#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ৩৬+৩৭ 🥳
–‘সিলেটে আমাদের রিসোর্টে যে আপনার পরিচিত কোনো কাপল উঠেছিল, সেখানের মহিলাটা কে? ‘
থমথমে গলায় ইয়ানার প্রশ্নে ভরকে যায় আনাজ। মাত্রই হসপিটাল থেকে এসে রেস্ট করছিলো সে। ইয়ানার এরকম প্রশ্নের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না সে।
এদিকে ইয়ানাও সেদিন শপিং মলে ভদ্রমহিলার চেনাচেনা মুখ দেখে প্রথমে বুঝতে না পারলেও বাসায় এসে বুঝতে পেরেছে সেদিনের থতমত খেয়ে যাওয়া মহিলাটাই তিনি! ইয়ানার স্পষ্টভাবে মনে আছে আনাজ সেদিন মহিলাকে কিভাবে ঠেস মেরে কথা বলেছিলো। এ ব্যাপারে আনাজকে বহুবার জিজ্ঞেস করলেও অন্য প্রসঙ্গ তুলে ব্যাপারটাকে এড়িয়ে এড়িয়ে চলেছে। তবে আজ সে ছাড়ছে না আনাজ। যে হালেই হোক শুনে ছাড়বে।
–‘মানে? কোন মহিলার কথা বলছো? ‘
–‘ আপনার কোন সহকারী ডক্টরের ওয়াইফ ছিলো। এখনো বুঝছেন না? নাকি মেলোড্রামা করছেন?’ (কঠোর গলায়)
–‘আরেহ কি আজব! মেলোড্রামা কেন করতে যাবো। আমি ঠিক বুঝছি না হঠাৎ তুমি এরকম জেরা কেন করছো? ‘
–‘তাহলে সেদিন ভদ্রমহিলাকে শুনিয়ে শুনিয়ে কেন কথা বলেছিলেন? আর কালকে যখন মলে গিয়েছিলাম তখনই বা ওই মহিলা আমাকে মুখ কেন ভাঙালেন? ইটস মিস্ট্রিয়াস! ‘
ইয়ানার কথা শুনতে পেয়ে আনাজের মুখের রঙ কেমন কালচে বর্ণ ধারণ করে। রীতিমতো ঘামতে শুরু করে আনাজ।
–‘কি হলো আপনার মুখ এরকম বিষাদের রূপ নিলো কেনো? ‘
আনাজের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। হাতের মুঠো চেপে ধরে সে৷ চোখের কোনে বিন্দু বিন্দু পানি এসে জড়ো হলো। ইয়ানার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। চোখে চশমা থাকায় ব্যাপারটা বুঝেনি ইয়ানা। ইয়ানা আরো কিছু বলতে যাবে এ সুযোগটা তাকে না দিয়ে আনাজ তাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায় পাশের রুমে। ইয়ানার সর্বাঙ্গে যেনো কাটা ফুটে ওঠে।
————————–
আনাজ পাশের থাকা গেস্ট রুমে যেয়ে বসে আছে। ভেতরে কি করছে বুঝতে পারছে না ইয়ানা। আয়না আর আনুজ বাসার বাহিরে গিয়েছে। আনজানা ঘুমিয়ে আছে৷ রুমে রেগে গজগজ করছিলো ইয়ানা। হঠাৎ কি মনে করে শান্ত হয়। এই মুহূর্তে আনাজের কথা শুনতে হলে তার রাগ দমিয়ে রাখতে হবে এই মনোভাব নিয়ে খানিকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে। এরপর বড় বড় দম ফেলে আনাজের রুমে যায়৷ দরজাটা ভিরানো ছিলো। একটু চাপ দিয়ে ধাক্কা দিতেই দরজাটা খুলে যায়। আনাজের দিকে দৃষ্টি দেয় ইয়ানা। আনাজ ইয়ানার আসা লক্ষ্য করতেই নড়েচড়ে বসে। ইয়ানার মনে হলো আনাজ চোখের পানিগুলো চট করে মুছে নিলো মাত্রই। ব্যাপারটাকে আরো ভালে করে বুঝতে তার দিকে এগোয়। আনাজ নিজের মুখটা হাইড করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। আনাজের মুখশ্রী অবলোকন করতেই আতকে উঠে ইয়ানা। আনাজের চোখ মুখ ফুলে রয়েছে। চোখদুটো রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। দেখে মনে হচ্ছে আনাজ অনেকক্ষণ যাবত কান্নাকাটি করেছে। তাছাড়া তার গালদুটো ভেজা দেখে ইয়ানা নিশ্চিত হয়। খানিকটা অবাকও হয়। আনাজকে তো কোনোদিনই কাঁদতে দেখেনি। সেটা যতোই সিরিয়াস ম্যাটারই হোক না কেনো। তবে আজ? কি এমন রহস্য আছে যে আনাজ এর জন্য এরকম কষ্ট পাচ্ছে?
