#একি_বন্ধনে_জড়ালে_গো_বন্ধু
#পার্ট_১৬
#কাজী_সানজিদা_আফরিন_মারজিয়া
শাহরিয়ারের নজর প্রথমে পড়ে চারুর দিকে। গোলগাল উজ্জ্বল মুখশ্রী। সুন্দর গড়ন, যদিও আগের থেকে কিঞ্চিৎ পরিবর্তন হয়েছে৷ আগের মতো পাতলা গড়ন নেই। তবে খুব বেশি পরিবর্তন নেই সেই পূর্বের চারুর সাথে। নাকের স্বর্নের নাকফুলটা মুখের সামান্য পরিবর্তন এনেছে বোধহয়। বিয়ের পরে তো চারুর সাথে আর দেখা হয়নি, তাই এই পরিবর্তনটাও শাহরিয়ারের কাছে নতুন।
শাহরিয়ারের ভ্রু কুৃঁচকে আসে। সে বিশ্বাস করতে পারে না তার সামনে চারু। এত বছর পর এমন করে দেখা হয়ে যাবে তা যেন পুরোপুরি ধারণাতীত। সে কখনোই চায়নি এই মেয়েটার সাথে পুনরায় দেখা হোক।
পুষ্পি তার স্বামীর দৃষ্টি পর্যবেক্ষণ করছে৷ তার খুব হিংসে লাগছে, অসহ্য লাগছে। চারুকে সরিয়ে দৃষ্টির অগোচর করতে ইচ্ছে হচ্ছে। হৃদয়ে দহন সৃষ্টি হচ্ছে। এমন হিংসুটে, পরিস্থিতি মেনে না নিতে পারার মতো মেয়ে পুষ্পি কখনোই ছিল না। এখন নিজেকে বড্ড অচেনা লাগে। শাহরিয়ারকে বলতে ইচ্ছে করে, ‘কেন চেয়ে আছেন তার দিকে? কেন, কেন? দৃষ্টি সরিয়ে ফেলুন প্লিজ!’ কিন্তু এসব বলা তার দ্বারা কখনোই সম্ভব না।
সাবেরী খাতুন উৎফুল্লতার সহিত বলে, “চারু দেশে এসেছে, দেখেছিস বাবা! কত বছর পর! একদম যেন হারিয়ে গিয়েছিল মেয়েটা। এখন আবার দোষ দেয়, তোর বিয়ের খবর জানাইনি কেন! কি করে জানাতাম জিজ্ঞেস কর তো বাপ?”
চারু ঘনঘন চোখের পাতা ফেলে। ঠোঁটে শুকনো হাসির রেখা এঁকে শাহরিয়ারকে সুধায়, “কেমন আছো?”
চারুর প্রশ্নের আগেই সাবেরী খাতুনের একাধারে বলে যাওয়া কথার স্রোতে, শাহরিয়ারের স্তব্ধতা কেটে যায়, চমক কেটে যায়, বিস্ময় দূর হয়। মনের মাঝে জমা করে রাখা সুপ্ত অভিমান হঠাৎই যেন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে৷ নিস্তব্ধ অভিমান, প্রলয়ঙ্কারী ক্রোধে টার্ন নেয়। হাতের ব্রাশটা মুষ্টিবদ্ধ করে নেয় প্রবল ক্রোধে। নিজেকে আপ্রাণ চেষ্টায় স্বাভাবিক রেখে প্রথমে পুষ্পির দিকে চায়, পরে দরজা থেকে সরে পুকুর পাড়ের দিকে রওয়ানা দিতে দিতে জবাব দেয়, “খুব ভালো। কবে এসেছিস দেশে?”
চারু জবাব দেয়, “খুব বেশিদিন হয়নি।”
একটা সময় ছিল যখন শাহরিয়ার তুই করে সম্বোধন করলেই চারু অভিযোগের স্বরে বলতো, “তুমি আবারও আমায় তুই করে বলছ। তুই সম্মোধন আমার অপছন্দ। তুমি তা জানো। তবু…”
শাহরিয়ার হাত ধরে বলতো, “সম্বোধনটা ব্যাপার না, কে করছে, কিভাবে করছে, কতটা ভালোবেসে করছে, সেটাই মূল বিষয়। তুই আমার কাছে ‘তুই’ হয়ে যতটা প্রিয় ‘তুমি’ হয়েও ঠিক ততটাই।”
চারু উপলব্ধি করে, ‘যেই অতিত যত সুন্দর, সেই অতিত তত বেশি দহন সৃষ্টি করে।’
শাহরিয়ার ততক্ষণে পুকুর পাড়ে। চারু, পুষ্পি সহ সকলের দৃষ্টির অগোচরে। আর কোনো প্রশ্ন কিংবা উত্তর কারো তরফ থেকে আসে না। আকস্মিক নিরবতায় ছেয়ে যায় জগত। শাহরিয়ার পুষ্পিকে ডাকে, “পুষ্প….”
