এক চিলতে রোদ পর্ব-২১+২২

0
988

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_21

আমি মাথা নিচু করে ভাইয়ার সামনে আসতেই দরজা খুলে ভেতরে বসতে বললো।
আমি মাথা তুলে তাকালাম, ভাইয়াকে কিছু বলতে চাই।
ভাইয়া কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে। আমার দাঁড়িয়ে থাকা তার রাগ বাড়ছে।
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
‘ভাইয়া এভাবে চাচির বিরুদ্ধে না গেলে হতো না।এটা নিয়ে চাচি রাগারাগী করবেন!’
কথাটা বলেই ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে চুপ করেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি তাকাতেই বলল,
‘ বলা শেষ হলে তারাতারি কর। আমাকে কলেজ যেতে হবে। ‘
‘আমার কথাটা…
‘ভেতরে যা।’
ভাইয়ার রাগী কন্ঠে আমি কেঁপে উঠলাম আর কিছু না বলে ভেতরে গিয়ে বসলাম।
ভাইয়া ড্রাইভিং সিটে বসে বললো,
সিট বেল বাঁধ।
আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে ছিলাম ভাইয়ার কথায় চমকে ফিরে তাকালাম।
হুম।
বলেই সিট বেল বাঁধতে লাগলাম। কিন্তু লাগাতে পারছি না। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি হচ্ছে না কি মুশকিল। তখন একটা ঠান্ডা হাত আমার দিকে এগ এগিয়ে এলো আমি মাথা তুলে নিজের খুব নিকটে ভাইয়ার অস্তিত্ব পেলাম। হতভম্ব হয়ে হাত আলগা করে সরে গেলাম। ভাইয়া বিরক্ত মুখ করে বলল,
এটাও বাঁধতে পারিস না।
আমি কাচুমাচু মুখ করে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার কুঁচকানো কপালের দিকে। ভাইয়া সিট বেল লাগিয়ে নিজের জায়গায় বসে ড্রাইভিং করতে লাগলো আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার জন্য এতো কথা শুনালো চাচিকে তার বিরুদ্ধে গিয়ে কোচিং এ ভর্তি করতে নিয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ মনের ভেতর সুখের আবাস খুঁজে পেলাম। সুখ সুখ অনূভুতি হচ্ছে খুব চাচির ভয় এক পাশে ফেলে নিজের সুখ অনুভব করতে লাগলো।
ভাইয়ার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছি। তখন হঠাৎ ভাইয়া আমার দিকে তাকালো আমি তারাতাড়ি চোখ সরিয়ে জানালার বাইরে তাকালাম।
গাড়ি থেকে নেমে ভাইয়ার পেছনে পেছনে যেতে লাগলাম। ভাইয়া আমার হাত ধরে লিফটে উঠে গেল। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছি দুজন ভাইয়া ফোন টিপতে ব্যস্ত আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে একবার ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি তো একবার নিচের দিকে।

আর একমাস আছে পরিক্ষার এখন কি কোচিং এ ভর্তি হ‌ওয়া যাবে।
নিচু কন্ঠে বললাম ভাইয়াকে।
ভাইয়া আমার কথায় ভ্রু কুটি করে ফোন থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
সেটা আমি দেখে নেব।তোকে ভাবতে হবে। তুই মন দিয়ে শুধু পড়ালেখা করিস।
আমি মাথা নাড়লাম।
আমাকে নিয়ে একটা কক্ষে গেল। যেখানে টিচার ছিলো। তার সাথে কথা বললো আমার ভর্তি নিয়ে তারা বললো এতো লেট কেন?
ভাইয়া নিজের মতো বলে ম্যানেজ করে নিলো। তারা দ্বিমত করলেও পরে মেনে নিলো।আমি পুরোটা সময় মাথা নিচু করে ছিলাম।

