#একি_বন্ধনে_জড়ালে_গো_বন্ধু
#পার্ট_১৯
#কাজী_সানজিদা_আফরিন_মারজিয়া
শাহরিয়ার আর পুষ্পি প্রফুল্লচিত্তেই বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে। ভরদুপুর তখন। শীতের কুয়াশা বিলিন হয়ে তেজী সূর্য কিঞ্চিৎ তেজ নিয়ে মহাবিশ্বের ছোট একটা দেশের আনাচে-কানাচে ভ্রমণ করছে। এই সুখী দম্পতি দরজার কাছে যেতে না যেতেই, ভেতর থেকে টংটং শব্দ তুলে দু-তিনটে স্টিলের থালাবাটি পুষ্পির পা ছুঁয়ে অগ্নিমূর্তি নিয়ে ছুটে যায় অনেকখানি দূরে।
শাহরিয়ারের রাগ হয় বাড়ির লোকগুলোর উপর। দু-দন্ড শান্তি নেই এদের মাঝে! সারাক্ষণ ঝগড়াঝাটি। সে কাছে এসে পুষ্পিকে ধরে। জিজ্ঞেস করে, “পায়ে লেগেছে তোমার?”
পুষ্পি মাথা নাড়িয়ে ‘না’ সূচক জবাব দেয়।
পুষ্পি মুখে না বললেও, পায়ে তার লেগেছে।
শাহরিয়ার কপট রাগ নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে, সঙ্গে নেয় পুষ্পিকেও। তবে সে সামনে থেকে পুষ্পিকে পেছনে রাখে। যেন অসচেতনে আসা কোনো কিছু পুষ্পিকে স্পর্শ করতে না পারে।
বিকট চিৎকারে ঘোরদোর উড়ে যাচ্ছে যেন। ঝগড়া লেগেছে মূলত শাফিনের মেঝো ভাই আর ভাবীর মাঝে। শাফিনের মা অর্থাৎ শাহরিয়ারের মামী মুখে আঁচল ঠেকিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে। সাবেরী খাতুন শান্তনা দিলেও তা মানছে না সে। গুনগুন সুরে কাঁদতে কাঁদতে বলে, “ঘর ভর্তি মেহমানের সামনে আমার কোনো মান রইলো নারে সাবু!”
সাবেরী বেগম ছেলে-বউকে থামতে বলায় তারা বেয়াদবি করতেও ছাড়ছে না। দুজনের ঝগড়া এমন বিচ্ছিরি পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে ব্যাখ্যা করা দায়। দাঁড়িয়ে তা সহ্য করাও দুষ্কর। দুজনের কেউ কাউকে ছাড়ছে না। এক পর্যায়ে হাত অব্দি উঠে গেল গায়ে।
শাহরিয়ারের সহ্য হলো না এসব। সে কারো ব্যাক্তিগত ব্যপারে নাক তো গলাতে পারে না। তাই তার পরিবারের সবাইকে বলল তৈরি হয়ে নিতে। আর দুদন্ড এখানে নয়। সাবেরী খাতুন বোঝাতে চাইলো, “ভাবীকে একা এভাবে রেখে যাওয়া ঠিক হবে না বাপ। তুই এমন অবুঝপনা করিস না মনা!”
শাহরিয়ার খুবই একরোখা স্বভাবের। মুখ দিয়ে একবার যখন সে বের করেছে ‘যাবে’, তখন যাবেই। কেউ বাঁধা দিতে পারবে না। আছমার অনুরোধও রাখেনি সে।
বাধ্য হয়েই সবাই যখন গোছগাছ করছিল তখন এলো অন্য সংবাদ। শাফিন কোত্থেকে যেন তড়িঘড়ি করে এলো। শাহরিয়ারকে সামনে পেয়ে, ব্যকুল হয়ে কইল, “ভাই? চারু আপার আম্মা খুব অসুস্থ হইয়া পড়ছে। হাসপাতাল নেওয়া হইতাছে। তুমি কি যাইবা?”
