#এক_খণ্ড_কালে_মেঘ
#পর্ব_৩০
#নিশাত_জাহান_নিশি
“আঙ্কেল আন্টি আপনারা কাঁদবেন না। আপনাদের ছেলে যেখানেই থাকবে ভালো থাকবে।”
ধীরে ধীরে আমার পৃথিবী অন্ধকার হয়ে আসছিল। শ্বাস-প্রশ্বাস তখন বন্ধ প্রায়। রুহটা যেন দেহ থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল এমনটিই মনে হচ্ছিল আমার। মৃ’ত্যু’র মত কঠিনতম যন্ত্রণা তখন ক্রমশ গ্রাস করছিল আমায়। এই সুন্দর পৃথিবীতে বুঝি আর থাকা হলোনা আমার। এতে অবশ্য তিল পরিমাণ আফসোসও হচ্ছিল না আমার! যে পৃথিবীতে বেঁচে থেকেও তোমায় পাওয়া হবেনা সে পৃথিবীতে আমি নাই বা থাকলাম! আ’ত্ন’হ’ত্যা তো করতে পারতাম না। কারো হাতে খু’ন হওয়া অবশ্য আ’ত্ন’হ”ত্যা হতে পারেনা! অজান্তে হলেও অনিক এবং তার দলবল আমাকে সাহায্য-ই করছিল! তুমি বিহীন আমাকে ম’র’তে সাহায্য করছিল। আমার স্বস্তি হচ্ছে জানলে হয়ত এই সাহায্যটিও তারা আমায় করত না। বরং ধুঁকে ধুঁকেই ম’র’তে দিত আমায়।
কিছু অমিমাংসিত প্রশ্ন তখন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। কী এমন ক্ষতি হতো বলো? যদি একটি বারের জন্যে হলেও আমি তোমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতাম? তোমাকে ভালোবাসার কথাটি নাই বা বলি কিন্তু দূর থেকে হলেও তো তোমাকে একটু দেখে আসতে পারতাম? চোখের শান্তি জুটতো, মনের খোঁড়াক মিলত। কিন্তু এখন যে আমি ম’রে যাচ্ছি অয়ন্তী! আর তো কখনো দেখা হবেনা আমাদের। আমার করা একটা অযাচিত ভুল তোমারে আমার হতে দিলো না! তোমাকে দেখতে না পারার যে যন্ত্রণাটা বুকে চেপেছিল না? সেই অদৃশ্য যন্ত্রণাটা সত্যিই আমাকে আর বাঁচতে দিচ্ছিল না! বুকের ভেতর তীব্র এক আফসোস নিয়ে ম’র’তে হচ্ছিল আমায়। না চাইতেও চোখ বুজে নিলাম আমি। যন্ত্রণা ক্রমশ হ্রাস হচ্ছিল আমার। হয়ত ম’রে যাচ্ছিলাম!
এরপর আমার সাথে কী ঘটেছে না ঘটেছে কিছুই আন্দাজ করতে পারিনি আমি। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই তখন আমি বেঁচে ফিরি।চোখ খুলে নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করি। সবাই বলাবলি করছিল তখন আমার থেতলে যাওয়া মুখটিকে নাকি প্লাস্টিক সার্জারি করাতে হবে! এরজন্য আমাকে দেশের বাইরে নিয়ে যেতে হবে। আর সেই কাজটি ঠিক ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই করতে হবে। মা-বাবা, ভাইয়া-ভাবি সবাই খুব অস্থির হয়ে ওঠে। যেভাবেই হোক আমাকে দেশের বাইরে নিয়ে যায়। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই আমার সার্জারি করানো হয়। তখন আমাকে দেশের বাইরে নেওয়া থেকে শুরু করে সার্জারির অধিকাংশ খরচ-ই আমার দলের নেতা মির্জা ফখরুল হক বহন করেন। এই ক্ষেত্রে আমি অবশ্য উনার কাছে ঋণি। তবে এই পৃথিবীতে স্বার্থ ছাড়া কেউ কারো হেল্প করেনা অয়ন্তী। দুনিয়াটা হলো স্বার্থের পাগল। মূলত তিনি চেয়েছিলেন যেকোনো মূল্যেই হোক আমি বেঁচে ফিরি। আমি না থাকলে উনার দলের অনেক বড়ো ক্ষতি হয়ে যেত তাই। দলকে পরিচালনা করতে হিমশিম খেয়ে যেত। আমার সেল্টারেই উনার দলবল আজও টিকে আছে। নয়ত মিন্টু ভাইয়ার তর্জনে গর্জনে কবেই দল ধ্বংস হয়ে যেত।
সার্জারির পর যখন আমি মোটামুটি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরি এর চার থেকে পাঁচ দিনের মাথাতেই আমি ঢাকায় যাওয়ার রিস্ক নিই! তোমাকে দূর থেকে দেখে আসার রিস্ক নিই৷ বাড়ি থেকে বের হতে দিচ্ছিল না আমায়। তবুও জোর করে বের হই। তোমার ভার্সিটির সামনে প্রায় তিনঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর তোমার দেখা পাই! ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে গেইটের বাইরে বেরিয়ে এলে তুমি। আমি তোমার পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। তখন তুমি আমায় দেখেও দেখলে না! এক পলকের জন্য তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিলে। বুঝতে পেরেছিলাম তুমি চিনতে পারোনি আমায়! চিনবেই বা কী করে? রাদিফ তো তার নিজস্বতা হারিয়ে ফেলেছে! তার আগের মুখটিকে হারিয়ে ফেলেছে সে। সারাক্ষণ তোমার চোখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলেও চিনতে পারবেনা আমায়। মনে এক সমুদ্র বিষাদের জল নিয়ে সেদিন বাড়ি ফিরি আমি। এরপর টানা এক মাসের জন্য বেড রেস্টে থাকি।
একমাস পর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে আবারও রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি আমি! নিজেকে ব্যস্ত রাখার প্রয়াসে অটল আমি। তখনই এন.আই.ডি কার্ড নিয়ে বাঁধে আরেক বিপত্তি। সেই আগের এন.আই.ডি কার্ডে থাকা আমার চেহারার সাথে এখনকার চেহারার পুরোপুরি অমিল! রয়েছে অনেক অসামঞ্জস্যতা। নতুন করে আবারও এন.আই.ডি কার্ড তৈরী করতে হয়। তখন আমি আমার নামটাও চেঞ্জ করে ফেলি! আমার মনে হত আগের চেহারার সাথে রাদিফ নামটিই যেত। এখনকার চেহারার সাথে রাদিফ নামটি একদমই যায়না! তাছাড়া আগের চেহারা এবং রাদিফ নামটির সাথে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে আমার। সেই স্মৃতি আমি রাফায়াতের নষ্ট জীবনের সাথে জড়াতে চাইছিলাম না। তাই আমার বর্তমান নাম রাদিফ থেকে রাফায়াত করে ফেলি। আস্তে ধীরে সবাই আমাকে রাফায়াত নামে চিনতে শুরু করে। কাছে দূরের সবাই এখন প্রায় রাদিফ নামটি ভুলেই বসেছে। আমি নিজেও এখন মাঝেমধ্যে ভুলে যাই কোনো একসময় আমি রাদিফ ছিলাম!
রাফায়াতের মুখ থেকে এহেন হৃদয়বিদারক কথা গুলো শুনে শুনেই ডুকরে কেঁদে ওঠে অয়ন্তী। দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে রাফায়াতকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে। ভরাট গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ে,,
“এরপর?”