ক্লাস টাইম বিকেল এ। তাই কাজ শেষ করে আমরা চলে এলাম।
মুখ এমন করে রেখেছিস কেন? কি হয়েছে?
লিফটে ঢুকে দাড়াতেই ভাইয়া এই কথা বললো।
আমি মলিন মুখেই ভাইয়ার দিকে তাকালাম তিনি কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
লিফটে আরো লোক আছে আমি তাদের দিকে এক নজর তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম।
কিছু হয়নি।
ভাইয়া আর কিছু বললো না। আসার সময় একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে ভাইয়া থামালো।
এখানে কেন?
ভাইয়া তার উওর এ কিছু না বলে আমাকে তার সাথে যেতে বললো।
খাবারটা খা।
এখানে খাবার এর কি দরকার ছিলো।
তুই না খেয়ে এসেছিস ভুলে গেলি নাকি‌।
আমার খিদে পায়নি।
তোর সব কিছু তেই না করতেই হবে তাইনা।এখন না খেলে এগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। তারাতাড়ি খা।
কিন্তু…
ভাইয়ার চাহনি দেখে আর না করতে পারলাম না খেতে লাগলাম। বিরিয়ানি অডার‌ করেছিলো আমি খেতে না চাইলেও এখন তৃপ্তি করে খাচ্ছি খুব খিদে পেয়েছিল।তার উপর বিরিয়ানি আমি হাত দিয়ে খেলাম। আশেপাশে তাকিয়ে খাওয়া অফ হয়ে গেল অনেকে তাকিয়ে আছে।
সবাই চামচ দিয়ে খাচ্ছে আমি একা হাত দিয়ে খাচ্ছি। খানিক লজ্জা পেলাম খেতে ইচ্ছে করছে না এখন আমার।
কি হলো খাচ্ছিস না কেন?
ভাইয়া তীক্ষ্ণ চোখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
আমি আর খাব না।
ভাইয়া অবাক হয়ে বলল, কেন?
আমার পেট ভরে গেছে।
ইহান ঊষার দিকে থেকে চোখ সরিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বলল,
বাঙালিরা হাত দিয়ে খেয়েই অবস্থ। তাই এই হাত দিয়ে খাওয়ার জন্য লজ্জিত হয়ে খাওয়া অফ করিস না।
আমি চমকে মাথা তুলে তাকালাম ভাইয়ার দিকে।

বাসায় আসার পর থেকে আমি ভয়ে ভীতু মুখ করে বসে আছি।এটা ওটা করছি। চাচি গম্ভীর মুখ দেখেছি কিন্তু আমাকে কিছু বলেনি রেগে তাকিয়েছে শুধু।
আমি চাচির সামনে এলেই ভয়ে কাঁপা কাঁপি করেছি। তাকে সাহস করে সরি বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সাহস হয়নি কথা বলার।
সন্ধ্যায় ভাইয়া আমার রুমে দুইটা ব‌ই নিয়ে এলো।
আমি তখন নামাজ থেকে উঠে বসেছিলাম তখন ভাইয়াকে আসতে দেখে চমকে দাঁড়িয়ে পরলাম।
এই ধর ব‌ই।
এগুলি আবার কিসের ব‌ই?
অবাক হয়ে বললাম।
এই ব‌ই থেকে পরতে হবে। বোর্ড প্রশ্ন আছে।
ব‌ই আমার হাতে দিয়ে চলে যেতে গিয়ে আবার ফিরে এসে বলল,
আম্মু তোকে কিছু বলবে না ভয় পাস না।
কথাটা বলেই ভাইয়া গটগট করে চলে গেল আমি বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে ভাইয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম।
পরদিন কোচিং এ গেলাম একা। ভাইয়া আস্তে চেয়েছিলো আমি মানা করেছি একাই পারবো বলে। বাসায় অনেক কাজ এখন দুইদিন পর গায়ে হলুদ আপুর।
আজ সবাই মার্কেটে যাবে। আমি কোচিং এ এসে চুপচাপ একটা সিটে বসে আছি আগেই চলে এসেছি।একে একে সবাই আসলো আমাকে নতুন দেখে জিজ্ঞেস করলো আগে কেন ভর্তি হয়নি। আমি সমস্যা বললাম পারিবারিক। সবাই টিটকারি মারা কথা বলে চলে গেল।
আমি একাই এক সিটে বসে র‌ইলাম।
কোচিং শেষে বের হয়ে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছি তখন একজনকে দেখে চমকে উঠলাম,
রিহান এখানে কি করে?
সেও আমাকে দেখে অবাক হয়েছে তারপর মুখে হাসি টেনে আমার কাছে এসে বলল,
হাই ঊষা, তুমি এখানে?
আমি ভদ্রতা দেখিয়ে হেসে বললাম,
হুম। আমি এখানে কোচিং করি।
ওহ আচ্ছা।কতোদিন পর দেখা হলো। তোমাকে দেখে খুব চমকিয়েছি খেয়েছি। আচ্ছা বলো কেমন আছো?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনি?
ভালো না থাকলেও এখন তোমাকে দেখে ভালো হয়ে গেছি‌।
আমি বিস্মিত হয়ে তাকালাম।
মানে,
কিছু না তোমাকে খুব মিস করছিলাম।
আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, কেন?
ওই এমনি।তোমার ফোন নাম্বার টা দেওয়া যাবে‌। আসলে একটু আধটু কথা বলতাম।
ছেলেটাকে একটুও সুবিধার লাগে না, তবুও কিছু বলতে পারছি না,,
আমার ফোন নেই।
কথাটা বোধহয় বিশ্বাস হলো না অবাক হয়ে হালকা কেশে বললো,
আরে আমি ওতো ডিস্টাব করবো না। মিথ্যা কেন বলছো দাওনা।
মিথ্যা কেন বলবো সত্যি আমার ফোন নেই।
খানিক রেগে বললাম।
ও আচ্ছা। কিছু মনে করো না কেমন তুমি কি এখন বাসায় যাবে।
হুম।
তাহলে চলো তোমাকে পৌঁছে দেয়।
না না তার দরকার নেই আমি একাই যেতে পারবো।
আরে চলো তো। ওই যে গাড়ি দাঁড়াও থামাচ্ছি‌‌।

