এক চিলতে রোদ পর্ব-১১+১২

0
948

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_11

গাড়িতে বসে আছি। আমার পাশে বসেছে ইমা আপু আর পাশে রিফাত ভাইয়ার গাড়ির সামনে বসেছে ইহান ভাইয়ার ও রিফাত ভাইয়ার এক ফ্রেন্ড মে ড্রাইভ করবে। আমাদের পেছনের সিটে বসেছে ইলা আপু ইমা আপুর ফ্রেন্ড ও রিফাত ভাইয়ার আরেক ফ্রেন্ড।
মোট আট জন নিয়ে আমরা গাড়ি ফুল করলাম। পেছনে দুই সিটের প্রাইভেট কার এটা ভাড়া করা হয়েছে। চাচীদের মাইক্রো গাড়ি আছে একটা সেটায় পাঁচ জন যাওয়া যেত সবার হতো না এজন্য এটা আনা হয়েছে। নিজেরাই ড্রাইভ করতে পারে তাই ড্রাইভার আনে নি।
আমি জানালার পাশে বসেছি না হলে আবার বমি হবে গাড়িতে বেশি থাকার অভ্যাস নাই।
আপুর কিনে দেওয়া সাদা কালো মিক্সড করা লং ফ্রক পরেছি জামাটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ওরনা গলায় পেঁচিয়ে রেখেছি যেটা আপু করে দিয়েছে। নীল চুড়ি পরেছি দুই হাত ভর্তি করে চুড়ি পরতে আমি খুব ভালোবাসি। কোথাও কখনো অনুষ্ঠানে গেলে আমি ওতো সাজগোজ করি না চুড়ি পরলেই হয়।
নীল চুড়ি কিনেছিলাম অনেকদিন আগে পরে আপু লাল কিনে দিয়েছিলো আজকে ড্রেসের সাথে ম্যাচ হয়নি তবুও পরেছে। নাহলে আমার খালি খালি লাগতো‌।
চুল কপালের কাছে বিনির মতো করে পেছন টেনে নিয়েছি আর পেছনে খোলা।আমার চুল খুব বড় না আবার ছোটও না কোমর পর্যন্ত আছে। সাজগোজ বলতে পাউডার দিয়েছি আর হাল্কা লিপস্টিক ঠোটে।
ইমা আপুকে সুন্দর লাগছে শাড়ি পড়ে এসেছে আপু । লাল রঙ রিফাত ভাইয়ার নাকি পছন্দ।

গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে।
অনেক কষ্টে চাচি কে রাজি করিয়েছে তার কেডিট হলো ইহান ভাই। কারো কথাই চাচী রাজি হচ্ছিল না আমি তো যাওয়ার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। তখন ইহান ভাইয়ার গিয়ে চাচী কে বলল,
“আম্মু তুমি যদি ঊষাকে যেতে না দাও আমিও যাব না।”
“ওই ফকিন্নির বাচ্চার জন্য তুই কেন যাবি না।”
“আম্মু প্লিজ বাজে ভাষা ইউজ করো না।আর ঊষা কিন্তু আমাদের রক্ত। আর কাকার অবস্থা কিন্তু আমাকে থেকে ও ভালো ছিলো। ওকে তুমি অনেক কিছু করাও তাতে কেউ তোমায় বাধা দেয়না আর না ঊষা না করে তাহলে একটু আনন্দ কেন তুমি ওকে দিতে চাও না।ও তো তোমার কোন কথায় না করে না।”
“তুই নিজের মার বিরুদ্ধে গিয়ে ওই মেয়ের হয়ে কথা বলছিস?
“আমি কারো হয়ে কথা বলছি না। আমার যেটা ঠিক মনে হচ্ছে আমি তাই বলছি।
“আমাকে ভুল।
“তুমি যেতে দিবে কিনা বলো।
“আচ্ছা! নিয়ে যা।

