এক চিলতে রোদ পর্ব-২৯ + Extra -1+2+3

0
926

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_29

বাসা একদম ফাঁকা হয়ে গেছে। বিয়ের আমেজ শেষ হতেই সব আত্নীয় স্বজন রা চলে গেছে। যাওয়ার আগে শীলা আমাকে ওর সাথে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু আমি যাইনি। যাব কি করে কোচিং আছে যে দুইদিন মিস গেলো।

ইমা আপু একদিন ছিলো তাতে আমাকে রিহান পাগল করে ছেড়েছে। আমি কোন রকম লুকিয়ে চুরিয়ে বেঁচেছি এতো ডিস্টার্ব করতে পারে।

আমি ভেবেছিলাম আজকে চাচির থেকে আমাকে কঠিন কথা শুনতে হবে। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে আজকেও কিছু বলেনি। আমি বিষ্ময় হতভম্ব হয়ে রেডি হচ্ছি কোচিং এ যাওয়ার জন্য। চুল বিনুনি করে মাথা পিন করে বেরিয়ে এলাম। চাচি সোফায় বসে আছেন। আমাকে বের হতে দেখে জিজ্ঞেস করলো,

“কি রে তোর কাছে টাকা আছে? লাগবো নাকি কোচিং এ যেতে।”

আমি কিছু বলার ভাষা খুজে পাচ্ছি না। আমার মুখটা হা হয়ে গেছে। চাচি আমাকে টাকা লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করছে। আমি কি স্বপ্ন দেখছি।

“কি রে এমন হা করে তাকিয়ে আছিস কেন?”

আমি জ্বিভা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে দিয়ে মিনমিন করে বললাম,,,

“তুমি আমাকে টাকা দেবে?”

“যাওয়ার জন্য লাগলে দেবো না কেন?”

আমি শক নিতে পারছি না মাথা ঘুরছে আমার। চাচির থেকে এতো ভালো ব্যবহার আমার সহ্য হচ্ছে না‌। চাচি বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে আছে। রাগ স্পষ্ট এখন হচ্ছে আমি তারাতাড়ি বললাম।

“না না আমার টাকা লাগবে না। আমি যাই দেরি হচ্ছে।”
বলেই বাইরে দিকে হাঁটতে লাগলাম।

চাচি পেছনে থেকে বলে উঠলো, “ভালো করে পরিস পাশ করতে হবে কিন্তু।”

আমি দরজার কাছে এসে অবাক হয়ে পেছনে তাকিয়ে চলে এলাম বাইরে।
চাচির হলোটা কি এমন করছে কেন?

আমি সারা রাস্তা চাচি কে নিয়ে ভাবতে ভাবতে কোচিং এ এলাম।
কোচিং শেষ করে আবার সেই রিহান। এই ছেলে আমার পিছু ছারবে না। আমি লুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। যাতে দেখতে না পায়। রিহান চারপাশে তাকিয়ে আমাকে খুঁজছে।

আমি আড়ালে দাঁড়িয়ে আছি। অটো একটা আসতেই চেঁচিয়ে থামতে বললাম। তারপর দৌড়ে উঠে বসলাম। এতেই রিহান বেটা আমাকে দেখে নিয়েছে। অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে নিজেও ঝড়ের গতিতে আমার পাশে এসে বসলো।

গায়ের সাথে লাগবে আমি তারাতাড়ি সরে বসলাম। রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি রিহানের দিকে।
রিহান আমার দিকে তাকিয়ে হাসি দিলো দাঁত বের করে আমার রাগে ফাজিল টার মাথা ফাটাই দিতে ইচ্ছে করছে।

” আরে ঊষা আমি কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম আর তুমি এভাবে চলে যাচ্ছিলে। ”

আমি চাপা রাগ নিয়ে বললাম,, ” আপনি গাড়ি এলেন কেন? আর এমন ভাবে আমার পেছনে কেন পরেছেন?”

“ভালোবাসি বলেছিলাম তো।”

” আমি তো বাসি না তাহলে কেন ডিস্টার্ব করছেন? প্লিজ আপনি নেমে যান আর আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না। এমন করলে আমি আর কোচিং এ আসবো না। ”

আমার কথা শুনে রিহান মুখটা একটু খানি করে ফেললো। আমি অটো ড্রাইবার কে গাড়ি থামাতে বললাম। মুখ কালো করে বললো,,

” কেন ভালোবাস না? ”

” বাসি না তাই।”

” আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি বিয়ে করতে চাই।”

“বিয়ে?”

‘হুম।”

আমি কিছু বলার আগেই গাড়ি থামলো আমি কিছু এই বিষয়ে না বলে বললাম,,,

” নামুন। আর আমাকে বিরক্ত করবেন না।যান।”

” কিন্তু….

হাত দিয়ে নামতে বললাম। রিহান গোমড়া মুখে নেমে গেলো। আর নেমেও আমার দিকে তাকিয়ে র‌ইলো।
আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।

বাসায় এসে বসতেই আযান দিলো। রাতে পরতে বসে ছিলাম তখন ইলা আপুর ডাক পরলো।

আমি তার রুমে যেতেই আমার হাতে রিমুভার দিয়ে হাত ছরিয়ে বসে পরলো। এখন আমাকে দিয়ে নেল পালিশ উঠাবে। পড়া ছিলো অনেক কিন্তু না ও করতে পারবো না। বাধ্য হয়ে বসলাম। আপু চান বললো,

কাল নাকি তার ফ্রেন্ডরা মিলে কক্সবাজার যাবে তাই ড্রেসের সাথে ম্যাচিং করে সব পরবে তাই এসব করাচ্ছে আমাকে দিয়ে।
আমি দীর্ঘ শ্বাস কাজ করতে লাগলাম। অর্ধেক হতেই আমাকে উঠিয়ে চা করতে চা করতে পাঠালো।