–‘আনাজ! আপনি কাঁদছেন? আমি কি একটু বেশি বেশি করে ফেলেছি? সরি!’
শান্ত গলায় ইয়ানা বলে। তার মেজাজকে এখন ঠান্ডা রাখতে হবে অপপাত। ইয়ানার কথাশুনেই আনাজ তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে বড় বড় শ্বাস ফেলতে শুরু করে। ইয়ানা থতমত হয়ে তাকেও জড়িয়ে ধরে। আনাজের পিঠে পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
–‘আপনি কি আমার থেকে কিছু লুকচ্ছেন? দেখুন আপনার উত্তর ‘না’ হলেও আমি তাই ধরে নিবো।’
ইয়ানার কাঁধ থেকে মাথা তুলে নেয় আনাজ তাকে বলতে শুরু করে।
–‘ তুমি বারবার যেই ভদ্রমহিলার কথা জিজ্ঞেস করছিলে না? সে একসময় আমার ভালোবাসার মানুষ ছিলো। হৃদয় এর সর্বত্র জুড়ে শুধু তারই রাজত্ব ছিলো। ভালোবাসতাম তাকে পাগলের মতো। আর এটাই হয়তো আমার অন্যায় ছিলো। তার জন্য লাইফে আমাকে প্রচুর স্ট্রাগল করতে হয়েছে। কিন্তু জানো যখন তার বিয়ে হয়ে যায় তখন আমি অনার্স পরীক্ষাই দেইনি। ঠিক বিয়ের আগের দিন এসে আমার কাছে স্বার্থপরের মতো বলে কালকে তার বিয়ে। তারপরও আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। এতোটাই তার পাগল ছিলাম। বুকে পাথর রেখে হেসে হেসে বলছিলাম ‘তুমি মজা করছো না? মিথ্যে বলছো? ‘ তারপর ঠাস করে আমার গালে চড় দিয়ে বলে,
সবসময় মজা করা ভালো নয়। আর আমি যার সাথে বিয়ে করছি না? সে একটা ডাক্তার। অনেক ভালো স্যালারি পায়। এমন বড়লোক ঘরের ছেলেকে তোমার মতো মিডল ক্লাসের জন্য ছেড়ে দিবো? আর তোমার সাথে বিয়ে হলেই বা আমি খাবো কি? জানো আমার না বড্ড ভুল হয়ে গিয়েছিলো তোমাকে ভালোবাসাটা। আমি বলদের মতো ফিউচারের দিকে না দেখেই তোমাকে ভালোবেসেছি। আবার তোমার পাগলামো দেখে ছাড়তেও পারছিলাম না। তবে আজকে না হলেও কোনো একদিন তোমাকে এটা দেখতেই হতো !’