“প্রিয়ার সাথে আমার বিয়ের কথাবার্তা সব ঠিক হয়ে যায়! মন থেকে মেনে না নিলেও পরিবারের কথা ভেবে আমি প্রিয়াকে জোরপূর্বক মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। কারণ, আমি আমার পরিবারকে কখনও সুখ দিতে পারিনি। যবে থেকে রাজনীতির সাথে জড়িয়েছি তবে থেকেই তাদের জীবনটাকে দুর্বিষহ করে তুলেছি। আমার এই অপ রাজনীতির কারণে আমার পরিবারকে বিভিন্ন হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। বাবার প্রায় দু’একবার হার্ট অ্যাটাকও হয়ে গেছে। মাকে একবার কি’ড’ন্যা’প করা হয়েছিল। ভাবিকে র্যা’প করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তবুও তারা মনে সাহস রেখে আমাকে সাপোর্ট করে গেছে। কখনো বলেনি বাড়ি থেকে বের হয়ে যা। বা কুলাঙ্গার ছেলে হিসেবে আমাকে অস্বীকৃতিও করেনি। বরং যেকোনো ঝামেলাতেই তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে আমাকে সেইফ করে এসেছে। তাছাড়া আমি ভাবতাম তুমি হয়ত অনিকের সাথে ভালোই আছো। অনিক আমার সাথে যাই করুক না কেন তোমার সাথে অন্তত প্রতারণা করবেনা। এরমধ্যে আবার তোমাদের বিয়ের গুঞ্জনও শুনেছিলাম! অনিক সবার কাছে তখন বলাবলি করত তোমরা খুব শীঘ্রই বিয়ে করছ। আর এই বিয়েতে অনিকের চেয়ে তুমি বেশী খুশি! যদিও এসব কথা শুনে প্রতিবারই মন ভাঙত আমার। তবুও যেন নিজের ভাঙা মনকে তখন সন্তপর্ণে সামলে নিতাম। তুমি ভালো আছে ভেবেই ভেতরে একটা সুখ সুখ অনুভূতি হত।
এরমধ্যেই হঠাৎ জানতে পারি প্রিয়ার সাথে অনিকের প্রেমের সম্পর্ক আছে! শুধু তাই নয় তাদের মধ্যে ফিজিক্যাল রিলেশনও ছিল। হোস্টেলে থেকে প্রিয়া তার এবর্শনও করেছে! ইয়াদের থেকে চঞ্চল আকার ইঙ্গিতে এই খবর গুলো জানতে পারে। যা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। একের পর এক ধাক্কা লাগছিল আমার। কারণ এই কয়েকদিনে আমিও প্রিয়াকে মন থেকে মানার চেষ্টা করেছিলাম! হয়ত মেনেও নিচ্ছিলাম। প্রথমত, প্রিয়া অতিম এবং অনাদ ছিল। আমি এবং আমার পরিবার ছাড়া পৃথিবীতে তার আপন বলতে আর কেউ নেই। উপরন্তু আমার মায়ের চাপ সৃষ্টি। প্রিয়ার ভবিষ্যত নিয়ে করতে থাকা দুঃশ্চিন্তা। অগাধ বিশ্বাসের বিনিময়ে আমার সহজ-সরল বাবা-মাকে ধোঁকা দেওয়া। শুধু তাই নয় অনিক তোমাকে ঠকাচ্ছিল এই বিষয়টি জানতে পেরেও যেন আমার মাথা ঠিক ছিলনা। চঞ্চল তখন আমাকে আইডিয়া দিলো ঢাকা যেতে। তোমার মুখোমুখি হতে। প্রেমের জালে তোমাকে ফাঁসাতে! দুজন লুকিয়ে বিয়েশাদি করে নিতে। এতে যেমন অনিক এবং প্রিয়ার থেকে রিভেঞ্জ নেওয়া হবে তেমনি আমার ভালোবাসাও পূর্ণতা পাবে। আস্তেধীরে হয়ত তুমিও আমাকে ভালোবাসতে শুরু করবে। প্রথমে আমি যদিও চঞ্চলের আইডিয়া মেনে নিতে পারিনি তবে দু-একদিন আমি ভেবেচিন্তে দেখলাম চঞ্চল অবশ্য খারাপ কিছু বলেনি! চান্সটা একবার কাজে লাগানো দরকার।
এরমধ্যেই আবার ইয়াদের সাথে আমার দলীয় কাজ নিয়ে ঝামেলা হয়। ঝামেলার এক পর্যায়ে আমি কন্ট্রোললেস হয়ে ইয়াদকে গুরুতরভাবে জ’খ’ম করি। এই নিয়ে পুলিশ কেইসও হয়। বাবা তখন আমার কাজটা আরও সহজ করে দেয়। ঢাকায় ভাবির আত্নীয়ের বাড়িতে আমাকে পাঠিয়ে দেয়। কাকতালীয়ভাবেই ভাবির খালাতো বোনের সাথে তোমার আবার বন্ধুত্ব! ঐ বাড়িতে যাওয়ার দুদিনের মাথাতেই খবরটা আমি আলিজার মুখ থেকে জানতে পারি। এরপর আলিজার ছোটো বোনের বার্থডেতে আসার পর থেকে তোমার সাথে যা যা ঘটেছিল সব আমার প্ল্যানমাফিক ছিল। অনিকের প্রতি তোমার মিছেমিছি ভালোবাসা দেখে প্রথমে আমি খুব রুড হলেও পরে আরিফের থেকে জানতে পারি অনিকের আসল কীর্তি! অনিক মূলত তোমাদের সম্পত্তির জন্য তোমাকে বিয়ে করতে চায়। তোমাকে এবং তোমার বাবা-মাকে সামলে রাখার অভিনয় করে। অনামিকার সু’,ই’সা”ইডের খবরটিও তখন আমার সামনে আসে। ভাবতেই তখন অবাক লাগছিল অনামিকার মত এত শক্ত মনের একটা মেয়ে সু’ই’সা’ই’ড করতে পারে? কী এমন ঘটেছিল তার সাথে যার কারণে সে সু’ই’সা’ইড করেছিল? অনিকের সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল বলেই কী অনামিকা সু’ই’সা’ই’ড করেছিল? এই সত্যগুলো জানা তখন আমার জরুরী দরকার হয়ে পড়ে। এর সাথে তোমাকে এবং তোমার পরিবারকে প্রটেক্ট করাও আমার মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
এরপর আরিফের সাহায্যে তোমাকে বাড়ি থেকে উঠিয়ে আনি আমি। কি’ড’ন্যা’প করার মিথ্যে নাটকটা করি। কেন জানিনা আমার মন বলছিল অনামিকার সাথে যা ঘটেছে তোমার সাথেও হয়ত তা ঘটতে পারে! তাই রিস্ক নিতে চাইনি আমি। মিলিয়ে দেখো। তোমাকে যদি আমি কি’ড’ন্যা’প করে আমার সাথে না নিয়ে আসতাম তাহলে হয়ত এতক্ষণে তোমার বাবা-মায়ের মত তোমারও করুন অবস্থা হত। র্যা’প হতে হতো তোমাকে অনিকের হাতে! অনিক তখন যা ইচ্ছা তাই করত তোমার সাথে। তোমার বাবা-মা চেয়েও তখন কিছু করতে পারত না। সবকিছু ভেবে চিন্তেই তোমাকে আমি কি’ড’ন্যা’প করি। এদিকটা সামলে এরপর তোমার বাবা-মাকে চট্টগ্রাম নিয়ে আসি। তবে এরমধ্যে হঠাৎ অনিককে কে খু’ন করতে পারে তাই আমাকে বড্ড ভাবাচ্ছে।
হুট করেই বসা থেকে ওঠে গেল প্রিয়া! অপরাধী মুখ নিয়ে সে কাঁদতে কাঁদতে রাফায়াত এবং অয়ন্তীর পাশাপাশি দাঁড়ালো। হাতজোড় করে তাদের দুজনকে বলল,,
“বিশ্বাস করো তোমরা? আমি অনিককে খু’ন করিনি! অনিক খু;ন হয়েছে তা আমি তোমাদের মুখ থেকেই একটু আগে জানতে পেরেছি। মানছি অতীতে আমি অনিকের সাথে মিলে যা করেছি ভুল করেছি। অনিকের কথার জালে ফেঁসে, তার মিথ্যে ভালোবাসার মায়ায় পড়ে আমি রাফায়াতকে ঠকিয়েছি। তবে কাউকে খু’ন করার মত এতবড়ো জঘন্য কাজ আমি করতে পারিনা। প্লিজ তোমরা আমাকে ভুল বুঝো না। মিথ্যে অভিযোগে আমাকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিওনা প্লিজ। হাত জোর করছি আমি তোমাদের কাছে।”
অয়ন্তীকে ছেড়ে দাঁড়ালো রাফায়াত। কঠোর ভঙ্গিতে কান্নারত প্রিয়ার মুখোমুখি দাঁড়ালো সে। কঠিন গলায় প্রিয়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,,
“তুই সত্যিই অনিককে খু’ন করিসনি?”
“তিন সত্যি রাফায়াত। আমি সত্যিই অনিককে খু’ন করিনি।”
“কে খু’ন করতে পারে বলে তুই মনে করিস? অনিক কখনো তোকে আকার ইঙ্গিতে কিছু বলেছিল?”