চা করছি আর বিরবির করছি। চা করে উপরে এসে ইহান ভাইয়ের রুমে তাকালাম। ইশ ভাইয়া কোথায় আছে তিন দিন হয়ে গেলো বাসায় নাই। না চাইতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। চা নিয়ে আপূকে দিয়ে কাজ করতে লাগলাম শেষ করে রুমে এসে একটু পরেই ঘুমিয়ে পরলাম।

সকাল সকাল ইলা আপু সেজে গুজে একটা ব্যাগ নিয়ে চলে গেল। না খেয়ে। রেস্টুরেন্টে নাকি খাবে তাই। আমি আপুর যাওয়ার দিকে তাকায় র‌ইলাম। কালো ড্রেস পরেছে আপু খুব সুন্দর লাগছে তাকে দেখতে।

চাচি খাবার পর আমাকে নিজের রুমে ডেকে নিলো। আমি ভয়ে ভয়ে গেলাম। চাচি বিছানায় পা ছরিয়ে বসে আছে। আমি যেতেই বলল,,

” পা একটু টিপে দে তো ব্যাথা লাগছে। ”

আমি নিঃশব্দে বসে পরলাম।

” ইহান কোথায় গেছে?”

আমি বসে পা টিপে দিচ্ছি তখন চাচি বলে উঠলো কথাটা আমি শুনেই চমকে উঠলাম। মাথা তুলে তাকালাম চাচির দিকে সে রেগে আমায় দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ঢোক গিলে হাত থামিয়ে ফেললাম।

“কি হলো বলো? কোথায় আমার ইহান?”

আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি।
আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছে আমি তো জানি না।

“আমি কি করে জানবো চাচি ?”

“জানলে বল?”

“আমি জানি না কিছু। আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছো আমি কিভাবে জানবো?”

চাচি রেগে কিছু বলতে যাবে তার ফোন টা বেজে উঠলো। সে আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফোন ধরলো। ফোনের দিকে তাকিয়ে চাচি হাসলো আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি। চাচি হ্যালো আপা বলে উঠলো,

“আপা কেমন আছো? ইমা বিয়েতে এলে না কেন?

“বিজি ছিলাম রে।

“আমি তোমাকে মিস করেছি। এখন আসো ঘুরে যাও‌

“আমি না তুই আয়।

‘আমি কিন্তু…

“কিন্তু কি আয় আমার কাছে থেকে তা কয়দিন।

“আচ্ছা। ( ভেবে বললো কারণ এখন ইহান নাই ইলা ও নাই‌। যাওয়া যায়।)

“কাল‌ই আয় আমার অফ আছে কাল।

“আচ্ছা আসবো।

খুশিতে আটখানা হয়ে বললো। এই বোন সবার বড় আর ধনী। ইয়া বড় বিজনেস একা সামলাতে পারে তার বোন। এই জন্য এই বোন কে সব চেয়ে ভালোবাসে টাকার যে তার খুব লোভ।

আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি। চাচি কে কি খুশি দেখাচ্ছে এটা নতুন না তার বড় বোন ফোন করেছি এমন খুশি হয় সে আর লাফিয়ে চলে যায়। এবারো তাই হবে। চাচি আমাকে আমার কিছু জিজ্ঞেস করলো না আর না পা টেপালো। উঠে নিজের আলমারি খুলে কাপড় বের করছে।
নিয়ে যাবার জন্য না একটা পরে যাবে আর দশটা নিয়ে আসবে।‌

আমি তারাতাড়ি বেরিয়ে এলাম। আর বকা বাকি করতে পারবে না। কয়েকদিন চাচি বাসায় আসবে না। পরদিনের যাওয়া আজকে বিকেলেই চলে গেলো। চাচা অফিসে আছে তাকে বলেও গেলো না আমাকে ডেকে বলতে বললো।

আমি আচ্ছা বলে দিলাম। এখন পুরো ফাঁকা বাসায় আমি আর লতা। চাচা আসতে সন্ধ্যায় পরেই। তাই হলো সাথে সাতটায় চলে এলো। তারেক খেতে দিয়ে বললাম। চাচি চলে গেছে বোনের বাড়ি। শুনেই চাচা কয়েকটা বকা দিলো চাচি কে বাসা এমনিতেই খালি তার উপর তার ও যেতে হবে কেন? খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে গিলো। চাচার রুমে আমি জগ ভর্তি পানি দিয়ে এলাম। চাচা আর উঠবে না জানি। আমি আর লতা সোফায় বসে টিভি দেখছি কেউ নাই তাই বকার ও কেউ নাই। হিন্দি ছবি দেখছি কথা বুঝি না তাও দেখছি ভালো লাগে তাই। দুজনে হেসে কুটিকুটি হচ্ছি খুব হাসির ছবি এটা কথা না বুঝলেও কান্ড কারখানা দেখেই হাসছি। আচার আমার খুব পছন্দ আজ ফ্রিজ খুলে একটু আচার এনে আমি আর লতা গেলাম।

“আমার খুব ঘুম পাচ্ছে রে।”

লতার কথায় আমিও হামি দিয়ে বললাম,,

” আমার ও আর শীত ও লাগছে। বাইরে বৃষ্টির ভাব করছে চল শুয়ে পরি।”

“হ্যা আমি গেলাম।”

লতা ঘুম ঘুম চোখে চলে গেলো। আমি টিভি অফ করে দিলাম।

দশটার দিকে টিভি অফ করে দুজনের রুমে গিয়ে শুয়ে পরলাম।
বিছানায় শুয়ে পরেছি বাইরে বাতাস হচ্ছে। আমি আবার উঠে জানালা খুললাম। বাতাসে আমার চুল এলো মেলো করে দিলো। খোপা খুলে গেল আমি চুলে হাত দিয়ে ধরার চেষ্টা করছি আর বাইরে তাকিয়ে আছি। গুরিগুরি বৃষ্টি পরতে লাগলো আমি তাকিয়ে আছি তখন কেউ গাড়ি নিয়ে ভেতরে এলো আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। এটা তো ভাইয়ার গাড়ি। আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি তাহলে কি ভাইয়া এলো আমি উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছি। গাড়ি থেকে কেউ বেরুলো দেখার আগেই সব অন্ধকার হয়ে গেলো কারেন্ট চলে গেছে। অন্ধকার এ দেখলাম লোকটা দৌড়ে ভেতরে আসছে। আমি অন্ধকারে এ দাড়িয়ে তাকিয়ে আছি।

