এক চিলতে রোদ পর্ব-১৫+১৬

0
922

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_15

পরদিন আমরা এলাম পান্থমাই ঝর্না। বাংলাদেশ ও ভারতের মেঘালয় সিমান্তের কোল ঘেষে অসম্ভব সুন্দর একটি গ্ৰাম তার নাম পান্থমাই। আর এই পান্থমা‌ই এর মূল আকর্ষণ হচ্ছে পান্থমাই ঝর্না। সম্ভবত এই গ্ৰামটি হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্ৰাম। এক পাশে ভারতের মেঘালয় এ উঁচু উঁচু পাহাড় আর অন্য পাশে বাংলার মায়াময় ছায়াময় শান্ত সবুজ এই পান্থমাই।
এটি ভারতের সীমানায় পরলেও খুব কাছ থেকে দেখা যায়। ছবি তোলা ভিডিও এসব তো লেগেই আছে। সবাই মুগ্ধ নয়নে সব দেখলাম।
সেখানে থেকে আমরা জাফলং জিরো পয়েন্ট।
ওপারে সারি সারি পাহাড় এপারে সচ্ছ জলের স্নিগ্ধ নদী। পাহাড়ের বুকে অবিরাম ভাবে ভয়ে চলেছে ঝর্না। নদীর বুকে স্তরে স্তরে নানা রঙের নুরি পাথর।
আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে দেখছি। হাঁটু ভাঁজ করে বসে একটা পাথর ও হাতে নিলাম কি সুন্দর পাথর।
সেখানে থেকে আমরা গেলাম সংগ্ৰামপুঞ্জি ঝর্না দেখতে। জাফলং থেকে পনেরো মিনিট লাগে।

ক্লান্ত হয়ে সবাই বাসায় এসে বিছানায় কাত হয়ে পরে আছে।
আমার একটুও ক্লান্ত লাগছে না খুব ভালো লাগছে কতো কতো জায়গায় ঘুরলাম। আনন্দে আমার মুখ উজ্জ্বল হয়ে আছে ঘুরাঘুরি করে ক্লান্ত থাকলেও পাত্তা দিচ্ছিনা।
আজকে রাতের আগেই ফিরেছি তাই দিন আছে এখনো।আপুর ফোন বালিশের কাছে রেখেই ঘুমিয়ে আছে।আমি ফোনটা নিয়ে দেখলাম কতো বাজে। এখন সারে পাঁচ টা বাজে আমি বিছানায় থেকে উঠে পরলাম। রুমে থেকে বেরিয়ে কি করবো ভাবছি হঠাৎ আমার চোখে পরলো ছাদে যাওয়ার সিঁড়ি কি ভেবে যেন সেদিকে যেতে লাগলাম। গিয়ে দেখি একটু । এখানে এসেছে তিনদিন হয়ে গেল ছাদে যাওয়া হয়নি।আমি গুটি গুটি পায়ে ছাদে চলে এলাম। ছাদে পা রাখতেই একটা ঠান্ডা বাতাস ছুঁয়ে দিলো। কি বাতাস হচ্ছে ঝড় বৃষ্টি হবে নাকি ভ্রু কুঁচকে সারা ছাদে তাকালাম। কোন ফুল গাছ নে‌ই একদম ফাঁকা কোনায় একটা এ্যালভেরা গাছের টব আছে আর কিছু নাই।
খালি পায়ে আসায় পায়ে ধূলা অনুভব করলাম।
ওইভাবেই ছাদের কোনায় চলে গেলাম। তারপর রেলিং এ হাত রেখে নিচে তাকালাম।
হাত দিয়ে কোন রকম চুল খোঁপা করেছিলাম। বাতাসের জন্য অবাদ্ধ চুল খুলে পিঠে জরিয়ে গেল। বাধার চেষ্টা করছি পারছিনা ওরনা উড়ে যাচ্ছে। কোন রকম ওরনা গায়ে জরিয়ে দাঁড়িয়ে আছি এই বাতাস সব অবাধ্য করে দিলেও আমার খুব ভালো লাগছে।

