ট্রা মর্ডান কিছু মেয়ে জাতি এই বোধটুকু গিলে খেয়েছে। এদের মতো গুটিকয়েক মেয়ে লোকের জন্য গোটা মায়ের জাত আজ অসম্মানিত। লাগামছাড়া মেজাজটা দিহানের মস্তিষ্কের নিউরন গুলোকে অকেজো করে দিচ্ছে বারবার। কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে,চিড়বিড়িয়ে ওঠা রাগটাকে চাপা দেওয়া। বা হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলের সাহায্যে কপাল চুলকাতে চুলকাতে দাঁতে দাঁত পিষে চারপাশে নজর বুলায় দিহান। আশেপাশের পরিস্থিতি ভুলে মনযোগী হয় কাজে। হুট করে সহকারী ইমরান তার পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে অন্যদিকে ফিরে অসহায় মুখ করে ডেকে ওঠে,

“স্যার!”

দিহান আগের মতোই আশেপাশে চোরা নজর রেখে গম্ভীর মুখে সাড়া দেয়,

“হয়েছে কী?”

“তিন ঘন্টা হয়ে গেছে এভাবে ঘুরছি। আর কতক্ষণ? ক্রিমিনালের টিকিটাও তো পাচ্ছিনা। আমরা কী কোনো ভুল ইনফরমেশন পেয়েছি?”

ভীষণ অধৈর্য হয়ে জানতে চায় ইমরান। বিপরীতে ভ্রু কুঁচকে দিহান নিজেও জানতে চায়,

“এতো তাড়া কেন? এক ধরেছে না কী দুই?”

এমন একটা জবাব পেয়ে হতবাক হয়ে যায় ইমরান। কন্ঠে নিদারূণ অসহায়ত্য ফুটিয়ে আহত সুরে পূণরায় ডেকে ওঠে,

“স্যার!”

ইমরান কী বলতে চাচ্ছে দিহান যেন তার সুর শুনেই অদৃশ্য ক্ষমতাবলে বুঝে নিয়েছে, এমন একটা মনোভাব নিয়ে উপর-নিচ মাথা নাড়িয়ে ভীষণ সিরিয়াস মুখভঙ্গি করে বলে,

“বুঝলাম, এক-দুই কিছুই ধরেনি। পা’য়’খা’না কষা হয়ে গেছে। আজ থেকে বেশি বেশি সবজি খাবে ইমরান। আর খরবদার,এমন পাবলিক প্লেসে পা’দ’বেনা। চেপে রাখো। নইলে তোমার গন্ধরাজ পা’দের গন্ধে এতো গুলো মানুষ একসাথে ব’মি করলে অবস্থা জটিল হয়ে যাবে। আ’সা’মি ধরা বাদ দিয়ে তখন এদের সামলাতেই হিমশিম খেয়ে যাব আমরা।”