#চলবে

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#extra part

লোকটা কে চিন্তা করছি? যাই হোক কলিং বেল তো বাজাবো‌। আমি আবসা আলোতে ভেতরে এলাম। কলিং বেল বাজানোর আসায় আছি। কিন্তু বাজছে না অনেকক্ষন চলে গেলো আমি দাঁড়িয়ে আছি। এবার আমি হালকা আলোতে বেরিয়ে এলাম রুম থেকে। ড্রয়িংরুমে ডিম লাইট জ্বলছে এটা কারেন্ট না থাকলেও জ্বলে। আমি সেই আলোতে চারপাশে দেখছি কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। আবার কলিং বেল ও বাজলো না তাহলে বাইরে কে ওটা। চোর নয়তো।

নাহ চোর কখনো গাড়ি নিয়ে আসে নাকি। আমার মাথা গেছে কি সব ভাবছি। আমি পা টিপে টিপে দরজার কাছে গেলাম না ভেতরে বন্ধ তাহলে কি কেউ আসে নি।
তাহলে বাইরে কে ছিলো? ঘুরতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম আমার পা ভিজা অনুভব করছি। পায়ের নিচে পানি এলো কি করে? এক পা উঁচু করে হাত দিয়ে দেখি পানি। বাইরে বৃষ্টি তার মানে কেউ ভেতরে এসেছে? কিন্তু আমরা কেউ তো দরজা খুলি নাই তাহলে? তার কাছে কি এক্সটা চাবি আছে? চাবি তো শুধু ইলা, ইমা, চাচা আর ভাইয়ার কাছে আছে। তাহলে এটাই ভাইয়াই। আমি সিউর। একবার রুম এ থেকে উঁকি দিয়ে আসবো নাকি?

যেই ভাবা সেই কাজ আমি সিঁড়ি দিকে গেলাম ভাইয়া রুমে যাব তাই। আমার বুকের ভেতরে টিপটিপ করছে। যদি ভাইয়া না হয় এটা ভেবে ভয় ও করছে চোর ও তো হতে পারে।বাসা খালি দেখে আবার চোর আসে নি তো। আকাশ পাতাল ভেবে ভয়ে জরোসরো হয়ে ভাইয়ার রুমের কাছে এলাম। ভেতরে আলো দেখা যাচ্ছে আমি আড়ালে লুকিয়ে উঁকি দিলাম। রুমে চার্জার লাইট জ্বালানো। আর সেই আলোতে ইহান ভাইয়ের উদাম শরীর দেখা যাচ্ছে। ভেজা শার্ট খুলে সোফায় ছিটকে দিলো গা ভেজা তার। হাত দিয়ে চুলের পানি ঝারছে। ভাইয়ার বাম সাইট আমি দেখছি। ভাইয়াকে দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। এই রকম উন্মুক্ত শরীর এ ভাইয়াকে দেখে আমার সারা শরীর কেঁপে উঠে। আমি চোখ সরিয়ে ভাবছি ভাইয়া তিন দিন পর কোথা থেকে এলো আর এতো দিন কোথায় ছিলো?

তখন ভাইয়া কন্ঠে আমার নাম শুনে আমার হৃদপিণ্ড কেঁপে ওঠে ভয়ে।

ভাইয়া অন্যদিকে তাকিয়ে থেকেই বললো,,,” ঊষা আমার জন্য খাবার নিয়ে আয় তো।”

কথাটা শুনে আমার চোখ কপালে ভাইয়া আমাকে দেখলো কিভাবে? আমি হকচকিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালাম। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে। এদিকে না ফিরে বুঝলো কিভাবে আমি এখানে দাড়িয়ে আছি।

আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি। তখন ভাইয়া আবার বলে উঠলো,,,

” সারাদিন কিছু খাইনি। প্রচন্ড মাত্রায় খিদে পেয়েছে। দাঁড়িয়ে চিন্তা ভাবনা না করে খাবার নিয়ে আয়। এই লাইট নিয়ে যা।”

বলেই বিছানায় লাইট রেখে বাথরুমে ঢুকে গেলো। আমি থমকে দরজা খুলে ভেতরে এলাম। ধরা খেতেই হলো। সারাদিন না খেয়ে কেন ছিলো? এসেই খাবার চাইছে ভাইয়া। আমি চোখ বড় করে ভাবতে ভাবতে লাইট নিয়ে নিচে এলাম। আজকে ইলিশ মাছ রান্না হয়েছিলো যেটা ভাইয়ার ফেবারিট। চাচি চলে যাওয়ায় বেচে গেছে মাছের টুকরো আমি মাছের তরকারি, বাজি, ভাত বেড়ে হাতে নিলাম প্লেট। কোথায় ছিলো যে না খেয়ে থাকতে হলো।

আমি রুমে এসে দেখি এখনো বাথরুমে থেকে বের হয় নি খাবার এনে টেবিলে রাখলাম সোফায় বসে খেতে পারবে।
পানির বোতল হাতে নিয়ে আবার বেরিয়ে এলাম। বোতল ভর্তি করে পানি এনে খাবারের প্লেট এর পাশে রাখলাম। তখন ভাইয়া বেরিয়ে এলো। আমি তাকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম ভাইয়া গেঞ্জি আর ট্রাউজার পরে এসেছে। তাকে খালি গায়ে দেখলেই আমার বুকের ভেতর ধুকপুক বেড়ে যায়।

বাইরে এসে আমার দিকে তাকালো তার সেই ভয়ংকর চাহনী দিয়ে যা দেখেই আমার বুকের ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়ে গেল। আমি তোতলাতে তোতলাতে বললাম,,

“খা-বা-র দি-য়ে-ছি। আমি যাই।”

তারাতাড়ি বলেই চলে আসার জন্য ব্যস্ত হয়ে পরলাম। এখানে থাকা যাবে না কেমন জানি লাগছে?