শাহরিয়ার কেন যেন সব ভুলে গেল। আগেপিছে সব স্মৃতি, মিছে অভিমান, এবং সব ক্ষোভ! তার শুধু মনে হলো চারুর দূরাবস্থা! বিচলিত করলো মেয়েটার মানসিক অবস্থা! বেমালুম ভুলে গেল পুষ্পির কথাও। ওরা সবাই তখন ওখানেই উপস্থিত। সাবেরী খাতুনও অস্থির হয়ে ওঠেন বাল্যকালের বান্ধুবীর দুশ্চিন্তায়। সেও যেতে চায় বন্ধুবীর কাছে।
পুষ্পি সূক্ষ্ম ভাবে লক্ষ্যে করে চারুকে নিয়ে শাহরিয়ারের দুশ্চিন্তা।
শাহরিয়ার অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কোন হসপিটাল? নাম বল?”
শাফিন বলে, “তাতো জানি না। বলছে জানাইবে আমারে। তুমি নাহয় আপার নাম্বার লও। ফোন কইরা দেহ!”
শাহরিয়ার নাম্বার নেয়। তারপর দ্রুত ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। তবে সাবেরী খাতুন যেতে চাইলেও তাকে নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে শাহরিয়ার। একপ্রকার জোর করেই রেখে যায় সাবেরী খাতুনকে। তিনি কেঁদেকেটে একাকার। হসপিটাল গিয়ে তিনি না অসুস্থ হয়ে পরেন সেই দুশ্চিন্তায়-ই কিছুতেই সাথে নেয় না শাহরিয়ার। তবে আশ্বস্ত করে পরে এসে নিয়ে যাবে বলে।
ছেলেটা দ্বায়িত্বজ্ঞান সম্পূর্ণ। সে তার দ্বায়িত্ব নিয়ে যথেষ্ট সচেতন। যাওয়ার আগে শাফিনকে বলে যায়, পুষ্পি, মুনমুন এবং তার মাকে ওর দাদা বাড়ি নিয়ে যেতে। এমন অসুস্থ পরিবেশে এক মূহুর্ত রাখতে ইচ্ছুক নয় সে।
শাফিন বড্ড শাহরিয়ার ভক্ত। শাহরিয়ারের প্রত্যেকটা আদেশ উপদেশ সে অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। এবারও ব্যতিক্রম হলো না। তবে শুধু জিজ্ঞেস করলো, “চলে যাবে তোমরা? হঠাৎ!”
শাহরিয়ার তড়িঘড়ি করে বলে, “অযথা প্রশ্ন করিস না। যা বলে শুধু তাই কর।”
শাফিনও আর প্রশ্ন করে না। কিংবা করার সুযোগই পায় না।
শাহরিয়ার চলে যেতেই হঠাৎ করেই খুব বিষন্ন অনুভব হয় পুষ্পির। চারুর জন্য শাহরিয়ারের ব্যাকুলতা তার মনে অজানা উদ্বেগ এর জন্ম দেয়। তার সুখের সংসার…..প্রশ্নবিদ্ধ হয়!
বিছানায় বসে পরে সে। খুব অস্থির লাগছে। মুনমুনকে বলে, আমাকে একটু পানি দিবে মুনমুন? খুব তৃষ্ণা পেয়েছে। ওখানে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না এক্ষুনি।”
শাফিন বলে, “তাইলে আরেকটু পরে বাহির হই?”
মুনমুন কর্কশ কন্ঠস্বরে বলে, “বললোই তো এখন যাবে না, অসুস্থ ফিল করছে। তার মানে তো পরে যাবে, না? গাধা!”
শাফিনের কিঞ্চিৎ রাগ হলেও এমন পরিবেশে সে আর ঝামেলা করে না।
সাবেরী খাতুন তখনও কাঁদছে। আসমা আবার তখন তাকে শান্তনা দিচ্ছে। তাদের সম্পর্কটা সুন্দর। একে অন্যের দুঃসময়ে ঢাল হয়ে পাশে থাকতে চায়।
.