বেকুব বনে হাঁটা থামিয়ে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকে ইমরান। বড়ো বড়ো চোখ করে দিহানের চলার পথে তাকিয়ে থেকে মনে মনে ভাবে, এই জোকারকে এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের মতো এতো জটিল একটা ইউনিটে অ্যাডিশনাল এসপি পদে নিয়োগ কোন মগা দিয়েছে? এর তো থাকার কথা কোনো এক রঙ্গমঞ্চে। বুক ফুলিয়ে একটা নিঃশ্বাস ফেলে অসহায় মুখে ইমরান নিজেও এগিয়ে যায় সামনের দিকে। মনে মনে যত অ’শ্রা’ব্য গালি আছে সব ছুড়ে দেয় উ’গ্র’বা’দদের উপর। এদের জন্যই আজ ইমরানের এই হাল। শা’লা গুলোর লুকোচুরি খেলাই সামিল হতে গিয়েই দিহানের মতো একটা মিষ্টি অফিসারের দুষ্ট কথায় তার সম্মানের দফারফা হচ্ছে বারবার। ইমরান হতাশ হয়ে দুপাশে মাথা নাড়িয়ে ইতিউতি তাকাতে গিয়েই হঠাৎ চোখ যায়, তার থেকে একটু দূরে একটা স্ট্রিড ফুডের স্টলের সামনে। দেখতে পায় যাকে খুঁজতে গিয়ে তাদের এতো হয়রানি, সেই পায়ের উপর পা তুলে ফুলবাবু সেজে দোকানের সামনে বসে আয়েশ করে কিছু একটা খাচ্ছে।তড়িৎ চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে ওঠে। দিহানের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় সেও ঐদিকে তাকিয়ে আছে। আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা দলের বাকী সদস্য গুলোকে চোখের ইশারায় কিছু একটা ইঙ্গিত দিয়ে পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় দিহান স্টলটার সামনে। মুহূর্ত ব্যবধানে টিমের সকল সদস্য মিলে একে একে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটাকে। দিহান কোমরে গুজে রাখা পি’স্তলটা ক্রি’মি’নালের দিকে তাক করতেই ধরফরিয়ে ওঠে পিছনমুখী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক মেয়েকে টেনে সামনে এনে গলায় ছু’রি ধরে। তৎক্ষণাৎ আশেপাশের মানুষ গুলোর মাঝে ছড়িয়ে পরে আত’ঙ্ক। শুরু হয়ে যায় চিৎকার, চেচামেচি। দিহান সহ টিমের বাকী সদস্য গুলো আচমকা এমন কান্ডে ভড়কে যায়।ভিতর ভিতর অস্থির হলেও বাঃহিক দিকে নিজেদের ঠান্ডা রেখে এগিয়ে আসতে নিলেই লোকটা মেয়েটার গলায় পেচিয়ে রাখা হাতটা আরও জোরালো করে ধারালো ছু’রিটা একদম চামড়ার কাছাকাছি ধরে চিৎকার করে ওঠে,

“আর এক কদম এগুলে এখানেই ফিনিশ করে দিব। দূরে যা, পি’স্ত’ল সড়া হাত থেকে। মা’দা*** কী ভাবছিস? আমারে ধরা এতো সহজ?”

নিজেদের কার্যসিদ্ধি করতে গিয়ে আইন কখনো সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যয়ে ফেলতে পারেনা। দিহান ট্রিগারে হাত চাপতে গিয়েও দমে যায়। এতো গুলো মানুষের ভীড়ে এই মুহূর্তে ডিরেক্ট কোনো একশনে যেতে পারবেনা তারা। গুলি ছুড়তে গেলেও কার থেকে কার শরীরে লেগে যায় কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। তার থেকেও বড় কথা, ক্রি’মি’নালটা মেয়েটার গলায় যেভাবে ছু’রি ধরে রেখেছে, তাদের আচমকা আ’ক্র’মণে আহত হয়ে হাত ফসকে গেলেও ছু’রির আঘাত গলায় লেগে যেতে পারে। এই মুহূর্তে তাদের পিছিয়ে যাওয়া ছাড়া কিছুই করার নেই। ভাবতে ভাবতে দিহান ছু’রির মুখে থাকা মেয়েটার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেই থমকে যায়। পরিস্থিতি ভুলে বোকার মতো তাকিয়ে থাকে স্বল্প পরিচিত মেয়েটার মুখের দিকে। অনুচ্চ সুরে বিরবির করে বলে ওঠে, “মিস অতসী!” আশ্চর্য! দুনিয়ায় এতো মেয়ে থাকতে এই মেয়েকেই কেন তাদের অভিযানে বাগড়া দিতে আসামির ছু’রির মুখে পরতে হলো? তার থেকেও বড়ো প্রশ্ন, এই মেয়ে সাভার ছেড়ে এখানে করছে কী? হতবিহ্বল নয়নে দিহান কতক্ষণ অতসীর আ’ত’ঙ্কে নীল হয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে সামলে নেয় নিজেকে। ঐসব অহেতুক ভাবনার সময় এখন নেই।উপস্থিত পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে সুকৌশলে। মস্তিষ্ক খাটিয়ে যেকোন উপায়ে আসামীকে জব্দ করতে হবে। ভাবতে ভাবতে টিমের বাকী সদস্যদের চোখের ইশারায় পি’স্তল নামিয়ে ফেলার হুকুম দেয়। কিয়ৎক্ষণ সময়ের জন্য চোখ বন্ধ করে কয়েকটা লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজেকে শান্ত করে জলদগম্ভীর সুরে বলে ওঠে,

