এক্স ওয়াই জেড পর্ব-০১

0
363

#এক্স_ওয়াই_জেড
শুরুর অংশ…

(ডিসক্লেইমার- গল্পটা নেহায়েতই মজার উদ্দেশ্যে লেখা। সিরিয়াস পাঠকরা পড়ে সাহিত্য গুণাগুণ বিচার করা যাবে না।)

আগেই ছেলের মা বোনরা আমাকে দেখে গেছে। পছন্দও হইছে তাদের। ছেলে এদিকে দেখতে আসে নাই। তার ইচ্ছা বাইরে দেখা করে নিজের মতো কথা বলবে৷ ছেলের ছবি দেখছি আগেই। স্মার্ট, পড়াশুনায় ভালো। চাকরিও করে মাশাআল্লাহ। এসব দেখে আব্বু আম্মুর পছন্দ হইলেও আমার পছন্দ হইছে তার হাসি। বাবারে! সাদা দাঁতগুলা মনে হয় মুক্তা! আমিও তাই নাচতে নাচতে গেলাম দেখা করতে।

কিন্তু বিধি বাম হইলে এমনই হয়। চার বছর ধরে ছেলে দেখা হইতেছে আমার জন্য। কাউরে পছন্দ হয় না। এই এক ছেলে মনে ধরল, কিন্তু তার সাথে দেখা করতে যাইয়া অঘটনের শেষ নাই।

ধেই ধেই কইরা রেস্টুরেন্টে ঢুকতে যাইয়া শুরুতেই বাড়ি খাইলাম কাচে। কে খেয়াল করছে এইখানে এত ঝকমকা কাচ লাগানো? ভাবছি খোলা জায়গা। আমি শরমে শেষ। ছেলে দেখি আমাকে চিনাও ফেলছে। সামনে এসে বলতেছে, বেশি জোরে ব্যথা পাও নাই তো নিতু?

বললাম, না। আসলে নাক, কপাল জ্বলতেছে। কিন্তু ছেলের দিকে তাকাইয়া আমার ব্যথা কমে আসল। ওরে কী সুন্দর! নিতু তোর কপাল খুলে গেছে!

বসলাম তার সাথে কর্নারের টেবিলে। বলতেছে, আমি শাফকাত। চিনেছ তো?

-হ্যাঁ।

-তোমার বিষয়ে বলো।

আমি কী বলব খুঁজেই পাইলাম না। আমার মতো একটা গাধা স্টুডেন্টের জীবনে বলার মতো কিচ্ছু নাই৷ আমার প্রিয় খাবার হইল শুটকি ভর্তা৷ প্রিয় কাজ ঘুমানো। প্রিয় বই ছোটদের রূপকথা। জীবনে প্রেম করি নাই। কী বলব তারে?

সে বইলা ফেলল, কী ভাবো এত? লজ্জা পেও না৷ কথা বলো।

– হুম বলতেছি।

– তুমি একটু বেশিই লজ্জা পাচ্ছ। আচ্ছা আগে বলো কী খাবা।

– পানি।

সে আধা মিনিট আমার দিকে তাকায় থাকল। কী ভাবল আল্লাহ জানে। তারপর বলল, সামনেই পানি আছে। খাও। অন্য কী খাবা বলো।

-কফি।

-কী কফি?

কফিরও আবার কত রকম আছে! শুনছি, কিন্তু জিন্দিগিতে খাই নাই। আমাদের বাড়ির মানুষের আবার রেস্টুরেন্টে আইসা খাওয়ার চল নাই। আম্মুর মতে এইখানে এত টাকা দিয়া খাওয়ার চেয়ে বাসায় রাইন্ধা খাইলে অনেক বেশি মজা আর সাশ্রয়। আমি যা আসছি, বান্ধবীদের সাথে। কিন্তু কফি তো খাই নাই কোনোদিন। বুদ্ধি কইরা বললাম, যেটা আপনার মন চায়।

সে মিচকি হাসি দিয়া বলল, আচ্ছা। তারপর নিজের জন্য আর আমার জন্য ব্ল্যাক কফি অর্ডার করে দিল। সাথে স্যান্ডউইচ। এদিকে পাশের টেবিলে এক কাপলের পিজ্জা খাওয়া দেখে আমারও খাইতে চাওয়া অবুঝ মন কোনোরকমে দমিয়ে রাখলাম।

সে বলল, একটা কথা মূলত বলার জন্য আলাদা দেখা করা।

আমি বললাম, বলেন। মনে মনে বলি, কী সুন্দর কইরা কথা কও তুমি! মন চায় তাকাইয়া থাকি খালি।

– আমার একটা গার্লফ্রেন্ড ছিল। এক্স আরকি৷ ওর সাথে আমার ছয় বছর রিলেশন ছিল। বেশ ডীপ…তো ব্রেকাপ হয়েছে কিছুদিন আগে। ওর বাসায় রাজি হয়নি আমাদের বিয়েতে। ওর অন্য ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছে।

-কেন?