বিশ্বাস করো ইয়ানা এই কথাটা শুনে মূর্তির মতো দাড়িয়ে ছিলাম। নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিলো আমার। আসলেই তো তার তো কোনো দোষ ছিলো না। দোষ তো আমার চাকরি বাকরি কিছু করি না। আমাকে আবার কে বিয়ে করবে? ইয়ানা তুমি সেদিন বলেছিলে না, আমি ভালোবাসা মানে কি সেটা বুঝিই না? হয়তো তাই! নাহলে তাকে হারাতেই দিতাম না। তাকে হারিয়ে পাগলের মতো কেঁদেছি কয়েকদিন। তাকে হারানোর যন্ত্রণা বারবার আমায় গ্রাস করে ফেলছিলো। তিলে তিলে কষ্ট দিচ্ছিলো। নিকোটিনের ধোঁয়ায় নিজেকে বরবাদ করতাম। আমার ধ্বংসরূপি অবস্থা দেখে মা-ও কেঁদে কেঁদে অস্থির হয়ে পড়তো। তবে মা আমাকে এসব অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছে, মনোবল জুগিয়েছে আমার মা। আর আমিও ভাবলাম। কেঁদে তো কোনো লাভ হচ্ছে না। আমাকেও ডাক্তার হতে হবে ~ এমন একটা মনোভাব আমার মনের মধ্যে গেঁথে গেলো। উন্মাদ ভাবে পড়াশোনা শুরু করে দিলাম। রাত দিন পড়া ছাড়া কিছুর প্রতি আগ্রহ ছিলো না। তারপর এভাবল ম্যাডিকেলেও চান্স পেয়ে গেলাম। আর এখন দেখো আমি গোটা ঢাকা শহরের একজন ফেমাস জেরিয়াট্রিশিয়ান! সবার হ্যাড আমি।আজ সেও আফসোস করছে। কিন্তু এখন আমার আফসোস হয় না তাকে নিয়ে৷কিন্তু স্মৃতি গুলো নাড়া দিতেই ইমোশনাল হয়ে পড়ি। দ্যাটস ইট!’
কথাগুলো বলে ইয়ানার দিকে তাকাতেই আনাজ দেখে ইয়ানার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। খুব ইমোশনাল হয়ে পড়েছে সে। আনাজকে বুকের কাছে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,
–‘ মহিলাটা এতো স্বার্থপর কেনো? আপনাকে তো একটু ভালোবাসা দিতে পারতো নাকি? আপনার কষ্ট হচ্ছে তাই না? ‘
রীতিমতো ফুপিয়ে কাদতে শুরু করে ইয়ানা। আনাজ মুখে খানিকটা হাসি ফুটিয়ে বলে,
–‘উহু! আমার এখন মোটেও কষ্ট হচ্ছেনা।’
–‘তাহলে আপনি এভাবে কাঁদলেন কেন?’ (ফুপিয়ে ফুঁপিয়ে)
–‘ এবার তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে আছো না? শান্তি লাগছে ট্রাস্ট মি!’
মিনিট খানেক শান্তি বজিয়ে রেখে আনাজকে বক্ষ- পিঞ্জরে আবদ্ধ করে রাখে ইয়ানা। মনে মনে ভাবে, আনাজের পাস্ট তো তার চেয়েও খারাপ। এ নিয়ে তো আনাজ তাকে কখনো বলে নি, যেভাবে ইয়ানা আনাজকে বলেছে। আর সে অনুতপ্ত বোধ করছে, সেদিন আনাজকে হুট করে ‘আপনি ভালোবাসার মানে বোঝেন?’ কথাটি বলা উচিত হয়নি। আনাজ সেদিনও কষ্ট পেয়েছিলো মেবি। তার হাত দিয়ে আরো শক্ত করে আনাজকে জড়িয়ে ধরে থাকে। সাথে আনাজও। নিঃসন্দেহে এটি একটি প্রশান্তিকর মুহূর্ত।
চলবে,,,