হঠাৎ পেছন তাকালাম মনে হচ্ছে কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তাকিয়ে দেখি ইহান ভাই ছাদে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে কেমন করে যেন আমি তাকাতেই হকচকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো তারপর এগিয়ে এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
এখানে কি করছিস?
আমি বললাম, এমনি কিছু না।
কতো বাতাস হচ্ছে তাও এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
ভালো লাগছে বাতাস।
ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে তাকালো সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলো। আমি ওরনা ঠিক করছি খালি। একা ভালোই লাগছিলো ভাইয়ার সামনে ওরনা হলে যাচ্ছে এখন ভালো লাগছে না।
বাতাসে ধূলা আসছে দেখছিস না।
হুম।
তাহলে নিচে যা চোখে যাবে।
সাথে সাথে আমি চিৎকার করে উঠলাম। চোখে কিছু গেছে চোখ ধরে চেঁচিয়ে যাচ্ছি। ভাইয়ার তারাতাড়ি আমার দিকে ফিরে বলল,
কি হয়েছে?
চোখে কিছু পরলো।
চোখ ডলতে ডলতে। ভাইয়া আমার কথা শুনে আমার হাত ধরে টেনে কোথাও নিয়ে এলো আমার চোখ বন্ধ তাই দেখতে পাচ্ছি না।
হাত সরা।
ভাইয়ার কথা ও স্পর্শ পেলাম। ভাইয়া আমার হাত সরিয়ে দিচ্ছে আমি শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছি।
ইহান ঊষার ওরনার কোণা দিয়ে চোখের ময়লা বের করলো।চোখ আমার জ্বলে যাচ্ছে।
হয়েছে তাকা।
আমি বললাম, না আমার চোখ জ্বলছে খুব।
একটু তো জ্বলবেই তাকা।
না।
ভাইয়া নিরাশ হয়ে আমার চোখ খুলে নিজের মুখটা কাছে এনে ফূ দিতে লাগলো। আস্তে আস্তে আমার চোখের ঝালাপুরো কমে এলো। আমি চোখ মেলে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া এখনো আমার চোখে ফূ দিচ্ছে খুব কাছ থেকে। এখন আমার বুকের ভেতরে তোলপাড় করছে। ভাইয়া কে এতো কাছে দেখে আমার সমস্ত ধানধারনা শূন্য হয়ে গেল। ভাইয়ার দিকে বিস হয়ে তাকিয়ে আছি। বুকের ভেতর টিপটিপ করছে। ভাইয়ার গরম নিঃশ্বাস আমার মুখে বাড়ি খাচ্ছে।
হুট করেই ঝরঝর শব্দ করে বৃষ্টি নেমে এলো তাতে ভাইয়া ফূ দেওয়া অফ করে আমাকে বললো,
কমেছে।
আমি মাথা নিচু করে হুম বললাম।

ভাইয়ার কথায় চমকে উঠলাম।
ইশ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এখন কি হবে?
আমি ও এগিয়ে দেখি অনেক জোরে বৃষ্টি হচ্ছে। সাথে ঝড় আকাশে ঘুরুম ঘুরুম করছে। বাজ পড়ল বলে। আমি ছাদে এসেছিলাম সারে পাঁচ টায় তখন দিনের আলোই ছিলো এখন অন্ধকার হয়ে এসেছে। আমরা কোথায় এটা?
ভাইকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম এটা চিলে কোঠার ঘর। ঝরের জন্য ভাই এখানে এনে আমার চোখের ময়লা ফেলেছে।
ছোট একটা রুমে খালি একদম কিছু নেই। ভাইয়া খোঁজ করে অন্ধকারে এর মাঝে লাইট জ্বালালো‌।
এতোক্ষণ ভয়ে জরোসরো হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম এখন একটু স্বস্তি পেলাম।
ভাইয়া দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।আমি ভেতরে তখনি ফট করে সব অন্ধকার হয়ে গেল। কারেন্ট চলে গেলো বোধহয় অন্ধকার হতেই আমি ভয়ে কুঁকড়ে ওঠে ভাইয়াকে বলল,
ভাইয়া আপনার ফোনের আলো জ্বালান আমি অন্ধকারে এ ভয় পায়।
বলতে বলতে এগিয়ে এলাম দরজার দিকে ভাইয়া সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো।
ভাইয়া ঘাড় বাঁকিয়ে বললো ফোন তো রুমে রেখে এসেছি।
ভাইয়া কথা শুনে আমার মাথায় বাজ পরলো।
তখনই বিদ্যুৎ চমকালো ভয়ে আমি চিৎকার করে ভা‌ইয়াকে জরিয়ে ধরলাম।
আমার কাজে ভাইয়া হতদম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আমার যেদিকে খেয়াল নেই। আমি শক্ত করে ভাইয়াকে জড়িয়ে কাঁপছি। ভয়ে আমার জান বের হ‌ওয়ার উপক্রম।‌বাইরে বাজ পরছে আবার বিদ্যুৎ চমকে চমকে দিন হয়ে যাচ্ছে।
মরে গেলাম আমি?