ভাইয়া ফট করেই আমার হাত ধরে আটকে ফেললো আমি থমকে দাঁড়িয়ে পরলাম। বুকের ভেতর ধুকপুক বেড়েই চলেছে। তার উপর ভাইয়া স্পর্শ আমার সারা শরীর কেঁপে উঠলো।

আমি চোখ বন্ধ করে কিছু বলতে যাব ভাইয়া তার আগেই একটা কান্ড ঘটিয়ে ফেললো আমাকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। আমি বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেলাম। ভাইয়া শরীর ঠান্ডা গোসল করেছে যে তার ঠান্ডা শরীর এর স্পর্শে আমি থরথর করে কাঁপছি। ভাইয়ার মাথা থেকে চুলের পানি আমার ঘাড়ে পরছে আমি চোখ বন্ধ করে আছি। দম বন্ধ হয়ে আসছে এতো জোরে কেউ চেপে ধরে হাড় গুড়ো করে ফেলবে নাকি‌।

আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করা পারছি না।ভাইয়ার শক্তির কাছে আমার শক্তি কিছু না আমি জানি তাই তো ছুটতে পারছি না।

আমার নরাচরা ধপ করেই থেমে গেলো ভাইয়ার কথা শুনে। ভাইয়া বলছে,,

” তোর মায়ায় আমাকে কঠিন ভাবে আটকে ফেলেছিল ঊষা। এই মায়া থেকে আমি কিছুতেই বের হতে পারছি না। তোর এই মায়া কাটানোর জন্য বাসা ছেড়ে চলে গেলো। ভেবেছিলাম তোর থেকে দূরে থাকলে তোকে না দেখলে হয়তো আমি তোর এই বিচ্ছিরি মায়া থেকে বের হতে পারবো‌। কিন্তু না! কিছু হলো না। সব উল্টা হলো। আমি আড়ালে তোর দূরে গিয়ে আরো তোর মাঝে আটকা পরে গেলাম। প্রতিটা মুহুর্তে আমি তোকে মিস করেছি খুব মিস করেছি। বুকের ভেতর তোর জন্য কষ্ট অনুভব করেছি আর তাতে আমি বুঝে গেছি আমি তোর মাঝে থেকে আলাদা হতে পারবো না। আমার তোকে চাই শুধুই তোকে চাই। তোকে বুকের মাঝে শক্ত করে রাখবো। যাতে এই বুক থেকে কেউ তোকে নিতে না পারে। এই বুকে কতো ব্যাথা হচ্ছিল জানিস একটুও শান্তি পায়নি। এখন সেই ব্যাথা চলে গেছে তোকে নিজের বুকে নিতে পেরে। মনে হচ্ছে আমার সমস্ত সুখ এই তোর মাঝে আছে।”

আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি ভাইয়া আমাকে ছেড়ে সরে দাঁড়ালো আমি থমকে দাঁড়িয়ে আছি। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। হাত পা কাঁপছে ও না মনে হচ্ছে আমি পাথর হয়ে গেছি। ভাইয়া আমার দিকে একনজর তাকিয়ে সোফায় বসে পরলো,,

খেতে বসলো। এক লোকমা মুখে দিয়ে বললো,,

“জানিস এই কয়দিন আমি খেতেও পারিনি। আমার খেতেই ইচ্ছে হয়নি। সব যেন একজনের দূরত্ব এ শেষ হয়ে গেছিলো।এখন আমি প্রাণ ভরে খাবো। ”

বলেই ভাইয়া খাচ্ছে আমি তার দিকে তাকাচ্ছি না। ভাইয়ার বাচ্চা মো কথা শুনে আমি আরো অবাক হলাম। আমার সব কিছু তাল গোল পাকিয়ে যাচ্ছে। আমি আর তাকালাম না ভাইয়ার দিকে। এক হাত উঁচু করে আরেক হাতে চিমটি কাটলাম। তারপর মৃদু আওয়াজ করলাম এসব সপ্ন না সত্যি ভাই এসব বলেছে আমি থমকে গেলাম আবার। ভাইয়া আমার আওয়াজ শুনে তাকিয়ে ছিলো আমি তখন দৌড়ে বেরিয়ে আসি রুমে থেকে ভাইয়া পাগল হয়েছে। কি সব বললো? এসব সত্যি হতেই পারেনা। আমি বিরবির করতে করতে নিজের রুমে এসে দরজা আটকে বিছানায় বসে পরলাম।

আমার হাত পা অসম্ভব কাঁপছে। আমি হাঁটু ভাঁজ করে বসে মাথা রেখে চোখ বড় করে ভাইয়ার কথা ভাবছি। সব কথা গুলো আবার রিপিট হচ্ছে আমার কানে।

তখন জানালা দিয়ে বাতাসে এক ঝাপটা পানি এসে আমার নাক মুখ ভিজিয়ে দিলো।আমি চমকে মাথা তুলে সামনে তাকালাম। আবসা অন্ধকারে বুঝা যাচ্ছে না কিন্তু আমি সিউর জানালা খুলে রাখার জন্য রুমের ফ্লোরে ভিজে ছুপছুপে হয়ে আছে। তারাতাড়ি উঠে গেলাম। জানালা অফ করে ঘুটঘুটে অন্ধকারে বিছানায় শুয়ে পরলাম। চোখে ঘুম মাথা চিন্তা নিয়ে চোখ বন্ধ করতেই ঘুমিয়ে পরলাম। অনেক রাত গেছে তাই ঘুমের মাত্রা বেড়ে গেছে।