চাচি ভাইয়ার কথা মানবে ভাবতেই পারিনি। তারপর বের হয়েছি।কথাটা ভাবতেই আমার সারা শরীর শিহরণ খেলে গেল।‌আমি চোখ জানালার বাইরে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ইহান ভাইয়ার দিকে তাকালাম।ভাইয়া রিহান ভাইয়ের সাথে কথা বলছে তিনি রিফাত ভাইয়ার ফ্রেন্ড। আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি আজকে ভাইয়াকে ও খুব সুন্দর লাগছে। ভাইয়ার নীল শার্ট পরেছে ক্রিম প্যান্ট বুকের কাছে সানগ্লাস। ইশ কি সুন্দর হাসি ভাইয়ার ‌হাসলেই গালে টোল পড়ে। এক সাইট দেখা যাচ্ছে আমি ভাইয়ার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছি। তখনই ভাইয়ার আমার দিকে তাকালো আচমকা ভাইয়ার তাকানো দেখে আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলি‌।
একটু পর আবার তাকিয়ে দেখি ভাইয়ার সামনে তাকিয়ে আছে।
আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। ঠান্ডা বাতাস ব‌ইছে চোখ বন্ধ করে বাতাস অনুভব করছি। কতোদিন পর বেরাতে বের হলো মনটা খুশিতে নেচে উঠছে। আমরা সিলেট যাচ্ছি আরেকটা কথা শুনেই চমকালাম আমরা এক সপ্তাহের জন্য যাচ্ছি বাসায় তিন বলে এসেছে সব মিথ্যে না হলে নাকি কেউ আসতে দিতো না।
আমি বড় বড় চোখ করে সবার দিকে তাকিয়ে ছিলাম তখন।
ঊষা কেমন লাগছে তোর।
আমি হাসি মুখ করে বললাম, খুব ভালো আপু।
আমি কথা বলতে বলতে সামনে তাকাতেই দেখি ইহান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
এক দৃষ্টিতে ভাইয়ার তাকানো দেখে আমি নড়েচড়ে বসলাম।
এক ঘন্টার মধ্যে রাত নেমে এলো। আমার পাঁচটার বের হয়েছিলাম। তো রাত নামতে সময় লাগলো না রাত বড় জানি করে যেতে হবে। দুইঘন্টা যেতেই রিহান গাড়ি থামিয়ে ফেলল সে আর ড্রাইভ করতে পারবে না তাই ইহান ভাই ড্রাইভ করতে লাগলো। এবার ভাইয়া আমার সামনে এখন সোজা সোজা।
রাত হ‌ওয়ায় এখন বাতাস বেশি হচ্ছে এজন্য জানালা অফ করে দিলো।
আপু জানালা খুলতে বলো না প্লিজ।
আমার কথা শুনেই সামনে থেকে ইহান ভাইয়া বলল,, না জানালা খুলা যাবে না এখন ঠান্ডা বাতাস আসছে অসুস্থ হবি।
কিন্তু আমার তো খারাপ লাগছে আমি জানালা না খুললে থাকতে পারবো না আমার কিছু হবে না খুলুন না।
ইম্পসিবল।
আমি গোমড়া মুখে বসে আছি ভাইয়া খুললো না দশ মিনিট যেতেই জানালা খুলে দিলো আমি অবাক হয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম।
ভাইয়ার ড্রাইভ করতে করতে বললো,, বেশিক্ষণের জন্য না কিছু ক্ষন থাকবে‌ খোলা।
আমি খুশি হয়ে বললাম, থ্যাংকু ভাইয়া।

