#এক_আকাশ_রুদ্ধশ্বাস
#পর্ব- ৫ (শেষ)
(নূর নাফিসা)
.
.
“ট্রেন কোথায় থামবে?”
অতি স্বাভাবিক কণ্ঠে প্রশ্ন করে তানভীর। নিজ হাতের মুঠো খুলে দুইটা টিকিট মোড়ানো অবস্থায় পায়। টিকিটের ভাঁজ খুলে দেখে এবং বলে,
“রানি নগর? ক’দিনের সফর?”
নওরিনের চোখ দুটো অশ্রুজলে ভরপুর। মুখ হয়ে আছে নির্বাক। গলার কাছটায় যেন কেউ চেপে ধরে রেখেছে। তবুও কেউ নেই দৃশ্যকাব্যে! থলথলে জলপূর্ণ চোখ দুটো ভাইজানের মুখমণ্ডল থেকে হাতের দিকে নামিয়ে আনে। হৃদয়ের আঙিনার সকল রঙিন দেয়াল বিস্ফোরিত হয়ে ধ্বসে পড়ে। শাবাবের পকেটে ছিল এই টিকিট দুটো! তা এখন ভাইজানের হাতের মুঠোয়! তবে শাবাব কোথায়!
আতঙ্কিত নওরিন কাঁপা কণ্ঠে ভাইজানের দিকে পুনরায় তাকিয়ে বলে,
“শাবাব কোথায়?”
ট্রেনের সিগন্যাল পড়ে গেছে৷ এক্ষুণি ছেড়ে দিবে৷ তানভীর তার কথায় ধ্যান না রেখে মনোযোগী হয়েছে সিগন্যালের দিকে। নেমে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়িয়েছে কথার পরপরই। নওরিন খপ করে হাত ধরে তুলনামূলক উঁচু স্বরে আতঙ্ক গলায় প্রশ্ন করে,
“শাবাব কোথায়?”
তানভীরের স্বাভাবিক চোখদুটো এবার কঠিন হয়ে আসে। কঠিন চোখে তাকিয়ে সে নওরিনের হাত টেনে এবার ট্রেন থেকে নেমে আসে। নওরিন রীতিমতো কান্না জুড়ে দিয়েছে। ভাইয়ের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টায় অবিরত থেকে কাঁদছে আর অনুনয়ের গলায় বারবার বলছে,
“তাকে ছেড়ে দাও, ভাইজান৷ তার কিছু হতে দিও না। শাবাবের কোনো দোষ নেই। দয়া করে ছেড়ে দাও তাকে।”
তানভীর হনহন পায়ে শুধু এগিয়ে গেলো। গরুর পাল টানার মতো টেনে গেল বোনকে। ভাড়াকৃত সিএনজি দাঁড় করানোই ছিলো রাস্তার এপাড়ে। তাকে গাড়িতে ঠেলে তুললেই চলতে শুরু করেছে বিনা হুকুমে অক্লান্ত গতিতে। বড়ো ভাইজান আর ড্রাইভার ব্যতীত কেউ নেই গাড়িতে। নওরিনের মনের ভয় আর গলার অনুনয়, কোনোটারই কমতি নেই। ভাইয়ের হাতটা জড়িয়ে ধরে মিনতি করতে থাকে সারাটি পথ জুড়ে।
“আমি তোমার সঙ্গে বাড়ি যাবো ভাইজান, শাবাবকে ছেড়ে দাও তবুও। তার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখবো না, তবুও তার কোন ক্ষতি করো না। ছেড়ে দাও বলছি। যা বলবে, তা-ই হবে; ছেড়ে দাও প্লিজ।”
তানভীরের নির্দয় মুখে কোনো কথা নেই। কঠিন চোখ দুটো স্থির আছে গন্তব্যের পথে। ফোনটা বেজে উঠলেই চোখে পলক নড়ে। ছোট ভাই, সৈকতের কল। ফোন রিসিভ করে তানভীর বলে,
“কী ব্যাপার? নিয়ে গেছিস?”
“হ্যাঁ, যাচ্ছি। নওরিনকে পেয়েছো?”