আমাকে ছাড়াতে চেয়েও পারলো না ভাইয়া তাই ওইভাবেই আমাকে নিয়ে ভেতরে এসে দাঁড়ালো।
তারপর আমার মাথায় হাত দিয়ে বলল,
এতো ভয় পাচ্ছিস কেন আমি আছি তো তোর সাথে?
আমি কাঁপতে ছি।
ভাইয়া আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমি পারছিনা। পারবো কি করে বাজ পরা থামছেই না।শেষে ইহান ঊষাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
এটা ছাড়া আর কিছু করার নেই ও থামছেই না কাঁপছে ফুপাচ্ছে।
ইহান ঊষার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।ঊষা ওর বুকের সাথে মিশে আছে।এতে ইহানের বুকে ভেতরটা কেমন যেন করে উঠছে। ঊষার গরম নিঃশ্বাস আমার বুকে পরছে। আস্তে আস্তে ঊষার ফুপানি কাঁপা কাঁপি কমে এলো ঝড় থেকে এখন বৃষ্টি হচ্ছে।
ঝড় থেকে যেতেই আমি সম্মতি পেলাম।ভাইয়ার বুকে আছি ভেবেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম তারাতাড়ি ভাইয়ার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম। লজ্জা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে র‌ইলাম অন্যদিকে ঘুরে।
তখনি বৃষ্টির ঝাপটা এসে পরলো আমার চোখে মুখে। চমকে উঠলাম । বাইরে দিন হচ্ছে তো রাত তাতে দেখলাম জানালা দিয়ে পানি আসছে।
আমি পেছাতেই ভাইয়ার সাথে ধাক্কা খেলাম।
ইহান সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো হঠাৎ ঊষার পিঠের সাথে ঠেসা খেয়েছে এক পা পিছিয়ে গেলাম।
কি হয়েছে?
পানি আসছে জানালা দিয়ে।
ইহান কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না ওর নাকের কাছে ঊষার চুল। যা থেকে মাতাল করা গন্ধ আসছে। ও চোখ বন্ধ করে সেই গন্ধ অনুভব করছে হুট করেই এক পা এগিয়ে এসে ও উষার কোমর জড়িয়ে ধরলো। ঊষা নিজের কোমর এ কারো স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলো।
ইহান যেন নিজে কন্ট্রোল হীন হয়ে গেছে ওর একটা ইচ্ছা জেগে উঠলো ও নিজের মুখ ডুবিয়ে দিলো ঊষার চুলের মাঝে। ঊষা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। কি হচ্ছে কিছু ই বুঝতে পারছেনা।