#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ৩৮
টানা কয়েকদিন মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ার পর আজকে রোদের আলো ধরনীর বুকে উঁকি দিচ্ছে। ঝলমলে আলোয় ঢাকা নামক ব্যস্ত শহরের স্নিগ্ধ বিকেলটা বেশ ফুরফুরে।
ব্যালকোনিতে থাকা সদ্য লাগানো ফুলের চারাগুলোয় একে একে পানি দিতে ব্যস্ত আনজানা। গাছগুলোয় আর কিছুদিন গেলেই কলি আসতে শুরু করবে। চন্দ্রমল্লিকা, নয়নতারা, টগর, নীলকন্ঠ ফুলের গাছ দিয়ে ব্যালকোনিটা মুখরিত। আনজানার মন খারাপ হলে এখানে এসে সময় কাটায়। আর কয়দিন বাদে যখন ফুল ফুটবে তখন হয়তো ব্যালকোনি থেকে নড়াটাই দায় হয়ে যাবে।
গাছে পানি দেওয়ার সময় তার খেয়াল হয় আদ্রর কথা। ছেলেটা কেমন আশ্চর্যজনক! রক্ত নেওয়ার পরে আর পাগলামো করেনি। এমনকি আনজানার খোঁজও নেয়নি।ইয়ানার মনে মনে ক্ষোভের জন্ম নেয়। আদ্র কি তাকে মিস করছে না? নাকি অন্য করাণ আছে? কপালে চিন্তার রেশ ফুটে ওঠে তার। হঠাৎ কাঁধের উপর উষ্ণ স্পর্শ পেতেই চট করে মাথা নাড়িয়ে দেখে। খানিক ভরকে গিয়েছিলো সে।ইয়ানা কাঁধে হাত রেখে দাড়িয়ে আছে।
–‘আনজু তোমার কি হয়েছে বলো তো? সবসময় এরকম মনমরা থাকলে চলে? ‘ (ইয়ানা)
নিশ্চুপ থেকেই ম্লান মুখে হাসি ফুটানোর চেষ্টা করে আনজানা।
–‘থাক থাক এভাবে কষ্ট করে হাসতে হবে না। আচ্ছা, আমাকে একটা কথা বলোতো তুমি কি সত্যিই আদ্রকে ভালোবাসো? না মানে তুমি তো সেদিন দেখেছিলে যে ছেলেটা কিভাবে মেয়েদের রাস্তাঘাটে হ্যারেজ করে!’
–‘জানিনা ভাবি!’ তপ্তশ্বাস ফেলে আনজানা বলে।
–‘তবে কি আমি এটা বুঝে নিবো, যে তোমার মনে তার প্রতি ফিলিংস তৈরি হচ্ছে? ‘
–‘ছেলেটাকে মোটেও পছন্দ করতাম না আমি পারতপক্ষে তাকে যতো পারতাম এড়িয়ে চলতাম। কিন্তু দেখো আমি কয়দিন সিলেটে ছিলাম তো ছেলেটা কিভাবে কষ্ট পেয়েছে! আমাকে না পেয়ে নিজেকেই ক্ষতবিক্ষত করেছে। আমি সত্যি তার ভালোবাসা দেখে শিহরিত! তাকে না দেখলে হয়তো জানতেই পারতাম না এভাবে আমাকে পাগলের মতোও ভালেবাসার কেউ আছে! সেই ছেলে আর যাই করুক আমাকে হার্ট করার চিন্তা মাথায় আনতে পারবে না।’
আনজানার কথা শুনে ইয়ানার মুখে হাসির ঝলকানি দেখা দেয়। আনজানার গালে হাত রেখে বলে,
–‘ তোমার প্রখর চিন্তাধারার প্রশংসা করতে হয়। এখন যেহেতু এটা তোমার ফিউচার তাই আমি নাক গলাতে চাই না। তবে, যা করবে ভেবে চিন্তে করবে। এখনো সময় আছে। অবশ্য এ ব্যাপারে আনাজ বাবার সাথে কথা বলছেন। বাবা তো মানতেই চাইছেন না। এখন দেখো কি হয়। আর এ ব্যাপারে এখন কাউকে বলো না। কথা ফাইনাল না হওয়া পর্যন্ত। মানুষ তো তিলকে তাল বনাতে ছাড়ে না!’