চারুর মুখটা সদাহাস্যজ্বল। যেকোনো পরিস্থিতিতেই হাসি ধরে রাখতে পারে বোধহয় মেয়েটা। এই যে এত বছর পর নিজের প্রিয় প্রাক্তনকে দেখেও স্বাভাবিক রইল, শাহরিয়ারের শান্ত উপেক্ষা, নিজের ভেতর এত বছর যাবত জমিয়া রাখা অপরাধবোধ, সবটা নিয়েই সে নিজের স্বত্ত্বা বজায় রাখতে পেরেছে, এটাই বা ক’জন পারে? একসময় শাহরিয়ার নিজেও বলতো, ‘এটা তোমার খুব ভালো গুন চারু। আমি তোমার সাথে সাথে তোমার এই গুনটাকেও প্রবল ভালোবাসি চারুলতা।’
চারুর হঠাৎ করেই জানতে ইচ্ছে হলো, “শাহরিয়ার এখনও কি সেই আগের মতো কথায় প্রভাবিত করতে পারে মানুষকে, যেমনটা করেছিল তাকে?”
সকল ভাবনাচিন্তার ইস্তফা ঘটিয়ে সে পুষ্পিকে বলল, “আজ আমি আসি। তোমার সাথে অন্যদিন এসে গল্প করবো পুষ্পি। তোমার সঙ্গে অনেক অনেক গল্প করার ইচ্ছে নিয়ে আজ যাচ্ছি, আবার আসবো।”
পুষ্পিও সম্মতি দেয় ভদ্রতার সহিত। কিন্তু তার বলতে ইচ্ছে হলো, “আর আসবেন না প্লিজ৷ আপনি আমার স্বামীর সম্মুখে পুনরায় পরবেন না দয়াকরে।” তার মনে মনে ‘মেনে না নিতে পারার’ মনোভাবটা কেউ টের পায় না। পুষ্পির এই আনমনে দাঁড়িয়ে থাকা সময়টুকুর মাঝেই চারু সাবেরী খাতুনের থেকে সাময়িক বিদায় নিতে যায়। যাওয়ার আগে সাবেরী খাতুন জানতে চায়, “তোর মা কেমন আছেরে?”
চারু উদাস হয়ে বলে, “বাবা মারা যাওয়ার পর একটু মনমরা হয়ে গেছে। ভাবছি এবার যাওয়ার সময় সাথে করে নিয়ে যাব। এখানে একা থাকলে আরো একাকিত্ব বোধ করবে।”
সাবেরী খাতুন বিস্ময় নিয়ে জানতে চায়, “তোর বাবা…..! কবে? কিভাবে?”
চারু জবাব দেয়, “তিন বছর দুইমাস চলছে। হার্ট অ্যাটাক।”
সাবেরী খাতুন বলে, “কিছু জানতে পারলাম না! তোর মাকে নিয়ে আয় না একদিন? কত দিন দেখিনা ওরে!”
চারু মলিন হাসে। বলে, “তুমি একদিন চলো না, খালা?”
সাবেরী খাতুন জানায়, যাবে সে।
এর মাঝেই মুনমুনের আগমন ঘটে। সে তো মহাখুশি, আবেগে আপ্লুত। প্রথমেই জড়িয়ে ধরে বলে, “চারু আপা! তুমি তো আরো বেশি কিউট হয়ে গিয়েছ! তোমাকে আমি কত যে মিস করেছি! কেমন আছো তুমি?”
চারু আদরের সহিত বলে, “চাঁদ! তুই কত বড়ো হয়ে গিয়েছিস! এইটুকু দেখে গিয়েছিলাম! আমি ভালো আছি। তুই কেমন আছিস, চাঁদ?”