“একবার বলেছিল তার দলের মধ্যেই তাকে নিয়ে রে’ষারেষি চলছে! এর বেশী কিছু আমাকে বলেনি রাফায়াত।”
চঞ্চল মুখ খুলল এবার। প্রিয়ার পাশাপাশি হয়ে রাফায়াতের মুখোমুখি দাঁড়ালো সে। ভাবুক গলায় বলল,,
“এ ও তো হতে পারে মিন্টু ভাই নিজেই অনিককে খু’ন করেছে! তোকে ফাঁসানোর জন্য। প্রথম থেকেই কিন্তু মিন্টু ভাই তোর পেছনে লেগে আছে রাফায়াত। এর আগের বারও কিন্তু মিন্টু ভাই-ই তোকে প্রথমে অ্যাটাক করেছিল। ভেবে দেখ বিষয়টা।”
চঞ্চলের কথায় রাফায়াত সহমত পোষণ করল। স্বাভাবিক গলায় বলল,,
“ভেবে দেখার কিছু নেই। ফখরুল ভাইও আমাকে বাজানোর জন্য বলেছিল অনিককে আমি খু’ন করেছি কিনা! সেম কথা ইয়াদও বলল। সবার টার্গেট এখন আমার দিকেই যাবে। হয়ত পুলিশররা এতক্ষণে আমাকে খুঁজতেও বের হয়ে গেছে। তবে যাই হয়ে যাক প্রিয়াকে আমাদের সেইফ রাখতে হবে। কোনোভাবে প্রিয়ার লকেটটা পুলিশের হাতে পৌঁছে গেছে। কেউ হয়ত উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রিয়াকে ফাঁসাতে চাইছে নয়ত আমাকে। হয়ত দুজনকেই একসাথে ফাঁসাতে চাইছে।”
পেছন থেকে অয়ন্তী হঠাৎ ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল! অয়ন্তীর কান্নার আওয়াজ পেয়ে রাফায়াত আতঙ্কিত হয়ে পিছু ঘুরে তাকালো। অমনি অয়ন্তী ছুটে এসে রাফায়াতকে জড়িয়ে ধরল। হেঁচকি তুলে বলল,,
“অনিক ভাই খু;ন হয়েছে এতে আমার কোনো আফসোস নেই রাদিফ। বরং আ’জা’ব পাতলা হয়েছে সেই ভেবে আমার খুশি লাগছে। কিন্তু আমি তোমাকে আর হারাতে চাইনা রাদিফ! তোমাকে অনেক কথা বলার আছে আমার। মনের গহীনের সব লুকানো কথা। যা আমি কখনও চেয়েও তোমাকে বলতে পারিনি। সেই কথাগুলো জমাট জমাট বাঁধতে বাঁধতে মস্ত এক ডায়েরীতে পরিণত হয়েছে! মনের সেই ডায়েরীটি আমি তোমাকে পড়ে শুনাতে চাই রাদিফ। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেই সময়টা আমি পাব না! আমার ভালোবাসা আজ ভালো নেই। তার উপর অনেক বিপদ। মহা বিপদ।”
রুদ্ধশ্বাস ফেলল রাফায়াত। কোমলভাবে অয়ন্তীর মাথায় হাত বুলাতে লাগল। চোখজোড়া বুজে শান্তনার স্বরে বলল,,
“শান্ত হও অয়ন্তী। আমার বুঝতে বাকি নেই তুমি রাদিফকে ঠিক কতখানি ভালোবাসো। তোমার কাছে যাওয়ার পরই রাদিফ তোমার ভালোবাসা উপলব্ধি করতে পেরেছে। তোমার ভালোবাসা এখন ভালো আছে অয়ন্তী। তোমাকে কাছে পাওয়ার মধ্যে যে সুখ সেই সুখ রাদিফের সমস্ত অতীতের যন্ত্রণা ভুলিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে হয়ত তার মত সুখী আর পৃথিবীতে দ্বিতীয় কেউ নেই। যদিও ভবিষ্যতে কী ঘটতে চলেছে আমি জানিনা! তবে তুমি যেহেতু আমার পাশে আছো আই হোপ আর কোনো খারাপ কিছু ঘটবেনা আমার সাথে।”
“আমি এত শত কথা শুনতে চাইনা রাদিফ। শুধু একটা কথাই শুনতে চাই।”
“কী কথা অয়ন্তী?”
“তুমি আমাকে আগে এনশিওর করো যে আল্লাহ্’র রহমতে যদি এই বিপদটা থেকে তুমি মুক্তি পাও তবে এসব অপ-রাজনীতির লাইন তুমি ছেড়ে দিবে?”
গভীর চিন্তায় পড়ে গেল রাফায়াত! কঠিন এক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে অয়ন্তী তার দিকে! আদৌ সে জানেনা অয়ন্তীর এই প্রশ্নের উত্তর তার জানা আছে কী-না। তবুও যেন মনে মনে আকাশ কুসুম চিন্তা করে রাফায়াত দৃঢ় গলায় বলল,,
“তুমি ছিলেনা বলেই রাজনীতির সাথে আমি বার বার জড়িয়ে পড়েছিলাম অয়ন্তী। তুমি আছো এখন আর রাজনীতির দরকার পড়বেনা আমার! আমি আমার হান্ড্রড পার্সেন্ট দিব এই লাইন থেকে সরে আসার।”
এরমধ্যেই চঞ্চল বেশ তাড়া দিলো রাফায়াতকে। প্রিয়াকে রেখে দ্রুত এই ফ্লাট ছেড়ে বের হতে বলল সবাইকে। ঘটনাচক্রে সশরীরে উপস্থিত না থাকলে এখন সবার সন্দেহ রাফায়াতের দিকে পড়তে পারে! চঞ্চলের কথা শুনে রাফায়াত সত্যিই অয়ন্তীকে নিয়ে ফ্লাট থেকে বের হয়ে গেল। সাথে চঞ্চলও তাদের পিছু নিলো।
____________________________
মধ্যরাত তখন। ঘড়িতে ভোররাত তিনটার কাছাকাছি প্রায়। রাফায়াতকে তার বাড়ি থেকে গ্রে’ফ’তা’র করে নিলো পুলিশ! জোর করে টেনে হেছঁড়ে তাকে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়।
#চলবে…?
#এক_খণ্ড_কালো_মেঘ
#পর্ব_৩১
#নিশাত_জাহান_নিশি
মধ্যরাত তখন। ঘড়িতে ভোর রাত তিনটার কাছাকাছি প্রায়। রাফায়াতকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রে’ফ’তা’র করে নিলো পুলিশ! জোর করে তাকে টেনে হেছঁড়ে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
হাজার জো’র জব’রদ’স্তি করে,আইনের সূত্র ধরে লি’গ্যা’লি কথাবার্তা বলেও রাফায়াতের পরিবার রাফায়াতকে আ’ট’কে রাখতে পারেনি! সন্দেহজনক ভাবে তারা রাফায়াতকে গ্রে’ফ’তার করে নিয়ে যায়। কোনো শক্তপোক্ত প্র’মা’ণ ব্যতিরেকেই! প্রমাণের কথা বললেই তারা প্রসঙ্গ পাল্টে জ’ঘ’ন্য ব্যবহার করে রাফায়াতের পরিবারের সাথে। এই নিয়ে কথা বললেই রাফায়াতের বড়ো ভাই এবং বাবাকে গ্রেফতার করার হুমকিও দেয় পুলিশ! তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই রাফায়াত কথা আর বাড়ায় নি। কোনো প্রকার ঘাড়ত্যাড়ামি ও করেনি। পুলিশের কথা মতো আত্মসমর্পণ করে তাদের কাছে। শুধু যাওয়ার সময় বলে যায় মির্জা ফখরুল হককে ফোন করে খবরটা একবার জানিয়ে দিতে। যা করার মির্জা ফখরুল হক নিজেই করবেন।
রাফায়াতের কথা মতো রাফায়াতের বাবা এই ভোর রাতেই মির্জা ফখরুল হককে ফোন করেন। দুইবার কল বেজে যাওয়ার পর তিনবারের বেলায় তিনি কলটি তুলেন। ঠাণ্ডা মাথায় রাফায়াতের বাবা মির্জা ফখরুল হককে সবকিছু বুঝিয়ে বলেন। শান্ত মেজাজে তিনি রাফায়াতের বাবাকে শান্তনা দেন। আশ্বস্ত করে বলেন সকাল হলেই ব্যাপারটা তিনি ভেবে দেখবেন। যথেষ্ট প্রমাণ ছাড়া তো কেউ কাউকে এভাবে গ্রে’ফ’তা’র করতে পারেনা। যে কাজ রাফায়াত করেনি সে কাজের শাস্তি তিনি রাফায়াতকে পেতে দিবেন না।
রাফায়াতকে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার খবরটি চঞ্চলের কানে পৌঁছাতেই চঞ্চল মরিয়া হয়ে উঠল। ঘুম নিদ্রা ছেড়ে সে ভোর রাতেই রাফায়াতের বড়ো ভাইকে নিয়ে পুলিশ স্টেশন চলে যায়। জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছে রাফায়াতকে। তার সাথে কথা বলার বা দেখা করার সুযোগটিও অবধি দেওয়া হচ্ছেনা কাউকে। দুদিন পর রাফায়াতকে কোটে চালান করা হবে। রায় অনুযায়ী কোট থেকে থানায় হস্তান্তর করা হবে। রাফায়াতকে গ্রেফতার করা দায়িত্বরত পুলিশ অফিসারের সাথেও নানান কথা কাটাকাটি হয় চঞ্চল এবং রাফায়াতের বড়ো ভাই রায়হানের। পুলিশদের সেই একই কথা, “কোটে দেখা হবে।” কোট যা রায় দিবে তাই হবে। পুলিশের এই কথার বিপরীতে তর্ক বেড়ে গিয়ে পরিস্থিতি খারাপের দিকে এগুতেই তারা রায়হান এবং চঞ্চলকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে পুলিশ স্টেশন থেকে বের করে দেয়। তবুও তারা তাদের লক্ষ্য থেকে পিছপা হয়নি। পুলিশ স্টেশনের বাইরে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে। সকাল হওয়ার অপেক্ষায় থাকে।
সবার কানে খবরটা পৌঁছালেও অয়ন্তী এখনো এই ব্যাপারে কিছু জানতে পারেনি। রাতভর তারা ফ’রেন’সিক ল্যা’বের আশেপাশে ছিল। অনিকের লা’শে’র কাছে। অনিকের বাবা-মা এখনো ডুবাই থেকে আসতে পারেনি। দুপুরের পরে হয়ত তারা দেশে এসে পৌঁছাবে। অনিকের এই খু;নে বিন্দুমাত্র আফসোস নেই অয়ন্তীর মা এবং বাবার! র’ক্তের সম্পর্কের হওয়া সত্ত্বেও অনিকের মৃ”ত্যু”তে কোনো শোক নেই অয়ন্তীর বাবার! থাকবেই বা কী করে? অনিক উনার এবং উনার পরিবারের সাথে যা যা করেছে তারপরেও অনিকের প্রতি মায়াবোধ আসাটা সত্যিই বেমানান। এতগুলো বছর ধরে অনিক তাদের ঠকিয়ে এসেছে। সম্পত্তির লো’ভে পড়ে তাদের বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে এসেছে। সর্বোপরি তাদের উপর শারীরিক এবং মানসিক অ’ত্যা’চার করেছে। এর ফলই হয়ত আল্লাহ্ তাকে কোনো না কোনোভাবে দিয়েছে! এতে অবশ্য আফসোস করার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেনা তারা। উল্টে ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে আছে তারা অনিকের মা-বাবার উপর। কীভাবে এই কু-সন্তান পেটে ধরেছে তারা? যে ছেলে তার চাচা-চাচী, চাচাতো বোনের উপর পা’শ’বিক নি’র্যা’তন করে? স’ন্ত্রা’সের হাতে এমন নির্মমভাবে খু’ন হয়?