মাথা নাড়ায় আনজানা। তার মানে আনাজ তার বাবাকে মানিয়ে নেয়াচ্ছে! সেটারই সম্মতি নেওয়ার জন্য হয়তো ইয়ানাকে পাঠানো হয়েছিলো। আনজানা হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না। ভাবলো কি কথা হচ্ছে একটু শোনা দরকার। পা টিপে টিপে ড্রয়িং রুমের কাছে যেয়ে এক কোনে দাড়িয়ে নিজেকে আড়াল করে রেখে শোনার চেষ্টা চালায়। বাবার গলা পাওয়া যাচ্ছে, তবে কি কথা হচ্ছে তা স্পষ্ট ভাবে শোনা যাচ্ছে না। হতাশ মুখে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হয় আনজানা।
—————————
–‘এখন বল তোর সুপার্ব ভাইটার অসাধারণ কীর্তির জন্য কিসের ডিগনিটি দিবি? ‘
আনাজের শব্দ কানে বেজে উঠলেই সেদিকে তাকায় আনজানা। এতোক্ষণ অস্থির হয়ে নিজের রুমটাতে পায়চারী করছিলো সে।
–‘মানে? বাবা রাজি হয়েছে? ‘
–‘হেহ বললেই হলো?…..
আনাজ আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই মুখটা পাঁচের মতো কুচকে ফেলে আনজানা। আনাজ খানিক হেসে আবার বলতে শুরু করে,
-‘মানে বাবাকে বললাম আর রাজি হয়ে গেলো না? এতোক্ষণ ধরে বুঝলাম এদিক সেদিক ঘুরিয়ে তবেই বাবা রাজি হয়েছেন।’
-‘আহা! সত্যি ভাইয়া? ‘ আনজানার মনে আনন্দের বন্যা বয়ে গেলো।
–‘তো তোকে কে মিথ্যা বলবে? ‘ (বিরক্তিকর আওয়াজ করে)
–‘ইয়ে, গ্রেটফুল ফর ইউ মাই সুপার সনিক ব্রো!’
আনাজের কাছে এসে জড়িয়ে ধরে দুবাহুর মাঝে আবদ্ধ করে নেয় আনজানা। আনাজ মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় আর বলে,
–‘তুই কতো বড় হয়ে গেলি রে! আর কয়দিন ছোট থাকলে কি হতো? এখন আমি কাকে আদর করবো? ‘
–‘সবই যদি আমি পাই তাহলে ভাবিকে ঘরে তুললে কেনো? ‘ (ব্যাঙ্গের সুরে আনজানা বলে)
–‘ধূর ছাই, সব কিছুর মূল মা’ (আনাজ)
–‘এহেম…’ ইয়ানা গলা খাঁকারি দিতেই সেদিকে তাকায় আনজানা আর আনাজ। আনাজ তাকাতেই ইয়ানা তার দিকে চোখ রাঙায়। ভরকে ঢোক গিলে আনাজ।
–‘কি বলা হচ্ছিলো যেনো ভাইবোনের মধ্যে? ‘
ইয়ানা প্রশ্নে হেসে গড়াগড়ি দেওয়া শুরু করে আনজানা। আনজানার দিকে চোখ গরম করে তাকায় আনাজ।
–‘ওই___আসলে… তোমার সম্পর্কে কিছু বলিনি সুইটহার্ট! ‘
ইয়ানার হালকা ধমকানিতে কাবু হয়ে যায় আনাজ। অন্যদিকে তাকিয়ে চুপচাপ রুম থেকে বের হয়ে যায়। নিশ্চিত রাতে বেলা ইয়ানা এর জন্য জেরা আর শাস্তি নামক বাঁশগুলা রেডি রাখছে!
.
.