#চলবে

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_16

ঠান্ডায় কেপে কেপে উঠছি। তাই বসে না থেকে চোখ মুখ ডেকে চাদর দিয়ে গা ঢেকে শুয়ে পড়লাম। চোখ বন্ধ করতেই তখন কার কথা মনে পরলো কি হচ্ছিলো? কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না। তখন ভাইয়া আমার এতো কাছে ছিলো আর তার ঠোঁটের স্পর্শ আমি আমার কাঁধে পেয়েছিলাম। আমি তখন অন্য কোন রাজ্যে চলে গিয়েছিলাম। তখন হঠাৎ বাজ পরার শব্দে ভাইয়া আমার থেকে ছিটকে সরে দাঁড়ায় আর একদম চিলে কোঠার ঘরে থেকে বেরিয়ে যায়।
আমি নিজের কোমর থেকে ভাইয়ার হাত সরে যাচ্ছে বুঝতেই বুকে হাত রেখে চোখ বন্ধ করি। ভাইয়ার এহেন কাজে আমি হতদম্ব। কি হচ্ছিলো বুঝার চেষ্টা করছি। আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে তার আলোতে দেখলাম সারা ঘরে আমি একা দাঁড়িয়ে আছি। এটা দেখেই বুকটা ছ্যাত করে উঠলো।
ভাইয়াকে ডাকলাম।
মৃদু স্বরে কিন্তু কেউ নাই ভাইরে ঘুরুম ঘুরুম আওয়াজ ভয়ে এবার কেঁদেই দিলাম।
আমি এগিয়ে দরজা কাছে আসতেই নজর পরলো ঘুরুম ঘুরুম বৃষ্টির মাঝে একটা ছায়া ছাদের রেলিং এ দাড়িয়ে আছে বিদ্যুৎ এর আলোয় স্পষ্ট দেখালাম ওইটাই ভাই আমি কোন কিছু না ভেবে ফুপাতে ফুপাতে ভাইয়ার কাছে এগিয়ে গেলাম বৃষ্টির মধ্যেই।‌ আমি এগিয়ে গিয়ে ভাইয়ার শার্টের কোন ধরলাম। আকাশে ঘুরুম ঘুরুম করছে তার সাথে সাথে আমিও কেঁপে উঠছি।
আমার স্পর্শ পেয়ে ভাইয়ার আমার দিকে তাকায় আমি বিদ্যুৎ চমকানোর আলোতে দেখতে পেলাম ভাইয়ার চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে।

