এক্স ওয়াই জেড পর্ব-০২

0
356

#এক্স_ওয়াই_জেড
দ্বিতীয় অংশ

শাফকাত নামের ভদ্রলোকের কাহিনী শুনে আমি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছি৷ সে বলতেছে, জানো নিতু তোমাকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। কেন শুনবে? খুবই ইন্টারেস্টিং কাহিনী।

আমার চোখ উল্টানোর জোগাড়! ছেলে মানুষের চোখ দেখলেই বুঝা যায় সে কাকে পছন্দ করতেছে, কাকে না৷ পছন্দ হলে চোখে মুগ্ধতা মাস্ট! কিন্তু সে আমার দিকে সেই নজরে তাকায় নাই পর্যন্ত। পছন্দ কোন দিক দিয়া হইলাম? কিছু খায় টায় নাই তো? হায় হায় এই ছেলে কি মদ খায়? কী ভয়ানক কথা! মদ খাইলে অবশ্য গলায় সেইরকম ঢলঢলে আওয়াজ শোনা যাইত। তেমন তো মনে হয় না। স্বাভাবিক গলায়ই কথা বলতেছে। আচ্ছা শোনা যাক৷ এমনিতে মনে উড়ু উড়ু ভাব আসছে। এত সুন্দর ছেলেটা আমারে পছন্দ করতেছে! উফ! উফ!

বললাম, বলেন।

সে বলতে শুরু করল, আমি পড়াশোনার জন্য দুই বছর কানাডায় ছিলাম৷ তখন সেই মেয়েটার সাথে পরিচয়। মানে আমার এক্স ছিল ও। এক মাস কথা বলেছিলাম ফ্রেন্ড হিসেবে। তারপরই রিলেশনে জড়িয়ে পড়ি৷ ওর কোন জিনিসটা আমার সবচেয়ে ভালো লাগত জানো? চোখের ওপরের কাটা দাগটা৷ তোমারও সেরকম আছে।

কপাল! কপাল! শালা এক্সের সাথে মিলাইতেছে আমারে! বললাম, তাহলে আমাকে বিয়ে করে কাজ নাই আপনার। আমাকে দেখলেই এক্সের কথা মনে পড়বে। ফাজিল মেয়ে ছয় বছর প্রেম করে ছ্যাকা দিল…

– না না ও না। এটা আমার তারও আগের এক্স। ওর সাথে ব্রেকাপের পরই তো এক্সের সাথে রিলেশনে যাই..

– এক্স এক্স শুনতে শুনতে সব গুলায় ফেলতেছি। ভাইরে ভাই মনে করেন আগেরটা এক্স, কানাডারটা ওয়াই৷ এবার বলেন।

-ওকে! ফাইন! তুমি ইন্টেলিজেন্ট আছো!

প্রথমবার প্রশংসা করল। তাও ইন্টালিজেন্ট! আমার মতো গাধারে কেউ জীবনে এই কমপ্লিমেন্ট দেয় নাই। মন চাইল খুশিতে একটা ডিগবাজি দেই। বিয়া হোক না হোক ব্যাটার গালে একটা চুম্মা দিয়া আসি। কিন্তু তা কি আর সম্ভব? এদিকে আবার এক্স ওয়াইয়ের চক্করে আমার মাথার ঘিলু এদিক ওদিক না হইয়া যায়!

বললাম, আচ্ছা তারপর বলেন।

-তো হলো কী, এক্স…মানে ওয়াই…ওর একটা ব্যাপার ছিল কিছু বলার আগে নার্ভাস হয়ে যেত। তুমিও দেখলাম একটু নার্ভাস। দেন ও লজ্জাও পেত। তুমি যদিও তার চেয়ে বেশি লজ্জা পাও। তাও তোমাকে দেখে নস্টালজিক হয়ে যাচ্ছিলাম। শী ওয়াজ সো প্রিটি আই কান্ট…

– তো? আমি কী করতে পারি?

– তুমি কি রাগ করছ? প্লিজ নিতু আমার কথাগুলো বলার মতো কেউ নেই।

– ওকে কন্টিনিউ…

– তুমি রাগ করছ। থাক আর বলব না৷ এবার বলো আমাকে তোমার কেমন লাগল।

– ভালোই।

– ভালোর সাথে ‘ই’? তার মানে তোমার আমাকে পছন্দ হয়নি? কেন আমি হ্যান্ডসাম নই?

মন চাইল মাটির নিচে চইলা যাই। শালা নিজের প্রশংসা নিজে করতেছে। নির্লজ্জের মতো আবার বলতেছে সে হ্যান্ডসাম কী না। বললাম, আপনার এক্স ওয়াইরা কী বলত? হ্যান্ডসাম?

– হুম!! আবভিয়াসলি!

– আমারও তাই ধারণা।

– এন্ড আই অ্যাম ট্রুথফুল অলসো। সব সত্যি বলে দিয়েছি তোমাকে।

ওরে আমার সত্যবাদী যুদিষ্ঠীর! এত আত্মপ্রশংসা ভালা না। জিজ্ঞেস করলাম,

-এবার বলেন লিপস্টিকের কাহিনী কী?