– আমাকে তাদের পছন্দ ছিল না।

-কেন?

– কারন তারা তাদের মেয়েকে নিজের পছন্দে বিয়ে করতে দেবে না৷ আর তাদের মেয়েও অমতে বিয়ে করবে না৷

-তাহলে প্রেম করছিল কেন?

– তখন আমাকে ভালো লাগত।

-এখন লাগে না?

– কে জানে! হাজবেন্ডের সাথে সিঙ্গাপুর গিয়ে খুব এনজয় করছে। ইনস্টাগ্রামে ছবি দিয়ে ভরে ফেলছে।

-আহারে!

-তোমাকে বলে রাখলাম পরে যাতে সমস্যা না হয়।

এদিকে তার ডীপ রিলেশনের কথা শুনে ঢোক গিলতেছি।

খাবার দিয়ে গেল। কফিটা মুখে দিলাম আনমনেই। তারপর যা করলাম তা আর বলার মতো না। সাদা টেবিলক্লথের ওপর কুলি! সে যে চিনি ছাড়া জন্মের তিতা কফি অর্ডার করছে তা কি আর জানি?

সে কতক্ষণ কেমনে যেন তাকায় রইল। তারপর বলল, স্যান্ডউইচ খাও।

ওইটা খাইতে গিয়েও হাত মাখামাখি করে অবস্থা খারাপ। এমন না যে খাইতে পারি না৷ তার সাথে থেকে আমার অবস্থাই হয়ে গেছে লেজেগোবরে।

সে এখনো কেম্নে কেম্নে তাকায় আছে। বললাম, আচ্ছা কিছু জানতে চাইলে বলেন।

সে যা জিজ্ঞেস করল তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না রাসেল ভাই৷ সে জিজ্ঞেস করল, তুমি কোন ব্র্যান্ডের লিপস্টিক ইউজ করো?

আমি কতক্ষণ ভ্যাবলার মতো তাকায় থাইকা বললাম, আমি তো তেমন লিপস্টিক দেই না৷

-ওহ।

– কিন্তু কেন?

-না এমনি।

বুঝলামই না কাহিনী কী। সে আরও হাবিজাবি বলল তার মহান এক্স গার্লফ্রেন্ড নিয়া। আমি মনে মনে বলি, ছাইড়া দে, কাইন্দা বাঁচি।

বাসায় আসার সময় বলল, ফোন দিব তোমাকে।

বললাম, আচ্ছা।

জানি জীবনেও দিবে না৷ তাও বললাম৷ তার নাম্বারও সেভ করি নাই৷

বাসায় আসার পর জিজ্ঞেস করল ছেলে কেমন লাগছে। আমি বললাম, ভালোই। এদিকে সে লিপস্টিকের কথা কেন জিগাইল এই চিন্তায় ঘুম হারাম।

রাতে দেখি ফোন দিছে। তাও বারোটার পর। প্রথমে চিনি নাই। ধরতেই বলল , নিতু, কেমন আছ?

তখন চিনছি। গলাটা এর মধ্যেই মার্কামারা লাগা শুরু হইছে। যদিও অনেক সুন্দর। পুরুষালি!

-এইতো ভালো।

-কী করো?

-শুয়ে আছি।

-তোমাকে একটা কথা বলব।

আমি ঢোক গিললাম। এই মরা মার্কা লোকটা আমার কথা কিছুই শুনতে চায় না। পছন্দ হইছে নাকি তাও বাসায় বলে নাই। এদিকে আধা রাতে ফোন দিয়া আমারে নিজের এক্সের প্যাচাল শুনাইব নিশ্চিত। মনে মনে একটা গালি দিয়া বললাম, বলেন।

সে বলতে শুরু করল। আর এদিকে আমার চোখ কপালে উঠতে উঠতে মনে হইল মাথা ভেদ কইরা চইলা যাবে….

(চলবে)

সুমাইয়া আমান নিতু