“হুঁ, বাড়ি যাচ্ছি। আকন্দ কোথায়?”
“আছে, এখানেই। এর অস্তিত্ব মেলাতে কী করা যায়, ভাইজান? নদীতে ফেলে দেই?”
তানভীর নওরিনের দিকে তাকিয়ে সৈকতকে জবাব দেয়,
“দে। দেহের একটা অংশ কেবল বাঁচিয়ে নিয়ে আসিস তালতলায় কবর দেওয়ার জন্য।”
ভুবনটা আঁধারে ঘনীভূত হয়ে যায় নওরিনের। দুই হাতে তানভীরের বাহুতে খাবলে ধরে পাগলের মতো চিৎকার করে,
“তাকে বাঁচতে দাও, ভাইজান। তার কোনো ক্ষতি করো না। আমায় মেরে ফেলো, আমায় কেটে ফেলো, তবুও তুমি তাকে বাঁচতে দাও।”
তানভীর কোনো প্রতিক্রিয়াই জানালো না তার পাগলামোতে। কল কেটে ফোন রেখে দিয়েছে নিশ্চুপে। মিনতির চিৎকার করতে করতে নওরিন জ্ঞান হারিয়েছে গাড়িতে। একটা সিদ্ধান্ত বেঁকে যায়, একটা ভুল কেটে যায়; নির্মম মুহুর্তগুলো কেবল জীবনে ফিরে আসে শূন্যতা নিয়ে। ইতিহাস লিখে যায়, কে কী হারিয়েছে!
আকন্দ, সৈকতেরা ফিরেছে সন্ধ্যার পরে। বাড়ির পরিবেশ থমথমে। মাঝে মাঝে তানভীরের বাচ্চাটারই শুধু কান্নার আওয়াজ বাতাসে ভাসে। নীলার সময় কাটে ভয়ে ভয়ে। এতো ভয় সে আগে কখনো উপলব্ধি করেনি। শ্বশুরের ঘরে সংক্ষিপ্ত পর্যায়ের গম্ভীর সভা দেখেই বুঝতে পারছে, সাংঘাতিক কিছু হয়েছে। এদিকে ননদিনী শান্ত হয়ে ঘুমাচ্ছে, তাকে পাহারায় রেখেছে। যখন তখন ঘুম ভাঙতে পারে; চিৎকার করতে পারে। মা মারা যাওয়ার পরেও নওরিনের এই সমস্যাটা হয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলো। দিন চারেক পর্যন্ত ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে হাউমাউ কেঁদেছে। ওদিকে ছোট্ট সভা শেষে শ্বশুর আব্বা কর্তৃক সৈকতকে ছোটখাটো একটা ধমক দিতে শুনেছে শামীমাকে আটকে রাখার দায়ে। তিনি জানতে না সারাদিন এবাড়ি বন্দী আছে শামসুর মেয়ে। তার সমস্যা ছিলো শুধু শামসুর ছেলেটা, বাকি সদস্যের দিকে ক্ষোভের প্রভাব ততটাও ঢাল করেননি তিনি। নির্দোষ মেয়ে আটকে রেখে অযথা লোকমুখে গালাগাল খেতে যাবে কী কারণে?