– কোন লিপস্টিক?

– ওইযে জিজ্ঞেস করলেন কোন ব্র্যান্ডের…

– ও আচ্ছা! আসলে আসলে…

– কী?

– আসলে…

– উফফ….

– অ্যাই… এই এরকম আওয়াজ করছ কেন?

– আপনি বলতেছেন না দেখে…

– উপস। আই থট…নো নাথিং। আসলে তোমার লিপস্টিক লেপ্টে গিয়েছিল আর আমার ভালো লাগছিল দেখতে। ইচ্ছে করছিল…..না থাক। আসলে তোমার সাথে প্রথমবার দেখা তো তাই কিছু বলতে পারিনি৷ যদি বিয়ে হয়ে যায় তাহলে তো কথাই নেই। আর যদি না হয় তাহলে ব্র্যান্ডের নামটা জেনে রাখলে আমার ফিউচারকে সেটা ইউজ করতে বলতাম। দ্যাটস অল!

আমার এত্ত মেজাজ খারাপ হইল যে টুং কইরা ফোনটা কাইটা দিলাম। পারলে ধাম কইরা কাটতাম। ফালতুর ফালতু! তুই আমার লিপস্টিকের নাম জাইনা গার্লফ্রেন্ডদের লাগাইতে বলতি তাও আবার…ছি ছি ছি!

গালি দিতে মন চাইল খুব৷ কিন্তু কেমনে দিব? আবার ফোন দেয়ার রুচি নাই। মেসেজে লিখলাম, Go to hell with your ex, y, present, future and all..you stupid!”

সে কয়েকবার ফোন দিল। ধরলাম না৷ ছাগলটা তখন মেসেজ দিয়া বলল, তোমার ফেসবু্ক আইডি দাও।

কীসের মধ্যে কী! আমি লিখলাম, আপনারে গালি দিতেছি বোঝেন না?

সে লিখল, চেক ইয়োর হোয়াটসঅ্যাপ একাউন্ট৷

গেলাম হোয়াটসঅ্যাপে। দেখি ছবি পাঠাইছে। মুখ ভোতা কইরা রাখছে। একদম বাসায় যেমনে থাকে ওমনে। সাদা টিশার্ট পরছে, চুলগুলা এলোমেলো। মুখটা কী ইনোসেন্ট! ফরসা নাকের ওপর ছোট্ট একটা তিল আছে। চোখের আইল্যাশগুলাও বড়। ইশ রে…এত বড় ক্রাশ আমি কমই খাইছি। কিন্তু কিন্তু কিন্তু এত অসহ্য কেন হওয়া লাগবে এত সুন্দর লোকটার? ধুররর…..

লিখলাম, কী প্রবলেম? ছবি দেন কেন?

সে ফোন দিয়া বলল, এমনি দিলাম। তোমার মন গলে নাই?

– না। আমার মন আপনার এক্স ওয়াইদের মতো নরম না।

– ইটস টু সুইট নিতু। আমার তোমাকে পছন্দ হয়েছে। আমি বাসায় বলছি। তুমি রাজি?

– না। জীবনেও না।

-আরেকদিন দেখা করি চলো।

-ইম্পসিবল।

-কেন?

-যাদের বিয়ের আগে মেয়েদের সাথে ডীপ রিলেশন থাকে তাদের সাথে দেখা করার প্রশ্নই আসে না, বিয়ে অনেক দূরের বিষয়।

– বহুবচন ইউজ করো কেন? আমি একজনই। আর ডীপ বলতে আমি বুঝাই নাই যে আমি ওর সাথে…

– কী?

-শুনতে চাও? সিরিয়াসলি?

– না থাক। রাখি।

-আচ্ছা আরেকটা লাস্ট কথা শুনে যাও।

-বলেন।

– আমার আরেকটা গার্লফ্রেন্ড ছিল ফেসবুকে। ওর নাম….

আমি ফোন আবার কাটলাম। খাটাশের গার্লফ্রেন্ডের অভাব নাই সত্যি!

সে এবার মেসেজ দিল, আমার ফেসবুকের গার্লফ্রেন্ডের নাম ছিল নিতু।

এত রাগ হইল। মন চাইল নিজের নাম পাল্টায় দেই। লিখলাম, তো আমি কী করতাম?

-চলো আরেকবার দেখা করি। লাস্ট৷ তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে। প্লিজ….

– না না না!

-ওকে।

একটু পর দেখি আরেকটা ছবি পাঠাইছে। নীল শার্ট, কালো জ্যাকেট, কালো সানগ্লাস পরা। মুখে মিষ্টি হাসি। কে কইছিল তোরে এত সুন্দর হইতে? আমার পিছনেই কেন লাগছিল? অসহ্য!

পরের মেসেজ, কাল দেখা করি?

উত্তর দিলাম, ফর দ্যা লাস্ট টাইম।

সে তারপর সানগ্লাস পরা ধান্দাবাজ মার্কা ইমোজিটা পাঠায় দিলো- 😎

(চলবে)

সুমাইয়া আমান নিতু