মুনমুন বলে, “আপা! তোমার এই ডাকটা কত যে মিস করেছি! আর কেউ আমাকে কখনো চাঁদ বলে ডাকেনি। ইউ আর দ্যা অনলি ওয়ান!”
তারপর আকস্মিক উতলা হয়ে জানতে চায়, “আপা? তুমি কি চলে যাচ্ছো? থেকে যাও না আজ এ বাড়ি?”
চারু বলে,”নারে মনা! ছেলেটাকে ওর বাবার কাছে রেখে এসেছি। শাফিনের কাছে শুনলাম তোরা এসেছিস তাই এলাম। এতক্ষণে নিশ্চয়ই কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে। আবার আসবো। আজ যাই।”
সাবেরী খাতুন যাবার আগে বারবার করে বলে দেয়, “পরের বার আসার সময় তোর ছেলেটাকে সাথে করে নিয়ে আসবি কিন্তু।”
চারু যেতে যেতে বলে, “আনবো খালা। সাথে তোমাদের নিয়ে যাব।”
শাহরিয়ার পুনরায় পুকুর পাড় হতে পুষ্পিকে ডাকে। আচমকাই সবকিছু অসহ্য ঠেকছে তার কাছে। খানিক বিরক্তির স্বরেই বলে, “বারবার ডাকছি তোমায়। সাবান আর তোয়ালে নিয়ে এসো পুষ্পি।”
পুষ্পি রুমে এসে লাগেজ থেকে তোয়ালে বের করতে করতে ভাবে শাহরিয়ারের প্রথমবারের মতো ‘পুষ্পি’ ডাক নিয়ে। বিয়ের এতগুলো মাসেও সে পুষ্পিকে ‘পুষ্প’ ব্যাতিত ‘পুষ্পি’ নামে ডাকেনি। আজ কেন ডাকল? খুব দুঃখ অনুভব হয়। দুঃখী সময়গুলোতে স্বাভাবিক ব্যপারগুলোও অস্বাভাবিক ঠেকে মানুষের কাছে। কি অদ্ভুত মনুষ্য মন!
হাবিজাবি ভাবতে ভাবতেই তোয়ালে নিয়ে যায়। শাহরিয়ারের মামী একটা নতুন সাবান বের করে দেয়। আনমনা হয়েই সেসব নিয়ে পুষ্পি পুকুর ঘাটে যায়।
শাহরিয়ার পানি ঘোলা করে গোসল করছে। কপালে তখনও ভাঁজ পড়া তার। রাগ হয়ে থাকা শাহরিয়ারকে পুষ্পি ভীষণ ভয় পায়। ধারেকাছেও যেতে ইচ্ছে হয় না। নরম থাকা অবস্থায় মানুষটা যতটা মায়ার, গরম হয়ে গেলে ততটাই ভয়ংকর।
পুকুরের সামনে দিয়ে ঘেরাও দেয়া আছে। অন্যঘাট হতে কেউ দেখতে পাবে না কিছু। পুষ্পি পুকুর ঘাটের বৈঠকে তোয়ালেটা রাখে। তিনটে সিঁড়ি নেমে সাবানের কেসটা রেখে বলে, “আপনার তোয়ালে আর সাবান রেখে গেলাম।”
শাহরিয়ার অন্যদিক ফিরে গোসল করছিল। পুষ্পির কথায় ওর দিকে ফিরে চাইল। বলল, “গেলাম মানে? নিচে নামো। আমার পিঠটাতে একটু সাবান ডলে দাও।”
পুষ্পি অবাক হয়ে যায়। পিঠে সাবান দিবে মানে? রান্নাঘর থেকে পুকুরের দূরত্ব খুব বেশি না। কথা শুনা না গেলেও ঘটমান দৃশ্য লক্ষ্য করলে স্পষ্ট দেখা যায়। শাফিনের দুই ভাবি রান্নাঘরে রান্নাবান্না করছে। তারা নিশ্চয়ই এসব দেখে কুটিকুটি হাসবে, আর পুষ্পির লজ্জা লাগবে। তাই সে বলে, “এসব আমি পারব না।”
শাহরিয়ার বলে, “বেশি অবাধ্য হয়ে যাচ্ছ তুমি। যা বলছি তাই করো।”
পুষ্পি বলে, “এত রুড বিহেভ করছেন কেন?”