শাহরিয়ার পথিমধ্যে চারুকে ফোন করে হসপিটালের ঠিকানা জেনে নেয়। সে যখন হপিটাল পৌঁছায় তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে ছোঁয়ার তাড়নায় প্রকৃতি।
শাহরিয়ার চারুকে খুঁজে পায় হসপিটালের তিন তলার করিডোরের ব্যাঞ্চে বসা অবস্থায়। নিজের শালে জড়িয়ে রেখেছে তার চার বছরের ছোট্ট ছেলেটাকে। ছেলেটা মাকে জড়িয়ে নিশ্চিতে ঘুমাচ্ছে। জগতে এত দুঃখ কষ্ট তাকে এখনও স্পর্শ করেনি, বলা বাহুল্য সে সময় আসেনি। নিষ্পাপ, নির্ঝঞ্জাট, মুক্ত পাখির মতো জীবন। চারুর চোখও বন্ধ, ক্লান্তি কিংবা দুঃখে!
শাহরিয়ার নীরবে গিয়ে পাশের বেঞ্চটাতে বসে। মনে ব্যাকুল মায়া! কার জন্য? কিসের জন্য? চারু কিংবা চারুর পরিস্থিতির জন্য।
শাহরিয়ার পাশে বসতেই চারু সজাগ হয়ে ওঠে। ক্লান্তিমাখা দৃষ্টিতে ঘার ঘুরিয়ে পাশে তাকাতেই এক প্রকার চমকে ওঠে। যেন এখানে শাহরিয়ারের আসাটা বড্ড অপ্রত্যাশিত। যদিও শাহরিয়ার ফোন করে ঠিকানা জেনে নিয়েছিল, তাও যেন অবিশ্বাস্য ঠেকে তার আসাটা! শাহরিয়ার অস্ফুটস্বরে কেবল বলে, “খালার…”
প্রশ্ন শেষ করার আগেই চারু জবাব দেয়, “এখন ভালো আছে। ঘুমাচ্ছে। অযন্তে শরীরে নানান রোগ বেঁধেছে। আমার কথা তো শোনেই না! এত করে বলেছি আমার সঙ্গে যেতে, কিচ্ছু শোনে না। এবার আর তার ‘না’ শুনবো না, নিয়েই যাব সাথে।”
এক নিশ্বাসে মায়ের নামে এক ঝাক অনুযোগ ব্যাক্ত করে মেয়েটা। খুব বিধ্বস্তও লাগছে তাকে।
শাহরিয়ার খুব বেখেয়ালে বলে ওঠে, “আগের মতোই রয়ে গিয়েছে তোর স্বভাব। চিন্তায় থাকলে, খুব বেশি কথা বলিস। একা একাই সব বলতে থাকিস, কাউকে কিচ্ছু বলতে দিস না।”
বলতে বলতেই মৃদু হাসে। চারুও চুপ হয়ে যায়। সত্যিই তাই। সেই ছোট্ট বেলা থেকে এখন অব্দি, এই অদ্ভুত স্বভাব এখনো অক্ষুণ্ণ রয়েছে তার।
চারু জিজ্ঞেস করে, “আর তুমি তখন আমায় কত ক্ষ্যাপাতে এজন্য!”
শাহরিয়ার ছোট্ট করে বলে, “হুম।”
তারপর নিরবতা। নিরবতা ভাঙে শাহরিয়ার-ই। চারুকে প্রথমে মানসিকভাবে আশ্বস্ত করে, তারপর চারুর মাকে দেখে আসে। ডক্টরের সাথে কথা বলে আসে। কি লাগবে, না লাগনে তদারকি করে। বেশ কিছুক্ষণ দৌঁড়ঝাপ করে এসে পূর্বের স্থানে বসে। হালকা ঝুঁকে হাঁটুতে হাত রেখে, এক হাতের আঙুলের মাঝে অন্য হাতের আঙুল আবদ্ধ করে। ঘাড় বাঁকিয়ে চারুর কোলের ঘুমন্ত বাচ্চাটার দিকে দৃষ্টিপাত করে। খুব নরম স্বরে জিজ্ঞেস করে, “তোর ছেলে? নাম কি ওর? বয়স?”
চারুর মলিন মুখ। কত কিছু না বলতে পারার আকুতি। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে, মুখে হাসির রেখা আঁকে। ছেলেটার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে, “ইমদাদ হোসেন! বয়স চার বছর দুই মাস। খুব শান্তশিষ্ট বুঝদার বাচ্চা আমার, মাশাআল্লাহ।”
শাহরিয়ার নিজে দুবার উচ্চারণ করে নামটা। তারপর বলে, “সুন্দর নাম। তোর মতোই হয়েছে। ওর বাবাকে দেখছি না!”