আমি কিছু বলার আগেই আমার হাত শরীর থেকে সরিয়ে বলে,
তুই এখানে কি করছিস?
আমি কাঁপছি বৃষ্টির ঠান্ডা পানির স্পর্শে ওইভাবে ঠোঁট কামড়ে ধরে তারপর বললাম,
আমার একা ভয় করছে। আপনি আমাকে রেখে এখানে চলে এসেছেন কেন ভিজে।
ভাইয়ার কপাট রাগ নিয়ে বলল,
ভয় পাস একা থাকতে। আমাকে ভয় পাস না?
আমি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছি কি বলছে ভাইয়া তাকে কেন ভয় পাব।
আমি বিস্মিত হয়ে বললাম,
আপনাকে কেন ভয় পাব?
ভাইয়া আমার কথা শুনে বলল,
এই অন্ধকার, ঝড়ের থেকেও আমি তোর জন্য বিপদজনক বুঝেছিস?
আমি কিছু বুঝতে পারলাম না বোকা হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।
মানে?
ভাইয়া আমার থেকে চোখ সরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বলল,
আমার সামনে আসিস না তোর ক্ষতি হবে।আর বৃষ্টির মধ্যে এখানে এসেছিস কেন?
আমি ভাইয়ার কথা শুনে হতদম্ব হয়ে গেলাম।
কি সব বলছে ভাইয়া? তার কাছে এলে আমার ক্ষতি কেন হবে?
নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার সাদা ওরনা গলায় সাথে লাগানো নিচে নাই আমি ওরনা ঠিক করলাম কিন্তু হচ্ছে না জর্জেট ওরনা বৃষ্টিতে ভিজে আছে। জামা ও শরীর এর সাথে একদম মিশে আছে ভিজে হালকা লজ্জা পেলাম এজন্য ভাইয়া আমার দিকে তাকাচ্ছে না‌।
আচমকা ভাইয়া আমার হাত ধরলো আমি তার স্পর্শ এ কেঁপে উঠলাম।
ভিজেই যেহেতু গেলি এখানে থেকে আর কি হবে নিচে চল।
বলেই ভাইয়া আমার হাত ধরে সিঁড়ির কাছে এলো। দুজনে ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছি। ছপছপ শব্দ হচ্ছে পানির উপর দিয়ে যে হাঁটছি আমার পা পিছলে যাচ্ছে কারন আমার পায়ে তো জুতা নাই। পরে পরে যেতে চাইছি তাই আরেক হাত বারিয়ে আমি ভাইয়ার বাহু খামচে ধরলো।
সাথে সাথে ভাইয়া হাঁটা থামিয়ে ফেলল। আমি হকচকিয়ে দাঁড়িয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম ভাইয়া আমার ধরা হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি কাচুমাচু মুখ করে বললাম,
আমার পা পিছলে যাচ্ছে তাই।
ভাইয়া আমার পায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
তোর জুতা ক‌ই?
আমি বললাম, নিচে কেন?
জুতা ছাড়া এসেছিস কেন?
আমি ভাবছি ময়লা হবে তাই।
ইডিয়েট একটা।
বলে হাঁটতে লাগলো সিঁড়ির কাছে এসে হাত ছেড়ে দিলো আমি কাঁপতে কাঁপতে নিচে আসলাম সবাই আমাদের চিন্তায় সোফায় বসে আছে। উপরে থেকে দেখলাম। ভাইয়া আমাকে রুমে গিয়ে চেঞ্জ করতে বলে নিজে নিজের রুমে চলে গেলো।
রুমে এসেই দিয়া আপুর মুখোমুখি হলাম, আপু আমার দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে আছে তারপর বলল,
তুমি কোথায় গিয়েছিলে? আর এতো ভিজলে কি করে?
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।
তোমাকে আর ওদিকে ইহানকে দুজনকে খাওয়া যাচ্ছিলো না। বলেই আপু কিছু একটা চিন্তা করে বললো, বাই এনি চান্স তোমরা একসাথে ছিলে না তো।
বলেই সন্দেহ চোখে তাকালো। কিছু বলবো তার আগেই ইমা আপু এলো আর আমাকে এমন ভেজা অবস্থায় দেখে চমকে উঠলো,
একি এমন ভিজলি কি করে? কোথায় ছিলি? কখন থেকে খুঁজছি তোকে। বাইরে কতো ঝড় হচ্ছে দেখছিস।
হুম আমি ছাদে ছিলাম।
হোয়াট কেন? তুই তো ঝড় ভয় পাচ্ছ একা কি করে ছিলি সব সময় তো আমার হাত ধরে কাপিস?এদিকে ইহানকেও পাওয়া যাচ্ছে না ফোন ও রুমে রেখে গেছে‌‌।
আমি কি বলবো ভাইয়া আমার সাথে ছিলো।
বলতে গিয়ে ও বললাম না।
আপু আমাকে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে আসতে বলল।আমি দাঁড়ালাম না এমনিতেই আমার শীত এ জান যাচ্ছে।
কাঁপতে কাঁপতে বাথরুমে ঢুকে পরলাম। এসে দেখি কেউ রুমে নাই বাইরে উঁকি দিয়ে দেখি সবাই ভাইকে নিয়ে জেরা শুরু করেছে। আমি আর গেলাম না কাঁপুনি কমে নি কি ঠান্ডা পানি উফ শরীর কাঁটা দিয়ে উঠছে। কাঁপতে বিছানায় শুয়ে পরলাম।
বর্তমান এ।
আমি এখন ঘুমে এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরেছি ঘুম ভেঙ্গেছে আপুর ডাকে খাওয়ার জন্য ডেকেছে।
আমি শুয়ে থেকে বললাম তোমরা যাও আমি খাব না।
সেকি কেন?
আপুর কথায় বললাম।
আমার গা ব্যথা করছে উঠতে ইচ্ছে করছে না শীত করছে তোমরা খেয়ে নাও।
আপু ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আমার মাথা হাত রাখলো তোর তো জ্বর এসেছে ঊষা।
আমি বললাম ওহ।
ইহানের থেকে শুনলাম তোরা নাকি আটকা পরে গেছিলি বৃষ্টিতে তাই চিলেকোঠার ঘরে গিয়েছিলি।
আমি মাথা নেড়ে হ্যা বললাম।
এখন বৃষ্টি কমে গেছে তাহলে আর একটু সময় থেকে আসতি ভিজে তো জ্বর বাধালি। তুই নাকি ভিজেই আসার জন্য জেদ করছিলি।
আমি আপু কথা হা করে গিলছি কি বলছে এসব। ভাইয়া এসব বলেছে।