অনিকের এই মর্মান্তিক খু’নে অনিকের দলের নেতা এবং সহযোগীদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে প্রায়! তাদের মনের মধ্যে এখন যেমন প্রুচর ভয় কাজ করছে তেমনি রাফায়াত এবং তার দলের প্রতিও আক্রোশ কাজ করছে। রাফায়াতকে তারা আজীনের জন্য থানায় ঢুকাতে পারলেই যেন জানে বাঁচে। মিথ্যে কিছু এলিগেনচ এনে তারা রাফায়াতের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। প্রশাসনকে ঘু’ষ খাইয়ে তারা রাফায়াতকে জে’লে ব’ন্দি করে। তার বিরুদ্ধে মিথ্যে কিছু প্রমাণও জোগাড় করতে থাকে। পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছে তারা। যেভাবেই হোক রাফায়াতকে এবার ধ্বংস করে ছাড়বেই তারা।
যদিও যথেষ্ট প্রমাণ ছাড়া আ’সা’মী’কে জেলে মা’র’ধ’র করার কোনো নিয়ম নেই তবুও ঘু’ষ খাওয়া পুলিশ ভোররাত থেকে রাফায়াতকে বিভিন্নভাবে ট’র্চা’র করতে শুরু করে! একের পর এক চ/ড়, থা/প্প/ড়, ঘু/ষি, লা/ঠি চার্জ করা হয় রাফায়াতের উপর। মা’রতে মা’রতে তাকে এক পর্যায়ে র’ক্তা’ক্ত করে ফেলা হয়। দাঁতে দাঁত চেপে রাফায়াত সব সহ্য করছিল। বিপরীতে একটাও টু শব্দ করেনি। এত অ’ত্যা’চা’র সহ্য করেও মুখ ফুটে স্বীকার করেনি অনিককে রাফায়াতই খু;ন করেছে! তার মুখ থেকে শুধু একটি কথাই বের হয়েছে,,
“আমাকে যতই মা’রু’ন কা’টু’ন কোনো লাভ নেই এতে। যা আমি করিনি তা কখনো আমার মুখ দিয়ে বের করতে পারবেন না। আর একটা কথা, যার কাছ থেকে আপনারা মোটা অঙ্কের টাকা ঘু/ষ নিয়েছেন না? তাকে বলে দিবেন রাফায়াত যদি কোনোভাবে তার এই ষ’ড়’য’ন্ত্র থেকে বের হয়ে আসতে পারে তবে কিন্তু সেদিনই তার জীবনের শেষ দিন হবে!”
রাফায়াতকে বেধড়ক মা’র’ধ’র করতে করতে কনস্টেবলদের সাথে থাকা বড়ো পুলিশ অফিসারটি এবার ক্লান্ত হয়ে এলেন। হাতে থাকা লা/ঠি/টি তিনি হাত থেকে ছুঁড়ে ফেললেন। পা দুটি ভাজ করে মেঝেতে আ’হ’ত রাফায়াতের মুখোমুখি বসলেন। ব্যগ্র হেসে বিদ্রুপের স্বরে বললেন,,
“খুব হে’ডা’ম দেখাচ্ছিস না? খুব হে’ডা’ম? এখান থেকে যখন রি’মা’ন্ডে নিয়ে যাওয়া হবে, গরম পানি গাঁয়ে ছুঁ’ড়ে চা’ম’ড়া শুদ্ধু উঠিয়ে নেওয়া হবে তখন ঠিকই ফড়ফড় করে সত্যিটা স্বীকার করবি। তোর মত কত জা’দ’রেল ক্রি’মি’না’ল’কে যে আমি শায়েস্তা করেছি তার লিস্ট দেখালে তুই নিজেই বেহুশ হয়ে যাবি!”
পৈশাচিক হাসল রাফায়াত। নাক-মুখ থেকে গড়িয়ে পড়া র’ক্ত’গুলো দু’হাত দ্বারা মুছল সে। হাতের ফি’ন’কি বেয়েও র’ক্ত ঝড়ছিল তার! তবুও যেন শরীরের সমস্ত যন্ত্রণাকে উপেক্ষা করে সে জা’লি’ম অফিসারের দিকে সরু দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। একরোখা গলায় বলল,,
“সময় সব বলে দিবে কার সাথে কী হবে না হবে। পাশার চাল যেকোনো মুহূর্তে ঘুরে যেতে পারে। তখন না আবার বরখাস্ত হওয়ার ভয়ে আমার পায়ে এসে হামাগুড়ি খান সেদিকটাও একটু খেয়াল রাখবেন।”
চটে গেলেন পুলিশ অফিসার। উগ্র মেজাজী হয়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়লেন। রাফায়াতের তলপেট বরাবর জোরে এক লা’থ মারলেন। ঝাঁজালো গলায় বললেন,,
“তুই ম’র”বি শা’লা!”
সঙ্গে সঙ্গেই তলপেটে হাত রেখে রাফায়াত মাগ্গো মা বলে এক বুক ফাঁটা চিৎকার দিয়ে উঠল। তার জান শুদ্ধু বের হয়ে গেল এমনটিই মনে হলো! খালি পেটে থাকার দরুন তলপেটের আঘাতটি রাফায়াত সহ্য করতে পারলনা। গোঙাতে গোঙাতে সে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল! রাফায়াতের এই করুন অবস্থা দেখে পুলিশ অফিসারটি হু হা শব্দে হেসে উঠলেন! হেয় স্বরে বললেন,,
“একটা লা/থি খেয়েই এই অবস্থা তোর। যখন রি’মান্ডের মা/র খাবি তখন তোর কী অবস্থা হবে রে চাঁদু? বড়ো বড়ো কথা থাকবে তো তখন?”
সেলের দরজায় তালা ঝুলিয়ে পুলিশ অফিসার বেশ বদরাগী ভাব নিয়ে বাইরে থেকে সেলের দরজাটি তালা বদ্ধ থেকে করে দিলেন। ক্লান্তি দূর করার জন্য চেয়ার টেবিলে হাত-পা ছুঁড়ে বসলেন। গোঁফ উঁচিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসলেন! পূণ্যের কাজ করে এসেছেন এমনটিই মনে হলো। তখনই চারিদিকে ফজরের আযান পড়ল। রাফায়াতের মা কাঁদতে কাঁদতে নামাজে দাঁড়ালেন। ফজরের নামায পড়ে তিনি মোনাজাতে বসে ছেলের জন্য ডুকড়ে কাঁদতে লাগলেন। এই প্রথম রাফায়াতের বিরুদ্ধে খু’নের অভিযোগ এলো। খু’নি সাবস্ত করে তাকে জে’লহাজুতে নিয়ে যাওয়া হলো। একজন চিহ্নিত খু’নিকে নিশ্চয়ই জেলের ভেতর স্বাচ্ছন্দ্যে রাখা হবেনা? বে’ধ’ড়ক মা’র’ধ’র করা হবে। এসব ভাবতেই যেন জান বের হয়ে যাচ্ছিল রাফায়াতের মায়ের। মায়ের মন তো? এমনিতেও আর বুঝতে বাকী নেই রাফায়াত জে’লহাজুতে ভালো নেই। নিশ্চয়ই তাকে পা’শ’বি’কভাবে অ’ত্যা’চা’র করা হচ্ছে। রাফায়াতের মায়ের এহেন গগনবিদারী কান্না দেখে রাফায়াতের ভাবি সুমাও এবার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। কোনো রকমে রাফায়াতের মা’কে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করল।
সকাল আটটা কী নয়টা বাজতেই অয়ন্তীর কানে রাফায়াতের গ্রে’ফ’তা’রে’র খবরটি গেল। চঞ্চলের থেকে মাত্রই খবরটি জানতে পারা তার। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল অয়ন্তীর। তার বাবা-মাকে অনিকের লা’শে’র কাছেই রেখে সে বিধ্বস্ত হয়ে ছুটে চলল পুলিশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে। রাত থেকে যে ভয়টা পাচ্ছিল সে ভয়টাই এখন সত্যি প্রমাণিত হলো। রাফায়াতকে সে বার বার বলেছিল বাসায় না ফিরতে। কয়েকদিনের জন্য হলেও কোথাও একটা গাঁ ঢাকা দিয়ে থাকতে। পরিস্থিতি শান্ত হলে আবারও ফিরে আসতে। রাফায়াত শুনেনি তার বারণ৷ পাপ নেই শরীরে ভয় নেই বলে অয়ন্তীকে বার বার শান্তনা দিয়েছে। সকাল থেকে তার মনটাও বড্ড কুহ্ গাইছিল। যেভাবে বিরোধী দলের নেতারা রাফায়াতের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আছে নিশ্চয়ই জেলহাজুতে নিয়ে গিয়ে রাফায়াতকে আস্ত রাখেনি তারা! ভাবতেই অন্তর্আত্তা কেঁপে উঠল অয়ন্তীর। হাত-পা থরথর করে কাঁপতে লাগল। রিকশার মধ্যেই তার জ্ঞান হারিয়ে ফেলার মত উপক্রম হলো। যাও এতদিন পর সুখের মুখ দেখতে পেল সে তাও আবার সেই সুখ উপর ওয়ালা এতটা নি’ষ্ঠুর’ভাবে ছিনিয়ে নিতে যাচ্ছেন।