আজকে বৃষ্টিতে বজ্রপাত ছিল না শুধু বাতাসার বৃষ্টি ছিল। এজন্য আমি একটুও ভয় পাইনি।

#চলবে

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#extra_Part(2)

আযানের শব্দ শুনে চোখ পিটপিট করে তাকালাম।
সাথে সাথে ধরফরিয়ে উঠে বসলাম। রাত ভর ইহান ভাইকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি। তাও স্বপ্নেও শুধু সেই কথা গুলো শুনেছি। যা আমাকে জরিয়ে ধরে বলেছিল।‌ আর একটু বাড়িয়ে দেখেছি ভাইয়া আমাকে বুকে থেকে উঠিয়ে গালে হাত দিয়ে বলে,,,

“ঊষা আমি তোকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি। তোর ভালোবাসা ছাড়া আমি নিঃস্ব। তুই আমাকে ভালোবাসবি তো।”

ভাইয়া মায়া ভরা চোখের আমার দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলছে। আমি বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি তার অসহায় মুখের দিকে। এমন ভালো বলছে যেন আমি না ভালোবাসলে সে মরেই যাবে। আমি তার অক্সিজেন হয়ে গেছি যেন। আমি ঢোক গিলে এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছি।

তখন ভাইয়া আবার বললো,, কি হলো আমার উওর দিচ্ছি না কেন ভালোবাসবি না আমাকে।

আমি কিছু না বলে ভাইয়ের হাত অনেক কষ্ট করে ছারিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে এলাম। বুকের ভেতর টিপটিপ করছে বুকে হাত দিয়ে শ্বাস নিলাম। তখন ভাইয়ার আওয়াজ। পেছনে আসছে আর একটা কথাই বলে যাচ্ছে কি বিপদ বলুনতো? আমি চমকে উঠলাম। তখন কি করবো ভাবছি ওমনি আযানের শব্দ শুনে ঘুম ছুটে গেলো।

আমার শরীর কাঁপছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম হয়েছে। আমি ভয়ে গুটিয়ে গেলাম তারমানে সব স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু ভাইয়া ভালোবাসি না বললেও ওই কথা গুলো তো বলেছেন। এমন কথা কেন বললো। কেন বলবে এসব?

আমি ওরনা বালিশের কাছে থেকে নিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিলাম। কাঁপা পায়ে উঠে দাঁড়ালাম। শরীর ভয়ে এখনো কাঁপছে। আমি ওই ভাবেই বাথরুমে গিয়ে ওযু করে নিলাম। নামাজ পরবো‌। আমি টুলছি। কারন ঘুম হয়নি রাত ভর স্বপ্ন দেখেছি ঘুম হবে কি করে? ওযু করে নামাজ শেষ করে নিলাম। নামাজ পরে ঘুম চলে গেছে। আমি জানালা খুললাম বাইরে একটু একটু আলো হচ্ছে। আর ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। রাতে বৃষ্টি হ‌ওয়ায় এমন মিষ্টি ঠান্ডা বাতাস ব‌ইছে আমি তা উপভোগ করছি। ফুলের দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে এলাম। গাছে পানি দেবো তাই। বাইরে এসে পানি দিতে লাগলাম। একটু একটু করে ফর্সা হচ্ছে আমি পানি দিচ্ছি আর আমার মনে হচ্ছে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে ভাইয়া। আমি চারপাশে কাউকে না দেখে তারাতাড়ি পানি দিয়ে চলে এলাম ভেতরে। দিন হয়ে গেছে একদম। ভেতরে এসেই লতার সাথে দেখা হলো।

“কিরে ক‌ই গেছিলি?”

আমি বললাম, “বাইরে গাছে পানি দিলাম।”

“একা গেছিলি কেন? আমিও যেতাম সাথে‌।”

“সমস্যা নাই। রান্নার যোগার কর। মাংস বের করিস।”

“মাংস কেন বড় স্যার তো মাংস খায়না।”

“চাচা জানের জন্য না ইহান ভাইয়ের জন্য বলেছি।”

আমার কথা লতা অবাক হয়ে বললো,,

” ইহান ভাইজান রে ক‌ই পাইলি সে বাসায় নাই‌।”

‘কাল রাতে এসেছে।”

“কাল রাতে( অবাক হয়ে) কখন এলো? আমি তো দশটা পর্যন্ত জেগে ছিলাম তখন তো আসে নি‌।”

‘আরো পরে আসে।”

“তুই জাগানা পেলি কি করে নাকি? তোকে ভাইজান আগে বলেছিলো আজ আসবে।”

“আমাকে কি করে বলবে? আমার কি ফোন আছে।”

‘তাহলে?”

“আরে দরজা নিজেই খুলে এসেছে তার কাছে তো এক্সটা চাবি আছে।”

“হুম তাহলে জানলি কি করে আসছে?”

“উফ তুই আমায় পুলিশের মতো জেরা কেন করছিস? সকালে গিয়েছিলাম তাই দেখেছি।”

“কেন গিয়েছিলি ওই রুমে সকালে। ” সন্দেহ চোখে।

আমি রেগে চেঁচিয়ে বললাম, ” আমার ইচ্ছে হয়েছে গিয়েছি জেনেছি। সব কিছু তোকে কেন বলতে হবে? যা বলছি কর না হলে আমি করে নিচ্ছি‌‌।”

বলেই বালতি নিয়ে রেগে চলে গেলাম।

লতা গোমড়া মুখে দাঁড়িয়ে র‌ইলো। আমি এসে দেখি মাংস বের করে রেখেছে। আমি কফি করে ওর হাতে দিলাম দিয়ে আসার জন্য। লতা নিয়ে চলে গেল আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি।

একটু পর কফি নিয়ে মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে এলো। আমি বিস্মিত হয়ে বললাম,

” কি হয়েছে?”