ভয়ের প্রকোপে ওদিকে ঠান্ডায় হাত পা জমে যাচ্ছে শামীমার। আঁধারে বন্দী হয়ে আছে আজ সারাটাদিন ধরে। বাবার কণ্ঠ সেই সকালেই একবার শোনা গেছে। বিকেলের দিকে একবার সাময়িক হট্টগোলের সাড়া পাওয়া গেলো, এই মাত্র আবার জন কয়েকের গলা। হাত, পা, মুখ অনড় অবস্থায় সে খাটের সঙ্গে বাঁধা। আঁধারে তার চিরকালই ভয়। কিন্তু আজ আঁধারে বসেও আঁধার ভুলে ভয় পেয়ে যাচ্ছিলো জীবন নিয়ে। পিতামাতার জীবন, ভাইটার জীবন, নিজের জীবন। কোন জীবন কোন হালে আছে, কিছুই জানতে পারেনি। সৈকত তালাবদ্ধ দরজা খুলে ঘরে আসতেই হৃৎপিণ্ডটা আৎকে উঠলো ধক করে! এতোক্ষণের আঁধারই তো ভালো ছিলো নিজ জীবনের নিরাপত্তাতে। তবে কেন আলো এলো এক নরপিশাচের ছায়া নিয়ে! সৈকত ইচ্ছাকৃত লাইট জ্বালালো না ঘরের। মুঠোফোনের ম্রিয়মান টর্চের আলোতে কাছে এসে নিশ্চুপ বসে। শামীমা থরথর করে কাঁপে, দূরত্ব বাড়াতে অস্পষ্ট কান্নার সাথে ছটফট করতে থাকে। চোখের নিচে ছাপ পড়ে গেছে সারাদিন কাঁদতে কাঁদতে। ঠোঁটের চাপে ফোন আটকে রেখে চর্টের আলোয় সৈকত চুপচাপ রশির গিঁট খুলে৷ হাত পা মুক্ত হতেই সে সৈকতকে জোর ধাক্কায় ফেলে দেয় পেছনে। মুখ থেকে টেপ সরানোর সময়টাও দেয়নি সৈকতকে। দরজা খোলা আছে। পাখি ডানা ঝাপটানোর সুযোগ পেয়েছে অবশেষে। এক মুহুর্ত দেরি না করে শামীমা এলোমেলো পায়ে অবিরত ছুটে চলে ঘর ও বারান্দা অতিক্রম করে উঠুনের মধ্য দিয়ে। সৈকত মেঝেতে হেলে পড়ে থাকা অবস্থায় নিশ্চুপ বসে দরজার বাইরে তাকিয়ে শামীমার ছুটে যাওয়া দেখে। বেহুশে ছুট দেওয়া!
ইট শুরকির আঁধার পথ খালি পায়ে মারিয়ে চলে শামীমা। পায়ের তলার ব্যথাতে ধ্যান পড়ে নেই তার। লক্ষে গাঁথা গন্তব্য। এক দল দুর্বৃত্তের সামনে দিয়েই ছুটে যায়, যারা তার আগ মুহুর্তে নিয়াজীর বাড়ি ছেড়ে বেরিয়েছে নিজ নিজ ঠিকানায় যাওয়ার নিমিত্তে। শামীমার পাগলপ্রায় ছুটে যাওয়া দেখে তারা হাসির চোখে। বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছাতে পথে কয়েকজনের নজরেই এমন পড়ে। শামসুর মেয়েটা এই অবেলায় এলোমেলো বেশে যে নিয়াজীর বাড়ি থেকে ছুটে! বাড়ি এসে শামীমা ঝাপটে পড়ে ব্যথায় কাতরাতে থাকা মায়ের বুকে। তাদের বোন তারা পেয়েছে, তাই তাকে মায়ের বুকে ফিরতে দিয়েছে৷ কিন্তু তার ভাইটা? ভাইটাকে কোথায় রেখে এসেছে?