“হিসাব-নিকাশ সব তোর আর আমাদের মাঝে। মাঝখানে ঐ মেয়েকে টানছিস কেন? ছু’রি নামা গলা থেকে। চলে যা, বাঁধা দিবনা তোকে। কিন্তু ঐ মেয়ের গায়ে যদি একটা আচড়ও পরে, খোদার কসম জনসম্মুখেই তোর ক’লি’জা টেনে ছিঁ’ড়ে ফেলব আমি।”

আসামির সাথে কথোপকথন চালিয়ে যাওয়া অবস্থায় তার অন্যমনষ্কতার সুযোগ নিয়ে সাব ইনস্পেক্টর ইমন সাহা পেছন থেকে আচমকা আসামির হাত টেনে তলপেটে হাঁটু দিয়ে আঘাত করাই তী’ব্র ব্য’থায় ছেলেটা লুটিয়ে পরে মাটিতে। তৎক্ষণাৎ টিমের বাকী সদস্য ব’ন্দুক তাক করে এগিয়ে এসে মাটিতে পরে থাকা অবস্থাতেই ঘিরে ধরে তাকে। ঘটনার আকস্মিকতায় অতসী অসাঢ় ম’স্তি’ষ্কে বিহ্বল হয়ে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকে।দিহান এগিয়ে এসে চোখে-মুখে বিরক্তি ফুটিয়ে শক্ত হাতে অতসীর একটা হাত ধরে একপাশে নিয়ে যায় তাকে। গম্ভীর সুরে আদেশ ছুড়ে,

“এখানেই দাঁড়িয়ে থাকুন। এক পাও যেন নড়চড় না হয়।”

বলা শেষে এগিয়ে যায় আসামির দিকে। দাঁতে দাঁত পিষে কলার ধরে তাকে টেনে দাঁড় করিয়ে স্বপাটে দুই গালে লাগাতার কয়েকটা থা’প্পড় লাগিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বলে,

” শা’লা মিনি বিলাই! কী ভেবেছিলি, তোর গোবরেপোকা বুদ্ধি দিয়ে সাধারণ পুলিশকে ক’পু’কাৎ করে বারবার পালাতে পেরেছিস বলে এটিআই এর থেকেও পালিয়ে যাবি?হাদারাম সম্বন্ধির পোলা কোথাকার! ছেহ্, তোর ঘিলুহীন মাথার পেঁয়াজ পচা বুদ্ধির উপর আমার একশো একটা থুথু।”

বলতে বলতে হেচকা টানে টিমের অন্য সদস্য গুলোর দিকে ছুড়ে দেয়। ফাজলামি সুরে আবারও বলে ওঠে,

“বাচ্চারা, যাও মামা শশুরের পোলারে নিয়ে গিয়ে জামাই আদরের ব্যবস্থা করো। এদিক সামলে আমি আসছি।”

ইমরানকে নিজের সাথে রেখে পুরো টিমকে আসামি সহ বিদায় দিয়ে দিহান ঘুরে দাঁড়ায় অতসীর দিকে। মেয়েটা এখনো আ’ত’ঙ্কে জমে আছে। দুপাশ থেকে দুটো মেয়ে তাকে আগলে ধরে আছে। পিছনে আরও কয়েকটা সমবয়সী ছেলে-মেয়ে দাঁড়িয়ে। দিহান গম্ভীর মুখে অতসীর পা থেকে মাথা অবধি একবার পরখ করে প্রশ্ন করে,

“নাম কী?”

অতসীর নাম জানেনা এই লোকটা? মাত্র একদিনেই ভুলে বসেছে? এই ভুলোমনা স্বভাব নিয়ে লোকটা এতো বড়ো দায়িত্ব পালন করে?মস্তিষ্কে প্রশ্ন গুলো ঘুরপাক খেলেও মুখে কিছু বলতে পারেনা অতসী। ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে থাকে দিহানের দিকে। এখনো প্রা’ণ’না’শের ভয়ে বুকটা তার তীব্র গতিতে উঠানামা করছে। কেঁপে কেঁপে উঠছে সর্বাঙ্গ। এই মুহূর্তে অতসী নিজেকে সামলাবে না কী দিহানের প্রশ্নের জবাব দিবে? তার নিরবতায় বিরক্ত হয়ে ফের দিহান অল্প ধমকের সাথে জানতে চায়,

“আপনি বোবা? নাম জিজ্ঞেস করছি বলছেন না কেন?”