“তুই না গিয়ে আমাকে কেন পাঠালি। ভাইজান একটা ধমক দিছে আমারে বলেছে তোকে নিয়ে যেতে।”

আমি হকচকিয়ে গেলাম। ঢোক গিলে বললাম,

“আমি যেতে পারবো না।”

“কেন?”

‘এতো কেনোর উওর নাই ফেরত দিয়েছে ভালো হয়েছে। রেখে দে খেতে হবে না।”

‘এভাবে বলছিস কেন ভাইজান বকবে কিন্তু।”

“বকুক।”

লতা ভারী অবাক হলো আমার কথায়।
আমাকে বললো,,

“কি হয়েছে বল তো এভাবে বলছিস কেন? ভাইজান রাগ করবে বকবে জেনে ও যাবিনা।”

আমি ভয়ে কাঁপছি ভেতরে ভেতরে। ভাইয়ার সামনে আমি যেতে পারবো না। কিছু তেই না।

আমাকে ঝাকায়ে দিয়ে লতা আবার বললো।
আমি না করে দিলাম কিছুতেই যাব না। ও অবাক হয়ে আমার মুখ পানে তাকিয়ে র‌ইলো।

রান্না শেষ করেই চাচাকে খেতে দিলাম। সকাল সকাল খেতে বসে বললো,

“ইহান কখন এলো?”

আমি বললাম, “রাতে বোধহয়।আমি সকালে দেখেছি।”

মিথ্যা বললাম। চাচা খেতে খেতে ইহান ভাইয়ের অপেক্ষা করলো ভাইয়া এলো না তাই খাওয়া শেষ করে চলে গেলো অফিস এ। ভাইয়া গাড়ি নিয়ে এসেছে তাই সেটা নিয়ে গেলো। বাসায় একটা গাড়ি আছে সেটা ভাইয়া ইউস করে আসার পর থেকে তাই এখন খালি পেয়ে আর নিজের তারাতাড়ির জন্য নিয়ে গেলো।

আমি বারবার সিঁড়ির দিকে তাকাচ্ছি। ভাইয়া খেতে এলো না কেন? আমি কফি দেয়নি তাই? নাকি উঠেই নি।
ভাবলাম কিন্তু দেখার জন্য আর তার রুমের ধারের কাছেও গেলাম না‌। গোস্ত দিয়ে আমি আর লতা ভাত খেয়ে নিলাম। তাও ভাইয়া আসে নি লতা কে পাঠাতে চাইলাম ফাজিল যাবেনা বলে টিভি দেখতে বসলো।আমি যেতে ও পারছিনা আবার ভাইয়ার জন্য চিন্তা হচ্ছে খেতে কেন আসছেনা।

সারে এগারোটার সময় ভাইয়া নিচে এলো। হলুদ গেঞ্জি ও নীল ট্রাউজার পরে। চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট তাকে দেখেই আমার ভয় বেড়ে গেলো। আমি পেছন ঘুরে নিজের রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। কিন্তু যেতে পারলাম না। ভাইয়া আমার হাত শক্ত করে ধরে আটকে বললো গম্ভীর গলায়।

“টেবিলে খাবার দে।”

আমি বললাম,, ” লতা দেবে আমি ওকে বলছি। আমার হাত ছারুন।”

“আমি তোকে দিতে বলেছি।”

বলে হাত ছেড়ে দিলো আর চেয়ার টেনে বসলো।আমি কি করবো দ্বিধা দ্বন্দ্ব নিয়ে রান্না ঘরে গেলাম। তারপর মাথা নিচু করে খাবার প্লেট এ রাখলাম। ভাইয়া আমার দিকে যে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি না তাকিয়ে ও বুঝতে পারছি। আমার হাত পা কাপছে। কাঁপা হাতে খাবার বাড়ালাম। তখন ভাইয়া বললো,,

” আমাকে ইগনোর করে কিন্তু তুই পার পাবিনা। তাই এটা করার কথা চিন্তাও করছিস না। নিজের অনূভুতি যেহেতু বুঝেছি। তোকে কি করে নিজের করতে হয় আমার জানা আছে। আমাকে এরিয়ে চলতে পারবিনা তাই এসব করিস না। ”

আমি হতবুদ্ধি হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।

আমি তাকানো মাত্রই বললো,, “আজকে ক্ষমা করলাম। আর কখনো জানি কফি দিতে অন্য কাউকে না দেখি। মাইন্ড ইট।”

ভাইয়া বলেই চোখ সরিয়ে খাবারে হাত দিলো। আমি আমার শুকিয়ে আসা ঠোঁট ভিজিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। এই মানুষটি কে আমি চিনতেই পারছিনা। এতো পরিবর্তন।
আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি। হুট করেই আমার হা করা মুখে ইহান ভাই গুস্ত পুড়ে দিলো আমি চমকে উঠলাম। ভাইয়া ঠোঁট টিপে হেসে বললো,,

“হা করে কি বুঝাচ্ছিস? তোর আমার হাতে খেতে ইচ্ছে করছে। ওকে নে খাইয়ে দিলাম। চাইলে প্রতিদিন খাইয়ে দিতে পারি।”

আমি মুখ ভর্তি খাবার নিয়ে চোখ বড় বড় তাকিয়ে আছি। লোকটা পাগল হয়ে গেছে কি সব বলছে। কেমন করে হাসছে হাসিটা অবশ্য সুন্দর কিন্তু এসব ভালো লাগছে না একদম।

আমি হাত দিয়ে পিছন গিয়ে দাঁড়ালাম। খাবারের জন্য কথা বলতে পারছি না। তাই খাবার চিবুতে লাগলাম।ভাইয়া খাচ্ছে তো আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমি অবাক চোখ তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে।

ভাইয়া আমার মুখের খাবার শেষ করতেই বললো আরো খাবি।

আমি সাথে সাথে না করে দিলাম। ভাইয়া নিজে খেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,

“কাজ বাদ দিয়ে পরতে বস। পরিক্ষার আর আঠারো দিন আছে কিন্তু।”