পাগলপ্রায় শামসু রাতেই আবার নিয়াজীর বাড়ি আসে ছেলের খোঁজে। তারা জানে না বলে তাড়িয়ে দেয় নিরুত্তেজিত ভাবে। সারা রাত ছেলের অপেক্ষায় থেকে শামসু পরবর্তী সকালে আবার এসে কড়া নাড়ে নিয়াজীর গেটে। চিৎকার করে এবার ডাকে নিয়াজীকে। ফেরত চায় ছেলে।
“আমার ছেলে ফিরিয়ে দে তোরা। আমার ছেলে ফিরিয়ে দে।”
নিজ মেয়ের সন্ধান তো পেয়েছে, ছেলেকে ফেরাচ্ছে না কেন তবে ঘরে? নিয়াজী এবার ক্ষিপ্ত গলায় তাড়ায় তাকে। তার মেয়ের সন্ধান কি তারা দিতে পেরেছিলো সেদিন হতে? তবে শামসু মোল্লার ছেলের সন্ধান সে দিবে কীভাবে? যেন পথ থেকে মেয়েকে কুড়িয়ে পেয়েছে, এমন একটা ভাব করে রইলো।
ওদিকে নীলা সারারাত নিজ বাচ্চার সাথে সাথে নওরিনকেও সামলে গেলো। ঘুম ভাঙতেই হুটহাট উঠে বসে আঁধার ঘরে চিৎকার করতে থাকে,
“ভাইজান, ছেড়ে দাও তাকে। ছেড়ে দাও, আল্লাহর দোহাই লাগে।”
নীলা আরও ভয় পায়। সেই সাংঘাতিক কিছু ভয়াবহতার সাথে এবার নিশ্চয়তা নিয়ে আসে। তার সন্দেহ ঠিক। ছেলেটার কিছু একটা করে ফেলেছে তারা। তাই নওরিন এই কথা বলছে, এভাবে পাগলামো করছে। সহানুভূতি ঠিক কার প্রতি দেখানো উচিত, বুঝতে পারছে না নীলা। সব দিকই ভয়াবহতা নিয়ে আসছে দৃষ্টি সম্মুখে। তারা কী এমনটা করতে পারে? জীবনসঙ্গী তার এতো ভয়ানক হতে পারে? শ্বশুর আব্বা গ্রামের মাতবর; তিনি এমনটা কখনোই করবেন না৷ কিন্তু ওইযে, সেদিন যে বললেন; খবর পেলেই কবর দিতে! ভাবতেই মাথা গুলিয়ে যাওয়ার উপক্রম! তানভীর প্রতিবারই বোনের চিৎকার শুনে নওরিনের ঘরে ছুটে আসে। লাইট অফ করে বোনকে শান্ত করে আবার ঘুম পাড়িয়ে রেখে চলে যায়। সকালে দিনের আলো চোখে পড়তেই নওরিন ঘুম কাটিয়ে কিছুটা হুশে আসে। উঠে বসেই হাঁপাতে থাকে। সে ট্রেনে ছিল। শাবাব তাকে বসিয়ে পানি নিতে গেছে। তারপর? তারপর শাবাবের কী হয়েছে? চোখের ধারা আবারও বইতে থাকে। নীলা পাশ থেকে মাথায় হাত দিয়ে বলে,
“এখন কী একটু ভালো লাগছে?”
কেমন লাগছে, তার ব্যাখ্যা নেই নওরিনের কাছে। তার ধ্যানে কেবল শাবাব আছে। নীলাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে সে দরজা খুলে বেরিয়ে গেছে। নিয়াজী ঘরে থেকে হঠাৎ মেয়েকে দেখলো ছুটে যেতে। নীলাও চিৎকার করে উঠে তার পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে না পেরে। বাইরে এসে তানভীরকে ডাকাডাকি শুরু করে। ওদিকে নিয়াজীও ধমকের সুরে পিছু ডেকেছিলো মেয়েকে। নওরিন থামেনি। পাগলের মতো ছুটতে ছুটতে তালতলার কবরস্থানে চলে আসে। এপ্রান্ত হতে ওপ্রান্ত অনুসন্ধান করে বড়ো ভাইজানের কথাকে স্মরণ করে৷ নতুন কোনো কবর আছে কি না মটির বুকে? তেমন কিছু নেই। মাটি আঁকড়ে কাঁদতে কাঁদতে নওরিনটা মাটিতেই লুটিয়ে থাকে। কান্না ও নিশ্বাসের কম্পন গিয়ে মাটির বুকে মিশে। অথচ এই মেয়েটা কবরস্থানের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতেও সবসময় নাকি ভয় করে! আজ ভয়ের