পুষ্পির আরো কড়া কড়া কথা শুনিয়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছিল, কিন্তু মেয়েটার ধৈর্য্যশক্তি প্রখর। কষ্ট হজম করতে জানে। স্বামীর এমন একটুআকটু রুড ব্যাবহারও মেনে নিতে পারে।
শাহরিয়ার পানিতে পা ভিজিয়ে শেষ শুকনো সিড়িটাতে বসে। গা ডলার সোপটা এগিয়ে দেয় পুষ্পির দিকে। পুষ্পি ততক্ষণে নিচেই নেমে এল। শাহরিয়ারের থেকে সোপ নিয়ে তার আদেশ মান্য করল, ইন্সট্রাকশন অনুযায়ী পিঠের উপর নিচ ডলছিল। শাহরিয়ার মাঝে একবার বলল, “ঘাড়টা একটু টিপে দাও তো।”
পুষ্পির খুবই অস্বস্তি হয়। আড়চোখে রান্নাঘরে দিকে চায়, ভাবীরা দেখছে কিনা লক্ষ্য করে। বিরক্তিতে মাথা ধরে যায়। একেতো যেখানে তার রাগ করার কথা সেখানে সে রাগ দেখাচ্ছে, তার উপর উদ্ভট উদ্ভট আদেশ। পুষ্পি বলে, “কি শুরু করলেন?”
শাহরিয়ার বলে, “আগেও বলেছি, এখনও বলছি, স্বামীর আবদার মান্য করা সোয়াবের কাজ। দ্রুত টিপে দাও। ঠান্ডা লাগছে।”
পুষ্পির ইচ্ছে করে ঘাড়টা মটকে দিতে। নিজে ভেবে নিজেই আঁতকে ওঠে। কি সাংঘাতিক! তাই বলে মটকে দেয়ার সাধ জাগবে। অনিচ্ছা সহিত শাহরিয়ারের এই ইচ্ছেও মান্য করে।
শাহরিয়ার খানিক মজার ছলে বলল, “তুমি ভালো ফিজিওথ্যারাপিস্ট হতে পারতে চাইলে। দূর্দান্ত ম্যাসেজ করো।”
পুষ্পি পিঠে একটা পুরোনো ক্ষত দেখে প্রসঙ্গ পাল্টে জানতে চাইল, “আপনার পিঠে এটা কিসের দাগ?”
শাহরিয়ার নির্দ্বিধায়, অবলীলায় বলে ফেলে, “তোমার নখের।”
পুষ্পি প্রতিবাদ করে বলে, “এত মিথ্যা বলেন আপনি! মিথ্যুক!”
শাহরিয়ার মুখ টিপে হাসে। এবং বলে, “এত ভালো ম্যাসেজ করছো, মনে হচ্ছে গোসল করতে করতে ঘুমিয়ে যাব। যাও যাও এখন ছুটি তোমার।”
পুষ্পি ইচ্ছাকৃত ঘাড়ে নখের আচর কেটে দ্রুত সিড়ি বেয়ে উপরে চলে আসে। মিথ্যা কথা না? এবার সত্যি সত্যি আঁচড় খাক!
শাহরিয়ার আর্তনাদ করে, “উহ!” তারপরই হেসে ফেলে। মেয়েটার ধৈর্যশক্তি প্রথমবারের মতো শাহরিয়ারের হৃদয় স্পর্শ করে। স্বামীর প্রাক্তনের সাথে সাক্ষাৎ এর কিছু মূহুর্ত পর স্বামীর আদেশ এমন স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারে ক’জন মেয়ে? এই মেয়েটা পেরেছে। কি ধৈর্য্যশীল বউ তার! সে সৌভাগ্যবান।
সকালের নাস্তাটা খুব জমজমাটভাবে হয়। তিন-চার পদের পিঠাপুলির আয়োজন করা হয়। খেজুরের রস, খেজুরের গুড়ের পায়েস সহ আরো অনেক কিছুর আয়োজন। শাফিনের বড়ো দুই ভাই, তাদের বউ, বাড়ির সকল ছানাপোনা সহ পরিবাদের সকলে মিলে ছোটখাটো আলাপচারিতাও হয়ে যায়। মাঝেসাঝে হাসির হিল্লোল পড়ে। শাফিনের সাথে মুনমুনের ঝগড়া, সেতো অলিখিত কর্মসূচি। বাচ্চাগুলো এই অল্প কিছু সময়েই পুষ্পির ভক্ত হয়ে উঠেছে। কাকীমা কাকীমা করে পাগল করে দিচ্ছে। মুরব্বিদের জাতীয় কথা, ‘সু সংবাদ শুনবো কবে’ কথাটা ইতোমধ্যেই কয়েকবার শোনা হয়ে গিয়েছে পুষ্পির। অবস্থা তার এমন, ‘না পারে কিছু কইতে, না পারে সইতে’।