এদিকে রাফায়াতের মায়ের অবস্থা হয়ে গেল মুমূর্ষু! প্রেশার বেড়ে ঘাড়ের রগ ফুলে ফেঁপে একাকার অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে সুমা একা কী করবে তাই ভেবে সে জেলখানার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা রায়হানকে ফোন করে বাসায় ডেকে আনল। খবরটা পেয়েই রায়হান হন্ন হয়ে ছুটে এলো বাসায়। সুমার সাহায্যে তার মাকে নিয়ে হসপিটালে গেল। জানে পানি নেই কারোর। যেদিকে যাও সেদিকেই বিপদ। কোনো রকমেই বিপদ তাদের পিছু ছাড়ছেনা।
অন্যদিকে, রাফায়াতের বাবা ভোররাত থেকেই অসহায়ের মত মির্জা ফখরুল হকের বাড়ির সামনে ঘুরঘুর করছেন! কখন মির্জা ফখরুল হকের দেখা পাবেন সেই আশায়। অবিশ্রান্ত ভাবে টানা চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা বাড়ির সামনে আপ ডাউন করার পর তিনি মির্জা ফখরুল হকের দেখা পেলেন। সব দিক বিবেচনা করে বিষয়টা ফখরুল হক আপোষে শেষ করতে চাইলেন। বিরোধী দলীয় নেতা মিন্টু খানের সাথে তিনি জরুরী মিটিংয়ে বসলেন। সেখানে অবশ্য রাফায়াতের বাবাও উপস্থিত আছেন। দেখা যাক মুখোমুখি বসে উভয় পক্ষেরই ভালো হয় এমন একটি মিমাংসায় আসা যায় কি-না। যেহেতু অনিকের বাবা-মা এখনও দেশে এসে পৌঁছাতে পারেননি। অনিকের পরিবার থেকে কোনো কে’ই’সও এই পর্যন্ত ইস্যু করা হয়নি। সেক্ষেত্রে হয়ত বা বাইরের লোক হিসেবে রাফায়াতের বিরুদ্ধে করা মিন্টু খানের কে’ই’সটি হালকাভাবে দেখা গেলেও যেতে পারে! যেকোনো মুহূর্তে কে’ইস’টি উঠিয়ে নেওয়া কঠিন কিছু নয়।
পুলিশ স্টেশনের বাইরে বিক্ষুদ্ধ হয়ে থাকা অয়ন্তীর দেখা মিলল চঞ্চলের সাথে। সবেমাত্র চায়ে চুমুক দিয়েছিল চঞ্চল। সারারাত নির্ঘুম থাকার দরুন মাথাটা বড্ড ধরেছে তার। অয়ন্তীকে দেখে চা টা পুরোপুরি শেষ না করেই সে দৌঁড়ে এলো অয়ন্তীর দিকে। উত্তেজিত গলায় অয়ন্তীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,
“ভোররাতেই রাফায়াতকে বাড়ি থেকে গ্রে’ফ’তার করা হয়। আমি আর রায়হান ভাই রাফায়াতের পিছনে পিছনেই পুলিশ স্টেশান আসি। এক পর্যায়ে আমরা দুজন অফিসারের সাথে তর্কে জড়িয়ে যাই। আর তখনি তিনি আমাদের ধাক্কাতে ধাক্কাতে পুলিশ স্টেশান থেকে বের করে দেন৷ রায়হান ভাই এতক্ষণ আমার সাথেই ছিলেন। কিন্তু বাড়িতে আন্টির অবস্থা খুবই সূচনীয়। তাই আমি জোর করে রায়হান ভাইকে বাসায় পাঠিয়ে দিই। আর আমি এখানেই থেকে যাই। আঙ্কেল গেছেন নেতার বাড়িতে নেতার সাথে দেখা করতে। দেখা যাক নেতাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে আপোষে কিছু করা যায় কিনা।”
প্রচণ্ড জিদ্দি হয়ে চোখের জল মুছল অয়ন্তী। চঞ্চলকে উপেক্ষা করে সে পুলিশের স্টেশনের দিকে পা বাড়ালো। পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা চঞ্চলকে ডেকে বলল,,
“ভেতরে চলুন।”
অয়ন্তীর পিছু পিছু চঞ্চলও ছুটল পুলিশ স্টেশনের ভেতরে। টেবিলে মাথা রেখে শুয়ে থাকা পুলিশ অফিসারের মুখোমুখি দাঁড়ালো অয়ন্তী। দ্রুত বেগে দৌঁড়ে আসার দরুন তার শ্বাস-প্রশ্বাস উর্ধ্বগতিতে পড়তে লাগল। কনস্টেবলরা তখন দৌঁড়ে এলো অয়ন্তীর দিকে। তার দিকে বিভিন্ন প্রকার প্রশ্ন ছুঁড়তে লাগল। জে’লখানার ভেতর থেকে অয়ন্তীকে বের হয়ে যেতে বলল। তাদের তিন চারজনকে থামিয়ে অয়ন্তী বেশ তিরিক্ষিপূর্ণ গলায় বলল,,
“আপনারা প্লিজ আমাকে জেরা করা বন্ধ করুন। মেইন অফিসারের সাথে আমার কিছু কথা আছে। কথা বলা শেষ হলে আমি নিজেই এখান থেকে চলে যাব।”
উভয় পক্ষের হাঁকডাকে পুলিশ অফিসারের ঘুম ভাঙল এবার! টেবিলে মাথা রেখেই তিনি চোখ মেলে অয়ন্তীর দিকে তাকালেন। ঝাপসা চোখে অয়ন্তীকে দেখামাত্রই তিনি টেবিল থেকে মাথা তুললেন। বিস্ফোরক দৃষ্টিতে অয়ন্তীর দিকে তাকালেন। খরতর গলায় প্রশ্ন ছুড়লেন,,
“কী ব্যাপার? এখানে কী আপনার?”
ক্ষুব্ধ গলায় অয়ন্তীর সহজ উত্তর,,
“রাফায়াতের সাথে দেখা করতে চাই আমি।”
“রাফায়াত কে?”
“ভোর রাতে যাকে বাড়ি থেকে তুলে এনেছেন সে।”
“কে হোন আপনি তার?”
“উডবি হই! তার সাথে আমি এক্ষণি এই মুহূর্তে দেখা করতে চাই।”
“এলাউড না! তাকে কোটে তোলা না অবধি কেউ তার সাথে দেখা করতে পারবে না।”
“কোথাকার নিয়ম এটা হ্যাঁ? কোন আইনের নিয়ম? তাছাড়া তার নামে কে’ই’স কে করেছে হ্যাঁ? আমরা তো তার নামে এখনও কোনো কে’ই’স করিনি।”
উত্তেজিত হয়ে উঠলেন পুলিশ অফিসার। চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালেন তিনি। তটস্থ গলায় অয়ন্তীকে শাসিয়ে বললেন,,
“আপনি তার নামে কে’ই’স করার কে হ্যাঁ? কীসব অদ্ভুত কথাবার্তা বলছেন আপনি? এক্ষণি এখান থেকে বের হয়ে যান বলছি। নয়ত আমি বাধ্য হব আপনাকেও জেলের ভেতর ঢুকিয়ে দিতে।”
অয়ন্তীর ক্ষুব্ধতা পালাক্রমে বাড়তে লাগল। ঘাড়ের রগ টান টান করে সে পাল্টা অফিসারকে শাসিয়ে বলল,,
“দিন না দিন। জেলের ভেতর ঢুকিয়ে দিন। আমি তো এটাই চাই। আমার উডবির সাথে আমি জেলের ভেতরেই থাকতে চাই। যাকে খু’ন করার মিথ্যে অভিযোগে আপনি আমার উডবিকে গ্রে’ফ’তার করেছেন না? সেই খু’ন হয়ে যাওয়া ছেলেটিই হলো আমার কাজিন! আমার পরিবার থেকে এখনো কোনো কে’ই’স-ই ইস্যু করা হয়নি। তো কীসের ভিত্তিতে আপনি তাকে গ্রে’ফ’তা’র করেছেন হ্যাঁ?”