আমার কথা শুনলোই না গাড়ি থামিয়ে নিজে উঠে বসলো আমাকেও বসার জন্য ডাকতে লাগলো। আমি যাব না মন স্থির করেছি। কিন্তু এখন না গিয়ে ও উপায় নাই অটো থেকে ড্রাইভার ও আরেকজন লোক তারাতাড়ি উঠতে বসছে।
উফফ বিরক্ত হয়ে উঠে বসলাম। এনার সাথে দেখা যে কেন হলো যতসব।
সারা রাস্তা পাগল করে ফেলেছি কথা বলতে বলতে আমি হু হা করেছি।গাড়ি বাসায় সামনে আসতেই আমার আগে রিহান বেরিয়ে এলো। আমি বিরক্তিকর চাহনি দিয়ে নামলাম। রিহান হুট করেই আমার দিকে ঝুঁকে পড়ল আমি চমকে পিছিয়ে গেলাম।
রিহান বলল,
তোমার সাথে দেখা হয়ে আমার মনটা ফুরফুরে হয়ে গেছে। কালদিন পর তো দেখা হবে।
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম, কিভাবে?
আরে বিয়েতে আমি ছেলে পক্ষ আর তুমি মেয়ে পক্ষ।
উফ এটা তো ভুলেই গেছিলাম। এতো জ্বালাতন করতে পারে জাস্ট অসহ্য।
আমি সরে গেটের ভেতরে চলে গেলাম।
রাগ লাগছে লোকটা কে একটুও ভালো লাগেনা। গায়ে পড়া টাইপের।
এসব ভাবতে ভাবতে ভেতরে ঢুকে পরলাম। বাসার সবাই সোফায় বসে ছিলো ডয়িং রুমে।আমি সেদিকে তাকিয়ে নিজের রুমে যাবে তখন চোখ পরলো ইহান ভাইয়ের দিকে সে সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আছে চেয়াল শক্ত করে। চোখ মুখ লাল টকটকে হয়ে আছে। রাগী চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে‌। আমি সেদিকে তাকিয়ে আছি ভীতু মুখ করে।
ভাইয়া ঠোঁট নাড়িয়ে মৃদু আওয়াজ করে বললো,
ঊষা আমার কফিটা নিয়ে আয়।
বলেই গমগম করে উপরে চলে গেল।আমি হাঁ করে তাকিয়ে র‌ইলাম।
এমন রাগ দেখালো কেন?
আমি রুমে গিয়ে ব্যাগ রেখে রান্না ঘরে থেকে কফি করে নিয়ে যেতে লাগলাম তখন চাচি এসে ছিনিয়ে নিলো কফি, আমি চমকে উঠলাম,
লতা ক‌ইরে কফিটা দিয়ে আয় তো ইহান কে!যা।
আমি থমকে দাঁড়িয়ে র‌ইলাম।