আচমকা ধমকে অল্প কেঁপে ওঠে অতসী। এবারও জবাব না দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে দিহানের দিকে। পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা দুটো ছেলের একজন দিহানের প্রশ্নের জবাব দেয়,

“স্যার ওর নাম অতসী ইবনাত। আসলে স্যার অতিরিক্ত ভয় পেয়ে কথা বলতে পারছেনা।”

দিহান অতসীর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বাকা নজরে তাকায় ছেলেটার দিকে। ভীষণ রুষ্ট চিত্তে বলে ওঠে,

“আপনাকে প্রশ্ন করেছি?”

দুপাশে মাথা নাড়িয়ে না বোধক জবাব দেয় ছেলেটা। সাথে সাথে দিহান রাগত স্বরে পূণরায় বলে ওঠে,

“তো আপনি কথা বলছেন কেন? প্রশ্নটা আপনাকে করা হয়নি, সুতরাং আপনি চুপ থাকবেন। অতিরিক্ত কথা বলা বা শোনা কোনোটাই আমার পছন্দ নয়। যাকে প্রশ্ন করেছি শুধু সেই জবাব দিবে। বাকিরা সাইলেন্ট মোডে থাকবেন?”

দিহান পূণরায় দৃষ্টি ফেরায় অতসীর দিকে। কটমট নজরে শুধু তাকিয়েই থাকে ঐ বোকা বোকা মুখটার দিকে। ঐদিন তো দেখতে যাবার সময় খুব ক্যাড়ক্যাড় করে কথা বলছিল। আহা, কী সেই জ্ঞানী জ্ঞানী কথার ভান্ডার! যে কেউ শুনলেই ভাববে, মেয়েটা না জানি কত সাহসী আর দৃঢ় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। অথচ এখন দেখো! একটা ছুরির সামনে পরেই মুখের বুলি হারিয়ে ফেলেছে। দিহানের রাগটা মূলত এখানেও হচ্ছেনা। মেজাজ খারাপ হবার মূল কারণ হলো, সেই সাভারে বসবাস করা একটা মেয়ে এই রাতের বেলায় গাজীপুর কী করছে? তাও আবার নিজের বয়সী কয়েকটা ছেলে-মেয়ের সাথে! রাগের তীব্রতায় ক্ষণেক্ষণে দিহানের চোয়াল শক্ত হয়ে আসছে। হাতটাও নিশপিশ করছে ঐ নরম তুলতুলে গালটাতে পাঁচ আঙুলের ছাপ এঁকে দেওয়ার জন্য। কিন্তু আফসোস! সেই অধিকার দিহানের নেই।

“সন্ধ্যার পর যেখানে মেয়েদের নিজের এলাকাতেই বাইরে বের হওয়া রিস্ক সেখানে আপনি রাতের বেলা গাজীপুর কী করছেন?”

কোনো অধিকার না থাকা সত্ত্বেও কথার ধাচে নিজের অজান্তেই কিছুটা অধিকারবোধ ফুটে ওঠে দিহানের। তার এমন গম্ভীর্যতা দেখে অবাক হতে হতে খেই হারিয়ে বসেছে অতসী। গতকাল কী সে এই তাহমিদ সারোয়ার দিহানকেই দেখেছিল? না কী এই লোকের যমজ কোনো ভাই আছে? কিন্তু মায়ের মুখে অতসী যতদূর শুনেছিল, বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে দিহান। মানুষটা যদি একজনই হয় তবে, আচরণে এমন আকাশ-পাতাল তফাৎ কেন? তার এই তেজ, এই গম্ভীর্যতা ঐদিন কোথায় লুকিয়েছিল? অতসী তো তার সেদিনের ক্ষণেক্ষণে হাসতে থাকা স্বভাব দেখে ভেবেছিল, লোকটা বোকা। বোকা না হলে কেউ কথায় কথায় হাসে? অথচ আজ! কথার ধরণ দেখে মনে হচ্ছে, ঐগুলো যেন কথা না। পিস্তলের নোজেল থেকে বের হওয়া এক একটা গরম বুলেট।

চলবে….