কোঠা দখল করে আছে হাহাকার। আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে নওরিন। ভাইয়েরা খোঁজাখুঁজি করে ক্লান্ত হতে যাচ্ছিলো বলে! আকন্দ এদিকে খুঁজতে এসে দু-তিনটে নাবালক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কবরস্থানের পাশে। নওরিনের পাগলামোই দেখছিলো তারা এদিকে তাকিয়ে। হঠাৎ লুটিয়ে পড়া দেখেও বুঝতে পারছিলো না কী হলো হঠাৎ করে। তাদের দৃষ্টিতে লক্ষ করে আকন্দ দৌড়ে যায় নওরিনের কাছে। অজ্ঞান অবস্থায় তুলে নিয়ে গেছে মামা বাড়িতে।
মোল্লা বাড়িতে নেমে গেছে শোকের ছায়া। শাবাবের খবর নিয়াজী জানে না, তা মানতে নারাজ শামসু মোল্লা। মেয়েকে বাড়িতে আনতে পারলে তার ছেলের খবরও নিশ্চয়ই খুব ভালো করেই জানে। কাজেই থানায় দৌড়াতে দৌড়াতে জুতোর তলা ক্ষয় করলো গুটিকয়েক দিন ধরে। মামলা ঠুকে দিয়েছে নিয়াজী ও তার ছেলেপুলেদের নামে; যারা তাকে শুরু থেকেই হুমকি দিয়ে এসেছিলো। সৈকতের নামে অতিরিক্ত অভিযোগ যুক্ত হয়েছে শামীমাকে বাড়ি থেকে তুলে আনার দায়ে। পুলিশ দিন কয়েক খুঁজে বেড়ালো শাবাবকে। ধরে নিয়ে গেছে আকন্দ সহ নিয়াজীর ছেলেপুলেদের। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করতে এলে ভাইদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়েছে নওরিন নিজে৷ বাবার হাতে মাইরও খেয়েছে সেজন্য। প্রাণপ্রিয় ভাবীর চোখে দুশমন বনে গেলো মুহুর্তেই। তাতে তার কোনো আক্ষেপ নেই। যে প্রাণের ভিক্ষা দেয় না, তাকে পরিচিত বলে স্বীকার করতেও জন্মে যত ঘৃণা। দিনকাল ঘিরে আছে কেবল শোক আর ঘৃণায়। অসুস্থতা? সে তো একমাত্র সঙ্গী হওয়ার স্বীকৃতি পেয়েছে নিজের কাছে।
খাঁন পরিবারের ইজ্জত পুরোদমে গেলো; মেয়ে পালালো; মামলা হলো; ছেলেরা জেলে গেলো; অর্থ ক্ষমতার জের ধরে মামলা খালাস করে আবার ফিরেও এলো। শুধু শামসুর ছেলেটাই আর ফিরল না ঘরে। সাঙ্গপাঙ্গের যে দুয়েকজন ধরে নিয়েছে, রিমান্ডে পড়ে মুখ ফসকে দিয়েছে। যখন থেকে শুনেছে তার রত্নে গড়া যত্নে লালিত ছেলেটাকে মেরে নদীতে ফেলে দিয়েছে তারা, তখন থেকে দিনের অনেকটা সময় নদীর তীরে চাতকের চোখে তাকিয়ে থাকে শামসু। এই বুঝি নদীর জলে ভেসে উঠল তার ছেলে! তবুও উঠলো না কী যেন অভিমান করে।ঘরে গেলেই স্ত্রীর মরা কান্না দেখা লাগে। মেয়েটা মাকে সামলাতে সামলাতে নিজেও কাঁদে। খাঁন বাড়ির ইজ্জতের সাথে তার মেয়ের ইজ্জতও চলে গেছে পাঁচমিশালি লোকমুখে। অসহায় পিতা দুর্বিষহ চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে এই মর্মাহত দৃশ্যগুলো প্রতিনিয়ত দেখে। ধীরে ধীরে লোকমুখের গুনগুন কমে যেতে থাকল। গরমাগরম এলাকা শান্ত হতে থাকল। খাঁন বাড়ির গম্ভীরতাও কাটতে লাগল। সবমিলিয়ে সবদিকে সবই স্বাভাবিক হতে থাকল। মাঝখান থেকে যার গেল, সে বুঝল কী যে হারাল! সেদিনের রুদ্ধশ্বাস, আজ এই ভুবনে শুধুই দীর্ঘশ্বাস নামে বেঁচে রইল।
(আপাতত সমাপ্ত)