#চলবে

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_22

আমি থমকে দাঁড়িয়ে আছি মাথা নিচু করে। চাচি দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“তোকে ইহানের আশেপাশে যেতে মানা করছি না। তাও কোন সাহস এ যাচ্ছিলি।”
আমি চাচির রাগী কন্ঠ ভয়ে জরোসরো হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
চাচি রেগে বলতে লাগলো,,
“বিয়েটা যেতে দে! তারপর তোর ব্যবস্থা করবো। লেখাপড়া করে ডিপ্টি হ‌ওয়ার শখ মেটাবো।”
বলেই চাচি গরম চোখে তাকিয়ে বেরিয়ে গেল রান্না ঘর থেকে। আমি ভয়ে গুটিয়ে গেলাম। চাচি তো খুব রেগে আছে কি যে হবে? আমি ভেতরে ভেতরে ভয়ে কাঁপতে লাগলাম। ইহান ভাইয়া তো আমাকে নিয়ে যেতে বলেছে সেও রেগে গেল বোধদয় কিন্তু চাচির সামনে আমি বা কি করতাম।আর তখন এতো রেগে কেন ছিলো ভাইয়া চেয়াল শক্ত করে তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে।
আর ইহান ভাই এর খোঁজ নিতে পারলাম না। চাচি আমার উপর কড়া নজর রাখলো।রাতে ভাই খেতে এলো না। আমার চোখ দুটো তার জন্য অপেক্ষা করে নিরাশ হলো।
সবার খাওয়া শেষ হতেই ইমা আপু আমাকে বলল তার রুমে যেতে খেয়ে।
আমি খাওয়া শেষ করে আপুর কাছে গেলাম আপুর বিয়ের পোশাক বের করে রেখেছে আমি যেতেই আপু সব দেখালো। গায়ে হলুদ এ হলুদ সবুজ রঙের কাতান শাড়ি, সাথে ফুলের গহনা।বিয়েতে লেহেঙ্গা কালো খয়রি মধ্যে ক্রিম কাজ, ওরনা হালকা গোলাপি রঙের। বৌভাতের ড্রেস শশুর বাড়ি তাই সেটা দেখতে পেলাম না।
সব ড্রেসের প্রশংসা করলাম হাত দিয়ে ছোঁয়ে ছোঁয়ে দেখলাম। আপু আমাকে একটা শাড়ি দিলো কাঁচা হলুদ গায়ে হলুদ এ পড়ার জন্য। আমি শাড়িটা হাতে নিয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলাম। গিফট পেতে কার না ভালো লাগে আমি চমকে উঠে তাকিয়ে আছি শাড়িটার দিকে।
এটা আমার আপু?
হুম তোর হলুদ এ এটা পরিস।
আচ্ছা।
তোর পছন্দ হয়েছে?
খুব।
ঊষার উজ্জ্বল মুখ দেখে ইমার মুখে হাসি ফুটলো। ও নিজে পছন্দ করে এনেছে এই ড্রেস। বিয়েতে পরার জন্য ও একটা এনেছে সেটা বিয়ের দিন দিয়ে ওকে সারপ্রাইজ হবে।
আমি আপুকে দিয়ে এলাম শাড়ি। পরশু দিন নিয়ে পরবো আপুর থেকে।আপুর রুমে থেকে হাসি মুখে বেরিয়ে এলাম নাচতে নাচতে। আমার খুব খুশি লাগছে। আমি নিচে নামার জন্য পা বাড়াবো তখন হঠাৎ একটা ঠান্ডা হাত আমার হাত চেপে ধরে। আমি কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে পেছনে তাকানোর আগেই সেই লোকটা আমাকে টেনে একটা রুমে নিয়ে আসে। ততক্ষনে আমি বুঝে গেছি এটা কে এটা তো ইহান ভাই। কিন্তু আমাকে এভাবে টেনে রুমে নিয়ে এলো কেন?
ভাইয়া আমাকে রুমে এনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো আমি ভয়ার্ত চোখে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি‌। ভাইয়া চেয়াল শক্ত করে এক হাতে আমার হাত ধরে আছি অন্য হাতে আমার কোমর পেঁচিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে রেখেছে।
আমি বড়সড় চোখ করে ভাইয়া চোখের দিকে ঢোক গিললাম। ভাইয়া চোখ লাল বর্ণ ধারণ করে আছে। সে আমার দিকে সেই ভয়ংকর চোখ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। একেতে ভাইয়ার এতো কাছে আমি তার জন্য আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে।আমি কাঁপা কাঁপি করছি এখন আবার রাগ আমি ভয় চোখে তাকিয়ে আছি। তখন কফি না আনার জন্য কি ভাইয়া এমন করছে?
ভাইয়া আমার মুখোমুখি হয়ে বললো, কফি তোকে আনতে বলেছিলাম।
ভাইয়ার নিঃশ্বাস আমার মুখে আছড়ে পরছে আমি চোখ বন্ধ করে মাথা নাড়লাম।
তাহলে লতাকে কেন পাঠালি?
কি বলবো আমি পিটপিট করে চোখ মেলে ভাইয়ার দিকে তাকালাম,,
কি হলো উওর দে? চুপ করে না থেকে!
আমি আসলে…
কি হলো আমতা আমতা করছিস কেন?