“ঢাকা গিয়েছে একটা কাজে। ইনফর্ম করেছি, চলে আসবে।”
শাহরিয়ার ছোট করে বলে, “ওহ!”
পরক্ষণেই প্রসঙ্গ পাল্টে জিজ্ঞেস করে, “কিছু খাবি? এনে দিব?”
চারু ‘না’ সূচক মাথা নাড়ায়। বলে, “একটু স্থির হয়ে বসো।”
কিন্তু শাহরিয়ার স্থির থাকতে পারছে না। তার অস্বস্তি লাগছে। সে বলে, “ঠিক আছে, থাক তবে৷ আমি বাহিরে আছি। কিছু লাগলে কল করিস।”
চারু খুব আবদারের স্বরে বলে, “এখানে বসো না! নাকি আমার পাশে বসতেও তোমার দ্বিধা হচ্ছে? এত ঘৃণা মনে পুষছ?”
শাহরিয়ার হতভম্ব হয়ে যায়৷ চারুর মুখে এমন কথা প্রত্যাশার বাহিরে। কপাল কুঁচকে আসে। বিক্ষুব্ধ দৃষ্টি স্থাপনের করে চায় চারুর পানে। প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, “মানে?”
চারু ধীরস্থির ভাবেই জবাব দেয়, “মানে? মানে কিছু না। তোমায় একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”
শাহরিয়ারের মুখ হতে আশ্চর্য ভাব তখনও দূর হয় না। তাও বলে, “কী?”
“আমি কি তোমার ক্ষমা পেয়েছি আজও? আমার প্রতি তোমার ক্ষোভ কমেছে? কমেনি, না?”
শাহরিয়ারের সহজ স্বীকারোক্তি, “না। তুই আমার অনেক ইমোশন নষ্ট করেছিস চারু! পুষ্পির চোখের দিকে তাকালে কখনো কখনো নিজেকে অপরাধী লাগে। তুই জানিস, ও এত নির্মল, স্বচ্ছ একটা মেয়ে! কখনো কখনো মনে হয়, ওর প্রতি এক্সপ্রেস করা আমার অনুভূতিগুলো প্রশ্নবিদ্ধ, পুরোপুরি স্বচ্ছ নয়! যেদিন মনে হবে পুষ্পর থেকে ইমপরট্যান্ট আমারে জীবনে কিচ্ছু না, যেদিন তুই আমার মন থেকে পুরোপুরি মুছে যাবি, যেদিন তোকে দেখলে আর পুরনো কিচ্ছু মনে পড়বে না, সেদিন মাফ পাবি।”
চারু অবাক বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করে, “আমি তোমার মনে আছি আজও?”
শাহরিয়ার সোজাসাপ্টা জবাব দেয়, “মনে নেই, স্মৃতিতে আছিস। আশা করি, সেখানেও তোর স্থায়িত্ব খুব ক্ষীণ।”
চারুর চোখ টলমল করে। বাবার ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে সেদিন সে যেই অনৈতিক কাজ করেছিল, যেভাবে তুচ্ছ করেছিল শাহরিয়ারের প্রেম, সানন্দে বিয়ে করে নিয়েছিল বাবার পছন্দের পাত্রকে, তার জন্য সত্যিই সে এসব ডিজার্ভ করে। তীক্ষ্ণ ছুড়ির আঘাতের ন্যায় এসে বুকে বিধছে শাহরিয়ারের প্রত্যেকটা শব্দ! এটাই তো প্রাপ্য সে। এই এতগুলো বছরে বাবার পছন্দের পাত্রের থেকেও তো অসম্মান, অবজ্ঞা আর অযত্ন ব্যাতিত আর কিছু পায়নি।
“তোমার বউটা খুব শান্তশিষ্ট। আর খুব মিষ্টিও। আমার বিশ্বাস খুব দ্রুতই তোমার মনের পাশাপাশি স্মৃতি থেকেও পুরোপুরি মুছে যাবে বিচ্ছিরি সেই অতিত, তুচ্ছ আমি।”
শাহরিয়ারের মুখাবয়ব স্বাভাবিক হতে শুরু করে। বলে, “হ্যাঁ। আর আমার বউ শুধু শান্তই না, ধৈর্যশীলও। ও আমার জীবনে আশির্বাদ স্বরূপ।”
চারু লক্ষ্য করে শাহরিয়ারের মুখের প্রশান্তির ছায়া। চারু প্রশ্ন করে, “ভালোবাসো?”