খাওয়া দাওয়া শেষে পুষ্পি মুনমুনের কাছ থেকে কৌশলে চারুর আদ্যোপান্ত জানার চেষ্টা করে। কি হয়, কি সম্পর্ক, হ্যানত্যান। মুনমুনও বলে। যার সারাংশ এই যে, চারু সাবেরী খাতুনের বান্ধুবীর মেয়ে। চারুর পরিবার আর শাহরিয়ারদের পরিবার একসময় গলায় গলায় খাতির ছিল। শাহরিয়ার আর চারু প্রায় সমবয়সী৷ শাহরিয়ার দুই মাসের বড়ো কেবল৷ ছোট বেলা থেকে বড়ো বেলা প্রায় পুরোটাই দুই পরিবারের একসাথেই কাটে। গ্রামের বাড়িও পাশাপাশি গ্রামে, শহরেও দুই পরিবার পাশাপাশি ফ্লাটে ছিল৷ এরপর হঠাৎ একদিন চারুর বাবার ইচ্ছেতে চারুদের বাসা পরিবর্তন হলো। দুই পরিবারের মাঝে সমস্ত যোগাযোগ ক্রমশ কমতে লাগল। চারুর বিয়ে হয়ে ইতালি চলে গেল। দুই পরিবারের মাঝে যোগাযোগ কমল, সখ্যতা কমল, এরপর এক সময় প্রায় ছিন্নই হয়ে গেল সম্পর্ক। এইতো। মুনমুন তখন ছোট ছিল তাই খুব বেশি কিছু জানে না।
রুমে এসে লাগেজ থেকে কিছু কাপড়চোপড় নামিয়ে আলনায় রাখে পুষ্পি৷ শাহরিয়ার রুমে এসে বলে তৈরি হও, ঘুরতে বের হবো। পুষ্পি সব ভুলে বলে, “এখন? সত্যি! এক্ষুনি রেডি হচ্ছি।” তারপর আবার কি যেন ভেবে নিস্তব্ধ হয়ে যায়। শাহরিয়ার আড়চোখে তা লক্ষ্য করে। জানতে চায়, “কি হয়েছে?”
পুষ্পি বলে, “কিছু না। একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”
শাহরিয়ার বলে, “একটা কেন? একশটা করো।”
পুষ্পি খানিক ইতস্তত করে সুধায়, “অতিত মনে পড়ে যাচ্ছে না আপনার?”
শাহরিয়ার শার্ট এর বোতাম লাগতে গিয়ে থমকে তাকায়। একরাশ বিরক্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কিসের অতিত?”
পুষ্পির কিছু বলার অপেক্ষা না রেখে নিজেই বলে, “কোনো অতিত-টতিত নাই। মনে করার মতো বিশেষ কিছুও নাই। দ্বিতীয়বার এসব অযাচিত প্রশ্ন করবে না। দ্রুত তৈরি হয়ে নাও।”
পুষ্পির রাগ হয়। কেন ওর উপর উল্টো তেজ দেখাচ্ছে? বলে, “আমি কোথাও যাব না এখন। ইচ্ছে করছে না। আপনি যান।”
শাহরিয়ার রূঢ়ভাবে বলে, “আমি যখন বলেছি যাবে, তার মানে যাবে। আমার অবাধ্য তুমি হতে পারবে না। কখনোই না।”
পুষ্পি এলোমেলো ভাবে দ্রুত গতিতে আলনায় কাপড়চোপড় রাখে। কিছু না বলতে পেরে রাগে জিদে তার চোখ ছলছল করে ওঠে৷ কেন তার সব কথা মানতে হবে? কেন পারবে না অবাধ্য হতে? সব কি তার ইচ্ছেতে চলবে?
পুষ্পি অবাধ্য হয়। শাহরিয়ারকে প্রতিত্তুর করে, “আমি যখন বলেছি, যাব না। তার মানে যাব না, ব্যাস।”
(চলবে)…..