ভড়কে উঠলেন পুলিশ অফিসার। অয়ন্তীর দিকে উৎকণ্ঠিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন তিনি। ঘাবড়ে ওঠে কপালে জমতে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘামগুলো মুছলেন। বেফাঁস গলায় বললেন,,
“দলীয় ব্যাপার স্যাপার এসব। আপনি বুঝবেন না। আমরা কে’ই’স পেয়েছি বলেই আ’সা”মিকে গ্রে’ফ’তার করেছি। এ’রে’স্ট ও’য়া’রেন্টও আছে আমাদের কাছে। এই বিষয়ে কিছু বুঝতে হলে সাবেক মন্ত্রী মিন্টু খানের কাছে গিয়ে যা বুঝার বুঝে নিন, যান।”
অহেতুক কথা বাড়াতে চাইল না অয়ন্তী। বুকে অদম্য সাহস নিয়ে সে সেলের দিকে রওনা হলো। তার পেছনে ছুটতে লাগল কনস্টেবল এবং সেই জা’দ’রে’ল পুলিশ অফিসারও। পেছন থেকে চঞ্চল দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে অয়ন্তীর পাশাপাশি এসে দাঁড়ালো। ১০২ নম্বর সেলের সামনে গিয়ে অয়ন্তী হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো। চোখে ঘুরিয়ে সে তার ডান পাশের সেলটিতে বিস্ফোরিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। অমনি তার চোখ দুটো আতঙ্কে জর্জরিত হয়ে উঠল। র’ক্তা’ক্ত অবস্থায় সে মেঝেতে পড়ে থাকা রাফায়াতের অবচেতন দেহটি দেখতে পেল! সঙ্গে সঙ্গেই অয়ন্তী ‘রাদিফ’ বলে জোরে এক আর্তনাদ করে উঠল। টলমল চোখে সে পেছনে ঘাবড়ে ওঠা পুলিশ অফিসারের দিকে গোলন্দাজ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল৷ শাণিত গলায় বলল,,
“কু’ত্তা’র বাচ্চা! কী করেছিস তুই আমার হাজবেন্ডকে? মে’রে ফেলেছিস তাকে?”
বিক্ষুব্ধ হয়ে অয়ন্তী গটগট করে হেঁটে গিয়ে সেই পুলিশ অফিসারের শার্টের কলার চেপে ধরল!
#চলবে…?
#এক_খণ্ড_কালো_মেঘ
#পর্ব_৩২
#নিশাত_জাহান_নিশি
বিক্ষুব্ধ হয়ে অয়ন্তী গটগট করে হেঁটে গিয়ে সেই পুলিশ অফিসারের শার্টের কলার চেপে ধরল! মনে জমতে থাকা অসীম রাগ, ক্ষোভ, আতঙ্ক এবং দুঃখে তার বর্তমান অবস্থা প্রায় হিংস্র বাঘিনীর ন্যায় হিংস্রতর। এই সময় তার মধ্যে কোনো ডর ভয় কাজ করছেনা। কোনো প্রকার বাঁধা-বিপত্তিও যেন তার গাঁয়ে লাগছেনা। পারলে এখন-ই সে অফিসারকে এ’টে’ম টু মা’র্ডা’র করে দেয়! জানের কোনো পরোয়া নেই তার। ভয়ঙ্কর জেদে ফোঁস ফোঁস করে সে হকচকিয়ে থাকা পুলিশ অফিসারের দিকে ধারালো দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। ধারালো গলায় বলল,,
“কী করেছিস তুই আমার হাজবেন্ডকে? এভাবে ম’রা’র মত পড়ে আছে কেন সে? যদি তার কিছু হয়ে যায়না? তোকে আমি সাক্ষাৎ মৃ’ত্যু’পুরী থেকে ঘুরিয়ে আনবে। কু’ত্তা’র মত মা’র’র তোকে।”
চঞ্চলসহ আশেপাশের কনস্টেবলরা যেন হাজার জোরাজুরি করেও অয়ন্তীর শক্ত হাতটি অফিসারের শার্টের কলার থেকে ছাড়াতে পারছিল না! কোথা থেকে যেন এত শক্তি এসে অয়ন্তীর গাঁয়ে ভর করল তা সঠিক বুঝা যাচ্ছেনা। অফিসারের বিস্মিত দৃষ্টি এখন তেজস্ক্রিয় দৃষ্টিতে পরিণত হলো! ক্ষুব্ধতা বাড়তে লাগল উনার। এক ঝটকায় তিনি অয়ন্তীর হাত থেকে উনার শার্টের কলারটি ছাড়িয়ে নিলেন। সেই কড়া ঝটকায় অয়ন্তী এক ফুট দূরত্বে গিয়ে ছিটকে পড়ল। অফিসারটি তার শার্টের কলার ঝেড়ে অকপটে গলায় অয়ন্তীকে বললেন,,
“বে’য়া’দব মেয়ে কোথাকার! পরিবার থেকে শিক্ষা পাসনি কার সাথে কীভাবে আচরণ করতে হয়? একজন রানিং পুলিশ অফিসারের গাঁয়ে হাত তুলেছিস তুই। এর ফল কী হতে পারে ভাবতে পারছিস তো?”
“পরিবার থেকে সঠিক শিক্ষা পেয়েছি বলেই আপনার শার্টের কলার ধরতে, আপনার সাথে কটু ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছি আমি। অন্যায় সহ্য করতে পারছিনা আমি। আপনার এই সস্তা হুমকি ধমকিকে মোটেও ভয় পাইনা আমি! বড়জোর কী করবেন আপনি আমার? সেলে ঢুকিয়ে দিবেন তাই তো? এতে আমার কোনো সমস্যা নেই! যা করার আপনি করতে পারেন। তবে সমস্যা এখানেই আপনার মত ঘু/ষ খাওয়া পুলিশ অফিসারকে জা’নে না মে’রেই আমাকে সেলে ঢুকতে হবে।”
রাগান্বিত হয়ে পুলিশ অফিসার অয়ন্তীকে চ/ড় মা/রা/র জন্য অগ্রসর হলেন! তক্ষণি চঞ্চল উদ্যমী হয়ে অফিসারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। হাতজোর করে নিচু গলায় বলল,,
“ভুল হয়ে গেছে স্যার। প্লিজ ক্ষমা করে দিন। অয়ন্তী আসলে বুঝতে পারছেনা এখানে কী থেকে কী হচ্ছে। আসলে রাফায়াতকে অয়ন্তী অনেক ভালোবাসে তো। তাই রাফায়াতের এই মুমূর্ষু অবস্থা নিতে পারছেনা সে। প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড স্যার।”
কাঁদতে কাঁদতে অয়ন্তী এবার ১০২ নম্বর সেলের দরজায় দু’হাত দ্বারা ধাক্কাতে লাগল। বিভৎস অবস্থায় উল্টে পড়ে থাকা রাফায়াতকে সে বড়ো গলায় চিৎকার করে ডাকতে লাগল। হেঁচকি তুলে বলল,,
“রাদিফ এদিকে তাকাও প্লিজ। দেখো আমি এসেছি। উঠার চেষ্টা করো প্লিজ।”
রাফায়াতকে ডাকতে ডাকতে ক্লান্ত হয়ে উঠল অয়ন্তী। এদিকে অফিসার অয়ন্তীর নামে মিথ্যে অভিযোগ সাজাতে ব্যস্ত! কীভাবে তিনি অয়ন্তীকে সেলের ভেতর ঢুকাবেন সে কলকাটিতে ব্যস্ত। তাকে করা হে/ন/স্তা এবং অপ/মানের শোধ তিনি কীভাবে নিবেন সেই চিন্তায় উদ্ধত। চঞ্চলের কাকুতিভরা অনুরোধও যেন অফিসারের জেদের কাছে তুচ্ছ। পারছেন না তিনি চঞ্চলকে ধাক্কা মেরে উনার রুম থেকে বের করে দিতে।
কাঁদতে কাঁদতে অয়ন্তী এক পর্যায়ে সেলের দরজায় ধপাস করে বসে পড়ল। গলার জোরও ক্রমশ তার কমে আসছিল। অবশেষে রাফায়াতের থেতলে যাওয়া বি/ষা/ক্ত কর্ণকুহরে অয়ন্তীর কান্নার শব্দ ভেসে গেল। ভোররাত থেকে হারিয়ে ফেলা চেতনা শক্তি সে একটু একটু করে ফিরে পেতে লাগল। জায়গা থেকে নড়েচড়ে ওঠল সে। তলপেটে হাত রেখে প্রখর ব্য/থা অনুভব করল। শোয়া থেকে বসার শক্তিটিও সে হারিয়ে ফেলল। সমস্ত শরীরে লা/ঠি/কা/ঘাতের দাগগুলো তখন তরতাজা হয়ে উঠল। মোটা ভাজ এবং শক্ত আবরণ পড়ে গেল দেহে। শরীরময় অতিরিক্ত ব্য/থা হতে লাগল। রাফায়াতের নড়াচড়ার আভাস পেয়ে অয়ন্তী পুনরায় অশান্ত হয়ে উঠল৷ লোহার দরজার ভেতর দিয়ে হাত ঢুকিয়ে সে রাফায়াতকে হাতছানি দিতে লাগল। উত্তেজিত গলায় বলল,,
“রাদিফ এদিকে তাকাও। আমি তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি। তোমার অয়ন্তী তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছে।”
কুঁকিয়ে উঠল রাফায়াত। অস্ফুটে গলায় সে তার উল্টোদিকে থাকা অয়ন্তীকে বলল,,
“প্লিজ হেল্প মি অয়ন্তী। প্লিজ হেল্প মি।”
বুকটা যেন ধক করে উঠল অয়ন্তীর। পাগলের মত করতে লাগল সে। বসা থেকে ওঠে দৌঁড়ে গিয়ে সে অফিসারের রুমের ভেতর ঢুকে পড়ল। ডান হাতটি সে অফিসারের দিকে বাড়িয়ে দিলো। কান্নার ঢেউ চোখে নিয়ে সে শান্ত গলায় অফিসারকে বলল,,
“সেলের চাবিটা দিন স্যার। ম’রে যাচ্ছে আমার রাদিফ। তাকে বাঁচাতে হবে আমার।”
উত্তেজিত হয়ে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালেন অফিসার। অয়ন্তীর মর্মাহত চোখেমুখে তিনি তেজী দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। হাতে একটি কাগজ নিয়ে কাগজটিকে অয়ন্তীর মুখে ছুঁড়ে মারলেন! রোষাগ্নি গলায় বললেন,,
“তোকেও এখন সেলের ভেতর ঢুকাচ্ছি দাঁড়া! কে কাকে বাঁচায় পরে দেখা যাবে।”
দুজন মহিলা কনস্টেবলকে অফিসার হুকুম দিলেন অয়ন্তীকে এ/রে/স্ট করতে। ইতোমধ্যেই হঠাৎ অফিসারের রুমে মহা তাণ্ডব নিয়ে মির্জা ফখরুল হকের আবির্ভাব ঘটল! পাশে অবশ্য উনার দলবল এবং রাফায়াতের বাবাও আছেন। অফিসার রুমে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখে মির্জা ফখরুল হক সন্দেহ প্রকাশ করলেন। অফিসারের দিকে তিনি কঠিন প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,
“কী হচ্ছে এখানে?”