আমি ভাইয়া কঠিন চোখ মুখ দেখে ভয়ে চুপসে গেলাম।কথা বলতে পারছি না।
তোকে আমি কোচিং এ পাঠিয়ে ছিলাম সেখানে ওই ছেলেটা কোথায় থেকে আসলো? রিহানের সাথে তোর কি সম্পর্ক সত্যি করে বল।
রিহানের কথা ভাইয়ার মুখে শুনে শক খেলাম।ভাইয়া কি করে জানালো রিহানের সাথে এসেছে আর কিসের সম্পর্কের কথা বলছে। আমি ভীতু চোখে তাকিয়ে আছি।
রাগে গলার আওয়াজ উঁচু করে উঠলো,,আমার প্রশ্নের উত্তর দে।
ভাইয়া উঁচু কন্ঠ শুনে আমি ভয়ে কুঁকড়ে চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম।
আমার চোখ ঠোঁট থরথর করে কাঁপছে।
ভাইয়া তা দেখে কিছু শান্ত হলো আমার থেকে সরে এলো মাথা চুলে দুই হাত চেপে ধরে বিছানায় বসলো।
আমি ভাইয়া অস্তিত্ব না পেয়ে চোখ খুলে দেখি ভাইয়া বিছানায় বসে চুল খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে আছে।আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি। এমন করছে কেন? মাথা ব্যাথা নাকি?
আমি এগিয়ে এলাম ঢোক গিলে। ভাইয়া সামনে দাঁড়িয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
ভাইয়া আপনার কি মাথা ব্যাথা করছে? করলে বলতে পারেন আমি মাথা টিপে দেব। দেখবেন ভালো লাগবে।
বলেই ভাইয়ার রিয়াকশনের জন্য দাঁড়িয়ে আছি।
ভাইয়া মাথা থেকে হাত সরিয়ে রক্ত লাল চোখে তাকালো।কেমন যেন দেখা যাচ্ছে ভাইয়াকে আমি হতভম্ব হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি।কি হয়েছে ভাইয়ার এমন লাগছে কেন?
ভাইয়া বিছানায় শুয়ে পরলো ফট করে আমি তার দিকে তাকিয়ে কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছি। কি করবো বুঝতে পারছি না। ভাইয়া আমাকে মাথা টিপতে ও বলে নাই সে বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।আমি হাত কচলাতে কচলাতে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।চলে যাব নাকি নিজে থেকে মাথায় হাত রাখবো।
ভাবনার মাঝে ভাইয়া চোখ মেলে তাকালো আর আমার দিকে তাকালো আমি তাকিয়ে ছিলাম ভাইয়ার তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেল। আমি ভাইয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে কেঁপে উঠলাম। কি ভয়ংকর চাহনী দিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে আমি শুকনো ঢোক গিলে বললাম,
টিপে দেবো।
ভাইয়া হাতের ইশারায় ডাকলো আমি বুঝতে পারলাম টিপতে বলছে। আমি তারাতাড়ি ভাইয়ার কাছে গিয়ে বসলাম। ভাইয়া চোখ বন্ধ করে আছে।
আমি কাঁপা হাত এগিয়ে নিলাম ভাইয়ার মাথায় সিল্ক চুলের দিকে।আমার হাত কাঁপছে অসম্ভব রকমের।
চোখ বন্ধ করে হাত চুলের মাঝে রেখে চোখ খুললাম। ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে আছে চোখ বন্ধ করেও । আমি আলতোভাবে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। আমার বুকের ধুকপুক বাড়ছে মনে হচ্ছে বাইরে থেকে শুনা যাচ্ছে। আস্তে আস্তে আমার কাপাকাপি কমে এলো আমি আরামে ভাইয়ার মাথা টিপতে লাগলাম।
রিহানের সাথে সাক্ষাৎ হলো কি করে বললি না?
ভাইয়া চোখ বন্ধ থেকেই কথাটা বলছে আমি চমকে উঠে তাকিয়ে দেখি‌।
তারপর সব বলি কি করে তার সাথে দেখা হলো।ভাইয়া সব শুনে চোখ মেলে তাকালো আমার দিকে আমি ঝুঁকে ছিলাম ভাইয়ার তাকানো দেখে চমকে সোজা হয়ে বসলাম।
আর কফি?
চাচি বলেছে আপনার আশেপাশে না আস্তে বলেছিলাম না।
আমার কথা শুনে থমকালো ভাইয়ার তারপর চোখ বন্ধ করে র‌ইলো। ঊষার নরম তুলতুলে হাতের স্পর্শ নিজের কপালে অনুভব করতে লাগলো।
হুট করেই ইহান ঊষার বামহাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো আমি আচমকা ভাইয়ার স্পর্শ নিজের হাতে পেয়ে চমকে উঠলাম।
ভাইয়া আমার হাত টেনে নিজের বুকের বাম পাশে চেপে ধরলো আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি।

#চলবে