আমি মাথা নাড়লাম। ভাইয়া আমার দিকে থেকে চোখ সরিয়ে পেছন ফিরে সিঁড়ির কাছে গেলো। আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে খাবার ঢাকতে লাগলাম। তখন ভাইয়া চেঁচিয়ে উঠে বললো,,

“একা না! ব‌ই নিয়ে আমার কাছে আয়। আমি পড়া দেখিয়ে দেবো।”

আমি চমকে উঠলাম। ভয় ও পেয়েছি ভেবেছিলাম ভাইয়ার চলে গেছে কিন্তু এতো দেখি যায় নাই।
আবার পড়ার জন্য তার কাছে যেতে বলছে। যার থেকে পালাতে চাই সে আরো কাছে আসছে উফফ

#চলবে

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#extra_Part(3)

আমি রুমে বসে আছি। ভাইয়ার রুমে যাব না আমি কিছুতেই না। এই দুপুরে কেউ পরে যতসব। তাও ব‌ই এনে বিছানায় বসে পরলাম। পড়াই হয় না আজ একটু মন দিয়ে পরতে লাগলাম। ভাইয়ার চিন্তা একপাশে ফেলে রেখে।
তখন দরজা খট করে খুলে কেউ এলো আমি তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেলাম ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে রেগে। আমি ঢোক গিলে বললাম,,

” আ-মি পারছিলাম একাই পরছে পারবো। ”

ভাইয়া আমার থেকে চোখ সরিয়ে নিচের দিকে তাকালো আর গটগট করে আর কাছে এলো। আমার সামনে দাড়িয়ে ব‌ই দেখলো আমি গনিত করছিলাম। ভাইয়া ফট করেই ব‌ই হাতে নিলো আর পেজ উল্টাতে লাগলো।আমি চমকে উঠে বললাম,,

“কি করছেন? আমি অঙ্ক করছি দিন।”

ভাইয়া কটমট চোখে তাকালো। আর বললো,,

“আমি আমার রুমে যেতে বলেছিলাম তোকে। তা না করে তুই একা পড়ে কি বুঝাচ্ছিস? সব পারিস। ওকে আমি তোকে এখন অংক করতে দেবো আমাকে করে দেখাবি।”

আমি ভয় পেয়ে ব‌ইয়ের পেছনে তাকিয়ে আছি। অনেক অঙ্ক তো পারিনা কোনটা দেবে কে জানে? না পারলে কি যে করবে? আমি মুখ কালো করে ভাবছি।
ভাইয়া ব‌ই আমার সামনে শব্দ করে ফেলে বললো,,

” এই যে এই দুইটা করে দেখা। টাইম দশ মিনিট।”

আমি ব‌ইয়ের অঙ্কের দিকে বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি। এটা লাষ্টের আগের চ্যাপ্টার এইটা তো পরিনাই‌। অনেক কঠিন এই চ্যাপ্টার আর অঙ্ক ও অনেক বড়। দুই পেজ লাগবে একটা করতেই। এই অঙ্ক দিলো করতে তার উপর দশ মিনিট আল্লাহ।

আমি বিস্মিত হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,,

” মাত্র দশ মিনিট এ হবে না এই অঙ্ক অনেক বড়। আর আমি তো…”

তার আগেই বললো , ” ওকে আর পাঁচ মিনিট দিলাম। না পারলে তোর কপালে শনি আছে।”

বলেই ভাইয়া নিজের ফোন আমার সামনে রেখে বললো, “এই যে এখন এখন এগারোটা পঁয়তাল্লিশ বাজে বারোটায় সময় শেষ।”

বলে ফোন রেখেই চলে গেলো বাইরে।
আমি বলার টাইম পেলাম না আরো সময় লাগবে।
আমি হতভম্ব হয়ে বসে আছি। কিভাবে করবো ভাবছি অঙ্কে আমি ভালো খারাপ না তাই চেষ্টা করতে লাগলাম।
দুই তিন নিয়মে করলাম হচ্ছে না বুঝছি না। কেটে অন্য পেজে যেতেই ফোনের দিকে নজর গেলো পাঁচ মিনিট চলে গেছে। প্রথম টা হচ্ছে না তাই দ্বিতীয় টা করতে লাগলাম। একটু করেই আমার মুখে হাসি ফুটলো এটা আমি পারতেছি সহজ লাগছে। করে ফেললাম। হেসে তাকিয়ে আছি।
উপরেরটা করতে লাগলাম পারছি না। আমি কলম মুখের ভেতর নিয়ে কামড়ে ভাবছি কি ভাবে করবো?

তখন ভাইয়া কন্ঠ শুনে চমকে উঠলাম আর মুখে থেকে কলম পড়ে গেলো।

ভাইয়া বলছে,,,” কলম কি কামড়ানোর জিনিস?”

আমি চকিতে মাথা তুলে তাকিয়ে মাথা নেড়ে না বললাম।

“তাহলে কামড়াকামড়ি করছিলি কেন? আমি তোকে অঙ্ক করতে দিয়েছিলাম। কলম কামড়াতে না।”

“হুম। আমি আসলে ভাবছিলাম কি ভাবে
করবো? ”

“ভাবার জন্য কলম কামড়াতে হয়।”

“না আমার এটা অভ্যাস।”

“সমস্ত বাজে অভ্যাস তোর আছে। টাইম শেষ দেখি কেমন করলি।”

টাইম শেষ শুনেই চমকে উঠলাম। আমার তো করা হয়নাই‌। ভাইয়া খাতা নিয়ে দেখছে গম্ভীর হয়ে।
খাতা থেকে চোখ সরিয়ে বলল,

‘একটা কেন?”

“আরেকটা আসলে পারিনা।”

“কেন আপনি তো সব পারেন আমার কাছে যাবেন না। তাহলে এখন পারলি না কেন?”
রেগে চেঁচিয়ে বললো।

আমি মাথা নিচু করে আছি‌। আমার ভয় করছে কি শাস্তি দেয় তার জন্য কিন্তু কিছু হলো না।ভাইয়া আমার পাশে বসে খাতা কলম নিজের হাতে নিলো। আমি অবাক হয়ে ভাবছি কি করবে?