আপু নিজের মত কথা বলল তারপর জোর করে নিচে নিয়ে এলো খাবার টেবিলে আমি বসতেই সবাই আমার দিকে তাকালো।
ভাইয়াও তাকালো তারপর খেতে লাগলো।
আমি খেতে পারছি না আমার শরীর কাঁটা দিয়ে উঠছে।
আমি ভাত মুঠোয় নিয়ে বসে আছি।
খাচ্ছ না কেন?
রিহানের কথা শুনে চমকে তাকালাম আমার মতো সবাই রিহানের দিকে তাকিয়ে আমার দিকে তাকালো।
আমি সবার তাকানোতে লজ্জা পেলাম খুব।
রিহান বলল, তোমার চোখ মুখ লাল লাগছে ঊষা তুমি কি অসুস্থ?
রিহানের কথা শুনে ভাইয়া আমার দিকে তাকালো,
তখন ইমা আপু বলল।
হুম ওর জ্বর এসেছে খুব।
সবাই দুঃখ প্রকাশ করলো খালি ইলা আপু বাদে।
ইহান ভাই কিছু বলল না চুপচাপ খাওয়া শেষ করে সবার আগেই চলে গেল। আমি ভাইয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম কেন জানি কষ্ট হলো খুব ভাইয়ার কিছু না বলাতে।
দুই লোকমা খেয়ে রুমে এসে শুয়ে পরলাম। তেতু হয়ে আছে মুখ। ভাইয়ার ব্যবহার ভালো লাগলো না।
খুব খারাপ লাগা কাজ করলো আমার মধ্যে কেন জানি না আমি চাইছিলাম ভাইয়া কিছু বলুক কিন্তু কেন?
অজান্তে আমার চোখ জলে ভরে উঠলো।রাতে জ্বর বারলো আপুর আছে ওষুধ ছিলো খাইয়ে দিয়েছে কিন্তু তবুও কমলো না পরদিন আমাকে নিয়ে বসে আছে বেরাতে যাওয়া হচ্ছে না। আমি যেতে বলেছি কিন্তু আপু যাবে না এভাবে রেখে তখন ইলা আপু এলো,
এই জন্য ওকে আনতে চাইছিলাম না। এসেই আকাম করে বসলো ওর জন্য আমাদের আনন্দ টাই মাটি হবে।
রেগে বলল। আমি মাথা নিচু করে বসে আছি।
ইমা আপু বলল, ইলা এসব কি ও অসুস্থ।
তো কি? ওকে রেখে চল।ও অসুস্থ বাসায় থাকুক। ওর জন্য আমরা কেন সাফার করবো।
দিয়া বলল, সত্যি তো ইলা ঠিক বলেছে ইমা আমরা চল যাই ঊষা বাসায় থাকুক। সব তো আছে ।
কিন্তু ওকে একা রেখে অসম্ভব আমি যাব না।
প্লিজ চল।
না অসুস্থ অবস্থায় ফেলে আমি যাব না তোদের এতো ইচ্ছে তোরা যা।
ইমা আপুকে কেউ রাজি করাতে পারছে না তাই আমি আপুকে ডেকে বললাম ,
আপু প্লিজ তুমি যাও‌।
না ঊষা আমাকে জোর করিস না।
প্লিজ আপু তুমি না গেলে সবার যাওয়া মাটি হবে।আর এতে সবাই আমাকে রেসপনসিবিলিটি করবে তার থেকে তুই যাও‌। আমার কিছু হবে না আমি ঠিক থাকবো দেখো।
আমি,,
আপু তুমি কি চাও আমাকে সবাই দোষা রোপ করূক।
আচ্ছা যাব। নিজের খেয়াল রাখবি তারাতাড়ি চলে আসবো।
আপুরা সবাই চলে যায় আমি বাসায় একা বসে আমি।
শুয়ে পরলাম সাথে সাথে ঘুম তখন মনে হলো কেউ আমার কপালে কোমল স্পর্শ দিচ্ছে একটা হাত আমার গালে আমার ঘুম ছুটে গেল।

#চলবে