চলবে,,,
#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ৩৯
আদ্রর সামনাসামনি আসতেই এক ছটাক লজ্জায় আর অস্বস্তিতে জবুথবু হয়ে যায় আনজানা। অবশেষে সকল বোঝাপড়া শেষে আনজানাকে দেখতে এসেছে আদ্র। পুলকিত হৃদয়ে এক অন্যরকম উত্তেজনার মাদল বেজেই চলছে।
মুখ গম্ভীর করে বসে আছেন আনুজ। মুখে হাসির ছিটেফোঁটাও নেই। তিনিও মেয়ের বিয়ের জন্য উপযুক্ত পাত্র খুঁজছিলেন, তবে আদ্রর মতো কোনো ছেলে যে তার জামাইয়ের রূপ নিবে তা তিনি চিন্তাতেও আনতে পারেননি। তবে, মেয়ের খুশিটাই বড়। এছাড়া কিছুই করার নেই! আনজানার দিকে মনোনিবেশ করেন তিনি৷ মেয়ে যেভাবে মুচকি মুচকি হাসছে তাতে বুঝতে বাকি রইলো না মেয়ে এক পায়ে রাজি হয়ে বিয়ে করছে।
তবে, সমস্যা বাঁধলো এই জায়গায় যে আদ্রর মা-বাবা কেউই পৃথিবীতে নেই। আদ্রর যখন পনেরো বছর তখনই তার বাবা দেহ রেখেছে। দুবছর আগেও মা বেঁচেই ছিলেন। বারবার আদ্রকে বলছিলেন বিয়ে করে নিতে কিন্তু আদ্র ছিলো আনজানার জন্য অপেক্ষাকৃত। এতো দিন একা থাকতে কষ্টও কম হয় নি তার, মানিয়ে নিয়েছে। তবে কষ্ট করে পড়ে সেও এক বড় সড় বিজনেসের অনার। কাছের মানুষ বলতে কেবল গুটি কয়েক বন্ধুকেই বুঝে। তবে, আজকে বেষ্ট ফ্রেন্ডের মতো একজনকে নিয়েই পাত্রী দেখতে এসেছে।
এতোক্ষণ আনাজের সাথেই গল্প করছিলো সে। তার গায়ের গড়ন, উচ্চতা আর শালীনতাবোধ দেখে যে কারোরই পছন্দ হতে বাধ্য। এমনই আকাশচুম্বী সৌন্দর্যে ঘেরা দেহসৌষ্ঠবের অধিকারী। তাই চোখের পলকেই সবার পছন্দ হয়ে গিয়েছে। অবশ্য সেদিন আদ্রর ড্রিংক করার ব্যাপারটা আনাজ-ইয়ানা-আনজানাতেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। আয়না বা আনুজের কানে গেলে এমন ছেলেকে কখনোই জামাই করার স্পর্ধা করতেন না।
চায়ের ট্রে-টা নিয়ে আনজানার আগমনে ভালোবাসার বাতাস এসে বাড়ি খায় আদ্রর গায়ে। লাল শাড়ীতে একদম অপরূপা লাগছে আনজানাকে সন্দেহ নেই। কপালের লাল টুকটুকে টিপ টা মুখে এক অন্যরকম মায়া একে দিয়েছে। আর রক্তবর্ণের লিপস্টিক দেয়া ঠোঁটে যেনো এ্যালকোহল মিশ্রিত রয়েছে, নেশাক্তময়। আনজানা একে একে সবার হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে দিয়ে আদ্রর কাছে আসে। আনজানার নজরকাঁড়া রূপ থেকে চোখ ফেরানো দায় হয়ে পড়েছিলো। আনজানার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে টেরই পেলো না আনজানা চায়ের কাপটা ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো। পরে নিজের বেলাল্লাপনার কথা উপলব্ধি করতে পেরে নিজের চিন্তার অজস্র থুথু ছিটিয়ে দিয়ে অন্যদিকে মন দেয়। ঠোঁটের কোণে এখনো মিষ্টি হাসি দৃশ্যমান। তাদের প্রথম দিনেই এমন কান্ড দেখৈ ঠোঁট টিপে চাপা হাসি দেয় আনাজ-ইয়ানা। মনে মনে খুশি আনাজও। ভাইয়ের কর্তব্য পালন করতে পেরেছে সে!
–‘তো পাত্র-পাত্রীর দেখা দেখি হয়ে গেলে বিয়ের দিনকাল ধার্য করা যাক? ‘ (আনাজ)
–‘জ্বি জ্বি অবশ্যই!’ (আদ্র)
–‘কিসের বিয়ের দিন তারিখ ধার্য? এটা তো শুধু রেজিস্ট্রির ব্যাপার!’
আনুজের প্রথম কথায় সবাই ভরকে গিয়েছিলো। গলাতেও সিরিয়াস ভাবটা ছিলো। তবে পরের কথায় আদ্র যেনো প্রাণপাখি ফিরে পায়!