ভাইয়া খাতায় ওই অঙ্কটা সমাধান করতে লাগলো সাথে আমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে খুব সুন্দর করে। আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি আর শুনছি। ওতোটাও কঠিন না আমি বুঝে গেলাম।

ভাইয়া খাতা কলম আমার হাতে দিয়ে বললো,,

“এবার নিজে ট্রাই কর।”

আমি মাথা নেড়ে করতে লাগলাম। হয়েছে করা আমি খুশি হয়ে ভাইয়া দিকে তাকালাম ভাইয়া তখন একটা কথা বললো আমি থমকে গেলাম। সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেললাম। বুকের ভেতর ধুকপুক করছে আমার।

ভাইয়া বলছে,, ” আমি তোকে পড়ার জন্য ডেকেছিলাম। রোমান্স, প্রেম ভালোবাসা করতে না। আমার তোর পড়া নষ্ট করে ওইসব করার ইন্টারেস্ট নাই‌।”

আমার কান গরম হয়ে আসছে। লজ্জা আমি তাকাতে পারছি না।

” লজ্জা না পেয়ে অঙ্ক কর। ”

বলেই চলে গেলো। আমি থমকে বড় সে র‌ইলাম।

🖤🖤🖤

বিকেলে কোচিং এ ভাইয়া আমাকে নিয়ে বের হলো আমি একা যাব বলেও থামাতে পারলাম না তাকে। গাড়ি চাচাজান নিয়ে গেছে তাই আমাদের লোকাল এ যেতে হবে।

আমি কাচুমাচু মুখ করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,,

” আপনার না যাওয়া ভালো ছিলো ভাইয়া আমি একাই যেতে পারবো।”

ভাইয়া রেগে তাকিয়ে বললো,, ” তোকে আমি এতো কথা বলতে বলেছি কি?”

‘কিন্তু শুধু শুধু আপনি গিয়ে কি করবেন ভাই?”

“আমার ইচ্ছা আমি যাব।”

আমি চুপ করে র‌ইলাম। একটা অটো ডেকে তাতে উঠে বসলো ভাইয়া সাথে আমিও।

‘মা কয় দিন থাকবে আন্টির বাসায়?”

“তা তো বলে যায় নি।”

ইহান ভাই আমার কথা শুনে কাউকে কল করলো কথা শুনে আমি বুঝলাম চাচি। কথা শেষ করে ফোনে কিছু করতে লাগলো আমি ভাইয়াকে ছেড়ে কোনায় বসে আছি। ভাইয়ার সাথে স্পর্শ লাগলেই আমার হাত পা কাঁপে। বুকের ভেতর ধরফর করে।

আমি বাইরে তাকিয়ে কোনা ঘেঁষে আমি হুট করেই একটা ঠান্ডা হাত আমার কোমরে স্পর্শ করলো আমি চমকে ঘাড় বাঁকাতেই ভাইয়া টেনে আমাকে নিজের কাছে টেনে ঘেঁষে বসালো। আমার সারা শরীর কেঁপে উঠলো,

ভাইয়া আমার কোমর থেকে হাত সরিয়ে বললো,,

“ওতো দূরে কোনায় গিয়ে বসেছিলি কেন? আত্মহত্যা করার ইচ্ছা ছিলো নাকি? আর একটু হলেই তো পরে যেতি‌।”
শক্ত মুখ করে গম্ভীর গলায় বলল।

আমি বিস্মিত হলাম। কাল সব বলছে আত্মহত্যা করতে যাব কেন? কিন্তু বলতে পারলাম না।

ভাইয়া রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ফোন ঘাটতে লাগলো‌। গাড়ি থেকে নেমে সোজা আমি উপরে চলে গেলাম। ভাইয়া দিকে তাকালাম না।

ছুটির পর ভাবছি ভাইয়া হয়তো চলে গেছে কিন্তু না বাইরে এসে দেখি দাঁড়িয়ে আছে। আর রেগে দাঁড়িয়ে আছে।আমি ঢোক গিললাম যায় নি কেন আর এতে রেগে আছে কেন?

আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। এগুনোর সাহস হচ্ছে না। তখন ভাইয়া আমার দিকে তাকালো আর রেগে আমার কাছে এগিয়ে এলো। আমি হকচকিয়ে তাকিয়ে আছি‌।‌ভাইয়া এগিয়ে এসে আমার হাত শক্ত করে ধরে বলল,

“চল।”

“আপনি এতো রেগে আছেন কেন? কি হয়েছে।”

ভাইয়া রক্ত চোখ করে তাকালেন আমার দিকে আমার আত্মা কেঁপে উঠলো। আমি চুপসে গেলাম।

হঠাৎ খেয়াল হলো ভাইয়ার হাতে রক্ত। আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি। রক্ত এলো কি করে?

আমি ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,” রক্ত কি করে এলো কি হয়েছে আপনার?”

ভাইয়া থেমে গেলো আমার দিকে আগের ন্যায় রেগে তাকিয়ে আছে। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,

“রিহান এখানে কেন আসে?”

আমার গলা শুকিয়ে এলো এটা শুনে ভাইয়া জানালো কি করে? আজ ও কি এসেছিল? অসভ্য লোকটাকে না ওইদিন মানা করলাম আস্তে।
তাও এসেছিলো কেন?

ভাইয়া আমাকে টেনে গাড়িতে উঠিয়ে হাত ধরেই বসে রইলো। আর একটা কথা ও বললো না। আমি ভয়ে ভয়ে একবার দুইবার তাকালাম। রাগে কপালের রগ ফুলে উঠেছে ভাইয়ার হাতের রক্তের কথা বললে না কিভাবে আঘাত পেলো? আমা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছি আঘাতের দিকে‌। ভাইয়ার ফর্সা মুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে।

#চলবে