শাহরিয়ার জবাব দেয়, “বউ আমার। ভালো না বেসে উপায় কই? আর ও এমন মেয়ে, ভালো না বেসে পারি না।”
রাতটা কাটে হসপিটালেই। চারুকে একটা থাকার ব্যাবস্থা করে দিয়ে নিজে কোনোভাবে রাতটা পার করে। পরদিন সকালে সকল চেকআপ করিয়ে, প্রয়োজনীয় সকল কাজ সম্পাদন করে, চারুর মাকে হসপিটাল থেকে রিলিজ করিয়ে বাসায় দিয়ে, তারপর দাদা বাড়ির দিকে রওয়ানা দেয় শাহরিয়ার। ফোনে চার্জ না থাকায় বাসায় যোগাযোগ করতে পারেনি। তবে মাঝে একবার ফোন করে কেবল চারুর মায়ের অবস্থা যে স্বাভাবিক তা জানিয়েছিল। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি।
শাহরিয়ার বাড়িতে আসতেই সবাই হৈহৈ আওয়াজে মাতিয়ে তোলে ঘরদোর। যেন পুরো বাড়ির রাজপুত্র! ফুপি, চাচা, চাচী সবাই উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। বাবাদের পাঁচ ভাইয়ের মাঝে তার বাবা সবার বড়ো হওয়ার ফলস্বরূপ তার বাবার স্থানও অনন্য, বাবার পরিবারের স্থানও অনন্য।
শাহরিয়ারকে নিয়ে সবাই যখন ব্যকুল তখন পুষ্পি নিজ রুম থেকেও বের হয়নি। বড্ড অভিমান জন্মেছে স্বামীর প্রতি তার। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে একদম চুপ থাকবে। একটা কথাও বলবে না শাহরিয়ারের সাথে।
আত্মীয়স্বজন সকলের সাথে সদালাপ সেরে শাহরিয়ার রুমে আসে। পুষ্পি বিছানা গোছাচ্ছে৷ শাহরিয়ারের প্রবেশ লক্ষ্য করেও এমন ভাব ধরলো যেন, কে আসলো—না আসলো কোনো ব্যাপার না।
শাহরিয়ার বিষয়টা শুরুতে ধরতে না পারলেও পরে লক্ষ্য করলো। অতঃপর সে ডাকল, “পুষ্প?”
পুষ্পি কোনোরূপ রা’শব্দ করলো না। বরং এড়িয়ে গিয়ে ঝাড়পুছ করছে, কাপড়চোপড় গোছাচ্ছে, যে কাজ নেই সেগুলোও অযথা করছে।
শাহরিয়ার উঠে গিয়ে পুষ্পিকে থামাল হাত ধরে। প্রশ্ন করলো, “কী ব্যপার? কথা বলছো না যে?”
পুষ্প ভ্রু কুচকে মুখ ঘুরিয়ে ফেললো অন্যদিকে।
শাহরিয়ার বলে, “কী আশ্চর্য! আমি আবার কী করলাম! রাগ করেছ কেন? এদিক তাকাও!”
পুষ্পি এবার ফুঁস করে ওঠে। বাজখাঁই কন্ঠে বলে, “দুশ্চরিত্র পুরুষ মানুষ! আপনি আমার কাছে আসবেন না। দূরে সরুন বলছি!”
বলতে বলতে মেয়েটা দু’হাতে দূরে ঠেলে দেয় শাহরিয়ারকে।
শাহরিয়ার পুষ্পির অভিমানের কারণ ধরতে পেরে এক গাল হাসে। পুষ্পির হাত ধরে বলে, “ওহে আমার অভিমানী বউ? কাছে না এলে মান ভাঙাবো কেমন করে? কাছে তো আসতে দাও, প্লি-জ!”
(চলবে)…..