ভাইয়া ও হাসলো আমি নিজের জায়গায় বসে পরলাম। মুখে আমার হাসি অন্ধকারের রাস্তায় দিকে তাকিয়ে আছি গাড়ি শো শো শব্দ করে চলে যাচ্ছে জায়গায় জায়গায় মৃদু আলোর রেখা পেছনে ইলা আপুর কথার আওয়াজ পাচ্ছি পাশে সবাই কথা বলছে আমি একাই বাইরে অন্ধকার রাস্তা দেখছি ঠান্ডা বাতাসে শরীর কাঁটা দিয়ে উঠছে। শীত লাগছে তবুও ভালো লাগছে।
আরো একঘন্টা পেরিয়ে গেল তখন গাড়ি থামিয়ে ফেলল ভাইয়া।
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি সবাই নেমে যাচ্ছে আমরা কি এতো তারাতাড়ি চলে এসেছি সিলেট এতো কাছে।
আপু আমরা এতো তারাতাড়ি চলে এসেছি।
না তো।
তাহলে গাড়ি থামলো কেন?
আরে বোকা খাবি না। রেস্টুরেন্টে এ যাব এখন ওই যে চল।
সবাই নেমে গেল আমিও নামলাম।
খাবার টেবিলে আমি আর ভাইয়ার পাশা বসলাম। আমি একটু পর পর ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি।
খাবার চলে এলো সবাই খাবার খেয়ে আস্তে গেলে আমার বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হলো ইমা আপুকে বলবো তার উপায় নেয় সে তো চলে গেছে।এখন আমি আর ইহান ভাইয়া আছি শুধু আমার খেতে লেট হয়েছে আর ভাইয়ার টাকা দিতে গেছে। আমি কাচুমাচু মুখ করে দাঁড়িয়ে আছি ওয়াশরুম খুঁজছি বুঝতে পারছি না। তখন ভাইয়ার এসে আমাকে এমন করে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এসে আমার সামনে দাড়িয়ে জিগ্গেস করলো ভ্রু কুঁচকে,
কি হলো তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
আমি চমকে ভাইয়ার দিকে তাকালাম।
কি হলো সবাই চলে গেছে তুই এখানে কেন?
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।
কথা বলছিস না কেন? প্রবলেম কি?
আমি আমতা আমতা করে বললাম, ওয়াশরুমে যাওয়া লাগতো।
ভাইয়া আমার কথা শুনে বলল, এতো সময় নিলি কেন চল দেখাচ্ছি।
আমি ভাইয়ার পেছনে এলাম।

রেস্টুরেন্টে থেকে বেরিয়ে হাঁটতে লাগলাম গাড়ি একটু দূরে থামানো হয়েছে। তাই গাড়ি পর্যন্ত হাঁটতে লাগলাম।
তোর কি শীত করছে।
ভাইয়ার কথা শুনে তার মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
না তো বাতাসে একটু একটু।
আচ্ছা চল।
আমরা রোডের ডান পাশে গাড়ি ওপরপাশে বাম পাশে। তাই রোড পার হতে হবে। গাড়ি আসছে আমরা দাড়িয়ে আছি হুট করে ভাইয়া আমার বাম হাত শক্ত করে ধরে নিলো নিজের হাতের মুঠোয়। ভাইয়ার স্পর্শ পেয়ে আমি কেঁপে উঠলাম।
ভাইয়ার আমাকে নিয়ে গাড়ির মাঝেই পার ড়য়ে গেল আমি ভাইয়ার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলাম।
গাড়ির কাছে এসে হাত ছেড়ে দিলো।
গাড়ির কাছে এসেই শকড রিফাত ভাইয়া ড্রাইভিং সিটে আর ইমা আপু তার পাশে পেছনের সিটে জানালায় পাশে রিহান ভাইয়া বসে আছে।
ইহান ভাইয়া বলল, এসব কি আমরা কোথায় বসবো?
এখানে ইমা আপু দুই সিট দেখিয়ে দিল।
তোরা ওখানে কেন?
আমার এখন এখানেই থাকবো তুই তারাতাড়ি উঠে বসে জানালার কাছে ঊষাকে বসতে দে।
হোয়াট আমি ওই ভেতরে বসবো না। তোরা পেছনে আয় আমাকে আর রিহানকে সামনে যেতে দে।
কিন্তু ইহান ভাইয়ের কথা যেন কানেই নিলো না রেগে ভাইয়া আমার দিকে তাকালো আমি ঢোক গিলে বললাম,
আমি কি করবো?
তুই ভেতরে বসো।
ভেতরে বসার কথা শুনে চমকালাম রিহান ভাইয়ার কাছ ঘেঁষে বসতে আমার আন‌ইজি ফিল হতে লাগলো।
কি হলো যা?
ভাইয়া আমার তো বমি হয়। ভেতরে বসলে তো গাড়ি নষ্ট হবে‌।
ভাইয়া রাগে গজগজ করতে করতে ভেতরে ঢুকে গেল।আমিও ঢুকলাম ভাইয়ার গায়ের সাথে লেগে গেলাম ইশ লজ্জা লাগছে আমার। ভাইয়ার শরীর থেকে একটা মিষ্টি সুগন্ধি কানে এলো। আমি জানালার সাথে লেপ্টে গেলাম আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে।