তৎক্ষণাৎ হকচকিয়ে উঠলেন পুলিশ অফিসার। ইশারায় কনস্টেবলদের বললেন অয়ন্তীকে ছেড়ে দিতে। অফিসারের ইশারা বুঝে দু’কনস্টেবল অয়ন্তীর হাত দু’খানা ছেড় দিলেন। পাশেই রাফায়াতের বাবা এবং নিজের দলের নেতাকে দেখে চঞ্চল যেন তার বুকে সাহস খুঁজে পেল। দৌঁড়ে গিয়ে সে মির্জা ফখরুল হকের মুখোমুখি দাঁড়ালো। আতঙ্কিত গলায় বলল,,
“রাফায়াতকে সেলের ভেতর আটকে রাখা হয়েছে বস। বে’ধ’ড়ক মা’র’ধ’র ও করা হয়েছে।”
খবরটি শোনা মাত্রই রাফায়াতের বাবা যেন অধৈর্য্যে হয়ে উঠলেন। কাঁদো কাঁদো মুখে তিনি মির্জা ফখরুল হকের দিকে তাকালেন। ভরাট গলায় বললেন,,
“কিছু একটা ব্যবস্থা করুন স্যার। না হয় আমার ছেলেটাকে তারা মে/রে ফেলবে।”
ডুকরে কেঁদে উঠল অয়ন্তী। দ্রুত পায়ে হেঁটে সে মির্জা ফখরুল হকের মুখোমুখি দাঁড়ালো। হাত জোর করে কান্নায় ভেঙে পড়ে বলল,,
“আমি চিনিনা আপনি কে। হয়ত রাদিফের কোনো শুভাকাঙ্ক্ষী হবেন। যেহেতু আঙ্কেলও আপনাকে ভরসা করছে আমিও হয়ত চোখ বুজে আপনাকে ভরসা করতে পারি। এই অ’স’ভ্য অফিসারটা আমার রাদিফকে বিনা দোষে এ’রে’স্ট করেছে স্যার। রাদিফের বিরুদ্ধে স্ট্রং কোনো প্রুফও নেই তার কাছে। হয়ত ঘু”ষ খেয়েছে নয়ত রাদিফের সাথে তার পূর্ব শত্রুতা ছিল। সেলে গিয়ে দেখে আসুন না একবার, আমার রাদিফকে মে/রে ঐ জা’নো’য়ারটা কী অবস্থা করেছে। মেঝেতে লুটিয়ে পড়েছে সে। শরীরে একরত্তি শক্তিও অবশিষ্ট নেই যে পায়ে ভর দিয়ে ওঠে দাঁড়াবে সে। প্লিজ আপনি আমার রাদিফকে হেল্প করুন স্যার প্লিজ।”
অয়ন্তীর কাকুতি মিনতিতে মির্জা ফকরুল হক না যতটা অবাক হয়েছেন তার চেয়ে অধিক অবাক হয়েছেন রাফায়াতের বাবা। অয়ন্তীকে তিনি আগে থেকে চিনতেন না। রাফায়াত তাকে কি’ড’ন্যাপ করে এনেছিল ব্যস এটুকুই জানতেন তিনি। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার অয়ন্তীর সাথে দেখা উনার। হঠাৎ রাফায়াতের জন্য অয়ন্তীর এত কনসার্ণ দেখে অবাক হলেন তিনি। চঞ্চলের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন তিনি। ইশারায় বুঝাতে চাইলেন মেয়েটি কে হয় রাফায়াতের? চঞ্চলও ইশারায় কিছু বুঝানোর পূর্বেই মির্জা ফখরুল হক হঠাৎ চঞ্চলের দিকে সন্দিহান দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। কৌতূহলী গলায় প্রশ্ন ছুড়লেন,,
“রাফায়াতের সাথে এর চক্কর টক্কর আছে না-কী?”
মাথা দুলিয়ে চঞ্চল হ্যাঁ সূচক সম্মিত জানালো। বিপরীত দিকে অয়ন্তী যেন অনর্গল গলায় বলেই চলল,,
“হ্যাঁ। আমি এবং রাদিফ দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসি স্যার! এখন দাঁড়িয়ে থেকে আর সময় নষ্ট করবেন না প্লিজ। রাদিফকে সেল থেকে বের করতে সাহায্য করুন আমায়। তাকে এক্ষুণি আমাদের হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।”
রাফায়াতের বাবা এবার মুখ চেপে কেঁদেই দিলেন! আর আটকে পারলেন না নিজের পিতৃত্ববোধকে। অসহায়ত্ব যেন ক্রমে ক্রমে বাড়তে লাগল উনার। স্পষ্ট গলায় এবার মির্জা ফখরুল হক অফিসারকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,
“সেলটা খুলে দিন৷”
“সরি স্যার! একজন খু;নির প্রতি আমরা কোনো মায়া দেখাতে পারিনা। দয়া করে আমাকে নিয়মের বাইরে যেতে বলবেন না।”
রুখে গেল অয়ন্তী পুলিশ অফিসারের দিকে। ঝাঁজালো গলায় বলল,,
“এই? খু/নি কে হ্যাঁ? খু/নি কে? আপনি জানেন আমার রাদিফ অনিক ভাইকে খু/ন করেছে? কোনো প্রমাণ দেখাতে পারবেন আপনি আমাকে? যাকে আপনি এত সম্মান দিয়ে কথা বলছেন তার সামনেই প্রমাণটা দেখান না যে আমার রাদিফ অনিক ভাইকে খু/ন করেছে।”
“প্রমাণ তো অনেক-ই আছে মিস অয়ন্তী! কোটে গেলে একে একে সব প্রমাণ জাহির করা হবে।”
“না। আপনার কাছে কোনো প্রমাণ নেই। শুধু সোনার একটি লকেট ছাড়া! ল’কে’টটি তাও প্রিয়ার ওকে? গ্রে/ফ/তার করতে হলে তাকে করুন!”
অয়ন্তীর মুখ থেকে বেঁফাস কথা বেরিয়ে যেতেই মির্জা ফখরুল হক সহ রাফায়াতের বাবা অয়ন্তীকে চেপে ধরলেন! মাথায় হাত চলে গেল চঞ্চলের। শুকনো ঢোঁক গিলতে থাকা অয়ন্তীর দিকে সে অসন্তোষ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। সন্দেহের একটু আঁচ পেতেই মির্জা ফখরুল হক এবার অয়ন্তীর দিকে তেড়ে এসে বললেন,,
“কীসের লকেট? কোন লকেটের কথা বলছ তুমি?”
এই মুহূর্তে অয়ন্তী ভয় পেয়ে গেলেও বুকে সাহস রেখে সে মির্জা ফখরুল হকের মুখোমুখি দাঁড়ালো। সোজাসাপটা গলায় বলল,,
“প্রিয়াকে সেইফ করতে গিয়ে আজ রাদিফ সেলের ভেতরে স্যার। অনিক ভাইয়ার লা’শে’র পাশে সেদিন এই পুলিশ অফিসারটি প্রিয়ার গলার সোনার লকেটটি কুঁড়িয়ে পেয়েছিল। তো ধরতে হলে তারা প্রিয়াকে ধরুক। আমার রাদিফকে কেন ধরবে?”
অফিসার এবার তার মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে রাখা দ্বিতীয় রূপটি দেখালেন! অয়ন্তীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে উগ্রবাদী গলায় বললেন,,
“কারণ, তোমার রাদিফ আর প্রিয়া মিলেই সেদিন অনিকের খু/নটা করেছিল। তার প্রমাণ অবশ্য আমাদের কাছে আছে!”