–‘হ্যা বাবা, রেজিস্ট্রির কথাই বলছিলাম’ (আনাজ)
–‘ এক সপ্তাহ পর করলে কেমন হয়? ‘ (আনুজ)
–‘বেশি দেরী হয়ে যাচ্ছে না? ‘
এই মুহূর্তে আনুজ আর আনাজ ই কথা বলছে। বাকি সবাই নির্বাক শ্রোতা!
–‘আ..ঠিক আছে যেটা সবাই ভালো বুঝেন।’ (আদ্র)
–‘হুম। সামনে ২৯ তারিখে তোমাদের বিয়ের রেজিষ্ট্রেশন কম্পিলিট হবে, আর আনজানার পড়ালেখা শেষ হলেই ঘটা করে বিয়ে দেওয়া হবে’
আনুজের কথায় সবাই একত্রে সজোড়ে আলহামদুলিল্লাহ বলে ওঠে। আনজানা আর আদ্রর চোখাচোখি হয়। আদ্র লক্ষ্য করে আনজানার মুখটা লজ্জায় রঙিন হয়ে আছে।
এরমধ্যে আনজানা আর আদ্রকে কথা বলার জন্য আলাদা রুমে পাঠাতে চাইলেও যেতে চায়নি আদ্র। কারণ তার মতে, সেখানে সবাই নিজেদের জানার জন্য নতুবা কথা বলার জন্য যায়। দুটোই আনজানা আর আদ্রর মাঝে পূর্বেই ঘটে গিয়েছে। আর যা পার্সনাল কথা বলার আছে সব বিয়ের পরেই বলবে। তাই আর নিজেদের মধ্যে টাইম স্পেন্ড করা হয়নি। দিনকাল ঠিক হতেই সবাই একে অপরের সাথে কোলাকুলি করেন।
এসময় আনাজ আদ্রর সাথে প্রাইভেটভাবে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করে। আদ্র কোনো রকম দ্বিধা ছাড়াই যায়। আনাজ তার রুমে যেয়ে আদ্রকে বেডে বসায় তার হাত জোড়া ধরে অনুরোধের সুরে বলে,
–‘দেখো আদ্র, তোমার এই ভালোবাসা দেখেই কিন্তু আমার একমাত্র বোনটাকে তোমার অধীনে ন্যস্ত করছি। খুব আহ্লাদী একটা মেয়ে। কথায় কথায় অভিমান করতে ভুলে না। তবে আমাদের সবার প্রাণভোমরা। আমার বোনটাকে পরম যত্নে রেখো, যত ভালোবাসা দেওয়া যায় তার কমতি রেখো না। তোমার কাছে বিশেষ এসপেক্টেসন থাকবে, প্লিজ কখনো যেনো কষ্ট দিও না। নাহলে আমি মরে যাবো। আর ওর মধ্যে তেমন জেদ নেই, তোমার ভালোবাসাতেই কিন্তু সন্তুষ্ট থাকবে। মাঝে মাঝে বেড়াতে নিয়ে যেয়ো। আর হ্যা, ও একটু একঘেয়ে স্বভাবের মেয়েও বটে! যদি কখনো ঘুরতে যেতে চায় তাহলে নিয়ে যেও। আমি জানি তুমি তাকে খুব ভালোবাসো, এসব পালনও করবে। এই ভাইটাকে হার্ট করো না?!’
–‘ইনশাআল্লাহ, আপনি দোয়া রাখবেন আমাদের জন্য। আনজানা ছাড়া আমার পৃথিবীটা শূন্য। তাকেই উজ্জ্বলতার নক্ষত্র হিসেবে আমার জিবনে দেখেছি। তাকে পেয়েছি খোদার দরবারে কোটি কোটি শুকরিয়া। তবে, আপনাকে কথা দিচ্ছি তাকে হারাতে দেবো না’
–‘আলহামদুলিল্লাহ’! হাসির দূত্যি ছড়িয়ে পরে আনাজের মুখে। এটারই আশাবাদী ছিলো সে…
.
.
চলবে,,,