#চলবে

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_12

ভাইয়া রাগে গজগজ করতে করতে ভেতরে ঢুকে গেল।আমিও ঢুকলাম ভাইয়ার গায়ের সাথে লেগে গেলাম ইশ লজ্জা লাগছে আমার। ভাইয়ার শরীর থেকে একটা মিষ্টি সুগন্ধি নাকে এলো। চোখ বন্ধ করে ঘ্রান নিলাম। আমি জানালার সাথে লেপ্টে গেলাম। আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে।
ভাইয়ার এতো কাছে বসেছি আমার লজ্জা লাগছে।
আমি আড়চোখে তাকিয়ে দেখি ভাইয়ার আমার দিকে ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে আছে। আমি হকচকিয়ে একদম ঘুরে জানালার বাইরে তাকালাম। বুকের ভেতর টিপটিপ করছে যেন চুরি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছি। বুকে এক হাত চেপে ধরে বাইরে তাকিয়ে আছি।
ভাইয়ার কথার আওয়াজ পাচ্ছি রিহান ভাইয়ের সাথে কথা বলছে।
পেছনে থেকে ইলা আপু বলে উঠলো,
“কেউ আমাকে পানি দে তো আমার কেমন জানি লাগছে।”
আপুর কথা শুনে আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে তাকাতে যাব তখনই ইহান ভাইয়ার বুকের উপর ঠাস করে বাড়ি খেলাম। ভাইয়ার তখন পেছনে ঘুরতে যাচ্ছিলো আমিও দুজনে একসাথে ঘুরে বাড়ি খেলাম। আমি বিস্মিত হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম মাথায় হাত দিয়ে।ভাইয়াও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি ছিটকে সরে বললাম,, সরি ভাইয়া আসলে আপুর কথা শুনে ওইদিকে ফিরতে গেছিলাম আপনিও যে এই সময় বুঝতে পারি নি।
কথাটা বলে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি তাকাতেই ইটস ওকে বলল।
ইমা আপু গলার স্বর উঁচু করে বলল,
“ইলা তোর। যেখানে ঊষা এখনো ঠিক আছে সেখানে তুই অসুস্থ ফিল করছিস আগেও না কতো টিপে গেছিস তুই!”
“গেছি তো। সেসব জায়গায় যাওয়ার সময় আমার এমন লাগে নি। আজ পেটে মোচড় দিয়ে সব বেরিয়ে আসছে। মাথা ব্যাথা করছে।আমি নিশ্চিত আমার ওইসব খাওয়া উচিত হয়নি। তৈলাক্ত খাবার খেয়ে এমন হচ্ছে।”
“বলেছিলাম ওইসব খাস না।এখন বুঝ ঠেলা।”
ইলা আপু কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকিয়ে আছে। ইমা আপু আমার হাতে পানির বোতল দিলো আমি ইলা আপুর দিকে বাড়িয়ে দিলাম। আপু ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলো।
আমি আপুর এমন অসুস্থ মুখ দেখে বলে উঠলাম,
“আপু আমি কি তোমায় পাশে বসে মাথা টিপে দেব।”
আপু রেগে আমায় দিকে তাকিয়ে বললো,
“তোকে আমি বলেছি টিপে দিতে। একদম জ্বালাবি না বাড়িতে জ্বালাস এখানে ও তো তাই এসেছিস। অসহ্য লাগে যতসব ফালতু ঝামেলা।”
আপুর কথা শুনে আমি চুপসে গেলাম। মুখটা ছোট করে সোজা হয়ে বসলাম।
“মন খারাপ করিস না। ”
ভাইয়ার কথা শুনে মাথা তুলে তাকালাম।
“এর জন্য বলে কারো ভালো চাইতে নেই।যেচে অপমানিত হতে যাস কেন?”
“আমি তো আপুর ভালোর জন্য বলেছিলাম।”
বলতে বলতে আমার চোখ ভড়ে এলো।
“এতো সবার ভালো কেন তোকে চাইতে হবে।”
বলেই ভাইয়ার আচমকা আমার গালে স্পর্শ করলো। আমি স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে।
“কথা কথা এতো চোখের জল ফেলিস না তাহলে এটা মূল্যহীন হয়ে যাবে।”