পরিস্থিতি এবার পূর্বের তুলনায় আরও উত্তাল হয়ে উঠল। উপস্থিত সবাই যেন দোটানায় পড়ে গেল। কৌতূহল বাড়তে লাগল। তর্ক বিতর্ক হতে লাগল উভয়ের মধ্যেই। রাফায়াতের বাবাকে নিয়ে মির্জা ফখরুল হক অফিসারের মুখোমুখি চেয়ার টেনে বসলেন। এর ফাঁকে অয়ন্তী হঠাৎ অফিসার রুম থেকে বের হয়ে গেল। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে সে রাফায়াতের সেলের কাছে চলে এলো। দুর্বল শরীর নিয়ে রাফায়াত দেয়ালে হেলান দিয়ে বসেছে মাত্র। টানা আধঘণ্টা যুদ্ধ বিগ্রহের পর সে শরীরে মোটামুটি শক্তি যুগিয়ে একটুখানি বসতে পেরেছে। অমনি সেলের দরজা ধরে ধপ করে বসে পড়ল অয়ন্তী। রাফায়াতের দিকে প্রফুল্লিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল সে। উত্তেজিত গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,
“এখন কেমন আছো রাদিফ? শরীর ঠিক আছে তো?”
ঘোলাটে দু’চোখে রাফায়াত সেলের দরজায় বসে থাকা অয়ন্তীর দিকে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। কিয়ৎক্ষণ অয়ন্তীর দিকে সে একই সরলরৈখিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। অতঃপর দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে অস্ফুটে গলায় বলল,,
“আমাকে এখান থেকে বের করো অয়ন্তী। যা করার প্লিজ দ্রুত করো।”
“তুমি চিন্তা করোনা রাদিফ। খুব শীঘ্রই তুমি এখান থেকে মুক্তি পাবে। আমি অফিসারকে বলে দিয়েছি প্রিয়া খু/ন করেছে অনিক ভাইকে! তুমি নও!”
রাফায়াত যেন এবার তার সমস্ত চেতনা শক্তি ফিরে পেল। শরীরে যেন আগের মত বলও ফিরে পেল। পায়ে হেঁছড়াতে হেঁছড়াতে সে অয়ন্তীর মুখোমুখি এসে বসল। বিস্ফোরিত গলায় অয়ন্তীর দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,,
“এসব তুমি কী বলছ অয়ন্তী? প্রিয়ার কথা তুমি অফিসারকে বলে দিয়েছ?”
“হ্যাঁ বলে দিয়েছি! বেশ করেছি বলেছি। প্রিয়ার পাপের শাস্তি তুমি কেন পাবে হ্যাঁ? কী অবস্থা হয়েছে তোমার দেখো তো? আর দু/একদিন এই সেলের মধ্যে থাকলে তারা তোমাকে মে/রে ফেলবে রাদিফ। আমি বেঁচে থাকতে তোমার গাঁয়ে কেউ ফুলের টোকাও দিতে পারবেনা।”
“প্রিয়া অনিককে খু/ন করেনি অয়ন্তী। এত বড়ো জঘন্য কাজ প্রিয়া করতে পারেনা। তুমি ভুল করেছ অয়ন্তী। প্রিয়াকে তারা খুঁজে পেলে আমার চেয়েও বেশী ট/র্চা/র করবে তার উপর। খাবলে খুবলে খাবে তাকে। মেয়েরা জেলের মধ্যে সেইফ নয়।”
“আমি অত শত বুঝিনা রাদিফ। প্রিয়ার সাথে কী হয় না হয় এসব আমার দেখার বিষয় নয়। তোমাকে আমি সুস্থভাবে জেলের বাইরে দেখতে চাই ব্যস এটুকুই।”
রাফায়াতকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলোনা অয়ন্তী। বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো সে। পিছু ঘুরে অভিমান নিয়ে রাফায়াতকে বলল,,
“কে/ইস এখন আমার হাতে রাদিফ। জেঠা, জেঠি, অনিক ভাইয়ার শুভাকাঙ্ক্ষী, এমনকি পুলিশ অফিসারকে আমি যাই বলব এখন ঠিক তাই হবে। হ্যাঁ। তুমি ভাবতেই পারো আমি স্বা/র্থ/পর। যদি নিজের ভালোবাসার মানুষকে জানে বাঁচাতে অন্য কাউকে ফাঁসাতে হয় তো আমি স্বার্থ/পর! তোমার কাছে আমি আজীবন স্বার্থ/পর হয়ে থাকতেও রাজি রাদিফ। শুধু তুমি ভালো থাকো বেঁচে থাকো ব্যস এটুকুই কামনা আমার।”
পেছন থেকে রাফায়াত অয়ন্তীকে অনেক ডাকাডাকি করেও থামাতে পারলনা। অয়ন্তী তার সিদ্ধান্তে অটল রইল। পুলিশ স্টেশন থেকে বের হয়ে সে হসপিটালে ছুটে গেল। দুপুরের দিকে তার জেঠা জেঠিরা দেশে এসে পৌঁছালো। অনিকের বিভৎস লা/শ দেখে দুজনই বার বার বেহুশ হয়ে যাচ্ছিল। বিশেষ করে অনিকের মা। থামানোই যেন যাচ্ছিল না উনাকে। স্ট্রোক করার মত অবস্থা। চিঁড়ে রাখা অনিকের লা”শটিকে দা/ফন কা/ফন করে তারা অনিকের খু/নিকে শাস্তি দেওয়ার জন্য উদ্ধত হয়ে উঠল!
অয়ন্তীর জবানবন্দি অনুযায়ী প্রিয়াকে ফ্লার্ট থেকে এ/রে/স্ট করল পুলিশ! রাফায়াতের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ না থাকায় মির্জা ফখরুল হকের চাপে পড়ে এবং সমানভাবে অয়ন্তীর চাপে পড়েও রাফায়াতকে ছাড়তে বাধ্য হন অফিসার। এক্ষেত্রে সাবেক মন্ত্রী মিন্টু খানের কোনো কুটিলতা কাজে এলো না! বিভিন্নভাবে তিনি ফাঁসাতে চেয়েছিলেন রাফায়াতকে। তবে শেষ রক্ষে হলোনা। কারণ অনিকের গলায়, হাতে, পায়ে এবং শরীরে লেগে থাকা হাতের ছাপ-ই বলে দিচ্ছিল খু/ন রাফায়াত করেনি বরং প্রিয়া একাই এই খু/নটি করেছে। সর্বাঙ্গে প্রিয়ার হাতের ছাপ ছিল সুস্পষ্ট!
রাফায়াত ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফেরার পরেও সুখ শান্তি ছিলনা কারো মনে। কেউ যেন বিশ্বাসই করতে পারছিল না প্রিয়া অনিককে খু/ন করতে পারে। প্রিয়ার কুকীর্তিও একে একে সবার সামনে এলো। প্রিয়ার প্রতি সবার বিশ্বাস ওঠে গেল। সবাই যেন সত্যি-ই বিশ্বাস করতে লাগল প্রিয়াকে মানিসকভাবে এবং শারীরিকভাবে ঠকিয়েছিল অনিক। আর সেই ঠকে যাওয়ার প্রতিশোধ নিতেই অনিককে খু/ন করার মত সিদ্ধান্তটি নিয়েছিল প্রিয়া!
অয়ন্তীর প্রতি খুবই ক্ষিপ্ত রাফায়াত! অয়ন্তীর এই স্বার্থপরতা তার একদমই পছন্দ হয়নি। অকারণে প্রিয়াকে ফাঁসানো হয়েছে এখানে। কেউ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সেদিন প্রিয়াকে ব্যবহার করেছিল। প্রিয়ার হাতের ছাপ ব্যবহার করেছিল। যে করেই হোক আগামী দু/তিনদিনের মধ্যে এই ষ”ড়য”ন্ত্রের মূল হোঁতা কে খুঁজে বের করতে হবে তার। প্রিয়াকে কোটে তোলার আগেই যা করার করতে হবে তাকে।
সন্ধ্যা গড়িয়ে তখন রাত ঘনিয়ে এলো। রাফায়াত তার দুর্বল শরীর নিয়ে মাত্র বিছানা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। তলপেটে এখনো মা’রা’ত্নক ব্যথা তার। লা/ঠির আঘাতে দেহে কালসিটে দাগ পড়ে যাওয়া ক্ষ/ত স্থানগুলো ব্যথায় টনটন করছে তার। এই অসুস্থ শরীর নিয়ে বাড়ি থেকে বের হতে একদমই ইচ্ছে করছেনা তার। তবুও যেন এই মুহূর্তে মির্জা ফখরুল হকের সাথে দেখা করাটা খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে তার। ব্যথাযুক্ত শরীর নিয়ে কুঁকিয়ে ওঠে রাফায়াত তার রুমের দরজা খুলে বের হতেই অয়ন্তীর মুখোমুখি পড়ে গেল! সঙ্গে সঙ্গেই সে হাসোজ্জল অয়ন্তীর থেকে তার মলিন মুখটা ফিরিয়ে নিলো। রূঢ় গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,
“তুমি এখানে কী করছ?”
রাফায়াতের রাগ হওয়ার কারণ যদিও অয়ন্তীর কাছে স্পষ্ট তবুও সে রাফায়াতকে আরও একটু রাগানোর জন্য বলল,,
“আমারও সেম প্রশ্ন। তুমি দরোজার বাইরে কী করছ? তোমার তো এখন বিছানায় থাকার কথা, না? রেস্ট নেওয়ার কথা।”
“অনেক ভেবেছ আমার কথা। আর নয়! এবার আমাকে একটু আমার মত করে থাকতে দাও।”
“অনেক হয়েছে নিজের মত থাকা! তবে আর নয়। এবার একটু তোমার ভালো মন্দের কথা আমাকেও ভাবতে দাও!”
#চলবে….?