ভাইয়া ফোন চাপছে আমি আড়চোখে একবার তাকিয়ে দেখলাম তারপর চোখ সরিয়ে নিলাম। হঠাৎ পাশে তাকিয়ে দেখি রিহান ভাই কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে চোখ সরিয়ে নিলাম। রিহান ভাই ওইভাবে তাকায় আছে কেন?
“কি হয়েছে তোর ও কি খারাপ লাগছে নাকি?”
ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো আমি ঘাড় নাড়িয়ে না বললাম।
“শীতে কাঁপছিল তাও জানালা বন্ধ করতে দিস না‌।”
“এই শীত তো আমার ভালো লাগে। দেখুন কি মিষ্টি ঠান্ডা বাতাস আসছে। শীতলাগলে ও মনটা ভালো সিগ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু রাতে না হয়ে দিনে গেলে ভালো হতো বাইরে প্রকৃতি দেখতে পেতাম। অনুভব করতে পারতাম।”
ইহান ঊষার উজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কতোটা নিষ্পাপ লাগছে কতো খুশি দেখাচ্ছে ওকে। একটু আগে যে বকা খেলো তার জন্য বিন্দু মাত্র কষ্ট নেয়। সব ভুলে আনন্দিত হচ্ছে।
ঊষা চোখ বন্ধ করে বসে আছে। বাতাসে ওর চুল গুলো উরছে এলোমেলো হয়ে কপালে চোখ মুখে এসে পরছে। ঊষা হাত উঁচু করে তা সরিয়ে হাওয়া উপভোগ করছে। ইহান মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে ঊষার দিকে ও যেন নিজের চোখ সরাতেই পারছেনা। একটা ঘুরে চলে গেছে। হঠাৎ ঊষার চুল ওর চোখ মুখে বাড়ি খেলো সাথে সাথে ইহান চোখ বন্ধ করে ফেললাম। ঊষার চুল থেকে একটা সুগন্ধি নাকে এলো কি তীব্র ঘ্রান এটা কি সেম্পুর জানতে ইচ্ছে হলো ইহানের।
হঠাৎ ঊষা চোখ মেলে ছোট চোখ করে ওর দিকে তাকালো সাথে সাথে ইহানের চোখ সরিয়ে নিলো। ছিঃ ছিঃ এতো ক্ষন কি সব ভাবছিলো ওর দিকে আমি ওমন করে তাকিয়ে ছিলাম কেন? কি হচ্ছে এসব আমার সাথে?
মাথা চেপে চোখ বন্ধ করে বসে র‌ইলো।অনেক রাত হয়েছে তাই এখন সবাইকে ঘুমানোর কথা বলে লাইট অফ করে দেওয়া হলো।
অন্ধকারে একবার ঊষার দিকে তাকালাম। ও চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করছে।
আমিও চোখ সযি নিলাম আর তাকাবো না ওর দিকে।

ফারিয়ার কল এলো তখন ধরতে ইচ্ছে করছে না তবুও ধরলাম।
কথা বলার মাঝেই ঠাস করে কেউ আমার বাহুর উপর পরলো চমকে অন্ধকারে তাকিয়ে দেখি ঊষা। ঘুমন্ত ঊষা নিজের মাথা হেলিয়ে দিয়েছে আমার বাহুতে। আমার থেকে শট হ‌ওয়ায় ওর মাথা আমার কাঁধ অব্দি যায় নি।
আমি চমকে উঠে ঊষার দিকে তাকালাম ও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। নিঃশ্বাস ঘনঘন ফেলছে কাঁপা হাতে ওর মাথা নিয়ে সিটে হেলান দিয়ে দিলাম।
বুকের ভেতর কেমন যেন লাগছে। আমি উষার দিকে তাকিয়ে আছি তখন একটা ঝাঁকুনি লাগে আর ঊষার মাথা সিটে থেকে জানালার কাঁচে বাড়ি খেতে যায় নজরে আসতেই তারাতাড়ি ঊষার মাথা নিজের বুকের মাঝে নিয়ে আসি।
ঘুমের মধ্যে ঊষা একমাত্র বাচ্চাদের মতো আমার বুকের সাথে লেপ্টে মিশে আছে।
কি করবো বুঝতে পারছি না সিটে রাখা ও সম্ভব না তাহলে মাথা আঘাত পাবে আবার ডাকতেও ইচ্ছে করছে না অনেক সময় যেতে লাগবে কেবল সাথে বারোটা বাজে। দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে আকাশ পাতাল ভাবছি সাথে বুকের ভেতর কেমন করছে সেটা আমি জানি কেমন অস্থির লাগছে ঊষা দুহাতে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে মিশে আছে।
রাস্তা মাঝে মাঝে হালকা আলোতে ঊষার সিগ্ধ মায়াবী মুখ দেখা যাচ্ছে। কি মায়াবী লাগছে ঘুমন্ত অবস্থায় আমি তাকায়ে থাকতে পারছি না। আমার শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন ঊষার চুল ঘ্রান কাছ থেকে পাচ্ছি না চাইতেও আমি নাকটা ওর চুলে ডুবিয়ে দিলাম।কেমন মাতাল লাগছে নিজের কাজে নিজেই অবাক হচ্ছি। ঊষা আমার বোন আর ওর প্রতি আমার এসব ফিলিংস কেন হচ্ছে আমি আগে এতোটা নির্লজ্জ ছিলাম না। ঊষার ক্ষেত্রে এতোটা কন্ট্রোল লেস কি করে হচ্ছি।ওর প্রতি কেন এমন ফিল হয়।
মাথা উঁচু করে সিটে হেলান দিয়ে র‌ইলাম গম্ভীর হয়ে।

গাড়ির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল ঊষার।
পিটপিট করে চোখ মেলার চেষ্টা করছে তখন মনে হচ্ছে ওর কানের কাছে ধকধক শব্দ হচ্ছে এটা কিসের শব্দ ওর স্মরনে আসছে না। কেউ ওকে জরিয়ে ধরে আছে মনে হচ্ছে ভয়ে চোখ মেলতেই ওর চোখ চরকগাছ হয়ে গেল ও ইহান ভাইকে জরিয়ে আছে একা না ভাইয়া ও।ভাইয়ার বুকের সাথে লেপ্টে আছি।
ভাইয়া ঘুমে আমি মাথা উঁচু করে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। আমি কি রাতে ভুলে ভাইয়ার এতো কাছে চলে এসেছি হয়তো। ছিঃ ছিঃ ভাইয়া এতো কাছে এসেছে আবার তাকে জরিয়ে ধরে আশেপাশে তাকিয়ে দেখি সবাই ঘুম এ শুধু রিফাত ভাইয়া বাদে ভাইয়া আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। লজ্জা আমি ছিটকে সরে এলাম সাথে সাথে ভাইয়া চোখ মেলে তাকালো সকাল হয়ে গেছে।

লজ্জা আমার গাল লাল হয়ে গেছে সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। নিচের দিকে তাকিয়ে ওরনার কোনা আগুলে পেছাচ্ছি। ভাইয়াও আমার দিকে তাকিয়ে আছে বুঝতে পারছি আমি নিচের দিকে দৃষ্টি রেখে সরি বললাম।
“সরি কেন?”
ভ্রু কুঁচকে ভাইয়া বলল।
আমতা আমতা করে বললাম,”আ-মি ভু-লে আপনার উপরে চলে গেছিলাম ঘুমের মধ্যে।”
লজ্জায় আমার কান গরম হয়ে আসছে।

#চলবে